![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যে কোন বিষয়েই একাধিক মানুষের একাধিক দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে পারে। আর এই দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমেই ফুটে ওঠে তার ব্যক্তিত্ব বা চরিত্র। তাই নিজের দৃষ্টিভঙ্গিটা ভালো করার চেষ্টা করুন না হলে কিছু অসুস্থ মস্তিস্কের ব্যক্তিদের কাতারে আপনার নাম লেখা হয়ে যাবে।
উমর ইবনুল খাত্তাব (আরবি: عمر بن الخطاب) ছিলেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা এবং প্রধান সাহাবীদের অন্যতম। আবু বকর (রাঃ) এর মৃত্যুর পর তিনি দ্বিতীয় খলিফা হিসেবে দায়িত্ব নেন। তিনি ৫৭৭ খ্রিষ্টাব্দে মক্কার কুরাইশ বংশের বনু আদি গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম খাত্তাব ইবনে নুফায়েল এবং মায়ের নাম হানতামা বিনতে হিশাম। তার মা বনু মাখজুম গোত্রের সদস্য ছিলেন।
গায়েন রং উজ্জল গৌরবর্ণ,টাক মাথা, গন্ডদেশ মাংসহীন, ঘন দাড়ি, মোঁচের দু’পাশ লম্বা ও পুরু এবং শরীর দীর্ঘাকৃতির। হাজার মানুষের মধ্যেও তাঁকেই সবার থেকে লম্বা দেখা যেত।
ইবনে আসাকির তাঁর তারিখে “আমর আবনে আস (রা) হতে একটি বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন। তাতে জানা যায়, একদিন আমর ইবন আ’স বন্ধু-বান্ধবসহ বসে আছেন, এমন সময় হৈ চৈ শুনতে পেলেন। সংবাদ নিয়ে জানতে পেলেন, খাত্তাবের একটি ছেলে হয়েছে। এ বর্ণনার ভিত্তিতে মনে হয়, হযরত উমরের জন্মের সময় বেশ আনন্দোৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
কৈশোরে উমরের পিতা তাঁকে উটের রাখালী কাজে লাগিয়ে দেন। উমর বলেছেন: “আমার বাবা খাত্তাব ছিলেন একজন কঠোর প্রকৃতির মানুষ। তিনি আমাকে দিয়ে কঠোর পরিশ্রম করাতেন। যদি আমি কাজ না করতাম তবে তিনি আমাকে মারধর করতেন এবং ক্লান্ত হওয়া পর্যন্ত কাজ করাতেন।” যৌবনেও তিনি মক্কার নিকটে তার বাবার উট চড়াতেন। তিনি মক্কার নিকটবর্তী ‘দাজনান’ নামকস্থানে উট চড়াতেন। তিনি তাঁর খেলাফত কালে একবার এ মাঠ অতিক্রমকালে সঙ্গীদের কাছে বাল্যের স্মৃতিচারন করেছিলেন এভাবেঃ এমন এক সময় ঠিল যখন আমি পশমী জামা পরে এই মাঠে প্রখর রোদ্রে খাত্তাবের উট চড়াতাম। খাত্তাব ছিলেন অত্যন্ত কঠোর ও নিরস ব্যক্তি। ক্লান্ত হয়ে বিশ্রাম নিলে পিতার হাতে প্রহৃত হতাম। কিন্ত আজ আমার এমন দিন এসেছে যে, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আমার উপর কর্তৃত্ব করার আর কেউ নেই।
ইসলাম পূর্ব আরবে লেখাপড়ার রীতি বেশি প্রচলিত ছিল না। এরপরও তরুণ বয়সে উমর লিখতে ও পড়তে শেখেন। নিজে কবি না হলেও কাব্য ও সাহিত্যের প্রতি তার আগ্রহ ছিল। কুরাইশ ঐতিহ্য অনুযায়ী তিনি তার কৈশোরে সমরবিদ্যা, অশ্বারোহণ ও কুস্তি শেখেন। তিনি দীর্ঘদেহী ও শারীরিকভাবে শক্তিশালী ছিলেন। কুস্তিগীর হিসেবে তার খ্যাতি ছিল। এছাড়াও তিনি একজন সুবক্তা ছিলেন। তার বাবার পরে তিনি তার গোত্রের একজন বিরোধ মীমাংসাকারী হন। উমর ইসলামি আইনের একজন অভিজ্ঞ আইনজ্ঞ ছিলেন। ন্যায়ের পক্ষাবলম্বন করার কারণে তাকে আল ফারুক (সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী) উপাধি দেয়া হয়। আমিরুল মুমিনিন উপাধিটি সর্বপ্রথম তার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে। ইতিহাসে তাকে প্রথম উমর হিসেবেও উল্লেখ করা হয়। নামের মিল থাকার কারণে পরবর্তী কালের উমাইয়া খলিফা উমর ইবনে আবদুল আজিজ কে দ্বিতীয় উমর হিসেবে সম্বোধন করা হয়। সাহাবীদের মর্যাদার ক্ষেত্রে আবু বকর (রাঃ) পর উমর (রাঃ) অবস্থান।
উমর (রাঃ) একজন বণিক হিসেবে বাণিজ্য শুরু করেছিলেন।ব্যবসা উপলক্ষে অনেক দুরদেশে গমণ ও বহু জ্ঞানী-গুনী সমাজের সাথে মেলা-মেশার সুযোগ লাভ করেন। তিনি বাইজেন্টাইন ও সাসানীয় সাম্রাজ্যে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে বেশ কয়েকবার গিয়েছেন। এখানে তিনি রোমান ও পারসিয়ান অনেক পন্ডিতদের সাথে সাক্ষাত লাভ করেন এবং এসব সমাজের অবস্থা সম্পর্কে তিনি অবগত হন।ব্যবসা বাণিজ্য ছিল জাহেলি যুগে আরবদের সম্মানজনক পেশা। শিবলী নুমানী বলেনঃ জাহেলি যুগেই উমরের সুনাম সমগ্র আরব বিশ্বে ছিড়য়ে পরেছিল। এ কারণে কুরাইশরা সর্বদা তাঁকেই দৌত্যগিরীতে নিয়োগ করতো। অন্যান্যা গোত্রের সাথে কোন বিরোধ সৃষ্টি হলে নিস্পত্তির জন্য তাঁকেই দূত হিসেবে পাঠানো হতো।
ইসলাম গ্রহণঃ
