![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোট আপাকে কেউ দেখতে যাই না এ নিয়ে আপুর ভিষণ মন খারাপ ,শুশুর বাড়িতে একা থাকতে থাকতে আপু ও কেমন মনমরা হয়ে গেছেন । প্রতিদিনেই কথা হয় মোবাইলে আর বারবার একই কথা বলতে থাকেন তোরা কবে আসবি ঢাকাতে অনিক দিন তোদের কে দেখি না । এ কথা শুনলে খারাপ লাগে কিন্তুু কিছু করার থাকে না ,, সময় অনেকটা হিসাবের । আব্বা মারা যাওয়ার পর আমার কলেজ আর পরিবারের কাজের জন্য বাড়তি সময় আমার পাওয়া খুবই দূর্লভ ছিলো । আর একা একা তখন ঢাকা যাওয়া তো দূরের কথা পাশের গ্রামে গেলেও আম্মার দুশ্চিন্তা বেড়ে যেতো। তাই অল্প পরিসরই আমার সীমাবদ্ধতা । বেড়ে উঠার ডোজ এ অল্প জায়গায় । ঢাকা যাওয়ার আর সময় হলো না । দুলা ভাই (বড় আপার জামাই ) আসছেন বিদেশ থেকে , বিদেশ থেকে আসার পূর্বেই বড় আপাকে জানিয়েছেন দেশে আসলে সবাই কে ঢাকাতে বেড়াতে নিবেন। যে কথা সে কাজ । হঠাৎ একদিন আমাকে ডেকে বলে শালা বাবু সামনের সাপ্তাহে আমরা সবাই ঢাকা যাবো প্রস্তুুত থেকো , আজই ট্রেনের টিকেট কাটবো , আমি বললাম তাহলে আমরা ট্রেনেই যাচ্ছি। হুমম,, তবে অনেক দিন থাকবো , পুরো ঢাকা শহর ঘুরবো , তোমার আপাকে ঢাকার ওলি গলি সব জায়গা ঘুরাবো , ঢাকাতে সেনেমা দেখাবো সবাই কে । আপা পাশেই ছিলেন ,, এ সব শুনে বললেন তোর দুলা ভাই কে থামতে বল আগে আমরা ঢাকা যায় তার পর দেখা যাবে কোথায় ঘুরতে যাওয়া যায় । আমার ও ঢাকা নিয়ে সপ্ন দেখা শুরু হয়ে গেলো । সময় করে দুলা ভাই সবার জন্য ট্রেনের টিকেট কেটে নিলেন । তখন শিত কাল ছিলো। প্রচুর শীত পড়তো। ট্রেনে ঠান্ডা বাতাস গায়ে লাগবে তাই আম্মা আমার শীতের পোশাক গুলো ধুয়ে আলাদা করে রেখেছেন । মজার ব্যাপার হলো আপার প্রায় কাপড় চোপড় আম্মা নিজের হাতে বানাতেন । কিছু টা টেইলারের কাজ জানতেন । বুনন সুতা দিয়ে শীতের কাপড় বানাতেন। পুরো কলেজ লাইফ পর্যন্ত ফতুয়া পড়ে পার করেছি । প্রত্যেকটা ফতুয়ায় নিপুন হাতের সেলাইয়ে ফুলের কাজ ছিলো। যা দেখতে ও অনকে সুন্দর ছিলো । পরে ও মজা পেতাম । একদিন সবাই ঢাকা যাওয়া প্রস্তুতি নিয়ে ষ্টেশনে অপেক্ষা করছিলাম । আমাদের ঢাকা যাওয়ার ট্রেন আসতে ১ ঘন্টা লাগবে ষ্টেশন মাস্টার এমন কথাই জানালেন। তাই ষ্টেশনের রেষ্ট হাউজে সবাই কে বসে রেখে আমি দুলা ভাইয়ের সাথে একটু হাটা হাটি করছিলাম । একটু পরে দুলা ভাই ষ্টেশনের বুক লাইব্রেরীর উদ্দেশ্য হাটতে থাকলেন , সেখান থেকে একটা দৈনিক পত্রকিা কিনলেন । অনকে গুলো বই আর ম্যাগাজিন একটা কাচের তাকের ভিতরে সুন্দর ভাবে সাজানো ছিলো । কাচের উপর থেকে সবগুলো নাম স্পশ্ট পড়া যেতো , আমি সবগুলো নাম একটু জুড়ে পড়তে লাগলাম , তা দেখে দুলা ভাই বলল শালা বাবু বই লাগলে একটা কিনতে পারেন । ট্রেনে বসে বসে পড়বেন। খারাপ বলেন নি , তাই কোন বইটা নিবো দেখতে দেখতে একটা বই কিছুটা ডাকা ছিলো তা কি লেখা স্পশ্ট বুঝা ঝাচ্ছিলো না । তাই আমি বই বিক্রেতাকে বললাম ভাই ডাকাপড়া ঐ বইটা দেন। কিন্তুু দোকাদার ঐ বইটা দিতে রাজি হন নাই ,, বললেন এইটা