নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দেশ , মানুষ

জীবনের সব কিছু আললাহর সন্তুষ্টির জন্য

আল মাহদী ফোর্স

কোরান ও নবী পরিবারের আঃ অনুসারী।

আল মাহদী ফোর্স › বিস্তারিত পোস্টঃ

সিফফিনের যুদ্ব,-৩ লেখকঃআয়াতুল্লাহ জাফর সুবহানী,অনুবাদঃহুজ্জাতুল ইসলাম ডঃ আব্দুল কুদ্দুস বাদশা,হুজ্জাতুল ইসলাম মাইনুদ্দিন আহমেদ

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:১৪

সপ্তদশ অধ্যায়
ছিফ্ফীনের যুদ্ধের ভাগ্য নির্ধারণ

ইমাম (আঃ) ছিলেন ধৈর্য ও অটলতার মূর্ত প্রতীক। মু‘আবিয়ার বিরোধিতার বিপরীতে তিনি সব ধরনের নমনীয়তা ও সাহিষ্ণুতার পরিচয় দেন। কিন্তু শাসনকর্তৃত্বের মোহ মু‘আবিয়াকে এমনভাবে আবিষ্ট করে ফেলেছিলো যে, প্রতিনিধি প্রেরণ এবং উপদেশদাতাদের উপদেশ ও নছীহত তাঁর ওপর কোনোরূপ ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করা তো দূরের কথা, বরং তাঁকে আরো কঠিন করে তোলে। অগত্যা ইমাম (আঃ) সিদ্ধান্তÍ নিলেন যে, যুদ্ধের প্রক্রিয়া চূড়ান্তÍ করবেন এবং তাঁর মূল্যবান সময়কে এর চেয়ে বেশি আর নষ্ট না করে এ বিষফোঁড়াকে ইসলামী সমাজের দেহ থেকে অপসারণ করে ফেলবেন।

শত্রুর বিরুদ্ধে জিহাদের ক্ষেত্রে ইসলামী বিধান হলো এই যে, যদি কোনো দল বা গোষ্ঠীর সাথে ইসলামী হুকুমতের অনাক্রমণ চুক্তি থাকে তাহলে তা মেনে চলতে হবে যদি না ইসলামী শাসনকর্তা কোনো না কোনো লক্ষণ থেকে অনুভব করেন যে, অপর পক্ষ চুক্তি ভঙ্গ করতে চায় এবং বিশ্বাসঘাতকতার পথ অবলম্বন করতে চায়। সে ক্ষেত্রে তিনি আগ বাড়িয়ে চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দিতে পারেন এবং যুদ্ধ শুরু করতে পারবেন। কোরআন মজীদে এ ব্যাপারে এরশাদ হয়েছে ঃ

وَ إمَّا تَخَافَنَّ مِنْ قَوْمٍ خِيانَةً فَاْنِبِذْ إلَيهِمْ عَلَي سَوَاءٍ اِنَّ اللهَ لاَ يُحِبُّ الْخَائِنيِنَ.

“যখনই কোনো দলের খেয়ানতের আশঙ্কা করবে তখন তাদের সাথে তোমাদের চুক্তিকে ন্যায়সঙ্গতভাবে বাতিল করো, আল্লাহ্ খেয়ানতকারীদেরকে পসন্দ করেন না।”৬২

এ মূলনীতিটি ন্যায়পরায়ণতা ও নৈতিক নীতিমালার প্রতি ইসলামের গুরুত্ব আরোপের কথাই তুলে ধরে। এ নীতি এমনকি পূর্ব সতর্কতা ছাড়া শত্রুর ওপর আক্রমণ করার ও অনুমতি প্রদান করে না, তা যতই তার আচরণ ও কথা থেকে বিশ্বাসঘাতকতার লক্ষণাদি প্রকাশ পাক না কেন।

ইমাম (আঃ) ছিফ্ফীনে এ নীতির চেয়েও অগ্রবর্তী হন। কেননা, তাঁর ও মু‘আাবিয়ার মাঝে কোনো অনাক্রমণ চুক্তি না থাকা অবস্থায় শুধু হারাম মাসসমূহেরই সম্মানের কারণেই উভয় পক্ষ আক্রমণ করা থেকে বিরত হয় এবং ছিফফিন এলাকা কিছুটা শান্তির মুখ দেখতে পায়, তা সত্ত্বেও শামবাসীরা যাতে ধারণা না করে যে, মহররম মাস অতিবাহিত হওয়ার পরেও এ শান্তি বলবৎ রয়েছে, সে উদ্দেশ্যে ইমাম (আঃ) মুরছাদ ইবনে হারিছকে মহররমের শেষ দিনে সূর্যাস্তের সময় শামবাহিনীর সামনে নিম্নোক্ত ঘোষণা প্রদানের নির্দেশ দেন। তদনুযায়ী মুরছাদ ইবনে হারিছ শামবাহিনীর সামনে দাঁড়িয়ে যায় এবং উচ্চৈঃস্বরে ঘোষণা করে ঃ

