নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিরোনামহীন চলচ্চিত্র ও অন্তরালে আমি

মোঃ ইশতিয়াকুর রহমান ভুইয়া

কাউন্সিল সহকারী, চলচ্চিত্র গবেষক, তথ্যচিত্র নির্মাতা

মোঃ ইশতিয়াকুর রহমান ভুইয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ভোর ৪:১৫

১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্মগ্রহণ করেছিলেন বাঙালি জাতির হাজার বছরের কাঙ্ক্ষিত সন্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর সাহসী, দৃঢ়চেতা, আপোষহীন নেতৃত্ব ও বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামে অনুপ্রাণিত হয়ে জেগে উঠেছিল একটি নিপীড়িত পরাধীন জাতি। দেশের মানুষকে স্বাধীনতা ও মুক্তির অদম্য স্পৃহায় তিনি ঐক্যের দুর্গ গড়ে তুলেছিলেন। যাঁর বজ্রকণ্ঠ ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বাঙালি জনগোষ্ঠীকে স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত মরণপন সশস্ত্র যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে শক্তি ও সাহস যুগিয়েছিল। যার বজ্রকণ্ঠ শরীরের রক্তকে টগবগে করতে সাহায্য করে। একটি মানুষকে ভালবাসতে হলে ১০টি গুনের দরকার পড়ে না। ভাল একটি গুণই একটি মানুষকে হাজার বছর মানুষের মাঝে বাচিয়ে রাখে। আমাদের প্রজন্ম, যারা বাংলাদেশকে স্বাধীনভাবে আবির্ভূত হতে দেখেছে এবং তার পেছনে বঙ্গবন্ধুর যে অসামান্য অবদান তা প্রত্যক্ষ করেছে, তাদের পক্ষে বঙ্গবন্ধুর কর্মকাণ্ডের মূল্যায়ন সহজ ভাষায় ব্যক্ত করা অত্যন্ত কঠিন।জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখার ধৃষ্ঠতা আমার নেই। আর আমি বঙ্গবন্ধুর কথা কি লিখবো? আমি তো উনার সম্পর্কে গল্পই শুনে গেছি। তবে যে পরিমাণ গল্প শুনেছি আর বই পড়ে জেনেছি তাতে উনাকে আমার কাছে সুপারম্যান মনে হয়েছে। আমি যদি উনার সান্নিধ্য পেতাম তাহলে হয়তো আমার জীবনটা অন্য রকম হতে পারতো।

৬ দফা ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ। ৬ দফার মধ্যে আমাদের স্বাধীনতার বীজ নিহিত ছিল। ৬ দফা না হলে কোনদিন ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান হতো না। আর গণ-অভ্যুত্থান না হলে সত্তরের নির্বাচন হতো না এবং নির্বাচন না হলে মুক্তিযুদ্ধ হতো না, মুক্তিযুদ্ধ না হলে দেশ স্বাধীন হতো না। এই ৬ দফা ছিল নির্যাতিত, নিপীড়িত, শোষিত এবং ন্যায্য সুবিধাবঞ্চিত বাঙালী জাতিকে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর নাগপাশ থেকে মুক্ত করার জন্য বাঙালিদের প্রাণের দাবি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই ঐতিহাসিক ৬ দফা পেশ করেন ১৯৬৬ সালের ৭ জুন।

এক নেতাকে একবার এক সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেছিলেন, “আচ্ছা আপনি মুজিব কোট কেন পড়েন?” সেই নেতা জবাব দিয়েছিলেন, “এটা বঙ্গবন্ধু পড়তেন বলে পড়ি, এটা আদর্শ।” আসলে বঙ্গবন্ধু পড়তেন বলে এটি আদর্শ নয়, আদর্শ ছিলো এই কোট পড়ার পেছনের চিন্তাধারায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এক ছাত্র একবার তাজউদ্দিনের সাথে শেখ মুজিবের সাথে দেখা করতে গেলেন। ছেলেটা অনেকক্ষণ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে নেতাকে দেখলেন। হুট করে ছেলেটা বঙ্গবন্ধুকে প্রশ্ন করলো,”আপনার কোটের বোতাম ছয়টা কেনো? এ ধরণের কোটে বোতাম আরো বেশি থাকার কথা।” প্রশ্ন শুনে নেতা ছেলেটিকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। বললেন, “এমন প্রশ্ন আমাকে আগে কেউ করে নাই, তুই প্রথম। এই ছয়টি বোতাম হলো আমার ঘোষিত ছয় ৬ দফার প্রতীক।” এই হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর চিন্তা চেতনা, যিনি একটা কোটের মধ্যেও ধারণ করেন বিশ্বাস, দাবি, ন্যায্যতা ।

