![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঢাকা বহু প্রাচীন নগরী । এর পত্তন হয়েছে চারশো বছরেরও আগে । এটি গোড়া থেকেই ছিল প্রকৃতির স্নেহধন্য কন্যা । চারদিকে নদী বেষ্টিত চমৎকার একটি বাসোপযোগী ভূখন্ড । এর বুক চিড়ে প্রবাহিত ছিল পঞ্চাশেরও বেশি খাল । কালের আবর্তনে এটি আজ স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী । এর ছোট্ট বুকে প্রায় দেড় কোটি লোকের বাস । হালে তাই এটি মেগা সিটি ।
দুঃখের বিষয় এই মহানগরীর মানুষ বাসের উপযোগী উপাদান গুলো অযত্নে অবহেলায় কিছু এর মাঝেই হারিয়ে গেছে, বাকীটাও হারাতে বসেছে । ঢাকার চারদিক ঘিরে আছে বুড়িগংগা, তুরাগ, শীতলক্ষা আর বালু নদী । নদীগুলোর বেহাল অবস্থা । ভয়াবহ দূষন আর বেদখলে এগুলো মৃতপ্রায় । এদের তলদেশ ভরে গেছে কঠিন বর্জে । দূষনের আধিক্যে পানি কালচে বর্ণ ধারন করেছে । সাধারন কোন কাজে এই পানি ব্যাবহারের উপযোগী নয় । পান করারতো প্রশ্নই উঠেনা ।
ঢাকার বুকে একসময় পঞ্চাশটি খাল প্রবাহিত ছিল । যার মাঝে তেতাল্লিশটি খাল ছিল বর্তমান মেট্রপলিটন এলাকার মধ্যে । এর কয়টি আজ অবশিষ্ট আছে ?
২০০৪ সালে সরকারী ভাবে এই বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয় । কমিটি কাগজে কলমে তেতাল্লিশটি খালের মধ্যে ২৬ টি উদ্ধারযোগ্য বলে শুপারিশ করে । এই খাল গুলিও সম্পূর্ণ অথবা আংশিক ভর্তি অথবা বেদখল অবস্থায় ছিল । এগুলো দখল মুক্ত করে চালু করার জন্য ২০০৪ সাল থেকেই ঢাকা ওয়াসা অভিযান পরিচালনা করে আসছে । বিগত তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এই অভিযান যথেষ্ট বেগবান হয় । বাংলাদেশ নৌবাহিনীর তত্বাবধানে বিভিন্ন সংস্থা যেমন ঢাকা ওয়াসা, রাজউক, ডিসিসি, পুলিশ বিভাগ ও জেলা ভূমি অফিসের সমন্বয়ে কাযর্ক্রম গৃহীত হয় । ফলে সীমানা সংক্রান্ত জটিলতার কিছু অবসান হয় এবং বেশ কিছু সংখ্যক পাকা কাঁচা অবৈধ স্থাপনা, কোন কোন খালের উপর দিয়ে নির্মিত রাস্তা উচ্ছেদ করা সম্ভব হয় । সেসময়ে খাল উদ্ধার ও চালু করার কাজটি যথেষ্ট বেগবান ছিল । এতে অনেকগুলো খাল দখল মুক্ত করে চালু করা সম্ভব হয় । খালের উপর নির্মিত বহু সংখ্যক অস্থায়ী স্থাপনা , তিন চার তলা ভবন , রাস্তা ইত্যাদি অপসারন করা হয় । বেশ কিছু খালের খালের সীমানা নির্ধারন করে কংক্রিটের পিলার স্থাপন করা হয় । খালে ঘর বাড়ীর বর্জ্য সমূহ নিক্ষেপ না করার অনুরোধ সম্বলিত সাইনবোর্ড লাগানো হয় । তবে এসবের দীর্ঘ মেয়াদী ফলাফল পাওয়া যাচ্ছেনা । এর কারন হচ্ছে পূণরায় বেদখল এবং খাল গুলোতে প্রতিনিয়ত ব্যাপক হারে ময়লা আবর্জনা নিক্ষেপ । সংশ্লিষ্ট সংস্থা গুলো মাঝে মাঝে খাল অবৈধ দখল মুক্ত করার অভিযান পরিচালনা করছে বটে কিন্তু কোন লাভ হচ্ছেনা । অধিকন্তু খালের যতটুকু প্রবাহের জন্য অবশিষ্ট থাকে তাও নিত্য আবর্জনা নিক্ষেপের ফলে ভরাট হয়ে যায় ।
মহানগরীকে বাসযোগ্য রাখতে খালের গুরুত্ব অনেক । বাংলাদেশে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় । এর পরিমান প্রায় ২০০০ মিলিমিটার । কখনো কখনো একটানা কদিন ধরে ২০০/৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতও হয়ে থাকে । বিদ্যমান খালগুলোর মাধ্যমেই এই পানি নদী পযর্ন্ত পৌঁছে । ঢাকা মহানগরীতে ঢাকা ওয়াসার ১০.