অন্যান্য মক্কাবাসীর মত উমর প্রথম পর্যায়ে ইসলামের বিরোধীতা করেছিলেন। উমরের ইসলাম গ্রহণ এক চিত্তাকষৃক ঘটনা। তাঁর চাচাতো ভাই যায়িদের কল্যানে তাঁর বংশে তৌহিদের বাণী একেবারে নতুন ছিল না। তাঁদের মধ্যে সর্বপ্রথম যায়িদের পুত্র সাঈদ ইসলাম গ্রহণ করেন। সাঈদ আবার উমরের বোন ফাতিমাকে বিয়ে করেন। স্বামীর সাথে ফাতিমাও ইসলাম গ্রহণ করেন। উমরের বংশের আরো এক বিশিষ্ট ব্যক্তি নাঈম ইবন আব্দুল্লাহও ইসলাম গ্রহণ করেন। কিন্ত তখনও পর্যন্ত উমর ইসলাম সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। সর্ব প্রথম যখন ইসলামের কথা শুনলেন, ক্রোধে জ্বলতে থাকলেন। তাঁর বংশে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন তাদের তিনি পরম শত্রু হয়ে দাড়ালেন। এরি মধ্যে জানতে পারলে, ‘লাবীনা নামক তাঁর এক দাসী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। যাদের উপর তাঁর ক্ষমতা চলতো, নির্মম অত্যাচার চালালেন। এক পর্যায়ে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, ইসলামের মুল প্রচারক মুহাম্মদকেই (সা) দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে হবে। যে কথা সেই কাজ।
আনাস ইবন মালিক হতে বর্ণিতঃ তরবারী কাঁধে ঝুলিয়ে উমর চলেছেন, পথে বনী যুহরার এক ব্যক্তির ( মতান্তরে নাঈম ইবন আব্দুল্লাহ’র) সাথে দেখা। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ কোন দিকে উমর ? বললেন, মুহাম্মদের একটা দফারফা করতে। লোকটি বললেন মুহাম্মদের (সা) দফারফা করে বনী হাশিম ও বনী যুহরার হাত থেকে বাঁচবে কিভাবে ? এ কথা শুনে উমর বলে উঠলেন, মনে হচ্ছে তুমিও পৈত্রিক ধর্ম ত্যাগ করে বিধর্মী হয়েছো । লোকটি বললেনঃ উমর একটি বিস্ময়কর খবর শুন, তোমার বোন ও ভগ্নীপতি বিধর্মী হয়ে গেছে। তাঁরা তোমার ধর্ম ত্যাগ করেছে। (আসলে লোকটির লক্ষ্য ছিল উমরকে তার লক্ষ থেকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেয়া।) এ কথা শুনে উমর রাগে উম্মত্ত হয়ে ছুটলেন তাঁর বোন ভগ্নীপতির বাড়ীর উদ্দেশ্যে। আবড়ির দরজায় উমরের করাঘাত পরলো। তারা দু’জন তখন খাব্বাব ইবন আল-আরাত এর কাছে কোরআন শিখছিলেন। উমরের আভাষ পেয়ে খাব্বাব তখন বাড়ীর আরেকটি কক্ষে আত্মগোপন করলেন।উমর বোন ভগ্নীপতীকে প্রথমেই জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমাদের এখানে গুগুন আওয়াজ শুনছিলাম তা কিসের ? তাাঁ তখন কোরআনের সূরা ত্বাহা পাঠ করছিলেন। তাঁরা উত্তর দিলেনঃ আমরা নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলছিলাম। উমর বললেনঃ সম্ভবতঃ তোমরা নিজেদের ধর্ম ত্যাগ করে বিধর্মী হয়েছো। ভগ্নীপতি বললেনঃ তোমার ধর্ম ছাড়া অন্য কোথাও যদি সত্য থাকে তুমি কি করবে উমর ? উমর তাঁর ভগ্নীপতির উপর ঝাপিয়ে পরলেন এবং দু’পায়ে তাঁকে ভীষভাবে মাড়াতে লাগলেন। বোন তাঁর স্বামীকে বাচাতে এগিয়ে এলে উমর তাকে ধরে এনে এমন মার দিলেন যে, তাঁর মুখ রক্তাক্ত হয়ে গেল। বোন রাগে উত্তজিত হয়ে বলে উঠলেনঃ সত্য যদি তেমার দ্বীনের বাইরে অন্য কোথাও থেকে থাকে, তাহলে আমি স্বাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই এবং আরো স্বাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ (সা) আল্লাহর রাসুল।
এ ঘটনার কিছুদিন আগ থেকে উমরের মধ্যে একটা ভাবান্তর সৃষ্টি হয়েছিল। কুরাইশরা মক্কায় মুসলমাদের ওপর নির্মম অত্যাচার-উৎপীড়ন চালিয়ে একজনকেও ফেরাতে পারেনি। মুসলমানরা নীরবে সবকিছু মাথা পেতে নিয়েছে। প্রয়োজনে বাড়ী-ঘর ছেড়েছে, ইসলাম ত্যাগ করেনি। এতে উমারের মনে একটা ধাক্কা লেগেছিল। তিনি রক্ত, তার সত্যের সাক্ষ্য তাঁকে এমন একটি ধাক্কা দিল, যে তাঁর সব দ্বিধা-দ্বন্ধ কর্পূরের মত উড়ে গেল। মুহূর্তে হৃদয় তাঁর সত্যে জ্যোতির উদ্ভাসিত হয়ে উঠলো। তিনি পাক-সাফ হয়ে বোনের হাত থেকে সূরা ত্বাহার অংশটুকু নিয়ে পড়তে শুরু করলেন। পড়া শেষ করে বললেনঃ আমাকে তোমরা মুহাম্মাদের (সা) কাছে নিয়ে চল। উমারের একথা শুনে এতক্ষণে খাব্বাব ঘরের গোপন স্থান থেকে বেরিয়ে এলেন। বললেনঃ সুসংবাদ উমার! বৃহস্পতিবার রাতে রাসূলুল্লাহ (সা) তোমর জন্য দোআ করেছিলেন। আমি আশাকরি তা কবুল হয়েছে। তিনি বলেছিলেনঃ আল্লাহ, উমর ইবনুল খাত্তাব বা আমর ইবন হিশামের দ্বারা ইসলামকে শক্তিশালী কর। খাব্বার আরো বললেনঃ রাসুল (সা) এখন সাফার পাদদেশে ‘দারুল আরকামে’।
উমর চললেন দারুল আরকামের দিকে। হামজা এবং তালহার সাথে আরো কিছু সাহাবী তখন আরকামের বাড়ীর দরজায় পাহারারত। উমরকে দেখে তাঁরা সন্ত্রস্ত হয়ে পরলেন। তবে হামজা সান্তনা দিয়ে বললেনঃআল্লাহ উমরের কল্যান চাইলে সে ইসলাম গ্রহণ করে রাসুল (সাঃ) এর অনুসারী হবে। অন্যথায় তাকে হত্যা করা আমাদের জন্য খুবই সহজ হবে। রাসুল (সা) তখন বাড়ীর ভিতরে তাঁর উপর তখন ওহী নাজিল হচ্ছিল। একটু পরে তিনি বেড়িয়ে উমরের কাছে এলেন। উমরের কাপড় ও তরবারীর হাতল তিনি মুট করে ধরে বললেনঃ উমর তুমি কি বিরত হবে না ?………তারপর তিনি দোআ করলেনঃ হে আল্লাহ, উমর আমার সামনে, হে আল্লাহ উমরের দ্বারা দ্বীনকে শক্তিশালী কর। উমর বলে উঠলেনঃ আমি স্বাক্ষ্য দিচ্ছি আপনি আল্লাহর রাসুল। ইসলাম গ্রহণ করেই তিনি আহবান জানালেন,ইয়া রাসুলাল্লাহ ঘর থেকে বেড়িয়ে পরুন। এটা নবুয়তের ষষ্ঠ বছরের ঘটনা।
