নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একে একে সব স্বপ্ন মাটি দিয়ে এখন প্রহর গুনছি দেহটা কবে আমাকে মুক্তি দেবে।

মিজানুর রহমান এএমএস

মৃত ব্যক্তির কোন অভিব্যাক্তি থাকতে নেই। স্বপ্নেরা নিছে ছুটি, আমি রয়ে গেছি দেহ টা বয়ে বেড়াতে।

মিজানুর রহমান এএমএস › বিস্তারিত পোস্টঃ

রহস্যময়ী বালিকা – প্রথম পর্ব

০৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৯:৪৫

উত্তরা ১৪নং সেক্টরে জহুরা মার্কেটের এক দোকানে আমি মাঝে মাঝে চা–কফি খাই। সেদিনও যথারীতি বসে চা খাচ্ছিলাম। আমার আবার চায়ের সাথে মালব্রো সিগারেট না হলে চলে না। এক হাতে চা, অন্য হাতে সিগারেট নিয়ে ফুরফুরে মেজাজে চায়ে চুমুক আর সিগারেটে টান দিচ্ছি।
হঠাৎ চোখ আটকে গেল পাশের টঙে। বড় বড় চোখ, চাব্বি গালের এক মেয়ে একদৃষ্টে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ববকাট চুল, টোল পড়া হাসি। কৃত্রিম চোখের পাপড়ি তার চোখকে আরও বড় করে তুলেছে। নাকটা যেন টিয়াপাখির ঠোঁটের মতো তীক্ষ্ণ।
আমি আমার চা–সিগারের কম্বিনেশন চালিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু মনে মনে ভাবছি—এভাবে তাকিয়ে আছে কেন? সে স্বচ্ছ কাপে দুধ চা নিয়ে বসে আছে, তবে আমার ধারণা আমার দিকে তাকিয়ে থাকার কারণে তার চা ঠান্ডা হয়ে গেছে। তাই হয়তো চায়ে চুমুক দিতে তার তেমন স্বাদ লাগছে না।
তাকে আমার খুব একটা পছন্দ হয়নি। কারণ, কেউ এভাবে লোভাতুর চোখে তাকায় নাকি? তাও আবার যে ছেলের চুলে পাক ধরেছে, এমন একজনের দিকে? এই মেয়ে কি জানে নাকি, আমি এখনো ব্যাচেলর, আর বয়সও তো কম হলো না!
আমি সাধারণত চা শেষ করেই উঠে যাই, বেশিক্ষণ বসি না। কিন্তু আজ আর উঠতে ইচ্ছে করছে না। মেয়েটির কাণ্ডকারখানা দেখতে ইচ্ছে করছে। মনে হচ্ছে, লোভাতুর নয়নের ডাকে সাড়া দিই, আবার সততা ধরে মুখ ফিরিয়েও নিতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু দ্বন্দ্বে শেষ পর্যন্ত জিতলো লোভ।
তাই বসে রইলাম। শুধু বসে থাকাটা অদ্ভুত লাগছিল, তাই আরেকটা সিগারেট ধরালাম। দোকানদারও বুঝে গেছে, আমার চোখে চোখ ফেলেছে এক রূপসী। মিষ্টি হেসে আমাকে আরেক কাপ রঙ চা অফার করল। তবে আমি সেই বিশেষ অফার ফিরিয়ে দিলাম।
সকাল গড়িয়ে সদ্য দুপুর হতে যাচ্ছে। দোকান থেকে অনেকে চলে যাচ্ছে, অথচ মেয়েটি একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে। মাঝে মাঝে চোখ নামাচ্ছে, কিন্তু বোঝা যাচ্ছে না, ইশারায় ডাকছে নাকি আনমনে তাকিয়ে আছে। আমি সরাসরি চোখাচোখি করছি না, শুধু তাকে পর্যবেক্ষণ করছি।
আমার দ্বিতীয় সিগারেট শেষ হলো। এবার উঠতেই হবে। আজ যদিও অফিস বন্ধ, তারপরও কিছু জরুরি কাজ আছে। তাই বিল দিয়ে চলে আসলাম।
বাসার কাছাকাছি আসতেই পেছন থেকে একটা প্রাডোর সাইরেন বাজল। গাড়ির ভেতর থেকে র‍্যাব–১ এর এক লেফটেন্যান্ট আমাকে ডাকলেন। কালো গ্লাসের কারণে শুধু তাকে দেখা যাচ্ছিল। জানালার কাচ নামিয়ে তিনি বললেন—
