![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শ্রীরামকৃষ্ণকে কেউ মহাত্না বললে স্রবাগ্রে তিনি সে কথার প্রতিবাদ করতেন। নিজেকে দেখিয়ে তিনি বলতেনঃ মহাত্নার কি ক্যান্সার হয়? মহাত্নার কি হাত ভাঙ্গে? যারা তাকে ভালোবাসতেন, শ্রদ্ধা করতেন, তাদের মধ্যে হিন্দু ও আহিন্দু দুই-ই ছিল। অনেক ব্যক্তিই তার সংস্পর্শে এসে বুঝতে সক্ষম হয় যে, ধর্ম হল আচরণ ও ধর্ম অনুযায়ী জীবনযাপন করতে হয়।
শ্রীরামকৃষ্ণ নতুন কোন ধর্ম প্রচার করেননি, তিনি সর্ব ধর্মের সাধারণ তত্বটি শিখিয়েছেন- প্রকৃত ধর্ম বলতে যাকে বোঝায়। সেই সাধারণ তত্বটি কি? শ্রীরামকৃষ্ণের কথায়-‘সত্য’। ‘সত্যকে ধরে থাকো’- এটিই ছিল তার বানী। তার মতে ধর্মের সার হল এই সত্য। বাদবাকি যা কিছু টা গৌণ। তার মতে সত্যই ঈশ্বর, ঈশ্বরই সত্য। সত্য বলতে তিনি কেবল নৈতিক সত্যকে বোঝাননি, যে সর্বোচ্চ সত্তা বা বিধান জগতকে ধারণ করে রয়েছেন, তাঁকেই বুঝিয়েছেন। বিজ্ঞান ও ধর্ম সেই সত্যকে উপলব্ধি করার দুটি ভিন্ন পথ মাত্র। যখন আপনি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে সেই সত্যকে দেখেন, তখন তা বিজ্ঞান; আর যখন নিজের সত্তার মধ্য দিয়ে দেখেন, তখন তা ধর্ম।
সব ধর্মের মধ্যে যে একটা সাধারণ সত্য আছে, এই সিদ্ধান্তে শ্রীরামকৃষ্ণ কেমন করে পৌঁছেছিলেন? তিনি আলাদা ভাবে প্রত্যেক ধর্ম কে পরীক্ষা করে যে অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন, সেই অভিজ্ঞতাই তাকে বুঝিয়ে দিয়েছিল যে-সব ধর্মের ভিতরটা এক। মত বা ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে তিনি মাথা ঘামাতেন না, কারণ ওগুলি মানুষের তৈরি। তাছাড়া ঐ ‘মত বুদ্ধি’ মানুষের দৃষ্টি রুদ্ধ করে দেয়, যার ফলে সে আর ধর্মের প্রাণ বস্তুটির দিকে মন দিতে পারে না। ধর্মের মধ্যে মুখ্য আর গৌণ দুটি ভাগই আছে।তিনি মুখ্য ভাগটিকে বেছে নেবার জন্য জোর দিতেন। এক ধর্মের সাথে অন্য ধর্মের যে পার্থক্য, তা ঐ গৌণ বা অপ্রয়োজনীয় অংশগুলি নিয়ে। এই পার্থক্য খুবই স্বাভাবিক কারণ বিভিন্ন ধর্ম বিভিন্ন ঐতিহাসিক পটভূমিকায় গড়ে উঠেছে। কিন্তু যদি মুখ্য অংশগুলোর দিকে তাকানো যায়, তবে দেখা যাবে সব ধর্মের মধ্যেই একটা আশ্চর্য মিল রয়েছে। সকল ধর্মের লক্ষ্য একটাই-মানুষকে পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হতে, দেবতার মত হতে, এমনকি ঈশ্বরের সঙ্গে অভিন্ন হতে সাহায্য করা। প্রত্যেক মানুষ ঈশ্বরই আছে, কেবল সেই সত্যটি মানুষ জানেনা।
শ্রীরামকৃষ্ণ বার বার তার উপদেশে ত্যাগের কথা বলেছেন। তার দৃষ্টিতে ত্যাগ মানে জীবনকে অস্বীকার করা নয়; ত্যাগ হলো বর্তমান জীবনের চেয়ে মহত্তর, আরও তৃপ্তিদায়ক এক জীবনের অন্বেষণ। এই অনুসন্ধানের ফলে একদিন মানুষ আবিষ্কার করে প্রকৃত সুখ ও আনন্দের উৎস তার নিজের ভিতরই আছে; বাহিরে কথাও নেই। তিনি শিখিয়েছেন জীবনকে পূজায় পরিণত করতে হবে। কোনও কিছুই জাগতিক নয়। এমনকি ছোট-খাটো কাজও নিঃস্বার্থ ভাবে করলে, তা মানুষকে ঈশ্বরের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। নিঃস্বার্থ হওয়ার অর্থই ঈশ্বরের সঙ্গে একাত্ন হয়ে যাওয়া। আত্নাভিমান ত্যাগ করা মানেই সকলের আত্নার মধ্যে নিজেকে দেখা।
তথ্যসূত্রঃ স্বামী লোকেশ্বরানন্দ ‘বাস্তব জীবনে আধ্যাত্নিকতা’
০৬ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ৯:২১
আম্মানসুরা বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
২| ০৯ ই জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৪:২৯
শ্রাবণধারা বলেছেন: এই লোকটা ছিল আমার তরুণ বয়সের লেখা পড়ায় একটা "Blast". ধর্মকে এমন করে অভিজ্ঞতায় দেখার আধুনিক উদাহরণ আর নেই।
আমদের জীবনে এখন আসলে আর ধর্ম নেই, আছে শুধু মতবাদ আর ভেদ বুদ্ধি (যেটাকে আপনি "মত বুদ্ধি" বলেছেন), অভিজ্ঞতা নয়; অথচ ধর্ম মানেই ভেদ থেকে অভেদের দিকে যাত্রা, মতবাদে নয় জীবন দিয়ে তার অভিজ্ঞতা লাভ করা, যেটা রামকৃষ্ণ করে দেখিয়েছিলেন...........।
০৯ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ৮:২২
আম্মানসুরা বলেছেন: এজন্যই তো তাকে পরমহংস বলা হয়। তিনি জীবনে সব কিছু অভিজ্ঞতার আলোকে বিশ্লেষণ করে ভালো ও মন্দ জ্ঞান অর্জন করেছেন ও ঈশ্বরকে চিনেছেন।
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:৩৫
রাজু মাষ্টার বলেছেন: আমি মোটামুটি ধর্মপ্রান এবং ধর্মভীরু মুসলিম
তবে বেদ বাইবেল ত্রিপিটক নিয়েও আমার যথেষ্ঠ আগ্রহ আছে......
জ্ঞান অর্জনের চাইতে বড় কিছু আর কি আছে ?