নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দেশ , মানুষ

জীবনের সব কিছু আললাহর সন্তুষ্টির জন্য

আল মাহদী ফোর্স

কোরান ও নবী পরিবারের আঃ অনুসারী।

আল মাহদী ফোর্স › বিস্তারিত পোস্টঃ

বারো ইমাম এরসংক্ষপ্তি জীবনী

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:২৫


ভূমিকা
মানব সৃষ্টির প্রথম মানুষ ছিলেন ঐশী মানব হযরত আদম (আ.)। অতএব সৃষ্টি জগতকে সার্বিক ভাবে পরিবেষ্টন করে রেখেছে ঐশী আলো। আর সৃষ্টি জগতের পরিসমাপ্তিতেও থাকবেন একজন ঐশী মানব যিনি ইমাম মাহদী (আ.) নামে পরিচিত। হয়তবা এর মূলতঃ কারণ হল মানব জাতি সত্য পথে চলার ক্ষেত্রে মহান আল্লাহ্র সম্মুখে কোন প্রকার অজুহাত উপস্থাপনের অবকাশ না পায়। হেদায়েতের এই দুই বন্ধনীর মধ্যে অবস্থান করছে মানব জাতি। সুতরাং মানুষ কখনো ঐশী পথ প্রদর্শক শূণ্য অবস্থায় থাকবে না ।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) দুনিয়াতে আগমণ করে নবী বা রাসূল আগমনের পরিসমাপ্তি ঘটান। তিনি হলেন শেষ নবী ও রাসূল তাঁর পরে আর কোন নবী বা রাসূল আগমন করবেন না। কিন্তু প্রশ্ন হল তাঁর অবর্তমান কাল থেকে কেয়ামত পর্যন্ত এই সূদীর্ঘ সময়ে মানব জাতিকে সত্যের দিক নির্দেশনা দেবে কে? আমরা কিভাবে নিশ্চিত হব যে সত্যে অবিচল আছি? পীরের দরবারে আরাধনা করে? না, রাজনৈতিক ধর্মের সদস্য হয়ে রাস্তায় নেমে? আজ চোরের মুখেও শোনা যায় ঘরে ঘরে সত্যের আলো জ্বালার কথা। আজ দু’জন মুফতি বিপরীতমুখী দু’রকম কথা বলেন। প্রত্যেকটি মাযহাব অন্য মাযহাবকে বিচ্যুত বলে বিশ্বাস করে থাকেন। তাহলে প্রকৃত সত্যের আলো কোথায় পাওয়া যাবে? সম্মানীয় পাঠক আপনার কাছেই যদি প্রশ্ন করা হয় যে, রাসূলের যুগের মতই মুসলিম উম্মাহ যদি আজ একটিই একক জাতি হিসেবে থাকত, তাহলে কেমন হত? মানব জাতি আজ চরম দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। যদি প্রশ্ন করি এত সব ফিরকা বা মাযহাবের উৎপত্তির মূল কারণ কি? তাহলে কি উত্তর দিবেন? নিশ্চয় আমি ও আপনার মত সাধারণ লোকেরা এত সব মাযহাবের সৃষ্টি করেনি। তাহলে করলো কারা? আর যারা মাযহাব সৃষ্টি করেছেন তারা কি ভালো কাজ করেছেন?
