নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লেখার স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি।

আমি সত্যে অবিচল।

আনোয়ার আলী

যত অপ্রিয়ই হোক, সত্য বলতে আমি দ্বিধা করি না। আমি সদাই সত্যে অবিচল। অন্যের কাছে থেকে কিছু জানা আমার শখ।

আনোয়ার আলী › বিস্তারিত পোস্টঃ

হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর বিয়ের বয়স নিয়ে নাস্তিকদের প্রপাগান্ডা! মহানবী কি শিশু বিয়ে করেছেন? তিনি কি তাহলে সর্বকালের আদর্শ হতে পারেননি?

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:৫৫

বলা বাহুল্য, মহানবীর সাথে আয়েশার বিয়ের বয়স নিয়ে নাস্তিকেরা তাদের লেখায় তুমুল ঝড় তুলেছেন এবং নানা কার্টুন ও কটুক্তি করে মুসলমানদের নানাভাবে অপমান করে আসছেন। বিদেশে তো বটেই, বাংলার ইন্টারপাশ তথাকথিক মুক্তমনা বিজ্ঞান-মনস্ক নাস্তিকেরা ‘ধর্মকারী’ ব্লগ সহ তাদের নানা ব্লগে এ নিয়ে প্রতিনিয়ত লিখে চলেছেন। ইসলামের নবীকে বর্বর, শিশুকামী, নারীলোভী বলে গালাগাল ও অশ্লীল বক্তব্য দেয়া অব্যাহত রেখেছেন। তারা নাকি আবার বুখারী শরীফও পড়েন।

হযরত আয়শা (রাঃ)-এর সাথে নবী করিম (দঃ)-এর বিয়ের সময় আয়শার বয়স ৬ বৎসর ছিল মর্মে বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদীসে বর্ণিত আছে।

বুখারী হাদিসে আছে- “হিসামের পিতা হতে বর্নিত- খাদিজা মারা যাওয়ার তিন বছর পর নবী মদিনাতে হিযরত করেন। তার মারা যাওয়ার প্রায় দুই বছর পর নবী আয়শাকে বিয়ে করেন যখন তার বয়স ছিল ছয় বছর আর তার বয়স নয় বছর হলে তার সাথে ঘর সংসার শুরু করেন। সহি বুখারী, বই -৫৮, হাদিস- ২৩৬”।

হযরত ইমাম বুখারী একজন নির্ভরযোগ্য হাদীস সংগ্রাহক। আল-কোরআনের পরই বুখারী শরীফের হাদীসকে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও নির্ভুল বলে গন্য করা হয়। সমসাময়িক হাদীস সংগ্রাহক ইমাম মুসলিমের সংগৃহীত হাদীসও নির্ভুল বলে বিবেচিত হয় মুসলিম সমাজে। হাদীস সংগ্রহের কাজে তাদের সততা নিয়ে আজ পর্যন্ত কোন প্রশ্ন উঠেনি। কাজেই তাদের বর্ণিত হাদীসকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার অপপ্রয়াস মুসলমানরা মেনে নেবেন না এটাই সত্য। তবে সাথে সাথে একথাও মনে রাখতে হবে যে, ইমাম বুখারী এবং ইমাম মুসলিম নিজেরা কোন হাদীস সৃষ্টি করেননি। তারা সংগ্রহ করেছেন মাত্র। বিখ্যাত হাদীস বিশেষজ্ঞ ইবনে হাজার আসকালানী (জন্ম ১৩৭২ খ্রী: এবং মৃত্যু ১৪৪৮ সালে) সুদীর্ঘ ২৫ বৎসর সময় নিয়ে “ফতহুল বারী” নামে ১৮ খন্ডে বুখারী শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ রচনা করেছেন। ইমাম বুখারীর সহি হাদীস গ্রন্থের মত এটাও সর্বমহলে সমাদৃত। তিনি সহীহ আল বুখারী গ্রন্থের হাদীস সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন, ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেছেন। আবার এর কিছু অসংগতিও তুলে ধরেছেন। যেমন: মোনাফেক আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই এর জন্য রাসূল (সা.)-এর দোয়া করার ব্যাপারে বুখারীতে যে হাদীস আছে সে সম্পর্কে তিনি বলেন সুরা তওবার এই আয়াত (“আত্মীয় স্বজন হলেও মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা নবী এবং মু’মিনদের জন্য সংগত নয়” -৯:১১৩) বর্তমান থাকতে, হযরতের পক্ষে আব্দুল্লাহর জন্য জানাজার নামাজ পড়া বা ক্ষমা প্রার্থনা সম্পূর্ণ অসম্ভব। অতএব এ হাদীসটি অবিশ্বাস্য। (বোখারী, ফৎহুল বারী, ১৯ খন্ড ২০৩ হতে ২০৬ পৃষ্ঠা) [উদ্বৃত: মাওলানা আকরাম খা রচিত “মোস্তফা চরিত”, পৃষ্ঠা-৫৪]

