নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্নবালক আমি

আমি অতি সাধারণ

স্বপ্নবালক আমি › বিস্তারিত পোস্টঃ

বন্ধুত্ব….

২৯ শে মে, ২০১২ রাত ১২:৪৪

পৃথিবীতে বন্ধুত্বের সংজ্ঞা এতো বেশি যে, বলে শেষ করা যায় না। একজনের কাছে বন্ধুত্ব একরকম তো অন্যজনের কাছে বন্ধুত্বের সংজ্ঞা অন্যরকম। বন্ধুত্বের একটি সংজ্ঞা নিয়েই হতে পারে বিশাল বই। আবার হতে পারে দীর্ঘ বক্তৃতা, হতে পারে আমার বিরক্তিকর লেখা। তবে মনে হয় জন হে-এর এই সংজ্ঞাটা না দিলে বন্ধুত্ব বুঝা যায় না 'বন্ধুত্ব হলো জীবনের সূর্যোদয়।" সত্যি অবাক করার বিষয়, তিনি তার বন্ধুদের কতো বড় করে দেখছেন। গোটা পৃথিবীর কাছে তুমি একজন মানুষ মাত্র, বন্ধুর কাছে তুমি গোটা পৃথিবী। ভালো বন্ধু সে-ই যে মনে করে, তুমি একটা ভালো ডিম, যদিও সে জানে ডিমটা খানিকটা ফাটা।



আবার বন্ধুত্ব হচ্ছে চুইংগামের মতো হৃদয়ের কাছাকাছি, যা একবার মনে স্থান করে নিলেই হলো, ছাড়তে চাইলেও তা সম্ভব হয় না। বন্ধুত্ব তিন ধরনের (১) খাবারের মত, যাদের ছাড়া চলে না। (২) ঔষধের মত, যাদের মাঝে মাঝে দরকার হয়।(৩) অসুখের মত, যাদের কেউ চায় না।'তুমি যদি ৫শ' বছর বেঁচে থাকো, আমি যেনো একদিন কম বাঁচি, যাতে তোমায় একদিনের জন্যেও মিস না করি।'বন্ধুত্ব নিয়ে সুবচনের শেষ নেই। আবার বন্ধুত্বের সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞাও নেই। তবে এটা অস্বীকার করার কোনো জো নেই যে, বেঁচে থাকতে হলে অবশ্যই ভালো বন্ধু প্রয়োজন।



ভালো বন্ধুর মাধ্যমে তুমি আর কিছু না বুঝ বা না পাও কিন্তু তুমি কেমন, তোমার ভুলটা সে দেখাবে, আবার তোমাকে তোমার ভালো কাজের প্রশংসাও সেই করবে। "তোমার ভালো বন্ধু সে-ই যে তোমার মধ্যকার সর্বোত্তম গুণটা বের করে আনবে।"-হেনরি ফোর্ড। বন্ধুত্ব হচ্ছে দু'জনের পরস্পরের প্রতি গ্রহণযোগ্য ও প্রত্যাশিত আচরণ। বন্ধুত্ব হচ্ছে 'বিশ্বাস'। বন্ধুত্ব হচ্ছে 'দু'দেহ একমন।' --- এরিস্টটল।



বন্ধুরা জানে এবং মানে তারা পরস্পরের ক্ষতি করবে না। এটা সত্যি যে, বন্ধুত্ব গড়ে উঠে কিছু প্রদর্শিত মূল্যবোধের ওপর, যার মধ্যে রয়েছে বন্ধুর বেলায় সবচেয়ে ভালোটাই ঘটুক এ প্রত্যাশার লালন, সহানুভূতি ও একাগ্রতা, সত্যবাদিতা, সততা ও পারস্পরিক সমঝোতা। মানব সভ্যতাই গড়ে উঠেছে বন্ধুত্বের ছায়ায়। একজন ভালো বন্ধু সবারই কাম্য। একজন সৎ বন্ধুর কাছে বা তার সানিধ্য পেতে সবাই ব্যাকুল থাকে।



