নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আধা সাইক্লিস্ট, আধা গিটারিস্ট আর পুরো দস্তুর মাথাখারাপ একজন মানুষ। ভাল লাগে হাজারো মানুষের ভিড়ে দুচাকায় ঘুরে বেড়াতে..

বিভ্রান্ত পথিক ২০১০

এমন মানবজনম আর কি হবে? মন যা করে ত্বরায় কর এ ভবে!

বিভ্রান্ত পথিক ২০১০ › বিস্তারিত পোস্টঃ

খামচং-এর পথে

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:৪৪

খামচং পাড়ায় সময়গুলো ছিল অদ্ভুত মায়াবী। সেখানে পৌছুতে যে পরিমাণ পরিশ্রম করতে হয় তার সব মূহুর্তেই হাওয়া হয়ে যায় পাহাড়ের পরিবারগুলোর উষ্ণ অভর্থ্যনা আর পাহাড়ি কোমল, সরল, স্নিগ্ধ জীবনের সাথে মিশে যেতে পারলে।


সাইক্লিং-এর আবরণে মোড়ানো এই পাগলাটে হাইকিং / ট্রেকিং-এর কথা যতবার মনে পড়বে, ঠিক ততবারই মনে পড়বে খামচং পাড়ায় আমাদের আশ্রয়দাতা ডনের কথা। খামচং-এ যাবার সময় পথিমধ্যে এক জুমঘরে এই অনন্যসাধারণ মানুষের সাথে আমাদের দেখা। খামচং পাড়ার এই বাসিন্দা, তাঁর বাসায় থাকবার দাওয়াত দিয়ে গুটিগুটি পায়ে ক্রমেই দিগন্তে মিলিয়ে গেলেন।



দেখতে দেখতে পাহাড়ের কোলে রাত নেমে এল, আর আমরা ছ'জন ক্লান্ত-শ্রান্ত অভিযাত্রী চাঁদের আলোয় পথ হারালাম।


খুবলানো মাটির রাস্তা শেষ করে আমরা পাহাড়ের কোলে পাগলের মত রাস্তা খুঁজছি, বেগুন গাছের কাঁটায় ক্ষতবিক্ষত একেকজনের হাত পা। হুট করে সামনের রাস্তা নেমে গিয়েছে গিরিখাদে, যেপথ দিয়ে হাটাই দুঃসাধ্য, সে পথে সারাদিনের ক্লান্ত শরীর নিয়ে কীভাবে নামা সম্ভব কিছুতেই মাথায় ধরছে না। মনের দ্বিধা প্রায় ভয়ে রূপ নিয়েছে, তখনই দূরে শোনা গেল ডনের কন্ঠস্বর। কাছে এসে ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলায় সে আমাদের বুঝালো, যে পথে আমরা এসেছি এপথে প্রয়োজন না পড়লে পাহাড়ের মানুষও নাকি আসে না...
তা কে আসে আর না আসে আমাদের বুঝতে বয়েই গেছে! কোনমতে সাইকেলগুলোকে গয়াল চলার পথ থেকে দূরে, ঝোপের মাঝে স্তুপ করে রেখে আমরা নামতে লাগলাম পাহাড়ের গা বেয়ে, ডনের বাড়ির উদ্দেশ্যে...

সে রাতে তাঁর বাড়িতে আমি কীভাবে পৌঁছেছি তা মনে নেই। শুধু মানুষের বসতি, মাথার উপরে একটু চালা আর গায়ের নিচে কাঠের ছোয়া পেয়ে আমি ঘুম, যাকে ঘুম না বলে অজ্ঞান বলাটাই বুঝি শ্রেয়! আমার ঘুম ভাঙ্গে (মতান্তরে জ্ঞান ফিরে) পাহাড়ি কচুর তরকারির ঝোল সাথে জুমের ভাত আর পাহাড়ি মরিচের গন্ধে। ডন আমাদের জন্য এ "সামান্য" আয়োজন করলেও মশিউর ভাই বলে, এ হল লাইফের সবচেয়ে "এক্সপেন্সিভ খাবার", আমি তাতেই সায় দিয়ে খেতে বসে যাই।


রাতে শোবার ব্যবস্থা হয় যেখানে রান্না তাঁর ঠিক সামনেই। আমার ডানপাশে রঞ্জু ভাই, বা পাশে তারিক ভাই, পায়ের কাছে জলন্ত আগুনের আঁচ থাকবার পরও শীতে কাঁপি থরথর করে। আবারও উদ্ধারকর্তা ডন, দিলেন কয়েকটা বহু ব্যবহারে জীর্ণ, ধুলামাখা কম্বল। শহরের আলো ঝলমলে ড্রাই ক্লিনার্সদের হাতে ধোয়া কাপড়ের কী সাধ্য সেই ধুলিজীর্ণ কম্বলের সাথে টেক্কা দেয়! স্লিপিং ব্যাগ লাইনারে নিজেকে পেঁচিয়ে, মাথার নিচে কিছু একটা ফেলে সেই কম্বলের ভেতর ঢুকে যে আমার দ্বিতীয়বার জ্ঞান হারানোর পালা তখন!

