নিজেকে খুজে দেখুন (ফালতু বিশ্লেষন)

২৫ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৩

অফিস থেকে বাসায় ফেরার সময় প্রায়ই ক্ষুদা লাগে। কিন্তু যেখানে বাস থেকে নামি, রেস্টুরেন্টগুলো থাকে রাস্তার অপর পাশে। রাস্তা পার হয়ে ওপারে যেতে ইচ্ছে করে না! তাই সামনের সেদ্ধ ডিম বিক্রেতাই ভরসা। এভাবে চলতে চলতে ডিম বিক্রেতার সাথে ভালই সখ্য। তেমন কোন কথা হয় না কখনোই, দেখা মাত্রই সবচাইতে ভাল মানের ডিম থেকে ডিম নিয়ে নিজেই ছিলতে থাকে। ডিম খেয়ে টাকা দিয়ে চুপচাপ চলে যাই। প্রতিদিনের মতোই ছিল গতকালটা, বেতিক্রম শুধু আমার দেয়া টাকা! দেয়ার সময় পকেট থেকে বের করে দেখলাম- টাকা টা এমনভাবে ছেড়া (জোড়া দেয়া), যা দেখলে যে কেউই টাকাটা নিতে অস্বিকৃতী জানাবে। কিন্তু আমি দিয়ে দিলাম, আর ডিম বিক্রেতাও তা খেয়াল না করে রেখে দিয়ে আমার পাওনা চুকিয়ে দিল! তাৎক্ষনিক ভাবেই মনে হল, কাজটা মনে হয় ঠিক হয়নি। আমি তাকে বললাম, টাকাটা ঠিক নেই, দেখে নিন। উনি টাকাটা বের করে দেখতে লাগল। আমি বললাম, যদি মনে করেন এটা রাখা যায় না, আমি চেঞ্জ করে দেই? উনি সায় দিলেন, আমি টাকাটা চেঞ্জ করে দিয়ে চলে আসছিলাম, আর পেছন থেকে শুনলাম উনি পাশের লোকদের বলছেন- ভাল মানুষ বলেই........। শুনে ভাল লাগছিল, মানে হয় ভাল কাজ-ই করেছি!

উপরের লিখাটা পড়ে, একেক মানুষের, একেক রকম মনে হবে- আমার সম্বন্ধে তাদের ধারনাগুলো হবে এই রকম-

আপনারটা মিলিয়ে দেখুন........

১. ওয়াও! হাউ সুইট! উনি মনে হয় অনেক ভাল মানুষ!

২. হমমম! উনি ভাল মানুষ, ভাল কাজ করেছেন।

৩. এটা বলার মতো কিছু না, আমরা প্রায় ই এ রকম কিছু না কিছু করি।

৪. উনি সূক্ষভাবে নিজেকে ভাল মানুষ হিসেবে জাহির করেছেন।

এই চার রকম মানুষের ব্যাপারে আমার বিশ্লেষন... (একান্তই আমার বিশ্লেষন, এবং অবশ্যই আমি বিশেষজ্ঞ নই)

১. এরা অপেক্ষাকৃত অনঅভিজ্ঞ, কম বয়সি, বিশেষত মেয়ে, জীবনকে রঙিন চশমায় দেখে, জ্বীবনের আসল কালার এখনো তাদের চোখে পৌছেনি! খুব সহজে নিজের কাছাকাছি শ্রেণীকে (বয়স/লেভেল) বিশ্বাস করে, এবং প্রচুর ধোকা খায়। কখনো বোঝে, কখনো বোঝেনা! একদম হাদারাম!!

২. এরা তূলনামুলকভাবে ভাল মানুষ, মোটামুটি সবকিছুকে স্বাভাবিকভাবে নেয়, বা নেয়ার চেষ্টা করে। এরা সাধারণত ঝামেলা তৈরী করে না বা ঝামেলা এড়িয়ে চলতে চায়। কিন্তু তারা মাঝে মাঝে বোকার উপাধিটা ফ্রী পেয়ে থাকে! কেউ কেউ মার্যিত ভাষায় সরল বলে।

৩. এই মানুষগুলো আংশিক হিংসুটে প্রকৃতীর। এরা নিজেকে/নিজেদের ছাড়া অন্যকে মূল্য দিতে চায় না। সবসময় দাপটের সাথে চলতে পছন্দ করে। সহজে ছাড় দিতে প্রস্তুত থাকে না/দেয় না। এরা সুক্ষ বোকাও হয়ে থাকে। এদেরকে পাম দিয়ে কাজ করিয়ে নেয়াও যায়। প্রচুর ঝামেলা তৈরী করে, ঝামেলায় পরেও।

৪. বুদ্ধিজীবি! অত্যান্ত চালাক প্রকৃতীর। তাদের সাথে অন্যরা সাধারণত পেরে উঠেনা কখনোই। যেকোনাে ভাবে এরা সবকিছু নিজেদের অনূকুলে নিয়ে নেয়/ নিতে চায়। নিজের মতামত বা পছন্দকে যেকোনাভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। এরা যুক্তির ব্যাবহার খুব ভালভাবে করে। সহজে ঠকেনা, কিন্তু খুব সহজে ঠকাতে পারে, সহজে কেউ বুঝতেও পারেনা!

যাদের কথা বলা হয়নিঃ (৫.) এদের কথা আগের পয়েন্টে ফেলা হয়নি। এরা ঐ শ্রেণীর, যারা প্রথম লিখাটা পরে যাই ভা্বুক না কেন, নিজেদরেকে ২. নং পয়েন্টে ফেলতে চাইবে, এরাও আসলে এক প্রকার বোকা! এরা নিজেদেরকেই চেনেনা! এদের নিজের ইচ্ছে বলতে তেমন কিছু নেই। প্রায় সব সময়ই অন্যের দ্বারা প্রভাবিত। এদের মধ্যে ছোটখাট মিথ্যে বলার প্রবনতা থাকে, যদিও তারা সাধারণত সিরিয়াস কোন বিষয়ে মিথ্যা বলে না। সাধারণত একটু ভীতূ প্রকৃতির।

Summary:

বন্ধু হিসেবে ২. এর মানুষগুলোকে টানতে পারেন। অনুভুতি শেয়ার করতে পারেন। এরা তূলনামূলকভাবে অধিক নিরাপদ।

৩. ৪. এর মানুষগুলোর সাথে ভাল সম্পর্ক রাখতে পারেন, প্রয়োজনের সময় কাজে লাগতে পারে! তবে, খুব বেশী কাছে টানবেন না! সতর্ক থাকবেন!

৫. এর মানুষগুলোর সাথে টাইম পাস করতে খারাপ লাগবে না! তবে এদের দিয়ে তেমন কোন লাভও হবে না। কিছুটা অকর্মা!

১. এদেরকে পারলে একটু জ্ঞান দিবেন, বোঝাবেন। (যদিও তারা এটাকে কেয়ার করবে না!)

আপনার পাশের লোকদেরকে চিনুন, জানুন। সব টাইপের মানুষগুলোর সাথেই নিরাপদ অবস্থানে থেকে চলতে চেষ্টা করুন। আর নিজেকে কমবেশী সবুগুলো ধাপেই খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করুন।

আর হ্যা, ছেঁড়া টাকাটা আজকে বাসের ভাড়া হিসেবে দিয়ে দিয়েছি!

২ টি +০/-০