ইমাম যুহরী বর্ণনা করেনঃ রাসুলাল্লাহ (সাঃ) দারুল আরকামে প্রবেশের পর উমর ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পুর্বে নারী-পুরুষ সর্বমোট চল্লিশজনের কিছু বেশী লোক ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। উমরের ইসলাম গ্রহণের পর জিব্রাঈল (আ) এসে বললেনঃ মুহাম্মদ, উমরের ইসলাম গ্রহণে আসমানের অধিবাসীরা উৎফুল্ল হয়েছে।
উমরের ইসলাম গ্রহণে ইসলামের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। যদিও তখন পর্যন্ত ৪০/৫০জন লোক ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন এবং তাঁদের মধ্যে হযরত হামজাও ছিলেন তথাপি মুসলমানদের পক্ষে কা’বায় গিয়ে নামাজ পড়াতো দুরে কথা নিজেদেরকে মুসলমান বলে প্রকাশ করাও নিরাপদ ছিল না। হযরত উমরের ইসলাম গ্রহণের সাথে সাথে এ অবস্থার পরিবর্তন হলো। তিনি প্রকাশ্যে ইসলামের ঘোষনা দিলেন এবং অন্যদের সঙ্গে নিয়ে কা’বা ঘরে নামাজ আদায় করা শুরু করলেন।
ইসলাম গ্রহণের পর উমর এসময় মুসলিমদের সবচেয়ে কঠোর প্রতিপক্ষ আবু জাহলকে তা জানান। উমর (রা) বলেনঃ আমি ইসলাম গ্রহনের পর সে রাতেই চিন্তা করলাম, মক্কাবসীদের মধ্যে রাসুলাল্লাহ (সাঃ) এর সবচেয়ে বড় কট্টর দুশমণ কে আছে । আমি নিজে গিয়ে তাকে আমার ইসলাম গ্রহণের কথা জানাব। আমি মনে করলাম, আবু জাহেলই সবচেয়ে বড় দুশমন। সকাল হতেই আমি তার দরজায় করাঘাত করলাম। আবু জাহেল বেড়িয়ে এসে জিজ্ঞাসা করলঃ কি মনে করে ? আমি বললাম আপনাকে এ কথা জানাতে এসেছি যে, আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা) মুহাম্মদরে প্রতি ঈমান এনেছি এবং তাঁর আনীত বিধান ও বাণী মেনে নিয়েছি। এ কথা শোনা মাত্র সে আমার মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিল এবং বললঃ আল্লাহ তোকে কলংকিত করুক এবং যে খবর নিয়ে তুই এসছিস তাকেও কলংকিত করুক।
উমর (রাঃ) ইসলাম গ্রহণের পর প্রকাশ্যে কাবার সামনে নামাজ আদায় করাতে মুসলিমরা বাধার সম্মুখীন হয়নি। ইসলাম গ্রহণের পর গোপনীয়তা পরিহার করে প্রকাশ্যে তিনি মুসলিমদের নিয়ে বাইরে আসেন এবং কাবা প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন। তিনি ছাড়াও হামজা ইবনে আবদুল মুত্তালিব এই দলের নেতৃত্বে ছিলেন। সেদিন মুহাম্মদ (সা) তাকে “ফারুক” উপাধি দেন।
সায়্যিদ ইবনে মুসয়্যিব বলেনঃ তাঁর ইসলাম গ্রহণের পর ইসলাম মক্কায় প্রকাশ্য রুপ নেয়। আব্দুল্লাহ ইব মাসউদ (রা) বলেনঃ উমর ইসলাম গ্রহণ কেরই কুরাইশদের সাথে বিবাদ আরম্ভ করে দিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি কা’বায় নামাজ পড়ে ছাড়লেন। আমরাও সকলে তাঁর সাথে নামাজ পড়েছিলাম। সুহায়িব ইন সিনান বলেনঃ তাঁর ইসলাম গ্রহণের পর আমরা কা’বার পাশে জটলা করে বসতাম,কা’বা ঘর তাওয়াফ করতাম, আমাদের সাথে কেউ রুঢ় ব্যবহার করলে তার প্রতিশোধ নিতাম এবং আমাদের উপর যে কোন আক্রমণ আসলে তা প্রতিহত করতাম। তাই রাসুল (সা) তাঁকে ‘”আল-ফারুক” উপাধীতে ভূষিত করিয়াছিলেন। কারণ তারই কারনে ইসলাম ও কুফরের মধ্যে প্রকাশ্য বিভেদ সৃষ্টি হয়েছিল। রাসুল (সা) বলেছেন, উমরের জ্বিহবা ও অন্তঃকরনে আল্লাহ তাআলা সত্যকে স্থায়ী করে দিয়েছেন। তাই সে ‘ফারুক’ , আল্লাহ তাঁর দ্বারা সত্য ও মিথ্যা র মধ্যের পার্থক্য করে দিয়েছেন।
মদিনায় হিজরতঃ
দিন দিন মক্কায় মুসলিমদের উপর অত্যাচারের হার বাড়তে থাকে। মক্কায় যারা মুশরিকদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে পরেছিলেন, রাসুল (সা) তাদেরকে মদিনায় হিজরত করতে নির্দেশ দিলেন। আবু সালামা, আব্দুল্লাহ বিন আশহাল, বিল্লাল ও আম্মার বিন ইয়াসিরের মদিনায় হিজরাতের পর বিশজন আত্মীয়-বন্ধুসহ উমর মদিনার পথে পা বাড়ালেন। এ বিশজনের মধ্যে তাঁর ভাই যায়িদ ,ভাইয়ের ছেল সাঈদ, জামাই খুনাইসও ছিলেন। মদিনার উপকন্ঠে কুবা পল্লীতে তিনি রিফায়া ইবন আবদিল মুনজিরের বাড়িতে তিনি আশ্রয় নেন।
উমরের হিজরাত এ অন্যান্যদের হিজরাতের মধ্যে একটা বিশেষ পার্থক্য ছিল। অন্যদের হিজরাত ছিল চুপে চুপে। সকলের অগোচরে। আর উমরের হিজরাত ছিল প্রকাশ্য। তার মধ্যে ছিল কুরাইশদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ও বিদ্রোহের সুর। মক্কা থেকে মদিনায় যাত্রার পুর্বে তিনি প্রথমে কা’বা তাওয়াফ করলেন। তারপর কুরাইশদের আড্ডায় গিয়ে তিনি ঘোষনা করলেন, আমি মদিনা চলছি। কেউঋ যদি তার মাকে পুত্র শোক দিতে চায় সে যেন এ উপত্যকার অপর প্রান্তে আমার মুখোমুখি হয়। এমন একটি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে তিনি মদীনার পথ ধরলেন।কিন্ত কেউ এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণের দুঃসাহস করল না।এসময় তার সাথে সাঈদ ইবনে যায়িদ ছিলেন।
মদিনা জীবন ঃ
