![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মনচাই এমন একটি ব্লক যেখানে থাকবে গল্প,ইতিহাস,কবিতা,প্রবন্ধ,নির্বন্ধ, কৌতুক,আলোচনা সমালোচনা আলাদা আলাদা কিন্তু করতে জানি নাতো এমন করতে। যিনি এই ব্লগে লেখার সূযোগ করে দিলেন তাঁকে চিনলাম নাতো! তথাপি অচেনা এই কর্তৃপক্ষকে কৃতজ্ঞতা চিত্তে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
লাল আগুন ছড়িয়ে পড়েছে দিগন্ত থেকে দিগন্তে.
কি হবে আজ কুকুরের মত বেঁচে থাকায়?
কবি সুকান্তের এই পহেলা মের কবিতাটি আবৃতি করে আমি স্কুল থেকে কলেজ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিযোগীতায় প্রথম পুরস্কারটি নিতাম বিধায় কবি ও কবিতা আমার খুব প্রিয় ছিল।মনে পড়ে আজ সেই সোনালী শৈশবের স্মৃতি:
সেই ১৯৭৬ সালের কথা। নতুন স্কুলে ভর্তি হয়েছি। স্কুলের নিয়ম কানুন ও ক্লাশের সঙ্গী সাথীরা সবাই নতুন। তথাপি ক্লাশ ফাইভে ফাষ্ঠবয় হিসেবে প্রথম বেঞ্চে বসার জন্য শিক্ষকদের নির্দ্দেশ।প্রতি বৃহস্পতিবারে বিরতির পর শুরু হত বিচিত্রানুষ্ঠান।সেই অনুষ্ঠানে সবাই যখন কবিতা,ছড়া,কৌতুক,গান,তর্কবির্তক,উপস্থিত বত্তৃতা ইত্যাদিতে অংশ গ্রহন করত তখন কেমন জানি আমার লজ্জা,ভয় সংকোচে বুকের লাফডাব শুরু হত অনেকটা ম্যালেরিয়া জ্বর আসার মত।পরবর্তী অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে কয়েকবার ফাঁকী দিয়েছিলাম। পরে শারীরিক অসুস্থতার অজুহাতে প্রধান শিক্ষকের নিকট ছুটির আবেদন করে বিচিত্রানুষ্ঠান ফাঁকী দেয়ার চেষ্ঠা। প্রধান শিক্ষক ও আমাকে অতীব স্নেহাদর করতেন তিনি আমার অসুস্থতা কিছুতেই কামনা করতে পারতেন না। আবেদনের সাথে সাথেই ছুটি মঞ্জুর করে দিতেন।আমাকে নিয়ে যে শিক্ষক সব চেয়ে বেশী মাথা ঘামাতেন সেই শিক্ষক আজ কোথায় জানি না। হালকা পাতলা গড়নের এই শিক্ষকের লেখা গুলো এত সুন্দর ছিল যে যা সব ছাত্র-ছাত্রীর কাঙ্খিত ছিল এবং সদা অনুকরন করার মত।প্রতিদিন কবিতা,ছড়া,গল্প লিখতেন,উল্লেখযোগ্য কথা গুলি নোট করে রাখতেন। এই সব লেখা অতি যত্ন সহকারে রেখে দিতেন। বিজয় দিবস,স্বাধীনতা দিবস,শহীদ দিবস কিংবা মে দিবসে তিনি দেয়ালীকা বের করতেন।স্কুলের লাইব্রেরীটা ছিল এই শিক্ষকের তত্তাবধানে। তিনি অতি সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখতেন এবং পাঠকদের প্রতি কৌতুহল রাখতেন।কোন অনুষ্ঠান সাজানোর প্রয়োজন হলে এই শিক্ষকের উপড় সব দ্বায়িত্ব ন্যাস্ত থাকতো। তিনি লজিং থাকতেন আমাদের পাড়ার কার্বারীর বাড়ীতে।