নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

i blog/therefore i exist

অচিন্ত্য

"জগতে আনন্দযজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ"

অচিন্ত্য › বিস্তারিত পোস্টঃ

অমলেন্দু বাবু আপনি কেমন আছেন- এটা কি লিরিক হতে পারে ?

০৬ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১১:০৭

নব্বই এর দশকের মাঝামাঝি বাবার এক বন্ধু, অমলেন্দু কাকা, প্রায়ই আমাদর বাড়ি বেড়াতে আসত। কয়েক দিন থাকত। তখনও এই চলটা ছিল। তার পরনে থাকত পাজামা পাঞ্জাবি। চুলগুলো পরিপাটি করে গোছানো। ঠিক যেন আনন্দমেলা বা কিশোর ভুবন এর তৈলচিত্র থেকে উঠে আসা। তার হাতে প্রায়ই গল্পগুচ্ছ, সঞ্চয়িতা বা এই জাতীয় কোন বই থাকত।

এগুলো আসলে অপ্রাসঙ্গিক কথা। প্রসঙ্গটা শুরু যেখানে, সেখানে যাওয়া যাক। ডাক বাংলোর পুকুর ঘাট। স্নানাহারাদি সেরে ছুটির অলস বিকেলে খোশ গল্প হচ্ছে। প্রসঙ্গ চরকি তখন সঙ্গীত এলাকায় কাহারবার ছন্দে বাজছে। লয় মধ্যম। এক পর্যায়ে কাকা এই জাতীয় কিছু বললেনঃ যা দিনকাল পড়েছে এখন দেখবা- অমলেন্দু বাবু আপনি কেমন আছেন- এটাও গানের কথা হয়ে যাবে। আমি তখন ক্লাস ফোর কি ফাইভে। কাজেই সব কথা বলার জন্য এলিজিবল না। তাই মনে মনে একটা প্রশ্ন করে বসলাম- অমলেন্দু বাবু আপনি কেমন আছেন- গানের কথা হলে সমস্যাটা কোথায়? কাকা জানতে পারলেন না।

ঘটনাটি আমি প্রসঙ্গে এবং অপ্রসঙ্গে বার কয়েক আমার স্ত্রীকে বলেছি। কিন্তু এত ছোটবেলায় যে এমন গভীর প্রশ্ন মনে এসেছিল, এটা যে কোন সাধারণ চিন্তা নয়, এ বিষয়টি পাছে তিনি মিস করেন এই আশংকায় আমি বার বার তাকে বুঝিয়েছি যে সঙ্গীত, কাব্য এসব বিষয়ে আমার প্রজ্ঞা সেই ছোটবেলা থেকেই। কত ছোটবেলা থেকে ? প্রসঙ্গ আবার সাইডলাইনে যাবে আর কি। আমার পিতা কাঠ মিস্ত্রীদেরকে দিয়ে যখন কাজ করাতেন তখন তিনিই প্রধান নির্দেশক। মিস্ত্রীরা শুধু পরিপালন করে যেতেন। এমন এক কাঠকর্মযজ্ঞ চলাকালীন, আমার বয়স তখন চার কি পাঁচ, আমি জেনেছিলাম যে সূর্য আসলে ঘোরে না, পৃথিবীই ঘোরে। তখনই আমার কবিত্ব প্রকাশ পেল দুইটি বৈজ্ঞানিক এবং দার্শনিক সত্যকে ভর করে- "সূর্য সূর্যের জায়গায়/ পৃথিবীটা শুধু ঘুরে ঘুরে বেড়ায়/ মানুষ যে কাজ করব/ মানুষের মরণ আসলে মানুষ মরব "। করব আর মরব আমাদের আঞ্চলিকতার টান। এর সঙ্গে প্রমিত বাংলার পার্থক্য তখনও নজর করার বয়স হয়নি।

