নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সিনেমা পাগল। সিনেমায় খাই, সিনেমায় ঘুমাই, সিনেমায় পড়ি, সিনেমায় স্বপ্ন দেখি। জীবন সিনেমাময়।

লেখাজোকা শামীম

গল্প লেখার নেশা আমার আশৈশব। মাধ্যমগুলো বদলে গেছে সময়ে সময়ে - কখনও গল্প, কখনও উপন্যাস, কখনও নাটক, কখনও চলচ্চিত্র কিংবা কখনও টিভি নাটক। যে মাধ্যমেই কাজ করি না কেন, একই কাজ করেছি - গল্প বলেছি। আমি আজন্ম গল্পকার - এক সাদামাটা গল্পকার। মুঠোফোন : ০১৯১২৫৭৭১৮৭. বৈদ্যুতিক চিঠি : [email protected]ফেসবুক : http://www.facebook.com/shajahanshamim.scriptwriterদৃষ্টি আকর্ষণ : আমার নিজের লেখা সাহিত্যকর্ম যেমন উপন্যাস ও নাটক - যা এই ব্লগে পোস্ট করেছি, তার সর্ব স্বত্ব সংরক্ষিত। আমার লিখিত অনুমতি ছাড়া এসবের কিছুই কোনো মাধ্যমে পুনঃপ্রকাশ করা যাবে না।

লেখাজোকা শামীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

উপন্যাস - নিষিদ্ধ জ্যোৎস্না - পর্ব -০৩

১৮ ই মে, ২০১৩ সকাল ৯:১৭

তিন



ঘুম থেকে জেগে দেখি, পাশে মেজ ভাইয়া নেই। তাহলে তো অনেক বেলা হয়েছে। কমপক্ষে দশটা তো হবেই। বেলা না হলে মেজ ভাইয়া বিছানা ছেড়েছে নাকি ?

কী মুশকিল ! সকাল নয়টায় প্রতিভাকে পড়াতে যাই। আজ যাওয়া হচ্ছে না। তাহলে তো এডভান্স টাকাটাও নেয়া হচ্ছে না। কী বিপদেই না পড়লাম।

পনিরকে গালমন্দ করব ভেবে থেমে গেলাম। বেচারীর দোষ কী ? ফজরের সময় বিছানায় গিয়ে দুপুর পর্যন্ত ঘুমাইনি তা-ই শোকর।

মার ঘরে দেয়াল ঘড়ি আছে। বাথরুমে যাওয়ার পথে উঁকি দিয়ে দেখলাম। মা ঘুমাচ্ছেন। অবিশ্বাস্য ব্যাপার। মাত্র আটটা বাজে। হাপ ছেড়ে বাঁচলাম। যাক, প্রতিভার ওখানে যাওয়া যাবে।

বাথরুমে ঢুকতে গিয়ে আমার চক্ষু চড়ক গাছ। মেজ ভাইয়া গোছল করছে। যে মানুষ বেলা এগারটা পর্যন্ত বিছানায় গড়াগড়ি যায়, সে সকাল আটটায় গোছল করছে - এর চেয়ে গোলমেলে ব্যাপার আর কী হতে পারে ? মেজ ভাইয়াকে ভীমরতিতে পেল নাকি ? কোন একটা ব্যাপার তো আছেই। আমাকে দেখেই মেজ ভাইয়া বলল, ‘রঞ্জু, আমার সাবানটা আনতে ভুলে গেছি। একটু এনে দে তো। ’

মেজ ভাইয়া আবার যেনতেন সাবান ব্যাবহার করে না। সে নিজের জন্য বিদেশী সুগন্ধীযুক্ত সাবান কিনে আনে। সেই সাবান আবার নিজের ড্রয়ারের মধ্যে লুকিয়ে রাখে। তার ঘরে গিয়ে ড্রয়ার আতিপাতি করে খুঁজে সাবান বের করলাম। নাকের কাছে নিয়ে দেখি, দারুণ সুগন্ধ। তার সাবান এনে দিলাম। সে গায়ে সাবান মাখতে মাখতে উচ্ছ্বসিত গলায় বলল, ‘তোর কি টাকা পয়সার দরকার আছে ?’

