![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবীটা বদলাক যুক্তির চর্চার দ্বারা। বিশ্বাসের ভাইরাস ছড়ানো এ দেশটা বদলে যাক...।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আজকের অনুষ্ঠানের স্নেহাস্পদ সভাপতি,
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে সারাদেশ থেকে আগত ছাত্রলীগের কাউন্সিলর, ডেলিগেট, বিভিন্ন স্তরের নেতা, কর্মীবৃন্দ, আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ, মন্ত্রীপরিষদের সহকর্মীবৃন্দ, আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, ছাত্রলীগের সাবেক নেতৃবৃন্দ, আসসালামু আলাইকুম।
সবাইকে জানাচ্ছি আমার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
এই সেই ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দি উদ্যান, যেখানে ১৯৭১ এর ৭ মার্চ লক্ষ জনতার সামনে দাড়িয়ে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বজ্রকন্ঠে উচ্চারণ করেছিলেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”। দীর্ঘ সাড়ে নয়মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম শেষে পরাজিত পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর এই সোহরাওয়ার্দি উদ্যানেই মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলো। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছিলাম স্বাধীনতা।
আজকের এই দিনে আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে, বাঙালি জাতি হিসাবে বিশ্বসভায় মর্যাদা পেয়েছে, সেই নেতা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্মদান আর দু’লক্ষ মা, বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন স্বদেশ। আজ ছাত্রলীগের কাউন্সিলে আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে তাদের অবদানকে স্মরণ করছি। গভীর সহমর্মিতা জানাচ্ছি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাসহ শহীদ পরিবারের সদস্যদের প্রতি যারা বয়ে বেড়াচ্ছেন স্বজন হারানোর বেদনা।
স্মরণ করছি সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিকসহ ভাষা আন্দোলনের সব শহীদকে।
স্মরণ করছি ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জেলখানায় নিহত চার জাতীয় নেতা, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামারুজ্জামানকে যারা মুক্তিযুদ্ধকালীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার পরিচালনা করে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জন করেছিলেন।
স্মরণ করছি ১৯৭৫ সালের পনেরো আগস্ট কালরাতে ঘাতকের নির্মম বুলেটে নিহত জাতির পিতার সহধর্মিণী, আমার মা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর পুত্র, ছাত্রলীগ নেতা, আবাহনীর প্রতিষ্ঠাতা, মুক্তিযুদ্ধকালীন বীর সেনা কর্মকর্তা শেখ কামাল, বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় পুত্র, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল, জাতির পিতার কনিষ্ঠ পুত্র শিশু শেখ রাসেল, বঙ্গবন্ধুর দুই নবপরিণীতা পুত্রবধু সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, কৃষক নেতা আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মণি, তার স্ত্রী বেগম আরজু মণি, ছোট্ট শিশু সুকান্ত বাবু, আরিফসহ সকলকে। স্মরণ করছি শহীদ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিলকে যিনি বঙ্গবন্ধুর জীবন বাঁচাতে নিজের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন।
স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের দীর্ঘ পদযাত্রায় অসংখ্য নেতা কর্মী জীবন দিয়ে, রক্ত দিয়ে, ঘাম, শ্রম ও মেধা দিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠনে পরিণত করেছেন। তাদের সবার প্রতি আমার বিনম্র শ্রদ্ধা।
গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি গণতান্ত্রিক সংগ্রামের সকল শহীদদের। স্মরণ করছি ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় শহীদ আইভী রহমানসহ ২২ নেতাকর্র্মীকে সমবেদনা জানাচ্ছি আহতদের প্রতি যারা অনেকেই এখন পঙ্গুত্বের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছেন।
স্মরণ করছি সাবেক অর্থমন্ত্রী এসএএমএস কিবরিয়া, আহসানউল্লাহ মাস্টার এমপি, সাবেক এমপি মমতাজউদ্দিনসহ বিএনপি, জামাত জোটের দুঃশাসনে নিহত ২১ হাজার নেতা-কর্মীকে।
জাতির পিতা বলেছিলেন, 'ছাত্রলীগের ইতিহাস, বাঙালির ইতিহাস।'
দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে বৃটিশ শাসনের অবসান ঘটিয়ে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়, যা ছিলো ১২ শত মাইলের ব্যবধানের দুটি অংশ নিয়ে গড়ে উঠা। এই রাষ্ট্রের মানুষের ভাষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, জীবনযাত্রা এবং রাজনৈতিক দর্শনে ব্যাপকভাবে ছিলো ভিন্নতা। যদিও পাকিস্তান সৃষ্টিতে সব থেকে বেশী অবদান ছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানী বাঙালি মুসলমানদের। জনসংখ্যার দিক থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এই অঞ্চলেরই ছিলো। কিন্তু রাষ্ট্রগঠনের পর দেখা গেলো সংখ্যালঘু অংশ অর্থাৎ পশ্চিম পাকিস্তানীদের দ্বারা শোষিত বঞ্চিত ও নির্যাতিত হতে থাকলো বাঙালিরা। এমনকি বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়ে উর্দূকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা দেয়ার অপচেষ্টা করা হলো।
একটা জাতিকে ধ্বংস করে তার স্বকীয়তা কেড়ে নেয়ার চেষ্টা, বিজাতীয় ভাষা ও সংস্কৃতি চাপিয়ে দেয়াই ছিলো মূল উদ্দেশ্য। সেই সাথে শোষণ বঞ্চনার শিকার হতে থাকলো বাঙালিরা। বাংলার সম্পদ লুট করে বাঙালিকে গোলাম করে রাখার চেষ্টা করা হলো।
