নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এক জন গর্বিত ভারতবাসী। মোহনবাগানের মেয়ে।সহ শ্রম কমিশনার, স্বঘোষিত নারীবাদী, জননী, স্ত্রী, কন্যা এবং পুত্রবধূ। আপন খেয়ালে চলি, মনের কথা বলি। আমার ব্লগ amianindita.blogspot.in

আমি অনি

এক জন গর্বিত ভারতবসী।মোহনবাগানের মেয়ে।সহ শ্রম কমিশনার, স্বঘোষিত নারীবাদী, জননী, স্ত্রী, কন্যা এবং পুত্রবধূ। আপন খেয়ালে চলি, মনের কথা বলি। আমার ব্লগ amianindita.blogspot.in

আমি অনি › বিস্তারিত পোস্টঃ

মেয়েটা ভাল

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৭

‘ছেড়ে দিন। ডিভোর্স দিয়ে দিন। ও আর ফিরে আসবে না । আর এলেও এ সম্পর্ক কোনদিন ঠিক হবে বলে আপনার মনে হয়? ক্ষত থেকেই যাবে।’ আমার উগ্র ফেমিনিস্ট কান বিশ্বাস করতে পারছিল না, আমি? যে কিনা কথায় কথায় ‘ইউনিভার্সাল সিস্টারহুডে’র দোহাই দি, আমি এ মন্তব্য করছি, তাও এক জন মহিলার সম্বন্ধে?
শ্রোতা হলেন সুব্রত বাবু। স্থান ভাষা ভবন, জাতীয় গ্রন্থাগার। ফেব্রুয়ারীর কলকাতা। ঝকঝকে নীল আকাশ, মিঠে রোদ, ফুরফুরে হাওয়া। সামাজিক সুরক্ষা মাস অর্থাৎ জানুয়ারী সবে শেষ হয়েছে। আমরা কে কেমন কাজ করেছি তারই পর্যালোচনা করার জন্য মাননীয় শ্রম মন্ত্রী দক্ষিণবঙ্গের সমস্ত শ্রম কমিশনার এবং ইন্সপেক্টরদের মিটিং এ ডেকেছেন।
সেখানেই বহুদিন বাদে সুব্রত বাবুর সঙ্গে দেখা। উনি এক কালে আমার ইন্সপেক্টর ছিলেন। বেশ কিছু বছর আগের কথা। তখনও পরিবর্তনের হাওয়া ওঠেনি। সিঙ্গুর- নন্দীগ্রাম তখনও নেহাতই শান্ত জনপদ। পশ্চিম বঙ্গের রঙ্গমঞ্চে তখনও কিষানজীর আবির্ভাব হয়নি। লেবার সার্ভিসে যোগ দেবার সাথে সাথেই পাঠিয়ে দিল পশ্চিম বঙ্গের সীমান্তে এক ছোট্ট মহকুমার এ.এল.সি করে।
রাঢ় বাংলা। লাল মাটির রুক্ষ দেশ। সহজ সরল মানুষ জন। অফিসে যোগ দেওয়া মাত্রই পরপর দুজন ইন্সপেক্টর অবসর নিলেন, যেন আমারই প্রতীক্ষায় ছিলেন। রয়ে গেলাম আমি, এক মহা ধুরন্ধর চোর আর্দালি আর এক আধপাগল নৈশ প্রহরী। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কিছু দিন চলল। বেদম হবার আগেই এক জন অবসর প্রাপ্ত করণিককে পেয়ে গেলাম। নামমাত্র মজুরীর বিনিময়ে সমর বাবু এসে হাল ধরলেন আমার অফিসের। এই স্থূলকায় বিরল কেশ ভদ্রলোকটিকে আমি আদর করে ডাকতাম বড়বাবু বলে।
