নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ওয়াসেত সাহিন

ওয়াসেত সাহিন

পেশায় একজন প্রকৌশলী । গান শুনতে , বই পড়তে এবং বেড়াতে ভালবাসি ।

ওয়াসেত সাহিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাহাড় গুলো রক্ষায় করণীয়

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:৫১

বাংলাদেশ ভূখন্ডে পাহাড়ী এলাকার পরিমান প্রায় ১৮% । চট্টগ্রাম নগরীতে স্বল্প থেকে মাঝারি উচ্চতার বহুসংখ্যক পাহাড় বিদ্যমান । এটি বিশ্বের একটি অনুপম ব্যতিক্রমী নগরী যেখানে সমতল ভূমি, পাহাড়ী এলাকা , নদী ও সমুদ্রের সমন্বয় ঘটেছে । কিন্তু এ চমৎকার নগরীতে মাঝে মাঝে এর বুকে বসবাসকারীদের আকস্মিক জীবন নাশের ঘটনা ঘটে । এটি ঘটে পাহাড় ধ্বসের কারনে । মূলতঃ পাহাড়ের ঢালে অস্থায়ী ঘরে বসবাসকারী বস্তিবাসীরাই এর শিকার হয় । ভূমিধ্বস একটি প্রাকৃতিক ঘটনা যাতে ভূমির একটা অংশ সরে যায় এবং স্বভাবতই নিম্নমুখী ধাবিত হয় । প্রাকৃতিক কারন গুলোর মধ্যে ভূমিকম্প এবং প্রবল বৃষ্টিপাত অন্যতম । তবে বাংলাদেশের পাহাড়ী এলাকার ভূমিধ্বসের কারন এসব নয় । এর আসল কারন হচ্ছে পাহাড় কাটা ও বৃক্ষনিধন । পাহাড় কাটার ফলে পাহাড়গুলোর স্লোপ স্ট্যাবিলিটি নষ্ট হয় । পাহাড় কোন কৃত্রিম জিনিস নয় । এটির তলদেশ থেকে চূড়া পযর্ন্ত এর ঢাল সহ সম্পূর্ণটুকু প্রাকৃতিক ভাবে তৈরী । এর ভারসাম্যও প্রাকৃতিক । এর তলদেশ , চূড়া কিংবা ঢাল যেখান থেকেই কাটা হোক না কেন ঢাল সহ সমগ্র বডির ভারসাম্য বেশি কম বিনষ্ট হবেই । বিশেষতঃ এগুলো যেহেতু মাটির পাহাড় । মাটির কণাগুলোর মধ্যকার আকর্ষন বল বা কোহেসিভ ফোর্স পাথরের কোহেসিভ ফোর্সের চেয়ে অনেক কম । দেখা যায় আরব দেশ গুলোতে পাথুরে পাহাড় কেটে ঘর বাড়ি বা রাস্তা বানালেও কোন সমস্যা হয়না । কিন্তু বাংলাদেশের পাহাড়ী মৃত্তিকার গঠন মোটেই সেরকম নয় । চট্টগ্রামের পাহাড়ী মাটিতে বালুর পরিমান প্রায় ৯৫% , এতে সূক্ষ্ন বালু কণার পরিমান ৮৫% এবং মোটা বালু কণার পরিমান ১০% । বাকী মাত্র ৫% সিল্ট ও কাদার কণা । বালু্র কোহেসিভ ফোর্স অত্যন্ত কম যা শূণ্য ধরা হয় । ফলে এতে অপরিকল্পিত বেহিসেবী পাহাড় কাটলে ধ্বস অনিবার্য । পাহাড় হতে বৃক্ষ নিধনও ভূমিধ্বসের অন্যতম কারন । আর এসব পাহাড় ধ্বস ত্বরান্বিত হয় বৃষ্টিপাতের ফলে । এদেশেতো যথেষ্ট বৃষ্টিপাত হয় । মাঝে মাঝে একটানা প্রবল বর্ষন হয়ে থাকে । এসময়টাতেই কাটা পাহাড়ের ঢালগুলোতে ধ্বসের ঘটনা ঘটে । পাহাড়ের ঢালে নির্মিত বস্তিতে জান মালের ব্যপক ক্ষতি হয়ে থাকে ।



এদেশে পাহাড় কাটার বিষয়ে কোন সুনির্দিষ্ট আইন নেই । বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ অধ্যাদেশ’ ১৯৯৫ এর আওতায় কিছু মামলা বিভিন্ন সময়ে দায়ের করা হয়েছে । সুনির্দিষ্ট আইনের অভাবে আদালত থেকে কোন অনুকূল রায় পাওয়া যায় না । বরং অনেক মামলা মাননীয় আদালত ডিসমিস করে দিয়েছে । ২০১০ সালে এই এক্টে সংশোধনী এনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে অধিকতর ক্ষমতায়ন করা হয়েছে । পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ২০০২ সালে পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে একটি সারকুলার জারী করে । এতে কোন ফলোদয় হয়েছে বলে বোঝা যাচ্ছেনা । অবশ্য এটি অদ্যাবধি এক্টে পরিনত হয় নি । পাহাড় কাটার ফলে প্রকৃতি ও পরিবেশের ক্ষতি ছাড়াও জান মালের ব্যপক ক্ষতি হচ্ছে । কিন্তু বন্ধ হচ্ছেনা অবাধ পাহাড় নিধন । বৃক্ষ নিধনও চলছে মহা উৎসাহে । নগরীগুলোও এদের আদি ও অকৃত্রিম সৌন্দর্য শ্রীহীন হয়ে পড়ছে । এর জন্য তেমন জোরালো মাথা ব্যাথাও কারো আছে বলে মনে হয় না ।