বাঙালি জাতিসত্ত্বা ও অস্তিত্ব রক্ষা এবং মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদানের সংগ্রাম শুরুর উদ্দেশ্য নিয়ে তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র তরুণ নেতা শেখ মুজিবের হাতেই গড়ে ওঠে ছাত্রলীগ। ১৯৪৮ সালের ৪ঠা জানুয়ারী ছাত্রলীগ গঠন করে অন্যান্য ছাত্র সংগঠন ও তমদ্দুন মজলিশসহ সকলকে নিয়ে মাতৃভাষা সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলেন। বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদা আদায়ের আন্দোলনের সূচনা করেন ১১ই মার্চ কর্মসূচী পালনের মধ্য দিয়ে। সেই থেকে যাত্রা শুরু, বাঙালির প্রতিটি অর্জনের সাথে ছাত্রলীগের অবদান জাতি চিরদিন কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করবে। কারণ প্রতিটি অর্জনেই রয়েছে ছাত্রলীগ কর্মীদের আত্মত্যাগের ইতিহাস। ভাষা সংগ্রাম থেকে স্বাধীনতা সবক্ষেত্রেই ছাত্রলীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।
১৯৫৪ সালের নির্বাচনে সারাদেশে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ সরকারের অন্যায়, অবিচারের বিরুদ্ধে যুক্তফ্রন্টের পক্ষে জনমত গড়ে তোলে ছাত্রলীগ।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ স্বাধিকার আন্দোলনের চালিকাশক্তি ছিলো ছাত্রলীগ। সামরিক শাসক আইয়ুব খানের গণবিরোধী শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ গড়ে তোলে ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ১৯৬৬ সালে বাঙালির মুক্তিসনদ ৬ দফা ঘোষণার পর ৬ দফার পক্ষে দেশব্যাপী ছাত্র, গণআন্দোলনে মূল ভূমিকা পালন করে ছাত্রলীগ। ৬ দফার পাশাপাশি ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা কর্মসূচীর ভিত্তিতে দেশজুড়ে যে আন্দোলন গড়ে তোলে তারই প্রেক্ষিতে সংঘটিত হয় ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান। ছাত্র, জনতা রক্তের বিনিময়ে মুক্ত করে আনে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় কারারুদ্ধ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে।
বঙ্গবন্ধু যখন জেলখানায় বন্দী থাকতেন, তখন আমার মা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবই ছিলেন ছাত্রলীগের অভিভাবক।
আমি গর্বিত। আমি ছাত্রলীগের একজন কর্মী ছিলাম। ছাত্রলীগের একজন কর্মী হিসাবে, তৎকালীন ইডেন ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজের (বর্তমানে বদরুন্নেসা কলেজের) ভিপি এবং পরবর্তীতে রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদস্য হিসেবেই আমার রাজনীতির সূচনা।
১৯৭০ এর নির্বাচনে দেশব্যাপী প্রচারাভিযানে নেতৃত্ব দেয় ছাত্রলীগ। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অর্জন করে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা।
বাংলাদেশ যতোদিন থাকবে, ততোদিন আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে ছাত্রলীগের ভূমিকা স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোনো ছাত্র সংগঠন নেই যারা একটি দেশকে জাতীয় পতাকা উপহার দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ছাত্রলীগই স্বাধীন বাংলার পতাকা উপহার দিয়েছে। শুধু তাই নয়, ছাত্রলীগের হাজার হাজার নেতা, কর্মী আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন বিসর্জন দিয়ে ছিনিয়ে এসেছে মুক্তির লাল সূর্য।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে স্বাধীন স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনের কাজে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিলেন। যুদ্ধ, পরবর্তী বাংলাদেশে কোনো যোগাযোগ ব্যবস্থা বা অবকাঠামো ছিলো না। সমস্ত দেশকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছিলো। ব্যাংকে কোনো বৈদেশিক রিজার্ভ ছিলো না, কারেন্সি নোট ছিলো না। অফিস, আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সব ছিলো বিধ্বস্ত।
বঙ্গবন্ধু দ্রুততার সাথে যুদ্ধবিধ্বস্ত ব্রিজ, কালভার্ট, সড়ক, রেলপথ, স্কুল, কলেজ, অফিস, আদালত পুননির্মাণ ও মেরামতের ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের মাইন অপসারণ করে বন্দর দুটিকে ব্যবহার উপযোগী করেছিলেন। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন, বীরাঙ্গনাদের পুনর্বাসনের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। এক কোটিরও বেশী শরণার্থী, ৩ কোটি গৃহহারা মানুষের পুনর্বাসন করেছিলেন।
তিন মাসের মধ্যে মিত্রবাহিনীকে ভারতে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন, যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল ঘটনা। বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি প্রতিষ্ঠা করে বঙ্গবন্ধুই একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনীর ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। স্বাধীনতার দশ মাসের মধ্যে জাতিকে সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন যা আজও সারা পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ একটি লিখিত সংবিধান হিসেবে স্বীকৃত হয়ে আসছে।
বঙ্গবন্ধুর সরকারই দেশে একটি সার্বজনীন ও বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষানীতি দিয়েছিলেন। মেয়েদের জন্য শিক্ষা অবৈতনিক করেছিলেন। মাদ্রাসা বোর্ড গঠন করে মাদ্রাসা শিক্ষাকে আধুনিককায়ণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। মদ, জুয়া, হাউজি, ঘোড়দৌড় নিষিদ্ধ করে যুবসমাজের অবক্ষয় রোধ করেছিলেন।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে অর্ডিনেন্স জারি করে ১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আইন করেছিলেন। যে সমস্ত স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীরা হত্যা, ধর্ষণ, লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগের সাথে জড়িত ছিলো তাদের বিচার শুরু হয়েছিলো। গোলাম আযমসহ কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীদের অনেকেরই নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছিলো। ১১ হাজারেরও বেশি যুদ্ধাপরাধী কারাগারে আটক ছিলো।
