নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দেশ , মানুষ

জীবনের সব কিছু আললাহর সন্তুষ্টির জন্য

আল মাহদী ফোর্স

কোরান ও নবী পরিবারের আঃ অনুসারী।

আল মাহদী ফোর্স › বিস্তারিত পোস্টঃ

১২ ইমামের সংক্ষিপ্ত জীবনী

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৩

ইমাম পরিচিতি

ইমাম শব্দের অর্থ

‘ইমাম’ বা নেতা তাকেই বলা হয়, যে একদল লোককে নির্দিষ্ট কোন সামাজিক, রাজনৈতিক, বৈজ্ঞানিক, অথবা ধর্মীয় লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্যে নেতৃত্ব প্রদানের দায়িত্ব গ্রহণ করে। অবশ্য নেতা তার নেতৃত্বের পরিধির বিস্তৃতি ও সংকীর্ণতার ক্ষেত্রে সময় ও পরিবেশগত পরিস্থিতি অনুযায়ী পবিত্র ইসলাম ধর্ম (যেমনটি পূর্বে আলোচিত হয়েছে) মানব জীবনের সকল দিক পর্যবেক্ষণপূর্বক তার জন্যে নীতিমালা প্রণয়ন করেছেন।

ইসলাম মানুষের আধ্যাত্মিক জীবন বিশ্লেষণপূর্বক তার জন্যে প্রয়োজনীয় পথ র্নিদেশ দান করেছে। পার্থিব জীবনের ক্ষেত্রে ও মানুষের ব্যক্তিগত জীবন যাপন ও তার পরিচালনার ব্যাপারেও ইসলামের হস্তক্ষেপ রয়েছে ঠিক একই ভাবে মানুষের সামাজিক (পার্থিব) জীবন ও তার পরিচালনার (রাষ্ট্রিয় ব্যবস্থা ) ক্ষেত্রেও ইসলামের নির্দেশ রয়েছে।

উপরে মানব জীবনের যে সব দিক সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, তার ভিত্তিতে ইসলামী নেতৃত্ব তিনটি দিকে গুরুত্বের অধিকারী। সেই দিকগুলো হচ্ছে, ইসলামী শাসন ব্যবস্থা, ইসলামী জ্ঞানমালা ও আইন কানুন বর্ণনা এবং আধ্যাত্মিক জীবনে নেতৃত্ব ও পথ নির্দেশনার দিক। শীয়াদের দৃষ্টিতে ইসলামী সমাজের জন্যে উক্ত গুরুত্বপূর্ণ তিনটি দিকের নেতৃত্ব দানের জন্যে নেতার প্রয়োজন অপরিহার্য। যিনি ইসলামী সমাজের এ তিনটি দিকের উপযুক্ত নেতৃত্ব দেবেন অবশ্যই তাকে মহান আল্লাহ্ ও তার রাসূল (সা.)-এর দ্বারা মনোনিত হতে হবে। অবশ্য মহান আল্লাহ্র নির্দেশে বিশ্বনবী (সা.) এই মনোনয়ন কার্য সম্পন্নও করে গেছেন।

