নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একে একে সব স্বপ্ন মাটি দিয়ে এখন প্রহর গুনছি দেহটা কবে আমাকে মুক্তি দেবে।

মিজানুর রহমান এএমএস

মৃত ব্যক্তির কোন অভিব্যাক্তি থাকতে নেই। স্বপ্নেরা নিছে ছুটি, আমি রয়ে গেছি দেহ টা বয়ে বেড়াতে।

মিজানুর রহমান এএমএস › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটা সিভির অজুহাত

২৫ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:৫১

#টিএসসি_তে_এক_বিকেল
উত্তরা মেট্রো স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছি। চারপাশটা অচেনা নীরবতায় ভরা। হাতে গোনা কয়েকজন যাত্রী এলোমেলোভাবে দাঁড়িয়ে আছে, সবাই যেন নিজের দুনিয়ায় মগ্ন। ট্রেনের হুইসেল বাজতেই হঠাৎ করে সেই নীরবতা ভেঙে গেল। মেট্রোর দরজা খুলল, আমি উঠে গিয়ে একটা সিট দখল করলাম।
ট্রেনটা ছুটছে, আমি জানালার বাইরে চোখ রেখে ভাবছি—আজকের দিনটা হয়তো অন্যরকম হবে। বিকেল পাঁচটায় আমার সাথে দেখা করার কথা নুশাইবা রহমানের। মেসেঞ্জারে অনেক আলাপ হয়েছে, তবে মুখোমুখি দেখার সুযোগ হয়নি কখনও। গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ থেকে বিবিএ শেষ করেছে সে। গত কয়েকদিন ধরেই আমার কাছে অনুরোধ করছে সিভিটা একবার হাতে নিতে। আমি তাকে আগেই বলেছি, “চাকরির নিশ্চয়তা দিতে পারব না, শুধু পরিচিত কারো কাছে পাঠাতে পারি।” কিন্তু তার দৃঢ় বিশ্বাস—সরাসরি দেখা করলে কিছু না কিছু একটা হবে।
আমারও ইচ্ছে হচ্ছিল টিএসসি যাই। বহুদিন হলো সেখানে বসে বুকভরে শ্বাস নেইনি। বন্ধুদের আড্ডার স্মৃতি, সিগারেটের ধোঁয়া, চায়ের কাপে অচেনা হাসি—সবকিছু মিলে টিএসসি আমার কাছে এক অনন্ত টান।
ট্রেন গতি কমাল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এর ষ্টেশনে নামতেই চারপাশের ভিড় আর কোলাহল যেন চেনা আলিঙ্গনের মতো আমাকে টেনে নিল। হেটে টিএসসি চত্বরে পৌঁছালাম।
সেখানে তখনও ভিড় জমেনি। ছায়াঘেরা জায়গায় একটা চেয়ারে বসে সিগারেট ধরালাম। প্রথম টানেই শরীরটা হালকা লাগল। ঠিক সেই মুহূর্তে দেখি, রিকশা থেকে নেমে এক নেকাবপরা মেয়ে হাতের ইশারায় সম্মতির অপেক্ষা করছে। মনে মনে ভেবেই নিলাম, এ নিশ্চয় নুশাইবা। ইশারায় তাকে পাশে এসে বসার আহ্বান জানালাম।
সে বসতেই বললাম,
কেমন আছেন ? “সিভিটা দিন।”
আমার হাতে সিগারেট দেখে মুখটা শক্ত হয়ে গেল। তার ভঙ্গি বুঝে সঙ্গে সঙ্গে সিগারেটটা মাটিতে ফেলে দিলাম। হাসতে চেষ্টা করে বললাম,
“কি খবর আপনার? সিভি এনেছেন?”
সে অবাক হয়ে তাকাল।
“কিসের সিভি? আমি নুশাইবা হব কেন? আর নুশাইবা আবার কে?”
বিস্ময়ে জড়িয়ে গেলাম।
“মানে? আপনি নুশাইবা নন?”
সে হেসে বলল,
“না। আপনি কি তবে বিয়ের পাত্রী খুঁজতে এসেছেন?”