বঙ্গবন্ধু সরকারের সময়েই বাংলাদেশ জাতিসংঘ, কমনওয়েলথ ও ওআইসির সদস্যপদ লাভ করে এবং পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের স্বীকৃতি অর্জন করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু স্বাধীনতা দেননি, ১৯৭৪ সালে সমুদ্রসীমা নির্ধারণেরও উদ্যোগ নেন। টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম আইন করেছিলেন। তখন দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে আর কেউ এ আইন করেনি। এমনকি জাতিসংঘ ১৯৮২ সালে এ আইন করে।
জাতির পিতার সেই দূরদর্শিতার ধারাবাহিকতায় আমরা মায়ানমার ও ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করেছি। সমুদ্রে ১ লক্ষ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিমি টেরিটোরিয়াল এলাকায় বাংলাদেশের নিরঙ্কুশ অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর সরকারই অপদখলীয় জায়গা ফিরিয়ে আনতে ভারতের সাথে স্থলসীমান্ত প্রটোকল স্বাক্ষর করে। ১৯৭৪ সালে ইন্দিরা, মুজিব চুক্তি করা হয়। চুক্তি বাস্তবায়নে ১৯৭৪ সালের ২৮ নভেম্বর সংবিধান সংশোধণ করে আইন পাশ করা হয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যারা ক্ষমতায় ছিলো, তারা কেউই এ সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেয়নি। দীর্ঘ ৪১ বছর পর ভারতের সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে স্থল সীমান্ত বিল পাশ হয়েছে। দুই দেশের ৫২ হাজার ছিটমহলবাসীর ৬৮ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটেছে। ভারতের সঙ্গে ছিটমহল বিনিময়ে ১০ হাজার ৫০ একর জমি বাংলাদেশের ভূখন্ডে যোগ হচ্ছে।
জাতির পিতার অবিসংবাদিত নেতৃত্বে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ যখন ঘুরে দাড়াচ্ছিলো, তখনই দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীরা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাকে স্বপরিবারে হত্যা করে। এ হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে ধ্বংস করার চেষ্টা হলো স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে।
বন্দুকের নল দিয়ে রাতের অন্ধকারে ক্ষমতা দখল করে সেনাছাউনিতে বসে দলছুট রাজনীতিবিদদেরর নিয়ে দল গঠনের যে অশুভ সংস্কৃতি সেনাশাসক জিয়া শুরু করেছিলো, তা দীর্ঘ ২১ বছর জাতির উপর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছিলো। অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী প্রতিটি সরকারের একমাত্র কাজ ছিলো জনগণকে শোষণ করে অবৈধ সম্পদ কুক্ষিগত করা, মানুষের অধিকার হরণ করা, রাজনীতিকে কলুষিত করা।
এই অন্ধকারের ২১ বছরে পরিকল্পিত উপায়ে আমাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি ও ইতিহাসকে ধ্বংসের এবং তরুণ প্রজন্মের চরিত্র হননের চেষ্টা করা হয়েছে।
ছাত্ররাজনীতির গৌরবময় ধারাকে ধ্বংস করেছিলো সেনাশাসক জিয়া। সাতখুনের মামলার আসামীকে জেল থেকে ছেড়ে দিয়েছিলো। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করায় জিয়ার নির্দেশে গুম করা হয় ঢাকা নগর ছাত্রলীগ নেতা মাহফুজ বাবুকে। বঙ্গবন্ধু হিজবুল বাহার জাহাজে করে হাজিদের হজ্ব করতে পাঠাতেন। জিয়া এটাকে প্রমোদতরী করেন এবং হিজবুল বাহারে ভ্রমনের নামে মেধাবী ছাত্রদের হাতে তুলে দেন অবৈধ অস্ত্র ও অর্থ। যুবসমাজের সামনে যাত্রা ও প্রদর্শনীর নামে অশ্লীলতার আমদানি করেছিলো খুনি শাসক জিয়া।
তারই ধারাবাহিকতায় ছাত্রদল কর্মী মামুন, মাহমুদকে হত্যা করে যে ব্যক্তি পানির ট্যাংকে লাশ লুকিয়ে রেখেছিলো, সেই ইলিয়াস আলীকে খালেদা জিয়া ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক করেছিল। ২১ আগষ্টের গ্রেনেড হামলার আসামি উপমন্ত্রী সালাম পিন্টু ও জঙ্গী তাজুদ্দিনের ছোটভাইকে করেছিলো ছাত্রদলের সভাপতি।
এই স্বৈরশাসকেরা দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্র বানানোর চেষ্টা করেছে। ইনডেমনিটি জারি করে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রক্ষা করেছে, বিদেশে মিশনে চাকরি দিয়ে পুনর্বাসন করেছে। যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানি নাগরিক গোলাম আযমকে দেশে ফিরিয়ে এনে, স্বাধীনতাবিরোধী শাহ্ আজিজকে মন্ত্রী বানিয়ে জিয়া প্রমাণ করেছে, সে কখনোই স্বাধীনতায় বিশ্বাস করতো না। জিয়ার সময়েই কারাগার থেকে ১১ হাজার স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার, আলবদরকে ছেড়ে দেয়া হয়।
পরবর্তীতে তার স্ত্রী, বর্তমানের বিএনপি'র নেত্রী সরকার গঠন করে যুদ্ধাপরাধী নিজামী ও মুজাহিদকে মন্ত্রী বানিয়ে তাদের গাড়িতে উপহার দেয় লক্ষ শহীদের রক্তে ভেজা জাতীয় পতাকা। বঙ্গবন্ধুর খুনি কর্নেল রশীদ ও হুদাকে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনে এমপি বানিয়ে তিনি প্রমাণ করেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সাথে তার সম্পর্ক এবং এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জিয়া জড়িত।
ভাই ও বোনেরা,
• দীর্ঘ একুশ বছর পর ১৯৯৬ সালে জনগণের রায়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের পাঁচ বছরে সৃষ্টি হয়েছিলো সাফল্যের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস।
• মাত্র পাঁচ বছরে বাংলাদেশ খাদ্যে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন করে। দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে স্থিতিশীল থাকে। মূল্যস্ফীতির হার ১.৫৯ শতাংশে নেমে আসে। প্রবৃদ্ধির হার ৬.২ শতাংশে উন্নীত হয়।
• গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি, ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা অর্জন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যপদ লাভ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে নতুন মর্যাদার আসনে অভিষিক্ত করে। দারিদ্র্য বিমোচনে সামাজিক নিরাপত্তায় উদ্ভাবনী কর্মসূচি গ্রহণের ফলে দারিদ্র্য হ্রাসের বার্ষিক গড় হার ০.৫০ শতাংশ থেকে ১.৫০ শতাংশে উন্নীত হয় এবং মানব দারিদ্র্য সূচক ৪১.৬ থেকে ৩২ শতাংশে নেমে আসে।
