![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ইয়াছির মিশুক এছাড়া পরিচয় দেয়ার মতো উল্লেখ যোগ্য কিছু নেই আমার। লেখালেখির অভিজ্ঞতা বলতে পরিক্ষার খাতায় প্রশ্নের উত্তর লেখার অভিজ্ঞতাটাই উল্লেখ যোগ্য। ভালোলাগে মানুষের হাসিমুখ দেখতে। মলিন, রুক্ষ, বেদনাময় পৃথিবীতে একটু হাসির উপলক্ষ তৈরি করার জন্য লেখার চেষ্টা করি। সফলতা নিয়ে কোন ভাবনা আসেনা তাই লেখতে দ্বিধা করিনা।
ঠিক 'ঝুপ' আর 'ধপাস' একসাথে মিসালে যেই শব্দটা হয় তেমন একটি শব্দ হলো। দোতলা বাড়ির সখের ছাদ-বাগানের টব গুলোর আগাছা পরিষ্কার করছিলেন নোমান সাহেব। শব্দটি শুনেই তিনি বিড়বিড় করে বললেন, "যেই ভয়টা করছিলাম শেষপর্যন্ত তাই হলো।" গাছ পরিচর্যা রেখে ছাদের সামনের দিকের রেলিং ধরে উকি মেরে দেখলেন , এক লোক খোলা ম্যানহোলে পড়ে গেছে! লোকটির পা থেকে বুক অব্দি ম্যানহোলের ভিতরে, বাহু দুটি প্রসারিত করে শরীরের বাকি অংশটুকু ম্যানহোলের সতল গহ্বরের অবর্ণনীয় দূর্গন্ধযুক্ত অর্ধতরলে নিমজ্জিত হওয়া থেকে রক্ষা করেছে। অমন চিপায় পড়া সত্ত্বেও উপরে উঠে আসতে তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
কয়েকদিন আগে নোমান সাহেবের বাড়ির সামনের রাস্তার একটি ম্যানহোলের ঢাকনা উধাও হয়েযায়। বৃষ্টির দিন, এমনিতেই রাস্তা খানাখন্দকে ভরা, তার উপর বৃষ্টির পানি জমে থাকে। বিপদ হতে পারে ভাবে ওয়ার্ড কাউন্সিলারকে তিনি প্রথম দিনই এ বিষয়ে অবগত করে একজন সচেতন নাগরিকের দায়িত্ব পালন করেন। সচেতন নাগরিক হিসেবে তিনি যথেষ্ট সচেতনতার পরিচয় দিলেও দায়িত্বশীলগণ দিয়েছে চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয়। এজন্যে প্রায় এক সাপ্তাহ পার হলেও ম্যানহোলের ঢাকনার কোনো সুরাহা হয়নি। এ নিয়ে নোমান সাহেব সবসময়ই ভয়ে ভয়ে থাকতেন- না জানি কখন কে এই ম্যানহোলে পড়ে যায়। আজ তার সেই ভয়টা-ই সত্যি হয়ে গেলো।
ইতিমধ্যে নোমান সাহেব ছাদ থেকে নেমে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছেন। তার জোরে জোরে শ্বাস নেয়া দেখে বোঝা যাচ্ছে যে তিনে ছাদ থেকে দৌড়ে নেমেছেন। সাদা পাঞ্জাবির পকেট থেকে কালো চশমাটি বের করে চোখে পড়ে নিয়ে ভালো করে দেখলেন। একজন অপরিচিত লোক।
অপরিচিত হোক আর যাই হোক মানুষ তো। একজন মানুষ বিপদে পড়েছে, এমতাবস্থায় তো আর হাত গুটিয়ে বসে থাকা যায় না। কিন্তু কিভাবে কি করবেন বুঝতে পারছেন না। একা একা টেনে তুলবেন, এই বয়সে তাও সম্ভব না। তাই ঠিক করলেন তার ছোট ছেলে নিলয়কে ডাকবেন। নিলয়ের আবার উপস্থিত বুদ্ধি খুব ভালো।