ইমামত এবং ইসলামী শাসন ব্যবস্থা ও মহানবী (সা.)-এর উত্তরাধিকার

মানুষ তার খোদা প্রদত্ত স্বভাব দিয়ে অতি সহজেই এ বিষয়টি উপলব্ধি করে যে, কোন দেশ, শহর, গ্রাম বা গোত্র এবং এমনকি গুটি কয়েক লোক সম্বলিত কোন একটি সংসারও একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির নেতৃত্ব ছাড়া চলতে পারে না। একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির নেতৃত্ব ছাড়া সমাজের চাকা সচল রাখা সম্ভব নয়। একজন নেতার ইচ্ছাই সমাজের অসংখ্য ব্যক্তির ইচ্ছার উপর প্রভুত্ব করে। এভাবে সে সমাজের প্রতিটি ব্যক্তিকে তার সামাজিক দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করে। সুতরাং একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির নেতৃত্ব ছাড়া সমাজের গতি অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে না। তাই অতি অল্প সময়ের মধ্যেই নেতাহীন ঐ সমাজ ছত্রভঙ্গ হয়ে যেতে বাধ্য। যার ফলে এক ব্যাপক অরাজকতা ঐ সমাজকে ছেয়ে ফেলবে। সুতরাং, উক্ত যুক্তির উপর ভিত্তি করে নিঃসন্দেহে একথা বলা যায় যে, সমাজ পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত (সে সমাজ বৃহত্তরই হোক অথবা ক্ষুদ্রতরই হোক) নেতা, সমাজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে যার অবদান অনস্বীকার্য তিনি যদি কখনও অস্থায়ী ভাবে অথবা স্থায়ী ভাবে তার পদ থেকে অনুপস্থিত থাকেন, তাহলে অবশ্যই তার ঐ অনুপস্থিতিকালীন সময়ের জন্যে অন্য কাউকে দায়িত্বশীল হিসেবে নিয়োজিত করে যাবেন। এধরণের দায়িত্বশীল কোন নেতা কোনক্রমেই এমন কাজ করতে প্রস্তুত হবেন না, যার ফলে নিজের দায়িত্বের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর কারণে নেতার অভাবে ঐ সমাজের অস্তিত্ব ধ্বংসোন্মুখ হয়ে পড়বে। কোন পরিবারের কর্তা ব্যক্তিও যদি কিছুদিনের জন্যে অথবা কয়েক মাসের জন্যে পরিবারের সদস্যদের ত্যাগ করে দূরে কোথাও ভ্রমণে যান। তখন অবশ্যই তিনি তার অনুপস্থিতিকালীন সময়ে সংসার পরিচালনার জন্যে পরিবারের কাউকে (অথবা তৃতীয় কোন ব্যক্তিকে) দায়িত্বশীল হিসাবে নিয়োগ করে যান। কোন প্রতিষ্ঠানের পরিচালক বা স্কুলের প্রধান শিক্ষক অথবা দোকানের মালিক, যাদের অধীনে বেশ ক’জন কর্মচারী কর্মরত, তারা যদি অল্প ক’ঘন্টার জন্যেও কোন কারণে কর্মস্থল ত্যাগ করেন, তাহলে অধীনস্থ কাউকে তার অনুপস্থিতিকালীন সময়ে তার দায়িত্ব পালনের জন্যে নিযুক্ত করে যান। আর অন্যদেরকে ঐ নব নিযুক্ত দায়িত্বশীলের আনুগত্য করার নির্দেশ দেন।

ইসলাম এমন এক ধর্ম, যা খোদা প্রদত্ত মানব প্রকৃতি অনুযায়ী পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ্র ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। ইসলাম একটি সামাজিক আদর্শ যার প্রকৃতি এমন এক দৃষ্টান্তমূলক যে, পরিচিত ও অপরিচিত সবাই ঐ আদর্শের দর্পন থেকে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট ভাবে বুঝতে পারে। মহান আল্লাহ্ ও বিশ্বনবী (সা.) এই আদর্শের সামাজিকতার ক্ষেত্রে যে মহান অবদান রেখেছেন, তা সবার কাছেই অনস্বীকার্য। এই ঐশী আদর্শ পৃথিবীর অন্য কিছুর সাথেই তুলনাযোগ্য নয়।

মহানবী (সা.)ও ইসলামের সাথে সংশ্লিষ্ট কোন সামাজিক বিষয়ই পরিত্যাগ করতেন না। যখনই কোন শহর বা গ্রাম মুসলমানদের দ্বারা বিজিত হত, সম্ভাব্য সংক্ষিপ্ত সময়ে বিশ্বনবী (সা.) তার পক্ষ থেকে কাউকে ঐ অঞ্চলের শাসনকর্তা ও স্বীয় প্রতিনিধি হিসেবে সেখানে পাঠাতেন। এমনকি জিহাদ পরিচালনার উদ্দেশ্যে প্রেরিত সেনাবাহিনীর জন্যে প্রয়োজন বোধে (অত্যাধিক গুরুত্বের কারণে) একাধিক সেনাপতিও তিনি নিযুক্ত করতেন। এমনকি ঐতিহাসিক ‘মুতার’ যুদ্ধে বিশ্ব নবী (সা.) চারজন সেনাপতি নির্বাচন করেছিলেন। যাতে প্রথম সেনাপতি শাহাদত বরণ করলে দ্বিতীয় সেনাপতি দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। দ্বিতীয়জন শাহাদত বরণ করলে তৃতীয়জন দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। আর এই ভাবে এ ধারা বাস্তবায়িত হবে। রাসূল (সা.) এর এ সকল কার্যের মাধ্যমেই নেতা নিয়োগের গুরুত্ব স্পষ্ট হয়ে যায়।