মাযহাব হল রাসূলের (সা.) আদর্শকে ভুল অনুধাবনের একটি ফল। যাকে আমরা মাকাল ফলের সাথে তুলনা করতে পারি। যার বাহ্যিক অবয়ব অতি সুন্দর ইসলামের মতই কিন্তু অভ্যন্তরে অবস্থান করছে আমাদের কামনা-বাসনায় তৈরী এক নোংরা আদর্শ। আজ কোন মাযহাবই স্বীকার করবেন না যে তারা রাসূলের আদর্শকে ভুল অনুধাবন করেছেন ।
এই নামাযে দাঁড়ানোর অবস্থার কথাই ধরুন, কেউ হাত ছেড়ে দিয়ে পড়েন আবার কেউ বেঁধে। আবার যারা হাত বেঁধে পড়েন তাদের সবাই একই স্থানে বাঁধেন না। তাহলে
---------------------------------------
(১। সুরা নিসা, ১৫৬ নং আয়াত।
২। فَتَقَطَّعُوا أَمْرَهُمْ بَيْنَهُمْ زُبُرًا كُلُّ حِزْبٍ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُونَ- অতঃপর তারা [তাদের হেদায়েতের] বিষয়কে বহু পন্থায় বিভক্ত করে দিয়েছে। আর প্রত্যেক স¤প্রদায় নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে আনন্দিত। -সূরা মু’মিনুন, ৫৩ নম্বর আয়াত । )
-----------------------------------------------------------------
রাসূলুল্লাহ্ (সা.) কিভাবে নামায পড়েছেন? সে যুগের মুসলমানরা কি প্রত্যক্ষ করেননি যে রাসূলুল্লাহ্ (সা.) কিভাবে নামায পড়েছেন?
অথচ মালেকী মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা মালেক বিন আনাস বিন মালেক আসবাহী [৯৩/৯৫ হিঃ-১৭৯ হিঃ] জীবন যাপন করেন। আর হানাফী মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা নো’মান বিন সাবেত বিন যাওত্বা যিনি আবু হানিফা নামে প্রশিদ্ধ তিনি [হিঃ৮০- হিঃ১৫০] জীবন যাপন করেন। অন্যদিকে শাফেঈ মাযহাবের প্রতিষ্ঠিাতা মুহাম্মদ বিন ইদ্রিস শাফেঈ ছিলেন [১৫০হিঃ- ২০৪হিঃ] সনে। আর হাম্মালী মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা আহমাদ বিন মুহাম্মদ বিন হাম্মাল জীবযাপন করেন [১৬৪হিঃ- ২৪১হিঃ] সনে।
কিভাবে সম্ভব ১৫০ থেকে ২০০ বসরের মধ্যে নামাযের মত এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা মুসলমানরা প্রতিদিন পালন করতেন সেখানে এত বিভেদ দেখা দিবে?
নিশ্চিত ভাবে আমরা জানি যে, রাসুলুল্লাহ্ (সা.) আজকের দিনের অবস্থা সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত ছিলেন। কেননা একটি প্রসিদ্ধ হাদীসে মহানবী (সা.) বলেছেন, আমার উম্মতেরা ৭৩ ফিরকায় বিভক্ত হয়ে পড়বে, এদের মধ্যে একটি ফেরকা পরকালে মুক্তি পাবে আর বাকী মাযহাব গুলো পথভ্রষ্ট বা তারা মুক্তি পাবে না। এখানে আমার উম্মত বলতে কেবল মুসলমানদের কথায় বোঝানো হচ্ছে। অথাৎ মহানবী বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে অবগত ছিলেন আর এজন্যই উম্মাহকে সাবধান করতে ওকথাই বলেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হল এই অবস্থা থেকে মুক্তি বা সত্যপথ পাওয়ার কোন নির্দেশনা কি তিনি দিয়ে যাননি?
