নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি সাধারণ মানুষ কিন্তু অসাধারণ কিছু ভাবতে ভালোলাগে।

ইয়াছির মিশুক

আমি ইয়াছির মিশুক এছাড়া পরিচয় দেয়ার মতো উল্লেখ যোগ্য কিছু নেই আমার। লেখালেখির অভিজ্ঞতা বলতে পরিক্ষার খাতায় প্রশ্নের উত্তর লেখার অভিজ্ঞতাটাই উল্লেখ যোগ্য। ভালোলাগে মানুষের হাসিমুখ দেখতে। মলিন, রুক্ষ, বেদনাময় পৃথিবীতে একটু হাসির উপলক্ষ তৈরি করার জন্য লেখার চেষ্টা করি। সফলতা নিয়ে কোন ভাবনা আসেনা তাই লেখতে দ্বিধা করিনা।

ইয়াছির মিশুক › বিস্তারিত পোস্টঃ

গরু জ্ঞান

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৪০


কালা মিয়ার বয়স হয়েছে। একটা সময় ছিল যখন তিনি হাট থেকে গরু কিনে একাই টানতে বাড়ি নিয়ে আসতেন। এখন আর গায়ে সেই বল নেই। এখন গরু টানতে গেলে উল্টো গরুই তাকে টেনে নিয়ে যাবে।
তাই গেল তিন বছর ধরে তার বড় ছেলে লাল মিয়াই কুরবানীর গরু কেনার দায়িত্ব পলন করেছে। টানা তিন বছর কুরবানীর গরু কিনে লাল মিয়ার 'গরু' বিষয়ে এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে যে সে এখন অস্ট্রেলীয়ায় এক গরুর খামারে চাকরি করে। শুনেছি তার নাকি পদন্নোতিও হয়েছে।
তাই বড় ছেলে লাল মিয়ার অনুপস্থিতিতে এবারের কুরবানীর গরু কেনার দায়ীত্ব পড়েছে ছোট ছেলে সবুজ মিয়ার উপর। সবুজ মিয়া আবার ' গরু সম্পর্কে একেবারে অনভিজ্ঞ। গরু আর মহীসের মধ্য সাধারণ পার্থক্যও সে জানেনা এমনকি ছাগল আর বাছুর কে পৃথক ভাবে সনাক্ত করার নূন্যতম জ্ঞান টুকুও তার নেই।
এমন অবস্থায় চিন্তায় তার মাথা টাক হওয়ার দশা। উপায়ান্তর না পেয়ে সবজান্তা সুলতান সরকারের সরনাপন্ন হলো সবুজ মিয়া।
সুলতান সরকার কে সবজান্তা না বলে সব পারুয়া বললে ভালো হয়। এমন কনো কাজ নাই যেই কাজে সুলতান সরকারের অভিজ্ঞতা নাই বা এমন কনো কাজের ক্ষেত্র নাই যেখানে সুলতান সরকারের জানাশোনা লোক নাই।
যেকোনো সময় যেকোনো কাজে সুলতান সরকারের স্মরণাপন্ন হলে নিমিষেই কাজ সম্পাদিত হয়ে যায়।
এইতো গতবছর জৈষ্ঠ মাসে সবুজ মিয়ার আম্মাজানের ফরমালিন মুক্ত গাছপাকা ল্যাংড়া আম খাওয়ার প্রবল ইচ্ছা হলো। ঢাকা শহরে ফরমালিন মুক্ত গাছপাকা ল্যাংড়া আম কোথায় পাবে! ওদিকে সবুজ মিয়ার আম্মাজান আম না পাওয়ার দুঃখে পিতৃগৃহ পথযাত্রী। (আমের অভাবে তো আর মৃত্যু পথযাত্রী হওয়া যায়না।)
এমতাবস্থায় কালা মিয়া তার কনিষ্ঠ পুত্র সবুজ মিয়াকে বললেন সুলতান সরকার কে ডেকে আনতে। বাবার বাধ্য সন্তান হুকুম পাওয়া মাত্রই সুলতান সরকারকে ডেকে নিয়ে এলো।
সব কথা শুনে সুলতান সরকার বললো "এ আর এমন কঠিন কি কাজ? আজ কে ফোন করলে কালকেই ফরমালিন মুক্ত গাছপাকা ল্যাংড়া আম চলে আসবে বাসায়। "
তার কথা শুনে কালা মিয়া আর সবুজ মিয়া তো অবাক। চোখ কপালে তুলে কালা মিয়া জিজ্ঞেস করলেন "কিভাবে সম্ভব? "