“হে শামবাসী! আমিরুল মু’মিনীন (আঃ) বলেছেন, আমি তোমাদেরকে অবসর দিয়েছি ও যুদ্ধের ব্যপাারে ধৈর্য ধারণ করেছি যাতে তোমরা সত্যে প্রত্যাবর্তন করো এবং তোমাদের জন্য আল্লাহ্র কিতাব থেকে প্রমাণ উপস্থাপন করেছি ও তোমাদেরকে তার প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। কিন্তু তোমরা অবাধ্যতা থেকে দূরে সরে আসো নি এবং সত্যের প্রতি সাড়া দাও নি। এমতাবস্থায় আমি তোমাদের ওপর থেকে সব ধরনের নিরাপত্তা তুলে নিয়েছি। আল্লাহ্ বিশ্বাসঘাতকরেদকে পসন্দ করেন না।” ৬৩

ইমাম (আঃ) এর এ বার্তা যখন মুরছাদের মাধ্যমে মু‘আবিয়ার বাহিনীর মধ্যে প্রতিধ্বনিত হলো তখন উভয় পক্ষের সৈন্যদের মধ্যে চাঞ্চল্য ফিরে এলো এবং উভয় দলই সৈন্য সজ্জিত করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। আর বিভিন্ন বাহিনীর সেনাপতি নির্ধারিত হলো। ইমাম (আঃ) স্বীয় বাহিনীকে নিুোক্তভাবে সজ্জিত করলেন ঃ

গোটা অশ্বারোহী বাহিনীর সেনাপতি হিসেবে ‘আম্মার ইয়াসির ও গোটা পদাতিক বাহিনীর সেনাপতি হিসেবে আবদুল্লাহ্ ইবনে বাদীল খাযা‘ঈকে নিয়োগ দেয়া হলো এবং সেনাবাহিনীর পতাকা হাশমে ইবনে ‘উত্বার হাতে সোপর্দ করা হলো। অতঃপর ইমাম (আঃ) সেনাদেরকে ডান পার্শ্ব ও বাম পার্শ্ব এবং মধ্য ভাগ হিসেবে বণ্টন করলেন। ইয়ামানী সেনাদেরকে ডান পাশে, রাবী‘আহ্ গোত্রের বিভিন্ন বংশকে বাম পার্শ্বে এবং মুদার গোত্রের সাহসী সেনাদেরকে Ñ যাদের অধিকাংশই ছিলো কূফাহ্ ও বছ্রার অধিবাসী, সেনাদলের মাঝ বরাবর স্থাপন করলেন। আর এ তিন ভাগের প্রত্যেকটিকে অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনীতে বিভক্ত করলেন। ডান ও বাম দিকের অশ্বারোহী বাহিনীর জন্য যথাক্রমে আশ‘আছ ইবনে ক্বায়স্ ও আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাসকে, আর উভয় পার্শ্বের পদাতিক বাহিনীদ্বয়ের জন্য যথাক্রমে সুলায়মান ইবনে ছুরাদ ও হারেছ ইবনে র্মুরাহ্কে নির্ধারণ করলেন। অতঃপর তিনি প্রত্যেক গোত্রের পতাকাকে তাদের নেতাদের হাতে সোপর্দ করলেন। ইবনে মুযাহিম তাঁর “ওয়াক্ব‘এ-এ ছিফ্ফীন” গ্রন্থে এ ধরনের বিভিন্ন গোত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট ২৬টি পতাকার কথা উল্লেখ করেছেন। সেগুলোর বিস্তারিত আলোচনা করলে দীর্ঘ হয়ে যাবে।৬৪

মু‘আবিয়াও একইভাবে স্বীয় সৈন্যদেরকে সজ্জিতকরণে ব্যস্ত হলেন এবং সেনাপতি ও পাতাকাবাহীদেরকে নির্ধারণ করলেন। প্রভাতের সূর্য আকাশে উঁকি দিতেই ভাগ্যনির্ধারণী যুদ্ধ অবধারিত হয়ে পড়লো। ইমাম (আঃ) স্বীয় সৈন্যদের মাঝে দাঁড়িয়ে বললেন ঃ

