নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দেশ , মানুষ

জীবনের সব কিছু আললাহর সন্তুষ্টির জন্য

আল মাহদী ফোর্স

কোরান ও নবী পরিবারের আঃ অনুসারী।

আল মাহদী ফোর্স › বিস্তারিত পোস্টঃ

৭২ দলের ৭৩ ফেরকার মুক্তিপ্রাপ্ত ফেরকা

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫২









বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আ’লামিন ওয়াসসালাতু ওয়াসসামু আ’লা রাসুলিহি ওয়া আলিহিত ত্বাহিরিন।আম্মা বা’দ,

ক্কালালাল্লাহু সুবহানাহু তায়ালাঃ

“ তিনিই নিরক্ষরদের মধ্য থেকে একজন রাসুল প্রেরন করেছেন,যিনি তাদের কাছে পাঠ করেন তাঁর আয়াতসমুহ,তাদেরকে পবিত্র করেন এবং শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমত।ইতিপুর্বে তারা ঘোর পথভ্রস্টতায় লিপ্ত ছিল”।[সুরা জুমুয়াহ,আয়াত#২]

আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেছেন যে,মানুষ যখন প্রকাশ্য গোমরাহীতে লিপ্ত ছিল তখনই আমি ১জন রাসুলকে প্রেরন করলাম।আর এজন্য প্রেরন করলাম যেন এই রাসুল আমার আয়াতসমুহকে তেলাওয়াত করে প্রজ্ঞা ও ক্তাবের জ্ঞান দান করে,তাদের নফসকে পবিত্র করে প্রকাশ্য গোমরাহী থেকে বের করে আনে।যেমনটি কোরান মজিদ বলছে ঠিক তেমনটিই হযরত মুহাম্মাদ(সা;০ করে দেখিয়েছিলেন।

পৃথিবীতে এলেন,হেজাজে(সৌদী আরবের আগের নাম যা রাসুল সাঃ দিয়েছিলেন) তাবলীগ শুরু করে দিলেন।যে হেজাজে গোমরাহীর মুল কেন্দ্র ছিল।তাদেরকে আয়াতগুলো তেলোয়াত করে শুনালেন,কিতাবের জ্ঞান দান করলেন,তাদের নাফসকে পবিত্র করলেন।আর ঐ মানুষটি,যে মানুষ পশুর চেয়েও অধম হয়ে গিয়েছিল,তাদেরকে আবার মানুষ বানালেন।তাদের মধ্য থেকে অনেককে উচু মানের মানুষ বানিয়ে দিলেন।কেমন করে বানালেন?

এই বিষয়টি আমি গত দিনগুলির আলোচনায় আপনাদেরকে জানিয়েছি যে,রাসুল(সাঃ) ইসলামের দর্শন উপস্থাপন করেছিলেন যে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনো।কিয়ামত দিবসের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর,এই ক্ষনস্থায়ী দুনিয়াকে আল্লাহর নির্দেশিত পথে/পদ্বতিতে ব্যবহার কর।এখানে এমনভাবে জীবনযাপন কর,যেমনটি আল্লাহপাক চান।ঐ কাজগুলি সম্পন্ন করতে তিনি বলেছেন।ঐ কাজগুলী পরিহার কর যেগুলি আল্লাহ করতে নিষেধ করেছেন। এর বিনিময়ে তোমরা জান্নাত পাবে।যা কিছু তোমরা চিন্তা কর সবই জান্নাতে পাবে।

এই দর্শনকেই রাসুল(সাঃ) তাদের অন্তরগুলোতে গেথে দিয়েছিলেন।যে অন্তরগুলো বিশ্বাস করলো তারা অন্যায় ও খারাপ কাজ পরিহার করলো এবং নেকীর পথে ধাবিত হলো।

গতকাল আমি নিজের আলোচনাকে এ পর্যন্ত বলে স্থগিত রেখেছিলাম যে,জান্নাতই এমন একটি ভরসা যার আশায় আজো মানুষ নেকীর দিকে ধাবিত হয়।

গতকাল আমি রাসুলের(সাঃ) ঐ হাদিস আলোচনা করেছিলাম,যে হাদিসটি ওলামায়ে কেরাম লিপিবদ্ব করেছেন যার একটি সনদ আমি বলেছিলাম যে রাসুল(সাঃ) বলেছেন, “ আমার উম্মতের মাঝে ৭৩ ফেরকা জন্ম নেবে যার মধ্যেকার কেবল মাত্র একটি ফেরকা জান্নাতে যাবে বাকী ৭২টি জাহান্নামে যাবে”।

