নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কাজকে ভালোবাসলে কাজ আমাকে ভালোবাসবে। তাই কাজকে সম্মান করতে হবে, করতে হবে শ্রদ্ধা। হউক ছোট হউক না বড়। কাজ তো কাজেই । আর আমার কাজটাই হলো অলসদের জাগিয়ে তোলা।

আকিব হাসান জাভেদ

আকিব হাসান জাভেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অফিসের একদিন।।।।

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:৪৬

মামা উঠেন, সকাল ৭:২০ বাজে অফিসে যাবেন না ! কি বলেরে কয়টা বাজেরে সিয়াম ৭:২০. অহ শিট তােকে কত বার বললাম ঘুমানোর আগে এলার্ম ঘড়িটা আমার বালিশের পাশে রাখিছ। কিছুই তাে মনে রাখিশ না ! আজও আমার অফিসে যেতে দেরি হবে! বরাবর ৮ টাই অফিস ! ৮ টার পরে অফিসে আসলে লেট (late). গেট বন্ধ বাহিরে দাড়িয়ে থাকতে হবে দীর্ঘক্ষণ এটাই আমার অফিসের নিয়ম! যদিও কােনদিন আমাকে দাড়িয়ে থাকতে হয় নি ! নিরাপত্তা (Security ) কর্মীরা ভালভাবে আমাকে চিনে কমপ্লায়্যান্স অফিসার হিসাবে হয়তো ইহা তাদের সম্মান! তবে এ সম্মান আমি কখনো আশা করি না ! কােথাও যদি কােন নিয়ম থাকে তা সবার জন্য সমান হবে। নিয়মের বাহিরে আমি কেউ না ! সব সময় ঘুম থেকে উঠলে পায়ের লিগামেন্টের সমস্যার কারনে আমাকে কিছু সময় ব্যায়াম করতে হয় এটা আমার ডাক্তারের রুটিন। কিন্তুু আজ তাে ব্যায়াম করার সুযোগ পাবো না হাতে সময় অনেক কম ! চট করে বিছানা থেকে উঠে মিঠুকে (আমার পােষা পাখি) খাবার দিলাম ! আপুকে বললাম গরম পানি নিয়ে আসতে গােসলে যাব ! আপু বলল তুই ওয়াশ রুমে যা আমি পানি নিয়ে আসছি! আম্মা ঢাকা যাওয়াতে আপুকে একটু কষ্ট করতে হচ্ছে আম্মা বাড়িতে থাকলে সময়মতোই ঘুম থেকেই তুলে নিতেন ঠিক ছােট কাল থেকে যে কাজটা করে আসছেন একই রকম করে। আপু ডেকে বলে ,পানি নিয়ে আসছি দরজার বাহিরে রেখেছি নিয়ে যা ! গরম পানি ছাড়া এত সকাল আমি গােসল করতে পারি না ! গােসল করতে হলে গরম পানি লাগবে না হয় ঠান্ডা লেগে যায়। গোসল শেষ করে পাখার নিচে দাড়িয়ে গা (শরীরটা) একটু শুকিয়ে নিলাম ! উফ ! গােসল শেষে কি আরাম লাগছে। ডয়ার (যেখানে কাপড় রাখা হয় ) অফিসে পড়ে যাওয়ার কাপড় বের করলাম! শিট! কাপড়গুলো আইরন করা নাই ! তাড়াহুড়ি শুরু করলাম , কােন রকম করে আইরন করে প্রস্তুতি সমপূর্ণ করলাম। হঠাৎ চােখ পড়ল দেয়ালের ঘড়িটার দিকে বাবাগো এ কি ! ৮ টা বাজতে আর মাত্র ৫ মিনিট বাকি! কয় তুই, আপু ডাকছে তুর খাবার রেডি , টেবেলি রেখেছি খেয়ে যা ! আপা আজ খাবো না , অফিসে গিয়ে নাস্তা করবো হাতে আর সময় নাই ! ঘড়ি, মােবাইল , মানি ব্যাগটা হাতে নিয়ে বের হতে লাগলাম , আপু ডেকে বলে লাঞ্চটা নিয়ে যা, না আজ লাঞ্চ (দুপরের খাবার) বাহিরে করবো। আম্মা শুনলে রাগ করবে