বিভিন্ন বর্ণনার মাধ্যমে জানা যায়, রাসুল (সা) বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জনের সাথে উমরের দ্বীনি ভ্রাতৃ-সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে দেন। আবু বক্কর সিদ্দিক, উয়াইস ইবন সায়িদা, ইতবান ইবন মালিক ও মুয়াজ ইবন আফরা (রা) ছিলেন উমরের দ্বীনি ভাই। তবে এটা নিশ্চিত যে , মদীনায় হিজরাতের পর বনী সালেমের সর্দার ইতবান ইবন মালিকের সাথে দ্বীনি ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।
হিজরী প্রথম সাল হতে রাসুলে কারীম (সা) এর ইন্তিকাল পর্যন্ত উমরের কর্মজীবন প্রকৃত পক্ষে রাসুল (সা) এরই কর্মময় জীবনের একটা অংশ বিশেষ। রাসুল (সা) কে যত যুদ্ধ করতে হয়েছিল, যত চুক্তি করতে হয়েছিল, কিংবা সময় সময় যত বিধি প্রবর্তন করতে হয়েছিল এবং ইসলাম প্রচারের জন্য যত পন্থা অবলম্বন করতে হয়েছিল তার এমন একটি ঘটনাও নেই যা উমরের সক্রিয় অংশ গ্রহণ ছাড়া সম্পাদিত হয়েছে। এই জন্য এই সব ঘটনাবলীর বিস্তারিত বিবরণ লিখতে গেলে তা উমরের (রা) জীবনি না হয়েও রাসুল (সা) এর জীবনিতে পরিণত হয়ে যায়। তাঁর কর্মবহুল জীবন ছিল রাসুল (সা) এর জীবনের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত।
হযরত উমর বদর,ওহুদ, খন্কসহ সকল যুদ্ধেই রাসুল (সা) এর সাথে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাছাড়া আরো বেশ কিছু সারিয়্যা ( যে সব ছোট অভিযানে রাসুল (সা) নিজে উপস্থিত হননি।) তে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। বদর যুদ্ধের পরামর্শ দান ও সৈন্য চালনা হতে আরম্ভ করে প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি রাসুল (সা) এর দৃঢ়ভাবে কাজ করেন। বদর যুদ্ধের বন্দীদের সম্পর্কে তাঁর পরামর্শই আল্লাহ পাকের পছন্দ হয়েছিল। এ যুদ্ধে তাঁর ভূমিকা নিম্নরুপঃ
১. এ যুদ্ধে কুরাইশ বংশের প্রত্যেক শাখা হতে লোক যোগদান করে; কিন্তু বণী আ’দী অর্থাৎ ’উমারের খান্দান হতে একটি লোকও যোগদান করেনি। ’উমারের প্রভাবেই এমনটি হয়েছিল।
২. এ যুদ্ধে ইসলামের বিপক্ষে ’উমারের সাথে তাঁর গোত্র ও চুক্তিবদ্ধ লোকদের থেকে মোট বারো জন লোক যোগদান করেছিল।
৩. এ যুদ্ধে হযরত ’উমার তাঁর আপন মামা আ’সী ইবন হিশামকে নিজ হাতে হত্যা করেন। এ হত্যার মাধ্যমে তিনিই সর্বপ্রথম প্রমাণ করেন, সত্যের পথে আত্মীয় প্রিয়জনের প্রভাব প্রাধান্য লাভ করতে পারে না।
উহুদ যুদ্ধেও হযরত ’উমার রা. ছিলেন একজন অগ্রসৈনিক। যুদ্ধের এক পর্যায়ে মুসলিম সৈন্যরা যখন বিপর্যয়ের সম্মুখীন হলেন এবং রাসূল সা. আহত হয়ে মুষ্টিমেয় কিছু সঙ্গী-সাথীসহ পাহাড়ের এক নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিলেন, তখন কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ান নিকটবর্তী হয়ে উচ্চস্বরে মুহাম্মাদ সা., আবু বকর রা., ’উমার রা. প্রমুখের নাম ধরে ডেকে জিজ্ঞেস করলো, তোমরা বেঁচে আছ কি? রাসূলের সা. ইঙ্গিতে কেউই আবু সুফিয়ানের জবাব দিল না। কোন সাড়া না পেয়ে আবু সুফিয়ান ঘোষণা করলোঃ ‘নিশ্চয় তারা সকলে নিহত হয়েছে।’ এ কথায় ’উমারের পৌরুষে আঘাত লাগলো। তিনি স্থির থাকতে পারলেন না।’ বলে উঠলেঃ ‘ওরে আল্লাহর দুশমন! আমরা সবাই জীবিত।’ আবু সুফিয়ান বললো, ‘উ’লু হুবল-হুবলের জয় হোক।’ রাসূলুল্লাহর সা. ইঙ্গিতে ’উমার জবাব দিলেনঃ ‘আল্লাহু আ’লা ও আজাল্লু- আল্লাহ মহান ও সম্মানী।’
খন্দকের যুদ্ধেও ’উমার সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। খন্দকের একটি বিশেষ স্থান রক্ষা করার ভার পড়েছিল ’উমারের ওপর। আজও সেখানে তাঁর নামে একটি মসজিদ বিদ্যমান থেকে তাঁর সেই স্মৃতির ঘোষণা করছে। এ যুদ্ধে একদিন তিনি প্রতিরক্ষায় এত ব্যস্ত ছিলেন যে, তাঁর আসরের নামায ফউত হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। রাসূল সা. তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিলেনঃ ‘ব্যস্ততার কারণে আমিও এখন পর্যন্ত নামায আদায় করতে পারিনি।’ (আল-ফারুকঃ শিবলী নু’মানীঃ ২৫)
হুদাইবিয়ার শপথের পূর্বেই হযরত ’উমার যুদ্ধের প্রস্তুতি আরম্ভ করে দিলেন। পুত্র আবদুল্লাহকে পাঠালেন কোন এক আনসারীর নিকট থেকে ঘোড়া আনার জন্য। তিনি এসে খবর দিলেন, ‘লোকেরা রাসূলুল্লাহর সা. হাতে বাইয়াত করছেন।’ ’উমার তখন রণসজ্জায় সজ্জিত। এ অবস্থায় দৌড়ে গিয়ে তিনি রাসূলুল্লাহর সা. হাতে বাইয়াত করেন।
হুদাইবিয়ার সন্ধির শর্তগুলি বাহ্য দৃষ্টিতে মুসলমানদের জন্য অপমানজনক মনে হলো। ’উমার উত্তেজিত হয়ে উঠলেন। প্রথমে আবু বকর, তারপর খোদ রাসূলুল্লাহর সা. নিকট এ সন্ধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানালেন। রাসূলুল্লাহ সা. বললেনঃ ‘আমি আল্লাহর রাসূল। আল্লাহর নির্দেশ ব্যতীত কোন কাজ আমি করিনে।’ ’উমার শান্ত হলেন। তিনি অনুতপ্ত হলেন। নফল রোযা রেখে, নামায পড়ে, গোলাম আযাদ করে এবং দান খয়রাত করে তিনি গোস্তাখীর কাফ্ফারা আদায় করলেন।
