![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মৃত ব্যক্তির কোন অভিব্যাক্তি থাকতে নেই। স্বপ্নেরা নিছে ছুটি, আমি রয়ে গেছি দেহ টা বয়ে বেড়াতে।
বিমানবন্দরের ভিড়ের ভেতরও এক অদ্ভুত শূন্যতা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল সামিউল। হাতে পাসপোর্ট, টিকেট, লাগেজ, এবং বুকের ভেতর এক অদৃশ্য চাপ। কানাডার ফ্লাইট ধরতে তার হাতে আছে মাত্র তিরিশ মিনিট। ঠিক তখনই ভিড় কেটে যেন হঠাৎ আবির্ভূত হলো রাইসা রহমান।
চোখ মেলে তাকাতেই সামিউল থমকে গেল।
ওর চোখে জল, ঠোঁটে একরাশ অভিমান—মায়াবি, ছন্দে ভরা মুখটি যেন দীর্ঘ প্রতীক্ষার প্রতিচ্ছবি।
সামিউল (কাঁপা গলায়): "রাইসা... তুমি? এতদিন পর এভাবে... কেন এলে?"
দৃষ্টি সরাতে পারছে না সামিউল। অপলক নয়নে তাকিয়ে আছে রাইসার দিকে।
রাইসা (আবেগ চেপে রাখতে না পেরে):
"আজকের পর তো আর কখনো দেখতে চাইব না। চলে যাচ্ছো শুনে শত দ্বিধা নিয়েও তোমাকে এক পলক দেখতে ছুটে এলাম। আমি তো ভাল করেই জানি—তুমি যা একবার বলো, তার ব্যাতয় ঘটাও না। তাই চলে যাচ্ছো...
কিছুক্ষণ চুপ করে সামিউল তাকিয়ে থাকে, । ভেতরে হাজারো ঝড় বয়ে যাচ্ছে। ভাষা হাড়িয়ে ফেলেছে দুজনই।
সামিউল: "কাঁদছো যে... কেঁদে কী হবে? আর তিরিশ মিনিট পর আমি বিমানবন্দরে ঢুকে যাবো। ২৩ মাস ২১ দিন। একটি বারের জন্য কি মনে পরেনি? এই সময়টা আমি যে কতটা একা ছিলাম—তা মেপে দেখলে তুমি খুঁজে পাবে শুধু চোখের জল।"
রাইসা (গলাটা ভেঙে আসছে):
"একটা আলিঙ্গন চাই আমি... দেবে না? এই জীবনে যা চেয়েছি তুমি কখনো না করোনি। আজ মানা করো না দয়া করে।”
সামিউল পেছনে তাকায়। বাবা-মা দাঁড়িয়ে, সবার চোখে কৌতূহল। বুকের ভেতরে তীব্র দ্বন্দ্ব।
সামিউল: "কি করে সম্ভব রাইসা? আমার পুরো পরিবার তাকিয়ে আছে, আর আমার ভীতরে দ্বন্দ্ব চলছে"
রাইসা (হতাশ কণ্ঠে):"তাহলে আমি কিছুই চাইব না। শুধু জেনে রেখো—তোমার কাছ থেকে দূরে যেতে পারিনি, পরিবারের চাপে ডিভোর্স চাইতে হয়েছিল। তোমাকে মুক্তি দিয়েছিলাম। আজও দিলাম। তবুও সুখে থেকো।"
এক মুহূর্ত থেমে, হঠাৎ ভেঙে পড়ে রাইসা সামিউলের বুকে। সামিউলও প্রতিরোধ ভেঙে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
যেন দুজনেই অনন্ত তৃষ্ণার পর এক ফোঁটা জলে সঞ্জীবিত হচ্ছে। চোখের সামনে বাবা-মা থাকলেও সেই মুহূর্তে তারা দুজন ছাড়া পৃথিবী ফাঁকা। এভাবে সময় যে কখন পেরিয়ে গেছে, শতসহস্র শব্দরা কান্না হয়ে ঝড় তুলেছে। নীরবে যেন বলে যাচ্ছে হাজার হাজার বাক্য যা বুকের সাথে বুক মিলিয়ে হৃদয়ের সাথে হৃদয় শ্রবন করে যাচ্ছে।
হঠাৎ আব্বার ডাক—
"সামিউল, সময় শেষ। আসো বাবা। পরে ইমিগ্রেশনে সমস্যায় পরবে"
দুজন চমকে ওঠে।
শেষ পাঁচ মিনিটের অনুমতি মেলে। রাইসা চোখ মুছতে মুছতে বলে—
রাইসা: "ক্ষমা করে দিও। ভাল থেকো। চাইলে বিয়ে করে নিও… তোমার প্রাপ্য সুখ খুঁজে নিও।"
সামিউলের বুকটা হিম হয়ে যায়। ঝটকা দিয়ে সরে দাঁড়িয়ে গম্ভীর স্বরে বলে— "না রাইসা। এভাবে নয়। আমার সময় হয়েছে। আমি যাচ্ছি। হয়তো একদিন তোমাকেই আবার খুঁজে নেবো। কিন্তু আজ আমাকে যেতে হবে। অপেক্ষা করো, না হয় নিজেই খুজে নিয়ো আপন সুখ"
রাইসা ভেঙে পড়ে চুপচাপ। চোখে জল, ঠোঁটে নিস্তব্ধতা। সামিউল ভেতরে হারিয়ে যায়। রাইসা দাঁড়িয়ে থাকে টার্মিনালের কাঁচের বাইরে— দুজনের হৃদয়ই তখনো একই সুরে ধুকপুক করছে, কিন্তু পথ দুটো আলাদা হয়ে গেছে।
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ৮:২৯
সামরিন হক বলেছেন: মর্মান্তিক!