![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ইয়াছির মিশুক এছাড়া পরিচয় দেয়ার মতো উল্লেখ যোগ্য কিছু নেই আমার। লেখালেখির অভিজ্ঞতা বলতে পরিক্ষার খাতায় প্রশ্নের উত্তর লেখার অভিজ্ঞতাটাই উল্লেখ যোগ্য। ভালোলাগে মানুষের হাসিমুখ দেখতে। মলিন, রুক্ষ, বেদনাময় পৃথিবীতে একটু হাসির উপলক্ষ তৈরি করার জন্য লেখার চেষ্টা করি। সফলতা নিয়ে কোন ভাবনা আসেনা তাই লেখতে দ্বিধা করিনা।
ভাষা আর দেশের প্রতি আমরা বাঙ্গালীরা অনেক সংবেদনশীল। তার যথেষ্ট কারণও আছে। আমাদের ভাষা আর আমাদের দেশটাকে তো আমরা অনেক কষ্ট করে অর্জন করেছি তাই আমরা সবকিছুতেই দেশপ্রেম খুজি বা দেশপ্রেমের বহিপ্রকাশ করতে চাই।
আমাদের ফসলের মাঠ থেকে রাজনৈতিক বক্তৃতার মাঠ পর্যন্ত দেশপ্রেমে টইটম্বুর।
আমরা দেশকে ভালোবাসি ঠিকই কিন্তু যতটা না ভালোবাসি তারচেয়ে বেশী ভালোবাসা দেখানোর চেষ্টা করি। গলায় সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে হলেও প্রচার করতে চাই আমি দেশপ্রেমিক।
কেউ কেউ আবার সত্যি সত্যি মনের গভীর থেকে দেশকে ভালোবাসে, নীরবে লোক চক্ষুর অন্তরালে। দেশের কাছ থেকে কিছু পাওয়ার জন্য না দেশকে কিছু দেওয়ারর জন্য।
অনেকে আবার দেশকে ভালোবাসতে চেয়েও ভালোবাসতে পারেনা তাদের পদ্ধতিগত ভুলের কারনে বা পরিবেশ পরিস্থিতির কারনে।
অনেক বছর আগের কথা। মানুষ তখন সবেমাত্র মোবাইল ফোন ব্যবহারে অভ্যস্ত হচ্ছে। এমন সময় বের হলো রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত একমাত্র মোবাইল ফোন সংযোগ কম্পানি টেলিটক। কিন্তু দুর্বল নেটওয়ার্কের কারনে তখনো সেটি মানুষের কাছে তেমন গ্রহণ যোগ্যতা পায় নি। তাদের নেটওয়ার্ক ছিলো বৃদ্ধ মানুষের দাতের মতো নড়বড়ে। কোথাও ফোন করতে গেলে নেটওয়ার্ক থাকতো না। আবার দির্ঘ্য সময় চেষ্টার পর কারো সাথে সংযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হলেও খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার সময় হঠাৎ করেই লাইনটা কেটে যেতো তারপর হাজার চেষ্টা করেও আর সংযোগ স্থাপন করা যেতো না।
আমার এক শিক্ষক ছিলেন যিনি এতো সব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে তখনো টেলিটক সংযোগ ব্যবহার করতেন। কারণ জিজ্ঞেস করলে বলতেন "আমি দেশকে ভালোবাসি তাই আমি চাই দেশের টাকা দেশেই থাকুক। "
আমরা স্যারের দেশপ্রেম দেখে অভিভূত হতাম।
একদিন স্যার ফোন করতে গিয়ে দেখে ব্যালেন্স শুন্য অথচ কিছুক্ষণ আগেও স্যার ব্যালেন্স চেক করেছেন তখন ছাব্বিশ টাকা ছিলো। তারপর আর কোথাও কথা বলেননি, ফোনটা পকেটেই ছিলো।
প্রয়জনের সময় এমন দুরাবস্থায় পড়ে স্যারএর মাথা গরম হয়ে গেলো। সাথে সাথে ফোন থেকে টেলিটক সিম খুলে পানিতে ফেলে দিলেন।
আমি সেদিন খুব অবাক হয়ে ভাবছিলাম মাত্র ছাব্বিশ টাকার জন্য কিভাবে স্যার তার
দেশপ্রেম কে পুকুরে বিসর্জন দিলেন!