আমি আকাশ থেকে পড়লাম। ব্যাপারটা বোধগম্য হচ্ছে না। চেয়েও যার কাছ থেকে কোন দিন ফুটো পয়সা বের করতে পারি নি, সেই আজ সেধে টাকা দিতে চাইছে। আমার কান বেঈমানী করছে না তো ? নাকি মেজ ভাইয়ার মাথা খারাপ হল ?

‘কী হল, কথা বলছিস না কেন ? তোর কি টাকা পয়সা দরকার ?’

আমি দ্রুত চিন্তা করলাম। বুঝলাম, এখন মেজ ভাইয়ার পকেট খুবই গরম এবং দিল খুবই নরম। তাই এই অবস্থা এবং এখন যে কোন অঙ্কের টাকা চাওয়া যেতে পারে। মাথা চুলকে বললাম, ‘হাজারখানেক টাকা হলে একটা কেডস কিনতাম।’

‘ঠিক আছে, আমি বেরুনোর সময় নিয়ে নিস।’

ফুর্তিতে ঠিকমতো হাত-মুখ ধোয়া হল না। আজ জেগে কার মুখ দেখেছি ? সম্ভবত জেগে কারো মুখ দেখি নি বলেই আজ এমন শুভ দিন।

মেজ ভাইয়া ইদানিং বেশি রকম দরাজ দিল হয়ে যাচ্ছে। খুব উপরি পয়সা আসছে বোধ হয়। ঠিকাদারীতে যদি উপরি পয়সা না আসে, তবে আসবে কিসে ?

মাথার চুল আঁচড়ে পাকঘরে চলে এলাম। পনির চা বানাচ্ছে।

‘সকালের নাস্তা কি রে ?’

‘চা আর মুড়ি। চলবে ?’

‘না চলে উপায় আছে ?’, আমি জলচৌকি টেনে বসলাম।

পনির মিটিমিটি হাসছে। এর মাথায়ও ছিট হয়েছে নাকি ? একা একা হাসছে কেন ?

‘কী, কিছু বলবি ?’

‘না, থাক।’

‘থাকবে কেন ? বল, কী বলবি।’

‘সকালে একটা মজার দৃশ্য দেখলাম।’

‘কী দৃশ্য ?’

‘দেখলাম, আব্বা মায়ের পা ধরে ঝাকাচ্ছে, আর বলছে, কলমী, মাফ করে দাও। আর কোন দিন ও রকম করব না।’

পনির হাসল। বেদনার হাসি। এই হাসিতে ওকে সুন্দর দেখাচ্ছে। দুঃখে হাসলে সুন্দর দেখাবে কেন ? এটা তো খুব খারাপ ব্যাপার।

আমি হাসতে চাইলাম। কিন্তু হাসি এল না। এটা হাসির কোন ঘটনা না। অসংখ্যবার এই ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু আমাদের পোড়া কপাল জোড়া লাগে নি।

পনির চা-মুড়ি দিল। মুড়িতে একটু চিনি ছিটিয়ে দিয়েছে। বেশ ভালো লাগছে।

‘মাকে ডেকে নিয়ে এলি না ?’

‘মাকে ডেকেছি। মা বলল, পরে খাবে।’

আমি চায়ে চুমুক দিলাম। আমার বোনটা চা বানায় ভালো। ভারপ্রাপ্ত গিন্নি হয়ে বিশ বছরের অভিজ্ঞ গিন্নিকে হারিয়ে দিয়েছে।

পনির একমনে মুড়ি চিবুচ্ছে। কিছু একটা ভাবছে। কী চমৎকার যে ওকে লাগছে। নির্ঘুম থাকায় চোখগুলো ফোলা ফোলা। ফর্সা গালের পাশে কোকড়ানো কালো চুল। ঠোঁটের পাশে গভীর কালো একটি ছোট্ট তিল। হাসলে তিলটা নাচতে থাকে।

‘ভাইয়া।’

‘বল।’

‘মুন্না ভাইয়ারা কি খুব বেশি বড় লোক ?’

