নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার কথা বলি

আমি মানুষ

প্রত্যেক মানুষের বুকের ভিতরে একটা চাপা ব্যথা থাকে। সেটা বিভিন্ন রকমের হয়। কারো ভালবাসার জন্য, কারো বাবা - মায়ের জন্য, কারো অর্থের জন্য, কারো পড়াশুনার জন্য। কিন্তু একটা না একটা ব্যথা থাকবেই। তবুও মানুষ বেঁচে থাকে।

আমি মানুষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার কম্পিউটার বেলা (১ম পর্ব)

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:০৫



আমার ছেলে বেলা, আমার মেয়ে বেলা থাকলে আমার কম্পিউটার বেলা থাকতে দোষ কি? আসলে আমার কম্পিউটার শেখার পেছনে যাদের অবদান আছে তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্য আমার এই পোষ্ট।



আমি প্রথম কম্পিউটার দেখি ১৯৯৭সালে। আমার আব্বুর এক বন্ধুর অফিসে। বেড়াতে গিয়েছিলাম চট্রগ্রামে। ওখানে আব্বুর বন্ধুর অফিসে কম্পিউটার আছে শুনে দেখতে যাই। তখন কম্পিউটার থাকা মানে বিশাল কিছু। বিশাল এক রূম, এয়ারকন্ডিশন চালানো, জুতা পরে ঘরে ঢোকা যাবেনা, এসবের মধ্যে দিয়ে প্রথম কম্পিউটার দেখা।



এরপর এইচ.এস,সি পরীক্ষার পর কোচিং করার সময় আমার এক বন্ধু সাজু কম্পিউটার কেনে। ওর বাসা ছিল মীরপুরে। ওর কাজ ছিলো কম্পিউটারে গান শোনা, মুভি দেখা আর গেম খেলা। তো আমিও মাঝেমাঝে গান শুনতে ওর বাসায় যেতাম। এর মাঝে আমার আরেক বন্ধু সুমন কম্পিউটার কেনে। এর মাঝে আমার আরেক বন্ধু মোস্তফা খুলনা বিআইটিতে চান্স পেয়ে কম্পিউটার কেনে। আমি চান্স পাই শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমি আমার বাবা-মা কে কিছুতেই আমার কম্পিউটার কেনো দরকার বুঝাতে পারিনা।



এর মাঝে সুমনের বাসায় প্রথম ইন্টারনেটের কানেকশন নেয়। মাঝেমাঝে আমি ওর বাসায় যেয়ে সারারাত ইন্টার নেটে বসে নতুন নতুন জিনিস শিখতাম। আমরা ৩/৪ বন্ধু একসাথে যেতাম, কিন্তু সবাই আড্ডা দিলেও আমার কম্পিউটারের নেশা ছাড়তোনা। অবশেষে আমার বাবাকে বুঝাতে সক্ষম হলাম যে আমার একটা কম্পিউটার দরকার। এক্ষেত্রে আমার ছোট চাচার অবদান বেশী(উনি আমাদের মাঝে নেই, আল্লাহ তাকে বেহেস্ত নসীব করুক) উনি সেসময় গনিতে পাশ করে কোন কলেজের যেন কম্পিউটারের শিক্ষক ছিলেন। উনার পরামর্শে ১৯৯৯ সালে আমার কম্পিউটারের বাজেট পাশ হয়। কিন্তু কোথাথেকে কিনব? অবশেষে আমার বন্ধু সাজুর সরনাপন্ন হই। ও যেখানথেকে কম্পিউটার কিনেছিলো আমাকে সেখানে নিয়ে যায়। এলিফ্যান্টরোডের পিসি মার্টে যেয়ে দেখি সেটার মালিক তানভীর ভাই এক সময় আমাদের ক্যাম্পাসের ছাত্র ছিলেন। আমার মনে হয় উনি প্রথম আমাদের ক্যাম্পাসের ছাত্র যে কম্পিউটার লাইনে গেছেন। যদিও উনি ছিলেন ব্যবসায়ী।



আমি থাকতাম শেরে বাংলা হলে। সেই সময় হলে হাতে গোনা ২/১ জনের কম্পিউটার ছিলো। কম্পিউটার তো হলো কিন্তু কাজ তো কিছুই জানিনা। আবার সাজুর সরনাপন্ন। ও কিছু কিছু সফটওয়্যার ইনস্টল করে দিলো। তখন শিখে ফেল্লাম সফটওয়্যার কিভাবে ইনস্টল করে। কম্পিউটার কেনার সময় তানভীর ভাই প্রচুর গেম আর সফটওয়্যার দিয়েছিলেন। আমার ওই সময়ের কাজ ছিলো গেম খেলা আর বিভিন্ন সফটওয়্যার দিয়ে কি কাজ করে দেখা। মানে সফটওয়্যার ইনস্টল আর আন ইনস্টল। হলে থাকার যে সমস্যা তা হলো প্রায়ই বড় ভাইরা এসে গেম খেলার জন্য বসে থাকতো।



