![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এনড্রয়েট মােবাইল কেনার পর সচরাচর দিনে ঘুমাইতাম না তাও এক বছর আগে।হঠাৎ একদিন বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছিল। আর বৃষ্টি হলে পরিবেশটা এমনেই একটু শিতল থাকে। দো-তলার রুমে আমি আর আমার ভাগিনা ঘােমাচ্ছিলাম, দুতালার বারান্দায় তখনো গ্রিল দেওয়া হয়নি যার কারনে বৃষ্টি হলে বারান্দায় হালকা একটু পানি জমে । বৃষ্টি থামার অনেকক্ষন পর বারান্দার পানি দেখতে গেলাম হঠাৎ দেখি একটা ছােট্ট পাখি বারান্দার জমে থাকা পানিতে বিজে কাপছে। তাড়াহুড়া করে পানি থেকে পাখিটাকে তুলে রুমে নিয়ে আসলাম সাথে ভাগিনাকে ঘুম থেকে তুলে নিলাম। ভাগিনা ঘুম থেকে উঠে আমার হাতে পাখি দেখে এক চিৎকারে একএে বাসার সবাই। যাই হউক, পাখিটাকে বাচাতে হবে তারপর অন্য কিছু, ছােট ভাগিনা একটু চালাক বটে পাখিটাকে দেখেই একটা র্কাটুন আর কিছু খরকুটার ব্যাবস্থা করে নিল মূহুর্তের মধ্যে। রাখা হল পাখিটাকে র্কাটুনের ভিতর। আমি চিন্তিত ছিলাম পাখিটা এখানে ( বারন্দায় ) আসল কিভাবে, আবার চিন্তা করলাম হয়তো ছােট পাখি মা নিয়ে এসেছিল উড়ানো শেখাতে । পাখিটা বৃষ্টিতে বিজে উড়ানো শক্তি হারিয়ে আমাদের বারান্দায় । কিন্তু পাখিটার মা কথাটা আমার আপার মুখ থেকে পাখিটার মা কােথায়? সবাই বাহিরে তাকিয়ে রইল আর পাখির মাকে খােজতে লাগলো । পাখির মাতো নেই হয়তো খুজতে খুজতে নিজে নিড়ে অশ্রুবির্সজন দিচ্ছে । আর ভাবছে কি দরকার ছিল পাখিটাকে উড়ানো শেখানোর দু’দিন পরে শিখালে কি হতো ! এখন কি হবে ? টানা দু দিন ভাত কলা খাবানোর পর দেখলাম পাখিটার এবার কিছু শক্তি সঞ্চয় হয়েছে । এবার একটু উড়ানোর চেষ্টা করছে এখন ছেড়ে দিব এমনটাই চিন্তা ছিল আমার । পাশের বাড়ির মােমিন কাকা উপদেশ দিলেন তুই যদি পাখিটাকে ছেড়ে দিস এখনো উড়াল শিখিনি পরে বিড়াল অথবা কাকের ভােজন হবে, তাহলে উপায় একটু বড় হউক তারপর ছেড়ে দিস পরে নিজেই নিজেই বাসা বেধে নিবে কােন এক জায়গায়। হউক কাকার কথা মতোই,,,,, । তারপর পাখিটার তৃতীয় দিন । ৩য় দিনটা স্মরন কালের শ্রেষ্ট দিন। কারন ঐ দিন ঘুম থেকে উঠে হাত মুখ ধুয়ে পাখিটাকে কলা খাবাতে আসলাম কারন পাখিটা নিজে নিজের খাবার খেতে পারত না । পাখিটার মুখে একটু কলার অংশ গলায় চেপে দিলে গিলে নিত । খাবারের পলিসিটা আস্তে আস্তে আয়েত্বে আসা শুরু করল । র্কাটন থেকে লাফ দিয়ে বাহিরেও আসল পাখিটা । এমনি করে পথ চলা শুরু, নিজে নিজে র্কাটুনের উপর উঠলো আমি দূর থেকে খাবার নিয়ে দাড়িয়ে দেখলাম এইটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে । একটু পরে এক উড়ালে আমার কাছে । আমি হতভাক- তার পর খাবারটা মুখের সামনে নিতেই এক কামড়ে গিলে ফেললো । তখন আমার চােখ মুখ খুুশিতে লাল হয়ে গেল। বাড়ির সবাইকে জানালাম ব্যাপারটা পরে, ছােট বাগিনা , বড় বাগিনা, সবার কাছ থেকে খাবার নিয়ে গেল এবং খেল। এই দিনেই ছােট বাগিনা এইটার নামকরন করল মিঠু। আমি প্রতিদিন শিস দিতে দিতে খাওয়াতাম , আস্তে আস্তে বড় হতে লাগল মিঠু এমন করে এক মাস একটু বড় হল সাথে পোষ মানা শুরু করল। উড়ালটা মুটামুটি শিখে ফেলেছে । শিস দিলে আসে শিস দিলে খেয়ে যায় । মনে হচ্ছে আমিই এর মা । মা ডাকলে আসে মা ডাকলে খেয়ে যায় । বাড়ির আশেপাশের গাছগাছালির উপড়ে বসতো এই গাছ থেকে ঐ গাছে উড়ে বেড়াত আমি ডাক দিলেই আমার কাধে বসত, হাতে বসত, মাথায় যেখানে জায়গা পেতো সেখানেই বসত . আস্তে আস্তে খাবারের ম্যানুও চেইনস করে ফেলেছি, শহরের পাখির দােকান থেকে খাবার নিয়ে আসতাম । ভাতের পাশাপাশি কলাও খাবাতাম।মহল্লার সবাই দেখতো ও মজাপেত । একটা পাখি ডাক দিলেই কাছে আসে !
পুরোদমে শিকারি, শিশের বদলি মিঠূ ডাকা শুরু করলাম, মহল্লার এখানে সেখানে নিয়ে যেতাম নিজের খাবার নিজে খেতে শিখলো । দেখতাম মাঝে মাঝে ছােট ছােট ফড়িং দরে খেত, আমাদের বাড়িটা চিনতে ভুলও হতনা মিঠুর । আমি বাড়িতে না থাকলে বাড়ির আশেপাশে থাকতো । হঠাৎ একদিন অফিস থেকে এসে পাখিটাকে খুজে পাচ্ছিলাম না কােথায় যে গেলো, নাকি কেউ চুরি করে নিল । মাথাটা তখন কাজ করছিল না। পাড়ার সবার কানে কথাটা চলে গেল। সবাই খুুজতে শুরু করল কিন্তু পাখিতো নাই, কােথাও নাই ! আমি কিন্তু মানুষ মারা গেলেও কখনো কাদতাম না মানি চােখের পানি আসতো না। কিন্তু ঐ দিন আমি পুরাই কেদে ফেলিছি পাখিটাকে না পেয়ে । টানা দু-দিন কােন খবর নেই মিঠুর । হঠাৎ পাশের গ্রামে একটা ছেলের মাধ্যমে জানতে পারলাম তাদের গ্রামে নাকি একটা ছেলের কাছে আমার পাখি (মিঠুর) মতো একটা পাখি দেখেছে। শুনার সাথে সাথে ভাগিনা আমার সাইকেল নিয়ে চলে গেলাম পাখিটি দেখতে । গিয়ে দেখে এই সেই আমাদের মিঠু পাখি , চিনবেনা কেন তার পায়ে যে আমি একটা আংটি দিয়ে দিয়েছিলাম । আর কিছু লাগে সেইটাই তো সবচেয়ে বড় পরিচয়। কিন্তুু এই পাখি যে আর দিবে না এ নিয়ে প্রায় ঝগড়া ,,, আমি গেলাম সেই বাড়িতে যেখানে পাখিটাকে বেধে রেখেছে । আর ঔ বাড়িটাই আমার ইশকুলে পড়া এক বান্ধুবীর । আমাকে দেখে সে আরে আকিব কেমন আছিস? ভাল ,,, তুমি কেমন আছো মিলি। মেয়েটির নাম ছিল মিলি সবসময় হাসি দিয়ে কথা