যদি তিনি পথনির্দেশনা দিয়ে থাকেন তাহলে তা আমাদের অবশ্যই অনুসন্ধান করা উচিত। আর যদি কোন পথ-নির্দেশনা না দিয়ে থাকেন তবে বেশ কয়েকটি মৌলিক প্রশ্ন আমাদের সামনে এসে দাঁড়াবে। যথাক্রমে ঃ তিনি তাহলে কিভাবে সৃষ্টির সেরা মানব হলেন? যে জাতির সমস্যাকে সনাক্ত করতে সক্ষম কিন্তু সমাধান দিতে পারেন না। কেয়ামতের দিন আমরা মহান আল্লাহর দরবারে অজুহাতের স্বরে বলতে পারবো যে, হে প্রভু পৃথিবীতে আমরা বিভিন্ন ফেরকা ও মাযহাবের দেখানো পথের অনুসরণ করেছি। কোন পথে চলতে হবে সেক্ষেত্রে রাসুলের (স.) নির্দেশনা পাইনি। তাই আমরা জন্ম সূত্রে বা হাতের কাছে যে মাযহাব পেয়েছি তারই অনুসরণ করেছি। কিন্তু এরকম সকল প্রকারের বাহানার ভিত্তিকেই মহান আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে সুরা নিসার ১৫৬ নম্বর আয়াতে বাতিল করে দিয়েছেন।
তাই আমরা কুরআনের ভিত্তিতে বলতে পারি যে, মহানবী (সা.) কেয়ামত পর্যন্ত বিভিন্ন সমস্যার ক্ষেত্রে মানব জাতিকে বিভিন্ন ভাবে পথনির্দেশনা দিয়ে গেছেন। এজাতিয় বিশ্বাসই সর্বাধিক সত্য ও কুরআন ভিত্তিক বিশ্বাস। কিন্তু প্রশ্ন হল যখন সমস্ত মাযহাব বলছে সত্যের আলো তারাই বহন করছেন তখন সেখানে আমরা কিভাবে রাসুল (সা.) নির্দেশিত ও
-----------------------------------------
(১। {مِنْ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعًا كُلُّ حِزْبٍ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُونَ}-যারা তাদের ধর্মে বিভিন্ন দল বা ফিরকার সৃষ্টি করেছে ফলে তারা অনেক দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আর প্রত্যেক দলই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে উল্লাসিত। সুরা র্আ রুম ৩২ নম্বর আয়াত])
-----------------------------------
আল্লাহ প্রদত্ত পথকে বেছে নিতে পারবো? এক্ষেত্রে আমরা তিনটি ধারণা কল্পনা করতে পারি।
(১) প্রত্যেকের ইচ্ছাখুশী মত পথ বেছে নেওয়া। এই স্ব-ইচ্ছায় নির্বাচনের ভিত্তি কখনো জ্ঞান হতে পারে আবার কখনো আবেগ ও অন্যের প্রভাব হতে পারে।
(২) রাসূলের (সা.) সাহাবীরা হলেন আকাশের নক্ষত্রসম তাই তাদেরকে অনুসরণ করলেই প্রকৃত হেদায়েতের পথ পাওয়া যাবে। কেননা তারা সরাসরি রাসূলের (সা.) জীবনধারাকে প্রত্যক্ষ করেছেন এবং রাসূলের (সা.) হাতেই তারা গড়ে উঠেছেন।
(৩) রাসূলের (সা.) অবর্তমানে যাদেরকে রাসূল (সা.) সত্যের মানদন্ড হিসেবে জনসমাজে পরিচয় দিয়েছেন এবং মুসলিম উম্মাহ্কে যাদের অনুসরণ করতে বলেছেন তাদের নির্দেশিত পথে চলা। অর্থাৎ আমাদেরকে আবেগ ও প্রভাব মুক্ত মনে অনুসন্ধান করা উচিত যে রাসূলুল্লাহ্ পরবর্তী কালে মানব জাতির হেদায়েতের জন্য কাউকে নির্ধারণ করে গেছেন কি-না? যদি নির্ধারণ করে গিয়ে থাকেন তাহলে অন্যের পিছে ছুটে বেড়ানোর আর আমাদের দরকার নেই। কেননা আমরা কেয়ামতের দিন বলতে পারবো যে, হে আল্লাহ্ আমরা আপনার রাসূলের (সা.) নির্দেশিত পথ ও ব্যক্তিদেরকে অনুসরণ করেছি।