لاَ تُقاَتِلُوهُم حَتّيٰ يَبْدَؤُوكُمْ، فَِانَّكُمْ بِحَمْدِ اللهِ عَلَي حُجَّةٍ وَ تَرْكُكُمْ إيّاهُمْ حَتّيٰ يَبْدَؤُوكُمْ حُجَّةٌ أخْريٰ لَكُمْ عَلَيهِمْ. فَإِذَا قَاتَلْتُمُوهُمْ فَهَزَمْتُمُوهُمْ فَلاَ تَقْتُلُوا مُدْبِراً وَ لا تَجْهَرُوا عَليَ جَرِيحٍِ وَ لاَ تَكْشِفُوا عَورَةً وَ لا تُمَثِّلوا بِقَتيِلٍ. فَإِذَا وَصَلْتُمْ إِلَي رِِجَالِ قَومٍ فَلا تَهْتِكُوا سِتْراً وَ لاَ تَدْخُلُوا داراً الّا بِإِذْنِِي وَ لَا تَأخُذُوا شَيئاً الّا مَا وَجَدْتُمْ فِي عَسْكَرِهِمْ و لا تُهَبِّجُوا إمْرَأةً بِأذيً وَ إنْ شَتَمْنَ أَعْراضَكُمْ و تَناوَلْنَ أُُمَراءَ كُمْ وصُلَحَاءَ كُمْ فَإِنَّهُنَّ ضِعَافُ الْقُويٰ وَ الْأنْفُسِ و العُقُولِ وَ لَقَدْ كُنَّا لَنُؤمرُ بِالْكَفِّ عَنْهُنَّ وَ إِنَّهُنَّ لَمُشْرِكَاتٌ وَ إِنْ كَانَ الرِّجُلُ لَيتَنَاوَلُ الْمَرْأَة بِالْهِراوَةِ اَوِ الْحََدِيدِ فَيُعيِرُ بِهَا عَقِبُهُ مِنْ بَعْدِهِ.

“যুদ্ধের সূচনা করতে যেয়ো না। আল্হামদুলিল্লাহ্, তোমরা এ যুদ্ধে যথার্থতার দলীল-প্রমাণের অধিকারী। আর তাদেরকে যুদ্ধ সূচনা করা পর্যন্ত ছেড়ে দেয়াটাও তোমাদের সত্যের ওপর থাকার আরেকটি প্রমাণ। তোমরা যখন তাদেরকে পরাজিত করবে তখন যে তোমাদের দিকে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে এবং পলায়ন করবে তাকে হত্যা করবে না। আহতদেরকে হত্যা করবে না। শত্রুর লজ্জাস্থানকে উম্মোচন করবে না। নিহত ব্যক্তির হাত-পা ও নাক কর্তন করবে না। আর যখন তাদের শিবিরে গিয়ে পৌছবে তখন পর্দা লঙ্ঘন করবে না।

এবং আমার অনুমতি ব্যতীত কারো গৃহে প্রবেশ করো না, আর শত্রুদের কোনো মালামাল ধরবে না, শুধু ঐগুলো ছাড়া যা ময়দানে তোমাদের হস্তগত হয়। কোনো নারীকে উত্ত্যক্ত করবে না যদিও সে তোমাদের উদ্দেশে অশ্রাব্য কথা বলে এবং তোমাদের নেতৃবৃন্দ ও পূর্বপুরুষদেরকে গালি দেয়। কারণ, তারা বুদ্ধি ও শক্তির দিক থেকে দুর্বল। যেদিন তারা মুশরিক ছিলো সেদিন তাদের প্রতি হাত প্রসারিত করার জন্য আমাদের ওপর নির্দেশ ছিলো। আর যদি জাহেলী যুগে কোনো পুরুষলোক একজন স্ত্রীলোকের ওপর লাঠি কিম্বা লোহা নিয়ে আক্রমণ করতো তাহলে এটা ছিলো একটি লজ্জাকর অপমান। পরবর্তীতে তার সন্তÍানরা এ জন্য ধিকৃত হতো।”

আমীরুল মু’মিনীন (আঃ) জামাল, ছিফ্ফীন ও নাহ্রাওয়ানের যুদ্ধে স্বীয় সৈন্যদেরকে নিম্নোক্ত বিষয়ে উপদেশ প্রদান করেন ঃ

عِبَادَ اللهِ اِتَّقُوا اللهَ عَزَّ وَ جَلَّ، غُضُّوا الْأبْصَارَ وَ َخْفَضُوا الْأصْواتَ وَ اَقِلُّوا الْكَلاَمَ وَ وَِطِِّنُوا أنْفُسَكُمْ عَلَي الْمُنازَِلَةِ وَ الْمُجَادَلَةِ وَ الْمُبَارَزَة وَ الْمُعَانَقَةِ و الْمُكَائَمَةِ وَ اثْبُتُوا وَ اذْكُرُوا اللهَ كَثيِرًاً لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ وَ لاَ تَنَازَعُوا فَتَفْشَلُوا وَ تَذْهَبَ رِيِحُكُمْ وَ اْصْبِرُوا اِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِينَ.