গতকালো আমি চেষ্টা করিনি এবং আজো আমি কোন ভাইয়ের অন্তরে ব্যাথা দিতে চাইবো না যে তুমি জান্নাতে যেতে পারবে না।কিন্তু ভায়েরা আমার,আপনারাই বলুন,একজন লোক যার ফুসফুস নষ্ট হয়ে গেছে,যদি কেউ তার ঐ রোগের কথা জানে অথচ এই চিন্তা করে তাকে জানাতে সাহস পায় না যে লোকটি তার এই মারাত্নক প্রানঘাতী রোগের কথা শুনে মনে কষ্ট পাবে।বরং বলে যে, ‘তুমি তো ভালই আছো’।

চিন্তা করুন,বাহ্যিক চোখে তো সে রোগীর উপকার করছে কিন্তু আসলে সে তার ক্ষতি করছে।যদি তার আসল রোগের কথা জানিয়ে দেয় তাহলে রোগী তার চিকিতসা করাতে পারে এবং নিজের আয়ু বাড়িয়ে নিতে পারে।

এবার আপনারাই বলুন,আমার সামনে দুতো কথা আছে।একটা কথা তো এই যে, “ প্রত্যেক মুসলমানই পরস্পর ভাই ভাই”।আমি যদি বলি যে, “ তুমি যা কিছু করছো,যে মাযহাবের অন্তর্ভুক্ত হয়ে করছো এবং যেগুলি জেনে বুঝে ও বিশ্বাস করে করছো,করতে থাকো,অবশ্যই জান্নাত পাবে”।অথবা নিজের মুসলমান ভাইদেরকে এই কথা দ্বারা সাবধান করে দেই যে, “ যে নবীর কলেমা পাঠ করে জান্নাতের আশায় আমরা যা করছি সেই নবী(সাঃ) সংবাদ দিয়েছেন যে, “ তোমাদের মাঝে ৭৩টি ফেরকা জন্ম নেবে,মাত্র একটি ফেরকা জান্নাতে যাবে,বাকী সব কয়টা ফেরকা জাহান্নামে যাবে”।তখন কেউ কেউ মনে আঘাত পেতে পারেন যে, “ একটি ফেরকাই জান্নাতে যাবে,আর ইনি তো নিজের ফেরকা সম্পর্কেই জান্নাতে যাওয়ার কথা বল্বেন”।কিন্তু থামুন,আমি তো কেবল এতটুকুই বলতে চাই যে, এখনই এটা চিন্তা করবেন না যে কোন ফেরকা যাবে?কিন্তু এটা অবশ্যই চিন্তা করুন,বিষয়টি যখন নির্ধারিত যে একটি ফেরকাই জান্নাতে যাবে আর বাকীরা যাবে না।তাহলে ভায়েরা আমার, বিচক্ষনতা তো এটাই যে আমরা ভাল করে যাচাই-বাছাই এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখে নেব যে আমি সেই ফেরকার অন্তর্ভুক্ত কি না, যে ফেরকা জান্নাতে যাবে?

কেন,কারন আমরা ত এই আশায় দুনিয়ার ক্ষনস্থায়ী জীবন অতিক্রান্ত করছি যে, “ আমি যে ফেরকাতে আছি সেই ফেরকাই জান্নাতে যাবে”।

অথচ কিয়ামতের দিন আমি যখন জান্নাতের দরজায় যেয়ে উপস্থিত হবো তখন দরজা থেকে তাড়িয়ে দেয়া হবে এবং বলা হবে তোমাদের কাছে তো “জান্নাতের চাবি” নেই।আমি গতকাল ওয়াদা করেছিলাম যে,জান্নাতের চাবি দিয়ে যাব।আজ সেই চাবিটি আপনাদের সামনে উপস্থিত করছি। আপনাদেরকে যা বলছি তা ‘বাহ্যিক কান’ দ্বারা ন,বুদ্বি-বিবেক সম্পন্ন ‘অন্তরের কান’ দ্বারা শুনবেন।

আমি যখন রাসুলের(সাঃ) এই হাদিস পাঠ করলাম যে, “ ৭৩ ফেরকা হবে, মাত্র একটিই জান্নাতে যাবে,বাদবাকী সব জাহান্নামে যাবে” পাথ করামাত্রই আমার মাথা থেকে বন্দু বিন্দু ঘাম বের হতে লাগল,আমার নিঃশ্বাস দ্রুতগতিতে সঞ্চালিত হতে লাগল,বুক ধরফড় করতে লাগলো,আল্লাহ না করুন আমিও সেই ফেরকারই অন্তর্ভুক্ত,যে ফেরকা জান্নাতে যাবে না?

