![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মৃত ব্যক্তির কোন অভিব্যাক্তি থাকতে নেই। স্বপ্নেরা নিছে ছুটি, আমি রয়ে গেছি দেহ টা বয়ে বেড়াতে।
“নুশাইবা, তুমি এত ভনিতা করো কেন?”
— এমদাদুল হক কণ্ঠে মৃদু রাগ, মিশে আছে মমতা।
“সুমনকে নাম বলে দিলে এমন কী হতো? এত গোপনীয়তা রাখার দরকার কী?”
নুশাইবা ঠোঁট কামড়ে বলল,
“আমি তো বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু কে জানত সে হঠাৎ নেমে যাবে! আর ওর স্বভাবেও তো এমন হুট করে কিছু করার রেকর্ড পাইনি...”
এমদাদুল হক একটু হেসে বললেন,
“ছেলেটা কিন্তু একদম ভালো মানুষ। আমি তোকে চিনি বলে নয়, একজন বাবা হিসেবে বলছি—তুই আমার মেয়ে বলে তো ভাগ্যবতী! সুমনের মতো ছেলেকে কাছে বসিয়ে কথা বলার সুযোগ তো আর সবাই পায় না। কোনো বাবা তার মেয়ের পছন্দের ছেলের সাথে এমন তদন্ত করে, এমন আয়োজন করে দেখা করার সুযোগ দেয়?”
নুশাইবা মুখটা ফুলিয়ে বলল,
“তুমি কি এখন এর জন্য খোঁটা দিচ্ছো, বাপি? তাহলে আমি নামি!”
এমদাদুল হক হেসে ফেললেন,
“থাক, নামতে হবে না। শুন, ছেলেটা একটা ছোট কোম্পানির মানবসম্পদ বিভাগের সহকারী প্রধান। আমি তো আর্মির মানুষ, তবু রাজি হয়েছি ওর সততা আর সরলতার জন্য। আমি ওর ক্যাম্পাসের সিনিয়র—একটু অধিকার আছে ওর ওপর।”
নুশাইবা জানালার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল,
“বাবা, আমি যে তোমার মেয়ে, এটা কি সুমন বুঝেছে?”
এমদাদুল হক হালকা হাসলেন,
“জানি না। তবে সুমনের মতো বুদ্ধিমান ছেলে ঠিকই আন্দাজ করতে পেরেছে। না হলে একজন লেফটেন্যান্ট নিজে গাড়ি চালায় নাকি? হা হা! আর দেখ, আমি তোকে এবার একা যেতে বলছি—আমি গেলে তোর লজ্জা লাগবে। আগের প্রেমের গল্পগুলো তো সবই আমায় জানিয়ে করেছিস, কিন্তু এবার তো সরাসরি বিয়ের আবদার তুলেছিস! তাই তদন্ত না করে উপায় ছিল?”
নুশাইবা ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,
“আগের সম্পর্কগুলোতেও তো কষ্ট পেয়েছি, তাই বলছো খোঁটা দিতে?”
“খোঁটা নয় মা,” এমদাদুল হক নরম কণ্ঠে বললেন, “আমি শুধু বলতে চাচ্ছিলাম, তুই আমার সামনে লজ্জা পাসনা। জানি, আগেরগুলো প্রেম ছিল, কিন্তু এবারটা অন্যরকম।”
নুশাইবা নিচু গলায় বলল,
“যখন আমি একেবারে ভেঙে পড়েছিলাম, ঠিক তখনই সুমনকে দেখেছিলাম সেই পাবলিক বাসে...”
“ওহ্, তখনই তো প্রেম খুঁজতে শুরু করলি পাবলিক বাসে?” হেসে উঠলেন এমদাদুল হক।
“আব্বা, ও প্রেম না! আমি শুধু মধ্যবিত্ত জীবনের স্বাদ নিতে চাচ্ছিলাম।”
“তা বুঝি, আর মধ্যবিত্তের স্বাদ নিতে গিয়ে এক বাসে ঘুমন্ত ছেলেকে দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলে! হা হা!”
