নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি সাধারণ মানুষ কিন্তু অসাধারণ কিছু ভাবতে ভালোলাগে।

ইয়াছির মিশুক

আমি ইয়াছির মিশুক এছাড়া পরিচয় দেয়ার মতো উল্লেখ যোগ্য কিছু নেই আমার। লেখালেখির অভিজ্ঞতা বলতে পরিক্ষার খাতায় প্রশ্নের উত্তর লেখার অভিজ্ঞতাটাই উল্লেখ যোগ্য। ভালোলাগে মানুষের হাসিমুখ দেখতে। মলিন, রুক্ষ, বেদনাময় পৃথিবীতে একটু হাসির উপলক্ষ তৈরি করার জন্য লেখার চেষ্টা করি। সফলতা নিয়ে কোন ভাবনা আসেনা তাই লেখতে দ্বিধা করিনা।

ইয়াছির মিশুক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফিউচার প্ল্যান

০২ রা আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১০:০৬

বেলা এগারোটা বাজে। কেমন যেনো অলসতা লাগছে। একটু চা খাওয়া দরকার। রান্নাঘরে গিয়ে দেখি চা পাতির বয়াম খালি। চিনির বয়ামে আট-দশ দানা চিনি। ওগুলো পিপড়াদের জন্য উৎসর্গ করে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।
ঘরে বসে থাকলে তো আর চা খাওয়া হবেনা। পকেটে চকচকে বিশ টাকার নোট নিয়ে বেড়িয়ে পরলাম বাইরে গিয়ে চা খাবো বলে। নগদ টাকা খরচ করে সামান্য পাতা ভেজানো গরম পানি খেতে মন সায় দেয় না আবার না খেলেও ভাললাগেনা, আজব জিনিস একটা!
রাস্তায় বেরিয়ে কিছুদুর এগোতেই একটা বিলবোর্ডে ফেয়ার এন্ড লাভলির বিজ্ঞাপন চোখে পড়লো। ওখানে আগেও ফেয়ার এন্ড লাভলির বিজ্ঞাপন ছিলো। এখন নতুন আরেকটি লাগিয়েছে "ফেয়ার এন্ড লাভলি লেজার ট্রিটমেন্ট "। হা হা, যা শুরু করেছে ফেয়ার এন্ড লাভলি না হেসে পারলাম না। আগে তো সাত দিনেই ত্বক ফরসা করে দিতো আর এখন লেজার রশ্মি ধরে ধরে ক্রিমের টিউবে ভরে দিচ্ছে। আচ্ছামতো টুপি পড়াচ্ছে আমাদের।
আরেকটু এগুতেই হাতের বা পাশে একটি কিন্ডার গার্টেন পড়লো। কিন্ডার গার্টেনএর সামনে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি।
স্টুডেন্ট হচ্ছে এদের কাছে কাস্টমার। একটা স্টুডেন্ট মানে একটা টাকার গাছ। ভর্তি হওয়া থেকে টাকা নেয়া শুরু তারপর মাসে মাসে পরিক্ষা ফি, এই ফি সেই ফি আরো কতো কি।
মাথায় একটা দুষ্ট বুদ্ধি এলো। কিন্ডার গার্টেনএর ভিতরে ঢুকলাম। দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করলাম হেড স্যার এর রুম কোনটা, দারোয়ান দেখিয়ে দিলো। সোজা চলেগেলাম হেডস্যার এর কক্ষে। অনুমতি নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলাম।
কেমন যেনো একটা গুরুগম্ভীর মুড নিয়ে হেড স্যার আমাকে জিজ্ঞেস করলেন কি দরকারে এসেছি। আমি বললাম - আসলে আমার ছেলেকে ভর্তি করবো তো তাই আপনার স্কুলটা দেখতে এলাম।
ছেলেকে ভর্তি করবো শুনেই মাস্টার মশাইএর চোখ জ্বলজ্বল করে উঠলো, চেহারা থেকে গুরুগম্ভীর ভাবটা উধাও হয়ে গেলো। স্যার বললেন - আসেন আপনাকে স্কুলটি ঘুরিয়ে দেখাই। রুম থেকে বের হবার সময় পিয়নকে ইশারায় কি যেনো বললেন হেডস্যার।
হেডস্যার এর সাথে সাথে হাটছি, তিনি বিভিন্ন শ্রেণী কক্ষ ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছেন আর স্কুলের প্রসংশা করছেন। স্কুল দেখে তো আর স্কুল মনে হয় না মনেহয় শিশু পার্ক। প্রতিটি ক্লাস রুমে বেঞ্চের চেয়ে শিশুদের খেলার রাইডই বেশী।