একই ভাবে বিশ্ব নবী (সা.) তার স্বীয় উত্তরাধিকারের বিষয়ে সম্পূর্ণ সজাগ ছিলেন। তিনি স্বীয় উত্তরাধিকারী নির্ধারণের ব্যাপারে কখনোই পিছপা হননি। যখনই তিনি প্রয়োজন বোধে মদীনার বাইরে যেতেন, তখনই তিনি কাউকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করে যেতেন। এমন কি যখন তিনি মদীনার উদ্দেশ্যে মক্কা নগরী ত্যাগ করে ছিলেন, যখন কেউই সে সংবাদ সম্পর্কে অবহিত ছিল না তখনও মাত্র অল্প ক’দিনের জন্য স্বীয় ব্যক্তিগত দায়িত্ব পালন ও জনগণের গচ্ছিত আমানত দ্রব্যাদি মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জন্যে মক্কায় হযরত ইমাম আলী (আ.) কে নিজের স্থলাভিষিক্ত করে যান। এভাবেই বিশ্বনবী (সা.) মৃত্যুর পূর্বে স্বীয় ঋণ পরিশোধ ও ব্যক্তিগত অসমাপ্ত কার্যবলী সম্পাদনের জন্যে ইমাম আলী (আ.) কে নিজের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে নির্বাচিত করেছিলেন।

তাই শীয়ারা বলে, উপরোক্ত দলিলের ভিত্তিতে এটা আদৌও কল্পনা প্রসূত নয় যে, বিশ্বনবী (সা.) মৃত্যুর পূর্বে কাউকে তাঁর উত্তরাধিকারী বা স্থলাভিষিক্ত হিসেবে নির্বাচিত করে যাননি। মুসলমানদের প্রশাসনিক কাজ পরিচালনা এবং ইসলামী সমাজের চালিকা শক্তি নিয়ন্ত্রণের জন্যে কাউকেই মহানবী (সা.) মনোনীত করে যাননি, এটা এক কল্পনাতীত ব্যাপার বটে। এক শ্রেণীর আইন-কানুন ও কিছু সাধারণ আচার অনুষ্ঠান, যা সমাজের অধিকাংশ জনগণের দ্বারা বাস্তবে স্বীকৃত ও সমর্থিত, তার উপর ভিত্তি করেই একটি সমাজের সৃষ্টি হয়। আর ঐ সমাজের অস্তিত্ব টিকে থাকার বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে ন্যায়বিচার ভিত্তিক ও দায়িত্বশীল একটি প্রশাসনের অস্তিত্বের উপরই নির্ভরশীল। এটা এমন কোন বিষয় নয় যে, মানব প্রকৃতি এর গুরুত্ব ও মূল্য সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করবে। কোন বিজ্ঞ ব্যক্তির কাছেও এটা কোন অজ্ঞাত বিষয় নয় এবং এটা ভোলার বিষয়ও নয়, কারণ ইসলামী শরীয়তের (বিধান) সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মতা ও বিস্তৃত একটি সন্দেহাতীত ব্যাপার। আর এ ব্যাপারটিও অনস্বীকার্য যে, বিশ্বনবী (সা.) এ ব্যাপারে অত্যাধিক গুরুত্বারোপ করতেন এবং এ পথে তিনি নিজের সর্বস্ব উৎসর্গ করেছেন। তাঁর ঐ আত্মত্যাগ, অসাধারণ চিন্তা শক্তি, প্রজ্ঞার শ্রেষ্ঠত্ব, সূক্ষ্ম ও সঠিক দৃষ্টিভঙ্গী এবং সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ ক্ষমতার (ওহী ও নবুয়তের সাক্ষ্য ছাড়াও) বিষয়টি নিঃসন্দেহে বিতর্কের উর্ধ্বে। শীয়া ও সুন্নী উভয় দলেরই মত নির্বিশেষে বর্ণিত ‘মুতাওয়াতির’ হাদীস অনুযায়ী (‘ফিৎনা’ অধ্যায়ের হাদীস) বিশ্বনবী (সা.) তাঁর

