নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ওয়াসেত সাহিন

ওয়াসেত সাহিন

পেশায় একজন প্রকৌশলী । গান শুনতে , বই পড়তে এবং বেড়াতে ভালবাসি ।

ওয়াসেত সাহিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

গোলাপ কলি পাঁপড়ি মেলেছে

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৫৩

সাকিবদের সামনের ফ্ল্যাটে এক ভদ্রলোক উঠেছেন , বড় সরকারী অফিসার । তিনটি মেয়ে তার । বড়টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ পড়ে । দারুন অহংকারী । বেশ সুন্দর । লম্বা । গায়ের রঙ ফর্সার খানিক নিচে । করিডোরে বা লিফটে দেখা হলে অতি দ্রুত চোখ নিচু করে ফেলে । পাঁপড়িগুলোই যা দেখা যায় । সাকিব বেশ অবাক হয় ।

সে মেকানিক্যাল ইনজিনিয়ার । একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে জব করে । যথেষ্ট হ্যান্ডসাম । ইউনিভার্সিটি জীবনে কয়েকটা মেয়েতো ওকে রীতিমত জ্বালিয়েছে । একজনের সাথে একটু বন্ধুত্ব মত ছিল । প্রেম ট্রেম না । মেয়েটি বেশ ঝোলাঝুলি করেছিল । সাকিবের মন সেই পরিমান গলেনি ।



ওর বাবা রিটায়ার্ড সরকারী অফিসার । তিনি এবং মা অতি যত্নে ছেলের জন্য মেয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছেন । মা এ যাবৎ চার পাঁচটা মেয়ের ছবি দেখিয়েছেন । সাকিবের পছন্দই হয়না । মা অবাক হয়ে জানতে চান, ‘ কিরে এত সুন্দর সুন্দর মেয়ে যেন ডানা কাটা পরী , তোর দেখি পছন্দই হয় না ! ’



‘ মা পরী কেন , মানুষ পাওয়া যায় না ?’ সাকিব মায়ের সাথে রসিকতা করল । মা গম্ভীর হয়ে ছেলের দিকে চেয়ে রইলেন । মনে হল উনি অল্প রেগেছেন । বললেন, ‘ তোর এদেশের মেয়ে পছন্দ হবেনা । তোর বাবাকে না হয় ইরান পাঠাই, মন মত মেয়ে খুঁজে নিয়ে আসুক । কি বলিস ?’ মায়ের কথা শুনে আর ভাব সাব দেখে সাকিব হাসল ।

ওই মেয়েগুলো মোটেই কম সুন্দর না । কিন্তু সাকিব তার পছন্দের সাথে মেলাতে পারেনা । ওর ভেতর থেকে অচেনা পছন্দ উঁকি দেয় । অবাক হয়ে লক্ষ্য করল, সামনের বাসার অহংকারী মেয়েটি , ফারিসা নাম, ওর কথা ভাবলে মনটা নরম হয়ে আসে । কি মুশকিল ! মেয়েতো তার দিকে তাকায়ইনা !



সেদিন বিল্ডিংএর গেটে মুখোমুখি হয়ে গেল । চোখাচোখি হবার মূহুর্তে সাকিব মৃদু হাসি ফোটাল মুখে । অবাক কান্ড, মেয়েটি তা গ্রাহ্যই করল না । যথারীতি দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিস্পৃহ ভংগিতে হেঁটে চলে গেল । নিদারুন অপমান । সাকিব খুব অপমানিত বোধ করল । এমন আচরনের হেতু কি ? ও নিজেকে কি ভাবে ?



সেদন বসুন্ধরা সিটির গেটে দেখা । ফারিসা দাঁড়িয়ে ছিল। সাকিব ওর পাশে গিয়ে বলল, ‘ ভাল আছেন ?’ ফারিসা চকিতে ওর দিকে এক পলক চাইল বটে , কিন্তু কোন জবাব দিল না । ভেতরে যথেষ্ট রাগ অনুভব করল সাকিব । বলল,’ আপনি এত অহংকারী কেন ?’ ফারিসা জবাব দিলনা।

‘জানেনতো অহংকার পতনের মূল ?’ সাকিব বলল। কিন্তু ফারিসা নীরব ।



বাসায় গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ না করেই রকিং চেয়ারে গা এলিয়ে দিল সাকিব । ভাবছিল ফারিসার কথা । এটা কি জাতের মেয়ে আল্লাহ মাবুদ জানেন । বোবা কালা যে নয় তা নিশ্চিত , কারন ওকে সে কিথা বলতে শুনেছে । তাহলে ?



