![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবীটা বদলাক যুক্তির চর্চার দ্বারা। বিশ্বাসের ভাইরাস ছড়ানো এ দেশটা বদলে যাক...।
সব ক্ষমতা হাতে থাকার পরেও চ্যাম্পিয়ন দলকে ট্রফি দেয়ার লোভটা সামলাতে না পারায় আইসিসি'র চেয়ারম্যান ভারতীয় শ্রীনিবাসনকে দুষলো আনন্দবাজার। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদকীয়তে এটাকে ক্রিকেটের জন্য সবচেয়ে লজ্জার বিষয় বলে অভিহিত করা হয়েছে। বরং একে ক্রিকেটের স্বার্থরক্ষার বিরোধী, শ্রীনিবাসনের ব্যক্তিগত উচ্চাশা পূর্ণের অভিলাষ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ক্রিকেটের 'ভবিষ্যৎ রক্ষায়' চিন্তিত হয়ে গতকাল শনিবার বিষয়টি নিয়ে 'নিছক অভদ্রতা' শিরোনামে একটি সিরিজ সম্পাদকীয় প্রচার করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আনন্দবাজার পত্রিকা।
ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে সম্পাদকীয়তে বলা হয়, 'ক্রিকেট নামের খেলাটির ভবিষ্যৎ কী, সে বিষয়ে সংশয়ের অবকাশ আছে। অস্ট্রেলিয়া যতোই বিশ্বকাপ জয়কে নিয়ম বানিয়ে ফেলুক, খেলাটি এখন মূলত ভারতীয় উপমহাদেশের। সেই চারটি দেশের মধ্যে আবার নিছক বাজারের জোরেই ভারতের বাহুবল বিসদৃশ রকম বেশি। বিশ্বমঞ্চে সেই বাহুবল প্রদর্শনে ভারত কিছুমাত্র কুণ্ঠিতও নহে। কিন্তু, ভদ্রতা বস্তুটি যে এখনো বিলুপ্ত হয়নি, কথাটি মনে না রাখিলে মুশকিল। নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন এ কথাটি বেমালুম ভুলে গেছেন। বিজয়ী দলের হাতে বিশ্বকাপ তুলে দেয়ার সম্মানের মোহে তিনি কোনো নিয়মের তোয়াক্কা করেননি, ভদ্রতার মুখোশটুকুরও ধার ধারেননি।'
এমন অভদ্রতার জন্য শ্রী নিবাসনকে ভৎর্সনা করে বলা হয়, 'প্রথা অনুযায়ী, বিজয়ী দলের অধিনায়কের হাতে কাপ তুলে দেয়ার অধিকার ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক সংস্থা আইসিসির প্রেসিডেন্টের। সেই পদে ছিলেন বাংলাদেশের মোস্তফা কামাল। শ্রীনিবাসন সম্ভবত ভেবেছেন, তিনি উপস্থিত থাকতে বাংলাদেশের মতো অকিঞ্চিৎকর দেশের প্রতিনিধি এ সম্মান পাবেন, তা হতে পারে না। অতএব, কিছু কুযুক্তি খাড়া করে তিনি কামালের অধিকারটি ছিনিয়ে নিলেন, পুরস্কার প্রদানের গুরুদায়িত্ব নিজের কাঁধে নিলেন। মাঠে উপস্থিত দর্শকরা তাকে যে ভঙ্গিতে অভ্যর্থনা জানিয়েছে, তা উৎসাহব্যঞ্জক ছিলো না। কিন্তু শ্রীনিবাসন সম্ভবত দর্শকদের উষ্ণ অভ্যর্থনার অপেক্ষায় ছিলেন না। কাপ হাতে ছবি তুলেই তিনি খুশি।'