বড়দের বই তোমাকে দেওয়া যাবে না । তখন বড়দের বইয়ে কি থাকে না জানলে ও এখন আর অজানা নয় । এখন বড়দের ছোটদের বই এক সাথেই রাখা হয় । জানা ওজানা এখন হাতের মুঠয় । চাইলেই সব কিছু দেখতে পারবেন । ১ ঘন্টা পর ঠিকই ট্রেন এসেছে , মানুষ সব মিলিয়ে আমরা ৭ জন । বেজোড়। ৭ টা টিকেট কাটা হয়েছে ৭ জনের জন্য । ৩ জন করে প্রতি সিটে বসলে দু দিকে ছয় জন । এজন্য অন্য সিটে বসতে হবে একজন কে , তাই আমাদের সাত জনের জুটি ভঙ্গ করে আমাকেই অন্য একটু দূরে আলাদা সেটে বসতে হলো । আম্মা হাত দিয়ে ইশারা দিয়ে বললেন জানালার পাশে বসতে তাতে বাহিরের প্রকৃতির সুন্দর দৃশ্য অবলোকন করা যাবে। আমার সিটের বাকি অংশটুকু তখনো ফাকা ছিলো কেউ আসে নি । ট্রেন ছেড়ে দিবে ঠিক ঐ মূহুর্তে দু জন যাত্রী এসে বসলো । দু'জনেই স্ত্রী লিঙ্গ। সম্ভবত মা মেয়ে হবে। ট্রেন ছুটতে লাগলো গন্তব্যর দিকে । জানালার পাশে বসে আমি প্রকৃতিতে মগ্ন ছিলাম । ট্রেনের ঝনঝনা ঝন মাতাল শব্দে মন কোথায় যে হারিয়ে গিয়েছে তা বলতে পারি নি। হঠাৎ একটু দূর থেকে আম্মা ডাকতে লাগলেন এ কিছু খাবি না , না কিছু খাবো না । পরে । পানির বোতলটা আম্মার হাতে ছিলো আমি ইশারা দিয়ে বললাম বোতলট দিন পানি খাবো। বোতলটা নিয়ে পানি খেতে লাগলাম । পানি খাওয়া শেষে পানির বোতলটাতে পানি অর্ধেক রেখে দিয়েছি, পরে পিপাসা লাগলে আবার খাবো এ ভেবে । পাশে থাকা দু'জনরে একজন আমার হাতের বোতলটা দেখে বলে , একটু পানি খাওয়া যাবে। সিউর নিতে পারেন আর কিছু না ভেবেই পানির বোতলটা দিয়ে দিলাম ,পাশে থাকা মেয়েটা হাসি দিয়ে বোতলটি ফেরত দেয় , আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ । ট্রেন তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিয়েছে বলে পানি কিনতে পারি নি , কোন সমস্য নেই আপনার লাগলে আপনি আবার নিতে পারবেন। এমন করে দু জনের কথা বলা চলতে থাকে অনকেক্ষন দরে । মেয়েটা সুন্দরি ছিলো বয়সে আমার চেয়ে ৫ মাসের ছোট । কিন্তুু গুছিয়ে কথা বলার শৈলী দেখে আমারি মনে হয়েছে আমি তার থেকে ছোট। হাস্যকর কন্ঠস্বর আর লম্বা সুন্দর চেহারাটা দেখতে দেখতে কখন যে সপ্নের রাজ্যে চলে গিয়েছিলাম তা আর বলতে পারি নি । দু' জন দুজনার হাত ধরে হাটতে হাটতে কত পর্বত পাড়ি দিলাম তাও অজানা । এ রাশ বিশ্রামে ফাকে কাছাকাছি গা ঘেষে বসে কথামালার গল্পে হারিয়ে যেতাম সকাল বিকাল। সন্ধা গনিয়ে আসলো আমার চোখ যখন অন্ধকারে আর আলোর মুখ দেখছিলো না তখন চোখ খুলে দেখি তার হাত আমার মুষ্টিতে বাধা । খানিকটা লজ্জা পেয়ে হাত টা টেনে সরিয়ে নিলো । আমি ও আমাার অবস্থানে ফিরে আসলাম। তখনো ট্রেনের ক্লান্ত মানুষ গুলো ঘুমিয়ে ছিলো । ট্রেন গন্তব্য পাড়ি জমালো । জানা অজানার পাঠ অল্পতেই শেষ হয়ে গেলো । কখন যে কে কোথায় চলে গেলো আর দেখা হলো না । পানির বিনিময়ে বুকে বরফ জমালাম। শত শত দিনের পর আজ এ দিন টা আবার ফিরে এলো একই সময়ে । কিন্তুু মৃধ হাসি আর হাস্যকর কন্ঠস্বর আমার হ্নদয়ে এখনো বাজনা বাজে । আমি সেই বাজনায় এখনো আহতো।
©somewhere in net ltd.