তো যা বলছিলাম। অমলেন্দু বাবু আপনি কেমন আছেন। এই লাইনটি গানের লাইন হিসেবে মেনে নিতে স্বয়ং অমলেন্দু কাকারই যখন আপত্তি তখন অন্য অনেকেই যে তাতে বাগড়া দেবে তাতে আর সন্দেহ কী। বিষয়টি নিয়ে আমি অনেকবারই ভেবেছি। কখনোই খুব সুনির্দিষ্ট কোন উপসংহারে পৌঁছা সম্ভব হয়নি। আজও ভাবছি। এখানে বলে রাখি, আমার কাব্য প্রতিভা যখন ক্রমে একাডেমিক পড়াশোনাকে অবজ্ঞার চোখে দেখা শুরু করল তখন এক পর্যায়ে কলেজে এসে সুমনের গানের সঙ্গে পরিচয়। দেখলাম তিনি বাংলা গানের এতদিনকার মেনে নেওয়া ফরম্যাট, স্থায়ী-সঞ্চারী-অন্তরা-আভোগ, অস্বীকার করে একেক গানে একেক ফরম্যাট নিয়ে হাজির হচ্ছেন। আমি যারপরনাই লাই পেয়ে গেলাম। কিন্তু আমার শুধু লাই ছিল, সেন্স ছিল না (তাই আমার লাইসেন্স দরকার ছিল :))।
এই দুরন্তপনা চলল আরো কিছুদিন, যতদিন না ইউনিভার্সিটিতে এক অদ্ভুত মানুষের সঙ্গে পরিচয় ঘটল। তিনি একজন উন্মাদ। আমাদেরকে পড়াতেন। তিনি আমাদেরকে যেসকল এসাইনমেন্ট করিয়েছেন তার মধ্যে ছিল কবিতা লেখা, মুখোশ বানানো, সেই মুখোশ পরে ক্লাস করা, কোরাস গান পারফরম্যান্স, বই বের করে মার্কেটিং করা, প্রেজেন্টেশনের জন্য পোস্টার বানানো ইত্যাদি (এরই মাঝে বেঁচে থাকি, কাঁদি হাসি)।

তো একবার এক কবিতা লেখা এসাইনমেন্টে আমার কবিতা নিয়ে তিনি কথা বলছিলেন। ক্লাসে। সবার সামনে। ইংরেজি কবিতা। আমি জীবনে প্রথম ইংরেজিতে কিছু রচনা করলাম। স্বাভাবিকভাবেই তা প্রচলিত ফরম্যাটে পড়বে না। স্যার ফরম্যাট না মেনে লেখার ব্যাখ্যা চাইলেন। আমি বললাম- আমি ফরম্যাট মানি না (লাই সেন্স)। স্যার বললেন- আপনি ফরম্যেটে লিখতে জানানে না বলে কি ফরম্যাট মানেন না ? নাকি ইচ্ছা করলে ফরম্যাটে লিখতে পারেন, এই রচনা ইন্টেনশনাল ? ফরম্যাট ভাঙলেন, জেনে ভাঙলেন তো কী ভাঙলেন ? আমি একেবারে নিশ্চুপ হয়ে গেলাম। অপ্রস্তুত হওয়া বা অস্বস্তি নয়, এক অন্য বোধ।

স্যারের এই কথাটি আমার কাব্য প্রতিভাকে একেবারে এক ধাক্কায় অস্বীকার করে বসল। লেখালেখি বেশ কিছুদিনের জন্য থেমে গেল। সারাক্ষণ এই ভাবনাটি আমাকে তাড়িয়ে বেড়াতে লাগল- ফরম্যাট আয়ত্ত করার 'ঝক্কি' থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যই কি আমি ফরম্যাট বিসর্জন দিয়েছি? নাহ, ঠিক তা না। আমি তো আসলেই ফরম্যাট ভেঙে বেরিয়ে আসতে চাই। তাহলে ? অস্বস্তিটা লাগছে তাহলে কেন ? অপ্রসঙ্গে আরেকটি কথা বলে রাখি, আমার রচিত প্রথম গানটি, এখনো রেকর্ড করা হয়নি, এমন ফরম্যাটে লেখা এবং সুর করা যে এর মাঝখানে থামার কোন অবকাশ নেই। একটানে সবটা গান গেয়ে যেতে হয়। বেশ বড় লিরিক। শোনাব একদিন।