আমার বিশ্বাস,যে কোন মুসলমান উক্ত হাদিসকে আমার মত করে চিন্তা করবে তারও ললাটে বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা দেবে।কারন এই শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে যে, “ সবকিছু সঠিকভাবে পালন করার পরও যখন সেখানে হাজির হবো তখন যদি জান্নাত না পাই?”যেহেতু রাসুল(সা;) বলেছেন,”জান্নাত তো মাত্র একটি ফেরকাই পাবে”,আর আমার ফেরকা যদি সেই ফেরকা না হয়,তাহলে কি হবে?

বিষয়টিকে আরো বিশ্লেষন করে বলি যেন সবাই বুঝতে পারে।এই হাদিসের সারমর্ম তো এই যে,৬ ইমামে বিশ্বাসী শিয়ারা যদি জান্নাতে যায় তাহলে ১২ ইমামে বিশ্বাসী শিয়ারা যেতে পারবে না;যদি ১২ ইমামে বিশ্বাসী শিয়ারা জান্নাতে যায় তাহলে ৬ ইমামে বিশ্বাসী শিয়ারা জান্নাতে যেতে পারবে না;যারা ‘ইমামত’ মানে না ‘খেলাফত’ মানে তারা যদি জান্নাতে যান তাহলে যারা খেলাফতে বিশ্বাসী নয় ইমামত মানেন তারা জান্নাতে যেতে পারবে না।আবার যারা ৪ ইমামে বিশ্বাসী এবং নিজেদেরকে ‘সুন্নী’ বলে দাবী করেন তারা যদি জান্নাতে যান তাহলে যারা ঐ ৪ ইমামে বিশ্বাসী নয় তাদের কেউ জান্নাতে যেতে পারবে না।আবার যারা ১২ ইমামে বিশ্বাসী ও ন ইজেদেরকে ‘শিয়া’ বলে দাবী করে তারা যদি জান্নাতে যায় তাহলে সুন্নীরা জান্নাতে যেতে পারবে না।অন্যদিকে ‘ওহাবী’ নামে আরো একটি ফেরকা আছে,তারা যদি জান্নাতে যায় তাহলে শিয়া ও সুন্নী কেউ জান্নাতে যেতে পারবে না।আবার ‘আহলে হাদিস’ নামে একটি ফেরকা আছে,তারা যদি জান্নাতে যান তাহলে অন্য কোন ফেরকা জান্নাতে যেতে পারবে না।‘কাদিয়ানী’ নামে আরো একটি দল আছে যারা নিজেদেরকে মুসলমান দাবী করে থাকেন,তারা যদি জান্নাতে যায় তাহলে তো মুসলমানদের আর কোন দল,জামায়াত বা মাযহাবীরা জান্নাতে যেতে পারবে না।‘বেরেলভীরা’ জান্নাতে গেলে ‘দেওবন্দীরা’ যেতে পারবে না।যদি ‘ক্কাদেরিয়া তরীকা’র লোকেরা জান্নাতে যায়,তাহলে ‘চিশতীয়া তরিকার’ লোকেরা যেতে পারবে না।অন্যেরা যদি যায় তাহলে আমি যেতে পারবো না।আর আমি যদি যাই তাহলে আমি যে মাযহাব মানি ঐ মাযহাবের সকলেই জান্নাতে যাবে।একটি মাত্র ফেরকা জান্নাতে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে-“বাদ বাকী ফেরকাগুলো জাহান্নামে যাবে”।তাহলে এখন প্রশ্ন হলো,সেই ফেরকা কোনটি এবং কেন জাহান্নামে যাবে?

