![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
২০১২ সালে দেশের মঞ্চনাটকে অনেক অঘটন ঘটেছে। অঘটন ঘটন পটিয়সী বর্তমান মহাজোট সরকারের আমলে বিগত বছরের মঞ্চনাটকের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিকটি হচ্ছে ইতিহাস বিকৃতি, দ্বিতীয় উল্লেখযোগ্য দিকটি হচ্ছে কলকাতার নাট্যোত্সব ঢাকায় আমদানি আর তৃতীয় উল্লেখযোগ্য দিকটি হচ্ছে ‘দ্বিতীয় শ্রেণীর নাট্যকার’ রবীন্দ্রনাথের একাধিপত্য। এছাড়া বছরজুড়ে সর্বাধিক সংখ্যক নাট্যপ্রদর্শনী করেছে নাট্যসংগঠন স্বপ্নদল। বিগত বছরের মঞ্চনাটকের এই বিশেষ দিকগুলোতে আলোকপাত করেছেন আহমদ বাসির
২০১২ সাল ছিল বাংলাদেশের মঞ্চনাটকে ইতিহাস বিকৃতির মহড়ার বছর। মঞ্চনাটকে একের পর এক ঘটেছে ইতিহাস বিকৃতির মহড়া। ঐতিহাসিক ঘটনা ও ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের চরিত্র হননের মতো একাধিক ঘটনা ঘটেছে মঞ্চনাটকে। এমনিতেই ১৯৭১ সালের পর থেকে বাংলাদেশের মঞ্চনাটক উল্টোপথে যাত্রা শুরু করেছে। বাঙালি জাতীয়তাবাদের নামে এদেশের হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে পাশ কাটিয়ে শুরু হয়েছিল এই উল্টোযাত্রা। এরই ধারাবাহিকতায় বিগত বছরটি ছিল ইতিহাস বিকৃতির মহড়ার বছর।
ইতিহাস বিকৃতির ঘটনা ঘটেছে ‘রুদ্র রবি ও জালিয়ানওয়ালাবাগ’ নাটকে। এ নাটকটি প্রযোজনা করেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী। ১৫ ও ১৬ সেপ্টেম্বর জাতীয় নাট্যশালায় নাটকটির কারিগরি ও উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হয়। নাটকটি রচনা করেছেন মনজুরে মওলা, নির্দেশক ছিলেন আতাউর রহমান। এ নাটকে রবীন্দ্রনাথের ‘নাইটহুড’ খেতাব প্রত্যাখ্যানের ঘটনাটি তুলে ধরা হয়। নাটকে রবীন্দ্রনাথকে ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের মহানায়ক বানানোর চেষ্টা করা হয়। অথচ রবীন্দ্রনাথ প্রায় সারা জীবনই ব্রিটিশদের আনুকূল্য লাভে আগ্রহী ছিলেন। এমনকি তার ‘নাইটহুড’ খেতাব প্রত্যাখ্যানের পেছনে ব্রিটিশবিরোধী মনোভাব কার্যকর ছিল না। জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের মতো ভয়াবহ ঘটনায় সমগ্র ভারত বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল। রবীন্দ্রনাথ এই খেতাবপ্রাপ্তির প্রায় এক মাস পর তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এ কাজটি রবীন্দ্রনাথ স্বতঃস্ফূর্তভাবে করেছিলেন বলে জানা যায় না। বরং ঐতিহাসিক সূত্রগুলো বলে, বিক্ষুব্ধ ভারতীয় মানসের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ না করলে ভারতীয় কবি ভারতেই অপাঙক্তেয় হয়ে যেতে পারেন বলেই রবীন্দ্রনাথ এ কাজটি করেছেন এবং এ ব্যাপারে দেশপ্রেমিক ব্যক্তিত্ব তাকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, মহাবিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম সারাজীবন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের মোকাবিলা করেছেন, কারারুদ্ধ হয়েছেন, তার সম্পাদিত পত্রিকা নিষিদ্ধ হয়েছে, একের পর এক তার পাঁচটি গ্রন্থ নিষিদ্ধ করেছে ব্রিটিশ সরকার, নজরুল নিজে সেসব গ্রন্থ প্রকাশ করে নিজেই সেগুলো বিক্রির দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। অথচ তার এই নজিরবিহীন ঐতিহাসিক ভূমিকা নিয়ে কোনো মঞ্চনাটক প্রযোজনা করেনি শিল্পকলা একাডেমী। অথচ বছরটি ছিল ‘বিদ্রোহী’ কবিতার ৯০ বছর পূর্তির।
ইতিহাস বিকৃতির আরেকটি ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমীর যাত্রাপালা ‘ঈশা খাঁ’য়। এই যাত্রাপালাটি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিষয়ক বিভাগের ব্যবস্থাপনায় মঞ্চায়ন করা হয়। ১৭ অক্টোবর যাত্রাপালাটির মঞ্চায়ন হয় ঈশা খাঁর ঐতিহাসিক রাজধানী সোনারগাঁয়ের লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের খোলা চত্বরে। সোনারগাঁয়ের দর্শকরা সেদিন নাটকটিতে ইতিহাস বিকৃতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।