অর্ন্তধানের পর ইসলামী সমাজ যেসব দুর্নীতি মূলক সমস্যায় আক্রান্ত হবে, তার ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। ঐ সব সমস্যার মধ্যে যেসব সমস্যাগুলো ইসলামকে অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, উমাইয়া বংশ সহ আরও অন্যান্যদের খেলাফত লাভের বিষয়টি তার মধ্যে অন্যতম। কারণ তারা ইসলামের পবিত্র আদর্শকে তাদের বিভিন্ন ধরনের অপবিত্রতা ও অরাজকতামূলক জঘন্য কাজে ব্যবহার করেছে। এ ব্যাপারে বিশ্বনবী (সা.) তাঁর হাদীসে বিস্তারিত ভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। বিশ্বনবী (সা.) তাঁর মৃত্যুর হাজার হাজার বছর পরের ইসলামী সমাজের খুঁটিনাটি বিষয়াদি ও সমস্যা সম্পর্কে তিনি অত্যন্ত সচেতন এবং সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ভবিষ্যদ্বাণীও করে গেছেন। তাহলে এটা কি করে সম্ভব যে, যিনি তাঁর পরবর্র্তী সুদূর ভবিষ্যতের ব্যাপারে এত সচেতন, অথচ স্বীয় মৃত্যু পরবর্র্তী মূহুর্তগুলোতে সংঘটিত ঘটনাবলীর ব্যাপারে আদৌ সচেতন নন?! বিশ্বনবী (সা.)-এর পরবর্র্তী উত্তরাধিকারের মত এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি কি তাহলে তিনি ইচ্ছাকৃত ভাবে অবহেলা করেছেন, অথবা এটাকে গুরুত্বহীন একটি বিষয় হিসেবে গণ্য করেছেন? এটা কেমন করে সম্ভব যে, খাওয়া পরা, ঘুমানো এবং যৌন বিষয়াদির মত মানব জীবনের শতশত খুঁটিনাটি বিষয়ের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশ তিনি জারী করেছেন, অথচ ঐ ধরনের একটি অতি মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে তিনি সম্পূর্ণ রূপে নীরবতা পালন করেছেন? নিজের উত্তরাধিকারীকে তিনি মনোনীত করে যাননি? ধরে নেয়া যাক ( যদিও এটা অসম্ভব একটি ধারণা) যে, মহানবী (সা.) তাঁর স্থলাভিষিক্ত নির্বাচনের দায়িত্ব ভার মুসলমানদের উপরে ছেড়ে দিয়েছেন, তাহলে এ ব্যাপারে অবশ্যই বিশ্বনবী (সা.)-এর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট বর্ণনা থাকার কথা। এ ব্যাপারে অবশ্যই জনগণের প্রতি তাঁর প্রয়োজনীয় নির্দেশনা থাকা উচিত। কারণ, ইসলামী সমাজের অস্তিত্ব ও বিকাশ এবং ইসলামী নিদর্শনাবলীর অস্তিত্ব এ বিষয়টির উপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল। তাই এ ব্যাপারে সমগ্র মুসলিম উম্মতকে সদা সচেতন থাকতে হবে।