স্যারএর দেশপ্রেম বিসর্জনের কারনটা সেদিন না বুঝলেও পরে বুঝতে পেরেছিলাম। কিভাবে বুঝতে পেরেছিলাম তা একটু পরে বলছি, তার আগে দুটি ঘটনা বলে নেই।
আমার বন্ধু আজমের বড় চাচা দেশের প্রতি ভালোবাসা আর শ্রদ্ধাবোধ থেকে সিদ্ধান্ত নিলেন তার বাসায় কোনো ভারতীয় সিরিয়াল আর বিদেশী চ্যানেল চলবে না শুধু বাংলাদেশি চ্যানেল চলবে। তিনি গনতন্ত্রে বিশ্বাসী মানুষ তাই গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এ বিষয়ে পরিবারের সবার মতামত চাইলেন। তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস কারো নেই তাই বিনা বাধায় তার পরিবারে এই আইন পাশ হলো।
আইন ভঙ্গ করা এখন আমাদের জাতিগত বৈশিষ্ট্যে পরিনত হয়েছে। আইন তৈরি হবে আর আমরা সেই আইন ভঙ্গ করবো এটাই যেন আমাদের অঘোষিত আইন।
যথারীতি আজমের চাচার বাসায়ও আইন ভঙ্গের প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেলো। সারাদিন সবাই বিদেশী চ্যানেল দেখে। হিন্দি সিরিয়াল, ইংলিশ মুভি আরো কতোকি! আগে যাও একটু আধটু দেশের খবরাখবর দেখতো এখন তাও কেউ দেখেনা। চাচা যখন অফিস থেকে বাসায় আসে তখনই কেবল সেই দেশি চ্যানেল দেখার আইন কার্যকর হয়। চাচা খুব একটা টেলিভিশন দেখেন না তাই দেশি চ্যানেলের হালচালও জানেন না । এক শুক্রবারে সন্ধ্যায় চাচা হাসিখুশি মুখ নিয়ে টেলিভিশনের সামনে বসলেন বাংলাদেশি নাটক দেখার জান্য। এক চ্যানেলে নাটক দেখা শুরু করলেন, পাঁচ মিনিট নাটক হলে দশ মিনিট হয় বিজ্ঞাপন। বিরক্ত হয়ে চাচা অন্য চ্যানেল ধরলেন। সেখানেও একি অবস্থা। এক চ্যানেল থেকে অন্য চ্যানেলে যায়, সব খানে শুধু বিজ্ঞাপন। নাটকের ফাকে ফাকে বিজ্ঞাপন না বিজ্ঞাপনের ফাকে ফাকে একটু একটু নাটক দেখায়। অবশেষে চাচা বিরক্ত হয়ে চলে গেলেন ভারতীয় সিরিয়ালে "পটল কুমার, পটল কুমার, পটল কুমার গান ওয়ালা ..।"
এক্ষেত্রে চাচার দেশ প্রেম পরাজিত হলো।
এর জন্য কিন্তু আমরা চাচাকে দোষারোপ করতে পারিনা।
এবার দ্বিতীয় ঘটনাটা বলি। আমাদের এলাকার তোফায়েল সরকার। ইটালিয়ান প্রবাসী। ইটালিতে তার অনেক বড় ব্যবসা। অঢেল ধনসম্পদের মালিক। দেশে খুব একটা না আসলেও মনের মাঝে দেশপ্রেম ঠিকই আছে। তাহ তিনি ভাবলেন এবার দেশের জন্য কিছু করা দরকার।
অনেক বড়সর পরিকল্পনা নিয়ে তিনি দেশে এলেন। দেশে একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি করবেন। সেখানে অনেক বেকার ছেলে মেয়ের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। খুবি মহৎ উদ্দেশ্য।
ফ্যাক্টরি করার জন্য তো জমি দরকার। জমিও পছন্দ করলেন নারায়ণগঞ্জে। মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে সেই জমি খরিদও করলেন।
তারপর জানতে পারলেন যাদের কাছ থেকে জমি কিনেছেন তার ওই জমির মালিকই না।
তার জমিও গেলো, টাকাও গেলো।
এতক্ষণ যাদের কথা বললাম তারা সবাই দেশকে ভালোবাসতে চেয়েছিলেন কিন্তু শেষ অব্দি সেই ভালোবাসা ধরে রাখতে পারেননি। এজন্য আপনি কাকে দোদোষারোপ করবেন?
শুরু করেছিলাম টেলিটক নিয়ে এবার আবারো টেলিটকে ফিরে আসি।
আমার একটা টেলিটক সিম আছে। আমিও চাই দেশের টাকা দেশেই থাক।
একদিন টেলিটকের ওয়েবসাইটে গিয়ে তাদের ডাটা অফার দেখছিলাম। সেখানে দেখতে পেলাম একশত টাকায় এক জিবি ডাটা, মেয়াদ এক মাস। ভালো লাগলো। আমি সেই ডাটা প্যাকেজ কিনলাম।
কিন্তু সমস্যা হলো রাতের বেলায় ডাটা কানেকশন অফ হয়ে যায়। প্রথমে আমি ভেবেছিলাম হয়তো নেটওয়ার্কে সমস্যা।
পরপর দু-তিন দিন একই ঘটনা ঘটার পর কাস্টমার কেয়ারে ফোন দিলাম। আমার সমস্যার কথা জানাতেই কাষ্টমার এক্সিকিউটিভ বললেন আমি যেই প্যাকেজ কিনেছি তার ডিউরেশন নাকি রাত বারোটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত! এজন্যই রাত আটটার পরে ডাটা কানেকশন অফ হয়ে যায়।
এমন জানলে তো আমি সেই প্যাকেজ কিনতাম না। আবারো টেলিটকের ওয়েবসাইটে গেলাম। ভালোকরে দেখলাম সেখানে কোনো ডিউরেশনের কথা লেখা নাই।
খুব রাগ হলো, তবুও ব্যাপার টা মেনে নিলাম।
পরদিন দেখি আমার ব্যালেন্স শুন্য! আমি তো অবাক! এখন নেট ও ব্যাবহার করা যাচ্ছে না। কোথাও ফোন করলে বলে "আপনার সংযোগটি সাময়িক ভাবে স্থগিত। "
মাথাটা গরম হয়ে গেলো। সাথে সাথে টেলিটক সিম খুলে প্যাকেট করে রেখে দিলাম।
সেদিন বুজতে পারলাম স্যার কেন ছাব্বিশ টাকার জন্য তার দেশপ্রেমকে পানিতে বিসর্জন দিয়েছিলেন।
যাই হোক আমরা দেশকে ভালোবাসি, দেশকে ভালোবাসবো।
....
......
©somewhere in net ltd.