“আল্লাহ্র বান্দাহ্রা, মহীয়ান গরীয়ান আল্লাহ্কে ভয় করো। তোমাদের দৃষ্টিসমূহকে অবনত করো, তোমাদের ধ্বনিগুলোকে নিচু করো, কথা কম বলো। আর নিজেদেরকে যুদ্ধের জন্য এবং শত্রুর মুখোমুখি হওয়ার ও জান-প্রাণ দিয়ে আত্মরক্ষার জন্য প্রস্তুত করো। অটল ও দৃঢ় হও এবং আল্লাহকে স্মরণ করো যাতে সফলকাম হতে পারো। পরস্পর মতপার্থক্য ও দলাদলি থেকে বিরত থাকো যাতে তোমরা দুর্বল না হও এবং তোমাদের মর্যাদা ও মহত্ত্ব ক্ষুণœ না হয়। আর ধৈর্যশীল হও। নিশ্চয় আল্লাহ্ ধৈর্যশীলদেরকে পসন্দ করেন।”

ইমাম (আঃ)-এর কথা শেষ হলো এবং তিনি এগারোটি সারিতে সৈন্যদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে শত্রুর বিপরীতে দাঁড় করিয়ে দিলেন। ইমাম (আঃ)-এর সৈন্যদের সারিগুলো এমনভাবে সুশৃঙ্খলিত করা হয়েছিলো যে, যে সকল গোত্রের লোকদের মধ্যে কিছু অংশ ইরাকে এবং কিছু অংশ শামে বসবাস করতো তারা রণাঙ্গনে পরস্পর মুখোমুখি হলো।

প্রথম দিনগুলোতে যুদ্ধের চাকা শ্লথ গতিতে ঘুরতে থাকে। তখনো উভয় পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টা, নমনীয়তা এবং আশার আলো বিরাজ করছিলো। সৈন্যদল দুপুর পর্যন্তÍ যুদ্ধ চালাতো। অতঃপর যুদ্ধ থেকে বিরত হতো। কিন্তু পরবর্তীতে যুদ্ধ প্রচ- রূপ ধারণ করে এবং সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি, এমনকি রাতের একাংশ পর্যন্তÍ তা অব্যাহত থাকতো।৬৫
যুদ্ধ শুরু

সফর মাসের প্রথম দিনে ইমাম (আঃ)-এর বাহিনী থেকে মালেক আর্শ্তা ও শাম বাহিনী থেকে হাবীব ইবনে মুসলিমাহ্ স্ব স্ব অধীন সৈন্যদেরকে নিয়ে যুদ্ধে লিপ্ত হলেন। দিনের কিছু সময় ধরে যুদ্ধ চললো এবং উভয় পক্ষের কিছুসংখ্যক সৈন্য নিহত হলো। অতঃপর তারা পরস্পর থেকে দূরে সরে গেলো এবং স্ব স্ব শিবিরে প্রত্যাবর্তন করলো।৬৬

দ্বিতীয় দিনে ইমাম (আঃ)-এর বাহিনী থেকে হাশেম ইবনে ‘উত্বাহ্ একদল অশ্বারোহী ও পদাতিক সৈন্যের নেতৃত্বে এবং আবুল আ‘ওয়ার সালামী শাম বাহিনী থেকে অনুরূপ একদলের নেতৃত্বে ময়দানে উপস্থিত হলো। অশ্বারোহীরা অশ্বারোহীদের সাথে আর পদাতিকরা পদাতিকদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হলো।৬৭

তৃতীয় দিনে ইমাম (আঃ)-এর সৈন্যদের নেতৃত্বে ‘আম্মার ইয়াসির এবং মু‘আবিয়ার সৈন্যদের নেতৃত্বে ‘আম্র্ ইবনুল্ ‘আছ্ স্ব স্ব অধীন লোকদের নিয়ে ময়দানে আসেন। তাদের মাঝে প্রচ-তম যুদ্ধ বেঁধে যায়।৬৮

‘আম্মার ইয়াসির শাম বাহিনীর উদ্দেশে উচ্চৈঃস্বরে বলেন, “তোমরা কি ঐ ব্যক্তিকে চিনতে চাও যে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের সাথে শত্রুতা করেছে এবং মুসলমানদের ওপর অত্যাচার করেছে আর মুশরিকদেরকে সাহায্য করেছে? যেদিন আল্লাহ্ তাঁর দ্বীনকে বিজয়ী করতে চাইলেন এবং তাঁর রাসূলকে সাহায্য করতে চাইলেন সেদিন সে তড়িঘড়ি করে, আগ্রহ ও ভক্তি থেকে নয়, ইসলাম গ্রহণের ভান করলো। আর যখনই রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বিদায় নিলেন অমনি সে মুসলমানদের শত্রু আর অপরাধীদের বন্ধুতে পরিণত হলো। হে লোকসকল! জেনে রাখো যে, সে ব্যক্তিটি হলো স্বয়ং ঐ মু‘আবিয়াহ্। তাকে অভিসম্পাত করো এবং তার বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হও। সে হলো এমন লোক যে আল্লাহ্র আলোকে নিভিয়ে দিতে চায় আর আল্লাহ্র শত্রুদেরকে সাহায্য করতে চায়।৬৯