অথচ, এ ব্যাপারে বিশ্বনবী (সা.)-এর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট কোন নির্দেশনার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। কারণঃ যদি এমন সুস্পষ্ট কোন নির্দেশনার অস্তিত্ব থাকত, তাহলে নিশ্চয়ই বিশ্বনবী (সা.)-এর পরে তার স্থলাভিষিক্তের পদাধিকারী নির্ধারণের ব্যাপারে এত মতভেদের সৃষ্টি হত না। অথচ আমরা দেখতে পাই যে, প্রথম খলিফা ওসিয়তের (উইল) মাধ্যমে দ্বিতীয় খলিফার কাছে খেলাফত হস্তান্তর করেছিলেন। দ্বিতীয় খলিফা তার মৃত্যু পরবর্র্তী খলিফা নির্বাচনের ব্যাপারে একটি ‘খলিফা নির্বাচন কমিটি’ গঠন করেছিলেন। ছয় সদস্য বিশিষ্ট ঐ কমিটির প্রতিটি সদস্যই দ্বিতীয় খলিফার দ্বারা মনোনীত হয়েছিলেন। ঐ কমিটির খলিফা নির্বাচন সংক্রান্ত মূলনীতিও তিনি নিজেই নির্ধারণ করেছিলেন। যার ভিত্তিতেই তৃতীয় খলিফা নির্বাচিত হন। তৃতীয় খলিফা নিহত হওয়ার পর চতুর্থ খলিফা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হন। পঞ্চম খলিফা চতুর্থ খলিফার ওসিয়তের (উইল) মাধ্যমে নির্বাচিত হন। এরপর মুয়াবিয়া হযরত ইমাম হাসান (আ.) কে (পঞ্চম খলিফা) বল পূর্বক সন্ধি চুক্তিতে বাধ্য করার মাধ্যমে খেলাফতের পদটি ছিনিয়ে নেন। তারপর থেকেই খেলাফত রাজতন্ত্রে রূপান্তরিত হয়। আর তখন থেকেই জিহাদ, সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ, ইসলামী দন্ড বিধি প্রয়োগ ইত্যাদি ইসলামী নির্দেশনাবলী একের পর এক ক্রমান্বয়ে ইসলামী সমাজ থেকে উধাও হতে থাকে। এ ভাবে বিশ্বনবী (সা.) এর সারা জীবনের লালিত সাধনা ধূলিস্যাৎ হয়ে গেল। শীয়ারা আল্লাহ্ প্রদত্ত মানব প্রকৃতি এবং জ্ঞানী ও প্রজ্ঞা সম্পন্ন ব্যক্তিদের জীবনাদর্শ অনুযায়ী এ বিষয়ে ব্যাপক পর্যালোচনা ও অনুসন্ধান চালায়। তারা ফিৎরাত বা মানব প্রকৃতি সঞ্জীবনী ইসলামী আর্দশের মূল দৃষ্টিভঙ্গীর প্রতি গভীর দৃষ্টিপাত, মহানবী (সা.)-এর অনুসৃত সামাজিক পদ্ধতি পর্যবেক্ষণ এবং মহানবী (সা.) এর মৃত্যু পরবর্র্তী দুঃখজনক ঘটনাবলী অধ্যয়ন করে। মহানবী (সা.)-এর মৃত্যুর পর ইসলাম ও মুসলমানরা যে সব দূর্দশা ও জটিল সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছিল তারও আদ্যোপান্ত আলোচনা করে। এ ছাড়াও ইসলামের প্রাথমিক যুগের ইসলামী প্রশাসকদের ইসলামের ব্যাপারে ইচ্ছাকৃত উদাসীনতার বিষয়টিও সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ভাবে বিশ্লেষণ করে। উক্ত গবেষণার মাধ্যমে শীয়ারা একটি সুনিশ্চিত ফলাফলে পৌঁছুতে সক্ষম হয়। আর তা হচ্ছে এই যে, বিশ্বনবী (সা.)-এর পরবর্র্তী স্থলাভিষিক্ত নির্ধারণের ব্যাপারে তাঁর পক্ষ থেকে যথেষ্ট পরিমাণ বর্ণনার অস্তিত্ব ইসলামে বিদ্যমান। এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনের বহু আয়াত এবং বিশ্বনবী (সা.)-এর

---------------------------------------

১। উপরোক্ত বিষয়টি নিুোক্ত গ্রন্থ সমূহে বর্ণিত হয়েছে। তারীখে ইয়াকুবী, ২য় খন্ড, ২৬- ৬১ নং পৃষ্ঠা। সীরাতে ইবনে হিশাম, ২য় খন্ড, ২২৩-২৭১ পৃষ্ঠা। তারীখে আবিল ফিদা, ১ম খন্ড ১২৬ নং পৃৃষ্ঠা। গায়াতুল মারাম, ৬৬৪ নং পৃষ্ঠা---ইত্যাদি।

-----------------------------------------------------

বর্ণিত অসংখ্য হাদীস রয়েছে, যার সত্যতা ও নির্ভরযোগ্যতা অকাট্য রূপে প্রমাণিত ও সর্বজন স্বীকৃত। এ ব্যাপারে ‘বিলায়ত’ সংক্রান্ত আয়াত এবং গাদীরে খুমের হাদীস, ‘সাফিনাতুন্ নুহ’্ এর হাদীস, ‘হাদীসে সাকালাইন’ ‘হাদীসে হাক্ক’ ‘হাদীসে মান্যিলাত’ নিকট আত্মীয়দের দাওয়াত সংক্রান্ত হাদীস সহ আরও অসংখ্য হাদীসের কথা উল্লেখযোগ্য। উপরোক্ত আয়াত ও হাদীস সমূহের বক্তব্যে শীয়াদের বক্তব্যেরই সর্মথন পাওয়া যায়।

-------------------------------------------------------

১। রাসূল (সা.) এর উত্তরাধিকারী হিসেবে হযরত ইমাম আলী (আ.) এর অধিকার সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের বেশ কিছু আয়াত উল্লেখ যোগ্য। যেমন, মহান আল্লাহ্ বলেন ঃ

إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُواْ الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلوةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَوةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ

“তোমাদের অভিভাবক (পথ নির্দেশক) তো আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল এবং মু’মিন বান্দাদের মধ্যে যে নামায প্রতিষ্ঠা করে এবং রুকু অবস্থায় যাকাত প্রদান করে। ” (সূরা মায়েদা, ৫৫ নং আয়াত।)