আমার এই অসুস্থতার অজুহাতে ছুটি নিয়ে অনুষ্ঠান ফাকী দেয়ার কথা তিনি আমার বাড়ীতে ও জানিয়ে দিয়েছেন। তাই একদিন টিফিন ছুটির পর সরাসরি বাড়ীতে না গিয়ে স্কুলে যাবার পথে বিলের পাশে একটি খামার বাড়ীতে কয়েকজন মিলে অবস্থান করছি। এদিকে সেই কবি স্যার টিফিনে লজিঙে গিয়ে খাবার শেষ করে আমাদের বাড়ী হয়ে আমাকে তালাশ করে আসছিলেন। প্রধান শিক্ষকের নিকট ছুটি নিয়ে যে খামার বাড়ীতে অবস্থান করছি সেই খামার বাড়ীতে উকি দিয়ে আসামীদেরকে ধরে ফেললেন। আমার হাত মাথা স্পর্শ করে বললেন,কই ? তোমার তো কোন অসুখ নেই। চলো,আমি ঔষধ কিনে দেব। অগত্যা স্কুলে না এসে কোন উপায় নেই। স্কুলে আসার সাথে সাথেই তিনি নির্দ্দেশ দিলেন,সবাই হলরুমে জড়ো হও। হলরুমে জড়ো হলে শুরু হল সাপ্তাহিক বিচিত্রানুষ্ঠান। সবাই ছড়া,কবিতা,কৌতুক,নাচ,গান,বত্তৃতা ইত্যাদিতে অংশ গ্রহন করছে। আমার কিন্তু ম্যালেরিয়া জ্বরের কাপুনি,বুকে লাফডাব শুরু হয়েছে। এই লজ্জা,ভয়,সংকোচ চিন্তা করে আমি প্রায় সারা রাত ঘুমাতে পারতাম না। এই সমস্যা কিভাবে মোকাবেলা করি? অবশেষে এলো আমার পালা।আমি সবার দিকে তাকাতে পারছি না। মাথা নিচু করে দাড়ালাম। শিক্ষকদের বার বার অনুরোধ ছিল,“তুমি এখানে এসে বলে যাও,আমি কিছুই জানি না’’। কিন্তু কি আর্শ্চয!সেখানে গিয়ে সেইকথা বলার সাহস ও আমার নেই। অগত্যা সেই কবি স্যার ক্ষেপে গেলেন। বেত নিয়ে আমার দিকে তাড়িয়ে আসলেন। সবার সামনে পিঠে যখন চপাং চপাং করে বেত্রাঘাত পড়ল তখন আমার লজ্জা,ভয় সব দূর হয়ে গেল। প্রায় চীৎকার করে বলে উঠলাম,আমি পারবো স্যার।
কি পারবে?
সব।
হলে সবাই হেসে উঠল।অত পর স্যার বললেন,একটি কবিতা বল,
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের “সংকল্প”কবিতাটি প্রায় চীৎকার করে আবৃতি করতে লাগলাম।
থাকবো নাকো বদ্ধঘরে,
দেখবো এবার জগতটাকে
কেমন করে ঘুরছে মানুষ
যুগান্তরের ঘুর্ণিপাকে।
বেত্রাঘাতে আমার রাগত স্বরের এই কন্ঠটাকে তিনি ব্যাখ্যা করে বললেন,আমি বাংলা পড়ায় তো! তার এই কন্ঠটাকে আবিস্কারের জন্য আমার এই প্রচেষ্ঠা। অত পর তিনি কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের পহেলা মে”কবিতাটি নিজেই আবৃতি করে আমার হাতে তুলে দিয়েছিলেন।সেই থেকে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য যেমন প্রিয় তেমনি পহেলা মে দিবস টি আমার কাছে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এই দিনে শ্রদ্ধার সাথে স্মরন করছি আমার সেই শৈশবের গুরু সুব্রত লস্কর সুনীল স্যারকে। তাঁর বাড়ী কুমিল্লা বলে জানি কিন্তু বর্তমানে কোথায় কেমন আছেন জানি না।