এর পরের ছবিগুলো পরদিন সকালে তোলা। খুব বেশিবার পাহাড়ে যাই নি। (নিন্দুকেরা যদি শুনে সেই সংখ্যাটা ৩, আমাকে সকালে বিকালে দুই বেলা করে ধুবে নিশ্চিত!) তবে, যতবারই গিয়েছি, কোন নির্দিষ্ট কোন চুড়া সামিট করার চেয়ে পাহাড়ের কোলে থাকা কোন পাড়ায় সময় কাটানোতেই কেন যেন বেশি আগ্রহ হয়েছে আমার।




তাই পরদিন সবাই যখন রুংরাং সামিট করতে গেল, আমি খামচং পাড়ার বাচ্চাদের সাথে খেলতে, ছোট্ট চেয়ারে ঠ্যাং তুলে বসতে আমি খামচং পাড়ার বাচ্চাদের সাথে খেলতে, ছোট্ট চেয়ারে ঠ্যাং তুলে বসতে, দু-এক পাতা বই পড়তে আর পাহাড়ের জীবন দেখতে পাড়াতেই থেকে গেলাম।


যতই আদিখ্যেতা (ক্লিশে) মনে হোক সেসময় ডনের বাড়িতে তোলা এই ছবিটা আমার অসম্ভব প্রিয়।



(সামুতে লিখি না বহু বহু বছর। মাঝে ইউজারনেম পাসওয়ার্ড ভুলে গিয়ে এক ভজগট অবস্থা দাঁড়িয়েছিল। আজ কী মনে হল, ভাবলাম সপ্তাহদুয়েক আগের বান্দরবান ট্রিপটা নিয়ে লিখি!)

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:১১

রূপম রিজওয়ান বলেছেন: ওয়েলকাম ব্যাক টু সামু!!!
কদিন আগে আরেকজন ব্লগারও পোস্ট দিয়েছিলেন;পাহাড়ি জীবনযাত্রার প্রতি আগ্রহ জাগলো। সুযোগ মিললে কখনো, এরকমই একটা ট্রিপে যেতে হবে।
শুভকামনা!

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৩৭

বিভ্রান্ত পথিক ২০১০ বলেছেন: ধন্যবাদ রূপম, প্রায় সাড়ে ছয় বছর বিরতি দিয়ে ব্লগে লিখলাম।
আপনি কোথায় থাকেন, পাহাড়ে যাওয়া আপনার জন্য কত্টা ফিজিবল জানিনা। তবে সুযোগ থাকলে জলদি যান, ঘুরে আসুন। সব কিছুকে সর্বনাশা উন্নয়ন গ্রাস করে নেবার আগেই!

২| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:০৩

ওমেরা বলেছেন: পাহাড়ী বাচ্চাদের সাথে ছবি কই? ছবি গুলো ভালই ছিল কিন্ত একটা ছোট, একটা বড় তাই বেশী সুবিধা লাগল না দেখে।

তাও আপনাকে ধন্যবাদ আর অনেকদিন পর ফিরে আসার জন্য।

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:২০

বিভ্রান্ত পথিক ২০১০ বলেছেন: ছবিগুলো মোবাইলে আসলে বিভিন্ন রেজুলেশনে তোলা, সামুতে ঠিক কোন রেজুলেশনে দিলে ঠিকঠাক আসবে এখনো বুঝে উঠতে পারছি না, তাই এমন ছোট বড়।

এখানে প্রথম দিন আর দ্বিতীয় দিনের দুপুর পর্যন্ত ছবি আছে। খামচং এ বাচ্চাদের সাথে ছবি নেই, তিন্দুতে আছে। পরে কখনো তিন্দু পর্যন্ত লেখলে দেব হয়ত আবার।

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে :)

৩| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:২১

মা.হাসান বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন। ভালো লেগেছে। পরের অংশ লেখার অনুরোধ রইলো।

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:২৩

বিভ্রান্ত পথিক ২০১০ বলেছেন: ধন্যবাদ, আপনার ভাল লেগেছে জেনে ভাল লাগলো :#)

৪| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:২৮

রাজীব নুর বলেছেন: শীত কেমন ওখানে??

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:২৪

বিভ্রান্ত পথিক ২০১০ বলেছেন: যে ছবিগুলো আপনি দেখছেন, আমরা শীতে কাঁপছি, ঢাকার মানুষ তখন প্রায় গরমে ঘামছে :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.