![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অনুষ্ঠান শুরুর আগেই কানায় কানায় ভরে উঠেছে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সম্মেলন কক্ষ। আত্মসত্তার কবি আবদুল হাই শিকদারের ৫৭তম জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষে এ অনুষ্ঠান। আয়োজন করেছে বাংলাদেশ নজরুল আবৃত্তি পরিষদ ও উত্সঙ্গ সৃজন চিন্তন। বিকাল ৪টা ১৫ মিনিটে জন্মদিনের কেক কেটে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন সমকালীন বাংলাভাষার শ্রেষ্ঠ কবি আল মাহমুদ। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। কবি আল মাহমুদ তার উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, আবদুল হাই শিকদারের কবিত্ব ও ব্যক্তিত্ব আমাদের সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
‘অন্তরে আর বাহিরে সমান নিত্য প্রবল হও/ যত দুর্দিন ঘিরে আসে, তত অটল হইয়া রও’—জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের অবিস্মরণীয় দুটি পঙিক্তকে স্লোগান করে ‘নিত্য প্রবল হও’ শিরোনামে সাম্রাজ্যবাদ, আধিপত্যবাদ, দুঃশাসন ও আগ্রাসনবিরোধী এ কবিতার আসরের আয়োজন করা হয়।
আবৃত্তিশিল্পী ও বাংলাদেশ নজরুল আবৃত্তি পরিষদের সভাপতি নাসিম আহমেদের সভাপতিত্বে কবিতার আসরটি সঞ্চালনা করেন উত্সঙ্গ সৃজন চিন্তনের পরিচালক কবি আহমদ বাসির।
সঞ্চালক তার সূচনা বক্তব্যে জানিয়ে দেন, কবি আবদুল হাই শিকদারের জন্মদিন এ অনুষ্ঠানের উপলক্ষ হলেও অনুষ্ঠানের মূল লক্ষ্য দুঃশাসনের বিরুদ্ধে রচিত পঙিক্তমালা উচ্চারণ করা এবং আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে সব আগ্রাসন ও নিপীড়নের অন্ধকারকে দূর করা।
কবি আল মাহমুদের উদ্বোধনী বক্তব্যের পর বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে কবিকে ফুল ও উপহার সামগ্রী দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর পর্ব শুরু হয়। বাংলাদেশ সংস্কৃতিকেন্দ্র, জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা, সাহিত্য সংস্কৃতি কেন্দ্র, সাংস্কৃতিক ঐক্যফ্রন্ট, জিয়া সাংস্কৃতিক সংগঠন, নাগরিক সংসদ, স্বাধীনতা ফোরাম, বাংলাদেশ প্রজন্ম একাডেমী, জিয়া সেনা, জিয়া নাগরিক ফোরাম, সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠী, রাইটার্স অব বাংলাদেশ, কিউবান দূতাবাস, ফররুখ গবেষণা ফাউন্ডেশন, সেন্টার ফর ন্যাশনাল কালচার, ডাকটিকিট, পতাকা বাংলাদেশসহ শতাধিক সংগঠন ও ব্যক্তি কবিকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এরপরই শুরু হয় আমন্ত্রিত কবিদের কবিতা পাঠ ও আবদুল হাই শিকদারের কবিতা থেকে আবৃত্তি। অনুষ্ঠানে কবিদের মধ্যে ফজল শাহাবুদ্দীন, কে জি মোস্তফা, হাসান হাফিজ, আসাদ বিন হাফিজ, শাহীন রেজা কবিতা পাঠ ও শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন।
কবি আল মাহমুদ তার বক্তব্যে আরও বলেন, আবদুল হাই শিকদারের কবিতা, তার বাচনভঙ্গী, বাগ্মিতা, সাহস আর রসিকতা আমাকে বহুদিন আগেই তার খুব কাছে নিয়ে গেছে। এ কবি আমার দীর্ঘদিনের অন্তরঙ্গ, তাকে আমি জানি, তার পরাক্রম উত্তরোত্তর বেড়েই চলবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আমি সব সময় শিকদারের সাফল্য কামনা করি।
কবি ফজল শাহাবুদ্দীন বলেন, শিকদারের কবিতা শুধু আমার প্রিয় নয়, আমার গৃহিণীরও প্রিয়। শিকদারের কবিতা কোনো কাগজে বেরুলে আমার গৃহিণীই আমাকে আগে জানিয়ে দেন।
কবি কে জি মোস্তফা আবদুল হাই শিকদারের সাহস ও শক্তির প্রশংসা করে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে কবির বিখ্যাত ‘কসম’ কবিতা আবৃত্তি করেন নাসিম আহমেদ ও শায়লা আহমেদ, শামীমা চৌধুরী ‘বৃক্ষমানুষ’, রহিমা আক্তার কল্পনা ‘সুন্দরবনগাথা’, শফিকুল ইসলাম বাহার ‘জ্যোতির্ময়’, মোহাম্মদ এমদাদ হোসেন ‘সাক্ষ্য দাও উচ্চারণ করো’, কাজী জান্নাতুন নাঈম শিমু ‘কে সিরাজদৌলা কে মীরজাফর’, অতন্দ্রিলা আহমেদ অন্তর ‘একদিন আমি’ ও মোহাম্মদ ইউসুফ আবৃত্তি করেন ‘আবদুল হাই শিকদার’ নামের কবিতা। আবৃত্তিশিল্পীরা সবাই কবি আবদুল হাই শিকদারের কবিতা আবৃত্তি করেন, নির্বাচিত কবিরা আবৃত্তি করেন স্বরচিত কবিতা। টানা তিন ঘণ্টার এ অনুষ্ঠান দারুণভাবে উপভোগ করেন উপস্থিত বিপুলসংখ্যক দর্শকশ্রোতা। অনুষ্ঠানে বারবার উচ্চারিত হয় নজরুলের পঙিক্ত দুটি।
কবি আবদুল হাই শিকদার তার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ‘আমি অভিভূত। আজকের অনুষ্ঠানের প্রাণবন্ততা ও স্বতঃস্ফূর্ততা দেখে আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।’ তিনি বলেন, ‘আমি খুবই সাধারণ একটি পরিবারে জন্মেছি। আমার আব্বা ছিলেন কৃষি অফিসার। ঢাকা থেকে ৫০০ কিলোমিটার দূরে আমার জন্ম। আমি আক্ষরিক অর্থেই কৃষক পরিবারের সন্তান। মওলানা ভাসানীর স্নেহ-ভালোবাসাই আমাকে এতদূর এগিয়ে দিয়েছে। আমার আব্বা-আম্মা দু’জনই ছিলেন মওলানার শিষ্য।’
কবি বলেন, ‘আমার কবিতা, আমার সকল আয়োজন যদি আমাদের মাতৃভূমির এক কণা দুঃখও দূর করতে পারে তাহলেই আমি নিজেকে সার্থক মনে করব।’ তিনি আধিপত্যবাদ, আগ্রাসন, দুঃশাসন ও রাজনৈতিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে কলম চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠান উপলক্ষে ‘নিত্য প্রবল হও’ নামে একটি চমত্কার শুভেচ্ছাপত্রও প্রকাশ করে আয়োজক সংগঠন দুটি।
©somewhere in net ltd.