নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাঝে মাঝে নিজেকে একটি ডানা ভাঙ্গা আহত পাখি মনে হয়.....

আম্মানসুরা

ইচ্ছেখাতা

আম্মানসুরা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধূমকেতু

১০ ই জুন, ২০১৩ রাত ৯:৪৪

সৌরজগতের পরিভ্রমণমান এক প্রকার মহাকাশীয় বস্তু। পৃথিবী থেকে আমরা যে ধূমকেতু দেখি, সূর্য থেকে বহুদূরে পিণ্ডের আকারে থাকে। এর রয়েছে নিজস্ব পাতলা বায়ুমণ্ডল। কেন্দ্রে থাকে জমাট বরফ, ছোটো ছোটো পাথর ও মহাকাশীয় ধূলিকণা। এর বায়ুমণ্ডলে থাকে, কার্বন-ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনো অক্সাইড, মিথেন ও মহাকাশীয় ধূলিকণা। চওড়ায় এর কেন্দ্র ৪০-১০০ কিলোমিটার হয়ে থাকে। নাসার মতে, ধূমকেতুর কেন্দ্রে ৮৫% বরফ থাকলে তাকে ধূমকেতুর নিউক্লিয়াস হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। এরকম স্বল্প ভরের কারণে এর কেন্দ্র গোলাকার না হয়ে এবড়ো থেবড়ো বা অনিয়মিত আকৃতির হয়।



সূর্যের টানে যখন এই বস্তুপিণ্ড ছুটে আসে, তখন এর বায়ুমণ্ডলে ছোটো লেজের সৃষ্টি করে। এই সময় এর আকারকে অনেকটা যতি চিহ্নের 'কমা'র সাথে তুলনা করা হয়ে থাকে। সূর্যের বিকিরণে এর উদ্বায়ী পদার্থগুলো ধূলো ও গ্যাস হয়ে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এর ফলেই কমার সৃষ্টি হয়। সূর্যের নিকটবর্তী হলে এদের গতি বৃদ্ধি পায় এবং দীর্ঘ লেজের সৃষ্টি হয়। ধারণা করা হয়, সূর্যের বিকিরণ বল ও সৌরবায়ুর প্রভাবে এর কমা, সূর্যাবিমূখি একটি বিশাল লেজে পরিণত হয়। এই সময় সূর্য থেকে আগত আলো এই লেজে পড়ে আলোকিত হয়ে উঠে। সৌরঝড়ের প্রভাবে ধূমকেতুর এই লেজের আকারের তারতম্য ঘটে। আলোকিত কেন্দ্র এবং পুচ্ছ মিলে ধূমকেতু রাতের অন্ধকার আকাশকে সৌন্দর্যময় করে তোলে।



অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই লেজ অনুজ্জ্বল থাকে বলে টেলিস্কোপ ছাড়া দেখা যায় না। চার্জযুক্ত পরমাণুর এই লেজটি সৃষ্টি হয় নিউক্লিয়াসের গ্যাসীয় বস্তুগুলোর বাষ্পীভবনের কারণে। অতিবেগুনি রশ্মির সংস্পর্শে তা ভেঙ্গে চার্জযুক্ত বস্তুতে পরিণত হয়ে সৌরবায়ুতে তরঙ্গের আকারে প্রবাহিত হয়।



ধূমকেতুর পরিভ্রমণ পথ অনেক দীর্ঘ। এই কারণে দীর্ঘদিন অন্তর অন্তর ধূমকেতু সূর্যের নিকটবর্তী হয়। এই দীর্ঘদিন হতে পারে কয়েক হাজার বৎসর থেকে কয়েক লক্ষ বৎসর পর্যন্ত। অল্প সময়ে পরিভ্রমণমান ধূমকেতু তৈরি হয়- নেপচুন গ্রহের কক্ষপথের পিছনে অবস্থিত কুইপার বলয় (Kuiper belt) থেকে বা এর বলয় সংলগ্ন অঞ্চল থেকে। আর দীর্ঘ-পথ পরিক্রমণকারী ধূমকেতু উৎপন্ন হয় উর্ট মেঘ (Oort cloud) থেকে। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এক প্রতিবেদনে ধূমকেতুর সংখ্যা নির্ধারণ করেছেন প্রায় ২০০০।



ধূমকেতুগুলো এক সময় না একসময় তার মহাকাশে বিলীন হয়ে যায়। এর প্রধান কারণ হলো, দীর্ঘ পথ অতিক্রম করার সময় ধূমকেতু তার নিজস্ব বস্তুকে হারতে থাকে। ফলে একসময় তা মহাকাশীয় বস্তু পুঞ্জের সাথে ধাক্কা খেয়ে বা বড় কোনো নক্ষত্র বা গ্রহের আকর্ষণে উল্কা হয়ে ঝড়ে পরে। অনেক সময় সূর্যের প্রবল আকর্যষণে ধূমকেতুর কেন্দ্র ভেঙে একাধিক ধূমকেতুতে পরিণত হয় বা চিরতরে হারিয়ে যায়। লুইস ও ওয়াল্টার আলভারেজের মতে ৬.৫ কোটি বছর আগে কোনও ধূমকেতু বা বৃহৎ কোন উল্কাপাতের ফলে ডাইনোসরসহ অনেক প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যায়। অনেকের ধারণা পৃথিবীর জন্মের পর যথেষ্ট পরিমাণ পানি ধূমকেতু থেকে এসেছিল।