আমি ভাবছিলাম। ভাবছিলাম। এক সময়ে মনে হল অস্বস্তিটা এই জায়গায়। আমি ফরম্যাটে লিখতে পারি- এটা যদি নিজের কাছে নিজে প্রমাণ করতে পারি তবেই মনে হয় ফরম্যাট ভাঙার নৈতিক অধিকার অর্জিত হবে। সেই প্রমাণের আগেই ভাঙাভাঙি চলল বলেই মনে হয় স্যারের কথায় অস্বস্তি লাগছে। তারপর শুরু হল এক সংগ্রাম। নিজের কাছে নিজের কৈফিয়তের সংগ্রাম। সেই সংগ্রাম এমনকি আজও চলছে। এখনও আমি চেষ্টা করি নিয়মের মধ্যেই গান করতে। খুব ক্বচিত দুই একটা নিয়ম ভাঙার গান যে হয় না তা না। যাক।

তো যা বলছিলাম, অমলেন্দু বাবু আপনি কেমন আছেন। গত শতকে কাব্যগীতি টাইপের রচনায় পর্ব-ছন্দ-অনুপ্রাস-অলংকার ইত্যাদির ব্যবহারে আমরা যেভাবে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম তাতে তিরিশের দশকের পাণ্ডবকূল প্রবল কুঠারাঘাত করেছিলেন। সেই থেকে দেখি কবিতা দেখতে গদ্যের মত হয়ে যাচ্ছে, গদ্য দেখতে পদ্যের মত হয়ে যাচ্ছে। মোদ্দাকথা, জনরাগুলো একে অন্যের সঙ্গে মিথষ্ক্রিয়ায় মেতেছে। এজন্যই মনে হয় আধুনিক গানে অনুপ্রাস ছন্দ, মানে কাব্যিক ছন্দ না থাকাকে আমরা মেনে নিয়েছি। একারণে অমলেন্দু বাবু আপনি কেমন আছেন আধুনিক কানে মোটেই বেমানান লাগে না।

তবে এখানে আমার আরেকটু কথা আছে। আমি মূলত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দ্বারা প্রবলভাবে আচ্ছন্ন। তাঁর মনোভাব যদি ভুল না বুঝে থাকি, তিনি বিশ্বপ্রকৃতির লীলায় এক অপার মুগ্ধতা আবিষ্কার করেছিলেন এবং শেষের দিকে এই লীলার পেছনে এক মহাজাগতিক সত্ত্বার অস্তিত্ব অনুভব করেছিলেন। তিনি মনে করতেন মানুষ প্রকৃতির এই স্বতস্ফূর্ত অভিনয়কে অনুকরণ করেই নিজেকে ব্যক্ত করে। এখানে গুরুদেব যে রহস্যের সন্ধান পেয়েছেন তা মনে হয় অনেকটা এরকম- প্রতিদিনকার যাপিত জীবনে যা কিছু কথা, যা কিছু কাজ সবই সরাসরি। কিন্তু আমরা যখন কোন গভীর অনুভবে ডুবে যাই সেটা ঠিক সরাসরি কোন অনুভব নয়। এ যেন কিছু অনুভব, কিছু কল্পনা, কিছু শিহরণ, কিছু বোঝা গেল, কিছু গেল না। তাই সে তো আটপৌরে কথায় প্রকাশ হবার নয়। যা প্রকাশ হবে তা তো কংক্রিট নয়। তাতে তো রহস্য আছে। পুরোটুকু তো অনুভূতই হয়নি। প্রকাশ হবে কীভাবে। তাই মনে হয় এই অনুভবের প্রকাশ আভাষে ইঙ্গিতেই বেশি জুতসই। কারণ এতে প্রকাশ প্রচ্ছন্ন থেকে যা অনুভব করা হয়নি তা স্বীকার করা হয়, তার জন্য অডিয়েন্সের কল্পনার অবকাশ রাখা হয়। বৃষ্টি হচ্ছে। গুরুদেব লিখলেন- "বিশ্বপ্রকৃতি কথা কইবে, সে তো এমনি হবার নয়। তাই সে একটা সুরকে খোঁজে"। প্রকৃতির এই যে কথা, এই অস্ফুট উচ্চারণ এই রহস্যের অনুসন্ধান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃজনের অন্যতম প্রেরণা বলে আমার ধারণা। আমি তাঁর চেলা বলে আমিও মনে মনে গোপনে গোপনে আসলে সেই লিরিক সেই গান খুঁজি যাতে রহস্য আছে, প্রকাশ অপ্রকাশের মিথষ্ক্রিয়া আছে।

