| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ডঃ এম এ আলী
সাধারণ পাঠক ও লেখক
ঢাকার আকাশ তখন ধুলোমাখা সন্ধ্যার রঙে ছিল ডেকে
বস্তির সরু গলিতে শিশুদের কান্না
নর্দমার স্রোতের মতো দীর্ঘশ্বাস ফেলে
সেই অন্ধকার জন্মঘরে প্রথম আলো দেখেছিল
এক বস্তিবাসী কন্যা শিরিন
এখনো এক অচেনা নাম
যার ভেতর একদিন পুরো বস্তির ভাগ্য
নড়বড়ে হয়ে উঠবে জেগে
যা নগরবাসির কাছে
এখনো কল্পনাহীন ।
তার জন্মের দিনটিতে
টিনের চালা কাঁপছিল ঝড়ের চাপে
আর তার মা বলছিল
এই মেয়ে আগুনের ভেতর দিয়েও হাঁটতে পারবে।
কেউ বিশ্বাস করেনি
বস্তিতে কেউ জন্মালেই
ভাগ্য যেন আগেই লিখে রাখে
পরাজয়ের কালি।
কিন্তু শিরিনের চোখে ছিল
অদ্ভত এক আলো
যেন আলোহীন শহরের বুকেও
সে পথ খুঁজে নিতে জানে।
দশ বছর বয়সেই শিরিন বুঝে যায়
পেটের ক্ষুধার ভাষা
আর সমাজের নির্লজ্জ শ্রেণিভেদ
মা বাসন মাঝায়, বাবা রিকশায়
তারও হাতে ঝাড়ু বালতির ওজন
শৈশবের খেলনাকে ভুলিয়ে দেয়।
যে ছেলেমেয়েদের হাতে খেলনা গাড়ি
তারা জানেও না যে বস্তিবাসী কন্যা
শিরিন কখনো খেলনার নামও শুনেনি,
যে প্লেটে ভাতের অর্ধেক ফেলে দেওয়া
সেই বাকি খাবারই
শিরিনের সারা দিনের খাদ্যের যোগান।
গুলসানের বড় বাড়িতে কাজে গিয়ে
শিরিন প্রথম দেখে
শহর শুধু রাস্তা নয়
দুটি ভিন্ন ভিন্ন দেশ
একদিকে উঁচু দালান
অন্যদিকে বস্তির দগদগে লড়াই।
এভাবেই
কষ্টের ওপর কষ্ট
শেখার ওপর শেখা
শিরিন বড় হতে থাকে
এক অনাঘ্রাত প্রাচীন যোদ্ধার মতো।
বয়স যখন ষোল ছুঁই ছুঁই
বস্তির গলিতে গানের মতো আসে
শহিদুল
রিকশাওয়ালা
কিন্তু হৃদয় ছিল ভোরের রোদের মতো স্বচ্ছ।
তাদের প্রেম ছিল
রুটি-ভাগাভাগির মতো সরল
শিতের রাতে এক কম্বল ভাগ করার মতো নিঃস্ব
তবু অঢেল
ঝড়ের রাতে হাতে হাত রেখে থাকা
আর ভবিষ্যৎ নামের স্বপ্নটাকে
শোঁ শোঁ বাতাসে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা
কিন্তু সুখ কখনো দীর্ঘস্থায়ী হয়নি
এই শহরের ধুলো-বিধ্বস্ত মানুষের কাছে।
ডেঙ্গু জ্বরে শহিদুল চলে গেলো
মুখে রেখে শেষ কথা
শিরিন , তুই লড়তে থামিস না…
তুই অনেককে পথ দেখাবি।
শিরিনের কোলের শিশুটি তখন
মাত্র আট মাসের
রিনা
মায়ের চোখে তখন
জ্বলে ওঠে অন্য আগুন
যা প্রেমের মৃত্যু থেকেও
বেশি উগ্র, বেশি জীবিত।
নগর রঙ্গমঞ্চে বেঁচে থাকার যুদ্ধ
ভাবনা একটাই
সেকি বস্তিবাসী অগ্নি কন্যা
হতে পারবে কোনদিন
যে বস্তির গলি ঘুরে ঘুরে
হালিমার নাইট শিফট
সুফিয়ার ফুটপাথের চায়ের দোকান
মিতুর সেলাই মেশিনের ঝনঝন
আর আয়েশার চাপাতির দোকান
সবার সাথেই দুটি কথা বলে
হার না মানার কথা শুনাতে।
প্রতিদিন সকালে
সে রিনাকে রেখে যায়
বস্তির স্কুল-ঘরে
যেখানে বাঁশের বেঞ্চ
চকের ধুলো
আর শিক্ষকও প্রায়ই না-থাকা
তার জীবনের নতুন অধ্যায়।
ধুলো উড়তে থাকা ঢাকা শহর
শিরিনের সামনে
একটা বিশাল রঙ্গমঞ্চের মতো
যেখানে ধনী-গরিব
দুই চরিত্রই অভিনয় করে
এক নাটকে
যার নাম অসাম্য আর বঞ্চনা।
কিন্তু শিরিন বুঝে যায়
কেবল নিজের বাঁচা নয়
এই লড়াইয়ের ভেতর আছে
অন্য নারীদের স্বপ্ন।
হালিমার চোখে রাত জমে থাকে
সুফিয়ার হাত ফেটে যায়
গরম কেটলির দগদগে দাগ
মিতুর স্বামী তাকে মারে
তবু সে সেলাই দেয়না ছেড়ে
শিরিন দেখে
নগরীর অদম্য শক্তি এরাই।
করিল বস্তিতে ভয়াল আগুন শেষে
যেথায় শুধু টিনের সরু খাঁজ
শিরিনের ঘর ছাইভস্ম,
নেই আর বাঁচার সাজ।
গায়ে ধোঁয়ার দগ্ধ গন্ধ
চোখে রিনার জন্য ভয়
খোলা মাঠে রাত কাটে
মা–মেয়ের অঘুম রাত
আগুনে সব হারিয়ে রিনার প্রশ্ন
হামরা এলা কোনঠে যামো ?