আমি মৃদু বিরক্তি চেপে নিলাম।
“না। আমি বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে এসেছি। আর একজন মেয়ে আসবে সিভি দিতে। আপনাকে ভুল করেছি হয়তো। আপনি তবে কে?”
সে এক মুহূর্ত নীরব থাকল। তারপর নিচু স্বরে বলল,
“আপনাকে আমি চিনি। খুব ভালো করে চিনি। অনেক ছবিও দেখেছি ফেসবুকে। আপনার সাথে গুগল মিট-এ ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম গত মাসে। আমার নাম সাদিয়া ইয়াসমিন।”
স্মৃতি ফিরে এলো। হ্যাঁ, এই নাম আমি শুনেছি। কিছুদিন আগে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের জন্য আবেদন করেছিল। ভিডিও কলে মুখ ঢাকা থাকায় চিনতে পারিনি।
“আচ্ছা, তাই তো! আপনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিংয়ে পাস করেছেন, তাই না?”
সে মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল।
“ঠিক তাই। আপনাকে দেখে তাই দাঁড়ালাম।”
আমি মুচকি হেসে বললাম,
“ বেশ করেছেন, চা খাবেন?”
সে একটু ইতস্তত করে মাথা নাড়ল।
ঠিক সেই সময় পিছন থেকে আরেকটা কণ্ঠ ভেসে এল।
“মাফ করবেন, আপনি কি মনির ভাই?”
পেছনে তাকিয়ে দেখি, আরেকজন মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে—এবার আর ভুল হয়নি, এ-ই নুশাইবা রহমান। তাকে বসতে বললাম। দোকানদারকে বললাম, “তিন কাপ চা দিন।”
তিনজনে একসাথে বসে আছি। মনে হচ্ছিল এ যেন অদ্ভুত কাকতাল।
নুশাইবার হাতে থেকে সিভি নিলাম। তার চোখে একধরনের অস্থিরতা, মুখশ্রীতে সরল মায়া। প্রশস্ত কপাল, চ্যাপ্টা লম্বা নাক, পাঁচ ফিট তিন ইঞ্চি উচ্চতায় সে যেন নরম মাটির মূর্তি। আঙুলে চিকচিকে নেইল পলিশ, পায়ে ফ্ল্যাট স্যান্ডেল। তার হাঁটাচলায় একরকম স্বচ্ছন্দতা আছে, যা চোখ সরাতে দেয় না।
অন্যদিকে সাদিয়া নিঃশব্দে চায়ের পেয়ালা হাতে নিল। সে চা খেতে গিয়ে মুখটা এমনভাবে সামান্য খুলল যেন ইচ্ছে করেই আমাকে দেখাতে চায়। যেন বলতে চায়, “আমাকে এড়িয়ে যেতে পারবে না।”
আমি অস্বস্তি চাপতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু সাদিয়ার মুখের দীপ্তি এড়িয়ে যাওয়া যায় না।
তার মুখশ্রী যেন ভোরবেলার ফুটন্ত কুমুদিনী।
ঠোঁট সরু আর লোভনীয়, রাঙা পলাশের মতো।
নাক সোজা, বাঁশির রেখার মতো মসৃণ।
আর কপাল—চন্দনের ফলকের মতো উজ্জ্বল।
আমি একবার নুশাইবার দিকে তাকাই, আবার সাদিয়ার দিকে। বুঝতে পারছিলাম না—সরলতার টান বেশি, নাকি দীপ্তির আকর্ষণ।
চায়ের কাপের ধোঁয়া উঠছিল, ঠিক তেমনই উঠছিল আমার ভেতরে এক অদ্ভুত টানাপোড়েন।
বিকেলটা এভাবে রূপ নিল এক অপ্রত্যাশিত গল্পে—একটা সিভির অজুহাত, আর দুজন নারীর উপস্থিতিতে আমার মন যেন নতুন করে দুলে উঠল।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.