আপু বলতে থাকলো , বিদায় বলে বের হয়ে আসলাম! জানি আম্মা শুনলে রাগ করবে কারন ফেক্টোরিতে যে খাবার দেয় আমি তা কখনো খেতে পারি না , আর কবে ফেক্টোরিতে খেয়েছি তা মনে নেয়! হাজার সমস্য হলেও বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে যাই ছােট একটা ব্যাগে করে! ছোট একটা খাবারের ব্যাগ, হাতে করে বহন করতে হয় যা দেখতে খারাপ লাগে, মাঝে মাঝে কলিগরা উপহাস করে, ঐ যে থলে নিয়ে আকিব স্যার আসছে। আমিও ব্যাগ দেখিয়ে ওদের বলি , আজ আম্মা মাংস রান্না করে দিয়েছে সবাই এক সাথে খাব, তাতে ওরা যে খুশি হয়, কেউ বা জিহবা দিয়ে ওষ্ঠ পিষ্ঠ চাটতে শুরু করে । মনে হয় ভাল খাবার হলে এই থলে তে তাদের কােন আপত্তি নেই। চলতি হাটায় পকেট গেটে এসে পড়েছি মাত্র ৩ মিনিটে। হাতে মাত্র ২ মিনিট বাকি আছে ৮ টা বাজতে ! জুরে হাটতে শুরু করলাম একটু চেষ্টা করে দৌড়াতে লাগলাম সামনে একটা অটোরিকশা দেখা যাচ্ছে ! এতটা দূরে যে আমি চিৎকার করলেও আওয়াজ তার কানে পৌছাবে না! তাই তাড়াহুড়া করে কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলাম। বিশাল আওয়াজ দিয়ে ডাকলাম এই অটো........ও! আশেপাশে কিছু মানুষ ছিল সবাই ডাক শুনে তাকিয়ে রহিল আমার দিকে, তাদের তাকিয়ে থাকা হিসাব করা এখন আমার চলবে না আমার অফিসের সময় চলে যাচ্ছে। অটো বেটারা আবার অটো বলে ডাকলে বিসন মাইন্ড করে। যাই হউক ! সে আমার ডাক শুনেছে। চলেন মামা পাকিস্তানি ফেক্টোরিতে ! সুজা চলে যান। আমি যাবো না ভাই ! কি বলে বেটা ! যাবেন না কেন ? আমি ঐ দিকে যাব না, তাহলে কােথায় যাবেন , আমি ইয়াছিন মার্কেটের দিকে যাব, মিজাজ টা কেমন খারাপ হয় ! গালি দিতে গিয়েও দিলাম না ! বললাম ! অটো মিয়া মার্কেটের দিকেই নিয়া চলো , আমি ঐ দিকেই যাব! আর দেরি হলো না অটো সুজা ফেক্টোরির সামনে! অটো বেটাকে ১০ টাকা হাতে দিয়ে আমি অফিসের গেটের ভিতরে চলে আসলাম । অফিসের ভিতরে প্রবেশ করবো ? ঠিক এমন সময় কে যেন আমার কাধে হাত রাখলো বলতে লাগলো , কি আকিব ভাই, আজতো অডিট আছে প্রস্তুতি কেমন। পিছনে তাকিয়ে দেখলাম ফেক্টোরির কোন এক ডিপার্টমেন্টের উর্ধ্বতম কর্মকর্তা ! বললাম প্রস্তুতি ভাল বাকিটা আপনাদের উপর! ফেক্টোরিতে অডিট আসবে /বায়ার আসবে, তাই বলে কি সব কিছু আমাদের দেখতে হবে! সকলের সম্যুক প্রচেষ্টার প্রয়োজন হয়। ঠিক বলেছেন ! কথা শেষ করে পাঞ্চ (উপস্থিতি গননা যন্ত্র ) করলাম যখন ঘড়ির কাটা ৮ বেজে ৯ মিনিট ! পাঞ্চ করে আমাদের রুমে আসলাম । নিজের আসনে একটু আয়েস করে বসলাম ! লম্বা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে একটু রিলেক্স হওয়ার চেষ্টা করলাম! পানি খেতে হাতের পাশে পানির বোতলটা নিতে গিয়ে লক্ষ করলাম বােতলটা পানি শূন্য । হিমু ( আমাদের ফায়ার ম্যান) বােতলে পানি নেই পানি নিয়ে আসো। অবশ্য ওদের পানি আনার জন্য কখনো বলতে হয় না! অফিসে এসেই ওদের প্রথম কাজ হচ্ছে আমাদের সকলের পানি নিয়ে এসে টেবিলে রেখে দেওয়া । যে কাজটা ওরা ভাল করে করতে পারে! সবাই অফিসে আসছে যার যার মতো করে কাজ শুরু করে দিয়েছে। হ্যা, অডিট এখনো আসি নি, হয়তো আরো কিছু সময় লাগবে। তাই যাবতীয় সকল ডকুমেন্টটেশন রিভিউ করলাম আধা ঘন্টার মধ্যে। হঠাৎ স্যার কল দিয়ে বলল অডিট আসতে দেরি হবে এখন ওনারা জ্যামে আছে, হাতে কােন কাজ পেন্ডিং থাকলে যাতে সেরে নেই। ওকে স্যার । স্যার ? ঠিক আছে বলে কলটা কেটে দিল। ১২ বেজে ৪০ মিনিট ,, অডিট ফ্যাক্টোরিতে আসছে। এমন সময় আসলো একটু পরে দুপরের খাবারের সময় হবে। যাই হউক , অডিট কিছুক্ষণ বসে বিশ্রাম নিয়ে তাদের প্রারম্ভিক কাজের সূচি তৈরি করে ফেলল। আগে কোন কােন ডির্পামেন্টে পর্দাপন করবেন তার ছক তৈরি করে নিলেন। এবার চলেন আমরা ফ্যাক্টোরিতে রান করবো বলে উঠে দাড়ালেন অডিট আতিক সাব। এ লোকটাকে আমি খুব ভালো করে চিনি। ফ্যাক্টোরির প্রথম থেকেই এখানে অডিট করতে আসেন তিনি। ফ্যাক্টোরির প্রতিটি জায়গায় তার চেনা, সুতরাং কােন কিছু লুকিয়ে রাখার সুযোগ নেই । সব কিছুর ট্রান্সপারেসসি থাকতে হবে। অডিট রুম থেকে ওনার সাথে আমরা বাহির হলাম।একটানা দুইটা ডির্পামেন্ট ১ ঘন্টা রান করে দুপরের লাঞ্চের জন্য স্যার ওনাদের রুমে নিয়ে আসলেন। তবে অডিট আতিক সাহেব একা আসেননি তার সাথে আরো একজন কমপ্লায়্যান্স অডিটর ছিলেন। ২:৩০ মিনিট ওনারা লাঞ্চ (দুপরের খাবার) শুরু করলেন। অডিট বলে কথা, পূর্বেই ওনাদের জন্য ইসপেশাল খাবারের আয়োজন থাকে। আপ্যায়নও করা হয় যেমনটা কনে দেখতে আসা বর কে । লাঞ্চ শেষ করে সাথে সাথেই পরবর্তি ডির্পামেন্ট গুলোতে চলে গেলেন যে গুলো এখনো ভিজিট করা হয় নি। ভিজিট সমপূর্ন শেষ করে রিপোর্ট করার জন্য সময়মতো বসলেন সেই অডিট রুমেই । যখন বেলা শেষ হয়ে প্রায় সন্ধা নেমে আসলো । তাড়াহুড়ি করতে লাগলেন যেভাবেই হউক রির্পোট দিয়ে যাবে আজ। কেননা ওনারা ঢাকা থেকে আসছেন, রির্পোট দিয়ে সুজা ঢাকায় ফিরে যাবেন। সারা দিনের পরিশ্রম সার্থক হল যখন অডিট সি এফ ও, সি ও ও, সি এম ও সবার সামনে বললেন আপনাদের অডিম রিপোর্ট ভালো এসেছে। সব কিছুই ঠিক আছে । যেহেতু কমপ্লায়্যান্স ডির্পামেন্ট অডিট, বায়ার দেখেন সেহেতু কংরেচুলেশন দিতে দেরি করেন নি ফেক্টোরির সি ও ও (চিফ অপারেটিং অফিসার)। Congratulation for ur support & congratulation to u Reza (Reza sir is my manager ) & to ur team. . রেজা স্যারের দিকে তাকিয়ে দেখলাম , যে স্যার একটু খুশি হয়ে মুচকি হাসছেন। একটা কষ্ট যদি নিরলস পরিশ্রমের পর সফল হয় তাহলে