• মানব উন্নয়ন সূচকে জাতিসংঘের ৫৬ পয়েন্ট অর্জন, সাক্ষরতার হার ৬৫ শতাংশে উন্নীতকরণ, শিক্ষানীতি প্রণয়ন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সেশনজট দূরীকরণ ছিল জাতির অগ্রগতির পরিচায়ক।
• বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অর্জিত হয় বিস্ময়কর সাফল্য। মাত্র পাঁচ বছরে বিদ্যুৎ ও গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধি ও আহরণের ব্যবস্থা, যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন, ৬২ হাজার কিলোমিটার কাঁচা, পাকা রাস্তা এবং ১৯ হাজার সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করে আমাদের সরকার দেশে ভৌত অবকাঠামোর ভিত্তি রচনা করে।
• ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের পাঁচ বছরে দেশে ছোট, বড় প্রায় ১ লাখ ২২ হাজার শিল্পকারখানা স্থাপিত হয়। বেসরকারি উদ্যোগকে সুযোগ দিয়ে লাখ লাখ বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়।
• সরকারি উদ্যোগে প্রতি ৬ হাজার মানুষের জন্য ১টি করে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের পাশাপাশি চিকিৎসার যন্ত্রপাতির ওপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহার করে বেসরকারি খাতে হাসপাতাল ও ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়।
• মনোপলি ভেঙে দিয়ে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার মোবাইল মাত্র ২ হাজার টাকায় মানুষের হাতে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা, শুল্কহার কমিয়ে কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তিকে সবার জন্য অবারিত করে দেয়া হয়।
• কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল, বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচার, জেলহত্যার বিচার প্রক্রিয়া শুরু এবং আইন সংস্কার কমিশন গঠন প্রভৃতির মাধ্যমে আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
• নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় গ্রহণ করা করা বহুবিধ পদক্ষেপ। দেশকে পুনরায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারায় ফিরিয়ে আনা হয়, বাঙালি সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধের গৌরবকে পুনরুজ্জীবিত করতে নেয়া হয় বিভিন্ন পদক্ষেপ।
• আওয়ামী লীগের পাঁচ বছরের শাসনকালে ঘুরে দাড়িয়েছিলো বাংলাদেশ। অমিত সম্ভাবনার দেশ হিসেবে বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিলো। বাংলাদেশের মানুষের জন্য এই পাঁচ বছর স্বর্ণযুগ হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
ছাত্রলীগের প্রিয় নেতা, কর্মীবৃন্দ,
২০০১ সালে কারচুপির নির্বাচনে জনগণের ভোট কেড়ে নিয়ে বিএনপি, জামাতের জোট রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে। নির্বাচনের রাত থেকেই শুরু করে আওয়ামী লীগ নিধন অভিযান। দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের নেতা, কর্মীদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়।
শুধুমাত্র নৌকায় ভোট দেয়ার অপরাধে ভোলার চর অন্নদা প্রসাদ গ্রামে এক রাতে শতাধিক নারী ও শিশুকে ধর্ষণ করা হয়। গফরগাঁওয়ে আওয়ামী লীগ কর্মীর ভিটাবাড়ি কেটে পুকুর বানানো হয়। বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর, বরিশাল, নড়াইল, পাবনা, সিরাজগঞ্জসহ সারাদেশে হত্যা, ধর্ষণ, শিশু নির্যাতন, দখল, মামলা, হামলা ও নির্যাতন ছিল নিত্যদিনের ঘটনা।
সারাদেশের ছাত্রলীগ কর্মীদের উপর নেমে আসে অত্যাচারের ষ্টীমরোলার। শত শত ছাত্রলীগ কর্মীকে গুলি করে, চাপাতি দিয়ে হাত, পায়ের রগ কেটে, হাতুড়ি দিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। টেন্ডারবাজি নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত ছাত্রদলের গুলিতে নিহত হয় বুয়েটের মেধাবী ছাত্রী সনি। বাবার কোলে শিশু নওশীন ছাত্রদলের সন্ত্রাসীদের গুলিতে মারা যায়।
বিএনপি, জামাতের জোট ক্ষমতাকে ব্যবহার করে দুর্র্নীতি, লুটপাট, স্বজনপ্রীতি, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ লালনের উদ্দেশ্যে। তাদের অপকর্মের কারণে বাংলাদেশ বারবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী হয়েও বিএনপি'র নেত্রী ও তার ছেলেরা জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা করেন।
তার ছেলেরা আন্তর্জাতিকভাবে দুর্নীতিবাজ ও অর্থপাচারকারী হিসেবে কুখ্যাতি অর্জন করেছে। আমেরিকা, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার আদালতে এদের দুর্নীতির বিচার হয়েছে। সিঙ্গাপুরের আদালতের নির্দেশে সে দেশের সরকার বিএনপি'র নেত্রীর ছোট ছেলের পাচার করা অর্থ ফেরত দেয়া শুরু করেছে। প্রশাসন, সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ বাহিনী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাবলিক সার্ভিস কমিশন এমনটি সর্বোচ্চ আদালতও বিএনপি, জামাতের জোটের দলীয়করণের শিকার হয়েছিলো।
রাজনৈতিক প্রতিহিংসাই ছিলো বিএনপি, জামাতের একমাত্র নীতি। সাবেক অর্থমন্ত্রী, সংসদ সদস্য এসএএমএস কিবরিয়া, সংসদ সদস্য আহসানউল্লাহ মাস্টার, সাবেক সংসদ সদস্য মমতাজউদ্দিন, খুলনার আওয়ামী লীগ নেতা মঞ্জুরুল ইমামসহ হাজার হাজার নেতা, কর্মীকে হত্যা করেছে। ১৬ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালার অশেষ রহমতে আমি প্রাণে বেঁচে গেলেও জীবন দিতে হয় আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগের ২২ নেতা, কর্মীকে। পাঁচ শতাধিক নেতা, কর্মী আহত হন। তাদের অনেককেই সারাজীবন পঙ্গুত্বের অভিশাপ নিয়ে চলতে হবে। আজ তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, এই গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল খালেদা জিয়ার এক উপমন্ত্রী, যার এক ভাই জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জেহাদের নেতা।