এ সময় এক ব্যক্তি ‘আম্মারকে বললো যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, লোকদের সাথে যুদ্ধ করো যতক্ষণ না তারা ইসলাম গ্রহণ করে। আর যখন ইসলাম গ্রহণ করবে তখন জান ও মাল নিরাপদ থাকবে।

‘আম্মার তার কথাকে সত্য বলে মেনে নিলেন এবং বললেন, উমাইয়্যাহ্ দল প্রথম দিন থেকেই ইসলাম গ্রহণ করে নি। তারা ইসলামের ভান করে এবং স্বীয় কুফরীকে গোপন রাখে যাতে একদিন তাদের কুফরীর পক্ষে বন্ধু ও মিত্র খুঁজে পায়।৭০

‘আম্মার এ কথা বললেন এবং স্বীয় অশ্বারোহী বাহিনীর সেনাপতিকে শামের অশ্বারোহী বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালাবার নির্দেশ দিলেন। আর তাঁর অশ্বারোহী বাহিনীর সেনাপতিও স্বীয় সৈন্যদেরকে শামীদের বিরুদ্ধে আক্রমণের হুকুম দিলেন। কিন্তু শাম বাহিনী তাঁর বিপরীতে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। অতঃপর ‘আম্মার তাঁর পদাতিক বাহিনীকেও আক্রমণের নির্দেশ দিলেন। এবার ইমাম (আঃ)-এর সৈন্যরা এক চকিত আক্রমণের মাধ্যমে শত্রু বাহিনীর ব্যুহ ভেঙ্গে ঢুকে পড়ে এবং তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তাই ‘আম্র্ ইবনুল্ ‘আছ্ তাঁর অবস্থান সরিয়ে নিতে বাধ্য হন।

প্রাজ্ঞ রাজনীতিক ‘আম্র্ ইবনুল্ ‘আছ্ এবার সেই হাতিয়ার ব্যবহার করলেন যা ‘আম্মার ইয়াসির ব্যবহার করেছিলেন। ‘আম্মার উমাইয়্যাহ্ দলকে এবং তাদের নেতৃবৃন্দকে কাফের ঘোষণার মাধ্যমে শত্রু সৈন্যদের সারিতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করেন। এর বিপরীতে ‘আম্র্ ইবনুল্ আছ্ও বর্শার মাথায় একখ- কালো কাপড় বেঁধে উঁচু করে ধরলেন। এটা ছিলো সেই কালো কাপড় যা একদিন রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) তাঁর হাতে দিয়েছিলেন। সেদিকে তাকিয়ে চক্ষুসমূহ তাক লেগে গেলো, মুখে মুখে ফিসফিস কথা শুরু হয়ে গেলো।

ইমাম (আঃ) যেকোনো ধরনের ফিত্না সৃষ্টি প্রতিরোধ করার জন্য অবিলম্বে স্বীয় সঙ্গীদেরকে বুঝাবার উদ্যোগ নিলেন। তিনি বললেন ঃ তোমরা কি জানো এ পতাকার কাহিনী কী? একদিন রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এ পতাকাটি নিয়ে বাইরে এলেন এবং ইসলামের বাহিনীর দিকে লক্ষ্য করে বললেন, “তোমাদের মধ্যে কে আছো যে, এটার মধ্যে যা আছে তাসহ গ্রহণ করবে?” ‘আম্র্ ইবনুল্ ‘আছ্ বললো, “এটার মধ্যে কী রয়েছে?” রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বললেন, “এটার মধ্যে রয়েছে যে, কোনো মুসলমানের সাথে যুদ্ধ করবে না, আর কোনো কাফেরের সাথে ঘনিষ্ঠ হবে না।” ‘আম্র্ ইবনুল্ ‘আছ্ এটাকে এ শর্তেই গ্রহণ করলো। কিন্তু আল্লাহ্র শপথ করে বলছি, আজ সে মুশরিকদের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়েছে এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। সেই আল্লাহ্র শপথ, যিনি বীজদানা ভেঙ্গে ফসল জন্মান এবং মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, এ দলটি অন্তÍর থেকে ইসলাম গ্রহণ করে নি, বরং ইসলামের ভান করেছে ও স্বীয় কুফরীকে গোপন করেছে। আর যখনই তাদের কুফরী প্রকাশের জন্য সহযোগীদেরকে খুঁজে পেয়েছে তখন তাদের শত্রুতায় প্রত্যাবর্তন করেছে। শুধু বাইরে তারা নামাযকে ত্যাগ করে নি।৭১