সেদিন বিকেলে বাসায় ফিরছিল সাকিব । গাড়ী থেকে নেমে লিফটের দিকে এগোতেই দেখা গেল ওটার ডোর বন্ধ হয়ে যাচ্ছে । দ্রুত এগিয়ে বাটন চাপল । ভেতরে ফারিসা একা । সাকিবের শিরায় রক্ত প্রবাহের গতি বেড়ে গেল । দ্রুত তার মস্তিষ্কে পরিকল্পনা তৈরী হয়ে গেল । শরীরে কিঞ্চিৎ কম্পন অনুভূত হল । আচমকা ফারিসাকে জড়িয়ে ধরে দীর্ঘ চুমু এঁকে দিল । মেয়েটি প্রচন্ড শক্তি প্রয়োগ করেও নিজেকে মুক্ত করতে পারল না । শেষে ওকে ছেড়ে দিয়ে সাকিব লিফটের ওয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়াল ।

‘ অসভ্য ছোটলোক জানোয়ার----’ তীব্র রাগে ক্ষোভে ফেটে পড়ল ফারিসা । সাকিব নিশ্চুপ । সে এ কান্ডটি কিভাবে করল - নিজেকে অচেনা মনে হল তার ।

ওই রাতে এক ফোঁটা ঘুম হলনা সাকিবের । এলোমেলো ভাবনা মনকে অস্থির করে তুলল । ও হটাৎ কান্ডটি কেন করে বসল ? এটাকি প্রতশোধ গ্রহনের জন্য ? মনে হচ্ছে তা নয় , সে শুধু ফারিসাকে পছন্দ করে তাই না , বেশ খানিকটা ভালবাসার সৌরভও পাচ্ছে । ফারিসার জন্য খারাপ লাগছে । ওকি খুব বেশি কষ্ট পেয়েছে ?



অনেকদিন ছাদে যাওয়া হয় না । সাকিব সেদিন ছাদে গেল । হেঁটে একদম দক্ষিনে চলে গেল । ফারিসা । রেলিঙএ ঠেস দিয়ে আছে । সাহস সঞ্চয় করে ওর কাছে গিয়ে দাঁড়াল সাকিব । ওকে দেখতে পেল ফারিসা । তবে সরে গেল না । সাকিব আশ্বস্ত হল । বলল, ‘ আমি লজ্জিত । সেদিনের ঘটনার জন্য ক্ষমা চাচ্ছি ।’ ফারিসা ঘুরে দাঁড়াল । বলল,’ আপনার লজ্জা আছে ?’ ফারিসা কথা বলায় সাকিবের মন হালকা হল । বলল, ‘ দেখুন , আমি কিন্তু ক্ষমা চেয়েছি !’

‘ ভাল কথা বলেছেন । ইচ্ছে করে অন্যায় করবেন , ক্ষমা চাইবেন , ব্যস ?’

‘ আচ্ছা ক্ষমা যদি নাই করবেন শাস্তি দিন ।’

‘ শাস্তি যিনি দেবার ঠিকই দিবেন ।’

‘অভিশাপ দিচ্ছেন ?’

ফারিসা কিছু বললনা । সাকিব বলল, ‘ আপনি শাস্তি দিতে চান না ?’

‘ আমি আপনাকে কি শাস্তি দেব ?’

‘ খুঁজে পাচ্ছেন না ? আমি বলে দেব ?’

ফারিসা সপ্রশ্ন অবাক দৃষ্টিতে তাকাল । সাকিব ওর চোখের দিকে চেয়ে বলল, ‘ সারা জীবন পাশে থেকে সেবা করার সুযোগ দাও ।’

‘জ্বি !’

‘হ্যাঁ’

‘ মনে হচ্ছে আসলেই আপনার লজ্জা নেই !’

‘হতে পারে , আমি ভেবে দেখিনি । আর লজ্জাতো নারীর ভূষন ।’

‘ তাই ?’ ফারিসা সামান্য হাসল ।

‘নয়তো ?’ ফারিসাকে হাসতে দেখে সাকিবের আহ্লাদ যেন বেড়ে গেল ।

বেশ কিছু সময় কেটে গেল । দুজনই চুপচাপ । নীরবতা ভাংল ফারিসাই । বলল, ‘ সেদিন খালাম্মা , মানে আপনার মা আমাদের বাসায় এসেছিলেন । অনেক গল্প করলেন । আপনার জন্য নাকি পাত্রী মেলাতে পারছেন না । কাউকেই আপনার পছন্দ হয় না । ব্যাপার কি বলুনতো ?’ এটি সাকিবের জানা ছিলনা । বলল,‘ ব্যাপার পরিষ্কার । যাকে চাই তাকেতো পাইনা । এবার বল শাস্তি ভোগ করে শাপমুক্তির সুযোগ পাচ্ছিতো ?’

ফারিসা কিছু না বলে চলে যেতে শুরু করল । সাকিবও সাথে হেঁটে চলল । বলল, ‘ মাকে তোমার কথা বলছি তাহলে ?’ ফারিসা নিশ্চুপ ।

‘কিছু বলছ না যে ? বলব কিন্তু ?’

ফারিসা কিছু বললনা তবে সাকিবের দিকে চেয়ে সামান্য হাসল। হাসিটি বেশ আশাব্যঞ্জক।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.