![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের একজন আইনজীবী। পেশায় আইনজীবী; নেশায় লেখক। সমসাময়িক বিষয়াদি নিয়ে কলাম লিখতে ভালোবাসি। উপমহাদেশের বিভিন্ন ভাষার ছোটগল্প ও কবিতা পড়ি এবং অনুবাদ করি নিয়মিত। ধন্যবাদ।
এক।
ডঃ আনিসুজ্জামান। প্রাতঃস্মরণীয় একটি নাম। জ্ঞাণের বাতিঘর। সর্ব-জন শ্রদ্ধেয়। প্রখ্যাত গবেষক, লেখক ও শিক্ষক। ১৯৩৭ সালে জন্ম। ৮৩ বছর বয়সে চলমান মহামারি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।
দুই।
আনিসুজ্জামানের জন্ম কলকাতায়। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পরে পরিবারের সাথে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন। প্রথমে খুলনায়, পরে ঢাকায়।জগন্নাথ কলেজ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী আর মাত্র ২৫ বছর বয়সে অর্জন করেন পিএইচডি ডিগ্রী। পরে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়েও ছিলেন কিছুদিন। রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেয়েছেন সম্মাণসূচক ডি.লিট ডিগ্রী। পেশাগত জীবনে ছিলেন একজন প্রথিতযশা শিক্ষক। প্রথমে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছেন। অবসরের পরে প্রফেসর এমেরিটাস/জাতীয় অধ্যাপক হিসেবেও নিয়োগ পান। প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ ক্যারোলিনা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং ফেলো ছিলেন। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন ভিজিটিং প্রফেসর। একের পর এক লিখেছেন নন্দিত সব গবেষণা গ্রন্থ। কেবল একাডেমিসিয়ানই ছিলেন না তিনি। বায়ান্ন’র ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলন আর একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন সক্রিয়ভাবে। একুশে পদক, স্বাধীনতা দিবস পদকসহ দেশ-বিদেশের অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
তিন।
ডঃ আনিসুজ্জামানের অমর কীর্তির মধ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের বাংলা অনুবাদ অন্যতম। ১৯৭২ সালের ১১ এপ্রিল গণপরিষদ কর্তৃক স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ণের উদ্দেশ্যে ডঃ কামাল হোসেনকে সভাপতি করে ৩৪ সদস্যের শাসনতন্ত্র কমিটি গঠন করা হয়। ডঃ কামাল হোসেন তখন আইন ও সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী। তিনি মূল সংবিধানের খসড়া লিপিবদ্ধ করেন। সংবিধানের মূল খসড়া লেখা হয় ইংরেজিতে। পাশাপাশি সংবিধানের বাংলা পাঠ তৈরির প্রয়োজন দেখা দিলে ডঃ আনিসুজ্জামানকে সংবিধানের বাংলা অনুবাদের দায়িত্ব দেয়া হয়। ডঃ আনিসুজ্জামান ডঃ কামাল হোসেনের সঙ্গে বসে খসড়া সংবিধানের বাংলা অনুবাদ করেন। এই সময়ে তিনি ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছুটি নিয়ে মাসে পনের দিন করে ঢাকায় অবস্থান করতে হয় তাঁকে। খসড়া সংবিধান প্রণয়ন ও অনুবাদের কর্মযজ্ঞ চলাকালীন তিনি একাধিকবার ডঃ কামাল হোসেনের সাথে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাত করেন। তাছাড়া, শাসনতন্ত্র কমিটির সদস্য না হয়েও তিনি খসড়া সংবিধান বিষয়ে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে/বিতর্কে উপস্থিত থাকার সুযোগ পান। ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর গৃহীত হলে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭২ থেকে সংবিধান কার্যকর হয়।