চতুর্থ দিনে মুহাম্মাদ ইবনে হানাফীয়াহ্ তাঁর বাহিনী নিয়ে ময়দানে এগিয়ে গেলেন। অন্যদিকে শামের বাহিনী হতে ‘উবায়দুল্লাহ্ ইবনে ওমর একদল সৈন্য সঙ্গে নিয়ে যুদ্ধের জন্য এগিয়ে এলো। যুদ্ধের আগুন জ্বলে উঠলো। উভয় পক্ষের মধ্যে প্রচ- যুদ্ধ চললো।৭২

‘উবায়দুল্লাহ্ মুহাম্মাদ হানাফিয়ার কাছে বার্তা পাঠালো যে, দু’জনে মুখোমুখি যুদ্ধ করবে। মুহাম্মাদ মুখোমুখি যুদ্ধ করার জন্য এগিয়ে গেলেন। ইমাম (আঃ) ঘটনা অবগত হলেন এবং দ্রুতবেগে স্বীয় পুত্রের অভিমুখে ঘোড়া চালালেন। তিনি তাঁকে থামার নির্দেশ দিলেন। অতঃপর ‘উবায়দুল্লাহ্্র অভিমুখে স্বীয় ঘোড়া চালালেন এবং বললেন, “আমি তোমার সাথে যুদ্ধ করবো, এগিয়ে এসো।” ‘উবায়দুল্লাহ্ একথা শুনে কাঁপতে শুরু করলো এবং বললো, “আপনার সাথে আমার যুদ্ধ করার কোনো দরকার নেই।” অতঃপর সে নিজের ঘোড়াকে পিছন দিকে ফিরিয়ে নিলো এবং যুদ্ধক্ষেত্র থেকে দূরে চলে গেল। এ সময় উভয় বাহিনী পরস্পর থেকে দূরে সরে গেলো এবং স্ব স্ব শিবিরে প্রত্যাবর্তন করলো।

৩৮ হিজরীর সফর মাসের পঞ্চম দিন রবিবার ইবনে আব্বাসের নেতৃত্বে ইরাকী বাহিনী এবং ওয়ালীদ ইবনে ‘উক্ববাহ্র নেতৃত্বে শাম বাহিনী পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত হলো। প্রচ- যুদ্ধের পর দুপুর নাগাদ উভয় পক্ষ যুদ্ধ বন্ধ করলো এবং নিজ নিজ কেন্দ্রে প্রত্যাবর্তন করলো। এ সময়ে শামের সেনাপতি গালমন্দ শুরু করে এবং আবদুল মুত্তলিবের সন্তÍানদেরকে গালি দেয়। তখন ইবনে আব্বাস তাকে যুদ্ধের আহ্বান জানান। কিন্তু সে যুদ্ধ করতে রাযী হলো না এবং যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করলো।

শাম বাহিনী ছিলো অন্ধ ও বধির এবং বাস্তবতা ও ইসলামের ইতিহাস সম্পর্কে বেখবর। তা না হলে তাদের বাহিনীর সেনাপতি এমন কারো হওয়া উচিত ছিলো না যে ব্যক্তি কোরআনের ঘোষণা অনুযায়ী ফাসেক ও অকর্মণ্য। ওয়ালীদ হলো সেই ব্যক্তি যার সম্পর্কে কোরআন মজীদে বলা হয়েছে ঃ

إنْ جَائكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَاءٍ فَتَبَيَّنُوا.

“কোনো ফাসেক লোক কোনো খবর নিয়ে এলে তোমরা তা যাচাই করে দেখবে।”৭৩

এ হলো সেই ব্যক্তি যার ব্যাপারে কোরআন এরূপ পরিচয় তুলে ধরেছে যে,

أَفَمَنْ كَانَ مُؤمِناً كَمَنْ كَانَ فَاسِقاً لاَ يسْتَوُونَ.

“যে ব্যক্তি মু’মিন আর যে ফাসেক তারা কি সমান? কখনোই এরা দু’জন একসমান নয়।”৭৪

এসব যুদ্ধে যদিও কিছু লোক নিহত হচ্ছিলো এবং উভয় পক্ষই কোনো ফলাফল ছাড়াই স্ব স্ব শিবিরে প্রত্যাবর্তন করছিলো, কিন্তু ইমাম (আঃ), ‘আম্মার ইয়াসির ও ইবনে আব্বাসের বক্তৃতাসমূহ শামের জনগণের সামনে দিগন্তÍকে নির্মল করে তুলছিলো। আর মু‘আবিয়ার দাবির ভিত্তিহীনতা কম-বেশি ফুটে উঠছিলো। এ কারণে যুদ্ধের পঞ্চম দিনে শিম্র্ ইবনে আব্রাহা হেম্ইয়ারী শামের একদল ক্বারীকে সঙ্গে নিয়ে ইমাম (আঃ)-এর বাহিনীতে যোগ দেন। আলোর দিকে তাঁদের এ স্থানান্তÍর ছিলো শামের বাহিনীকে আচ্ছন্ন করে থাকা অন্ধকারেরই প্রমাণ। শামের পাপিষ্ঠ সেনাধিপতি একবার কেঁপে উঠলো এবং এ ঘটনার পুনরাবৃত্তির ব্যাপারে তীব্র আতঙ্কিত হয়ে পড়লো।