বস্তির টিনের চালা যখন জ্বলে যায়
লেলিহান আগুনে
শিশুরা ভয়ে কাঁপে
নারীরা চিৎকার করে
অন্ধকার গলিতে দৌড়াদৌড়ি।

শিরিন তখন
শুধু নিজের ঘর নয়
সব ঘরের পাশে দাঁড়ায়
রিনাদেরকে নিয়ে যায় দুরে
সে টিন টেনে ধরে
বালতি সাজায়
মানুষ বাঁচায়
গর্ভবতী আয়েশাকে কাঁধে করে
আগুনের ধুম্র থেকে আনে তুলে।
সেই রাতে
পুরো বস্তি দেখেছিল
শিরিনের চোখে এক নতুন জ্যোতি।
সে যেন শুধু এক নারী নয়
বরং এক সম্ভাবনার নেতৃত্ব।
পরদিন ভোরে ফেরে তারা
ভাঙা টিনের থা’ন
কাচা মাটির নিচে তখনো আগুনের উত্তাপ
তবু শিরিন চিনে নেয় তার ছোট্ট খুপরি ঘর
স্বপ্নগুলোর ছাইকে বুকে বেঁধে বলে
অগ্নি কন্যা হয়ে বাঁচতে হবে এবার ।
ঘটনা পরম্পরায় শক্তিতে বুক বেধে
শিরিন ভাবে তারা নীজেরাই
সংগঠিত ভাবে গড়তে পারে
বস্তিবাসী নারীদের দল
কোনটার নাম হবে আগুনের ফুলকি,
কোনটা ঝড়দল,
কোনটা শক্তি-বৃত্ত,
বৃষ্টি, অগ্নিকাণ্ড, স্বাস্থ্যঝুঁকি,
বিদ্যালয়
সব নিয়েই তার পরিকল্পনা।
নগরবাসী দেখতে পারবে তাকিয়ে
এই বস্তির ভেতরে
নারীদের জাগরণ
যেন এক মহাবিস্ফোরণ।
ঢাকার রাত এখনো শব্দে-শ্বাসে ভার
দালানের আলো এখনো বস্তির ঘরে পৌঁছায় না
তবু শিরিন জানে
একদিন রিনা বড় হবে
একদিন বস্তির সব শিশুই
আরও বড় স্বপ্ন দেখতে পারবে।
শিরিন ভাবে এক অগ্নি কন্যা হয়ে
প্রতিদিন হাটবে
উত্তরার মোড় থেকে
ধানমন্ডির অলিগলি পর্যন্ত
চাকরি নয়
দায়িত্বের পথে।
নারীদের হাসি
শিশুদের স্কুলব্যাগ
বৃষ্টির রাতে
কাদার ওপর দাঁড়ানো সুরক্ষাগৃহ
এসকলই তার নতুন নির্মাণ ভাবনা
শহর জানুক বা না-জানুক
তাদের ঘামের ভেতর
লুকানো আছে এক মহাকাব্যের সুর।
যেখানে ৩কোটি ৬০ লক্ষ্যের
মহানগরীতে থাকা প্রায়
২৫ লক্ষ বস্তিবাসী নারী
উঠে দাঁড়াতে পারে
আগুনের ভেতর থেকে
ধুলোমাখা দিনগুলোকে
অসীম সাহসের আলোয় সাজিয়ে।
সেখানে রাতে রিনা ঘুমিয়ে গেলে
নিঃশব্দে আঁধার ঘরে বসে শিরিনের
চোখের ভেতর আগুনের মতো ভাসে
বাঁধ ভাঙ্গা গানের মত একটি বাক্য
কেউ যেন অভাবের কারণে হেরে না যায়
ধুলোতেও যদি গাছ জন্মাতে পারে
তবে বস্তির নারীরাও পারবে।
এটাই যেন শিরিনের প্রতিশ্রুতি
এটাই অগ্নিকন্যার মহাকাব্য
এমনই হোক বস্তিনারীর জাগরণ
যেন হয় আগুনের ফুলকির মতন
যেন সকলেই পায় বাঁচার জন্য
সম-অধিকার আর সন্মান ।
ছবি সুত্র : গুগল অন্তরজাল
০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩৫
ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
শুনে ভাল লাগল । নিশ্চয়ই বস্তিবাসীদের জীবনাচার নিয়ে আমার থেকে
আপনার অভিজ্ঞতা অনেক বেশী ।
বছর পচিশেক আগে ঢাকার পরিচিত এক এন জি উর চেয়ারম্যনের
অনুরোধে ঢাকা শহরের এক বস্তিবাসী লোকদের জন্য প্রকল্প দলিল
তৈরী করে দিয়েছিলাম । জার্মান সরকারের ভনুদানে প্রকল্পটি
বাসতবায়িত হয় । তখন বস্তিবাসীদের দুর্দশা লাগবে প্রকল্পটির সাথে
কিছুটা যুক্ত থেকে ব্স্তিবাসী মানুষদের জীবন যাপনের করুন চিত্র
খুব কাছ হতে দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম ।
শুভেচ্ছা রইল
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০০
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: আমি ছোটবেলায় গরিব এবং প্রায় বস্তি টাইপ এলাকায় বড় হয়েছি। এসব গরিব এবং বস্তির মানুষের লাইফ সরাসরি দেখার সুযোগ হয়েছে।