এমতবস্থায় একদিন কলকাতা থেকে বড় সাহেব ফোন করে সুখবর দিলেন, শক্ত-পোক্ত এক যুবক ইন্সপেক্টর পাঠানো হচ্ছে, যাকে দেখলেই মনে হয় প্রচুর খাটতে পারে। পক্ষ কালের মধ্যেই সুব্রত বাবু এসে যোগ দিলেন। ভুমি পুত্র, জেলা সদরে বাড়ি। বেশ কালো, লম্বা, বৃষস্কন্দ, পেটানো চেহারা। ফুল হাতা শার্ট গুটিয়ে হাফ করে পরেন। দীর্ঘ দিন কোন দপ্তরে করণিক ছিলেন। যুবক নন, বয়স ৩৭ এবং অবিবাহিত।অ্যাডিশনাল কমিশনার সাহেব খুব ভুল কিছু বলেননি। প্রবল কর্মক্ষম বলেই আপাত দৃষ্টিতে মনে হল।
সুব্রত বাবুকে নিয়ে প্রথম দিকে খুব সমস্যা হয়। তরুণী মহিলা অফিসারকে উনি আদপে পাত্তা দিতে চাইতেন না। সমর বাবু এবং আধপাগল নৈশপ্রহরীর সাথে অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করতেন। অতি দুর্মুখ, ঘোরতর কর্মবিমুখ এবং অসৎ ওনার সখা ছিল আমার চোর আর্দালি। প্রায় দিনই দুজনকে অফিসে পাওয়া যেত না। শক্ত হাতে হাল ধরলাম। আবহাওয়া উত্তপ্ত হয়ে উঠল। বেশ কিছুদিন গরম হাওয়া বইবার পর, আস্তে আস্তে উত্তাপ কমে এল। কিছু দিন বাদে সব ধামাচাপা পড়ে গেল। যদিও তিক্ততার রেশ টুকু এবং মনের কোনে অবিশ্বাস রয়েই গেল।
আবহাওয়া স্থিতিশীল হতেই বুড়ো সমর বাবু ঘটকগিরিতে নামলেন। আমি হাত জোড় করে অব্যাহতি চাইলাম। সৌর তখন প্রোবেশনে উত্তরবঙ্গে আছে। শীঘ্রই বিয়ে করতে হবে না হলে এক জেলায় দুজনের পোস্টিং অসম্ভব। অতএব আমি বাদ। বাকি রইলেন সুব্রত বাবু। উনি লজ্জায় বেগুনী হয়ে সম্মতি সূচক মাথা নাড়লেন। দুজনে কোমর বেঁধে পাত্রী দেখতে লাগলেন। আমার অফিস প্রায় লাটে ওঠে।
আরো তিনটে ঋতু কেটে গেল। আমার বিয়ে হয়ে গেল। কয়েক মাসের মধ্যেই সৌর বি.ডি.ও হয়ে এল আমার মহকুমায়। নতুন সংসার, পুরানো অফিস। মসৃণ গতিতে এগিয়ে চলতে লাগলো আমাদের জীবন। কত শত নতুন অভিগতা, নতুন অনুভব। পাল্লা দিয়ে চলতে লাগলো পাত্রী খোঁজা। মাঝে মাঝে আওয়াজ দিতাম, কুমারটুলি তে বায়না দিতে যেতে হবে। মাতৃত্ব কালীন ছুটিতে যাবার মাস খানেক আগে সুব্রত বাবু এসে কার্ডটা দিলেন। স্থানীয় মেয়ে। বয়স ত্রিশ। বাবা সদরের নাম করা হোমিওপ্যাথ ডাক্তার। মেয়েও পাশ দিয়েছে তবে প্রাকটিস করে না।
দীর্ঘ ছুটি কাটিয়ে ফিরে এলাম। অফিসের অবস্থা যতটা ভয়াবহ হবে ভেবেছিলাম, দেখলাম তা নয়। সুব্রত বাবু বেশ খোশ মেজাজে আছেন। জিজ্ঞাসা করলাম, “কি সব ঠিক আছে তো?” উনি লাজুক হেসে বললেন, “ হ্যাঁ ম্যাডাম। আপনার আশীর্বাদে। তবে বাবা মা এর একমাত্র মেয়ে, কোনো কাজ শেখেনি। আমার বাবা আবার বাইরের লোকের হাতে খান না। মা ও খুব শুচিবায়ুগ্রস্ত , খিটখিটে প্রকৃ্তির, কাজের লোক টেকে না। ফলে মায়ের ওপর খুব চাপ পড়ে যাচ্ছে। ওকে কোনো কাজ করতে বললে ও করে বটে, তবে পুঙ্খনাপুঙ্খ লাগায় নিজের বাবা-মাকে। আর ওনারা এসে অশান্তি করেন। তবে বিশ্বাস করুন ম্যাডাম মেয়েটা খুব ভাল ”