আমি রসিকতা করে বললাম, ‘খুব বেশি বড় লোক না তো। মাত্র পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি।’

পনিরের চোখে মুখে এক ঝলক রক্ত বয়ে গেল। হাসতে হাসতে বলল, ‘ফাজলেমি ছাড়া থাকতে পার না ? কথায় কথায় ফাজলেমি।’

আমি হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কিন্তু হঠাৎ এ কথা কেন ?

‘এমনি। মুন্না ভাইয়ার ব্যবহারে মনে হয়, উনি আমাদের মতোই। ওহ, ভাইয়া, তোমাকে কিন্তু বাজারে যেতে হবে। ’

কী চমৎকারভাবে পনির প্রসঙ্গ বদলাল। আমি কি পনিরকে লজ্জা দেব ? না, থাক। বললাম, ামার হাতে সময় নেই। বাজারে যেতে পারব না।’

‘ঘরে কিচ্ছু নেই। বাজারে না গেলে খাবে কী ?’

মেজাজ খিচড়ে গেল। এত অল্প সময়ে বাজার করা অসম্ভব। চুপ করে রইলাম।

‘শোন, আব্বা সকালে পঞ্চাশ টাকা দিয়ে গেছেন বাজারের জন্য।’

অবাক করা ব্যাপার। এ অবিশ্বাস্য। আব্বা বিশ টাকার বেশি কখনই বাজারের জন্য দেন না।

মেজাজটা ফুরফুরে হল। আজ বেশ কামাই হবে। কমপক্ষে দশ টাকা হাওয়া করে দেয়া যাবে। অন্য দিন খুব সামান্যই ইনকাম হয়।

বাজারে যাওয়ার আগে মেজ ভাইয়ার কাছ থেকে টাকাটা নিয়ে রাখা দরকার। চট করে তার মত বদলে গেলে টাকাটা আর পাওয়া যাবে না।

ঘরে এসে দেখি, ভাইয়া নেই। বাথরুমে গিয়ে দেখি, সেখানেও নেই। বুঝলাম, ভাইয়া বেরিয়েছে। প্রতিদিন ভাইয়া মোড়ের ‘দয়াল রেস্তোরাঁ’য় নাস্তা করে। তৎক্ষণাৎ ‘দয়াল রেস্তোরা’য় চলে এলাম। না, নেই। ক্যাশে বসা লোকটাকে জিজ্ঞেস করতেই বলল, ‘এই মাত্র বেরিয়ে গেল।’

যাশ্শালা ! আজ আর টাকা নেয়া হল না। ফটকাবাজ কি আর এত তাড়াতাড়ি ভদ্রলোক হয় ?

পনিরের কাছ থেকে পঞ্চাশ টাকা নিয়ে বাজারে গেলাম। বাজারের অবস্থা বিতিকিশ্রী। কাদায় সয়লাব। মাছের বাজার মানুষের বাজার হয়ে গেছে। তার মধ্যে গুটিকয় মেয়ে মানুষও এসেছে। বেহায়া মেয়েলোক। ইচ্ছে করে গায়ের উপর আছড়ে পড়ে।

বেশ বড় একটা মাছ কিনব। বোয়াল মাছটা তো ভালোই ঠেকছে। দর করলাম। ওরে বাপরে ! মাছটার দাম ষাট টাকা। অন্য দিন তো এটা বিশ পচিশ টাকায় বেচবে। ব্যাটা বুঝল কি করে যে, আজ আমার পকেট গরম ?

দর বেশি হওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করতেই খেঁকিয়ে উঠল মেছো, ‘জানেন না আউজকা হরতাল ?’

চুপসে গেলাম। আজকাল খুব অচেতন হয়ে যাচ্ছি। মেছোর কাছ থেকেও জ্ঞান নিতে হচ্ছে। কেন যে শিক্ষিত হয়েছি।

হরতাল হল ব্যবসার মওকা। দাম তো বাড়বেই। অর্থনীতির সস্তা কৌশল। হরতালে ত্যাগের মাহাত্ম্য লুকিয়ে আছে। সরকারের পতনের জন্য এইটুকু ত্যাগ করা উচিত। সাধারণ মানুষ ত্যাগ করার জন্যই জন্মায়।

বাজার থেকে বের হওয়ার মুখে বড় ভাইয়ার সাথে দেখা হয়ে গেল। বড় ভাইয়া হাসলেন।

‘কি রে, কেমন আছিস ?’