১৯১০ সালের হ্যালীর ধূমকেতু নিয়ে কবিতা লেখেন এবং ১৯২২ সালে ধূমকেতু পত্রিকা প্রকাশ করেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি ধূমকেতুকে দেখেছেন প্রচণ্ড শক্তিশালী কিন্তু খেয়ালী অনাসৃষ্টি হিসেবে। পরবর্তীতে পত্রিকাটির ৮ নভেম্বরের সংখ্যাটি নিষিদ্ধ করা হয়।ধূমকেতুর প্রকাশ উপলক্ষে রবীন্দ্রনাথ নিচের বানীটি লিখে পাঠান।

"কাজী নজরুল ইসলাম কল্যাণীয়েষু



আয় চলে আয়, রে ধূমকেতু,

আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু,

দুর্দিনের এই দুর্গশিরে

উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন!

অলক্ষণের তিলক রেখা

রাতের ভালে হোক না লেখা,

জাগিয়ে দে রে চমক মেরে

আছে যারা অর্ধচেতন।"



২৪ শ্রাবণ ১৩২৯, শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।”



পশ্চিমা সংস্কৃতিতে ধূমকেতুকে ধ্বংসের প্রতীক ও দুনিয়ার দুর্যোগ আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী বলে মনে করা হয়। হ্যালীর শৈশবকালেই ৪টি বিশাল ধূমকেতু লন্ডনের আকাশে দেখা যায় যার একটিকে লন্ডনের অগ্নিকাণ্ডের জন্য দায়ী করা হয়েছিল। কিছু বিখ্যাত মানুষের জন্ম-মৃত্যুর সাথে ধূমকেতুর আগমনের সময়ের মিল পাওয়া যায়। মার্ক টোয়াইন সফলভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে তিনি ধূমকেতুর সাথে চলে যাবেন (১৯১০ সালের হ্যালীর ধূমকেতু)।

সায়েন্স ফিকশনে ধূমকেতুকে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিপদকে থামানোর প্রতীক হিসেবে দেখা হয়।

চলতি বছরের নভেম্বরে পূর্ণিমার চাঁদের চেয়েও উজ্জল ধূমকেতু দেখা যাবে।এটি পৃথিবীর আকাশে খালি চোখে দেখা যাবে।রাশিয়ার দুই জ্যোতির্বিজ্ঞানী ভিতালি নেভস্কি ও আর্টিওম নভিকোনোক সম্প্রতি এই ধূমকেতুটির সন্ধান পেয়েছেন। এ মুহূর্তে এটি অনেক অস্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে।কয়েক যুগের মধ্যে এত উজ্জ্বল কোনো নক্ষত্রের দেখা মেলেনি বলেও জানিয়েছেন তাঁরা। এর আলো পূর্ণিমার আলোর চেয়েও বেশি হবে বলে তাঁরা মনে করছেন।

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৪:৩১

রাজু মাষ্টার বলেছেন: ইস এইখানে এত্তো সুন্দর একটা পোস্ট,আর সবাই(আমিও আসি) চিল্লায় হুদাই আকামের পোস্ট এ গিয়া। =p~ =p~ =p~ =p~
সুন্দর বর্ননা +++++++

পারলে আরো কিছু শেয়ার কইরেন,আমি সাইন্সের পোলা।কম্পু আমার গিনিপিগ।আর জ্যোতির্বিদ্যা নিয়ে মহা আগ্রহ,বিষেশ করে ধুমকেতূ,গ্যালাক্সি,ব্ল্যাক হোল.........

সবশেষে অনেক শুভকামনা :-B :-B

২| ০৫ ই জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৩

রাজু মাষ্টার বলেছেন: ও পিলাস দিতেই তো ভুইল্লা গেসিলাম,পিলাস লন।

আমার পক্ষ হতে আপনাকে প্রথম প্লাস :| :| :|

০৫ ই জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৭

আম্মানসুরা বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ।
১০ মাস ওয়াচে ছিলাম তো তাই পোষ্ট ব্যক্তিগত ব্লগেই সভা পেত।

৩| ১০ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ২:৫১

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: চমৎকার একটা পোষ্ট! অনেক ভালো লাগল! আশা করি এই ধরনের দারুন সব পোষ্ট আপনার কাছ থেকে আরো পাব।

১০ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:১২

আম্মানসুরা বলেছেন: উৎসাহ দেবার জন্য ধন্যবাদ।

৪| ১০ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:৫৪

বোকামন বলেছেন:
তৃতীয় ভালোলাগা। ভালো থাকুন লেখক।

১১ ই জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৩:১৭

আম্মানসুরা বলেছেন: ধন্যবাদ।

৫| ১১ ই জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৩:২৬

ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: চমৎকার

১১ ই জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৭

আম্মানসুরা বলেছেন: ধন্যবাদ।

৬| ১৪ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:০৭

মৃত্যুঞ্জয় বলেছেন: খুব সুন্দর একটি পোষ্ট। দারুন লিখেছেন, তা ধুমকেতুটি আসছে কবে? কোথা থেকে দেখা যাবে ?? কতক্ষণের জন্য?? এর কি কোন নাম দেয়া হয়েছে ??

ধন্যবাদ আম্মান

৭| ১৪ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১:০০

আম্মানসুরা বলেছেন: ধূমকেতুটির নাম ISON, এর গতিপথের চিত্র ও কতক্ষণ থাকবে তা নিচের চিত্রের মাধ্যমে বুঝে নেন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.