নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ডা. অমিতাভ অরণ্য

ডা. অমিতাভ অরণ্য › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাবা, গল্পটা তোমার জন্য।

১৪ ই আগস্ট, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২২



কাল রাত তখন কত হবে জানিনা, হয়ত এগারটা বা বারোটা বাজে; ঘরে বসে একটা মুভি দেখছিলাম। হঠাত ছোটঘরে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করলাম। কি মুশকিল! একে তো একশন মুভি, তার উপর ক্ল্যাইম্যাক্সে পৌছে গেছি। এই অবস্থায়… … … ! ধ্যাত্তেরি, ভাল্লাগেনা।
দু খোপের সাতাশে বন্দের ঘর; এক ঘর দাদা-বৌদির জন্য, অন্যঘরে বাবা মা শোয়। আমি বাড়ী এলে বাবা-মা বারান্দায় ঘুমায়।
আমি বিছানা থেকে নেমে চুপি চুপি চাবী টা নিয়ে বাইরের দরজার তালা খুললাম, এতই নিঃশব্দে যে নিজেই অবাক হয়ে গেলাম। খুট করে সামান্য শব্দ হয়েছে কি হয়নি, আমার ঘুমন্ত পিতাশ্রী ঠিক ধরে ফেললেন। বিড়ী সিগারেট যে আমি খাইনা, তিনি সেটা ভাল করেই জানেন। সুতরাং, আমি অত রাতে কি কাজে বাইরে যাচ্ছি, তা অনুমান সাধ্য। অথচ, তার জিজ্ঞাস করা চাই ই চাই,আমি কোথায় যাচ্ছি!
ধুরো, মেজাজটাই খারাপ হয়ে যায়। একুশ বছর পাড়ি দিচ্ছি আমি, এখন ও এই কোশ্চেন করতে হবে? এতটুকু স্বাধীনতা যদি থাকতো আমার! ধুর ছাই, ভাল্লাগে না আর.........। মাঝে মাঝে প্রচন্ড রাগ হয় বাবার উপর, এইটুকুনি বুদ্ধি শুদ্ধি যদি থাকতো! ছেলেরা বড় হলে একটু ছাড় দিতে হয় , এটা কে বুঝাবে তাদের...
বাবাকে জবাবদিহি করে বাইরে বেরুলাম আমি। আহ, কি ঠাণ্ডা! মনটা জুড়িয়ে যায়। কারবার সেরে হাতমুখ ধুয়ে সিড়ি দিয়ে উঠে বারান্দা ক্রস ঘরে ঢূকব, চোখ পড়ল বাপাশে মশারীর ভিতর। প্রকান্ড একটা শিশুর মত বাবা ঘুমিয়ে আছে কুন্ডুলী পাকিয়ে।
আমি স্থাণুবৎ দড়িয়ে পড়লাম। দশ বছর আগের দৃশ্য মনের পর্দায় ভেসে উঠলো আমার। আমি বাবা আর মা একসাথে ঘুমাতাম তখন। খাটের একপাশে বাবা আর একপাশে মা, মাঝখানে আমি। অতি শান্তশিষ্ট আমি ঘুমের ঘোরে যাতে গড়াতে গড়াতে পপাত ধরনীতল না যাই, তাই জন্য এ ব্যবস্থা।
বরাবর বাবা ন্যাওটা আমি। তখনও বাবা ঠিক এমন ভাবে ঘুমাতো; কাত হয়ে কুন্ডুলি পাকিয়ে। এভাবে ঘুমালে বুকের কাছে কোলের ওখানে একটা গর্তের মতন জায়গা তৈরি হয়। বিছানার উপর খানিক গড়াগড়ি করে আমি সুড়ুত করে ঢুকে যেতাম ওখানে। বাবা তখন তার হাতটা আমার গায়ের উপর রাখতো আড়াআড়িভাবে। ব্যাস আমার মনে হত দুনিয়ার সবচেয়ে নিরাপদ আর আরামের জায়গায় আমি পৌছে গেছি।
বাবার কোলের ভেতর শুয়ে গল্প শোনা ছিল আমার নিত্যদিনের অভ্যেস। বাবার গল্পের ঝুড়ি ছিল বিশাল, হরেক রকম গল্প তাতে। বাঘ-সিংহ, রক্ষস-খোক্কস, পিঠে গাছের গল্প, ঝিনুক-কুমারীর গল্প; এমন হাজার রকম রত্ন ছিলা তার ঝুলিতে। এক এক করে বাবা বের করতো তার সেই আশ্চর্য সম্পদ। আমি মুগ্ধ হয়ে শুনতাম তার সেই রুপকথার গল্প । মাঝে মাঝেবাবা ভুতের গল্পও বলত। আমার ভারী ভয় করতো তখন। বাইরে তাকাতেই পারতাম না। বাবার শরীরের ভেতর আরো সেধিয়ে যেতাম। বাবার শরীরের গন্ধ আমায় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে রাখতো, ভয়গুলো আর আমার কাছেই ঘেষতে পারতো না।