প্রথম ধারণাটি পবিত্র কুরআনের ভিত্তিতে বাতিল হয়ে যায়। কেননা সত্য কখনো মানুষের ইচ্ছাকে অনুসরণ করে না। বরং মানুষকে সত্যের অনুসরণ করা উচিত। আর হেদায়েতের ক্ষেত্রে সত্য নির্দেশনা কেবল আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের (সা.) মাধ্যমেই আসতে হবে নতুবা সেটি হবে নিজের প্রবৃত্তিকে অনুসরণ করার শামিল ।
আর দ্বিতীয় ধারণাটি নিশ্চয় সত্যে উপণীত হওয়ার একটি ভালো মাধ্যম। কেননা সাহাবীগণ মহানবীর সামনে থেকে সব কিছু শিখেছেন। তাই তাদের মাধ্যমে আমরা মহানবীকে অনুসরণ করতে পারি। আর মহানবী (সা.) কে অনুসরণ করার অর্থ হল আল্লাহকে অনুসরণ করা, এ বিষয়ে কোন প্রকার সন্দেহ থাকতে পারে না। তবে এখানে দুটি বিষয়ের আরো স্পষ্ট করে ব্যাখ্যা করা উচিত, তাহল প্রথমটি হল ঃ সাহাবী
----------------------------------
(২। [وَلَوْ اتَّبَعَ الْحَقُّ أَهْوَاءَهُمْ لَفَسَدَتْ السَّمَاوَاتُ وَالأَرْضُ- সত্য যদি তাদের কাছে কামনা-বাসনার অনুসারী হত, তবে নভোমন্ডল ও ভুমন্ডল এবং এগুলোর মধ্যবর্তী সবকিছুই বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ত – সূরা মু’মিনুন ৭১ নম্বর আয়াত। ] সূরা কাসাসের ৫০ নম্বর আয়াতে বলা হচ্ছে, [{فَإِنْ لَمْ يَسْتَجِيبُوا لَكَ فَاعْلَمْ أَنَّمَا يَتَّبِعُونَ أَهْوَاءَهُمْ وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنْ اتَّبَعَ هَوَاهُ بِغَيْرِ هُدًى مِنَ اللَّهِ]“অতঃপর তারা যদি আপনার কথায় সাড়া না দেয়, তবে জানবেন, তারা শুধু নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। আল্লাহর হেদায়েতের পরিবর্তে যে ব্যক্তি নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, তার চাইতে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে?” এক্ষেত্রে পবিত্র সূরা মায়েদার ৪৮ নম্বর আয়াতে বলা হচ্ছে ঃ “আমি আপনার প্রতি সত্যগ্রন্থ নাযিল করেছি, যা পূর্ববতী গ্রন্থ সমূহের সত্যায়নকারী এবং সেগুলোর বিষয়বস্তুর রক্ষণাবেক্ষণকারী। অতএব, আপনি তাদের পারস্পারিক ব্যাপারাদিতে আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তদানুযায়ী ফয়সালা করুন এবং আপনার কাছে যে সৎপথ এসেছে, তাছাড়া তাদের ইচ্ছার অনুসরণ করবেন না। আমি তোমাদের প্রত্যেককে একটি আইন ও পথ দিয়েছি। আল্লাহ্ যদি চাইতেন, তবে তোমাদের সবাইকে এক উম্মত করে দিতেন, কিন্তু এরূপ করেননি- যাতে তোমাদের যে ধর্ম দিয়েছেন তাতে পরীক্ষা নেন। .. অতঃপর তিনি অবহিত করবেন সে বিষয় যাতে তোমরা মতবিরোধ করতে।” )
------------------------------------
বলতে আমরা কি বুঝি। অর্থাৎ সাহাবীর সংজ্ঞা কি? আর দ্বিতীয়টি হল ঃ সকল সাহাবীই সত্যের মানদন্ড না বিশেষ সাহাবীগণ?