বিএনপি, জামাত জোটের পাঁচ বছরে খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম জনগণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। জোট সরকার ও হাওয়া ভবনের পৃষ্ঠপোষকতায় খাদ্য সন্ত্রাসী সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে। আওয়ামী লীগ আমলের তুলনায় দ্রব্যমূল্য ১০০ থেকে ২০০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। মুদ্রাস্ফীতির হার আওয়ামী লীগ আমলের ১.৫৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। গড় প্রবৃদ্ধির হার ৫.৬ শতাংশ থেকে কমে দাড়ায় ৫.১ শতাংশে। নতুন করে দরিদ্র হয় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ। বাড়ে ধন বৈষম্য। দেশি, বিদেশি বিনিয়োগ হ্রাস পায়।
জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা এ দুঃশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। আমাদের বিশ্বাস ছিলো, জনগণ যদি একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের রায় প্রদান করতে পারে, তবে তারা এত বেশি অন্যায়কারী, জনগণকে প্রতারিত করা বিএনপি, জামাত জোটকে কোনো অবস্থাতেই রায় দেবে না।
সে কারণেই তারা জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার ষড়যন্ত্র শুরু করে। ভোটার তালিকায় ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটারের নাম অন্তর্ভুক্ত করে। শুধুমাত্র প্রধান বিচারপতির অবসরের বয়সসীমা বাড়িয়ে তাদের অনুগত ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করার অপচেষ্টা করে। জনগণ এই নীল নকশা মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে দলীয়করণের বিরুদ্ধে মানুষ রাজপথে নেমে আসে।
জনগণের আন্দোলনকে দমন করতে বিএনপি, জামাত আশ্রয় নেয় হত্যা, সন্ত্রাস ও দমননীতির। বিএনপি, জামাতের সন্ত্রাসীরা ঢাকায় প্রকাশ্য রাজপথে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করে। জামাতের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা পুলিশের ছত্রছায়ায় আন্দোলনকারী জনতার ওপর হামলা চালায়। প্রকাশ্যে নির্দেশ দেয় “বৃষ্টির মতো গুলি কর, মরলে শহীদ, বাঁচলে গাজী”। নিরস্ত্র জনতার প্রবল প্রতিরোধের মুখে সন্ত্রাসীরা পিছু হটতে বাধ্য হয়। আন্দোলনের চাপে কেএম হাসান প্রধান উপদেষ্টার পদ গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করে। বিএনপি, জামাতের রাষ্ট্রপতি মরহুম ইয়াজউদ্দিন আহমদ সংবিধান লঙ্ঘন করে নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হয়ে কারচুপির নির্বাচন করার পদক্ষেপ গ্রহন করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টারা বারবার পদত্যাগ করেন। ফলে জাতীয় সংকট সৃষ্টি হয়।
একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যর্থ হয়ে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদ দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেন, নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল বাতিল করেন। নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচন কমিশন পুনগর্ঠন করে। ছবিসহ ভোটার লিষ্ট এবং আইডি কার্ড করার উদ্যোগ গ্রহণ করে।
কিন্তু একটি স্বার্থন্বেষী মহল বাংলাদেশে যাতে গণতান্ত্রিক ও নির্বাচিত সরকার না আসতে পারে সেজন্য ষড়যন্ত্র শুরু করলো। শুরু হলো দল ভাঙ্গা, গড়ার খেলা। যারা কোনোদিন জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসতে পারবে না, অথচ ক্ষমতা দখলের লোভ আছে সেইসব লোকদের ক্ষমতায় আনার চেষ্টা করা হলো।
অসুস্থ পুত্রবধু ও সন্তান সম্ভবা কন্যাকে দেখতে বিদেশ যাওয়ার পর আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হলো। আমি দেশে ফিরে এসে মিথ্যা মামলার মোকাবিলা করতে চাইলাম। তারা আসতে বাধা দিলো। মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা থাকার পরেও আমি দেশে আসার পদক্ষেপ নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষ থেকে সমস্ত এয়ারলাইন্সকে জানিয়ে দেয়া হলো, যাতে আমাকে নিয়ে ঢাকায় না আসে। ওয়াশিংটন থেকে লন্ডনে এলাম। লন্ডন থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে প্লেনে উঠতে দেয়া হলো না। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ করলাম। প্রবাসী বাঙালি, আন্তর্জাতিক নেতৃত্ব এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়া আমার পাশে এসে দাড়ালো। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসমূহ আমার দেশে ফেরার পক্ষে জনমত গঠন করলেন। আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা। আমি মুসলমান। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ছাড়া আমি আর কারও কাছে মাথা নত করিনি, করব না। তাই সকল হুমকিকে উপেক্ষা করে আমি দেশে ফিরে এলাম। এরপরে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই বিনা ওয়ারেন্টে আমাকে গ্রেফতার করা হয়।
আমার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দেয়া হয়। নির্জন সাব-জেলে মাসের পর মাস বন্দী রাখা হয়। বিশেষ আদালতে অনেক মামলা চালু করলেও আমাকে আমার আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে দেয়া হয়নি। রোদ, ঝড়, বৃষ্টি ও নিরাপত্তা বাহিনীর হুমকিকে উপেক্ষা করে দিনের পর দিন সাব-জেল ও আদালতের সামনে উপস্থিত থেকে অনেকেই আমাকে মনোবল ও সাহস যুগিয়েছেন। তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে আমার মুক্তির দাবিতে স্বাক্ষর অভিযান পরিচালিত হয়। জরুরি অবস্থাকে উপেক্ষা করে শুধু ঢাকা শহরে ২৫ লাখ মানুষ আমার মুক্তির দাবিতে স্বাক্ষর করেন।