‘ভালো।’

‘তারপর বাসার অবস্থা কেমন ?’

‘এই আর কি মোটামুটি।’

‘আব্বার অবস্থা কী ?’

‘ঐ আগের মতোই।’

‘আশ্চর্য ! এই লোকটা একটুও বদলাল না। আচ্ছা, পুলিশী ব্যবস্থা নিলে কেমন হয় ?’

‘কোন লাভ নাই। আব্বার সাথে পুলিশের ভালো খাতির।’

বড় ভাইয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। বললেন,‘সমাজটাকে আমরা আর বদলাতে পারলাম না রে। যাক, যত দিন ওই সংসারে আছিস, একটু কষ্ট করে থাক।’

আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম।

বড় ভাইয়া জিজ্ঞেস করলেন, ‘তারপর তোর পড়াশোনা কেমন চলছে ?’

‘চলছে , কোন রকম।’

‘পড়াশোনাটা ভালো মতো চালা। এটাই ভবিষ্যৎ।’

‘যেই পরিবেশ। কী করে পড়াশোনা করব ?’

‘তবু সামনে এগুতে হবে। যাক, অনেক দেরি হয়ে গেল। চলি। বাসায় আসিস।’

বড় ভাইয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে গেল। আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে তার চলে যাওয়া দেখলাম। কেমন নিরীহ ভঙ্গিতে লোকটা হেঁটে যাচ্ছে। একটু কি রোগা হয়েছে ? আমার মন খারাপ হয়ে গেল।

বড় ভাইয়ার মতো সহজ সরল মানুষ এত কষ্ট পাচ্ছে ভাবলে খুব মায়া লাগে। এখন অবশ্য আলাদা সংসারে গিয়ে আরামেই আছে। ঝগড়াঝাঁটি তো আর নেই। এ সন্তানের সুখী সংসার। শুধু আব্বার কারণে বড় ভাইয়া আমাদের সঙ্গে থাকতে পারল না। মাতাল শ্বশুরের সঙ্গে কোন পুত্রবধূই থাকতে চাইবে না।

চিমসে বাজারে থলে নিয়ে বাসায় ফিরলাম। টাকা তো মারতে পারি নি, উল্টো নিজের এগার টাকা খরচ হয়ে গেছে। সাহস করে একটা অকাজ করে ফেলেছি। এক প্যাকেট নুডলস কিনেছি। পনির অনেক দিন যাবৎ বলছে।

থলেটা হাতড়েই পনির থ বনে গেল।

‘এটা কী ? প্যাকেটা কী জিনিস ?’

‘দ্যাখ তো চিনতে পারিস কি না’, আমার মুখে বিজয়ী হাসি।

‘নুডলস ! সত্যি তুমি আমার গ্রেট ভাইয়া।’

‘বোকার মতো তা বলতে হয় ?’

পনির দ্বিতীয় কোন কথা বলল না। হ্যাচকা টানে নুডলস বের করতে গিয়ে ভেঙ্গে চুরচুর করে ফেলল।

‘দিলি তো নষ্ট করে ? এখন রাঁধবি কী করে ?’

‘আমি রাঁধব নাকি ?’

‘তাহলে ...?’

‘লুনা রাঁধবে।’

‘লুনা মানে !’, বোকা হওয়ার ভান করলাম, যেন কোন দিন এ নাম শুনিনি, ‘লুনা কে ?’

‘আমার বান্ধবী। এডভোকেট সাহেবের মেয়ে।’

‘তাই, তা থাকে কোথায় ?’

‘ঢং করো না। মেয়েদের সম্পর্কে তোমার জেনে এত কী লাভ ?’