এর মাঝে আরেক বড়ভাই(ডলার ভাই) খবর দিলো ইউজিসি তে বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়। উনার সাথে ওখানে যেয়ে আমার প্রথম ইমেইল এড্রেস খুলি। এর মাঝে কয়েকবার কম্পিউটার নষ্ট করে ফেলি। তানভীর ভাইয়ের কাছে নিয়ে যাই আর উনি ঠিক করে দেন। আর এই আনা নেয়া করার মাঝে কম্পিউটার খোলা শিখে যাই।



কিন্তু কেনার সময় যেসব সফটওয়্যার পেয়েছিলাস সেগুলোর ব্যবহার তো দেখা শেষ। এখন নতুন সফটওয়্যার কোথায় পাই? আমার ক্লাসমেট নাসিম (বর্তমানে শেকৃবির শিক্ষক) তার সংগ্রহে প্রচুর সফটওয়্যার ও গানের কালেকশন ছিলো। আমি দু'দিন পর পর নাসিমের কাছে দৌড়। ওর কাছেই কম্পিউটারের প্রাথমিক অনেক কাজ শিখি। এর মাঝে পরিচিত হই ক্যাম্পাসর আরেক বড় ভাইয়ের সাথে। ফারহান ভাই । উনি সেসময় লিনাক্সের ওস্তাদ ছিলেন। কিন্তু তাকে ক্যাম্পাসে বেশী পাওয়া যেতনা। উনার সাথে একবার ধানমন্ডিতে এক সাইবার ক্যাফে যাই। এর পর সাইবার ক্যাফে আমার নেশাতে পরিনত হয়। এমনও আছে আমি সকাল ১০ টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ওই সাইবারক্যাফেতে।



এভাবে চলছিল কম্পিউটার শেখা। এর মাঝে একবার পিকনিকে সোনারগাঁ বেড়াতে যাই। আমি একজনকে পছন্দ করতাম সেও আমার সাথে যায়। আমার ডিজিটাল ক্যামেরা থাকার সুবাদে তার ছবি চলে আসে আমার কম্পিউটারে। একরাতে ফটোশপের এনিমেশন বানানোর একটা সফটওয়্যার (নাম ভুলে গেছি, সম্ভবত ইমেজ রেডী) কিভাবে কাজ করে দেখতে দেখতে মাথায় দুষ্টাম বুদ্ধি চলে আসল। আমি বান্ধবীকে সফটওয়্যার দিয়ে নাচিয়ে ফেল্লাম। পরেরদিন বান্ধবী দেখে তো হেসেই খুন। নতুন উদ্দিপনায় কাজ শেখ শুরু হলো। এর মাঝে দেশের ক্ষমতার পালা বদল হলো। আমাদের ক্যাম্পাসের নিয়ম ছিলো হলে থাকা মানে রাজনীতি করা। ক্ষমতার পালা বদলের পর ক্ষমতাশীল দলের নেতারা সগর্বে ঘোষনা করলো আমাকে যেন আর ক্যাম্পাসে দেখা না যায়। কি আর করা। বিনা নোটিশে হাজির হলাম পুরানো বাসায় (যেখানে থেকে কোচিং করতাম) সেখানকার বড় ভাইরা আমাকে সানন্দে থাকতে দিলেন। বলে রাখি আমি কিন্তু ভোটের আগেই কম্পিউটার ্ওই বাসায়রেখে এসে ছিলাম।



আমার কম্পিউটার শেখা মুলত ওই সময়টাতে। ক্যাম্পাসে যেহেতু যাওয়া যাবেনা, তো বাসায় বসেবসে সারাদিন কম্পিউটার নিয়ে গবেষনা করা আমার কাজ। আর ওই বাসায় একজন থাকতো যে নিটে কম্টিউটার শিখতো । তার কাছ থেকে প্রচুর শিখেছি। সেই সময় উনি শিখছিলেন ভিজ্যুয়াল বেসিক গ্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ। উনাকে বল্লাম আমাকেও শেখান। উনি রাজী হলেন। উনার নাম হচ্ছে সৈয়দ। উনি আমাকে প্রথম দিনে ভিজ্যুয়াল বেসিকের ফর্ম কিভাবে তৈরী করে, ছবি কিভাবে যোগ করে শিখালেন।