খাইবারে ইহুদীদের অনেকগুলি সুরক্ষিত দুর্গ ছিলো। কয়েকটি সহজেই জয় হলো। কিন্তু দু’টি কিছুতেই জয় করা গেল না। রাসূল সা. প্রথম দিন আবু বকর, দ্বিতীয় দিন ’উমারকে পাঠালেন দুর্গ দু’টি জয় করার জন্য। তাঁরা দু’জনই ফিরে এলেন অকৃতকার্য হয়ে। তৃতীয় দিন রাসূল সা. ঘোষণা করলেনঃ ’আগামীকাল আমি এমন এক ব্যক্তির হাতে ঝাণ্ডা দেব, যার হাতে আল্লাহ বিজয় দান করবেন।’ পর দিন সাহাবায়ে কিরাম অস্ত্র সজ্জিত হয়ে রাসূলুল্লাহর সা. দরবারে হাজির। প্রত্যেকেরই অন্তরে এই গৌরব অর্জনের বাসনা। ’উমার বলেনঃ ‘আমি খাইবারে এই ঘটনা ব্যতীত কোনদিনই সেনাপতিত্ব বা সরদারীর জন্য লালায়িত হইনি।’ সে দিনের এ গৌরব ছিনিয়ে নিয়েছিলেন শের-ই-খোদা আলী রা.।
খাইবারের বিজিত ভূমি মুজাহিদদের মধ্যে বণ্টন করা হলো। হযরত ’উমার রা. তাঁর ভাগ্যের অংশটুকু আল্লাহর রাস্তার ওয়াক্ফ করে দিলেন। ইসলামের ইতিহাসে এটাই প্রথম ওয়াক্ফ। (আল-ফারুকঃ ৩০)
মক্কা বিজয়ের সময় হযরত ’উমার রা. ছায়ার মত রাসূলকে সা. সঙ্গ দেন। ইসলামের মহাশত্রু আবু সুফিয়ান আত্মসমর্পণ করতে এলে ’উমার রাসূলুল্লাহকে সা. অনুরোধ করেনঃ ‘অনুমতি দিন এখনই ওর দফা শেষ করে দিই।’ এদিন মক্কার পুরুষরা রাসূলুল্লাহর সা. হাতে এবং মহিলারা রাসূলুল্লাহর সা. নির্দেশে ’উমারের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করছিলেন।
হুনায়িন অভিযানেও হযরত ’উমার অংশগ্রহণ করে বীরত্ব সহকারে লড়াই করেছিলেন। এ যুদ্ধে কাফিরদের তীব্র আক্রমণে বারো হাজার মুসলিম বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েছিল। ইবন ইসহাক বলেনঃ মুহাজির ও আনসারদের মাত্র কয়েকজন বীরই এই বিপদকালে রাসূলুল্লাহর সা. সাথে দৃঢ়পদ ছিলেন। তাদের মধ্যে আবু বকর, ’উমার ও আব্বাসের রা. নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
তাবুক অভিযানের সময় রাসূলুল্লাহর সা. আবেদনে সাড়া দিয়ে হযরত ’উমার রা. তাঁর মোট সম্পদের অর্ধেক রাসূলুল্লাহর সা. হাতে তুলে দেন।
মুহাম্মদ (সা) এর মৃত্যু
মুহাম্মদ (সা) মারা যাওয়ার পর উমর প্রথমে তা বিশ্বাস করতে চাননি।রাসুল (সা) এর ইন্তিকালের খবর শুনে হযরত উমর কিছুক্ষন স্তম্ভিত হয়ে বসে থাকেন। তারপর মসজিদে নববীর সামনে গিয়ে তরবারী কষমুক্ত করে ঘোষনা দেন, যে বলবে আল্লাহর রাসুল ইন্তেকাল করেছেন, আমি তার মাথা দ্বিখন্ডিত করে ফেলবো।
এসময় আবু বকর এসে ঘোষণা করেন,
তোমাদের মধ্যে যারা মুহাম্মদ (সা) এর পূজা করতে তারা জেনে রাখুক যে মুহাম্মদ (সা) মৃত্যুবরণ করেছেন। আর যারা আল্লাহর ইবাদত করতে, অবশ্যই আল্লাহ সর্বদাই জীবিত থাকবেন কখনো মৃত্যুবরণ করবেন না।
আবু বকর কুরআন থেকে তিলাওয়াত করেন:
মুহাম্মদ (সা) একজন রাসুল ছাড়া আর কিছু নয়। তার পূর্বে অনেক রাসুল গত হয়েছেন। সুতরাং তিনি যদি মারা যান বা নিহত হন তবে কি তোমরা পিঠ ফিরিয়ে পিছু হটবে? আর যে পিঠ ফিরিয়ে সরে পড়ে সে কখনও আল্লাহর ক্ষতি করতে পারবে না। আর আল্লাহ শীঘ্রই কৃতজ্ঞদেরকে পুরস্কৃত করবেন।” (সুরা আল ইমরান, আয়াত ১৪৪)
এ ঘটনা থেকে রাসূলুল্লাহর সা. প্রতি তাঁর ভক্তি ও ভালোবাসার পরিমাণ সহজেই অনুমান করা যায়।
খিলাফতের প্রতিষ্ঠা
মুহাম্মদ (সা) এর মৃত্যুর পর খিলাফতের প্রতিষ্ঠায় উমর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। মুহাম্মদ (সা) এর দাফনের প্রস্তুতি চলার সময় কিছু মুসলিম শহরের উপকন্ঠে সাকিফা নামক স্থানে তার উত্তরসুরির বিষয়ে আলোচনায় বসে। এরপর আবু বকর, উমর এবং আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ এখানে উপস্থিত হন। এসময় আনসারদের মধ্য থেকে দাবি উঠে যে উত্তরসুরি আনসারদের মধ্য থেকে নির্বাচিত করতে হবে। উমর এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেন যে উত্তরাধিকার মুহাজিরদের মধ্য থেকে হতে হবে। কিছু গোত্র ইসলামপূর্ব গোত্রীয় নেতৃত্ব ব্যবস্থায় ফিরে যেতে ইচ্ছুক ছিল যাতে প্রত্যেক গোত্রের নেতা গোত্রকে নেতৃত্ব দিত। শেষপর্যন্ত আবু বকরকে খলিফা হিসেবে অধিক যোগ্য বলে দাবি করে তার প্রতি উমর আনুগত্য প্রকাশ করেন। এই সিদ্ধান্ত শেষপর্যন্ত সবাই মেনে নেয়।ফলে খলীফা নির্বাচনের মহা সংকট সহজেই কেটে যায়।
ইসলামি খিলাফতের প্রতিষ্ঠা উমরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ধরা যায়। পৃথিবীর ইতিহাসেও এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
খলিফা আবু বকরের যুগ
আবু বকর (রাঃ) শাসনামলে উমর তার একজন প্রধান সচিব ও উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন। রিদ্দার যুদ্ধের সময় প্রথমে তিনি আবু বকরের কিছু মতের সাথে একমত না হলেও পরে তা মেনে নেন এবং তাকে সহায়তা করেন। শেষপর্যন্ত বিদ্রোহীদের দমন করে আরব উপদ্বীপকে একতাবদ্ধ করা হয়।