অমলেন্দু বাবু আপনি কেমন আছেন, আধুনিক লিরিকের একটি প্রতিনিধি ধরা যায়, আপাত দৃষ্টে সেই রহস্য নস্যাত করে দেয় বলে মনে হয়। নাও হতে পারে। সৃজন সব সময়ই এক রহস্যের নাম। শেষতক তা কী হয়ে উঠবে তার ইয়ত্তা নেই। আটপৌরে ফ্রেইজিং এর চমৎকার ব্যবহারের মধ্যেও সেই রহস্যের ঘনীমা দেখেছি। আমাকে মৌলবাদী মনে করবেন না যেন। এটা নিতান্তই আমার অনুভব। সেই রহস্য গান ধারণ করতেই হবে কেন - এই প্রশ্নে আমি নিরুত্তর।

তাহলে, অমলেন্দু বাবু আপনি কেমন আছেন ?

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১১:১৮

ভাইয়ু বলেছেন: অনেক হলো গবেষনা পুরো লিরিকটা এবার লিখে ফেলুন৷ এরপর এক কপি সেই স্যারের ইমেইলে আরেক কপি অমলেন্দু বাবুরে দিয়ে এসে আরেকটা লিখা লিখে ফেলুন৷ :-D শুভকামনা রইলো

০৬ ই আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ২:১০

অচিন্ত্য বলেছেন: হাহাহাহা।
ধন্যবাদ ধৈর্য নিয়ে পড়ার জন্য, ভাবার জন্য, রসিকতাপূর্ণ মন্তব্যের জন্য।
ভাল থাকুন। শুভকামনা আপনার জন্যও

২| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৭

রাজীব নুর বলেছেন: লেখাটার সারমর্ম বুঝতে পারলাম না।

০৬ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:২০

অচিন্ত্য বলেছেন: :(
লেখাটি আসলে সুপাঠ্য হয়ে ওঠেনি। আপনার মন্তব্যই তার প্রমাণ। লেখাটি যা ভেবে লিখাঃ-
আধুনিক বাংলা গানের লিরিক ধীরে ধীরে নিত্য নতুন প্রকরণ নিজের মধ্যে ধারণ করছে। এই প্রক্রিয়াটি অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে। এই অনিবার্য পরিবর্তনকে অনেকেই মেনে নিতে পারেন না। এই পরিবর্তনের একটি অনুষঙ্গ হল লিরিক। লিরিকের এই পরিবর্তন বিষয়ে সঙ্গীত রসিক পাঠকের মতামত এক্সপ্লোর করার উদ্দেশ্যে এই লেখা।
দুর্বোধ্যতার জন্য দুঃখিত। এবং ধৈর্য নিয়ে পড়ার জন্য কৃতজ্ঞতা।

৩| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১:২৫

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: আপনার সাহিত্য জ্ঞান বেশ ছোটবেলা থেকেই বেশ পোক্ত দেখছি, আপনার স্ত্রী না মানলেও, আমি মেনে নিলাম।
লিখে ফেলুন লিরিকটা। আসলেই খারাপ হবে না।
সত্যিই নাড়া দিয়েছেন কবির সুমন। এখন কোন লিরিক, যা হয়ত শতবছর আগে বেখাপ্পা লাগত, শোনায় স্বাভাবিকই।
বেখাপ্পা তো নয়ই, বরং আমার বেশ লেগেছে।

১৯ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১:৩৫

অচিন্ত্য বলেছেন:
হাহ হাহ :)
ভাল থাকুন। সময় ও ধৈর্য নিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

৪| ১৮ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:৫১

বিজন রয় বলেছেন: কেমন আছেন? নতুন পোস্ট দিন।

১৯ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১:৩৬

অচিন্ত্য বলেছেন: আহ, কেমন আছেন ? আমি তো লেখালেখি থেকে দূরেই সরে যাচ্ছি দিনে দিনে।

৫| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১:৩৮

বিজন রয় বলেছেন: দিন তবে, নতুন পোস্ট দিন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.