মোটা গম্ভির কিন্তু বিচলিত কণ্ঠে 'নিল..য়' বলে ডাকতে শুরু করলেন।
নিলয় তখনো ঘুমাচ্ছিল। ছেলেটা বড্ড অলস। সকালে উঠতেই চায় না। তবুও ডাক শুনে বাবার ভয়ে আধ-চাওয়া চোখে বিছানায় উঠে বসলো।
যতক্ষনে নিলয়ের ঘুম ভাঙছে ভাঙছে ভাব ততক্ষণে নোমান সাহেবের ডাকে বারান্দায় এসে দাঁড়ালেন তার প্রতিবেশী বাবুল সাহেব।
বাবুল সাহেব আর নোমান সাহেব শুধু প্রতিবেশীই নয়, প্রতিদ্বন্দ্বীও। একজন কোনো কাজ করলে আরেকজন তার চেয়ে বড় কিছু করার চেষ্টা করে। একজন এক লক্ষ টাকা দিয়ে কুরবানীর গরু কিনলে আরেকজন কিনে দেড় লক্ষ টাকা দিয়ে। একজন মসজিদে দশ হাজার টাকা দান করলে আরেকজন করে পনেরো হাজার টাকা।
পুরো ঘটনাটা বুঝতে বাবুল সাহেবের খুব বেশী দেরি হলো না। ম্যানহোলে পড়ে যাওয়া মানুষটিকে উদ্ধার করে সকলের কাছ থেকে প্রসংশা কুড়াবে নোমান সাহেব- এটাতো হতে দেয়া যায় না। প্রসংশার ভাগিদার হতে তিনিও ছুটে এলেন ঘটনাস্থলে। ততক্ষণে নিলয়ও চলে এসেছে।
নিলয় এসেই তার উপস্থিত বুদ্ধির ঝলক দেখালো। বললো বাপ-বেটা দুজনে দুই হাত ধরে লোকটিকে টেনে তুলবে। বাধ সাধলো বাবুল সাহেব। তিনি বললেন তাকেও এক হাত ধরতে দিতে হবে। কিন্তু সমস্যা হলো ভুক্তভোগীর হাত তো দুটি! এখন কি করা যায়। সমাধানের পাথটাও বাবুল সাহেব বাতলে দিলেন। তিনি প্রস্তাব রাখলেন, এক হাত ধরবে নোমান সাহেব বা তার ছেলে নিলয়, আরেক হাত ধরবেন তিনি নিজে। ব্যাস হয়ে গেলো।
ব্যাস হয়ে গেলো বললেই তো আর হয়ে যায় না। বাবুল সাহেব উড়ে এসে জুড়ে বসার মতো নোমান সাহেবের পরিবারের কৃতিত্ব অর্জনে ভাগ বসাবে, এটা তো নোমান সাহেব মেনে নিতে পারেন না। মেনে নিতে পারেনা তার ছেলেও। অপর দিকে বাবুল সাহেবও এতো সহজা হাল ছেড়ে দেয়ার পাত্র নন। লেগে গেলো বাক যুদ্ধ।
যুক্তির উপর যুক্তি। নোমান সাহেব বলে, "আমি আগে এসেছি, তাই একে উদ্ধার করা আমার দায়িত্ব।"
বাবুল সাহেব বলে, "আগে এসেছেন তো কি হয়েছে? পরে এলে উদ্ধার কাজে অংশগ্রহণ করা যাবেনা এমন কোনো আইন আছে নাকি?"
নোমান সাহেব বলে, "আপনার কাছ থেকে কি আমার আইন শিখতে হবে? জানেন, আমার ছোট শালা জর্জ কোর্টের উকিল?"
বাবুল সাহেব বলে, "রাখেন আপনার জর্জ কোর্ট। আমার আপন চাচাতো ভাইয়ের আপন খালু হাই কোর্টের বিচারক। আপনি আসছেন আমাকে জর্জ কোর্ট দেখাতে!"