ইয়ামামার যুদ্ধে অনেক হাফিজ শহীদ হলে উমর কুরআন গ্রন্থাকারে সংকলনের জন্য আবু বকরের কাছে আবেদন জানান। আবু বকর প্রথমে তাতে রাজি না থাকলেও পরে সম্মত হন। এর ফলে কুরআন গ্রন্থাকারে সংকলিত হয।
খলিফার দায়িত্বগ্রহণ
খলীফা হযরত আবু বকর যখন বুঝতে পারলেন তাঁর অন্তিম সময় ঘনিয়ে এসেছে, মৃত্যুর পূর্বেই পরবর্তী খলীফা মনোনীত করে যাওয়াকে তিনি কল্যাণকর মনে করলেন। তাঁর দৃষ্টিতে ’উমার রা. ছিলেন খিলাফতের যোগ্যতম ব্যক্তি। তা সত্ত্বেও উঁচু পর্যায়ের সাহাবীদের সাথে এ ব্যাপারে পরামর্শ করা সমীচীন মনে করলেন। তিনি আবদুর রহমান ইবন আউফকে রা. ডেকে বললেন, ’উমার সম্পর্কে আপনার মতামত আমাকে জানান।’ তিনি বললেনঃ ‘তিনি তো যে কোন লোক থেকে উত্তম; কিন্তু তাঁর চরিত্রে কিছু কঠোরতা আছে।’ আবু বকর বললেনঃ ‘তার কারণ, আমাকে তিনি কোমল দেখেছেন, খিলাফতের দায়িত্ব কাঁধে পড়লে এ কঠোরতা অনেকটা কমে যাবে।’ তারপর আবু বকর অনুরোধ করলেন, তাঁর সাথে আলোচিত বিষয়টি কারো কাছে ফাঁস না করার জন্য। অতঃপর তিনি ’উসমান ইবন আফ্ফানকে ডাকলেন। বললেন, ‘আবু আবদিল্লাহ, ’উমার সম্পর্কে আপনার মতামত আমাকে জানান।’ ’উসমান বললেনঃ আমার থেকে আপনিই তাঁকে বেশী জানেন। আবু বকর বললেনঃ তা সত্ত্বেও আপনার মতামত আমাকে জানান। ’উসমান বললেনঃ তাঁকে আমি যতটুকু জানি, তাতে তাঁর বাইরের থেকে ভেতরটা বেশী ভালো। তাঁর মত দ্বিতীয় আর কেউ আমাদের মধ্যে নেই। আবু বকর রা. তাঁদের দু’জনের মধ্যে আলোচিত বিষয়টি গোপন রাখার অনুরোধ করে তাঁকে বিদায় দিলেন।
এভাবে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে মতামত নেওয়া শেষ হলে তিনি উসমান ইবনে আফ্ফানকে ডেকে ডিক্টেশন দিলেনঃ ‘বিস্মিল্লাহির রাহমানির রাহীম। এটা আবু বকর ইবন আবী কুহাফার পক্ষ থেকে মুসলমানদের প্রতি অঙ্গীকার। আম্মা বাদ’- এতটুকু বলার পর তিনি সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন। তারপর ’উসমান ইবন আফ্ফান নিজেই সংযোজন করেন- ‘আমি তোমাদের জন্য ’উমার ইবনুল খাত্তাবকে খলীফা মনোনীত করলাম এবং এ ব্যাপারে তোমাদের কল্যাণ চেষ্টায় কোন ত্রুটি করি নাই।’ অতঃপর আবু বকর সংজ্ঞা ফিরে পান। লিখিত অংশটুকু তাঁকে পড়ে শোনান হলো।’ সবটুকু শুনে তিনি ‘আল্লাহু আকবার’ বলে ওঠেন এবং বলেনঃ আমার ভয় হচ্ছিল, আমি সংজ্ঞাহীন অবস্থায় মারা গেলে লোকেরা মতভেদ সৃষ্টি করবে। ’উসমানকে লক্ষ্য করে তিনি আরো বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা ইসলাম ও মুসলমানদের পক্ষ থেকে আপনাকে কল্যাণ দান করুন।
তাবারী বলেনঃ অতঃপর আবু বকর লোকদের দিকে তাকালেন। তাঁর স্ত্রী আসমা বিনতু উমাইস তখন তাঁকে ধরে রেখেছিলেন। সমবেত লোকদের তিনি বলেনঃ ‘যে ব্যক্তিকে আমি আপনাদের জন্য মনোনীত করে যাচ্ছি তাঁর প্রতি কি আপনারা সন্তুষ্ট? আল্লাহর কসম, মানুষের মতামত নিতে আমি চেষ্টার ত্রুটি করিনি। আমার কোন নিকট আত্মীয়কে এ পদে বহাল করিনি। আমি ’উমার ইবনুল খাত্তাবকে আপনাদের খলীফা মনোনীত করেছি। আপনারা তাঁর কথা শুনুন, তাঁর আনুগত্য করুন।’উত্তরসুরি হিসেবে উমরের ক্ষমতা ও সক্ষমতা সম্পর্কে আবু বকর অবগত ছিলেন। উমর সম্পূর্ণ বিবাদহীনভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলেন।
মৃত্যূর পূর্বে আবু বকর উমরকে ডেকে তার অসিয়ত লিখতে বলেন যাতে তিনি উমরকে নিজের উত্তরসুরি ঘোষণা করে যান। অসিয়তনামায় উমরকে ইরাক ও সিরিয়া জয়ের অভিযান চালু রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়।এভাবে ’উমারের রা. খিলাফত শুরু হয় হিঃ ১৩ সনের ২২ জামাদিউস সানী মুতাবিক ১৩ আগস্ট ৬৩৪ খৃঃ।
আবু বকরের সিদ্ধান্ত ইসলামি খিলাফতকে শক্তিশালী করতে ভূমিকা রেখেছিল।
খলিফা হিসেবে শাসন
হযরত ’উমারের রাষ্ট্র শাসন পদ্ধতি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা সম্ভব নয়। দশ বছরের স্বল্প সময়ে গোটা বাইজান্টাইন রোম ও পারস্য সাম্রাজ্যের পতন ঘটান। তাঁর যুগে বিভিন্ন অঞ্চলসহ মোট ১০৩৬ টি শহর বিজিত হয়। ইসলামী হুকুমাতের নিয়মতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠা মূলতঃ তাঁর যুগেই হয়। সরকার বা রাষ্ট্রের সকল শাখা তাঁর যুগেই আত্মপ্রকাশ করে। তাঁর শাসন ও ইনসাফের কথা সারা বিশ্বের মানুষের কাছে কিংবদন্তীর মত ছড়িয়ে আছে।
ক্ষমতাপ্রাপ্তি পর সকল মুসলিম তাকে বায়াত প্রদান করেন। তার ব্যক্তিত্বের কারণে জনতা তাকে সমীহ করত। মুহাম্মদ হুসাইন হায়কলের মতে উমরের প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল তার প্রজা ও মজলিশ আল শুরার সদস্যদের মন জয় করা।
শাসক হিসেবে উমর দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিতদের কল্যাণের জন্য কাজ করেছেন। ফিদাকের জমির ব্যাপারে তিনি আবু বকরের নীতির অনুসরণ করেছেন এবং একে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি হিসেবে ব্যবহারের নীতি চালু রাখেন।