রাসুলকে(সাঃ) বলি,ইয়া রাসুলাল্লাহ!আপনি কেন ফেরকার সংখ্যা বাড়িয়ে দিচ্ছেন না?২-৪-১০টি ফেরকা জান্নাতে গেলে ক্ষতি কোথায়,একটি ফেরকাই কেন জান্নাতে যাবে?কিন্তু রাসুল(সাঃ) তো দুনিয়াতে আর নেই যে বলে কয়ে ফেরকার সংখ্যা বাড়িয়ে নেব।নবী(সাঃ) তো বলেই বিদায় নিয়ে চলে গেলেন যে, কেবল একটিই ফেরকা জান্নাতে যাবে।কেবল একটি জান্নাতে যাবে কারন বাকী সবকটি মিথ্যা ও ভ্রষ্ট।সত্য একের অধিক হয় না।

চিন্তা করুন,একটি ফেরকাই জান্নাতে কেন?যখন প্রত্যেক ফেরকার মুসলমানরাই কলেমা “লা ইলাহা ইলাল্লাহ-তে বিশ্বাস করে,প্রত্যেক ফেরকার লোকই ত ‘মুহাম্মাদুর রাসুলাল্লাহ’ বলে থাকে।তাহলে একটা ফেরকাই কেন জান্নাতে যাবে?সবাই যখন সালাত আদায় করে,তরীকা ভিন্ন হতে পারে,তবুও সালাত তো আদায় করে।সব তরীকার মসজিদ আছে,নিজ নিজ তরিকায় সালাত আদায় করে,রোজা রাখে,হজ্ব পালন করে,জাকাত দে অর্থাৎ নিজ নিজ মাযহাব ও তরীকা মতে সমস্ত ইবাদাত বন্দেগী করে থাকে,তবুও কেন একটা মাত্র ফেরকাই জান্নাতে যাবে?

বিষয়টিকে ভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে চিন্তা করুন যে, একটি ফেরকা কেন জান্নাতে যাবে,তাহলে আমার কথাটা স্মরন রাখবেন যে,এই হাদিসের পর্যালোচনা করলে অর্থ দাঁড়ায় এই যে, এই দ্বীন-এ-ইলাহীতে,এই মুহাম্মাদী ইসলামে,এই আল্লাহর পয়গামে,এই মাযহাবে,যেটা মানব জাতির জন্য নাজাতের কারন,সেখানকার সমস্ত আকীদা-বিশ্বাস,সমস্ত মাসয়ালা-মাসায়েল,সমস্ত হুকুম-আহকামের পাশাপাশি এমনই একটি বিষয় আছে, এমন কোন সংবাদ আছে যেটাকে কেবল একটি ফেরকাই মানবে,অন্য কোন ফেরকা মানবে না।অর্থাৎ ওই ফেরকা সবকিছু মানার পাশাপাশি ঐ বিশেষ বিষয়টিকেও মানবে যেটা জান্নাতে যাওয়ার কারন হবে।বাকী ফেরকাগুলিও সবকিছুই মানবে কিন্তু ঐ বিশেষ বিষয়টিকে মানবে না।সুতরাং ঐ বিষয়টিকে না মানার কারনে বাকী ফেরকাগুলি জান্নাতে যেতে পারবে না,যদিও তারা বাকী সমস্ত হুকুম-আহকাম মেনে চলে তবুও জান্নাতে যেতে পারবে না।

এবার প্রশ্ন হলো,ইসলামের মধ্যে ঐ বিশেষ বিষয়টি কি, যে বিষয়টিকে একটি ফেরকাই মানবে এবং তারা জান্নাতি হবে? এবং বিষয়টি এতই গুরুত্বপুর্ন যে সবকিছু মানার পর,সবকিছু পালন করার পরও যদি ঐ বিষয়টিকে মানা না হয় তাহলে কিছুই মানা হলো না!আর সব কিছু মানার পর যখন ঐ বিষয়কে আপনি মেনে নিবেন তখন আপনি জান্নাতি হবেন।

অতএব,ষ্পষ্ট হলো জান্নাতের চাবি সেই পাবে যে ঐ বিশেষ বিষয়টি সম্পর্কে জ্ঞান রাখবে ও মেনে চলবে।মুসলমানদেরকে জিজ্ঞাসা করলে সবাই যে যার কথা বলে।সবার কথা বাদ দিয়ে আসুন আমরা কোরান মজিদের একটি আয়াত তেলাওয়াত করিঃ “হে রাসুল!তোমার রবের পক্ষ হতে তোমার নিকট যা নাজিল করা হয়েছে,তা পৌছে দাও,আর যদি তুমি না কর তবে তুমি তাঁর রিসালাত পৌছালে না।আর আল্লাহ তোমাকে মানুষ থেকে রক্ষা করবেন।নিশ্চই আল্লাহ বিশ্বাসহীনদেরকে হেদায়াত করেন না”।(সুরা মায়েদাঃ৬৭)