সুন্নী ও শীয়া উভয় তাফসীরকারকগণই এ ব্যাপারে একমত যে, পবিত্র কুরআনের উপরোক্ত আয়াতটি একমাত্র হযরত ইমাম আলী (আ.) এর মর্যাদায়ই অবতীর্ণ হয়েছে। উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা স্বরূপ শীয়া ও সুন্নী উভয় স¤প্রদায়ের বর্ণিত অসংখ্য হাদীসও এ কথারই প্রমাণ বহন করে। এ বিষয়ে রাসূল (সা.) এর সাহাবী হযরত আবু যার গিফারী (রা.) বলেন ঃ “একদিন মহানবীর পিছনে যোহরের নামায পড়ছিলাম। এ সময়ে জনৈক ভিক্ষুক সেখানে উপস্থিত হয়ে সবার কাছে ভিক্ষা চাইল। কিন্তু কেউই ঐ ভিক্ষুককে সাহায্য করল না। তখন ঐ ভিক্ষুক তার হাত দু’টো আকাশের দিকে উঠিয়ে বললো ঃ ‘হে আল্লাহ্ তুমি সাক্ষী থেকো, রাসূল (সা.) এর এই মসজিদে কেউই আমাকে সাহায্য করলো না। ঐ সময় হযরত ইমাম আলী (আ.) নামাযরত অবস্থায় ছিলেন। তিনি তখন রুকুতে ব্যস্ত ছিলেন। হযরত আলী (আ.) তখন রুকু অবস্থাতেই হাতের আঙ্গুল দিয়ে ঐ ভিক্ষুকের প্রতি ইশারা করলেন। ঐ ভিক্ষুকও ইমাম আলী (আ.) এর ইঙ্গিত বুঝতে পেরে তাঁর হাতের আঙ্গুল থেকে আংটি খুলে নিল। এ দৃশ্য দেখে মহানবী (সা.) আকাশের দিকে মাথা উঁচিয়ে এই প্রার্থনাটি করেছিলেন ঃ‘হে আল্লাহ্ আমার ভাই হযরত মুসা (আ.) তোমাকে বলেছিল আমার হৃদয়কে প্রশস্ত করে দাও এবং আমার কাজগুলোকে করে দাও সহজ। আমার জিহ্ববার জড়তা দূর করে দাও যাতে সবাই আমার বক্তব্য অনুধাবন করতে পারে। আর আমার ভাই হারূনকে আমার প্রতিনিধি ও সহযোগীতে পরিণত কর। ’তখন তোমার ঐশী বাণী অবতীর্ণ হল, ‘তোমার ভাইয়ের মাধ্যমে তোমার বাহুকে আমরা শক্তিশালী করব এবং তোমাকে প্রভাব বিস্তারের শক্তি দান করব’।

সুতরাং, হে আল্লাহ্! আমিও তো তোমারই নবী। তাই আমাকেও হৃদয়ের প্রশস্ততা দান কর। আমার কাজগুলোকেও করে দাও সহজ। আর আলীকে আমার প্রতিনিধি ও সহযোগী হিসেবে নিযুক্ত কর। ”

হযরত আবু যার (রা.) বললেন, “রাসূল (সা.) এর কথা শেষ না হতেই পবিত্র কুরআনের আলোচ্য আয়াতটি অবতীর্ণ হল”। (যাখাইরূল উকবা (তাবারী) ১৬ নং পৃষ্ঠা, ১৩৫৬ হিজরী মিশরীয় সংস্করণ।)

একই হাদীস সামান্য কিছু শাব্দিক পার্থক্য সহ নিুোক্ত গ্রন্থ সমূহে উল্লেখিত হয়েছে। (দুররূল মানসুর, ২য় খন্ড, ২৯৩ নং পৃষ্ঠা। গায়াতুল মারাম- বাহ্রানী, এ বইয়ের ১০৩ নং পৃষ্ঠায়। )

আলোচ্য আয়াতের অবতরণের ইতিহাস বর্ণনায় সুন্নী সূত্রে বর্ণিত ২৪টি হাদীস এবং শীয়া সূত্রে বর্ণিত ১৯টি হাদীস বর্ণিত হয়েছে।

মহান আল্লাহ্ বলেন ঃ

الْيَوْمَ يَئِسَ الَّذِينَ كَفَرُواْ مِن دِينِكُمْ فَلاَ تَخْشَوْهُمْ وَاخْشَوْنِ الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الإِسْلاَمَ دِينًا