সাধারণত যারা রাসূল (সা.)-এর সাক্ষাত লাভ করেছেন তাদেরকে সাহাবী বলা হয়ে থাকে। তাহলে সকল সাহাবীই সত্যের মানদন্ড হয়ে দাঁড়ায়, যেভাবে বলা হয়ে থাকে সাহাবীরা আকাশের নক্ষত্রসম তাদের যাকেই অনুসরণ করবে হেদায়েত পাবে। যদি তাই হবে তাহলে আরো কয়েকটি প্রশ্ন আমাদের সামনে এসে উপস্থিত হয়। আর তা হল: সূরা মুনাফেকুন কোন সব ব্যক্তিদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে? অথাৎ রাসুলের (সা.) জীবদ্দশায় উপরের সংজ্ঞা অনুযায়ী এমন সংখ্যক মুনাফিক সাহাবী ছিলেন যাদের জন্য সুরা মুনাফেকুন নাযিল হয়েছে।
আমরা ইতিহাসে স্পষ্ট ভাবে দেখতে পাই অনেক সাহাবীই অন্য সাহাবীকে অনুসরণ করছেন না বরং ঝগড়া, মারা-মারি এমনকি তারা পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ করতেও কুন্ঠাবোধ করেননি। তাহলে নিশ্চয় এসকল সাহাবীদের অনুসরণের কথা বলা হয়নি। অন্যদিকে অনেকে এসব বিষয়কে তাদের ব্যক্তিগত ইজতিহাদের বিষয় বলে ব্যাখ্যা করে বিষয়টিকে ধামা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা ভুলেগেছেন পৃথিবীর সকল মানুষকে মহানবীর দেখানো পথ ও বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে এমনকি সাহাবীদেরও। অথাৎ ইজতিহাদের অর্থ এই নয় যে, মহানবীর (সা.) কোন নীতির পাশে আরেকটি স্বতন্ত্র [মুজতাহিদের] নীতি দাঁড় করানো। বরং ইজতিহাদের অর্থ হল, গবেষনার মাধ্যমে মহানবীর নির্দেশনাকে উদ্ধার করা। অতএব ঐহাদীসটি যে একটি বানোয়াট হাদীস তা এখান থেকে প্রমাণীত হয়ে যায়।
আর বিশেষ কোন সাহাবীকে অনুসরণের ক্ষেত্রে অবশ্যই সরাসরি রাসুলের (সা.) নির্দেশ থাকতে হবে। আর আলোচনাটি আমাদের কল্পিত তৃতীয় ধারণাটির অনুরূপ ।
(ক) মহানবী (সা.) যে ধর্ম প্রচারের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম ও যুদ্ধে মৃত্যুর মুখোমুখী হয়েছেন তাকে ভবিষ্যতে রক্ষার জন্য কোন নেতা মনোনীত না করে যেতে পারেন না। শীয়া ও সুন্নী উভয় সুত্রে বর্ণিত অসংখ্য ‘মুতাওয়াতির’ ও ‘মুস্তাফিজ’ হাদীসে মহানবী (সা.) স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করেছেন যে, হযরত আলী (আ.) তাঁর কথায় ও কাজে ভুল-ত্র“টি থেকে মুক্ত। তিনি যা কিছু বলেন এবং করেন, সবই ইসলামের প্রচার কাজের সাথে সম্পূর্ণ সংগতিপূর্ণ। ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শরীয়তের ক্ষেত্রে তিনিই সর্বাধিক জ্ঞানী ব্যক্তি।
(খ) হযরত আলী (আ.) ইসলামের জন্যে অতীব মূল্যবান সেবামুলক কাজ করেছেন। ইসলামের পথে তিনি আশ্চর্য-জনক আত্ম-ত্যাগের প্রমাণ রেখেছেন। উদাহরণ স্বরূপ মদীনায় হিজরতের রাতে মহানবী (আ.)-এর বিছানায় শয়ন, বদর, ওহুদ, খন্দক ও খায়বারের যুদ্ধে তাঁর দ্বারা অর্জিত বিজয়সমূহ উল্লেখ যোগ্য। এ সব ঘটনার কোন একটিতেও যদি তিনি উপস্থিত না থাকতেন তাহলে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহ্ সেদিন আল্লাহ্র শত্র“দের হাতে ধ্বংস হয়ে যেত।