কথা বাড়তে থাকে। ইতিমধ্যে কয়েকজন লোকও জড়ো হয়। যুক্তি তর্ক মহা সরক ছেড়ে অলিগলি দিয়ে এতো দূর চলে যায় যে আগত লোকজন বুঝতেই পারেনা বাকবিতন্ডা কি নিয়ে চলছে।
ওদিকে ম্যান হলো পড়ে যাওয়া লোকটি কাতরাতে থাকে। আর্তনাদ করে বলে, "আপনারা পরে ঝগড়া কইরেন, আগে আমাকে টেনে তুলেন।"
আর্তের কথা যেনো কারো কেনেই যায় না।
ঘটনাস্থলে জড় হওয়া লোকের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ছোটখাটো জটলা বলা যেতে পারে। জড়ো হওয়া লোকদের মধ্য থেকে এক তরুণ এগিয়ে গিয়েছিল ম্যানহোলে পড়ে যাওয়া লোকটিকে তুলতে। নোমান সাহেব আর বাবুল সাহেবের সম্মিলিত তোপের মুখে পড়ে সেই তরুণ পিছিয়ে আসতে বাধ্য হয়।
নোমান সাহেব আর বাবুল সাহেব হচ্ছে এই মহল্লার মুরুব্বি, মাতব্বর। তাদের উপরে কথা বলবে এমন সাহস কারো নেই। তাই বাকি সবাই নিরব দর্শক হয়ে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করতে পারছে না।
সেখানে নোমান সাহেব আর তার ছেলে দুজন, অপরপক্ষে বাবুল সাহেব একা। তাই তিনি বেশি সুবিধা করতে পারছিলেন না। বাপ-বেটার যৌথ চাপার জোরের নিচে চাপা পড়ে তার চ্যাপ্টা হওয়ার উপক্রম। বিষয়টা অন্দরমহল থেকে লক্ষ করলেন বাবুল সাহেবের স্ত্রী সেলিনা বেগম। তার আলাভোলা স্বামিটাকে একা পেয়ে নোমান সাহেব আর তার ছেলে যারপরনাই হেনস্তা করছে, এমতাবস্থায় একজন স্বামী-দরদী স্ত্রী হয়ে তিনি কোনো ভাবেই ঘরে বসে থাকতে পারেন না। তাই ছুটে এলেন ঘটনাস্থলে। মহিলা মানুষের গায়ের জোর কম থাকলেও চাপার জোর কম থাকেনা। তিনি চাপার জোরে মুহূর্তের মধ্যে পরিস্থিতি নিজেদের অনুকূলে নিয়ে এলেন। এবার নোমান সাহেব আর তার ছেলে পড়লো বিপাকে। তারা কিছু বলারই সুযোগ পাচ্ছে না।
সেলিনা বেগম হাতের আঙ্গুল উঁচিয়ে গলার রগ ফুলিয়ে ক্ষিপ্র গতিতে কথার গোলা ছুড়ছেন। মজার ব্যাপার হলো তিনি ভালো করে জানেনই না আসল ঘটনাটা কি! ঘটনা জানেন না তো কি হয়েছে? ঝগড়া করতে হলে ঘটনা জানতে হবে এমন কোনো ধারা সংবিধানে লেখা আছে নাকি?
সেলিনা বেগমের তোপের মুখে পড়ে নোমান সাহেব আর তার ছেলে ফুটো বেলুনের মতো চুপসে গেছে। অবস্থা যখন এমন তখনি দৃশ্যপটে আবির্ভাব ঘটলো নোমান সাহেবের স্ত্রী আঞ্জুমান আরার। আঞ্জুমান আরা স্বভাবগত ভাবে ঠান্ডা মেজাজের শান্ত প্রকৃতির মহিলা। তবে তিনি রেগে গেলে অবস্থা হয়ে যায় বেগতিক। এখন যেমন হলো।
ঘটনাস্থলে এসেই তিনি সেলিনা বেগমকে এক হাতে নিয়ে নিলেন। আসলে, চোখের সামনে একজন ঝগড়াটে মহিলার কাছে নিজের স্বামী সন্তানকে অপমানিত হতে দেখে তিনি ঠিক থাকতে পারেন নি। তার মেজাজের পারদ এক লাফে চুড়ায় পৌঁছে গেছে। দাতে দাত খিচে, কোমর বেধে নেমে পড়েছেন ঝগড়ার ময়দানে। ম্যানহোলে পড়া লোকটি হা করে দুই ভদ্র মহিলার ভদ্রতা বর্জিত, অমার্জিত ভাষার, অশ্রাব্য কথনে তুমুল ঝগড়া প্রত্যক্ষ করছেন। তিনি বুঝতে পেরেছেন এদের কাছে সাহায্য চেয়ে কোনো ফায়দা হবেনা, তাই মনে মনে আল্লাহকে সরণ করছেন।