“গাড়িতে উঠুন, পাঁচ মিনিট কথা বলেই নামিয়ে দেব।”
আমি ইতস্তত করলে পেছনের দরজা খুলে গেল। ভেতরে বসা সেই অদ্ভুত বালিকা! বাধ্য হয়ে আমি উঠলাম। গাড়ি চলতে শুরু করল। আশ্চর্যের ব্যাপার, ভয়ের বদলে মনে হলো বহুদিনের চেনা কারো সঙ্গে যাচ্ছি। গাড়ির কাচ উঠে গেল, বাইরের সব কিছু দেখা যাচ্ছে, অথচ ভেতরের কিছুই বাইরে থেকে বোঝা যাচ্ছে না।
নীরবতা ভাঙতে লেফটেন্যান্ট এমদাদুল হক বললেন—
“পাঁচ মিনিট প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। আমি সুমন সাহেবকে কথা বলার জন্যই তুলেছি।”
বালিকা একবারও আমার দিকে তাকাল না। বয়স আন্দাজে বোঝা গেল ২৩–২৪ বছর। হঠাৎ অন্যদিকে তাকিয়েই সে বলল—
“সুমন সাহেব, আমি আপনাকে প্রথম দেখি পাবলিক বাসে, ঘুমন্ত অবস্থায়। সেদিন থেকে আমার ভেতরে অদ্ভুত এক পরিবর্তন এসেছে। তারপর থেকে প্রতিদিন আপনি যে টঙে চা–সিগারেট খান, আমি সেখানে গিয়ে আপনাকে পর্যবেক্ষণ করি। কিন্তু আজ ধরা পড়ে গেছি।”
সামনে বসা এমদাদ সাহেব হেসে বললেন—
“তোমার বয়স ২৪, বাড়িয়ে বলছো কেন? আর তুমি কি বুঝতে পারোনি, সুমন মিথ্যে কথা বলা–শোনা পছন্দ করে না? তিন মাস ধরে ইনভেস্টিগেশন করছো, তবুও বুঝোনি?”
আমি তখন মুখ খুললাম—
“কি ব্যাপার! আমাকে তিন মাস ধরে পর্যবেক্ষণ করেছেন? আর সরকারের টাকা খরচ করে আমাকে নিয়ে তদন্ত করেছেন? বাহ, আর কি কি জানেন, শুনি?”
এমদাদ সাহেব শান্ত গলায় বললেন—
“দেখুন সুমন মিয়া…”
আমি সঙ্গে সঙ্গেই বললাম—
“আমার নাম সুমন মিয়া নয়। আমি ইমরান ইসলাম সুমন।”
বালিকা এবার মুখ খুলল—
“আচ্ছা, ইমরান ইসলাম সুমন। আমি ভনিতা পছন্দ করি না। চাইলে অনেক আগেই আপনার কাছে আসতে পারতাম। কিন্তু আগে আপনাকে চিনে, বুঝে, যদি ইতিবাচক মনে হয়, তবেই কথা বলতে চেয়েছিলাম।”
আমি হেসে বললাম—
“বাহ, চেনা শেষ তাহলে! কিন্তু সামনের আসনে বসা ভদ্রলোক কে? আর আপনার নাম–ধাম?”
বালিকা সংক্ষেপে বলল—
“আমার নাম পরে জানবেন। আজ শুধু আমার প্রশ্নগুলোর সরাসরি উত্তর দেবেন।”
আমি বললাম—
“আপনিও তাহলে অন্যদিন উত্তর নিয়েন। আজ আমাকে নামিয়ে দিন। আমার হাতে সময় নেই। জমজম টাওয়ারের কাছে আমার কিছু কাজ আছে।”
সে মিনতি করে বলল—
“আচ্ছা, নাম বলব, তবে আর দশ মিনিট সময় দিন।”
আমি হেসে বললাম—
“আমি অপরিচিত কারো সাথে অনেকক্ষণ কাটালাম। তাও র‍্যাবের সিলা মারা গাড়িতে ,নির্ভয়ে উঠেছি, বসে আপনার অযাযিত কথা শুনেছি—সাধারণ নাগরিক হলে তো ভয়েই কাঁপত। এবার নামার সময় হলো আমার।”
এই বলে দরজার হাতল ধরতেই গাড়ি থেমে গেল। আমাকে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি ছুটে চলল। মুহূর্তের মধ্যে চোখের আড়াল হলো সেই অদ্ভুত বালিকা।
নেমে মনে হল, নাম টা না জেনেই কেন নেমে গেলাম?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.