আইসিসি কোনো পাড়া বা মহল্লার ক্লাব না, এমন মন্তব্য করে ওই সম্পাদকীয়তে আনন্দবাজার জানায়, 'বাংলাদেশ, ভারত কোয়ার্টার ফাইনালে আম্পায়ারিং-এর মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা মোস্তফা কামালের উচিত হয়েছিলো কি না, তা ভিন্ন প্রশ্ন। অস্বীকার করার উপায় নেই, আইসিসি-র প্রেসিডেন্ট পদে থেকে এ কাজটি করা যায় না। যতক্ষণ তিনি এমন একটি পদে আসীন, তত ক্ষণ তার কোনো বক্তব্যই ব্যক্তিমাত্রের না, সেই পদের। তার নিকট বাক সংযম প্রত্যাশিত ছিলো। কিন্তু, শ্রীনিবাসন যে ভঙ্গিতে কামালের ভুলের বিচার করে শাস্তি বিধান করলেন, তা নিন্দার অতীত। আইসিসি কোনো পাড়ার ক্লাব না। তার সংবিধান আছে। কোনো পদাধিকারী অধিকারভঙ্গের কাজ করলে, তা সংবিধানের পথনির্দেশ মেনে স্থির করা বিধেয়। তার নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে। শ্রীনিবাসন প্রায় খাপ পঞ্চায়েত চালানোর ভঙ্গিতে কামালের বিচার সেরে ফেললেন। দেখা গেলো, তিনিই বাদীপক্ষের উকিল, তিনিই বিচারক। যেহেতু ক্রিকেটে ভারতের আর্থিক পেশিবল সবচেয়ে বেশি, তাই অন্য কোনো পক্ষ তার এই অগণতান্ত্রিক আচরণের প্রতিবাদও করলেন না। এতে শুধু শ্রীনিবাসনের ব্যক্তিগত উচ্চাশা পূর্ণ হইলো মাত্র। ক্রিকেটের স্বার্থরক্ষা হইলো না, আইসিসি-র সম্মানও বাঁচলো না।'
শ্রীনিবাসনের অতীত ঘেঁটে বলা হয়, 'অবশ্য, শ্রীনিবাসনের নিকট সম্ভ্রমজনক আচরণের প্রত্যাশা করার উপায়ও নাই। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরেও তিনি যে ভাবে ভারতের ক্রিকেট বোর্ডের ক্ষমতা আঁকড়ে ছিলেন, তার ফলে দেশের উচ্চ আদালতকে যে ভাষায় তাকে তিরস্কার করতে হয়েছে, তাতে স্পষ্ট, তিনি সম্মানের পরোয়া করেন না।'
শ্রীনিকে নিবারন করার আহ্বান জানিয়ে সম্পাদকীয়তে বলা হয়, 'এর মাধ্যমে আরেকবার প্রমানিত হলো, ক্ষমতাই তার একমাত্র কাম্য। তাকে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। ভারতের আর্থিক শক্তি বা আইপিএল এর আকর্ষণের কাছে নতিস্বীকার না করে আইসিসির সদস্যদের উচিত ছিলো, এই অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ করা। এ প্রতিবাদ ছাড়া ক্রিকেটকে বাঁচিয়ে রাখার আর কোনো পথ নাই।'
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ আর ভারতের মধ্যকার ওই ম্যাচে আম্পায়ারদের দেয়া কয়েকটি ভুল সিদ্ধান্ত সবচেয়ে বেশী বিতর্কের জন্ম দেয়। তার মধ্যে একটি ছিলো, রুবেলের একটি বলে রোহিত শর্মা ইমরুল কায়েসের তালুবন্দী হওয়ার পর আম্পায়াররা বলটিকে ‘নো’ কল করেন। অথচ টিভি'র রিপ্লেতে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিলো বলটা কোমরের নীচে ছিলো। আম্পায়ারদের পক্ষপাতমূলক এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সরব ছিলেন ক্রিকেটের সাবেক তারকারাসহ পুরো ক্রিকেট বিশ্ব। এমনকি ইন্ডিয়ান ক্রিকেটের সাবেক তারকারাও বিষয়টির প্রতিবাদ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