বাবার শোয়ার ভঙ্গিমা দেখে আমার কি জানি কি হল জানিনা। আলগোছে মশারী উচু করে ভেতরে ঢুকে পড়লাম। বাবা মনে হয় একটু অবাক হল, জিজ্ঞাস করলো কি হইসে রে। কিছু না বলে আমি চুপচাপ বাবা আর মায়ের মধ্যিখানে অল্প একটূ ফাকা জায়গা আছে ওখানে শুয়ে পড়লাম। বাবা কি বুঝলো কে জানে! তার বাম হাতের উপর আমার মাথা টা নিয়ে গায়ের উপর হাতটা দিল, জিজ্ঞাস করলো কি হইছে খোকা। এক অসহনীয় আনন্দের আতিশয্যে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। বাবার কোলের ভেতর ক্রমশ গুটীয়ে যেতে যেতে অস্ফুট গলায় বলালাম, আমি তোমায় ভালবাসি বাবা......। অনেক.........অনেক বেশি............।
বাবা কি বুঝলো কে জানে, কালি তার শক্তিশালী হাত দুটো দিয়ে আমাকে তার কোলের কাছে টেনে নিল। আজ থেকে দশ বা পনের বছর আগে ছোট্ট অমিত কে যেভাবে বাইরের আধার থেকে লুকিয়ে রাখতো নিজের শরীরে, ঠিক সেইভাবে। বাবার শরীরের গন্ধ আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো আমায়। আমি তলিয়ে যেতে লাগলাম ক্রমশ...........................।কাল রাত তখন কত হবে জানিনা, হয়ত এগারটা বা বারোটা বাজে; ঘরে বসে একটা মুভি দেখছিলাম। হঠাত ছোটঘরে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করলাম। কি মুশকিল! একে তো একশন মুভি, তার উপর ক্ল্যাইম্যাক্সে পৌছে গেছি। এই অবস্থায়… … … ! ধ্যাত্তেরি, ভাল্লাগেনা।
দু খোপের সাতাশে বন্দের ঘর; এক ঘর দাদা-বৌদির জন্য, অন্যঘরে বাবা মা শোয়। আমি বাড়ী এলে বাবা-মা বারান্দায় ঘুমায়।
আমি বিছানা থেকে নেমে চুপি চুপি চাবী টা নিয়ে বাইরের দরজার তালা খুললাম, এতই নিঃশব্দে যে নিজেই অবাক হয়ে গেলাম। খুট করে সামান্য শব্দ হয়েছে কি হয়নি, আমার ঘুমন্ত পিতাশ্রী ঠিক ধরে ফেললেন। বিড়ী সিগারেট যে আমি খাইনা, তিনি সেটা ভাল করেই জানেন। সুতরাং, আমি অত রাতে কি কাজে বাইরে যাচ্ছি, তা অনুমান সাধ্য। অথচ, তার জিজ্ঞাস করা চাই ই চাই,আমি কোথায় যাচ্ছি!
ধুরো, মেজাজটাই খারাপ হয়ে যায়। একুশ বছর পাড়ি দিচ্ছি আমি, এখন ও এই কোশ্চেন করতে হবে? এতটুকু স্বাধীনতা যদি থাকতো আমার! ধুর ছাই, ভাল্লাগে না আর.........। মাঝে মাঝে প্রচন্ড রাগ হয় বাবার উপর, এইটুকুনি বুদ্ধি শুদ্ধি যদি থাকতো! ছেলেরা বড় হলে একটু ছাড় দিতে হয় , এটা কে বুঝাবে তাদের...
বাবাকে জবাবদিহি করে বাইরে বেরুলাম আমি। আহ, কি ঠাণ্ডা! মনটা জুড়িয়ে যায়। কারবার সেরে হাতমুখ ধুয়ে সিড়ি দিয়ে উঠে বারান্দা ক্রস ঘরে ঢূকব, চোখ পড়ল বাপাশে মশারীর ভিতর। প্রকান্ড একটা শিশুর মত বাবা ঘুমিয়ে আছে কুন্ডুলী পাকিয়ে।