২৫ কিলোমিটার বক্স কালভার্ট ও ২৮০ কিলোমিটার পাইপ ড্রেন বিদ্যমান আছে । যা রাস্তা ঘাট মহল্লার পানি বহন করে খালগুলোতে পৌঁছে দেয় । খালের মোট দৈর্ঘ ৬৫ কিলোমিটার । খাল গুলো এই পানিকে নদীতে নিয়ে যায় । উল্লেখ্য, নদীর পানির লেভেল নিচু হলে খালের পানি সরাসরি নদীতে পতিত হতে পারে । কিন্তু বন্যা বা অতি বর্ষনে নদীর পানির লেভেল বেড়ে গেলে নগরীর প্রান্ত সীমাগুলোতে মোট চারটি পাম্পিং স্টেশনের মাধ্যমে পানিকে পাম্প করে নদীতে অপসারণ করা হয় । এসময় নদীর পানি যাতে উল্টা খালের মাধ্যমে ভেতরে ঢুকে না পড়ে সেজন্য পাম্পিং স্টেশনে খালের মুখের স্লুইস গেটগুলো বন্ধ রাখা হয় । পাম্পিং স্টেশন গুলো হল কল্যাণপুর, ধোলাইখাল, রামপুরা ও গোড়ান চটবাড়ী । এর মাঝে প্রথম তিনটি ঢাকা ওয়াসার এবং শেষেরটি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এর । এই হচ্ছে মহানগরীর বৃষ্টির পানি অপসারনের পদ্ধতি । এখানে খালের গুরুত্ব অপরিসীম । খাল গুলো যথাযথ সচল না থাকার কারনে প্রতি বছর প্রবল বর্ষায় নগরীতে জলাবদ্ধতার ঘটনা ঘটে এবং জন দূর্ভোগের কারন হয় ।
বিগত এক দশকের অভিজ্ঞতায় দেখা যাচ্ছে খাল বেদখল ও ভরাটের প্রকৃয়া ও উদ্ধার কাযর্ক্রম চলছে, তবে স্থায়ী কোন সমাধানে পৌঁছানো যাচ্ছে না । কিন্তু এই সমস্যার একটি টেকসই সমাধান যে জরুরী এতে কোন দ্বিমত নেই ।
উল্লেখ্য, নগরীর ভেতরের পানি খাল গুলোর মাধ্যমেই নদীর দিকে প্রবাহিত হয় । খাল গুলোর ধারন ক্ষমতা যত বেশি হবে এবং প্রবাহ যত বাধাহীন হবে পানি তত দ্রুত সরে যাবে । ফলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবেনা এবং জনভোগান্তি হ্রাস পাবে । তাই ঢাকার বুকের বিদ্যমান খাল গুলো দখলমুক্ত ও চালু রাখা অতীব জরুরী । বলা বাহুল্য, জনগনের সম্পৃক্ততা ছাড়া এই ধরনের লক্ষ্য অর্জন অন্তত আমাদের দেশে সম্ভব নয় । কারন হল ক্ষুদ্র হলেও সাধারন নাগরিকবৃন্দের একটি অংশই খাল অবৈধ ভোগ দখল করে থাকে । খাল সংলগ্ন ও পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকজন খালকে ডাস্টবিন হিসেবে ব্যবহার করে থাকে । এই বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ । কারন মানুষের বাসা বাড়িতে প্রতিনিয়ত আবর্জনা জমা হবে এবং তা কোথাও না কোথাও ফেলতে হবে । এসব আবর্জনা ফেলার জায়গা পাওয়া মানুষের নাগরিক অধিকারও বটে । গৃহস্থালী এসকল বর্জ সংগ্রহ ও অপসারনের দায়িত্ব ঢাকা সিটি করপোরেশনের । সংস্থাটি তা করেও থাকে । কিন্তু তাদের সেবা কাযর্ক্রম যথেষ্ট নয় । বিশেষতঃ খাল তীরবর্তী কিছুটা অনুন্নত এলাকায় তাদের বর্জ অপসারন সেবা প্রায় অনুপস্থিত । ফলে এসব এলাকার মানুষ নিরুপায় হয়ে বর্জসমূহ খালে নিক্ষেপ করে থাকে । ডিসিসি যদি এসব এলাকায় বর্জ সংগ্রহ সেবা কাযর্ক্রম সম্প্রসারন করে এবং বিদ্যমান ব্যবস্থাকে চাহিদা অনুযায়ী বর্ধিত করে তবে তা যথেষ্ট ফলপ্রসূ হবে । মানুষ জন অতি সহজেই ডাস্টবিনে বর্জ ফেলতে পারবে । খালগুলো রেহাই পাবে বর্জ নিক্ষেপের হাত থেকে । এতে খালগুলোকে সারা বছরই পূর্ণ মাত্রায় চালু রাখা সম্ভব হবে ।
ডিসিসির যে সকল ওয়ার্ডের ভেতর দিয়ে খালগুলো গেছে সেসবে স্থানীয় কাউন্সিলরের নেতৃত্বে একটি করে নাগরিক কমিটি গঠন করা যেতে পারে । যাতে এলাকার সচেতন ও গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অন্তর্ভূক্ত থাকবেন । যারা খালগুলো অবৈধ দখল মুক্ত রাখতে ভূমিকা নেবেন এবং একই সাথে খালে বর্জ নিক্ষেপ যাতে না হয় সেদিকেও লক্ষ রাখবেন । এই ব্যবস্থা করা গেলে খালগুলো দখল মুক্ত ও সচল রাখা অবশ্যই সহজ হবে ।
২| ০২ রা মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:২৬
মনসুর-উল-হাকিম বলেছেন: "বাস যোগ্য ঢাকার জন্য খাল গুলো বাঁচানো অতি জরুরী" - একমত।
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:১৬
provat বলেছেন: খালগুলির নকসা কোথায় পাবো বলতে পারবেন কি ?