সময়ের সাথে সাথে সুব্রত বাবুর বাড়ির অশান্তি বেড়েই চলল এবং তা আর বাড়ির চার দেওয়াল এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রইল না। রেগে গিয়ে একবার উনি নিজের স্ত্রীর মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়েছিলেন, যাতে শ্বাশুড়ি কুমন্ত্রণা দিতে না পারেন। ফলশ্রুতি ওনার শ্বশুরমশাই থানায় যেতে উদ্যত হন এবং আমাকে ফোন করে ওনাকে শায়েস্তা করার অনুরোধ করেন। সে যাত্রা কোনোমতে ওনাকে নিরস্ত করে সুব্রত বাবু কে হাফ ছুটি দিয়ে বাড়ি পাঠাই ফোন ফেরৎ দিতে। সমস্যা চরমে ওঠে যখন ডাক্তার জানান যে টেস্ট টিউব বেবি ছাড়া ওনাদের বংশ বৃদ্ধি সম্ভব নয় এবং খরচা সাকুল্যে চার লাখ। পি এফ থেকে দুলাখ লোনের জন্য আবেদন করে, বাকিটা সুব্রত বাবু ওনার স্ত্রীর গয়না বিক্রি এবং শ্বশুরের কাছে কর্জ করবেন বলে মনস্থ করেন।
আজো মনে আছে, সে দিনটা ছিল সুক্রবার।সুব্রত বাবুর স্ত্রী সকাল বেলা শ্বশুর- শ্বাশুড়িকে প্রণাম করে বরের সাথে বাপের বাড়ি গেলেন, বলে গেলেন,“রবিবার রাতে নিতে আসতে ভুলো না।”তারপর থেকে ওনাদের বার কয়েক দেখা হয়েছে মাত্র, শুধু আদালতে। শ্বশুর বাড়ি গেলে ওনাকে কুৎসিত ভাষায় অপমান করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। বউ ফোন ধরে না। পরবর্তী কালে নম্বরও বদলে গেছে। কোন মধ্যস্ততাকারীকে ওনারা বাড়িতে ঢুকতে দেননি। সমর বাবু আর আমার দৃঢ় ধারণা ছিল কোন তৃতীয় ব্যক্তি আছে। কোন তৃতীয় কোণ। কিন্তু সুব্রত বাবু তা নস্যাৎ করে বারবার বলতে থাকেন, “না ম্যাডাম, মেয়েটা ভাল।”
ওনাকে মাঝপথে ছেড়ে আমি বদলী হয়ে আসি মহানগরে। তারপর তিন বছর কেটে গেছে। সমর বাবু ও রণে ভঙ্গ দিয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন। কেস আজো চলছে, এবং সুব্রত বাবু আমাকে আজো বললেন, “ ডিভোর্স দিয়ে দিলে আমি কি নিয়ে থাকব? আমার তো আর কিছু হবার বয়স নেই ম্যাডাম। আর বিশ্বাস করুন মেয়েটা খুব ভাল”।

****** My 2nd venture into writing. Posted in my blog on 24.03.2015.you may access my blog from my profile.

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৭

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: সুন্দর লেখা তো!!

২| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৯

আমি অনি বলেছেন: মূল্যবান সময় অপচয় করে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। :-B

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.