‘গাদিরে খুমের ঘটনা’। এ ঘটনায় মহানবী (সা.) হযরত আলী (আ.) কে জন-সাধারণের মাঝে তাদের গণনেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত ও পরিচিত করিয়ে দেন। তিনি আলী (আ.)-কে নিজের মতই জনগণের অভিভাবকের পদে প্রতিষ্ঠিত করেন। হযরত আলী (আ.)-এর এ ধরণের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও মহত্বের অধিকারী হওয়ার বিষয়টি ছিল একটি সর্বসম্মত ব্যাপার । এ ছাড়াও তাঁর প্রতি আল্লাহ্র রাসূল (সা.)-এর ভালবাসা ছিল অপরিসীম। সব মিলিয়ে এটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল যে, সত্য ও মহত্বের অনুরাগী রাসূল (সাঃ)-এর বেশ কিছু সংখ্যক সাহাবী আলী (আ.)-এর প্রেমে অনুরক্ত ও তাঁর অনুসারীতে পরিণত হবেন। একই ভাবে এ বিষয়টি বেশ কিছু সংখ্যক সাহাবীর ঈর্ষা ও
-----------------------------------
১। আহলে সুন্নাতের অনেক প্রশিদ্ধ আলেমগণও হাদীসটিকে দূর্বল ও বানোয়াট ও মিথ্যা বলে অভিযুক্ত করেছেন যেমন ঃ ইবনুল যাওযী আ’লামুল মুওয়াক্কীন গ্রন্থের ২২৩ নং পৃ। ক্বাজী আইয়াজ ও হাফেজ আরাকী ..।
২। হযরত উম্মে সালমা হতে বর্ণিত; হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেনঃ “আলী (আ.) সর্বদা সত্য ও কুরআনের সাথে রয়েছে। আর সত্য ও কুরআনও সর্বদা আলী (আ.) এর সাথে রয়েছে এবং কেয়ামত পর্যন্ত তারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবে না।”
এ হাদীসটি আহলুস্ সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের ১৫টি বর্ণনা সুত্র থেকে বর্ণিত হয়েছে। আর শীয়াদের ১১টি বর্ণনা সুত্র থেকে এ হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। উম্মে সালমা, ইবনে আব্বাস, প্রথম খলিফা আবু বকর, উম্মুল মুমিনীন আয়েশা, হযরত আলী (আ.), আবু সাঈদ খুদরী, আবু লাইলা এবং আবু আইয়ুব আনসারী প্রমুখ সাহাবীগণ হয়েছেন এ হাদীসটির মূল বর্ণনাকারী, (-বাহরানী রচিত ‘গায়াতুল মারাম’ ৫৩৯ ও ৫৪০ নং পৃষ্ঠা)
হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেনঃ “আলীর প্রতি আল্লাহ্র রহমত বর্ষিত হোক, কেননা, সত্য সর্বদা তার সাথে রয়েছে।”-আল বিদায়াহ্ ওয়ান্ নিহায়াহ্, ৭ম খন্ড ৩৬ নং পৃষ্ঠা।
৩। হযরত রাসুল (সা.) বলেছেনঃ ‘হিকমাত (প্রজ্ঞা) দশ ভাগে বিভক্ত যার নয় ভাগই দেয়া হয়েছে আলী (আ.) কে এবং বাকী এক ভাগ সমগ্র মানব জাতির মাঝে বন্টন করা হয়েছে’। (-আল বিদায়াহ্ ওয়ান্ নিহায়াহ্, ৭ম খন্ড ৩৫৯ নং পৃষ্ঠা)
৪। যখন মক্কার কাফিররা আল্লাহ্র রাসূল (স) কে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে তাঁর বাড়ী ঘেরাও করল, তখন মহানবী (সা.) মদীনায় হিজরত করার সিদ্ধান্ত নিলেন এবং হযরত আলী (আ.) কে বললেন, তুমি কি আমার বিছানায় শুতে প্রস্তুত আছো, যাতে করে কাফেররা ভাববে আমিই বিছানায় ঘুমিয়ে আছি। আর এ ভাবে আমি তাদের পশ্চাদ্ধাবন বা তল্লাশী থেকে নিরাপদ থাকব। হযরত আলী (আ.) ঐ বিপদজনক মুহূর্তে রাসূল (সা.) এর প্রস্তাবটি মনে প্রাণে মেনে নিলেন।