স্কুল পরিদর্শন শেষ করে হেডস্যারের অফিসে ফিরে এসে দেখি চা, বিস্কুট, চানাচুর রেডি। বুঝতে পারলাম অফিস থেকে বের হওয়ার সময় স্যার পিয়নকে এই ইশারাই করেছিলেন। যখন কোনো অভিভাবক তার সন্তানকে ভর্তি করতে কোনো কিন্ডার গার্টেনএ যায় তখন তার জন্য ভালোই আদর আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়। আসলে এটা আপ্যায়ন না এটা ইনভেস্ট।
ফ্রি এক কাপ চা খেলাম, সাথে চানাচুর আর বিস্কুট। খাওয়া শেষ হতে না হতেই স্যার বললেন - তাহলে আপনার ছেলেকে আমাদের স্কুলে ভর্তি করছেন তো?
আমি বললাম - হ্যাঁ আপনাদের এখানেই ভর্তি করবো, তবে এখন না, ছেলে যখন বড় হবে তখন।
স্যার ভ্রু কুঁচকে বললেন - আপনার ছেলের বয়স কতো?
আমি বললাম - বয়সতো এখনো শুরুই হয়নি।
- তার মানে?
- মানে এখনো তো বিয়েই করিনি, আগে বিয়ে করি তারপর ...।
স্যার বেশ বিরক্ত হলেন । চেহারা দেখে মনে হচ্ছে কিছুটা রেগে গেছেন। সমস্যা নেই, রাগ কে পানি করার কৌশল আমার জানা আছে।
এতক্ষনে সূয্যিমামাও তেতে উঠেছে, ভালোই গরম পড়েছে। একটু কোল্ড ড্রিংকস খেলে ভালো হতো। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম এখান থেকেই কোল্ড ড্রিংকস খেয়ে যাবো।
আমি হাসি মুখে বললাম - বুঝতে পারলেন না স্যার? এটা হচ্ছে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, ইংরজিতে যাকে বলে ফিউচার প্ল্যান আর আরবিতে যাকে বলে..
স্যার আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন - থাক থাক আর আরবি বলতে হবে না। এরকম ফিউচার প্ল্যান কেউ করে!
আমি বললাম - আপনি তো ফিউচার প্ল্যানের গুরুত্বই বুঝেন না দেখছি। আরদেসিয়ান কে চিনেন?
- না।
- কি বলেন, আপনি আরদেসিয়ানকে চিনেন না! একটু তাচ্ছিল্যের সুরে বল্লাম। স্যার কিছুটা লজ্জা পেলেন। আমি আবার বললাম - নেপোলিয়নকে চিনেনতো?
স্যার এবার একটু উৎসাহের সাথে বললেন - চিনি, চিনি।
আমি বললাম - আরদেসিয়ান হচ্ছে সেই নেপোলিয়ানের ছোট মামা। নেপোলিয়নের সফলতার পিছনে আরদেসিয়ানের অবদান সবচেয়ে বেশি। তিনি একদিন নেপোলিয়নকে ডেকে বললেন "বাবা নেপোলিয়নে, জীবনে সফল হওয়ার জন্য ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা থাকাটা খুবি জরুরি।"
নেপোলিয়ান তার ছোট মার এই উপদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করার কেরনেই তো সফল হতে পেরেছে, ইংরেজিতে যাকে বলে সাকসেস আর আরবিতে কি বলে তা এখন মনে পড়ছে না, পরে আরেকদিন বলবো।
স্যার এবার বিস্ময়ের সাথে বললেন - তাই নাকি?
আমি বললাম - হুম।
খেয়াল করলাম স্যারের রাগ কমে গেছে আর আমার কথা শুনার প্রতি আগ্রহও বেড়েছে।
আমি আবার বললাম - ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথ বলেছে আলেকজান্ডার ওয়ারিহাম।
আলেকজান্ডার ওয়ারিহামকে চিনেনতো?
স্যার এবার একটু লজ্জিত সুর বললেন - না চিনিনা।
আমি বললাম - আপনি তো মশাই বিখ্যাত মানুষদের সম্পর্কে কিছুই জানেননা দেখছি!
স্যার বললেন - আসলে আমি রসায়নের ছাত্র ছিলাম তো তাই ইতিহাস খুব ভালো জানিনা।
- আপনি রসায়নের ছাত্র? তাহলে তো অবশ্যই ফ্রেডরিক ভোলারকে চিনেন?
স্যারের চোখ- মুখ জ্বলজ্বল করে উঠলো। অতি আগ্রহের সাথে বললেন - হ্যাঁ, চিনি তো।
আমি বললাম - তাহলে রদার কিউস্ট্রাকেও চিনেন নিশ্চই?