তার আনন্দ ঐ দিনের প্রতিটি ক্ষণের জন্য কাজের স্পৃহা , উদ্দীপনা বাড়িয়ে দেয় আগের চেয়েও বেশি । আমরা ভেবেছিলাম, এই আনন্দটার একটা ভােজন পার্টি হবে, কিন্তু স্যার ঢাকা যাবেন বলে তা আর হয়ে উঠলো না। তাই বলে কি থেমে থাকবে ,বন্ধু রুবেল কে নিয়ে ভোজন পার্টিতে চলে গেলাম প্রিয় রেস্তোরা পি, সি তে . র্অডার ও দেরি হয়নি , বন্ধু রুবেল , ওয়েটার কে ডাকলো ,, Excuse me , আমি বললাম ,, ভাই বলে ডাকো, ভাই শুনে অভ্যস্থ ওরা। তাই করলো , ভাই একটু এদিকে আসেন, আমাদের মুরগির শিনা দেখে দুইটা চাপ দিন। আমি আবার বললাম, শিনা কেনো মুরগির লেগ(পা) নাও ! না শিনাই খাবো ! ওকে মামা দেন আমাদের দুইটা শিনাই দিন। খাবারের আভাসের মগ্নে আশে পাশে তাকাই নি বলে রুবেল আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে বলছে দেখো আকিব ,, পাশের সিটে একটা সুন্দরি মেয়ে বসে আছে পাশের ছেলেটা মনে হয় তার কর্তা । হমমম.. তাইতো দেখছি , বেশি দিন হয়নি, দেখো রুবেল হাতের মেহেদিটা এখনো শুকাইনি। আবার কল্পনা রাজ্যে চলে গেলাম ! এ জিবন টার কি হবেরে রুবেল! কবে আসবে এমন সময়। তাহলে কি আমরা অন্ধকার রাজত্বের রাজা যেখানে সময় না হলে বাতি জ্বলে না। যাই হউক , খাবার টা ভক্তি করে খেলাম । এবার যাবার পালা , চলো রুবেল এবার উঠি, কিন্তু রুবেল এখনো তাকিয়ে আছে সদ্য দম্পতির দিকে , রুবেল কি তাহলে কর্তা হয়ে গেল । ধাক্কা দিলাম , বেটা উঠ ! বাসায় যাবো , রাত ৯.০০ বাজে। বাসায় টেনশন করবে ! দু’ জনে একটা রিকশা নিলাম সুজা টমছম ব্রিজ. তারপর দু’জন দুদিকে চলে যাবো। রিকশা মামা কান্দিরপাড় আসার পর রুবেল হঠাৎ বলে উঠলো মিষ্টি খাবো! এখন! না বাবা আজ না আরেক দিন । না আজকেই খাবো ,বলে কান্দিরপাড় থেকেই ভাড়া দিয়ে রিকশা বিদায় করে দিল । মিষ্টান্ন দুকানে মিষ্টি নিল , ১০ টা লাড্ডু, ১০ সন্দেশ । এ রুবেল কে খাবে রে এতগুলো , কেনো আমরা খাব! আমরা মানি, সম্ভব না ! তবে খাবি কােথায় ? রিকশায় ! হা রিকশায় খেতে হলো এত গুলো মিষ্টি . রিকশা ওয়ালা মামা কে দেওয়া হয়েছে , মামা আবার খেতে চায়নি , হয়তো ভাবছে মিষ্টি খেলে এ অজ্ঞান পার্টি আমার রিকশাটায় নিয়ে যাবে । বুঝিয়ে বললাম না খেলে বাসায় ভাবিকে দিবেন , এখন পকেটে রাখেন। না, মামা হয়তো একটু বিশ্বাস করলো তাই প্রথমটা খেলো , আরেকটা ভাবির জন্যেই পকেটে রাখলো মনে হয়। যথাস্থানেই নামলাম দু’জনে, বিদায় দিয়ে চলে আসলাম নিজের গন্তব্য, একটা দিনের ব্যস্ততার পুরো সময়টায় ঘন্টা ঘন্টা হিসাব কষলাম নিজের অন্তরায় । এভাবে পার হচ্ছে দু’চাকার মানবের জিবন। পুরের দিনটির হিসাব হয়তো অন্যভাবে কষতে হবে, অন্য চিন্তায়!


মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.