সুলতান সরকার বলল "আমার এক বন্ধু আছে চাপাইনবাবগঞ্জ বাড়ি। তার তো বিশাল বিশাল তিনটা আম বাগান। একটা বাগানের আম সে বিক্রি করে আরেকটি বাগানের আম সে গরীব দুখী দের দান করে আর সবচেয়ে ছোট যেই বাগান তাও প্রয় দুই একর জায়গা জুড়ে সেই বাগানের আম সে নিজের পরিবার আর আত্মিয় স্বজনদের জন্য রেখে দেয়। আমি আজকেই ফোন করে বলবো ওর পারিবারিক বাগান থেকে ফরমালিন মুক্ত গাছপাকা ল্যাংড়া আম পাঠাতে। "
সবুজ মিয়া মনে মনে বলে "যেভাবে তিন ভাগ করেছে মনে হচ্ছে এটা আম বাগান না কুরবানীর গরু। "
কালা মিয়া বলে "লোকটা যেমন ধনবান তেমন দিলদার। তাইলে তুমি ফোন করে বলে দাও আম পাঠাতে, টাকাপয়সা যা লাগে আমি দিমু। "
সুলতান সরকার সত্যিই পরের দিন এক ঝুড়ি আম নিয়ে এসেছিলো। যেহেতু আমগুলো সত্যি সত্যি চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে আনা হয়েছে কিনা তা যাচাই করার মত যোগ্যতা আর অভিজ্ঞতা কারো ছিলোনা সেহেতু আমগুলোকে সুলতান সরকারের চাপাইনবাবগঞ্জের বন্ধুর নিজস্ব বাগানের আম হিসেবেই ধরে নেয়া হলো। ঝুড়ি খোলার পর দেখা গেলো প্রতিটি আম একটু একটু পচা আর নরম। তাই কালা মিয়া জিজ্ঞেস করলেন "বাবা সুলতান, আম গুলো পচা মনে হচ্ছে। "
সুলতান সরকার বললো "চাচা, এগুলো তো পচা না, এমনিতেই ল্যাংড়া আম তারউপর এতো দূরের পথ পারি দিয়ে এসেছে আবার তাতে ফরমালিনও দেয়া হয়নি এজন্য একটু নরম নরম হয়েছে আরকি। "
পচা গলা যাইহোক সুলতান সরকারএর কারনেই সবুজ মিয়ার আম্মাজানের পিতৃগৃহ যাত্রা তো থামানো গিয়েছিল।
এবারের গরু কেনার ব্যপারেও তাই সুলতান সরকারই একমাত্র ভরসা।
সবুজ মিয়া তার গরু কেনা সম্পর্কিত সকল সমস্যার কথা বিস্তারিত ভাবে সুলতান সরকারের কাছে উপস্থাপন করলো। সব কথা শুনে সুলতান সরকার বললো "এটা কনো সমস্যাই না! "
সবুজ মিয়া তো ভিষণ রকমের অবাক, তার কাছে যেটা পাহাড় সমান সমস্যা সুলতান সরকারের কাছে সেটা কোনো সমস্যাই না।
সুলতান সরকার বললো "চলো ছোট ভাই চাএর দোকানে চলো, চা খেতে খেতে কথা বলি। "
চা খেতে খেতে সুলতান সরকার সবুজ মিয়াকে গরু বিষয়ে জ্ঞান প্রদান করছে। চায়ের দোকান উপস্থিত আরো লোকজনও মনোযোগ দিয়ে তার কথা শুনছে।
সুলতান সরকার বলছে " গরুর সিং হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যে গরুর সিং যত বড় সেই গরু ততোই শক্তিশালী। "
সবুজ মিয়া বললো "বুঝতে পেরেছি, তাহলে বড় সিং ওয়ালা গরু কিনতে হবে। "
- "আরে নাহ, শক্তিশালী গরু কুরবানী দিতে খুব ঝামেলা হয়। "
- "তাইতো! "
- "গরুর লেজের দিকেও খেয়াল করতে হয়, যে গরুর লেজে যত বেশী চুল সেই গরু ততো বেশি বুদ্ধিমান। "
- "তাহলে কি লেজ দেখে গরু কিনতে হবে? "
-"আরে নাহ, গরুর বুদ্ধি দিয়ে তুমি করবা কি? "
-"তাওতো ঠিক। "
উপস্থিত সবাই সুলতান সরকারের 'গরু' বিষয়ক লেকচার খুবএ মনোযোগ সহকারে শুনছিলো। শহরের লোকজন, গরু সম্পর্কে তেমন কিছু জানেনা। তাই এখান থেকে কিছু শেখার চেষ্টা করছে আর মনে মনে সুলতান সরকারের 'গরু' সম্পর্কিত জ্ঞানের প্রশংসা করছে।