৫। ‘তাওয়ারীখ ও জাওয়ামিঈ হাদীস’।
৬। ‘গাদীরে খুমের’ হাদীসটি শীয়া ও সুন্নী উভয় স¤প্রদায়ের সর্বজন স্বীকৃত একটি হাদীস। শীয়া ও আহলে সুন্নাতের বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্রে শতাধিক সাহাবীর দ্বারা এ হাদীসটি বিভিন্ন ভাবে বর্ণিত হয়েছে যা উভয় স¤প্রদায়ের বিভিন্ন হাদীস গ্রন্থে’' লিপিবদ্ধ রয়েছে। বিস্তারিত জানতে ইচ্ছুক পাঠকদের নিু লিখিত গ্রন্থদ্বয়ে রুজু করার পরামর্শ দেওয়া হল। (-‘গায়াতুল মারাম’ ৭৯ নং পৃষ্ঠা, ’আল গাদীর’ এবং ‘আবাকাতের’ ‘গাদীর খন্ড দ্রষ্টব্য)
৭। ‘তারীখে ইয়াকুবী’ -নাজাফীয় মুদ্রণ- ২য় খন্ড, ১৩৭ ও ১৪০ নং পৃষ্ঠা। ‘তারীখে আবিল ফিদা’ ১ম খন্ড ১৫৬ নং পৃষ্ঠা। ‘সহীহ্ বুখারী’ ৪র্থ খন্ড, ১০৭ নং পৃষ্ঠা। ‘মুরুযুয্ যাহাব’ ২য় খন্ড, ৪৩৭ নং পৃষ্ঠা। ‘ইবনে আবিল হাদীদ’ ১ম খন্ড, ১২৭- ১৬১ নং পৃষ্ঠা
৮। ‘সাহীহ্ মুসলিম’ ৫ম খন্ড, ১৭৬ নং পৃষ্ঠা। ‘সহীহ্ বুখারী’ ৪র্থ খন্ড, ২০৭ নং পৃষ্ঠা। ‘মুরুযুয যাহাব’, ২য় খন্ড, ২৩ এবং ৪৩৭ নং পৃষ্ঠা। ‘তারীখু আবিল ফিদা’ প্রথম খন্ড, ১২৭ ও ১৮৭ নং পৃষ্ঠা।
---------------------------
বিদ্বেষের কারণও ঘটিয়ে ছিল, যা তাদেরকে আলী (আ.)-এর প্রতি শত্র“তায় উদ্বুদ্ধ করেছিল। এ সকল বিষয় ছাড়াও স্বয়ং আল্লাহ্র রাসূল (সা.)-এর পবিত্র বাণীসমূহে “শীয়াতু আলী” [আলী (আ.)-এর অনুসারী এবং ‘শীয়াতু আহ্লুল্ বাইত্’ (পবিত্র আহলে বাইতের অনুসারী) নামক শব্দগুলোর বহুল ব্যবহার পরিলক্ষিত হয় ।
মহানবী (সা.) নিজেই পরবর্তী সময়ের জন্য বারজন নেতা মনোনীত করেছেন যা অসংখ্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, বিশ্বনবী (সা.)-এর তিরোধানের পর ইসলামী উম্মতের মাঝে আল্লাহ্র পক্ষ থেকে মনোনীত ইমামের (নেতা) অস্তিত্ব ছিল এবং থাকবে। এ ব্যাপারে বিশ্বনবী (সা.)-এর পক্ষ থেকে অসংখ্য হাদীস বর্ণিত হয়েছে। ঐ সব হাদীসে ইমামদের বৈশিষ্ট, পরিচিতি, সংখ্যা, ইত্যাদি বর্ণিত হয়েছে। এমন কি ইমামরা যে, সবাই কুরাইশ বংশীয় এবং মহানবী (আ.)-এর পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য হবেন তাও বলা হয়েছে। সেখানে আরও বলা হয়েছে যে, প্রতীক্ষিত ইমাম হযরত মাহ্দী (আ.)-ই হবেন ইমামদের মধ্যে সর্বশেষ ইমাম। একইভাবে হযরত আলী (আ.)-এর প্রথম ইমাম হওয়ার ব্যাপারেও মহানবী (সা.)-এর পক্ষ থেকে যথেষ্ট পরিমাণ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। দ্বিতীয় ইমামের ইমামতের সমর্থনেও মহানবী (সা.)
ও হযরত ইমাম আলী (আ.) এর পক্ষ থেকে অকাট্য ভাবে প্রমাণিত অসংখ্য হাদীস রয়েছে।
----------------------------------
১। উদাহরণ স্বরূপ কিছু হাদীস ঃ
عن جابر بن سمرة قال سمعت رسول الله يقول : لا يزال هذاالدين عزيزا الى اثنى عشر خليفة .