এ সময়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ পালন করে সাহসী ভূমিকা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র, ছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা তীব্র আন্দোলনের সূচনা করেন। গ্রেফতার ও নির্যাতনের শিকার হন। তাদের এই বলিষ্ঠ ভূমিকা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সহায়ক হয়।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগের পক্ষে, মহাজোটের পক্ষে, নৌকার পক্ষে বিপুল ম্যান্ডেট দেয়। এই রায়ের মাধ্যমে আমাদের প্রতি মানুষ বিশেষ করে নারী ও তরুণ ভোটারদের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটে। ২০২১ সাল বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। ২০২০ সাল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে সামনে রেখে আমরা নির্বাচনী ইশতেহারে ‘রূপকল্প ২০২১’ ঘোষণা করেছিলাম।
আমরা বলেছিলাম, ভোটারদের রায় পেলে আমরা একটি উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলব। যেখানে প্রতিটি মানুষ স্বচ্ছল এবং সুন্দর জীবন পাবে। বলেছিলাম, ২০২১ সালের মধ্যে আমরা এমন একটি উন্নত দেশ গড়ে তুলতে চাই, যেখানে থাকবে না ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও অশিক্ষার অন্ধকার। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে।
পাঁচবছর সফলভাবে দেশ পরিচালনার পর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটে আমরা টানা দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠনের সুযোগ পাই।
• এই সাড়ে ছয়বছরে মানুষের জীবনমান উন্নত হয়েছে, আয় ও ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে, মানুষ তাদের আস্থা ও আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছে। আমাদের অর্থনীতি আজ স্থিতিশীল ও শক্তিশালী। অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ অবস্থানে বাংলাদেশ।
• সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দায় ২০০৯ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত বিশ্ব অর্থনীতি, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরো অঞ্চলসহ অনেক উন্নত দেশের প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশের নীচে, সেখানে আমাদের গড় প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের উপরে। আমরা এবারও ৬.৫১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হয়েছি।
• বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের মতে, বাংলাদেশের অর্থনীতি এক বছরের ব্যবধানে ৫৮তম স্থান থেকে ১৪ ধাপ এগিয়ে এখন ৪৪তম অবস্থানে। ক্রয়ক্ষমতার সমতা ভিত্তিতে বাংলাদেশ ২০১৩ সালের ৩৬তম অবস্থান থেকে তিন ধাপ এগিয়ে ২০১৫ সালে ৩৩তম অবস্থানে এসেছে।
• আমাদের মাথাপিছু আয় দ্বিগুণের বেশী বেড়ে হয়েছে ১ হাজার তিনশ ১৪ ডলার। বিএনপি'র আমলে ছিলো মাত্র ৫৪৩ ডলার। একসময়ে যে বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলা হতো, সেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বব্যাংকের স্বীকৃতি অনুযায়ী নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্য আয়ের দেশে পদার্পণ করেছে।
• আমরা স্বপ্ন দেখেছি এবং স্বপ্নপূরণে কাজ করেছি বলেই দেশ নিম্ন মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। ইনশাল্লাহ ২০২১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ উচ্চ মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হবে।
• দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ৩ কোটি ৮৩ লক্ষ ৪৩ হাজার মেট্রিক টনের বেশী খাদ্যশস্য উৎপাদন হচ্ছে।
• ১৪৫ টি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাধ্যমে মানুষকে বিভিন্ন ভাতা ও সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে। বিএনপি, জামাতের আমলে একজন দিনমজুর সারাদিন খেটে ৩ কেজি চালের টাকা পেতো না। এখন তারা ১০ থেকে ১২ কেজি চাল কিনতে পারছেন।
• সরকারি এবং বেসরকারি খাতে প্রায় দেড় কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। মানুষ দু’বেলা দু’মুঠো খেয়ে ভালো আছে বলেই দেশে আজ মঙ্গা নেই।
• দারিদ্র্য কমে ২২.৪ শতাংশ, অতি দারিদ্র্যের হার ৭.৯ ভাগের নীচে। ৫ কোটি মানুষ নিম্ন আয়ের স্তর থেকে মধ্য আয়ের স্তরে উন্নীত হয়েছে।
• বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে ৬ গুণের বেশি। বর্তমানে রিজার্ভ ২৫.০২ বিলিয়ন ডলার। গত এক বছরে রেমিটেন্স এসেছে ১৫.৩১ বিলিয়ন ডলার।
• বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা এখন ১৩ হাজার ৭৩২ মেগাওয়াট। ছয়বছরে ৭২ টি নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। দেশের জনগোষ্ঠির ৭৫ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে।
• ২০০৫-০৬ এ রপ্তানি আয় ছিল ১০.৫৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়ে এখন ৩০.১৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
• সাড়ে ১৬ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে গ্রামের মানুষ সেবা পাচ্ছে। বিনামূল্যে ৩২ পদের ঔষধ দেয়া হচ্ছে।
• ২০০৬ সালে গড় আয়ু ছিলো ৬৬.৫ বছর যা এখন বেড়ে দাড়িয়েছে ৭০.৪ বছর। শিশু ও মাতৃ মৃত্যুর হার হ্রাস পেয়েছে। সাড়ে ১২ হাজার সরকারি ডাক্তার নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
প্রিয় কাউন্সিলর ও ডেলিগেটবৃন্দ,
• আমরা ২০০১ সালে শিক্ষার হার রেখে এসেছিলাম ৬৫ শতাংশ। বিএনপি, জামাতের জোট শিক্ষার হার ৪৪ শতাংশে নামিয়ে এনেছিলো। দুর্নীতি, দলীয়করণ ও অব্যবস্থাপনার কারনে শিক্ষাখাত মুখ থুবড়ে পড়েছিলো।
• ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর একটি গণমুখী শিক্ষানীতি উপহার দিয়েছি।
• এখন স্বাক্ষরতার হার প্রায় ৭০ শতাংশ।
• প্রাথমিক থেকে ব্যাচেলর ডিগ্রী পর্যন্ত ১ কোটি ২১ লক্ষ ৭৮ হাজার ১২৯ জন শিক্ষার্থীকে বৃত্তি ও উপবৃত্তি দেয়া হয়। ৩ লক্ষ ৮ হাজার শিক্ষার্থীকে স্নাতক পর্যায়ে উপবৃত্তি দেয়া হচ্ছে।
• দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত ছাত্র, ছাত্রীদের মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যবই দেয়া হচ্ছে। গত ৬ বছরে বিনামূল্যে ১৫৯ কোটি বই বিতরণ করেছি। এ বছরের ১ম দিন ৩২ কোটি ৬৩ লাখ ৪৭ হাজার ৯২৩ টি বই বিতরণ করেছি।
• আমরা সরকার গঠনের পর ২৬ হাজার ১৯৩ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ এবং ১ লাখ ২০ হাজার শিক্ষকের চাকুরি সরকারীকরণ করা হয়েছে।
• শিক্ষাপদ্ধতিকে আধুনিক ও তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর করে গড়ে তুলতে সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫ হাজার ১৭২ টি কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। ২৮ হাজার মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম করেছি। এক হাজার ৪৯৭টি স্কুলে ল্যাপটপ, মাল্টিমিডিয়া, সাউন্ডসিস্টেম ও ইন্টারনেট মডেম সরবরাহ করা হয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুরা ব্রেইল পদ্ধতির বই পাচ্ছে।
• মাধ্যমিক পর্যায়ে সহকারি শিক্ষকদের পদমর্যাদা ৩য় শ্রেণী থেকে ২য় শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়েছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের পদমর্যাদা ৩য় শ্রেণী থেকে ২য় শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়েছে।
• খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়, ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় এবং শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
• ঢাকা মহানগরীতে ১১ টি সরকারী স্কুল ও ৬টি সরকারী কলেজ স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলছে। ফলে, ভর্তিসমস্যার সমাধান হবে।
• প্রতিটি উপজেলায় যেখানে সরকারী স্কুল ও কলেজ নাই, সেখানে সরকারী স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হবে।
• ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী, গোপালগঞ্জ ও পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৩৪ টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন ও আবাসিক হল নির্মান করা হয়েছে।
• সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে প্রতিটি জেলায় একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে।
• আজ ডিজিটাল বাংলাদেশ কোন স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা। সারাদেশে ৫ হাজার ২৭৫ টি ডিজিটাল সেন্টার জনগণকে ২০০ প্রকারের প্রযুক্তিসেবা দিয়ে যাচ্ছে। ৪ হাজার পোষ্টঅফিসকে ডিজিটাল সেন্টার করা হচ্ছে। দেশে এখন মোবাইল সীম গ্রাহকের সংখ্যা ১২ কোটি ২৬ লাখ। ইন্টারনেট গ্রাহক ৪ কোটি ৩০ লাখ।
• ২৫ হাজার ওয়েবসাইট নিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম ওয়েব পোর্টাল “জাতীয় তথ্য বাতায়ন”। বাংলাদেশ ইন্টারনেট ব্যবহারে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে। আমরা ৩জি নেটওয়ার্ক চালু করেছি। অচিরেই ৪জি সেবা চালু হবে।
• আগে প্রত্যন্ত গ্রামের একজন ছাত্রকে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে বা চাকুরির আবেদন করতে অনেক কষ্ট করে রাজধানীতে আসতে হতো। এখন সে ইন্টারনেটের মাধ্যমেই ভর্তি ফরম বা চাকুরির আবেদনপত্র জমা দিতে পারে। মোবাইল স্বাস্থ্যসেবার মাধ্যমে গ্রামের মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করেছি।
• যোগাযোগ খাতে আমরা ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করছি। ঢাকায় হাতিরঝিল প্রকল্প, কুড়িল বিশ্বরোড বহুমুখী উড়াল সেতু, মিরপুর, বিমানবন্দর জিল্লুর রহমান উড়াল সেতু, বনানী ওভারপাস, মেয়র হানিফ উড়াল সেতু, টঙ্গীতে আহসানউল্লাহ মাস্টার উড়াল সেতু এবং চট্টগ্রামে বহদ্দারহাট উড়াল সেতু চালু করা হয়েছে। মগবাজার, মালিবাগ উড়ালসেতুর নির্মাণ কাজ চলছে।
• নবীনগর, ডিইপিজেড, চন্দ্রা সড়ক ৪ লেনে উন্নীত হয়েছে। ঢাকা ময়মনসিংহ চার লেনের কাজ শেষ হয়েছে। শীঘ্রই চালু হবে ঢাকা, চট্ট্রগ্রাম চার লেন। ঢাকা, সিলেটসহ আরো কয়েকটি জাতীয় মহাসড়ককে চারলেনে উন্নীত করা হবে।
• আজ নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বিশ্বের শীর্ষ দশটি দেশের মধ্যে সপ্তম অবস্থানে বাংলাদেশ। নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ আইন প্রণয়ন করেছি। বেতনসহ মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাসে বৃদ্ধি করা হয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে এই প্রথম নারীদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
• আমরা যখনই সরকারে থাকি, দেশের ক্রীড়াঙ্গনেও সাফল্য আসে। ক্রিকেট বিশ্বকাপে অসাধারণ খেলে কোর্য়াটার ফাইনালে উঠে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ চারবার ওয়ানডে সিরিজ জয় করেছে। ইনশাল্লাহ আগামীতে বিশ্বকাপ জিতবে বাংলাদেশ।
• আমাদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ অতীতের নেতিবাচক ইমেজকে মুছে দিয়ে সম্ভাবনার রোলমডেল হিসাবে পরিচিত হয়েছে।
• বাংলাদেশ IMSO, ITU এবং হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলসহ ১২টি আন্তর্জাতিক সংস্থার নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছে। ইউনেস্কো আমাকে ‘শান্তি বৃক্ষ’ পুরষ্কারে ভূষিত করেছে। জাতিসংঘ সাউথ-সাউথ কো-অপারেশন দপ্তর এবং অরগানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেটস আমাকে Visionary Award-2014 প্রদান করেছে।
• আমরা এমডিজি ১ থেকে ৪ অর্জন করেছি। বাংলাদেশ জাতিসংঘের এমডিজি অ্যাওয়ার্ড, সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড, ‘ওয়ার্ল্ড সামিট অন ইনফরমেশন সোসাইটি’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বিশ্বে রোল মডেল এখন বাংলাদেশ।