এমন বাজে আম্পায়ারিংকে ইচ্ছাকৃত আখ্যায়িত করে মোস্তফা কামাল আইসিসিকে 'ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল' বলে অভিহিত করেন।
তাদের এমন প্রতিবাদের পর এ প্রসঙ্গে আইসিসির তরফে রিচার্ডসন বলেছিলেন, 'নো বলের সিদ্ধান্তটি ছিলো ফিফটি, ফিফটি। এখানে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত এবং সেটার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা আবশ্যক।'
অন্যদিকে, ম্যাচ চলাকালে স্টেডিয়ামের বড় পর্দায় ভারতকে সমর্থনের আহ্বান জানিয়ে দেয়া বিজ্ঞাপনেরও সমালোচনায় পরে আইসিসি। এ ব্যাপারে আইসিসির প্রধান নির্বাহীকে তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি জানানো হলেও বিজ্ঞাপনটি তিনি বন্ধ করেননি।
অবশ্য, 'জোচ্ছুরি' করে কোয়ার্টার ফাইনালের গণ্ডি পেরুলেও সেমিফাইনালে 'বাংলাদোয়া'র ফলে করুণ পরিনতি নিয়ে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয় টিম ইন্ডিয়া।
এর জের ধরে প্রথা ভেঙ্গে বিশ্বকাপের ফাইনালে বিজয়ী দলকে ট্রফি দেন আইসিসির চেয়ারম্যান নারায়নস্বামী শ্রীনিবাসন। এরপর আইসিসির প্রেসিডেন্ট থেকে পদত্যাগ করেন বাংলাদেশের মোস্তফা কামাল।
এ বিষয়ে লেখকের আরেকটি লেখা পড়ুন: বিশ্বকাপে দূর্নীতির জেরে ছয়মাস নিষিদ্ধ ভারত, শাস্তি পেলেন 'আম্পায়ার'রাও, প্রধান নির্বাহীকে বহিস্কার করলো আইসিসি
আহসান কামরুল
০৫-০৪-২০১৫ খ্রি.
ঢাকা।
০৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৮:৪৮
আহসান কামরুল বলেছেন: 'অবশ্য, শ্রীনিবাসনের নিকট সম্ভ্রমজনক আচরণের প্রত্যাশা করার উপায়ও নাই। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরেও তিনি যে ভাবে ভারতের ক্রিকেট বোর্ডের ক্ষমতা আঁকড়ে ছিলেন, তার ফলে দেশের উচ্চ আদালতকে যে ভাষায় তাকে তিরস্কার করতে হয়েছে, তাতে স্পষ্ট, তিনি সম্মানের পরোয়া করেন না।'
ধন্যবাদ, মন্তব্য করার জন্য।
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১০
মিতক্ষরা বলেছেন: "বাংলাদেশ, ভারত কোয়ার্টার ফাইনালে আম্পায়ারিং-এর মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা মোস্তফা কামালের উচিত হয়েছিলো কি না, তা ভিন্ন প্রশ্ন। অস্বীকার করার উপায় নেই, আইসিসি-র প্রেসিডেন্ট পদে থেকে এ কাজটি করা যায় না। যতক্ষণ তিনি এমন একটি পদে আসীন, তত ক্ষণ তার কোনো বক্তব্যই ব্যক্তিমাত্রের না, সেই পদের। তার নিকট বাক সংযম প্রত্যাশিত ছিলো। কিন্তু, শ্রীনিবাসন যে ভঙ্গিতে কামালের ভুলের বিচার করে শাস্তি বিধান করলেন, তা নিন্দার অতীত। "
সম্পূর্ন একমত। কামালের হয়ত কিছু ভুল হয়েছে, কিন্তু তার উপরে যেরকম প্রতিশোধ নেয়া হয়েছে তা অতিশয় জঘন্য, নিন্দার অতীত।