আয়াতের মধ্যে সবার আগে সেই কথা পরিস্কার হওয়া উচিত যে আল্লাহর সে ‘নির্দেশটি কি”?যেটাকে এত গুরুত্ব সহকারে আল্লাহ পৌছে দেয়ার জন্য নবীকে আদেশ করেছেন।ঐ নির্দেশ! যে নির্দেশ আমি আগেই দিয়েছি।এখন সমস্যা হলো,মুসলমানরা যতক্ষন পর্যন্ত জানতে না পারছে যে ‘নির্দেশটি কি’ ছিল?আল্লাহ তাঁর রাসুলকে কোন হুকুমটি দিয়েছিলেন,ততক্ষন পর্যন্ত সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।

কিছু মুসলমানেরা বলেন যে, নবীরাও আমাদের মতই হয়ে থাকেন।আমরা যখন জন্মগ্রহ্ন করি তখন কিছুই জানিনা,কেউ পড়ালে বা জানালে তখন জানতে পারি।ঠিক তেমনি নবীকে যখন কেউ পড়ায় তখনই নবী জানতে পারেন।

আমি জিজ্ঞাসা করলাম,কে পড়িয়েছে?

তারা উত্তর দিল,জিব্রাইল আমিন(আঃ)।

উক্ত রেওয়ায়েতটিকে আমি এ মুর্তে স্মরন করাতে চাই না,যে রেওয়ায়েতে নবীর সীনা চাক করে কলিজা/অন্তর থেকে কালো দাগ নিংড়ানো হয়েছিল এবং কাউসারের পানি দ্বারা ধোয়া হয়েছিল,তারপর কলিজাকে/অন্তরকে নবীর সীনায় আবার স্থাপন করা হয়েছিল।এর আগে নবীর বক্ষ সংকুচিত ছিল,যখন কলিজা/অন্তর থেকে কাল দাগ উপড়ে ফেলা হল,তখন নবীর বক্ষ প্রশস্ত হয়ে গেল।

আমি এধরনের রেওয়ায়েতগুলীকে নবীর জন্য অমর্যাদাকর এবং অসম্মাঞ্জনক বলে মনে করি।উক্ত রেওয়ায়েতে নবীর উপযুক্ত কোন বক্তব্য নেই।আমার ঐ ভায়েরা বিশ্বাস করেন যে, ‘নবীকে জিব্রাইল যখন পড়াতেন তখনই নবী পড়তেন’।আমি তাদের উদ্দেশ্যে শুধু এটুকু বলতে চাই যে,আপনাদের চোখে নবী যখন জিব্রাইলের ছাত্র,তখন কোরানের এই আয়াতের সারমর্ম বুঝা যাবে না,কেননা মুসলমান তো তখনই বুঝবে যখন রাসুল(সাঃ) বুঝবেন,আর রাসুল(সাঃ) তখনই বুঝবেন যখন জিব্রাইল(আঃ) তাঁকে বুঝাবেন।আমি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করি আপনারা বলুন,এটা কেমন হুকুম যার জন্য কোরান বলছে, “হে রাসুল আপনি সেই সংবাদ পৌছে দিন যা আমি আগেই আপনাকে জানিয়ে দিয়েছি”।জিব্রাইল বলবেন, যদি ঐ সংবাদের কথা এই আয়াতে থাকতো তাহলে তো আমি বলে দিতে পারতাম।কিন্তু সংবাদিটি হলো গুপ্ত,আমি নিজেই জানিনা যে হুকুমটি কি, আপনাকে কেমন করে জানাবো।

