![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলা ভাষা বহুল কথিত একটি ভাষা । এটি একটি সমৃদ্ধ ভাষা নিঃসন্দেহে । মর্যাদার দিক থেকেও অতুল । বাংলা এদেশের মাতৃভাষা । এ ভাষায় কথা বলার অধিকার অর্জনে প্রাণ দিয়েছে দেশের মানুষ । ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারী । এদিনটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পেয়েছে । এটি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ।
তবে ভাষাটি জটিল । এর বর্ণমালায় বর্ণ সংখ্যা ৫০ টি । অপরপক্ষে এদেশে প্রচলিত অপর দুটি ভাষা ইংরেজি ও আরবী; ইংরেজির বর্ণসংখ্যা ২৬ ও আরবীর ২৯ টি । বোধকরি বাংলা ভাষার শব্দ সংখ্যাও বেশি । একই শব্দের অসংখ্য সমার্থক শব্দ রয়েছে ।
এর দ্বিতীয় পুরুষ বাচক শব্দ আপনি, তুমি , তুই নিখাদ সর্বনাম হলেও বিশেষন ও ক্রিয়ার মত আচরণ লক্ষনীয় । মোটা দাগে বললে এরা মানুষকে বিভক্ত করে ফেলে, সামাজিক মর্যাদা, পদ মর্যাদা আবার কখনো বয়সে । দেখা যাক এদের প্রয়োগঃ
ক। আপনি
অল্প পরিচিত বা অপরিচিত বয়োজ্যাষ্ঠদের পারষ্পরিক সম্বোধন । সামাজিক ও পদমর্যাদা এবং বয়স ভেদে ছোট কর্তৃক বড়কে সম্বোধন । অর্থাৎ এ সম্বোধনটি সন্মানসূচক অবশ্যই । কিন্তু বাস্তবে অন্য রকমও ঘটে । পরষ্পরকে তুমি বা তুই সম্বোধনকারী ব্যক্তি ঝগড়া বা ক্রোধের সময় তুমি তুই ছেড়ে পস্পরকে আপনি সম্বোধন করে থাকে । এটি তখন বরং তুচ্ছার্থেই ব্যবহৃত হয় ।
খ। তুমি
সমবয়সীদের ঘনিষ্ঠতা জ্ঞাপক সম্বোধন । এটি সম্পর্কের নৈকট্য প্রকাশ করে থাকে । বন্ধু-বন্ধু, স্বামী-স্ত্রী সাধারনতঃ একে অন্যকে তুমি বলে সম্বোধন করে থাকে । এটি দ্বারা বয়োঃকনিষ্ঠদের সম্বোধন করা হয় । পদ ও সামাজিক মর্যাদায় ছোটকে বয়স নির্বিশেষে তুমি সম্বোধনের দুঃখজনক রেওয়াজ চালু রয়েছে । কিছু কিছু পেশার মানুষকে এদেশের আবাল বৃদ্ধ বনিতা তুমি সম্বোধনে অভ্যস্ত । যেমন রিক্সাওয়ালা, মুচি, কুলি মিন্তি ইত্যাদি । এটি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত দুঃখজনক সংস্কৃতি । পেশার ভিত্তিতে মানুষের মর্যাদার শ্রেণীবিন্যাস নিতান্তই অমানবিক ।
গ। তুই
স্বাভাবিক সম্পর্ক প্রকাশে এর ব্যবহার প্রায় তুমির মত । বন্ধু-বন্ধুর ক্ষেত্রে এটি সর্বাধিক ঘনিষ্ঠতা প্রকাশ করে থাকে । রিক্সাওয়ালা, কুলি মিন্তি , মুচি ইত্যাদি তথাকথিত নিম্নশ্রেণীকে মাঝে মাঝে তুই বলেও সম্বোধন করা হয় । এটি এক্ষেত্রে সর্বাধিক তুচ্ছার্থক সম্বোধন । রাগ প্রকাশের সময় আপনি তুমি সম্বোধন তুই এ রুপ নিয়ে থাকে ।
এই বিভেদ শুধু মুখে মুখে নয় , পাঠ্যপুস্তকে, সাহিত্যে-কবিতায় সর্বত্র বিস্তৃত । এর বিস্তার ও ব্যবহার সামাজিক বিভেদ শুধু প্রকাশই করেনা বরং এর বিস্তার ঘটায় । অর্থনীতি, পেশা , সংস্কৃতিতো সামাজিক বৈষম্যের জন্ম দিচ্ছেই তার সাথে যোগ হচ্ছে ভাষার অনাচার । জানালা খুললে যদি দুর্গন্ধ ঢোকে , জানালার সংখ্যা কমানোই সমিচীন । বাংলা ভাষার উন্নয়ন ও গবেষণায় আমাদের বাংলা একাডেমী রয়েছে । মাঝে মাঝে নতুন শব্দ সংযোজন হয়ে থাকে । ভাষার সমৃদ্ধির জন্য সংযোজনের পাশাপাশি বিয়োজনও করা যেতে পারে বলে মনে করি ।
©somewhere in net ltd.