‘তাই তো, দু’আনাও তো লাভ নেই। তবে মেয়েদের সম্পর্কে নয়, মেয়েটার সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি।’

‘ফাজলেমি ছাড়। ভাগো এখন।’

ভেগে চলে এলাম বাথরুমে। হাত পা ধুতে হবে। ঠিক তখনই মনে পড়ল, প্রতিভার ওখানে যেতে হবে। আমার কাছ খুচরো টাকা নেই। রিক্সায় যাওয়ার জন্য পনিরের কাছ থেকে টাকা নিতে হবে। দ্রুত হাত-মুখ ধুয়ে পাকঘরে উকি দিলাম।

পাকঘরে দু’জন। একজন পনির। অন্য জন যে লুনা তার নিশ্চিত। ভেতরে না ঢুকে বাইরে থেকে দু’জনকে দেখতে লাগলাম।

লুনা ! কী চমৎকার একটি মেয়ে । পেছন থেকে এত সুন্দর লাগছে। মেয়েটা অবশ্যই সুন্দরী। ওকে সামনে থেকে দেখলে কি চোখ ধাঁধিয়ে যাবে ?

‘ভাইয়া’ - চমকে গেলাম ভীষণ, ‘বাইরে দাঁড়িয়ে আছ কেন ? ভেতরে এসো।’

ভেতরে গেলাম। চোখ ধাঁধালো না, মনের ভেতর অসংখ্য অদ্ভুত সুন্দর ফুল ফুটে উঠল।

‘লুনা, এ হচ্ছে আমার ভাইয়া।’

‘জানি’, লুনা আমার দিকে তাকাল। অসংখ্য অদ্ভুত সুন্দর ফুল দমকা হাওয়ায় দুলে উঠল।

‘জানিস মানে ! তুই কী করে জানলি ?’, পনির বিস্ময়াহত।

‘ওমা ! আমাদের বাসা থেকে তোদের বাসা দেখা যায় না ?’

‘ও হ্যা, তাই তো। ভাইয়া, তুমিও ওকে চেন নাকি ?’

‘নাহ, আমি কি করে চিনব ?’

লুনা দমকা হাওয়ার মতো এক ঝলক হাসি দিল। যাদুকরী সৌরভে নেচে উঠল হাজার প্রজাপতি। আমি মুগ্ধ হয়ে ওর দিকে চেয়ে রইলাম। দমকা হাওয়ায় একের পর এক বুকের কপাট খুলে যাচ্ছে।

হঠাৎ খেয়াল করলাম, পনির আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এমনভাবে তাকিয়ে আছে যেন আমি এক মহা-অপরাধী এবং বোকার মতো ধরা পড়েছি। ওদের সামনে স্বাভাবিক থাকার জন্য অনেক কষ্টে একটা ঢোক গেলা মিস করলাম।

‘ভাইয়া, তুমি দাঁড়িয়ে আছ কেন ? বাইরে যাও।’

আমি হতচকিত হয়ে কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলাম না। মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে। ঠোঁটের ডগায় বদ কথা চলে আসছে।

‘ভাইয়া কি কিছু বলবে ?’

‘হ্যা, বলব। তুই আগে বাইরে আয়।’

লুনা বলল,‘যা, শুনে আয়। নইলে উনি আবার রাগ করবেন।’

এই কথা বলে আমার দিকে তাকাল। সে এক রহস্যময় চাউনি। বুকের কপাটে কেবল দমকা হাওয়ার দাপাদাপি।

পনির আমাকে নিয়ে বাইরে চলে এল। ততক্ষণে আমার রাগের মাত্রা কমে গেছে। তবু রাগ দেখানোর জন্য বললাম, ‘তুই একটা ইতর।’

পনির হেসে বলল,‘খানিকটা সন্দেহ আছে।’

‘আবার কথা বলিস ? তুই একটা বদমাস পদের ইতর।’

‘ইতর না হয় হলাম। কিন্তু বদমাস পদের কেন ?’

আমি কৈফিয়ত দেয়ার ভঙ্গিতে বললাম, ‘তুই আমাকে ডেকে পাকঘরে ঢুকালি। এখন আবার তুইই বের করে দিচ্ছিস। এটা আমাকে অপমান করা না ? বাইরের মানুষের সামনে নিজের ভাইকে অপমান করতে ভালো লাগে ?

‘কী বললে ? অপমান করেছি ?’, পনির গলা ফাটিয়ে হাসতে লাগল। আমি আরো বেশি চুপসে গেলাম। এই মেয়ে তো আমাকে পুরোপুরি ঢোবাবে।

হাসতে হাসতে পনির বলল, ‘ ঠিক আছে, ওর সামনে তোমাকে খুব সম্মান করব। তোমার পা ধরে বসে থাকব। চলবে ?’