আমি হিমালয় দেখেছি কিন্তু নিজে বঙ্গবন্ধুকে দেখেনি। তাই উনার সম্পর্কে জানতে হচ্ছে বিভিন্ন পত্রিকা, টেলিফোন আর রেডিও এর উপর প্রাপ্ত তথ্যের উপর। মহান এ নেতার মৃত্যুর ০৩ বছর পর আমার জন্ম। এছাড়াও আমি নিজে যখনই বঙ্গবন্ধুর কথা ভাবি তখনই প্রফেসর রওনক জাহানের একটি লেখার কথা মনে পড়ে তিনি ০৯ আগষ্ট ২০১৫ সালে দৈনিক সমকাল পত্রিকায় লিখেছেন
“ আমার প্রথমে মনে পড়ে ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের সেই উত্তাল দিনগুলোর কথা। আমি তখন ঢাকাতেই ছিলাম। ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনের পর থেকেই আমরা বিপুল আশা-উদ্দীপনার মধ্যে ছিলাম। বাংলাদেশ যে সৃষ্টি হতে যাচ্ছে তা নিয়ে আমাদের মনে আর কোনো সন্দেহ ছিল না। তখন একমাত্র প্রশ্ন ছিল আমরা কি শান্তিপূর্ণভাবে আলোচনার মাধ্যমে এই স্বাধীন দেশ সৃষ্টি করতে পারব নাকি আমাদের একটা বিরাট রক্তাক্ত সংঘাতের পথে যেতে হবে। আমার মনে পড়ে ১ মার্চ যখন জেনারেল ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের বৈঠক স্থগিত করলেন এবং তারপর যখন বঙ্গবন্ধু ৩ মার্চ থেকে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিলেন, বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষই তখন স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল। প্রশাসন, বিচার বিভাগ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যবর্গ, ব্যবসায়ী সম্প্রদায় সবাই পাকিস্তান সরকারের পক্ষ ত্যাগ করে বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাদের আনুগত্য প্রকাশ করল। পৃথিবীর আর কোনো দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনেই সংশ্লিষ্ট দেশটির জাতীয় স্বাধীনতা স্বীকৃতি না পাওয়া পর্যন্ত প্রশাসনকে এভাবে তাদের আনুগত্য পরিবর্তন করতে দেখা যায়নি।

আমি নিজেকে খুবই ভাগ্যবান মনে করি যে, আমি নিজের চোখে ১৯৭১ সালের মার্চ মাস এবং বঙ্গবন্ধুর সেদিনের ভূমিকাকে প্রত্যক্ষ করেছি। খুব কম লোকেরই ভাগ্য হয় ইতিহাস সৃষ্টি হতে দেখা। আমি ইতিহাস সৃষ্টি হতে দেখেছি। স্বাধিকার আন্দোলনকে স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপান্তরিত হতে দেখেছি। এসব ঐতিহাসিক ঘটনার মূল নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অসম্ভব সম্ভব করতে দেখেছি। পৃথিবীর অনেক দেশেই অনেক সময়ে অনেক নেতা নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন। দেশ পরিচালনা করতে পারেন। কিন্তু খুব অল্পসংখ্যক নেতাই ইতিহাস রচনা করতে পেরেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তেমনই একজন অনন্য কালজয়ী ইতিহাসের মহানায়ক।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত নোট বইয়ের একটি উদ্ধৃতি রয়েছে, যা তিনি ১৯৭৩ সালের ৩০ মে লিখেছিলেন। উদৃব্দতিটি আমাদের সবারই দৃষ্টি আকর্ষণ করার মতো; কারণ মাত্র তিনটি বাক্যে ওই উদৃব্দতি দিয়ে তিনি তার আত্মপরিচিতি ও মূল্যবোধ অতি পরিষ্কার করেছেন। তিনি লিখেছেন :

একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি। একজন বাঙালি হিসেবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এই নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালোবাসা, অক্ষয় ভালোবাসা, যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে।

বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের জন্য তার যে ভালোবাসা এবং প্রতিদানে জনগণের যে ভালোবাসা তিনি পেয়েছেন তার কথা তিনি নানা ভাষণে বারবার ব্যক্ত করেছেন। যেমন ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনের পরে ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারি জনপ্রতিনিধিদের শপথবাক্য পাঠ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন : প্রধানমন্ত্রী হবার কোনো ইচ্ছা আমার নেই। প্রধানমন্ত্রী আসে এবং যায়। কিন্তু যে ভালোবাসা ও সম্মান দেশবাসী আমাকে দিয়েছেন, তা আমি সারাজীবন মনে রাখব। অত্যাচার, নিপীড়ন এবং কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠকেও আমি ভয় করি না। কিন্তু জনগণের ভালোবাসা যেন আমাকে দুর্বল করে ফেলেছে। (_বঙ্গবন্ধু; এমএনএ ও এমপিএদের শপথবাক্য পাঠ অনুষ্ঠান; রেসকোর্স ময়দান, ঢাকা, ৩ জানুয়ারি, ১৯৭১)