রিদ্দার যুদ্ধে কয়েক হাজার বিদ্রোহী ও ধর্মত্যাগীকে দাস হিসেবে বন্দী করা হয়েছিল। উমর এসকল বন্দীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন এবং তাদের মুক্তির নির্দেশ দেন।
হযরত ’উমার প্রথম খলীফা যিনি ‘আমীরুল মুমিনীন’ উপাধি লাভ করেন। তিনিই সর্বপ্রথম হিজরী সন প্রবর্তন করেন, তারাবীর নামায জামাআতে পড়ার ব্যবস্থা করেন, জন শাসনের জন্য দুর্রা বা ছড়ি ব্যবহার করেন, মদপানে আশিটি বেত্রাঘাত নির্ধারণ করেন, বহু রাজ্য জয় করেন, নগর পত্তন করেন, সেনাবাহিনীর স্তরভেদ ও বিভিন্ন ব্যাটালিয়ান নির্দিষ্ট করেন, জাতীয় রেজিষ্টার বা নাগরিক তালিকা তৈরী করেন, কাযী নিয়োগ করেন এবং রাষ্ট্রকে বিভিন্ন প্রদেশে বিভক্ত করেন।
’উমার রা. ছিলেন রাসূলুল্লাহর অন্যতম কাতিব। নিজ কন্যা হযরত হাফসাকে রাসূলুল্লাহর সা. সাথে বিয়ে দেন। তিনি রাসূলুল্লাহ সা. ও আবু বকরের রা. মন্ত্রী উপদেষ্টার ভূমিকা পালন করেন। ইসলাম গ্রহণের পূর্বে ও পরে ব্যবসা ছিল তাঁর জীবিকার উপায়। খিলাফতের গুরুদায়িত্ব কাঁধে পড়ার পরও কয়েক বছর পর্যন্ত ব্যবসা চালিয়ে যান। কিন্তু পরে তা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ালে হযরত আলী রা. সহ উঁচু পর্যায়ের সাহাবীরা পরামর্শ করে বাইতুল মাল থেকে বাৎসরিক মাত্র আট শ’ দিরহাম ভাতা নির্ধারণ করেন। হিজরী ১৫ সনে বাইতুল মাল থেকে অন্য লোকদের ভাতা নির্ধারিত হলে বিশিষ্ট সাহাবীদের ভাতার সমান তাঁরও ভাতা ধার্য করা হয় পাঁচ হাজার দিরহাম।
বাইতুল মালের অর্থের ব্যাপারে হযরত ’উমারের রা. দৃষ্টিভঙ্গি ছিল ইয়াতিমের অর্থের মত। ইয়াতিমের অভিভাবক যেমন ইয়াতিমের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ করে। ইয়াতীমের ও নিজের জন্য প্রয়োজন মত খরচ করতে পারে কিন্তু অপচয় করতে পারে না। প্রয়োজন না হলে ইয়াতিমের সম্পদ থেকে হাত গুটিয়ে নিয়ে শুধু হিফাজত করে এবং ইয়াতিম বড় হলে তাকে তার সম্পদ ফিরিয়ে দেয়। বাইতুল মালের প্রতি ’উমারের রা. এ দৃষ্টিভঙ্গিই সর্বদা তাঁর কর্ম ও আচরণে ফুটে উঠেছে।
হযরত ’উমার সব সময় একটি দুর্রা বা ছড়ি হাতে নিয়ে চলতেন। শয়তানও তাঁকে দেখে পালাতো। (তাজকিরাতুল হুফফাজ) তাই বলে তিনি অত্যাচারী ছিলেন না। তিনি ছিলেন কঠোর ন্যায় বিচারক। মানুষকে তিনি হৃদয় দিয়ে ভালোবাসতেন, মানুষও তাঁকে ভালোবাসতো। তাঁর প্রজাপালনের বহু কাহিনী ইতিহাসে পাওয়া যায়।
হযরত ফারুকে আযমের ফজীলাত ও মর্যাদা সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসে এত বেশী ইঙ্গিত ও প্রকাশ্য বাণী রয়েছে যে, সংক্ষিপ্ত কোন প্রবন্ধে তা প্রকাশ করা যাবে না। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সা. নিকট তাঁর স্থান অতি উচ্চে। এজন্য বলা হয়েছে, ’উমারের সব মতের সমর্থনেই সর্বদা কুরআনের আয়াত নাযিল হয়েছে।’ হযরত আলী রা. মন্তব্য করেছেনঃ ‘খাইরুল উম্মাতি বা’দা নাবিয়্যিহা আবু বকর সুম্মা ’উমার- নবীর সা. পর উম্মাতের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি আবু বকর, তারপর ’উমার।’ হযরত আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ বলেনঃ ’উমারের ইসলাম গ্রহণ ইসলামের বিজয়। তাঁর হিজরাত আল্লাহর সাহায্য এবং তাঁর খিলাফত আল্লাহর রহমত।’ ’উমারের যাবতীয় গুণাবলী লক্ষ্য করেই রাসূলে করীম সা. বলেছিলেনঃ ‘লাও কানা বা’দী নাবিয়্যুন লাকানা ’উমার- আমার পরে কেউ নবী হলে ’উমারই হতো।’ কারণ তাঁর মধ্যে ছিল নবীদের স্বভাব-বৈশিষ্ট্য।
জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চা ও প্রসারের ক্ষেত্রে ’উমারের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। তিনি আরবী কবিতা পঠন-পাঠন ও সংরক্ষণের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন। আরবী ভাষার বিশুদ্ধতা রক্ষার প্রতি তিনি ছিলেন অত্যন্ত সজাগ; তাঁর সামনে ভাষার ব্যাপারে কেউ ভুল করলে শাসিয়ে দিতেন। বিশুদ্ধভাবে আরবী ভাষা শিক্ষা করাকে তিনি দ্বীনের অঙ্গ বলে বিশ্বাস করতেন। আল্লামা জাহাবী ‘তাজকিরাতুল হুফ্ফাজ’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে ’উমার ছিলেন অত্যন্ত কঠোর, একই হাদীস বিভিন্ন সনদের মাধ্যমে বর্ণনার প্রতি তিনি তাকিদ দেন।
ইন্তেকাল
৬৪৪ সালে উমর (রাঃ) একজন পারসিয়ানের হাতে নিহত হন। হত্যাকান্ডটি কয়েকমাস ধরে পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
প্রখ্যাত সাহাবী মুগীরা ইবন শু’বার রা. অগ্নি উপাসক দাস পিরুজ নাহাওয়ান্দি (আবু লুলু বলেও পরিচিত) নামক এক পারসিয়ান দাস উমরের কাছে তার মনিব মুগিরার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করে। তার অভিযোগ ছিল যে তার মনিব মুগিরা তার উপর বেশি কর ধার্য করেছে। উমর এরপর মুগিরার কাছে এ বিষয়ে জানতে চান। মুগিরার উত্তর সন্তোষজনক হওয়ায় উমর রায় দেন যে পিরুজের উপর ধার্য করা কর ন্যায্য। পিরুজ বায়ুকল (উইন্ডমিল) তৈরি করতে জানত। উমর তাকে বলেন যে সে যাতে তাকে একটি বায়ুকল তৈরি করে দেয়। পিরুজ এর উত্তরে বলে যে যে এমন এক বায়ুকল তৈরি করবে যা পুরো পৃথিবী মনে রাখবে।