‘আম্র্ ইবনুল্ ‘আছ্ মু‘আবিয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন ঃ “তুমি চাচ্ছো এমন এক ব্যক্তির সাথে যুদ্ধ করতে যিনি মুহাম্মাদের সাথে নিকটাত্মীয়তার সম্পর্কের অধিকারী আর ইসলামে যার দীর্ঘ ও মযবুত অতীত রয়েছে। তিনি মর্যাদা ও আধ্যাত্মিক গুণাবলীর দিক থেকে আর যুদ্ধের রহস্যাবলীর জ্ঞানের বিচারে তুলনা বিহীন। তিনি মুহাম্মাদের কতক সাহাবী, বীর, ক্বারীবৃন্দ ও মর্যাদাসম্পন্ন লোকদেরকে সাথে নিয়ে তোমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এসেছেন। মুসলমানদের মনে তাঁদের ব্যাপারে শ্রদ্ধা ও ভক্তিবোধ রয়েছে। এখন দরকার হলো শাম বাহিনীকে কঠিন ও সঙ্কটপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দেয়া। আর যুদ্ধকাল প্রলম্বিত হওয়ার অবসাদ তাদেরকে আক্রান্তÍ করার পূর্বেই তাদেরকে প্রলুব্ধ করতে হবে। তুমি আর যা-ই বিস্মৃত হও না কেন, এটা ভুলে যেয়ো না যে, তুমি বাতিলের ওপরে রয়েছো।”

মু‘আবিয়াহ্ এ প্রবীণ রাজনীতিকের কাছ থেকে উপদেশ গ্রহণ করলেন এবং বুঝতে পারলেন যে, শাম বাহিনীকে রণাঙ্গনে আকৃষ্ট করার একটি উপায় হলো দ্বীনদারী ও তাকওয়া-পরহেযগারীর ছদ্মবেশ ধারণ করা, যদিও তাঁর অন্তÍরে এর কোনো প্রভাব নেই। এ কারণে, তিনি একটি মিম্বার প্রস্তুত করার নির্দেশ দিয়ে শাম বাহিনীর নেতাদের ডেকে পাঠালেন। এরপর তিনি মিম্বারে আরোহণ করলেন এবং দ্বীনের একজন বিদগ্ধ দরদীর ন্যায় কুম্ভীরাশ্রু বর্ষণ করতে করতে বললেন ঃ

“হে লোকসকল! তোমাদের প্রাণসমূহ আর মস্তকসমূহকে আমাদের হাতে সোপর্দ করো। দুর্বল হয়ে পড়ো না এবং সহযোগিতা করা থেকে বিরত হয়ো না। আজকের দিন বড় বিপদের দিন। সত্যের দিন ও তা রক্ষা করার দিন। তোমরা সত্যের ওপরে রয়েছো আর তোমাদের হাতে রয়েছে সত্যের অকাট্য প্রমাণ। তোমরা এমন এক লোকের সাথে যুদ্ধ করছো যে বাই‘আতকে ভঙ্গ করেছে এবং অবৈধ রক্তপাত ঘটিয়েছে। আসমানে তাকে কেউ ক্ষমার যোগ্য বলে গণ্য করবে না।”

অতঃপর ‘আম্র্ ইবনুল্ ‘আছ্ মিম্বারে উঠলেন এবং মু‘আবিয়ার বক্তব্যের অনুরূপ বক্তব্য প্রদান করে মিম্বার থেকে নেমে এলেন।৭৫
ইমাম (আঃ)-এর ভাষণ

ইমাম (আঃ)-এর কাছে খবর পৌঁছলো যে মু‘আবিয়াহ্ প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ও ধর্মের ভান করে শামের জনগণকে যুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করছেন। এ কারণে তিনি সকলকে এক জায়গায় সমবেত হওয়ার নির্দেশ দিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, ইমাম (আঃ)কে দেখলাম স্বীয় ধনুকের ওপর ভর করে দাঁড়িয়েছেন এবং তাঁর চারপাশে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর ছাহাবীদেরকে দাঁড় করিয়েছেন। এভাবে তিনি জনগণকে বুঝাতে চান যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর ছাহাবীগণ তাঁর সাথেই রয়েছেন। অতঃপর আল্লাহ্র প্রশংসা করে তিনি তাঁর ভাষণ শুরু করলেন। তিনি বললেন ঃ