কবি এ এস বলেছেন "সত্যিকার বন্ধুত্বে সত্যবাদিতা চাই-ই চাই।" একজন সত্যিকার ও সত্যবাদী বন্ধু তোমাকে ভালোবাসবে আবার তোমার মন্দ কাজগুলোর সরাসরি সমালোচনাও করবে। তবে অনেক বন্ধুই আছে সুদিনের!! যাদের দুর্দিনে খুঁজে পাওয়া যায় না বা চাইলে ও পাওয় যায় না। সত্যিকারের বন্ধু সম্পর্কে অস্কার ওয়াইল্ড লিখেছেন, "যে তোমাকে পেছনে থেকে নয়, সামনে থেকে ছুরি মারতে পারে সে-ই।" কী ভয়ানক উক্তি। তবে এই কথার অন্তরালে অনেক ভালো কথা লুকিয়ে আছে। বন্ধুত্বের রশিটা সব সময়ই জৈব সীমার উর্ধে রাখা উচিত।



বয়স ও অর্থ দিয়ে বন্ধুকে পরিমাপ করা উচিত নয়। বন্ধুত্বের জায়গাটা মনের মধ্যে বিশাল করা দরকার। বর্তমান সময়ের বন্ধুত্ব কেমন এবার তা নিয়ে একটু আলোচনা করি। যুগ বদলাচ্ছে। এটা বেশ পুরোনো কথা। যুগের সঙ্গে বদলাচ্ছে সবকিছু এটাও সবার জানা।



তেমনি বদলে যাচ্ছে বন্ধুত্বের আবেগ-অনুভূতি, গতি-প্রকৃতি। নদীর নাব্যতার মতো কমে যাচ্ছে বন্ধুর গভীরতা। বন্ধুত্বে সৃষ্টি হয়েছে অনেক বিভাজন। আমাদের এখন অনেক বন্ধু। স্কুলের বন্ধু, কলেজের বন্ধু, অফিসের বন্ধু, ক্লাবের বন্ধু, কিংবা পার্টির বন্ধু, এফ বির বন্ধু। অনেক ধরনের বন্ধু আমাদের। যার কাছে স্বার্থ নেই সেই আমাদের বন্ধু। কিন্তু প্রকৃত বন্ধু? কমে যাচ্ছে সেই সংখ্যা। কারও কারও নেই বললেই চলে।



এই সময়ে শিশু-কিশোরদের বড় বন্ধু কে?সরাসরি উত্তর-কম্পিউটার। শতকরা ৮৫ ভাগ শহুরে শিশুর ক্ষেত্রে এটা সত্যি। তাদের প্রিয় বন্ধুর নাম মহান কম্পিউটার। হবেই তো কম্পিউটার, কারণ এর সঙ্গেই তো তারা বেশি সময় কাটাচ্ছে। তারা খেলতে পারছে না। ঘুরতে পারছে না। বাবা মাও বন্ধু হচ্ছে না। কারণ বাবা-মাকে ঠিকমত কাছে পাচ্ছে না তারা। আর তাদের এসব চাহিদা পূরণে সর্বদাই নিয়োজিত মহান বন্ধু কম্পিউটার।



কম্পিউটারে খেলছে, গান শুনছে, ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘুরছে পৃথিবী। কম্পিউটারই তাদের প্রকৃত বন্ধু। বিজ্ঞান আমাদের দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ। আমাদের আবেগ কোন্ স্তরে তা উদাহরণ দিয়ে বুঝতে হবে না। অপরদিকে বন্ধুত্ব পুরোটাই আবেগ নির্ভর। সুতরাং বর্তমানে প্রকৃত বন্ধুত্বের অস্তিত্ব যে হুমকির মুখে এটা সবারই জানা। প্রযুক্তি নির্ভর সময়ে এসে আমাদের বন্ধুত্ব বাড়ছে কিন্তু গুণ ও মান কমছে। ফেস বুক সবারই পরিচিত। বন্ধু বানানোর বিশাল ফ্যাক্টরী হলো ফেসবুক বা বন্ধু বানানোর মেশিন। এই মেশিনটি এমনই ক্ষমতাধর যে, রোজ লক্ষ কোটি বন্ধু তৈরি হচ্ছে। একবার ঢুকলেই আপনার বন্ধুর সংখ্যা হবে অগণিত। ছোট-বড়, ধনী-গরিব ভেদাভেদহীন। সবাই সবার বন্ধু হচ্ছে। হাত বাড়ালেই বন্ধু।