আমি স্থাণুবৎ দড়িয়ে পড়লাম। দশ বছর আগের দৃশ্য মনের পর্দায় ভেসে উঠলো আমার। আমি বাবা আর মা একসাথে ঘুমাতাম তখন। খাটের একপাশে বাবা আর একপাশে মা, মাঝখানে আমি। অতি শান্তশিষ্ট আমি ঘুমের ঘোরে যাতে গড়াতে গড়াতে পপাত ধরনীতল না যাই, তাই জন্য এ ব্যবস্থা।
বরাবর বাবা ন্যাওটা আমি। তখনও বাবা ঠিক এমন ভাবে ঘুমাতো; কাত হয়ে কুন্ডুলি পাকিয়ে। এভাবে ঘুমালে বুকের কাছে কোলের ওখানে একটা গর্তের মতন জায়গা তৈরি হয়। বিছানার উপর খানিক গড়াগড়ি করে আমি সুড়ুত করে ঢুকে যেতাম ওখানে। বাবা তখন তার হাতটা আমার গায়ের উপর রাখতো আড়াআড়িভাবে। ব্যাস আমার মনে হত দুনিয়ার সবচেয়ে নিরাপদ আর আরামের জায়গায় আমি পৌছে গেছি।
বাবার কোলের ভেতর শুয়ে গল্প শোনা ছিল আমার নিত্যদিনের অভ্যেস। বাবার গল্পের ঝুড়ি ছিল বিশাল, হরেক রকম গল্প তাতে। বাঘ-সিংহ, রক্ষস-খোক্কস, পিঠে গাছের গল্প, ঝিনুক-কুমারীর গল্প; এমন হাজার রকম রত্ন ছিলা তার ঝুলিতে। এক এক করে বাবা বের করতো তার সেই আশ্চর্য সম্পদ। আমি মুগ্ধ হয়ে শুনতাম তার সেই রুপকথার গল্প । মাঝে মাঝেবাবা ভুতের গল্পও বলত। আমার ভারী ভয় করতো তখন। বাইরে তাকাতেই পারতাম না। বাবার শরীরের ভেতর আরো সেধিয়ে যেতাম। বাবার শরীরের গন্ধ আমায় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে রাখতো, ভয়গুলো আর আমার কাছেই ঘেষতে পারতো না।
বাবার শোয়ার ভঙ্গিমা দেখে আমার কি জানি কি হল জানিনা। আলগোছে মশারী উচু করে ভেতরে ঢুকে পড়লাম। বাবা মনে হয় একটু অবাক হল, জিজ্ঞাস করলো কি হইসে রে। কিছু না বলে আমি চুপচাপ বাবা আর মায়ের মধ্যিখানে অল্প একটূ ফাকা জায়গা আছে ওখানে শুয়ে পড়লাম। বাবা কি বুঝলো কে জানে! তার বাম হাতের উপর আমার মাথা টা নিয়ে গায়ের উপর হাতটা দিল, জিজ্ঞাস করলো কি হইছে খোকা। এক অসহনীয় আনন্দের আতিশয্যে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। বাবার কোলের ভেতর ক্রমশ গুটীয়ে যেতে যেতে অস্ফুট গলায় বলালাম, আমি তোমায় ভালবাসি বাবা......। অনেক.........অনেক বেশি............।
বাবা কি বুঝলো কে জানে, কালি তার শক্তিশালী হাত দুটো দিয়ে আমাকে তার কোলের কাছে টেনে নিল। আজ থেকে দশ বা পনের বছর আগে ছোট্ট অমিত কে যেভাবে বাইরের আধার থেকে লুকিয়ে রাখতো নিজের শরীরে, ঠিক সেইভাবে। বাবার শরীরের গন্ধ আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো আমায়। আমি তলিয়ে যেতে লাগলাম ক্রমশ...........................।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:০২

সুমন কর বলেছেন: সাধারণ গল্প কিন্তু হৃদয় ছুঁয়ে গেল। ভালো লাগা রইলো। প্লাস।

যদি এমন হতে পারতো !!!!

১৬ ই আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ২:৫৬

ডা. অমিতাভ অরণ্য বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মন্তব্যের জনয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.