![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বেঁচে থাকতে হলে সংগ্রাম করতে হবে , সংগ্রাম ছাড়া বাঁচা যাবেনা এ ব্যাপারগুলো হয়তো গার্মেন্টস শ্রমিকদের অজানা নয়। এ ভাবে দিন গনে পার হয় তাদের প্রত্যেকটি দিন। প্রত্যেকটি দিনের প্রতিটি ঘন্টায় তাদের দিতে হয় কাজের হিসাব। কাজের হিসাব ছাড়া আর কোন ভাবেই যেন মূল্যায়ন করা হয় না এই গার্মেন্টস শ্রমিকদের। যদিও এ নিয়ে তাদের কােন মাথা ব্যাথা নেই । প্রতিনিয়ত অভ্যাসের চাবুকের আঘাতে তাদের মানুষিক অনুভূতি হারিয়ে গেছে। তারা জানে এববার এ কারাগারে যে প্রবেশ করবে তাকে এক দিনের জন্য গনতে হবে ১২ টি ঘন্টা । এ ১২ টি ঘন্টার সাথে তাদের কোন সম্পর্ক হবে না আপনজনের সাথে , আপন মানুষের সাথে । পারুল ,,, প্রতিদিন অফিস থেকে বাসায় আসলে তার ছােটমণি রাহাত মায়ের হাত ধরে জানতে চায় ,মা তােমার অফিসে কি এমন কাজ যার কারনে সারাদিন আমি তােমাকে দেখি না । শুধু রাতে আসো যখন আমি ঘুমিয়ে পরি। ঘুম থেকে উঠে দেখি তুমি আবার অফিসে চলে যাও। পারুল একটু হেসে রাহাতকে বলে বাবা মা’কে না দেখলে কি তােমার খারাপ লাগে ? ভীষন খারাপ লাগে মা ,, সারাদিন মনে হয় তােমার কথা, তুমি কখন আসবে, কখন আমায় আদর করবে। তুমি না আসলে যে আমি কিছু খেতে পারি না ,, তুমি হাত দিয়ে খাইয়ে দিলে আমি তৃপ্তি করে খাই । পারুল মুখটা বাকিয়ে তার চােখের কােণের জ্বলটা মুছে নিল যাতে রাহাত না দেখে । কি করে ছেলেটাকে বুঝাবে যে তার সব সুখের মাঝে রাহাত একটা ছায়া । এ ছায়া নিয়েই তার কাজের যাত্রা ও শেষ। তাকে মানুষ করতে হবে , মানুষের মতো , আসুক যত ঝড় বৃষ্টি মাথা পেতে নিব। প্রতিদিন অফিসে আসতে হাজার হাজার লােকের জনশ্রুত দেখতে পায়, সবার একটাই তাড়না কখন গিয়ে পৌছবে তার কর্মস্থলে। পকেট গেটে ভীষন ভিড় থাকে অফিস সময়ে , প্রায় সময়ে দেখি একটা পিচ্চি বাচ্চা (বয়স আনুমানিক তিন ,সাড়ে তিন হবে) তার মায়ের আচল দরে চিৎকার করছে ! কি কান্না ! মায়া কান্না ! দেখতেই বুঝা যাচ্ছে পিচ্চিটার মা হয়তো নতুন চাকরিতে আসছে, পিচ্চির সাথে একটা বৃদ্ধা মহিলা দাড়িয়ে থাকে সবসময় । মা মা করে চিৎকার করছে আর কাদঁছে ! আমি যাবো , তােমার সাথে যাবো । তাড়াহুড়ি করে মা চলে যায় । দাদিকে দেখি জবরদস্তি করে পিচ্চিটা কে সাথে করে বাড়ির দিকে নিয়ে যেতে । গেটের কাছাকাছি কিছু বাড়ি আছে যেখানে গার্মেন্টসের লােকদের বাসা ভাড়া দেওয়া হয়। সেখানেই হয়তো পিচ্চি ছেলেটার মা বাবা ভাড়া থাকে। প্রায় সময় পিচ্চি টাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখি , কিন্তুু এখন আর কাঁদতে দেখি না , আগের মতো মায়ের আচল ধরে কাঁদে
না। হয়তো এত দিনে বুঝতে শিখেছে , মা কে প্রতিদিন অফিসে যেতে হয় । আমি কাঁদলেও মাকে যেতে হবে , না কাঁদলেও মাকে যেতে হবে। পিচ্চিটার চেহেরাটা অসাধারন মায়াবী, তাই যখন আমার অবলোকনে পিচ্চি টাকে দেখি একটু হাত ভুলিয়ে আদর করি । আমার আবার পিচ্চিদের প্রতি ভিষন মায়া । ঐ পিচ্চি টাকে আদর করতে গেলে এমন ভাবে তাকায় যেন মায়া দু’চোখের জ্বল এখনি মাটিতে লুটে পড়বে। হয়তো বলতে চাচ্ছে , আঙ্কেল ! আমার মাকে বলেন না , সে যেন তার সাথে অফিসে আমাকে নিয়ে যায়, আমি কোন দুষ্টামি করবো না । অফিসের এক কােনায় আমি দেখবো মা আমার কি করে। আমি মনে মনে হাসতে থাকলাম! কি নিধারন নশ্বর । পেটের তাড়নায় নাড়ির সম্পর্কের