এবার ভাবুন,বিষয়টি যখন শিক্ষকই জানে না তখন ছাত্র কেমন করে বলবে?আর ছাত্রই যখন জানে না,তখন ‘উম্মত’ কি ভাবে জানবে?তাহলে এবার ষ্পষ্ট হলো জিব্রাইল(আঃ)কে যদি রাসুলের(সাঃ) শিক্ষক মেনে নেয়া হয় তাহলে তো কোরানের উক্ত আয়াতের সমাধান কখনোই হবে না।আমি আবারো অনুনয়-বিনয় করের বললাম,’হে জিব্রাইল!আপনিই তো প্রতিদিন ওহি নিয়ে আসেন,আপনিই যদি বিষয়টির ব্যাখ্যা না দেন তাহলে কে দেবে’?জিব্রাইল বললেন, “ তোমার স্মরনে থাকা উচিত সেই রাতের কথা যে রাতে ওহী বহনকারী জিব্রাইল (আঃ) ‘সিদরাতুল মুনতাহা’ পর্যন্ত থেমে গিয়েছিল অথচ যার কাছে ওহী নিয়ে যাওয়া হত তিনি ‘কাবা কাওসাইন আও আদনা’র মঞ্জিলে যেয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন”।কোরান মজিদের ‘সুরা নজম’ এই কথার সাক্ষী,যেখানে নবী(সাঃ)এর মে’রাযের ঘটনা বর্নিত আছে।এবার বিষয়টি ষ্পষ্ট হল।কোরান বলছেঃ“হে রাসুল!তোমার রবের পক্ষ হতে তোমার নিকট যা নাজিল করা হয়েছে,তা পৌছে দাও,আর যদি তুমি না কর তবে তুমি তাঁর রিসালাত পৌছালে না।আর আল্লাহ তোমাকে মানুষ থেকে রক্ষা করবেন।নিশ্চই আল্লাহ বিশ্বাসহীনদেরকে হেদায়াত করেন না”।(সুরা মায়েদাঃ৬৭)।

অর্থাৎ “ হে রাসুল!আপনি পৌছে দিন যে সংবাদটি আপনাকে দিয়েছিলাম”।শব্দের সাথে যদি শব্দ মিলিয়ে না দেই তখন আপনি বাধা দিবেন।সুরা নজমে রাসুল(সাঃ)এর মে’রাজের ঘটনা বর্ননা করতে যেয়ে পবিত্র কোরান বলছেঃ জিব্রাইল ‘সিদরাতুল মুন্তাহায়’ পৌছে থেমে গেলেন,রাসুল(সাঃ) ‘কাবা কাওসাইন আও আদনার’ মোকামে পৌছালেন, আল্লাহ পাক তাঁর সাথে কথা বললেন,যেটা কোরান বয়ান করছে, “ ফা আওহা ইলা আব্দিহি মা আওহা” অর্থাৎ “ আজকের রাতে যা বলার দরকার ছিল তা আমি বলে দিয়েছি”।

ঐ শবে মে’রাজে আল্লাহ বলেছিলেন,যা কিছু আমার বলার দরকার ছিল আমি আমার বান্দাকে বলে দিয়েছি।এবং আজ গাদীরের দিনে বলছেন, “যা বলেছিলাম তা আজ তুমি মানুঢের নিকট বলে দাও”।এতক্ষনে বিষয়টি ষ্পষ্ট বুঝা গেল,’জান্নাতের চাবি’ হলো সেই সংবাদ যেটা আল্লাহ পাক তাঁর হাবিবকে(সাঃ) মে’রাজের রাতে বলে দিয়েছিলেন।কিন্তু মে’রাজের রাতে তো রাসুলের(সাঃ) সাথে আমরা কেউ ছিলাম না,জিব্রাইলও ছিলেন না,রাসুল(সাঃ) একাই আল্লাহর নিকটবর্তী হয়েছিলেন,তাঁর সাথে কেউ ছিল না,কেউ জানে না যে আল্লাহর সাথে তাঁর কি কথোপকথন হয়েছিল,আল্লাহ পাক কোন সংবাদটি বলেছিলেন,আল্লাহ ও রাসুল ছাড়া কেউ জানে না।অথচ সেই সংবাদটিই হচ্ছে ‘জান্নাতের চাবি’।যতক্ষন পর্যন্ত ঐ সংবাদটি জানা না যাবে ততক্ষন পর্যন্ত জান্নাতের চাবি পাওয়া যাবে না।সুতরাং সন্দ্বান করা উচিত যে, উক্ত আয়াতটি নাজিল হওয়ার পর ‘গাদীরে খুমে’ রাসুল(সাঃ) উপস্থিত জনতাকে কোন সংবাদটি দিয়েছিলেন।কিন্তু তার আগে আরো একটি কথা অনুভব করতে হবে।আমি কারর সাথে তুলনা করতে চাই না বা কাউকে খাট করতে চাই না।তবে এটুকু অবশ্যই বলতে চাই যে, কিছু লিছু লোকের আকিদা বিশ্বাস হচ্ছে যে, ‘ জিব্রাইল(আঃ) হচ্ছেন নবী(সা)এর শিক্ষক”!