নুশাইবা গম্ভীর গলায় বলল,
“আব্বা, ওর মুখটা দেখলে তুমি বুঝতে পারতে—কি মায়ায় ভরা চেহারা! কত শান্ত, নিশ্চিন্ত! বিকাশ বাসের মতো জায়গায় টানা দুই ঘণ্টা ঘুমালো! আমি মেয়েদের সিট থেকে উঠে বিপরীত সিটে গিয়ে বসেছিলাম, শুধু তার ঘুম দেখব বলে।”
“ঘুমের মধ্যে কয়টা নিঃশ্বাস নিচ্ছিল তাও গুনে ফেলেছিস মনে হয়!”
“পারলে সেটাও করতাম বাবা,” হেসে বলল নুশাইবা।
“দুই ঘণ্টা আমি শুধু ওর দিকেই তাকিয়ে ছিলাম। আমার নামার কথা ছিল সৈনিক ক্লাবে, কিন্তু আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম—যতক্ষণ না ওর ঘুম ভাঙে, ততক্ষণ নামব না।”
“তারপর?”
“এক হিজড়া এসে ধাক্কা দিল, আর সুমন হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে বলল, ‘রাজলক্ষ্মী নাম্ব, মামা।’ কী হাসি যে ছিল মুখে!”
এমদাদুল হক হেসে বললেন,
“তারপরই তুমি পিছন পিছন গিয়েছিলে জহুরা মার্কেটে। আর যে তুমি চিনি ছাড়া রং চা ছুঁয়ো না, সেই তুমি চিনি ছাড়া চা অর্ডার করলে। কষ্ট করে গিলে সুস্বাধু চা পানের অভিনয় করে গেলে!”
“কি করব বলো বাবা? এমন ভান তো আগে কখনও করিনি। চিনি ছাড়া চা এত বিশ্রী, কিন্তু সে দিব্যি পান করে গেল। মনে হলো যেন মধু মিশানো চা খাচ্ছে।”
“সিগারেটের কথা বললি না কেন?” ঠাট্টা করলেন এমদাদুল হক।
“আব্বা, তুমি জানো তো, তুমি নিজেও টানো! মজার বিষয়—তোমার আর সুমনের ব্র্যান্ড একই—মালব্রো গোল্ড!”
“আমি টানি না, মিথ্যা কথা! এসব কে বলেছে?”
“তোমার পকেটেই পেয়েছি, আম্মাও পেয়েছেন!”
“তো এতদিন বলোনি কেন? পকেট সাফাই করতে বলে?”
“পকেট মারতে যাব কেন? তোমার মুখে ঘ্রাণ পেয়েছিলাম, তাই সার্চ করেছিলাম,” হেসে বলল নুশাইবা।
“বাহ! তাহলে তুমি আর তোমার মা একেক সময় একেকবার পেয়েছো! একসাথে দেখলে তো মহা তোলপাড় করে ফেলতে।”
নুশাইবা ঠোঁটে মিষ্টি হাসি এনে বলল,
“আব্বা, তুমি মিথ্যা বলো—এই জন্যই সুমনকে আমার এত পছন্দ। সে কেমন সরল! এমনকি সে যদি সিগারেট টানেও, বিয়ের পর আমি বললে সে নিশ্চয় ছেড়ে দেবে।”
“হ্যাঁ, খুব ছাড়বে!” হেসে বললেন এমদাদুল হক, “আজকে দশ মিনিট চাইলা, দিলো?”
“আজ কি সে আমার স্বামী নাকি, যে আমি আদেশ দিলে মানবে!”
এমদাদুল হক মুচকি হেসে মনে মনে বললেন,
“যে ছেলেরা সিগারেট খায়, তারা বউয়ের সামনে সাধু সাজার ওস্তাদ। মুখে বলে—‘জীবনে ধরিনি’, অথচ ঠিকই টানে...”
আর গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলেন—মেয়ের চোখে প্রথম প্রেমের সরল আলোটা দেখে, মুখে চাপা এক সন্তুষ্টির হাসি নিয়ে।
২| ০৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ২:১০
রাজীব নুর বলেছেন: ছবি নিচে কেন? ছবি দিবেন লেখার উপরে।
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৫:১১
বিজন রয় বলেছেন: রহস্য ধরতে পারিনি।