মার্ক টোয়েনের একটি উক্তি হলো "যে কোনো মানুষের ক্ষেত্রে তার বন্ধু তার জন্য সম্পদ স্বরূপ।" সে হিসেবে ফেসবুকের সবাই বিশাল সম্পদশালী। এজন্যে তারা সম্পদশালী কারণ তাদের অনেক বন্ধু। বিষয়টি সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু বিপত্তিটা এখানে যে, অনেকের অভিযোগ ফেস বুকের বন্ধুত্ব প্রকৃতপক্ষে কোনো বন্ধুত্বই নয়। বিষয়টি শুধুই মজা করা।



বলা যায়, বন্ধু বন্ধু খেলা(শিশু বয়সে যেমন বউ জামাই খেলা হতো)। তাই বলা যায় যে, দুএকটি ব্যতিক্রম বাদে ফেস বুকের বন্ধুত্ব ফেসবুকেই সীমাবদ্ধ থাকে। ফেসবুকের প্রভাব সম্পর্কে এবার একটা বাস্তব প্রমাণ দিচ্ছি। আমার স্কুল সহপাঠী ছিলো জাহান। হঠাৎ সেদিন জাহানের সাথে আমার দেখা হলো। তাকে দেখে তো আমার চোখ একেবারেই ছানাবড়া। জাহান যেনো পুরো পাল্টে গেছে। যে চোখেতে পড়তো হাই পাওয়ার চশমা সেখানে আছে কালো সানগ্লাস। আমাকে দেখেই বলে, 'কিরে আব্দুস কেমন আছিস?' অনেকটা অপ্রস্তুতভাবে জবাব দিলাম।



অবাক হলাম এই জন্য যে, পুরো স্কুল জুড়ে যে মেয়েটির কোনো বন্ধু ছিলো না, আড্ডা ছিলো না, কারো সাথে কথা বলতো না, ছিলো পুরো আত্মকেন্দ্রিক। আর তার এতো পরিবর্তন! 'তো আব্দুস তোর গার্লফ্রেন্ডের খবর কী?' আমার তো বিস্ময়ের বোঝা বেড়ে গেলো, তবুও উত্তর দিলাম, আমার তো গার্লফ্রেন্ড নেই। কথাটা শোনার পর ওর যে কী হাসি। তারপর বললো, আচ্ছা তোর ফেসবুক আইডিটা দে। আমি অনেকটা লজ্জা পাওয়ার মতো বললাম, আমার ফেসবুক নেই।



আবার হাসি- তোর ফেসবুক নেই? - না নেই। এবার নিজকে নিয়ন্ত্রণ করে বললাম, তোর ফেসবুক আছে? সোজা উত্তর, হ্যাঁ, আছে। এবার আমি বিদ্রূপের সাথে বললাম, তোর ফেসবুকে বন্ধু আছে? কিন্তু অপ্রত্যাশিত তার উত্তরে আমি পুরো থ' হয়ে গেলাম। তার বন্ধুর সংখ্যা, এক হাজার আট শত চল্লিশ জন। ফেসবুকের এই বাস্তব প্রভাব দেখে আমি তো পুরোপুরি বোকা। বন্ধু বানানোর কারখানা শুধু যে ফেসবুক তা নয়, বন্ধু বানানোর আরো কারখানা আছে। তা হলো মোবাইল, ই-মেল, এসএমএস ইত্যাদি।



এগুলোর মাধ্যমে প্রতিনিয়তই বন্ধুত্বের পাল্লা ভারী হচ্ছে। কিন্তু আগের বন্ধুর মতো প্রকৃত বন্ধু এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না। প্রযুক্তির কল্যাণে এখন মানুষের বন্ধুর অভাব হয় না। অভাব হয় প্রকৃত বন্ধুর। যতোই আমরা প্রযুক্তির দিকে ধাবিত হচ্ছি, ততোই আমাদের মাঝে রোবটিকতা কাজ করছে। আর কমে যাচ্ছে প্রকৃত বন্ধু। সঙ্কুচিত হচ্ছে আমাদের আবেগ। 'গোলাপ যেমন একটি বিশেষ জাতের ফুল, বন্ধুও তেমন একটি বিশেষ জাতের মানুষ।'-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাস্তবিকভাবে একজন বন্ধুর কাছে একজন বন্ধুর অবস্থান এমনই হওয়া উচিত!!!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.