ঝগড়া চলছে এখন শুধু দুই গৃহের গৃহকর্ত্রীর মাঝে। বাকিরা ক্লান্ত দেহে ফলাফলের জন্য অপেক্ষমান। এরি মাঝে কোনো এক ফাকে নোমান সাহেবের ছেলে নিলয় ম্যানহোলে পড়ে যাওয়া ব্যাক্তির ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড দিয়েছে। সাথে লিখে দিয়েছে "আমাদের বাসার সামনে খোলা ম্যানহোলে এই লোকটি পড়ে গিয়েছে। আমি আর বাবা এসেছি তাকে উদ্ধার করতে। আপনারা সাবাই দোয়া করবেন, আমাদের উদ্ধার অভিযান যেনো সফল হয়।"
মুহূর্তের মধ্যে এই পোস্ট অত্র এলাকার ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রায় শ'খানেক লাইক। অর্ধশত কমেন্ট আর ডজন খানেক শেয়ারও হয়েছে।
কেউ কমেন্ট করেছে "আপনারা এগিয়ে যান, আমরাও আপনাদের সাথে আছি" -বুঝলামনা তারা কিভাবে সাথে আছে! তারা তো আছে ফেসবুকে। আরেকজন কমেন্ট করেছে "আপনাদের মহানুভবতা দেখে মনে হচ্ছে মানবতা এখনো বেচে আছে।" ঘটনাস্থলের প্রকৃত রূপ যদি তারা এসে দেখতো তাহলে বুঝতো মানবতা কত মনবতর জীবন যাপন করছে। অনেকে কমেন্টে শুধু "আমিন" লিখেছে! "আমিন" এর অর্থ আর প্রয়োগ ক্ষেত্র সম্পর্কে তাদের জ্ঞান যে কত গভীর তা বলাই বাহুল্য।
অনলাইন আর অফলাইন মিলে ঘটনার রটনা বেশ ভালোই হয়েছে। অনেক লোক জড়ো হয়েছে। কেও ম্যানহোলে পড়া লোকটিকে দেখছে, কেউ দেখছে নোমান বনাম বাবুল পরিবারের ঝগড়া। আর্তের আর্তনাদ দেখে কারো নয়ন আদ্র হচ্ছে, আবার কেউ দুই পরিবারের ঝড় তোলা ঝগড়া দেখে মিটিমিটি হাসছে। ওদিকে ম্যানহোলে পড়ে যাওয়া লোকটি উদ্ধার হওয়ার আশা ছেড়ে নিরাশ নয়নে বারবার গগন পানে তাকাচ্ছে।
হঠাৎ হৈহৈ, রৈরৈ শব্দ। শ্লোগানে শ্লোগানে এগিয়ে আসছে এক দল লোক। এসা দাঁড়াল ঘটনাস্থলে।
যিনি এসেছেন তিনি বিরোধীদলের নেতা। এসেছেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে। সাথে সাঙ্গ-পাঙ্গ। ক্যামেরাও আছে। প্রথমেই তিনি ম্যানহোলে পড়ে যাওয়া লোকটির কাছে গিয়ে তাকে সমবেদনা জানিয়ে বললেন, "আপনি সাহস হারাবেন না, আপনাকে যেনো দ্রুত উদ্ধার করা হয় এজন্য আমরা সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করবো।"
বেচারা ভুক্তভোগী তখন ফ্যালফ্যাল চোখে নেতার দিকে তাকিয়ে ছিল। হয়তো সে মনে মনে বলছিল, এজন্য সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করার কি দরকার? আপনারা সবাই মিলে একটু টান দিলেই তো আমি উঠে যাই।
তারপর নেতা একে একে কথা বললেন নোমান সাহেব এবং বাবুল সাহেবের পরিবার বর্গের সাথে। উভয় পরিবারের যুক্তি তর্ক শুনে বললেন, "সরকারের সুদৃষ্টি থাকলে অনেক আগেই আপনাদের সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। আপনারা চিন্তা করবেন না, আমি দেখছি কি করা যায়।"
সব শেষে ঘটনাস্থলেই ক্যামেরার সামনে দাড়িয়ে তিনি একটি সংক্ষিপ্ত ভাষণ দিলেন। সেই ভাষণে অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করে দিলেন যে এই ম্যানহোলে পড়ে যাওয়া লোকটির দুর্দশাই প্রমাণ করে যে এই সরকার দেশ চালাতে ব্যার্থ।
নেতা তার কাজ শেষ করে চলে গেলেন। তার চলে যাওয়াতে কার কেমন লাগলো তা বুঝা না গেলেও ম্যেনহোলে পড়া লোকটির চোখেমুখে যে একটা স্বস্তির ছাপ ফুটে উঠল তা খুব স্পষ্ট ছিল।