ঈশা খাঁর আমলে মুঘল সম্রাটের যুগে প্রজাদের ওপর পাশবিক নির্যাতনের কোনো প্রমাণ পাওয়া না গেলেও ঈশা খাঁ যাত্রাপালার রচয়িতা ভৈরবনাথ গঙ্গোপাধ্যায়, নির্দেশক মিলন কান্তি দে এভাবেই নাটকটি উপস্থাপন করেছেন। এ যাত্রাপালায় অদ্ভুতভাবে ইতিহাস বিকৃত করা হয়। বলা হয়, মুঘল সেনাপতি শাহ্বাজ খাঁ নাকি অত্যাচার-নির্যাতনে অতিষ্ঠ করে তোলে বাংলার জনপদ। অথচ ইতিহাসে এমন কোনো ঘটনার উল্লেখ নেই। কয়েকটি নাট্যদলের নিজস্ব প্রযোজনায়ও ঐতিহাসিক চরিত্র একইভাবে বিকৃত করা হয়। সুপরিচিত নাট্যদল প্রাঙ্গণেমোর গত বছর মঞ্চে এনেছে নতুন নাটক ‘আওরঙ্গজেব’। মুঘল সম্রাট আলমগীরকে নিয়ে এ নাটক। যে সম্রাটকে নিয়ে কবি কাজী কাদের নেওয়াজ লিখেছেন—‘আজি হতে চির উন্নত হল শিক্ষা গুরুর শির/সত্যি তুমি মহান উদার বাদশা আলমগীর’। সেই বাদশাহকেও নাটকে একেবারে ভিন্নভাবে তুলে ধরা হয়। বলা হয়, মসনদের লোভে তিনি তার বৃদ্ধ পিতাকে বন্দী করেছেন আর ভাইদের হত্যা করেছেন। অথচ ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, রাজ্য পরিচালনায় আলমগীরের অযোগ্য ভাইয়েরা বহুবার আলমগীরকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল আর তার মহান পিতা শাহজাহান জনগণের অর্থে নিজের আবেগের প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন ‘তাজমহল’ নির্মাণ করে। অন্যদিকে আলমগীর রাজকোষ থেকে নিজের জন্য অর্থ গওহণও বন্ধ করে দিয়েছিলেন যখন তিনি সম্রাটের আসনে আসীন হয়। তিনি সম্রাট হয়েও নিজের কায়িক শ্রমে পরিচালনা করেছেন সংসার, জনগণের অর্থে নয়। অভিজ্ঞ মহল বলছেন, আদর্শ পুরুষদের চরিত্র বিকৃত করার এটা একটা নতুন ষড়যন্ত্র।
ইতিহাস বিকৃতির সর্বশেষ ঘটনা ঘটানো হয়েছে ঢাকা থিয়েটারের নতুন নাটক ‘পঞ্চনারী আখ্যান’-এ। এ নাটকে প্রেমিক সম্রাট শাহজাহানকে নারী নির্যাতক হিসেবেই তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, মমতাজের মৃত্যুর জন্য সম্রাট নিজেই দায়ী। নাটকে এমনই অভিযোগ উঠে এসেছে স্বয়ং মমতাজের সংলাপ ও অভিব্যক্তিত্বে। অর্থহীন নারীবাদে আচ্ছন্ন নাটকটির একটি চরিত্র ‘মমতাজ’। নাটকে দেখানো হয়, জীবিত অবস্থায় ভালোবাসার নামধারী মহলে বন্দী ছিলেন মমতাজ। মৃত্যুর পরও মুক্তি মিলল না তার। আজও প্রেমের উপমা হিসেবে মমতাজের সমাধির উপর শাহজাহানের তৈরি তাজমহলকে তুলে ধরা হয়। এই ভ্রান্তিবিলাস থেকেও মুক্তি চান ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে আসা মমতাজ। এ নাটকটি গত ৩০ নভেম্বর সন্ধ্যা সাতটায় প্রথম মঞ্চস্থ হয় জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার হলে। নাটকটি রচনা করেছেন হারুন রশীদ, নির্দেশনা দিয়েছেন শহীদুজ্জামান সেলিম, নাটকে একক অভিনয় করেছেন রোজী সিদ্দিকী। এ নাটকে পর্দা প্রথাকে ব্যঙ্গ করা হয় আর নারীবাদের নামে সম্রাট শাহজাহানকে দোষারোপ করা হয়। প্রশ্ন উঠেছে, মমতাজের এই অভিব্যক্তি, এই বক্তব্য ঐতিহাসিকভাবে সত্য কিনা। যেখানে আধুনিক নারীবাদী তত্ত্বকে মমতাজের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে, সেখানে এমন প্রশ্ন ওঠা খুবই স্বাভাবিক।
এভাবেই একের পর এক ইতিহাস বিকৃতির ঘটনা ঘটেছে মঞ্চ নাটকে। ২০১২ সালকে সে কারণেই মঞ্চনাটকে ইতিহাস বিকৃতির মহড়ার বছর বলা যায়।
০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:৩১
আহমদ বসির বলেছেন: তা অবশ্য ঠিকই বলেছেন ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:০৯
মরু বালক বলেছেন: .
.
.
.
ক্ষমতার সাথে সাথে সব কিছুই ঘুরতে থাকে।
এটার জন্য কোন সুত্র আবিস্কারের প্রয়োজন হয় না।