এই দিনে শ্রদ্ধার সাথে স্মরন করছি সেই সব শ্রমিকদেরকে,যারা শ্রমিকদের অধিকার দাবী করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন।তাঁদের আত্মার সুখ ও শান্তি কামনা করছি।
সারা বিশ্বে যত সংঘাত,যুদ্ধ চলেছিল কিংবা চলছে কিংবা চলবে সব কিছুর মূলে নিহিত স্বীয় স্বার্থ। এই স্বার্থের জন্য মানুষ ভূলে যাচ্ছে মায়া,মমতা কিংবা প্রেম প্রীতি ভালবাসা সুর লহরী।এই স্বার্থের চাহিদার কোন শেষ নেই। স্বীয় পরিশ্রমে যে জীবিকা নির্বাহ করছে সেই শ্রমিক বা মেহনতি মানুষ। সেই হালাল রোজগারে চলে বলেই গরীব,দুঃখী শ্রমিক বা মেহনতি মানুষ।এই মেহনতি মানুষের ঘামে দেশ ও জাতির সভ্যতা এবং নগর বন্দর গড়ে উঠছে।গড়ে উঠছে অট্টালিকা অমরাবতী নগর এবং এই নগর সভ্যতা।
আমার সত্যি অবাক লাগে যারা রমজানে রোজা রেখে সারাদিন পরিশ্রম করে।অবাক লাগে সেই চাষীকে যে আজানের শব্দে মসজিদে যাবার সময় না পেয়ে গামছা বিছিয়ে ক্ষেতের মাঝে নামাজ পড়ে। হাদীসে বর্ণিত আছে.“গরীব ধনীর পাঁচশ বছর পুর্বে বেহেস্তে প্রবেশ করবে”। এঁটা আমি খুবই বিশ্বাস করি।কারন একজন গরীব নিজের পরিশ্রমের অর্থ দিয়েই পারিবারিক ভরন পোষন করেন। সে সহজ সরল,অন্যদের মত অপরাধ করতে জানে না বলেই গরীব।
ছাত্রজীবনে এমন একটা অপ্রীতিকর ঘটনা করে ফেলেছিলাম যা আজো নিজেকেই বড় অপরাধী বলেই ধিক্কার দেই। ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের প্রচার চলছে। আমাদের পাড়ার কার্বারীর বাড়ীর উঠানে চেয়ারম্যান মেম্বারপ্রার্থীদের বত্তৃতা চলছে,যেখানে আমি ও ছিলাম। আমাদের স্বজাতীয় এক মেম্বার প্রার্থী বত্তব্য দিতে উঠে শিক্ষিত মানুষের বিরুদ্ধে অশালীন গালাগালি শুরু করে দিয়েছেন। শিক্ষিত হলেই মানুষ চোর হয়,জালিয়াতী করে,ঘুষখোর হয়,দুই নম্বর ব্যবসা করে,সাধারণ মানুষকে ধোকা দেয় ইত্যাদি ইত্যাদি গালাগালি শুরু করে দিয়েছে। আমাদের সমাজে তখন শিক্ষিত মানুষ নেই,আমি নিজেও শিক্ষিতের পর্যায়ে পড়ি কিনা জানি না,তথাপি এই গালাগালি। কোন অপরাধ না করা সত্বে এমন গালাগালি!রাগে সবার সামনে তাকে দিলাম কয়েক টাপ্পর।
একদা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বারদের ভূয়া মাষ্টার রোল দেখে খুব ক্ষেপে গিয়েছিলাম এবং সেক্রেটারীকে ধমক দিয়েছিলাম। পরবর্তীতে চাকুরী জীবন শুরু করার পর নিজেকেই পাঁচ আঙ্গুলের টিপ দিয়ে আদা,কচু,হলুদ,নারিকেল,শরিফা,লিচু,লেবু ইত্যাদি বিতরণের মাষ্টাররোল তৈরী ও দাখিল করতে হয়।অতপর মনে পড়ে মুজিব পরদেশীর গান.