চার।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩ অনুসারে বাংলা প্রজাতন্ত্রের রাস্ট্রভাষা; অনুচ্ছেদ ১৫৩ অনুযায়ী সংবিধানের বাংলায় একটি ও ইংরেজিতে অনুদিত একটি নির্ভরযোগ্য অনুমোদিত পাঠ থাকবে; তবে, বাংলা ও ইংরেজি পাঠের মধ্যে বিরোধের ক্ষেত্রে বাংলা পাঠ প্রাধান্য পাবে। এক্ষেত্রে সংবিধানের ভাষা হিসেবে বাংলার প্রাধান্যই বিরাজমান। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩ এর বিধান কার্যকর করার উদ্দেশ্যে তিন দশকেরও আগে প্রণীত হয় বাংলা ভাষা প্রচলন আইন, ১৯৮৭। দেশের সর্বোচ্চ আদালতও সংবিধানের বাংলা ভাষা সংক্রান্ত অনুচ্ছেগুলোকে সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অন্তর্ভূক্ত বিধান ঘোষনা করে রায় দিয়েছেন; বাংলার প্রাধান্য অক্ষুন্ন রেখেছেন; সর্বস্তরে বাংলা প্রচলনের জন্য আদেশ দিয়েছেন। প্রসঙ্গত ওসমান গণি মন্ডল বনাম মাঈনুদ্দিন আহামদ (২৭ ডিএলআর এডি ৬১) ও অস্টম সংশোধনী মামলা নামে খ্যাত আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বনাম বাংলাদেশ (৪১ ডিএলআর এডি ১৬৫) মামলার রায় স্মরণযোগ্য। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলেও সত্য যে, সংবিধান গৃহীত ও কার্যকর হবার পরে চার দশকের চেয়ে বেশি সময় অতিবাহিত হলেও এখনও উচ্চ আদালতসহ দেশের সর্বত্র বাংলা ভাষার প্রচলন সম্ভব হয়ে উঠেনি।
পাঁচ।
দেশের আইনাঙ্গনের সর্বস্তরে বাংলা ভাষার সগৌরব ব্যবহারের স্বপ্ন দেখি আমরা। সংবিধানের অনবদ্য বাংলা অনুবাদের মাধ্যমে এ স্বপ্নের ঊষাকালীন অন্যতম সারথী ছিলেন সদ্য প্রয়াত বরেণ্য শিক্ষাবিদ ডঃ আনিসুজ্জামান। তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি।
তথ্য-সূত্রঃ
১। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান
২। বিপুলা পৃথিবী, আনিসুজ্জামান, প্রথমা প্রকাশন, ২০১৫, পৃষ্ঠা ৩২-৩৮
৩। উইকিপিডিয়া
মোহাম্মদ শাহজাহানঃ আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট। মুঠোফোন-০১৮২৭৬৫৬৮১৬
২| ১৬ ই মে, ২০২০ রাত ১:২৯
এডভোকেট মোহাম্মদ শাহজাহান বলেছেন: ঠিক বলেছেন, জনাব রাজীব নুর। ধন্যবাদ।
৩| ১৬ ই মে, ২০২০ রাত ১:৪১
নেওয়াজ আলি বলেছেন: উনি পদ্মভূষণ কেন পেলেন লিখেন নি
৪| ১৬ ই মে, ২০২০ ভোর ৪:৩৪
স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: বায়ান্ন’র ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলন আর একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন সক্রিয়ভাবে।
একুশে পদক, স্বাধীনতা দিবস পদকসহ দেশ-বিদেশের অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
...................................................................................................................................................
আর জিতে নিয়ে ছিলেন অসংখ্য মানুষের ভালবাসা, উনার আত্নার মাগফেরাত প্রার্থনা করছি ।
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই মে, ২০২০ রাত ১২:৫৪
রাজীব নুর বলেছেন: সত্যি স্যারের জীবনটা এত উজ্জ্বল কিন্তু চলে যাওয়াটা এত একা একা, স্বজনবিহীন। আর আমরা প্রকৃতির হাতে বন্দী।