‘তার আর দরকার নেই।’

‘তা তো জানি’, পনির রহস্যময় হাসি মুখে নিয়ে ভেতরে চলে গেল। আমি দ্বিতীয় কথা বলার সুযোগ হারালাম।



চলবে ...



পর্ব -০১পর্ব - ০২পর্ব - ০৪



অন্যান্য ধারাবাহিক লেখা :



কুষ্ঠ নিবাস



নাটকের মেয়ে

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই মে, ২০১৩ সকাল ৯:৪৭

সবুজ সাথী বলেছেন: পড়ছি, আসলেই ভাল হইতেছে। গতি আছে গল্পে। :)

১৯ শে মে, ২০১৩ রাত ১:০৫

লেখাজোকা শামীম বলেছেন: আপনার মন্তব্য আমাকে উৎসাহিত করছে। সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

২| ১৮ ই মে, ২০১৩ দুপুর ১২:২৫

নিশি কথক বলেছেন: ভাল লাগছে

১৯ শে মে, ২০১৩ রাত ১:০৭

লেখাজোকা শামীম বলেছেন: আশা করি, শেষ পর্ব পর্যন্ত সঙ্গে থাকবেন। ধন্যবাদ।

৩| ১৮ ই মে, ২০১৩ দুপুর ১:৩১

jotejoy বলেছেন: চলুক

১৯ শে মে, ২০১৩ রাত ১:০৭

লেখাজোকা শামীম বলেছেন: অবশ্যই চলবে।

৪| ১৮ ই মে, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫৪

শিব্বির আহমেদ বলেছেন: চলুক

১৯ শে মে, ২০১৩ রাত ১:০৮

লেখাজোকা শামীম বলেছেন: অবশ্যই চলবে। অনেক দূর যাবে।

৫| ১৮ ই মে, ২০১৩ রাত ৮:০৯

অমৃত সুধা বলেছেন: দেশে মৌলবাদি শক্তির উত্থানের আশঙ্কা
http://dhakajournal.com/?p=7668

১৯ শে মে, ২০১৩ রাত ১:০৮

লেখাজোকা শামীম বলেছেন: এই উপন্যাসের সঙ্গে মৌলবাদী শক্তির কী সম্পর্ক ?

৬| ১৮ ই মে, ২০১৩ রাত ৮:২৭

সোহাগ সকাল বলেছেন: পরবর্তীটার অপেক্ষায়।

এইটাতে প্লাস +++

১৯ শে মে, ২০১৩ রাত ১:১৩

লেখাজোকা শামীম বলেছেন: পরবর্তী পর্ব আগামীকাল পাবেন।

৭| ১৯ শে মে, ২০১৩ রাত ২:১৪

বটবৃক্ষ~ বলেছেন: মেয়েটা অবশ্যই সুন্দরী। ওকে সামনে থেকে দেখলে কি চোখ ধাঁধিয়ে যাবে ?
‘ভাইয়া’ - চমকে গেলাম ভীষণ, ‘বাইরে দাঁড়িয়ে আছ কেন ? ভেতরে এসো।’
ভেতরে গেলাম। চোখ ধাঁধালো না, মনের ভেতর অসংখ্য অদ্ভুত সুন্দর ফুল ফুটে উঠল।
‘লুনা, এ হচ্ছে আমার ভাইয়া।’
‘জানি’, লুনা আমার দিকে তাকা ল। অসংখ্য অদ্ভুত সুন্দর ফুল দমকা হাওয়ায় দুলে উঠল।


এই বর্ণনা টা দারুন মিষ্টি লেগেছে.....

শেষ পর্যন্ত সন্গে থাকবো!প্লিজ তাড়াতাড়ি লিখুন!! সুইট কাহিনিটা জানার তর সইছে না!+++:):)

২০ শে মে, ২০১৩ দুপুর ১:৩৪

লেখাজোকা শামীম বলেছেন: আপনার প্রশংসা পেয়ে ভালো লাগল।

পরের পর্ব দিয়েছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.