বাংলাদেশ পর্যটনের একটি অপার সভাবনাময় দেশ । ছোট একটি দেশে অল্প দূরত্বের মাঝে এত বিপুল সংখ্যক সুন্দর দর্শনীয় স্থান পৃথিবীর আর কোন দেশে নেই । বান্দরবান, রাঙ্গামাটিসহ পুরো পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকা, কক্সেসবাজার, সিলেটের চা বাগান, লাউয়াছড়া বনাঞ্চল, মাধবকুন্ড জলপ্রপাত, জাফলং , কুমিল্লার লালমাই পাহাড়, বগুড়া ও ময়মনসিংহের পাহাড়িয়া অঞ্চল । বিশ্বের সববৃর্হত ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন । সবচেয়ে দীর্ঘ কক্সেসবাজার সমুদ্রসৈকত । একই স্থানে সমুদ্রপাড়ে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূযাস্ত দেখার স্থান কূয়াকাটা । নীলফামারির নীলসাগর, দিনাজপুরের রামসাগর, কুমিল্লার ধর্মসাগর । এমন কত কত দর্শনীয় স্থান । পর্যটনের সকল প্রাকতিক উপাদান এদেশে বিদ্যমান । হয়ত অচিরেই এই শিল্প বিকাশ লাভ করতে শুরু করবে । এর জন্য প্রয়োজন অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সন্তোষজনক নিরাপত্তা ব্যবস্থা । বিগত দশকে রাস্তা ঘাটের বেশ উন্নতি পরিলক্ষিত হচ্ছে । প্রাইভেট কিছু প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু মান সম্মত রিসোর্ট তৈরী করেছে । কিন্তু ব্যপক হারে পাহাড় কাটার ফলে পর্যটন বিকাশের সোনালী সম্ভাবনা বেশ হুমকীর মাঝেই পড়েছে বলা চলে ।



পাহাড় কেটে সমতলে রূপান্তরে শুধুমাত্র মাটি অন্যত্র স্থানান্তরিত হচ্ছে তাই নয় এতে জীব বৈচিত্রও হুমকীর সম্মুখীন হচ্ছে । পাহাড়ে বসবাসকারী বিভিন্ন প্রানীর বিচরণক্ষেত্র সংকুচিত হচ্ছে । খাদ্যের উৎস কমে আসছে । ফলে বিভিন্ন প্রজাতির প্রানীকূল বিলুপ্তির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে । প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্টের সাথে সাথে মাটি দূষন সহ পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে ।

শুধু প্রভাবশালী ও বিত্তবানেরাই যে তাদের হাউজিং বা কোন ব্যাক্তিগত উদ্দেশ্যে পাহাড় কাটছে তাই নয় বরং বিভিন্ন সরকারী সংস্থা যেমন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন , বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প করপোরেশনও বিপুল পরিমান পাহাড় কেটে রাস্তাঘাট ও শিল্প প্রতিষ্ঠান তৈরী করছে । পাহাড় নিধনের ঘটনা শুধু চট্টগ্রামেই সীমাবদ্ধ নয় । এটি সিলেটেও ব্যপক হারে ঘটছে । ঘটছে কুমিল্লার লালমাই ও ময়নামতি পাহাড়েও ।





বাংলাদেশের সবপ্রর্ধান ট্যুরিষ্ট স্পট কক্সেসবাজারের অবস্থা খুবই নাজুক । এর সৈকত ঘেঁসে এবং সংলগ্ন পাহাড় কেটে তৈরী হচ্ছে হোটেল এবং আবাসিক অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স । পাহাড়, সমতল সৈকত ও সমুদ্রকে ঘিরে যে অপার সৌন্দয্য র্মানুষকে আকর্ষন করত তা নিঃশেষ হতে বসেছে ।



পাহাড় কাটার ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অধিক সচেতনতা দরকার । জানমালের ক্ষতি রোধে জরুরী ভিত্তিতে কাটা পাহাড়ের ঢালে নির্মিত বস্তি সমূহকে অন্য কোন নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া প্রয়োজন । পাহাড় কাটা রোধে দ্রুত উপযোগী আইন প্রনয়ন ও বাস্তবায়ন দরকার । এ যাবত যত পাহাড় কেটে বিভিন্ন স্থাপনা তৈরী হয়েছে সেসবের উপযুক্ত নিরাপত্তা বিধানের লক্ষে রিটেইনিং ওয়াল বা যে কোন ধরনের নিরাপত্তামূলক কাঠামো নির্মান করা প্রয়োজন । সুবিধাভোগী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করা যেতে পারে । বন বিভাগের মাধ্যমে নগর সমূহের পাহাড়ী এলাকায় ব্যাপক বনায়ন ও নজরদারী চালু করা যেতে পারে । অবৈধ বৃক্ষ নিধন বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে । পাহাড় সমূহ রক্ষায় বন বিভাগ বা পুলিশের আলাদা বিশেষ স্কোয়াড গঠন করা যেতে পারে । এদিকে সংশ্লিষ্ট বিভাগ সমূহ ও মন্ত্রনালয়ের আন্তরিক মনযোগ প্রয়োজন ।





মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:৫৮

রোদেলা দুপুর বলেছেন: প্রতিবছরেই শোনা যায় পাহার ধস হচ্ছে তারপরেও সরকার কোন ব্যবস্থা নেয়না। আসলে গরিব মানুষের কথা কেউ চিন্তা করে না।

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:৫৫

ওয়াসেত সাহিন বলেছেন: ধন্যবাদ । ঠিক বলেছেন ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.