قال : فكبر الناس و ضجوا ثم قال كلمة خفية .قلت لابى : يا ابه , ماقال ؟ قال : قال كلهم من قريش .
“ যাবের বিন সামরাতেন বলেন ঃ রাসুল (সা.) কে বলতে শুনেছি যে, বারজন প্রতিনিধি আর্বিভাবের পূর্বে এই অতীব সম্মানীত ধর্মের সমাপণ ঘটবে না। যাবের বললেন ঃ জনগণ তাকবির ধ¦নিতে গগন মুখরিত করে তুললো। অতঃপর রাসুল (সা.) আস্তে কিছু কথা বললেন। আমি আমার বাবাকে বললাম ঃ কি বল্লেন? বাবা বললেন ঃ রাসুল (সা.) বললেনঃ তারা সবাই কুরাইশ বংশের হবেন। (-সহীহ্ আবু দাউদ, ২য় খন্ড ২০৭ নং পৃষ্ঠ। মুসনাদে আহ্মাদ, ৫ম খন্ড, ৯২ নং পৃষ্ঠা। /সহীহ্ আল বোখারী, ৬ষ্ঠ খন্ড, আধুনিক প্রকাশনি, জুন ১৯৯১, হাদীস নং ৬৭১৬ )
একই অর্থে বর্ণিত আরও অসংখ্য হাদীস রয়েছে। স্থানাভাবে এখানে সেগুলো উল্লেখ করা হচ্ছে না।
অন্য একটি হাদীস ঃ
عن سلمان الفارسى قال : دخت على رسول الله صلى الله عليه و آله فاذا الحسين على فخذيه و هو يقبل عينيه و يقبل فاه و يقول : انت سيد ابن سيد , و انت امام ابن امام , و انت حجة ابن حجة , و انت ابو حجج تسعة , تاسعهم قائمهم
“সালমান ফারসী (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেনঃ এমতাবস্থায় রাসুল (সা.)-এর নিকট উপস্থিত হলাম যে যখন হোসেন তাঁর ঊরুর উপর ছিল এবং তিনি তার চোখ ও ওষ্ঠে চুম্বন দিচ্ছেন আর বলছেন যে, তুমি সাইয়্যেদের সন্তান সাইয়্যেদ এবং তুমি ইমামের সন্তান ইমাম, তুমি ঐশী প্রতিনিধির সন্তান ঐশী প্রতিনিধি। আর তুমি নয় জন ঐশী প্রতিনিধির বাবা, যাদের নবম ব্যক্তি হলেন কায়েম (ইমাম মাহদী)। ” (-ইয়া নাবী উল্ মুয়াদ্দাহ্, (সুলাইমান বিন ইব্রাহীম কান্দুযি) ৭ম মুদ্রণ, ৩০৮ নং পৃষ্ঠা।)
২। নিুলিখিত গ্রন্থগুলো দ্রষ্টব্য ঃ
‘আল্-গাদীর’- আল্লামা আমিনী।
‘গায়াতুল মারাম’- সাইয়েদ হাশেম বাহ্রানী।
‘ইসবাতুল হুদাহ্’ -মুহাম্মদ বিন হাসান আল্ হুর আল্ আমিলী।
‘যাখাইরূল উকবা’ মুহিবুদ্দিন আহমাদ বিন আবদিল্লাহ্ আত্ তাবারী।
‘মানাকিব’- খারযমি।
‘তাযকিরাতুল খাওয়াস্’- সিবতু ইবনি জাউযি।
‘ইয়া নাবী উল্ মুয়াদ্দাহ্, সুলাইমান বিন ইব্রাহীম কান্দুযি হানাফী।
‘ফুসুলুল মুহিম্মাহ্’- ইবনু সাব্বাগ।
‘দালাইলুল ইমামাহ্’ -মুহাম্মদ বিন জারির তাবারী।
‘আন্ নাস্ ওয়াল ইজতিহাদ’ আল্লামা শারাফুদ্দীন আল্ মুসাভী।
উসুলুল ক্বাফী, ১ম খন্ড -মুহাম্মদ বিন ইয়াকুব আল্ কুলাইনী।
‘কিতাবুল ইরশাদ্’ -শেইখ মুফিদ।
...............চলবে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.