| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ডঃ এম এ আলী
সাধারণ পাঠক ও লেখক
ভোরের কুয়াশা মুছে যখন সূর্য ওঠে শীতল ধানক্ষেতে
যখন নুয়ে থাকা কৃষকের পিঠে আলো পড়ে নতুন দিনের
যখন চুল্লির উত্তাপে পোড়া শ্রমিক মুছে চোখের পানি
যখন কারখানার সাইরেন ভোরের নিস্তব্ধতা ছিঁড়ে বলে
চলো, আরেকটা কষ্টের দিন করি শুরু।
ঠিক তখনই জন্ম নেয় একটাই সত্য
এ দেশের মেরুদণ্ড হলো সেই প্রান্তিক মানুষ
যাদের ঘামেই ভিজে থাকে রাষ্ট্রের প্রতিটি ইট
দেশের মানচিত্রজুড়ে তাদের রক্ত ঘামের দাগে
এই ভূখণ্ড টিকে আছে প্রতিদিন, প্রতিঘণ্টা, প্রতিস্থবক
প্রতিটি শস্যদানায় যাদের নিঃশ্বাস।
কিন্তু প্রশ্ন আজ ঘুরে সকল মানুষের মুখে
যারা সবচেয়ে বেশি বহন করে দেশের বোঝা
তারা কি রাষ্ট্রের সিদ্ধান্তে থাকে সবচেয়ে কাছে?
যারা ছড়িয়ে থাকে গ্রামের মাটিতে কিংবা শহরের ধুলায়
তাদের কি শোনা হয় রাজধানীর উঁচু ভবনের নীরব কক্ষে?
যারা পৃথিবীর বোঝা টেনে নেয় কাঁধে
তারা কেন নেই পর্লামেন্টের টেবিলে?
যাদের চোখে ক্ষুধা আর আশার মিশেল
তাদের মুখ কি হতে পারেনা রাষ্ট্রের ভাষা?
দশকের পর দশক
রাজনীতি আটকে গেছে
সমৃদ্ধ, সুবিধাবান, শক্তিমান মানুষের পদচিহ্নে
যেখানে প্রান্তিক মানুষের ব্যথা
শুধু নির্বাচনের দিনে একটু স্মরণ হয়
তারপর ভুলে যায় দ্রুত, ধুলো উড়িয়ে
দামী প্রাডো গাড়ীর কালো ধোয়ার বাতাসে।
তারপরেও প্রশ্ন রেখে যাচ্ছে
শ্রেণিবিন্যাসের রাজনীতি
নেতৃত্ব কি কেবল সুবিধাবানদের
একচেটিয়া অধিকার?
তাই, এইবার মানুষের হৃদয়ে জেগেছে অন্য এক ডাক
মানুষের নেতৃত্ব মানুষের হাতেই ফিরুক
রাষ্ট্রের হাল ধরুক শ্রমের আলোয় বড় হওয়া মানুষ।
কারণ তারা জানে
ঝড়ে পুড়ে যাওয়া ঘর কেমন লাগে
বন্যায় ধান হারানোর মরণ ভয় কেমন
মাসের শেষে মজুরি কম পেলে
কিংবা মাঝপথেই হঠাত করে চাকুরীটা চলে গেলে
কিংবা অকস্থাৎ কারখানায়
আগুনে জ্বলছে গেলে
ক্ষুধার জ্বালায় পোষাক কর্মীর ঘরে
একটা শিশু কেমন করে রাতভর কেঁদে মরে।
তারা জানে জীবনের নোটবই
কর্মসংস্থানের অভাবে জীবন বাজী রেখে
অভাবের তারনায় পরিবার পরিজন ছেড়ে
বিদেশে পারি দিয়ে মানবেতর পরিশ্রম করে
যেখানে প্রতিটি পাতায় আছে বাস্তবতার দহন
আশার আলো, অবিচারের ক্ষতচিহ্ন
আর টিকে থাকার দীর্ঘশ্বাস।
এই অভিজ্ঞতা, এই কঠিন সত্য
কোনো প্রাসাদের জানালা দিয়ে যায় না দেখা।
তাই নেতৃত্ব আসুক তাদের থেকে