বলবে। যাই হউক মিলি ঐ পাখিটা আমার আমি ওকে বড় করেছি। ও তখনো হাসে আকিব তুই পাখাল হলি কবে । হয়েছি একদিন তুকেতো পুষতে পারলাম না তাই একটা পাখি পুষলাম। আমি ডাকলে আমার কাছে আসে এইটা আমার পুরাদমে শিখারি পাখি , একটু খাচাটা খুলে দিবে কথাটা শুনে সে বলে পাখিটাকে আমার ছােট ভাই নিয়ে এসেছে । আচ্ছা আমি খুলে দিচ্ছি , খুলে দেওয়ার পর আমি মিঠু বলে ডাকলাম আর সাথে সাথে উড়াল দিয়ে আমার কাধে,, মিলি তাকিয়ে রইল আবার হাসতে লাগলো কিভাবে সম্ভব? সবই স¤ভব মিলি ,একটু ভালবাসা পেলে সবাই কাছে আসবে, কথাটা মনে হয় সে বুঝে নাই। আকিব চা খেয়ে যাও, নাহ আরেকদিন আসবো বলে বাসায় চলে আসলাম। আর ওর সাথে কােন দিন দেখা হয়নি। এমন করে মিঠুর ১ বছর হলো। এখন অনেক কথা বলতে পারে,,,, যে কােন নাম উচ্চারন করতে পারে। কােন একটা কাগজ দিয়ে যদি বলি ঔ খানে রেখো আসো রেখে আসে। এই মিঠুর জন্য একদিন পাড়ার মুরুব্বিদের কথা শুনতে হয়েছে আমার । সেদিন ছিল শুক্রবার মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়েছি , নামাজের জন্য ইমামের পিছনে দাড়ালাম সবাই। নামাজ শুরু হল হুজুর সূরা পড়ছেন এমন সময় আমার কাধে এসে বসে মিঠু । আমিতো পুরাই ভয় পেয়ে গেলাম। মসজিদে পাখিটা কি ভাবে আসলো আর এত মানুষের মধ্যে আমাকে চিনলো কিভাবে ? নামাজে কােন মনযোগ নেই । হঠাৎ আমার কাধে থেকে ইমাম সাহেবের মাথার উপর । আমি জানতাম আমার আজ খবর আছে কি জানি আছে কপালে আল্লাহ জানে মনে মনে আল্লাহে ডাকা শুরু করলাম। পরে দেখি হুজুরের টুপি ফেলে দিয়েছে, শিট এ কি শুরু করেছে মিঠু। কি হল মিঠুর আজ । আবার আমার কাধে বসে আছে। নামাজ শেষ,,, চােখ বড় বড় করে সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে । লজ্জায় আমায় পুরো মুখ লাল হয়ে গেলো। হুজুরের সাথে আমার ভাল সম্পর্ক তাই চালাকি করে হাত তুলে মুনাজাত দিল। আমিও এই ফাঁকে বেচে গেলাম । নাহ এত সহজে আমাকে ছাড়বে না। বড় চাচা অনেক রাগারাগি করেছে সাথে গালাগালিও করছে , আর কত এগুলো এবার ছাড় বাজে দেখায় । জেদ করে পাখিটাকে টানা ১ সপ্তাহ খাচায় বেধে রেখেছিলাম। ছেড়েই-তো রাখি, না গেলে তাে আমার কি দােষ। সময়ের সাথে এগুলো আর এডযাস্ট হয় না । আর এখন মিঠুর ৩ বছর । সব খায় সব কিছু বলতে পারে। মাঝে মাঝে মনে হয় এই মিঠুকে নিয়ে সত্যিই অনেক দূরে চলে যায় । কোন এক গ্রামে যেখানে মুক্ত মনে উড়তে পারে , চলতে পারে। আর আমি খুজে না পেয়ে শিশ দিব আর আমার শিশের আওয়াজ শুনে সে সব কিছু ছেড়ে আমার কাধে এসে বসবে।।।।।।
©somewhere in net ltd.