তার এই স্বস্তি টুকু অস্বস্তিতে পরিনত হতে বেশী সময় লাগলো না। বিরোধীদলের নেতা তার গরম গরম বক্তৃতা ঝেড়ে চলে যাওয়ার পর পরিস্থিতি ঠান্ডা হতে না হতেই দলবল নিয়ে উপস্থিত হলেন সরকার দলীয় নেতা। তার বহর আরো বড়। সাথে সাংবাদিকও আছে দুই-তিন জন।
সরকার দলীয় নেতাকে দেখে ম্যানহোলে পড়া লোকটি কিছুটা আশান্বিত হলো। ভাবলো, এবার হয়তো কিছু একটা হবে।
হলো তো অনেক কিছুই, শুধু লোকটিকে উদ্ধার করা হলোনা। সরকার দলীয় নেতা তার বক্তব্যে স্পষ্ট করে বললেন, এই সম্পূর্ণ ঘটনা বিরোধী দলের চক্রান্ত। এর দায়ভার বিরোধী দলকেই বহন করতে হবে।
সবকিছুর পরেও বলা যায় কাজের কাজ একটা হয়েছে । সরকার দলীয় নেতার মধ্যস্ততায় নোমান এবং বাবুল পরিবারের মাঝে ঝগড়া-বিরতি চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। নেতা বলেছেন দুই পরিবারের ঝগড়া নিরসনে তিনি এক সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমেটি গঠন করবেন। তদন্ত কমিটি চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবেন। ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি দুই পরিবারকে ঝগড়া-বিরতি মেনে নিয়ে শান্ত থাকতে আহ্বান জানান। দুই পরিবার তার আহ্বানে সারা দিয়ে আপাতত নিজ নিজ গৃহে অবস্থান করছে।
ম্যানহোলে পড়া লোকটি তখন আকুল মনে একটাই দোয়া করছে, তদন্ত শেষ হওয়া অব্দি যেন তিনি বেচে থাকতে পারে।
সকাল গড়িয়ে দুপুর। বর্ষার কালো মেঘ জমে আলো ক্ষিন হয়ে আসছে। ম্যানহোলে পড়া লোকটিকে ঘিরে এখন আর কোনো ভির নেই। সবাই যে যার ঘরে ফিরে গেছে আসন্ন ঝড়-বৃষ্টির ভয়ে। এটা তার জন্য অস্বস্তির মধ্যেও যেন খানিকটা স্বস্তির ব্যপার।
বৃষ্টি শুরু হলো। মুষল ধারায় বৃষ্টি। দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছে ম্যানহোলে পড়া লোকটির। ড্রেনের পানিও বাড়ছে ক্রমাগত। সুনসান জনমানবহীন রাস্তা। কেবল একজন লোক হেটে চলছে আপন মনে, বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে। খালি পা, পরনে পুরোনো ছিন্নভিন্ন প্যান্ট, মলিন ছেড়া শার্টটি মাথায় বাধা, খালি গা। চুল দাড়ি যাচ্ছেতাই অবস্থা। আমরা সভ্য সমাজের লোকেরা এদেরকে এক কথায় 'পাগল' বলে ডাকি।
সেই পাগলটি এসে দাড়ালো ম্যানহোলে পড়া লোকটির সামনে। খানিকটা ঝুকে চোখে চোখ রেখে তাকালো তার দিকে। মুখে নেই কোনো কথা, দৃষ্টি জুড়ে বিস্ময়। কিছুণ তাকিয়ে থাকার পর ম্যানহোলে পড়ে যাওয়া লোকটির হাত ধরে জোরে হ্যাঁচকা টান দিলো। জির্ণ শির্ণ কঙ্কালাব পাগল লোকটির গায়ে যেই বল দেখা গেলো, সভ্য সমাজের হৃষ্টপুষ্ট লোকগুলোর গায়েও ততটা বল হয়তো ছিলোনা। এক টানে ম্যানহোলে পড়া লোকটিকে উপরে তুলে আনল সে। তারপর আবারো হাটা শুরু করলো তার গন্তব্যহীন পথে।
...
.......
২| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:৫৪
রাজীব নুর বলেছেন: ভোরে যারা কাগজ টোকায় তারা প্রত্যেকে ঢাকা শহরের ম্যানহলের ডাকনা গুলো চুরী করে নিয়ে যায়।
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:৫৬
নুরহোসেন নুর বলেছেন: চমৎকার উদ্ধার অভিযান, দারুন হয়েছে