• বিশ্বে শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে এবার বাংলাদেশের অবস্থান ৮৪তম। ২০১৫ সালের বিশ্ব শান্তি সূচকে (গ্লোবাল পিস ইনডেক্স) বাংলাদেশের এ অবস্থান উঠে এসেছে। সূচকে গত এক বছরে বাংলাদেশের উন্নতি হয়েছে ১৪ ধাপ। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত, পাকিস্তানের ওপরে তৃতীয় স্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ।
সচেতন ছাত্রসমাজ,
আমরা জনগনকে ওয়াদা করেছিলাম, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী ও জাতীয় চারনেতার হত্যাকারীদের বিচারের রায় কার্যকর করবো। আমরা কথা রেখেছি।
আমরা বলেছিলাম, মহান মুক্তিযুদ্ধে যে সকল স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীরা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, তাদের বিচার করবো। এই বিচার সম্পন্ন করতে আমরা যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছি। বিচারের রায় কার্যকর করা হয়েছে। আগামীতেও হবে।
এই বিচার বানচাল করতে, যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করতে অন্ধকারের অপশক্তি যারা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না, জনগণের মঙ্গল চায় না তারা আবারও ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তারের চেষ্টা করছে।
বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে স্বাধীনতাবিরোধী জামাত, শিবিরকে সাথে নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে শিশু হত্যা, অন্তঃসত্ত্বা নারীসহ পথচারী, গাড়ীচালক হত্যা, আওয়ামী লীগ নেতা, কর্মী হত্যা, মন্দির পোড়ানো, কোরান শরীফে আগুন দেয়া, বায়তুল মোকাররমে আগুন, পুলিশ হত্যা, রেললাইন উপড়ে ফেলা, সবই করেছে।
৫ জানুয়ারি নির্বাচন বন্ধে খালেদা জিয়া সবধরণের নাশকতা করেছেন। সেসময় ১৫০ জনকে হত্যা করা হয়েছে। পেট্রোল বোমার আগুনে ৫৫ জন ড্রাইভার ও হেলপারকে হত্যা করেছে। ঘুমন্ত বাস ড্রাইভারকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। শুধুমাত্র নির্বাচনের দিন ২৬ জনকে হত্যা করেছে। ৫৮২টি স্কুলে আগুন দিয়েছে। প্রিসাইডিং অফিসার হত্যা, আইন, শৃঙ্খলাবাহিনীর ২০ জনকে হত্যা করে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করেছে। ষড়যন্ত্র সহিংসতা মানুষকে ভোটদানে বিরত রাখতে পারেনি। সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রেখে টানা দ্বিতীয়বারের মত আমরা সরকার গঠন করেছি।
আমরা যখন দেশ এবং জনগণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি তখন তিনি আবারো দেশকে অস্থিতিশীল করতে, অর্থনীতিকে ধ্বংস করতে নাশকতার আশ্রয় নিয়েছেন।
২০১৫ এর ৩ জানুয়ারি থেকে অবরোধের নাটক করে নিজ অফিসে ৬৫ জনকে নিয়ে ৯২ দিন অবস্থান করে সারাদেশে সহিংসতা ছড়িয়েছেন। খালেদা জিয়ার দুর্নীতির দায় দলের নেতাকর্মীরা নিতে রাজি নয় বলে তারা আন্দোলনে নামেনি।
তার ভাড়া করা সন্ত্রাসীরা রাতের আঁধারে সহিংসতা করেছে। ঘরে বসে তিনি মানুষ হত্যার হুমকি দিয়েছেন। নিরীহ মানুষ পুড়িয়ে মেরেছেন। বাসে, ট্রাকে, লঞ্চে, রেলে আগুন দিয়েছেন।
৯২ দিনের অবরোধের পাশাপাশি বিএনপি, জামাত ৪৩ দিন হরতাল দেয়। ১৫৭ জন নিরীহ লোক হত্যা করে। ৫১০ জনের বেশী অগ্নিদগ্ধ হয়। ১৭৬৫টি গাড়ি পোড়ানো ও ১১৩৮টি গাড়ি ভাংচুর করা হয়। ১৮টি রেল গাড়িতে হামলা করে। ৮টি লঞ্চে আগুন দেয়। ৭০টি সরকারী অফিস ও স্থাপনা ভাংচুর এবং ৬ টি ভূমি অফিসে অগ্নিসংযোগ করে।
সরকারের পতন না করে বাড়ি ফিরবেন না হুমকি দিলেও আদালতে হাজিরা দিয়ে নাকে খত দিয়ে বাড়ী গেলেন।
বিএনপির আন্দোলন হলো মানুষ হত্যার আন্দোলন। মানুষকে পুড়িয়ে মেরে সুখ পান খালেদা জিয়া। দেশের মানুষ আর সম্পদের প্রতি যেনো উনার সব ক্ষোভ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাক হানাদার বাহিনী বলেছিলো, আমরা মানুষ চাইনা, মাটি চাই। বিএনপি নেত্রীও তার প্রভুদের মতো এদেশের মানুষ চান না। মানুষের উন্নয়ন, শান্তি, সুস্থতা চান না।
প্রিয় ছাত্রলীগের নেতা, কর্মীরা,
দেশ ধ্বংসের অপরাজনীতির বিরুদ্ধে আজ ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তোমাদের জানতে হবে বাঙালি জাতির প্রকৃত ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের বিজয়গাঁথা।
জাতির পিতার “অসমাপ্ত আত্মজীবনী” পড়লে তোমরা জানতে পারবে তার একাগ্রতা, নিষ্ঠা, দেশপ্রেম আর সততার কথা। শুধু পড়লেই হবেনা, বঙ্গবন্ধুর জীবনী থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের আগামী দিনের যোগ্য নেতৃত্ব হিসাবে গড়ে তুলতে হবে।
ছাত্রলীগের কাছে আমার একটিই চাওয়া। তাহলো, শুধুমাত্র ভালো কর্মী নয়, নিজেদের শিক্ষিত হিসাবে গড়ে তোলো, ভালো মানুষ হিসাবে গড়ে তোলো। সততা ও যোগ্যতার উপর ভিত্তি করে পথ চললে কোন বাধাই তোমাদের পথ রুদ্ধ করতে পারবেনা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছিলেন। লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই বাংলাদেশকে উন্নতি ও সমৃদ্ধির সোপানে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব তোমাদের।
আমরা ২০২১ সালের আগেই একটি উচ্চ মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে চাই। সেই স্বপ্নপূরনের উপযুক্ত হিসাবে নিজেদের গড়ে তোল।
আমি বিশ্বাস করি, যে ছাত্রলীগের কর্মীরা মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য লড়াই করতে পারে, দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন বিসর্জন দিতে পারে, সেই ছাত্রলীগই পারবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার কারিগর হিসাবে কাজ করতে।
ছাত্রলীগের সম্মেলন সফল হোক। সবাইকে ধন্যবাদ।
খোদা হাফেজ। জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
উল্লেখ্য, গত ২৫ জুলাই ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ২৮তম সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ভাষণটি প্রদান করেন।
আহসান কামরুল
১৫ অগাস্ট ২০১৫ খ্রি.
ঢাকা।
©somewhere in net ltd.