আমার একটা স্বভাব আছে। যে কোন জিনিস কোথায় কাজে লাগানো যায় আগেই চিন্তা করে ফেলি। তো ওই একদিন শিখেই আমি ১১ টা ফর্ম যোগ করে প্রতিটা ফর্মে অ, আ, ই, ঈ লিখে রান করিয়ে উনাকে দেখাই। উনি প্রথম দিন দেখেই টাস্কি খেয়ে যান। বলে আপনার মাথায় এই বুদ্ধি আসলো আর আমি এতো দিন শিখেও আসলোনা। পরে উনি আমাকে বল্লো আইডিয়া যেহেতু আপনার সেহেতু ২ জন মিলে আমরা বাচ্চাদের পড়াশুনা শেখানোর সফটওয়্যার বানাই। আমিও জানতাম শুধু ফর্ম নিয়ে এতো বত সফটওয়্যার বানানো সম্ভব নয়। জিনিসটা হতে হবে ব্লাকবোর্ডের মতো। একটা ফমেই লেখা আসবে আবার মুছে ্ওই ফর্মেই অণ্য অক্ষর আসবে। এরপর দ'জন মিলে শুরু করলাম সফটওয়্যার তৈরী। আমি মোটামুটি মাল্টিমিডিয়া সাইড(ইমেজ, সাইন্ড, এনিমেশন) রেডি করতাম আর উনি করতেন প্রোগ্রামিং সাইড। একসময় সফটওয়্যারের কাজ শেষ হলো। এখন কিভাবে ওটা বাজারে আনা যায়?



এর মাঝে আমার শাস্তি কমিয়ে ক্যাম্পাস যাওয়ার অনুমতি দেয়া হলো। আমি ক্লাস শুরু করলাম, আর উনিও চাকরীতে যোগ দিলেন। এর মাঝে উনি খবর পেলেন মোস্তফা জব্বার এরকম কাজ খুঁজছে। আমরা মীরপুরে উনার আনন্দ ডিজিটালে উনার সাথে দেখা করলাম। উনি আমাদের তেমন উৎসাহ দিলেন না। ওহ বলতে ভুলেগেছি আমাদের সফটওয়্যারের নাম দিয়েছিলাম এসো পড়া শিখি। মোস্তফা জব্বারের কথা শুনে আমরা আগ্রহ হারিয়ে ফেল্লাম। আমরা একটা সমস্যাতেও পড়েছিলাম। যেসব কম্পিউটারে ভিজ্যুয়াল বেসিক নাই সেসব কম্পিউটারে সফওয়্যার চলেনা।



সেই সময় উইন্ডোজ এক্সপি নতুন এসেছে। আমি রাতে আমার কম্পিউটারে এক্সপি ইনস্টল দিতে যেয়ে হার্ডড্রাইভের সব ডাটা মুছে ফেল্লম। ৫/৭ দিন নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বরে ঘুরলাম। কেউ ডাটা রিকভার করতে পারেনা। প্রায় ১৫দিন পর একজনকে পেলাম সে বল্লো পারবে কিন্তু প্রতি মেগার জন্য ২০০টাকা নেবে। আমার হার্ডড্রাইভে ডাটা ছিলো ৩০ গিগা বাইট। এতো টাকা খরচ আমার সম্ভব ছিলোনা। অবশেষে ঘাটা ঘাটি করতে করতে আমি নিজেই ডাটা উদ্ধার করে ফেলি। কিন্তু কিছু কিছু ফাইল অলরেডি করাপ্টেড হয়ে গেছে। এর মাঝে ঘাটা ঘাটি করতে করতে ফ্লাস শিখে ফেলি। যেহেতু ভিজ্যুয়ালবেসিক না থাকলে সফটওয়্যার রান করছিলোনা সেহেতু সিদ্ধান্ত নেই ফ্লাসে সফটও্য়্যারটা আবার বানাবো। আমি ফ্লাস দিয়ে সফটওয়্যার বানাই আর সৈয়দ ভাই ট্রাই করতে খাকে কিভাবে সিডি কপি প্রোটেক্টেড করা যায়। আমার কাজ শেষ হলে উনি সিডি কপি প্রোটেক্টেড করেন। ফলে সিডি ছাড়া কেউ সফটওয়্যারটি চালাতে পারতো না।



সেইসময় শৈলী ডিজিটাল প্রকাশনীর মাসুদ ভাইয়ের সাথে পরিচিত হয় এবং উনি মার্কেটিং করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন । এরপর একুশের বই মেলায় আমার পড়া শিখির শুভ উদ্বোধন হয়। এই সময় আমি শ্যামলীর নিডাসাতে পারটাইম চাকরিতে যোগ দেই।



------------ চলবে

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:১৭

মাসরুর আহমেদ বলেছেন: অফ টপিক ঃ আপনি কি ঢাবিতে পড়তেন?

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ৮:২১

আমি মানুষ বলেছেন: না, আমি শেরে বাংলা কৃষিবিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.