পিরুজ উমরকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সে ফজরের নামাজের পূর্বে মসজিদে নববীতে প্রবেশ করে। এখানে নামাজের ইমামতি করার সময় উমরকে সে আক্রমণ করে। তাকে ছয়বার ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়। হামলার পর পালিয়ে যাওয়ার সময় আশেপাশের লোকেরা তাকে ঘিরে ফেলে। এসময় সে আরো কয়েকজনকে আঘাত করে যাদের কয়েকজন পরে মারা যায়। এরপর পিরুজ নিজ অস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যা করে।
মৃত্যুশয্যায় থাকা অবস্থায় উমর তার উত্তরসুরি নির্বাচনের ব্যবস্থা করে যান। তিনি ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন। এর সদস্যরা হলেন আবদুর রহমান ইবনে আউফ, সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস, তালহা ইবনে উবাইদিল্লাহ,উসমান ইবনে আফফান, আলি ইবনে আবি তালিব ও জুবায়ের ইবনুল আওয়াম।
এই কমিটিকে নিজেদের মধ্য থেকে একজন খলিফা নির্বাচনের দায়িত্ব দেয়া হয়। তারা সবাই আশারায়ে মুবাশশারার সদস্য ছিলেন।এসময় জীবিত থাকা সত্ত্বেও আরেক আশারায়ে মুবাশশারা সাঈদ ইবনে যায়িদ বাদ পড়েন। উমরের সাথে রক্তসম্পর্ক ছিল বিধায় তাকে এর বাইরে রাখা হয়। উমর তার আত্মীয়দেরকে এধরনের কাজে নিয়োগ দিতেন না।
পঞ্চাশ জন সৈনিকের একটি দলকে কমিটির বৈঠক চলার সময় ভবনের বাইরে প্রহরায় রাখার জন্য উমর নিযুক্ত করেন। বৈঠক চলাকালানী সময়ে আবদুর রহমান ইবনে আবি বকর ও আবদুর রহমান ইবনে আউফ জানান যে তারা উমরকে হামলা করার জন্য ব্যবহৃত ছুরিটি দেখেছিলেন। আবদুর রহমান ইবনে আউফ জানান যে তিনি হরমুজান, জাফিনা ও পিরুজকে হামলার এক রাত আগে সন্দেহজনকভাবে কিছু আলোচনা করতে দেখেন। তাকে দেখে তারা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে এবং একটি ছুরি মাটিতে পড়ে যায় যা উমরের উপর হামলা করার জন্য ব্যবহৃত ছুরির অবিকল অনুরূপ। আবদুর রহমান ইবনে আবি বকর নিশ্চিত করেন যে হামলার কয়েকদিন আগে তিনি এই ছুরিটি তিনি একবার হরমুজানের কাছে দেখেছিলেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছিল যে মদিনায় বসবাসরত পারসিয়ানরা এই হামলার জন্য দায়ী। এতে উমরের সন্তান উবাইদুল্লাহ ইবনে উমর উত্তেজিত হয়ে মদিনার পারসিয়ানদের হত্যা করতে উদ্যত হন। তিনি হরমুজান, জাফিনা ও পিরুজের মেয়েকে হত্যা করেন। মদিনার লোকেরা তাকে আরও হত্যাকান্ড থেকে নিবৃত্ত করে। উমর এ সংবাদ জানতে পেরে উবাইদুল্লাহকে বন্দী করার আদেশ দেন এবং বলেন যে পরবর্তী খলিফা উবাইদুল্লাহর ভাগ্য নির্ধারণ করবেন।
আহত হওয়ার তৃতীয় দিনে হিজরী ২৩ সনের ২৭ জিলহজ্জ বুধবার ৬৪৪ সালের ৩ নভেম্বর মারা যান।মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর ৭ নভেম্বর উসমান ইবনে আফফান তৃতীয় খলিফা হিসেবে তার উত্তরসুরি হন। দীর্ঘ আলোচনার পর বিচারে সিদ্ধান্ত হয় যে উবাইদুল্লাহ ইবনে উমরকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হবে না এবং এর পরিবর্তে তাকে রক্তমূল্য পরিশোধ করার নির্দেশ দেয়া হয়। উমরের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর তার সন্তানের মৃত্যুদন্ড জনসাধারণকে ক্ষিপ্ত করে তুলতে পারে এমন আশঙ্কায় উবাইদুল্লাহর শাস্তি হ্রাস পায়।
তার ইচ্ছানুযায়ী আয়িশা (রাঃ) অনুমতিক্রমে তাকে মসজিদে নববীতে মুহাম্মদ (সা) ও আবু বকরের পাশে দাফন করা হয়।
শেষ কথা ঃ
ইসলামি সাম্রাজ্যের স্থপতি হিসেবে উমর (রাঃ) এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। মুহাম্মদ (সা) এর যুগে তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন।তিনি ছিলেন একজন ন্যায় পরায়ণ শাসক। তিনি বলেছেন,
যদি ইউফ্রেটিসের তীরে একটি কুকুর না খেয়ে মারা যায় তবে উমর সে জন্য দায়ী থাকবে।
—(উমর)
দ্য ডিক্লাইন এন্ড ফল অব দ্য রোমান এম্পায়ার গ্রন্থে এডওয়ার্ড গিবন উমরের সম্পর্কে বলেছেন:”Yet the abstinence and humility of Umar were not inferior to the virtues of Abu Bakr: his food consisted of barley bread or dates; his drink was water; he preached in a gown that was torn or tattered in twelve places; and a Persian satrap, who paid his homage as to the conqueror, found him asleep among the beggars on the steps of the mosque of Muslims.”
টীকাঃ আসহাবে রাসুলে জীবন কথা হতে সংকলিত, উইকিপিডিয়া
০৩ রা জুন, ২০১৬ বিকাল ৩:১২
আমি দেলোয়ার বলেছেন: বারাকাল্লাহুম ফী!
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা জুন, ২০১৬ দুপুর ১:১৮
তানভীরএফওয়ান বলেছেন: Jazakallahu khairan