পৃথিবীর অন্য নেতাদের ভাষণ আমি যখন পড়ি এবং তাদের ভাষণের সঙ্গে যখন বঙ্গবন্ধুর ভাষণের তুলনা করি তখন আমার কাছে তার এই অভিব্যক্তিটি; জনগণের প্রতি ভালোবাসা; তা অনন্য বলে মনে হয়।
অনেক সময়ই যারা বড়মাপের নেতা হন তারা জনগণের সঙ্গে তেমন সম্পৃক্ত হন না। তারা জনগণকে কোনো মহৎ উদ্দেশ্যে পরিচালনার কথা বলেন। তারা অনেক সময়েই থেকে যান জনগণের ঊধর্ে্ব। তাই জনগণকে ভালোবাসার কথা তারা বলেন না। বঙ্গবন্ধু এর ব্যতিক্রম। তিনি সমসময়ই বাংলাদেশের জনসাধারণের সঙ্গে নিজেকে এক করে দেখতেন। এবং তাই তিনি বারে বারে একদিকে তার জনগণের জন্য ভালোবাসা এবং অন্যদিকে জনগণের তার জন্য ভালোবাসার কথা উল্লেখ করতেন।

বঙ্গবন্ধু রাজনীতিবিদ ছিলেন, তিনি আজীবন রাজনীতি করেছেন। আমরা প্রায়ই বলে থাকি রাজনীতি করতে হলে অনেক সময় নীতির কথা ভাবা যায় না। অনেক সময় আপস করতে হয়। বঙ্গবন্ধুকেও রাজনীতির পথ পরিক্রম করতে হয়েছে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে এবং কখনও কখনও বাস্তবতার সঙ্গে মিলিয়ে সাময়িকভাবে আপসও করতে হয়েছে। কিন্তু মূল বিষয়গুলোতে তিনি কখনও নীতিবিচ্যুত হননি। জনগণের যে ভালোবাসা তিনি পেয়েছেন তার পেছনে ছিল জনগণের এই অগাধ বিশ্বাস যে, তিনি কখনও তার প্রতিশ্রুতির খেলাপ করবেন না। বাঙালি জাতির স্বার্থ তিনি কোনো অবস্থাতেই বিকিয়ে দেবেন না। তার প্রতি জনগণের এই বিশ্বাস ছিল বলেই তিনি হতে পেরেছিলেন জনগণের অবিসংবাদিত নেতা।

বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির কেন্দ্র ছিল জনগণ। জনগণের জন্য ভালোবাসা ছিল তার সব কর্মকাণ্ডের প্রেরণা, জনগণের ওপর বিশ্বাস ছিল তার কর্মকাণ্ডের ভিত্তি এবং জনগণের কল্যাণই ছিল তার সব কর্মকাণ্ডের লক্ষ্য। তার কর্মকাণ্ডের লক্ষ্য তিনি খুব সহজ দুটি ভাষায় প্রায়ই ব্যক্ত করতেন। তিনি প্রায়ই বলতেন, তার লক্ষ্য হচ্ছে; সোনার বাংলা গড়ে তোলা;, কিংবা তিনি বলতেন ;দুঃখী মানুষের মুখে তিনি হাসি ফোটাতে চান;। বঙ্গবন্ধু তার জনসভায় খুবই সহজ-সরল ভাষায় বক্তৃতা করতেন। তাই তার বক্তব্য ছিল সুস্পষ্ট। যেমন বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পরই ১৯৭২ সালে এক জনসভায় তিনি বলেন : আমি কী চাই? আমি চাই বাংলার মানুষ পেটভরে ভাত খাক। আমি কী চাই? আমার বাংলার মানুষ সুখী হোক। আমি কী চাই? আমার বাংলার মানুষ হেসে-খেলে বেড়াক। আমি কী চাই? আমার সোনার বাংলার মানুষ আবার প্রাণভরে হাসুক। (_বঙ্গবন্ধু; রাজশাহী মাদ্রাসা ময়দান, ১৯৭২)

আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন সৈনিক। আমি নেতা হতে চাই না। আমি চাই মানুষের সেবা করতে। আল্লাহর কাছে যদি একান্তভাবে কিছু চাওয়া হয় আল্লাহ তার প্রার্থনা পূরণ করেন। আল্লাহ আমার প্রার্থনাও পূরণ করেছেন। আমি গর্বিত যে, আমি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের একজন কর্মচারী এবং বাংলাদেশ পুলিশ পরিবারের একজন সদস্য। যে পুলিশ সদস্যরা বঙ্গবন্ধুর ডাকে সারা দিয়ে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে স্বাধীনতার পক্ষে রাজারবাগে প্রথম গুলিবর্ষণ করে। আমি গর্বিত এ জন্য যে, রাজনৈতিক নেতা না হয়েও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়ে আমি মানুষের সেবা করার সুযোগ পাচ্ছি। আমি হয়তো বঙ্গবন্ধুর মতো করে দেশ ও জনগণের সেবা করতে পারবো না; তবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে অন্যান্যদের সাথে মিলে মানব সেবা করে সোনার বাংলা সৃষ্টিতে সহায়তা করতে পারবো।
-০-

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:৪২

ওমেরা বলেছেন: ব্লগে স্বাগতম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.