“হে জনগণ! তোমরা আমার কথা শোনো এবং তা মনে রাখার চেষ্টা করো। স্বার্থপরতা জন্ম নেয় অবাধ্যতা থেকে। আর ঔদ্ধত্য আসে অহঙ্কার ও আত্মকেন্দ্রিকতা থেকে। শয়তান হলো সদা উপস্থিত এক শত্রু যে তোমাদেরকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। জেনে রেখো যে, মুসলমান মুসলমানের ভাই। গালমন্দ করো না এবং সাহায্য করা থেকে বিরত থেকো না। দ্বীনের শরী‘আত অভিন্ন আর তার রাস্তাসমূহ মসৃণ। যে কেউ তা গ্রহণ করবে সে তাতে যোগদান করলো আর যে কেউ তা পরিত্যাগ করবে সে তা থেকে খারিজ হয়ে যাবে। আর যে তা থেকে বিচ্ছিন্ন হবে সে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। যে ব্যক্তি বিশ্বস্ত বলে গণ্য হয় কিন্তু বিশ্বাসঘাতকতা করে অথবা প্রতিশ্রুতি দেয় কিন্তু তা ভঙ্গ করে, অথবা যখন কথোপকথন করে তখন মিথ্যা বলে, সে মুসলমান নয়।

“আমরা হলাম রহমতের বংশ। আমাদের কথা সত্য আর আমাদের আচরণ শ্রেয়তর। শেষ নবী (সাঃ) হলেন আমাদের থেকেই আর ইসলামের নেতৃত্বও রয়েছে আমাদের মধ্যে। আল্লাহ্র কিতাবের পাঠকারীরা আমাদের থেকে। আমি তোমাদেরকে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি আর তাঁর শত্রুর বিরুদ্ধে জিহাদ করার এবং এ পথে অটল থাকার, আল্লাহ্র সন্তুষ্টি অর্জন, নামায কায়েম রাখা, যাকাত প্রদান, আল্লাহ্র ঘর যিয়ারত, রামাযান মাসের রোযা পালন ও বায়তুলমালকে তার প্রাপকের হাতে পৌঁছে দেয়ার প্রচেষ্টা চালাবার জন্য সুপারিশ করছি।

“জগতের বিস্ময়কর বিষয়গুলোর মধ্যে একটি হলো, উমাইয়্যাহ্ বংশীয় মু‘আবিয়াহ্ আর সাহ্মী বংশীয় ‘আম্র্ ইবনুল্ ‘আছ্ আজ জনগণকে ধর্মপরায়ণতায় উৎসাহিত করছে। তোমরা অবগত আছো যে, আমি কখনোই রাসূলুল্লাহ্ (আঃ)-এর বিরুদ্ধাচরণ করি নি। যে সব ক্ষেত্রে বীরপুরুষরা পিছু হটতো এবং ভয়ে কাঁপতে থাকতো তখন আমিই নিজ জীবন দ্বারা তাঁর সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়াতাম। আল্লাহ্কে কৃতজ্ঞতা জানাই যিনি আমাকে এ মর্যাদা দিয়ে ধন্য করেছেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) তাঁর মাথা আমার কোলে রেখে দুনিয়া থেকে বিদায় নেন। আমি একাকী তাঁকে গোসল দিলাম আর নিকটবর্তী ফেরেশতাগণ তাঁর লাশকে এপাশে-ওপাশে ফিরিয়ে ধরছিলো। আল্লাহ্র শপথ, কোনো উম্মাতই তার নবীর মৃত্যুর পর মতপার্থক্যে লিপ্ত হয় নি যতক্ষণ না বাতিলপন্থীরা সত্যপন্থীদের ওপর জয়ী হয়েছে।”৭৬

ইমাম (আঃ)-এর ভাষণ যখন এ পর্যায়ে এসে পৌঁছলো তখন বর্ষীয়ান ঈমানদার ও বিশ্বস্ত ছাহাবী হযরত ‘আম্মার ইয়াসির জনগণের উদ্দেশে বললেন, “ইমাম তোমাদেরকে অবগত করেছেন যে, উম্মাত শুরুতেও সঠিক পথে চলে নি আর শেষেও সঠিক পথে চলে নি।”

ইবনে মুযাহিমের কথা থেকে মনে হয় যে, ইমাম (আঃ) সফর মাসের ৬ তারিখ সোমবার এ ভাষণ প্রদান করেন। পরিশেষে তিনি সৈন্যদের সর্বাত্মক আক্রমণের মাধ্যমে পাপাচারের মূলোৎপাটন করার জন্য আহ্বান জানান। এরপর তিনি ৭ সফর মঙ্গলবার সৈন্যদেরকে সামষ্টিকভাবে আক্রমণ চালাবার জন্য প্রস্তুত করেন। এদিন তিনি একটি খোত্বাহ্ প্রদান করলেন এবং যুদ্ধের পন্থা সম্পর্কে বর্ণনা দিলেন।৭৭



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.