বিভাজন। মায়ের ভালবাসা পেতে কি আকুতি মিনুতি । মা ছাড়া বাচাই কঠিন এ শব্দটা পিচ্চি টার জানা। একদিন অফিসে কাজ কম থাকায় তাড়াতাড়ি চলে আসলাম বাসার দিকে । বাসার কাছা কাছি আসতেই চােখে পড়লো কােণায় একটা বাড়ির পাশে অনেকগুলো মানুষের ভিড় ! কি করছে তারা , কি কারনে এত মানুষের ভীড়? পাশেই একটা লােক আওয়াজ করে বলছে ! মানুষের কান্ড জ্ঞান বলতে কিছুই নেই ,একটা বাড়ি বানাবে তাতে কােন ধরনের নিরাপত্তা নেই । শুধু লোহা লঙ্কার দিয়া হালাই (ফেলে ) রাখছে, বিদ্যুৎতের লাইনগুলোর কোন সঠিক সংযোগ নেই , একটু আর্থিং হলে পুরো বাড়িতে বিদ্যুৎ চলে আসে। এমন বাড়ির মালিককে পিটানোর দরকার । এত বড় একটা দুর্ঘটনা কি হবে এখন এ গরিব পরিবার টার? লােকটার কথা শুনে কেমন জানি মনে হলো ! নিশ্চয় বড় কিছু ঘটেছে ! লোকটাকে বললাম কি হয়েছে ? সাথে সাথে জবাব , একটা ৩ বছরে ছেলে মারা গিয়েছে! যান ঐ যে দেখা যায় তার লাশ টা সবাই দেখছে ! কিভাবে মরলো ? কি করে মরলো ? জানতে চাওয়ার আগেই লােকটা চলে গেল ! ছোট হউক , বড় হউক যে কেউ মারা গেলে আমি তেমন একটা কাছে যাই না , লাশ দেখলে আমার ভীষন ভয় হয় । রাতে ঘুমাতে পারি না ,, মনে হয় লাশটা আমার পাশে ঘুমিয়ে আছে। তারপরেও কেন জানি ঐ দিন দেখতে গেলাম। অনেক মানুষের ভিড় , তাই একটু সুযোগ করে লাশ টার পাশে গেলাম । মনের ভিতরে কেন জানি ভয় ভয় লাগছিল ! লাশটা একটা পুরনো বিছানার চাদরে ডাকা ছিল তাই লাশ†ের পাশের লােকটাকে বললাম, ভাই একটু চাদর টা সরাবেন ? লোকটি চাদর টা সরাতেই দেখি,, ,, ও..মা এ তাে দেখি পিচ্চি ছেলেটা !!!মাথাটা ঘুরতে শুরু করলো , এ কি দেখছি আমি , মনে হচ্ছে এখনোই মাটিতে পরে যাবো, কালও তো ওর সাথে দেখা হয়েছে । জানতে চাইলাম ঘটনাপুঁজি,, সারা সকাল থেকে খেলছে , গতকাল তার বাবা তার জন্য একটা ফুটবল নিয়ে এসেছিল আর এই ফুটবল যে তার কাল হবে কে জানতো? কারেন্টের তার ছিড়ে টিনের বাড়িতে পড়ে, আর তাতে পুরো বাড়িতে কারেন্ট। লােহার গেটে ছােট্টমনির ফুটবল টা আটকে থাকলে নিতে এসে ৪৪০ ভােল্টেজের আগাতে ছােট্টমনির প্রাণটা নিষ্প্রাণ হয়ে যায়, ফুটবলটার সাথে আটকে থাকে তার নিথর দেহ। কাউকে ডাকার সময় ও পায় নি, হয়তো মা’কে অনেক ডেকেছে! সারা নেই বলে আজীবনের জন্য ঘুমিয়ে গেছে । এ ঘুম কি আর কখনো ভাঙ্গবেনা? মাতো হয়তো আজ চকলেট নিয়ে বাড়ি ফিরবে। কি দেখবে এসে,, কাকে দিবে চকলেটটি ? কে খাবে চকলেট? নিথর নিষ্প্রাণ দেহ কি মার ডাক শুনবে না,, খুকু উঠ খেতে উঠ? ! আর কত ঘুমিয়ে থাকবি , মাতো অনেক আগে অফিস থেকে এসেছি। আজ তুকে আমি নিজের হাতে খাওয়াবো। কোন শব্দ নেই ,,কথা নেই , নিস্তব্ধ প্রাণহীন ঘুম, যেখানে ফিরে আসার বাক্যগুলো হারিয়ে গেছে আজীবনের জন্য । কাল থেকে আমি হয়তো গেটে আর পিচ্চিকে দেখবো না । হাত বুলাবো না । জট বাধালো ভিড়ে সবাই থাকবে , শুধু থাকবেনা পিচ্চিটা। বার বার ভিড়ালো অপরিচিত মানুষের ভিড়ে আমার পরিচিত মুখটা হারিয়ে গেছে। জনাকীর্ণ গেট আজ শূন্যে হা হা কার ।
©somewhere in net ltd.
১|
১৮ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৯:০৩
খায়রুল আহসান বলেছেন: হৃদয়বিদারক গল্প, খুবই মর্মস্পর্শী!
এ ব্লগে আপনার প্রথম পোস্টটা পড়তে এখানে এলাম। পিচ্চিকে নিয়ে রচিত গল্পটা ভাল লেগেছে।
ব্লগে বিলম্বিত সুস্বাগতম জানিয়ে গেলাম। এখানে আপনার বিচরণ আনন্দময় হোক, দীর্ঘস্থায়ী হোক!