“কলমে কি নাই কালিরে বিধি”।
যারা উচু তলার মানুষ বা ধনী শ্রেণী তারা অনেকগুন বেশী অর্থ উপাজ্জনের জন্য এমন কোন অপরাধ বাঁকী নেই যা তারা করছেন না। সেই চোরা চালানী থেকে শুরু করে দালালীপনা কিংবা এমন কোন কৌশল নেই যা তারা করছেন না।তাদের এই কার্যক্রমে সাদা টাকা ও কালোটাকা নামে সাম্প্রতিক পত্রপত্রিকায় বেশ অর্থ কেলেংকারীর ঘটনা মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশিত হচ্ছে।
সেই ক্ষেত্রে গরীব.মেহনতি মানুষ অতীব স্বর্গীয় ও নিঃস্পাপ। সেই চোরাকারবারী ও নয়,উৎকোষ গ্রহনকারী আমলা ও নয়।
অকালে চাকুরী থেকে অব্যাহতি পাবার জন্য আমি পরম করুনাময়ের কাছে চির কৃতজ্ঞ। সাময়িক অভাব অনটন ও বেকারত্বের অভিশপ্ত দুঃখ যন্ত্রনা ভোগ করলেও এঁটাই মোক্ষে প্রবেশের স্রষ্ঠার নির্দ্দেশনা বলেই আমি মনে করি। চাকুরীতে থাকলে গরীব দুঃখী মেহনতি মানুষের সুখ দুঃখের উপলব্দি গুলি বোধগম্য হত না। চাকুরী জীবনে উচুস্তরের আত্মীয়তার পরিচয় দিতে গর্ববোধ করা যায় কিন্তু নীচু স্তরের আত্মীয়দের পরিচয় দিতে ও সংকোচ বোধ লাগে। আর এই আমলাতান্ত্রীক সোসাইটির সামঞ্জস্য রাখতে গিয়ে কত ভোগ বিলাসীতা করতে হয়।
সহজ সরল উপায়ে ঠিকাদারী কিংবা টিম্বারের ব্যবসা করতে গিয়ে জীবনে সঞ্চিত অর্থ প্রায় নিঃশেষ হয়ে গেছে এবং পরবর্তীতে এক অগ্নীকান্ডে বাড়ীঘর সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে যাবার ফলে নিঃস্বতা ও প্রান্তিকতার সারিতে আজ আমার অবস্থান। আমাকে অনেকেই আজ গরীব বলে উপহাস করে।তথাপি আমি লজ্জিত নই। কারন গরীব হওয়া তো অপরাধ নয়। গরীব তাই আমি গর্ববোধ করি। যে দারিদ্রতা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে খ্রীষ্টের সম্মান এনে দিয়েছিল সেই দারিদ্রতাকে আমি অলংকার হিসেবে পেতে চাই। এই গরীব দুঃখী মেহনতি মানুষদের মাঝে নিজের জীবন কাটাতে চাই।
অনেকের কাছে টাকা এতই মুখ্য যে যারা সব কিছু বিসর্জন দিয়ে পুজিঁবাদীদের লেজুরবৃত্তি করছে। তারা কথায় কথায় বলে,Money is the second God of the worldঅর্থই পৃথিবীতে দ্বিতীয় প্রভূ। এই কথাটা মানতে আমার খুব কষ্ট হয়। এই অর্থ এমন একটি বিনিময় কাগজ মাধ্যম যা মানুষ তৈরী করে কোন ইশ্বর নয়।এই অর্থই নষ্টের মূল। এই অর্থের জন্য মানুষ সব আর্দশ বিসর্জন দিতে পারে।কোথায় জানি ইংরেজীতে একটি কবিতা পড়েছি যা সম্পূর্ণ মনে নেই।কবিতাটি এনরুপঃ
What can money do?
Money can buy a home
but not live
Money can buy a bed
but not sleep
Money can buy a Book
But not knowledge.
----------
আমরা ক্রমে পুজিঁবাদীদের লেজুরবৃত্তি করে যাচ্ছি। সেই রাজনৈতিক নেতা কর্মী থেকে আরম্ভ করে প্রায় সবাই এই পুজিঁর দাসত্বে । কিন্তু পুজিবাদীরা তো কাউকে নিঃস্বার্থভাবে অর্থ দেয় না। তারা অনেকগুন লাভে এই পুজি বিনিয়োগ করছে রাজনৈতিক থেকে শুরু করে সর্বত্র।ইংরেজীতে একটি প্রবাদ আছে,Teach a man how to fish not giving to eat.আমরা অনেকেই এই বড়শী তোফে ব্লাক মেইলিঙের শিকার হচ্ছি। যে কারনে পবিত্র শ্রমিক মেহনতি মানুষের প্রতি আমার পরম শ্রদ্ধা ও ভালবাসা।
অজ্ঞতার কারনে দরিদ্র মানুষের পরশ্রী কাতরতার কারন এবং তৃঞ্চার কারনে সেই দুঃখ। মাঠ থেকে শুরু করে টেবিলে বসে,কিংবা পাজেরো,কার,ট্রেইন,বাস,প্লেন,জাহাজ কিংবা উড়োজাহাজে যারা ব্যস্ত আছে সবাই কর্মাধীন।কিন্তু জ্ঞানের অভাবে অন্যকে সুখী এবং নিজেকেই দুঃখী বলেই ভাবছে সবাই। তাই আজকের এই দিনে প্রার্থনা করবো,
হে প্রভূ! গরীব দুঃখী মেহনতি মানুষকে জ্ঞান দাও।
লেখাটি *ভোলার কন্ঠ* ১লা মে সংখ্যায় প্রকাশিত।
©somewhere in net ltd.