যারা রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে
বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে রেখেছে এতদিন ধরে।
হে রাষ্ট্র, হে জনগণ, আজ শোনো
এ দাবী শুধু রাজনীতির নয়
এ দাবী মানবিকতার, মর্যাদার
এ দাবী বঞ্চিতের পক্ষে উঠে আসা
এক নতুন ভোরের গান।
তাই আসুন দেশ প্রেমী সকলই
এবারের নির্বাচনী ডামাঢুলে সমস্বরে বলি
নেতৃত্বে আসুক সেই মা, সেই বোন
যিনি আঙুলে সুঁই ফোটায় কাপড়
সেলাই করে সংসার যাচ্ছেন চালিয়ে,
নেতৃত্বে আসুক সেই কৃষক
যার ফসল পুরো দেশ খায়
কিন্তু নিজের ঘর অভাবে পুড়ে যায়,
নেতৃত্বে আসুক সেই রিকশাচালক
যার পায়ে লেগে থাকে শহরের ধুলো
কিন্তু চোখে থাকে একটি দেশের স্বপ্ন।
হে আমার দেশ হে আমার মাতৃভুমি
তুমি কি একবারও ভাববে না
যাদের ঘাম নদী হয়ে বয়ে যায়
যাদের কান্না বৃষ্টির মতো নেমে আসে
যাদের হাসি খুব ছোট
কিন্তু হৃদয় বিশাল
তাদের হাতই সবচেয়ে নিরাপদ
তোমার ভবিষ্যতের হাল ধরার জন্য?
বিশ্ব আমাদের শিখিয়েছে
যেখানে নিচ থেকে মানুষ উঠে এসেছে
সেখানে অন্যায় ভেঙেছে
সেখানে দুর্নীতি দমেছে
সেখানে একতা জন্ম নিয়েছে
সেখানে রাষ্ট্র মানুষকে টেনে নিয়েছে বুকে।
বাংলাদেশও পারে
যদি আমরা বলি
এইবার, এই নির্বাচনে
নেতৃত্বে চাই সত্যিকারের মানুষের প্রতিনিধি,
জন্মসূত্র নয়, বংশ নয়, পুঁজি নয়
ন্যায়, শ্রম, সততা, বেঁচে থাকার সংগ্রাম
এই চার স্তম্ভে দাঁড়ানো নেতৃত্ব চাই।
হে দেশ, হে আকাশ, হে নদী
তোমাদের সাক্ষী রেখে আজ দাবি তুলি
প্রান্তিক মানুষের নেতৃত্বই হোক
আমাদের জাতীয় অঙ্গীকার
আমাদের নতুন পথচলার প্রতিজ্ঞা।
যারা মাঠে দাঁড়িয়ে থাকে দিনশেষের আলোয়
যারা নদীতে নৌকা চালায় জোয়ারের ভয়ডর নিয়ে
উত্তাল সাগরের বুকে ধরে মাছ
ঝড় যঞ্জায় ডুবন্ত ট্রলারের হাল ধরে,
বাওয়ালিরা মধু কুড়ায়
রয়েল বেঙ্গলের সাথে বুঝাপড়া করে,
নির্মাণ শ্রমিক যারা বিনা বিমায়
ঝুকি কাধে নিয়ে উচু দালান গড়ে
নীজেরা থাকে বস্তিতে কুড়ে ঘরে,
যারা কারখানায় মেশিনের শব্দে হারিয়ে ফেলে
নিজেদের হৃদস্পন্দন
তাদের জন্য আজ আমরা বলি ।
রাষ্ট্র তোমাদরও
নেতৃত্ব তোমাদেরই হোক
বাংলাদেশ তোমাদের হাতেই সবচেয়ে নিরাপদ
এই আমাদের নির্বাচণী ভাবনা
এই আমাদের জনদাবী
এই আমাদের আগামী দিনের ওড়ানো পতাকা
যে পতাকায় লেখা থাকবে
নির্বাচনের মাঠে প্রান্তিক মানুষের
লড়াই এর সুযোগ
আর গড়া হোক সমৃদ্ধির বাংলাদেশ।
©somewhere in net ltd.