চা ভেজানো বিস্কুট মুখে নিয়ে কামড়াতে কামড়াতে সুলতান সরকার বললো -"ভালো করে খেয়াল করলে দেখবা টানা টানা চোখ ওয়ালা গরুগুলো খুব মায়াবী হয়। "
-"এবার তাহলে টানা টানা চোখের গরু কিনবো। "
-"না না একদমই না, গরু মায়াবী হলে আবার কুরবানী দিতে ইচ্ছে করবে না। "
-"তাহলে কেমন গরু কিনবো? "
-"আগে আমার কথা শুন, গরুর কিন্তু চারটা পা থাকে। "
- " তা তো জানিই, সেই ছোটবেলায় গরুর রচনা পড়েছিলাম- গরুর দুটি চোখ, দুটি কান, দুটি সিং, এক গুচ্ছ চুল সহ একটি লম্বা লেজ এবং চারটি পা আছে। "
সবুজ মিয়ার রচনা বলা থামিয়ে দিয়ে সুলতান সরকার বলতে শুরু করলো-" হ্যাঁ, গরুর পায়ের দিকে একটু নজর দিবা। যে গরুর পা যতো মোটা সেই গরু ততো বেশী কর্মঠ। "
-" বুঝতে পারছি, মোটা মোটা পা দেখে গরু কিনতে হবে, তাইনা সুলতান ভাই? "
-"আরে নাহ, তুমি কর্মঠ গরু দিয়া করবা কি? তুমিতো হাল চাষ করবা না, কুরবানী দিবা। "
-" তাইলে কেমন গরু কিনবো ভাই? "
-"কুরবানীর গরু কিনতে হয় স্বাস্থ্য দেখে, আর অভিজ্ঞ মানুষ চেহারা দেখলেই বুঝতে পারে কোন গরুটা স্বাস্থবান। "
-"সুলতান ভাই, আমিতো একেবারেই অনভিজ্ঞ, আমি কিভাবে স্বাস্থবান গরু চিনবো? "
-"চিন্তার কনো কারণ নেই আমি আছি না? আমি তোমার সাথে গরু কিনতে যাব। "
পরদিন বিকেল বেলা অভিজ্ঞ সুলতান সরকার আর অনভিজ্ঞ সবুজ মিয়া গেল গরুর হাটে গরু কিনতে। হাটে গিয়ে সুলতান সরকার একবার এদিকে যায় আরেকবার ওদিকে। একটা গরুর গায়ে হাত বুলায় তা আরেকটা গরুর সিংএ টোকা দেয়। তার সে কি ভাব! তার ভাব দেখে বড় বড় গরুর ব্যাপারিরাও হা করে চেয়ে রইলো।
সুলতান সরকার সবুজ মিয়াকে বলে ওই গরুটা খুবি মোটা তাজা, চলো দাম জিজ্ঞেস করি। ব্যাপারিকে জিজ্ঞেস করলো "এই গরুটার দাম কত? "
ব্যপারি বললো "এইডা তো গরু না, মহীস। "
সুলতান সরকার চশমাটা খুলে পকেট থেকে রুমাল বের করে চশমার গ্লাস মুছতে মুছতে বললো "হাটে অনেক ধুলাবালি, গ্লাসটা একেবারে আবছা হয়ে গেছে। "
তারপর চশমাটা আবার চোখে দিয়ে মহীসএর দিকে তাকিয়ে বললো "ওহ, তাইতো, এটাতো মহিস। "
গরু যাচাই বাচাই করতে করতে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে গেলো। অবশেষে পঁয়তাল্লিশ হাজার টাকা দিয়ে একটা গরু কিনে তারা বাড়ির দিকে পা বাড়ালো ।
সবুজ মিয়া বড়ই খুশি, প্রথমবারের মতো গরু কেনার দায়িত্ব পেয়ে সে সফল ভাবে তার দায়িত্ব পলান করতে পেরেছে। সবুজ মিয়া বিজয়ী সৈনিকের মতো বুক ফুলিয়ে নিজ গৃহে প্রবেশ করলো।
পরদিন সকালবেলা কালা মিয়া আবিষ্কার করলেন তার ছোট পুত্র পঁয়তাল্লিশ হাজার টাকা দিয়ে একটা গাভী কিনে এনেছে।
অতপর সবুজ মিয়া পরাজিত সৈনিকের ন্যায় গা ঢাকা দিলো।
.....
........

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.