দাড়িপাল্লায় দুট দাড়ি থাকে,যে পাল্লাটি ভারী হয় সেটি জমীনের দিকে ঝুকে থাকেব , যে পাল্লাটি হাল্কা হয় সেটা উপরে উঠে থাকে।আচ্ছা দুই পাল্লাতেই ইসলামকে ওজন করে নিন।

আপনারা বলেছেন,”নবীর শিক্ষক ছিলেন জিব্রাইল”।

আমি বলছি, “ আপনার নবীর যে শিক্ষক সে হলো আলীর ছাত্র”।এবার সিদ্বান্ত নিন,জিব্রাইল যখন আলীর ছাত্র তাহলে আলী যে মুহাম্মাদের ছাত্র,ঔ মুহাম্মাদ কেমন হবে?ঐ ইসলাম হচ্ছে অন্যদের আর এই ইসলাম হচ্ছে আমার।

এই আয়াতের অংশ পাঠ করা যাকঃ

“হে রাসুল!তোমার রবের পক্ষ হতে তোমার নিকট যা নাজিল করা হয়েছে,তা পৌছে দাও,আর যদি তুমি না কর তবে তুমি তাঁর রিসালাত পৌছালে না।আর আল্লাহ তোমাকে মানুষ থেকে রক্ষা করবেন।নিশ্চই আল্লাহ বিশ্বাশীনদেরকে হেদায়াত করেন না”।(সুরা মায়েদাঃ৬৭)

অর্থাৎ “হে রাসুল! পৌছে দিন সেই সংবাদ যা মে’রাজের রাতে দিয়েছিলাম।আর হে রাসুল,তুমি যদি ঐ সংবাদটি না পৌছে দাও তাহলে তুমি রেসালাতের কিছুই পৌছালে না।“

জ্ঞানী গুনিদের কাছে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে গেছে।কিন্তু আমি বাচ্চাদেরকে বুঝাতে চাই।সেজন্য আরো কয়েকটি বাক্য বলতে হবে।অতএব বুঝাগেল আল্লাহ পাক এমন একটি সংবাদ পৌছে দিতে বলেছেন যে সংবাদটি না পৌছাতে পারলে কিছুই পৌছানো হবে না।

আয়াতের পরের অংশে বলা হয়েছে যে, “ নির্ভয়ে পৌছে দাও, ভীতির কোন কারন নেই,আমি তোমাকে মাষের অনিষ্ট বা শত্রুতা থেকে রক্ষা করবো”।আমি যদি বুদ্বিমান কোন মুসলমানকে বলি যে, এই আয়াতটি নবীর উপর ঐ দিন অবতীর্ন হয়েছিল যে দিন ১ম নবী(সাঃ) তাবলীগ শুরু করেছিলেন এবং ঐ মুসলমান যদি ইতিহাস না পড়ে থাকে,তবে কোরানের এই আয়াতকে পাঠ করার পর বলবে যে, তুমি ভুল বলেছ।কেননা,কোরান বলছে যে, যদি এই সংবাদটি না পৌছে দাও তাহলে কিছুই পৌছান হবে না।

একটা উদাহরন শুনুন।একজন লোক আপনার মেহমান হলো। আপনিও তাকে বসিয়ে ফল-মুল,চা-পান ইত্যাদি আপ্যায়ন করলেন।আপনার খাতির যত্নে লোকটার পেট ভরে গেল।লোকটি যখন বিদায় নিতে যাচ্ছে তখন আপনি তাকে এক গ্লাস শরবত খেতে দিলেন।লোক্টি বললো,অনেক খেয়েছি, পেটে আর জায়গা নেই।আপনি বললেন, “ যদি এই শরবত টূকু না পান করেন তো কিছুই পান করলেন না”।কিন্তু যদি এমন হয় যে, একজন মেহমান এলো,আপনি তাকে বসতে দিলেন , তারপর এক গ্লাস পানি পান করতে দিলেন।সে বললো,আমি পানি পান করবো না।তখন যদি আপনি বলেন যে,যদি এই পানিটুকু পান না করলে তাহলে তো কিছুই পান করলেন না।আপনার এই কথার জবাবে লোকটি বলবে যে,আর ভাই, আমি তো এখনো কিছুই পান করিনি,আপনি কেমন করে বলছেন যে এই পানি টুকু পান না করলে কিছুই পান করা হবে না।তো বুঝা গেল,যদি এটা না করেন তাহলে কিছুই করা হবে না।এধরনের বাক্য কোন ঘটনা বা কাজের প্রথমে বলা হয় না,কেননা এখনো কোন কিছুই করা হয়নি।বরং কোন ঘটনা বা কাজ শেষ পর্যায়ে থাকে তখন বলা হয়ে থাকে যে, এটা না করলে কিছুই করা হবে না।