- না, উনাকে তো চিনি না।
- রদার কিউস্ট্রাকে চিনেন না! আপনাকে আর কি বলবো? রদার কিউস্ট্রা ছিলেন ফ্রেডরিক ভোলারএর প্রাইভেট শিক্ষক। উনি ফ্রেডরিক ভোলারকে ফিউচার প্ল্যান সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন "যার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা যত সুদূর প্রসারি তার সফলতার সম্ভাবনা ততো বেশি।"
স্যার বললেন - তাইনাকি?
আমি বললাম - আপনারও এই স্কুলের জন্য ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করা দরকার তাহলে এই ঢাকা শহরের সব স্কুলের চেয়ে আপনার স্কুলের ভবিষ্যৎ হবে উজ্জ্বল, ইংরেজীতে যাকে বলে ব্রাইট, স্প্যানিশ ভাষায় বলে ব্রিইয়ান্তে, জাপানি ভাষায় যাকে বলে আকাডুই আর চাইনিজ ভাষায় যেনো কি বলে মনে পড়ছে না ওটা পরে একসময় বলবো।
স্যার বললেন - আচ্ছা আপনি তো অনেক জ্ঞানী মানুষ, আমাকে একটু পরামর্শ দিন কিভাবে কি করাযায়।
আমি বললাম - খুব গরম পড়েছে, একটু কোল্ড ড্রিংকস হলে ভালো হতো কিন্তু এখানে তো আর কোল্ড ড্রিংকস নেই একটু ঠান্ডা পানির ব্যবস্থা করা যায়না? গলাটা ভিজিয়ে তারপর কথা বলতাম।
স্যার পিয়নকে ডেকে বললেন তারাতারি দোকান থেকে সেভেন আপ আনতে।
অল্প সময়ের মধ্যে সেভেন আপ চলে এলো। এক গ্লাস ঠান্ডা সেভেন আপ খেয়ে মনটা জুড়িয়ে গেলো।
আমার কাজ শেষ। এবার এখান থেকে দ্রুত কেটে পড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
আমি স্যারকে বললাম - এই এলাকাতে যাদের ছোট ছোট ছেলেমেয়ে আছে তাদের নিয়ে আপনি একটা সেমিনার করতে পারেন যেনো তাদের ছেলেমেয়েরা বড় হলে আপনার স্কুলে ভর্তি করে।
তারপর যারা নতুন বিয়ে করেছে এখনো সন্তান হয়নি তাদের কাছে গিয়ে আপনার স্কুলের ভবিষ্যৎ বৈশিষ্ট্য তুলে ধরতে পারেন। ভবিষ্যতে আপনার স্কুল কেমন হবে, লেখেপড়ার মান কেমন হবে, বাচ্চাদের জন্য কি কি সুবিধা থাকবে এসব বিষয় তাদের সামনে তুলে ধরতে পারেন যেনো তাদের সন্তান হলে আপনার স্কুলে ভর্তি করে।
এমনকি যারা এখনো বিয়ে করেনি তাদের জন্যও বিশেষ পরিকল্পনা করতে পারেন।
আপনার পরিকল্পনা যতো সুদূরপ্রসারী হবে আপনার স্কুলের ভবিষ্যৎ ততো উজ্জ্বল হবে।
স্যার বললেন - ঠিকি বলেছেন ।
আমি বললাম - এছাড়াও ভবিষ্যতে কোনো প্যাকেজ চালু করে যায় কিনা তাও ভেবে দেখতে পারেন।
- কিরকম প্যাকেজ? (স্যার কৌতুহলের সাথে জিজ্ঞেস করলেন)
- এই যেমন একসাথে দুটি সন্তান ভর্তি করলে পচিঁশ পারসেন্ট ছাড়।
স্যারের চোখমুখে খুশির ঝিলিক। হাসিমুখে বললেন - আপনার সাথে কথা বলে অনেক আইডিয়া মাথায় এলো।
আমি বললাম - আপনি এই আইডিয়া গুলো নিয়ে চিন্তা ভাবনা করতে থাকেন, অনেক বেলা হয়ে গেছে এখন আমার যেতে হবে।
স্যার হ্যান্ডসেক করে হাসিমুখে আমাকে বিদায় দিলেন। আর বললেন - সময় পেলে আবার আসবেন।
আমি মনে মনে বললাম - যখন ঘরে চা পাতি শেষ হয়ে যাবে তখন আবার আসব।
পকেটে বিশ টাকা নিয়ে বের হয়েছিলাম চা খাওয়ার জন্য। চা তো খেয়েছিই সাথে চানাচুর, বিস্কুট আর এক গ্লাস সেভেন আপ। মনে মনে হাসতে হাসতে ঘরে ফিরছি, জোরে হাসলে তো মানুষ আবার পাগল বলবে। পকেটের বিশ টাকার নোটটিও তখন আমার সাথে সাথে মুচকি মুচকি হাসছিলো।
....

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.