“আজ কাফেররা তোমাদের ‘দ্বীন’ থেকে নিরাশ হয়ে গেছে। অতএব তাদেরকে ভয় করো না বরং আমাকে ভয় কর। আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীন’কে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম। তোমাদের প্রতি আমার অবদান (নিয়ামত) সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।” (সূরা মায়েদা-৩ নং আয়াত।)

বাহ্যত উক্ত আয়াতের বক্তব্য হচ্ছে এই যে, এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে কাফেররা এই ভেবে আশ্বান্বিত ছিল যে, শীঘ্রই এমন এক দিন আসবে, যে দিন ইসলাম ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু মহান আল্লাহ্ উক্ত আয়াত অবতীর্ণের মাধ্যমে চিরদিনের জন্যে কাফেরদেরকে নিরাশ করলেন। আর এটাই ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব লাভ ও তার ভিত্তিকে শক্তিশালী হওয়ার কারণ ঘটিয়েছিল। এটা সাধারণ কোন ইসলামী নির্দেশ জারীর মত স্বাভাবিক কোন ঘটনা ছিল না। বরং এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল, যার উপর ইসলামের অস্তিত্ব টিকে থাকা নির্ভরশীল ছিল। এই সূরার শেষের অবতীর্ণ আয়াতও আলোচ্য বিষয়ের সাথে সম্পর্কহীন নয়।

মহান আল্লাহ্ বলেছেন ঃ

يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ وَإِن لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ وَاللّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ إِنَّ اللّهَ لاَ يَهْدِي لْقَوْمَ الْكَافِرِينَ (৬৭)

“হে রাসূল! পৌঁছে দিন আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে। আর যদি আপনি এরূপ না করেন তবে আপনি তাঁর (প্রতিপালকের) রিসালাতের কিছুই পৌঁছালেন না। আল্লাহ্ আপনাকে মানুষদের (শঙ্কা) হতে রক্ষা করবেন।” (সূরা মায়েদা, ৬৭ নং আয়াত।)

উক্ত আয়াত থেকে প্রতীয়মাণ হয় যে, মহান আল্লাহ্ এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছেন, যা সাধিত না হলে ইসলামের মূল ভিত্তি ও বিশ্বনবী (সা.) এর এই মহান মিশন বা রিসালত চরম বিপদের সম্মুখীন হবে। তাই আল্লাহ্ এ ব্যাপারে বিশ্বনবী (সা.) কে নির্দেশ দেন। কিন্তু বিশ্বনবী (সা.) ঐ গুরুত্বপূর্ণ কাজটি সাধিত হওয়ার ব্যাপারে জনগণের বিরোধিতা ও বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হওয়ার আশংকা করলেন। এমতাবস্থায় ঐ গুরুত্বপূর্ণ কাজটি অতি দ্রুত সমাধা করার জন্যে জোর তাগিদ সম্বলিত নির্দেশ মহান আল্লাহ্র পক্ষ থেকে বিশ্বনবী (সা.) এর প্রতি জারী করা হয়। মহান আল্লাহ্ বিশ্বনবী (সা.) এর প্রতি উদ্দেশ্য করে বলেছেন যে, ঐ গুরুত্বপূর্ণ কাজটি সমাধানের ব্যাপারে অবশ্যই অবহেলা কর না এবং ঐ ব্যাপারে কাউকে ভয়ও কর না। এ বিষয়টি অবশ্যই ইসলামী শরীয়তের কোন বিধান ছিল না। কেননা এক বা একাধিক ইসলামী বিধান প্রচারের গুরুত্ব এত বেশী হতে পারে না যে, তার অভাবে ইসলামের মূলভিত্তি ধ্বংস হয়ে যাবে। আর বিশ্বনবী (সা.) ও কোন ঐশী বিধান বর্ণনার ক্ষেত্রে আদৌ ভীত ছিলেন না।

উপরোক্ত দলিল প্রমাণাদি এটাই নির্দেশ করে যে, আলোচ্য আয়াতটি ‘গাদীরে খুম’ নামক স্থানে হযরত ইমাম আলী ইবনে আবি তালিবের (আ.) বিলায়াত সংক্রান্ত ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে। অসংখ্য সুন্নী ও শীয়া তাফসীরকারক গণই এ ব্যাপারে ঐ ঘটনায় ঐক্যমত পোষণ করেন।

হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বলেন ঃ “বিশ্বনবী (সা.) হযরত ইমাম আলী (আ.) এর প্রতি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এরপর বিশ্বনবী (সা.) ইমাম আলী (আ.) এর হাত দু’টো উপর দিকে উত্তোলন করেন। এমনকি বিশ্বনবী (সা.) হযরত আলী (আ.) এর হাত এমন ভাবে উত্তোলন করেছেন যে, মহানবী (সা.) এর বগলের শুভ্র অংশ প্রকাশিত হয়ে পড়েছিল। এমতাবস্থায় পবিত্র কুরআনের এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয় ঃ

الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الإِسْلاَمَ دِينًا

“আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীন’কে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম। তোমাদের প্রতি আমার অবদান (নেয়ামত) সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।” (সূরা আল্ মায়েদা, ৩ নং আয়াত। )

উক্ত আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার পর মহানবী (সা.) বললেন ঃ الله اكبر ‘আল্লাহ্ আকবর’ কারণ, বিশ্বনবী (সা.) এর পরবর্র্তী উত্তরাধিকারী হিসেবে হযরত ইমাম আলী (আ.) এর ‘বিলায়াত’ (কর্তৃত্ব) প্রমাণিত হওয়ার মাধ্যমে আজ আল্লাহ্র নেয়ামত ও সস্তুষ্টি এবং ইসলামের পূর্ণত্ব প্রাপ্তি ঘটলো। অতঃপর উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে মহানবী (সা.) বললেন ঃ “আমি যাদের অভিভাবক, আজ থেকে আলীও তাদের অভিভাবক।

হে আল্লাহ্! আলীর বন্ধুর প্রতি বন্ধু বৎসল হও ও আলীর শত্র“র সাথে শত্র“তা পোষণ কর। যে তাকে (আলীকে) সাহায্য করবে, তুমিও তাকে সাহায্য কর। আর যে আলীকে ত্যাগ করবে, তুমিও তাকে ত্যাগ কর।”

আল্লামা বাহ্রানী তার ‘গায়াতুল মারাম’ নামক গ্রন্থে'র ৩৩৬ নং পৃষ্ঠায় উক্ত আয়াতের অবতরণের কারণ প্রসঙ্গে সুন্নী সূত্রে বর্ণিত ৬টি হাদীস এবং শীয়া সূত্রে বর্ণিত ১৫টি হাদীস উদ্ধৃত করেছেন।

সারাংশ ঃ ইসলামের শত্র“রা ইসলামকে ধ্বংস করার স্বার্থে কোন প্রকার অনিষ্ঠ সাধনে কখনোই কুন্ঠাবোধ করেনি। কিন্তু এত কিছুর পরও তারা ইসলামের কিঞ্চিৎ পরিমাণ ক্ষতি করতেও সক্ষম হয়নি। ফলে ব্যর্থ হয়ে তারা সব দিক থেকেই নিরাশ হয়ে পড়ে। কিন্তু এরপরও শুধুমাত্র একটি বিষয়ে তাদের মনে আশার ক্ষীণ প্রদীপ জ্বলছিল। আর সেই আশার সর্বশেষ সেই বস্তুটি ছিল এই যে, তারা ভেবে ছিল, যেহেতু মহানবী (সা.)-ই ইসলামের রক্ষক ও প্রহরী, তাই তার মৃত্যুর পর ইসলাম অভিভাবকহীন হয়ে পড়বে। তখন ইসলাম অতি সহজেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। কিন্তু ‘গাদীরে খুম’ নামক স্থানে সংঘটিত ঐতিহাসিক ঘটনা তাদের হৃদয়ে লুকানো আশার শেষ প্রদীপটাও নিভিয়ে দিল। কারণ ‘গাদীরে খুমে’ মহানবী (সা.) হযরত ইমাম আলী (আ.) কে তাঁর পরবর্র্তী দায়িত্বশীল ও ইসলামের অভিভাবক হিসেবে জন সমক্ষে ঘোষণা প্রদান করে। এমনকি বিশ্বনবী (সা.) হযরত ইমাম আলী (আ.) এর পর ইসলামের এই দায়িত্বভার মহানবী (সা.) এর পবিত্র বংশ তথা হযরত আলী (আ.) এর “ভবিষ্যত বংশধরদের” জন্যে নির্ধারণ করেন।

(এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্যের জন্যে হযরত আল্লামা তাবাতাবাঈ রচিত ‘তাফসীর আল্ মিজান’ নামক কুরআনের তাফসীরের ৫ম খন্ডের ১৭৭ থেকে ২১৪ নং পৃষ্ঠা এবং ৬ষ্ঠ খন্ড ৫০ থেকে ৫৪ নং পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য।চলবে.।.।.।.।.।।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.