![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মৃত ব্যক্তির কোন অভিব্যাক্তি থাকতে নেই। স্বপ্নেরা নিছে ছুটি, আমি রয়ে গেছি দেহ টা বয়ে বেড়াতে।
মাঝরাতের অন্ধকারে শহরের আলো ফিকে হয়ে আসছিল। কতদিন এই শহরের অলিগলি ঘুরেছে তারা। বিয়ে গেছে প্রায় এক বছর হয়ে গেল। দীর্ঘ সাত বছরের প্রেমের টানাপোড়েন শেষে ঈশান অবশেষে ইসরাতকে নিজের বাড়িতে নিয়ে ফিরছে। কাজি অফিসে তাদের বিয়ে হয়েছে অনেক আগেই, এরপরে কত রিসোর্ট, হোটেল, ট্যুরে তারা একসাথে থেকেছে। কিন্তু আজকের রাতটা আলাদা—আজ ইসরাত প্রথমবার ঈশানের বাবা-মায়ের ঘরে প্রবেশ করছে “বড় ছেলের বউ” হয়ে।
রাত দশটা বাজে যখন তারা বাড়িতে পৌঁছায়, তখন যেন সারা বাড়ি উৎসবে মাতওয়ারা । ঈশানের বাবা-মায়ের মুখে উচ্ছ্বাস, চেহারায় তৃপ্তি—যেন বছরের পর বছর যে অভাব ছিল, তা পূর্ণ হলো আজ। ঈশান আগেই বাজার সেরে রেখেছিল: খাসির মাংস, গরু, দেশি মুরগি, আইড়, বোয়াল, বাগাইর মাছ—সব ফ্রিজে সাজানো। যেন এই দিনটিতে কোনো ঘাটতি না থাকে। নতুন বউ রেখে বাজারের যন্ত্রণা সইতে না হয়। বউকে সময় দেয়া যায়।
রাতটা কেটে যায় নতুন সম্পর্কের উষ্ণতায়। দুজনের চোখে ঘুম আসে না। ইসরাত, মেডিকেলের ছাত্রী, সারাদিনের পড়াশোনায়, পরীক্ষার ব্যস্ততায় ঠিকমতো ঘুমাতে পারে না। আজও পারল না, উষ্ণ প্রেমের ছোয়ায়।
ভোর বেলা ঈশান ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে বসে আছে, কিন্তু ইসরাত তখনও গাঢ় ঘুমে। আস্তে আস্তে সূর্য পুব আকাশে উদিত হয় কিন্তু ইসরাতের ঘুম আর ছুটি দেয় না। সকাল দশটা বাজলেও জেগে উঠছে না আদোরের বউ। ঈশানের মনে অস্থিরতা—“কি ভাববে সবাই? বউ কি আলসে?” অস্থিরতায় মাকে বলতেই মা হেসে বললেন,
— “ঘুমাচ্ছে ঘুমাক, খিদে পেলে নিজেই উঠবে।” জার্নি করে এসেছে, একটু ঘুমাতে দে তো।
কথা শুনে ঈশান চুপ করে গেল। কিন্তু সাড়ে এগারোটায় গিয়ে স্ত্রীকে ডাকতেই ছোট্ট খুনসুটি শুরু হলো।
ইসরাত চোখ কচলাতে কচলাতে বলল
— “এভাবে ডেকে ডেকে কি আমাকে রাগাচ্ছো কেন? আমাকে তো রাতভর ঘুমাতে দেওনি”
ঈশান মৃদু হেসে বলল
— “রাতে ঘুমাতে দেইনি আমি, সকালে দিচ্ছি না… আসলেই আমার ব্যর্থতা। তবে একটু খেয়ে আবার ঘুমাও, না খেয়ে ঘুমালে কেমন দেখায়, আম্মা এত যত্ন করে নাস্তা তৈরি করে রেখেছে”
ইসরাত চোখ নামিয়ে হাসল। সেই হাসি যেন কুমুদ ফুলের মতো—ভোরের শিশিরে ভেজা। তার চেহারায় এমন এক মায়া আছে, যা ঈশানের সাত বছরের প্রেমের যাত্রাকে প্রতিদিন নতুন করে নেশায় ভরিয়ে দেয়।
ঈশান তাকিয়ে থাকে তার মুখের দিকে। ঠোঁটের সরল রেখা যেন অনাবিল প্রতিশ্রুতি, হাসি যেন মধুর মতো স্নিগ্ধ, কপাল উজ্জ্বল মেঘের ফাঁকে জ্যোৎস্নার ফলক। আর চোখ! সে চোখ যেন গভীর হ্রদের জল, যেখানে তাকালে নিজের প্রতিবিম্ব দেখা যায়, আর ডুবে গেলে ফেরার আর উপায় নেই। যে চোখে সাত বছরে শতসহস্র বার চোখ রেখে অনাবিল আনন্দের স্রোতে ভেসে গিয়েছে ঈশান।
বাড়ির আঙিনায় তখন দুপুরের রোদ ছড়িয়ে পড়েছে। বাতাসে রান্নার গন্ধ, হাসি-আনন্দে ভরে গেছে চারপাশ। কিন্তু ঈশানের ভেতরটা ভরে গেছে অন্যরকম আনন্দে। এতদিনের লুকানো সম্পর্ক, গোপন ভালোবাসা আজ অবশেষে পরিবারের স্বীকৃতিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।
ইসরাত হালকা গলায় বলল
— “তোমার মা-বাবার চোখে যে আনন্দ দেখলাম গত রাতে, তাতে মনে হলো আমাদের এই সাত বছরের অপেক্ষা বৃথা যায়নি।”
ঈশান তার হাতটা ধরে ফিসফিস করে বলল—
— “আমার কাছে তো তুমি সবসময়ই পূর্ণতা ছিলে। শুধু আজ থেকে তুমি আমার সংসারের পূর্ণতা।”
তাদের হাতের মুঠো এক হলো, আর ঘরের ভেতরে ভেসে এল ঈশানের মায়ের কণ্ঠ—
— “বউমা, রান্না হয়ে গেছে, এসে খাবার গুলো নিয়ে যাও। এখন একটু খেয়ে নেও, নয়তো তোমার আম্মা বলবে আমি না খাইয়ে রেখেছি তোমাকে”
ইসরাত তাকিয়ে বলল,
— “চলো, আজ তোমার সংসারের ভাত সবাই একত্রে খাই। তারপর আবার একসাথে নতুন গল্প শুরু ক=হবে রুমে এসে।”
ঈশান হাসল। মনে মনে বলল, “আমার বউ, আমার প্রেম, আমার ঘরের আলো।”
©somewhere in net ltd.
১|
২৭ শে আগস্ট, ২০২৫ সকাল ১১:২০
রাজীব নুর বলেছেন: এক নারীতে আসক্ত থাকাই ভালো।