বুঝা গেল এই মুহুর্তটি রাসুলের(সাঃ) তাবলীগের প্রথম দিক নয় বরং তাবলীগের শেষ দিক।কোরান বলছে, “ হে আল্লাহর রাসুল!ঐ সংবাদটি পৌছে দিন যা আপনাকে আগেই বলে রেখেছি,যদি ঐ সংবাদটি পৌছে দিন তাহলে কোন কিছুই পৌছানো হবে না”।অর্থাৎ যদি না পৌছান তাহলে এযাবৎ যা কিছু পৌছে দিয়েছেন তা সবই নিস্ফল হয়ে যাবে,অর্থহীন হয়ে যাবে।

এই বাক্যটির ব্যাখ্যা এভাবেও দেয়া যেতে পারে যে, “ হে নবী!তুমি তোমার ‘নবুয়াতের সংবাদ’ পৌছে দিয়েছ কিন্তু যদি এই সংবাদটি না পৌছে দাও তাহলে ‘নবুয়াতের সংবাদ’ পৌছানো গ্রহনযোগ্য হবে না।তুমি কোরানকে ‘আল্লাহর কালাম’ বলে পৌছে দিয়েছ,কিন্তু এই সংবাদটি যদি না পৌছে দাও তাহলে কোরান পৌছানোর কাজটি অর্থহীন হয়ে যাবে।



রুমি কা’বা হতে মুর্তি অপসারন করেছ ‘হজ্বের বিধান’ পৌছে দিয়েছ,কিন্তু এই সংবাদটি যদি না পৌছে দাও তাহলে হজ্বের বিধান গ্রহনযোগ্য হবে না।তুমি ‘সালাতের শিক্ষা’ দিয়েছ,কিন্তু যদি এই সংবাদটি যদি না পৌছে দাও তাহলে সালাত কার্যকর হবে না।তুমি ‘রোজার বিধান’ পৌছে দিয়েছ,যাকাতের বিধান পৌছে দিয়েছ,খুমসের বিধান পৌছে দিয়েছ,হালাল-হারামের শিক্ষা দিয়েছ,কিন্তু এই সংবাদটি যদি না পৌছে দাও তাহলে ইতিপুর্বে তোমার পৌছে দেয়া সমস্ত বিধি-বিধান,শিক্ষা-দীক্ষা কোন কিছুই গ্রহনযোগ্য বলে গঘীত হবে না।

পবিত্র কোরান এই স্থানেই ষ্পষ্টাকারে বুঝিয়ে দিল যে,এটাই হলো সেই সংবাদ,যদি এই সংবাদকে না বুঝতে পার,না চিনতে পার,যদি এই সংবাদকে গ্রহন করতে না পার,তাহলে এযাবতকাল যত কিছুই জেনেছ এবং মেনেছ তার কোন কিছুই গ্রহনযোগ্য হবে না।আর যদি এই সংবাদকে স্বীকার করে নাও তাহলে সবকিছুই মানা স্বার্থক হবে এবং সবকিছুই গ্রহনযোগ্য হবে।

আলহামদুলিল্লাহ,প্রতিটি শব্দের সাথে শব্দ মিলে গেল।হাদিস বলছে যে, “জান্নাত মাত্র একটি ফেরকার অনুসারীরা পাবে”।অর্থাৎ একটি মাত্র ফেরকা এমন একটি কথাকে মান্য করবে এবং বিশ্বাস করবে,যার গুরুত্ব তো এই যে,যদি সেটাকে মানা না হয় তাহলে কোন কিছুই মানা হবে না,সবকিছুই নিস্প্রান,অর্থহীন,অহেতুক বলে গন্য হবে।যদি ঐ সংবাদকে মেনে নেয়া হয় তাহলে সবকিছু মানা স্বার্থক হবে,সবই গ্রহনযোগ্য হবে।তবেই সফলকাম হওয়া যাবে।

চলবে...।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.