আবার দেখুন, “আনাছ, আয়েশা ও এবনে-আব্বাছ বলছেন:- ‘হযরত ৪০ বৎসর বয়সে নবী হয়ে, ১০ বৎসর মক্কায় অবস্থান করে হিজরত করেন; এবং মদিনায় আর দশ বৎসর অবস্থান করার পর, নবুয়তের ২০শ সনে, ৬০ বৎসর বয়সে পরলোক গমন করেন।’ (বোখারী ১৮-১০৯, মোছলেম ২-২০৬ পৃষ্ঠা) হযরতের ২০ বৎসর নবুয়ত, মক্কায় ১০ বৎসর অবস্থান এবং ৬০ বৎসর বয়সে পরলোক গমন - এই তিনটি কথাই ভুল। তিনি মক্কায় ১৩ বৎসর অবস্থান করে হিজরত করেন এবং ২৩ বৎসর নবী-জীবন অতিবাহিত করার পর ৬৩ বৎসর বয়সে পরলোক গমন করেন। এটা ঐতিহাসিত সত্য; বোখারী ও মোছলেমের কথিত রাবিগণ কর্তৃকই এটা বর্ণিত হয়েছে। এ-সম্বন্ধে অধিক প্রমাণের আবশ্যক নেই। কারণ বোখারী ও মোছলেমে বর্ণিত এ দুটি পরস্পর বিপরীত বিবরণ উভয়ই সত্য হতে পারে না-সুতরাং একটা বিবরণ যে ভুল - তা সকলেই স্বীকার করবেন। অত্এব আমরা দেখছি হাদীসছের সনদ ছহী, অথচ হাদীছটি অগ্রাহ্য” [মাওলানা আকরাম খা রচিত “মোস্তফা চরিত”, পৃষ্ঠা - ৪৫]

আয়েশার বয়স শুধু ঐতিহাসিক একটা তথ্য, এর কোন ব্যবহারিক মূল্য নেই। এ সংক্রান্তে কোরআনে বা অন্য আর কোথাও কিছু বর্ণিত হয়নি। হাদীস সংগ্রাহকরা ব্যবহারিক তথ্যে যেরূপ সতর্ক ছিলেন, ঐতিহাসিক তথ্যে তেমনটা ছিলেন না। মুসলমানদের মূল সোর্স অবশ্যই কোরান। হাদিসের যে অংশ কোরানের সাথে সামন্জস্যপূর্ণ সেটাই গ্রহণ করা উচিত। এখানে গোঁড়ামীর আশ্রয় নেয়া কাম্য নয়। একটি হাদীসের সাথে অন্য হাদীসের অসমাঞ্জস্য থাকলে, কোরআনের সাথে মিলিয়ে সত্যটা গ্রহন করতে হবে। এর জন্যে অন্যান্য সকল হাদীসে সন্দেহ পোষন কোনভাবেই কাম্য নয়। হাদীস সংগ্রাহকদের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলাও অবান্তর। বর্ণনাকারীর ভুল হলে সেটার জন্যে হাদীস সংগ্রাহককে দোষারোপ করা একটি সুষ্পষ্ট জুলুম। যে হাদীস আল-কোরআনের সাথে কন্ট্রাডিক্ট করবে সেক্ষেত্রে কোরআনই প্রাধান্য পাবে। এটাই ইসলামের শ্বাশত বিধান।

শিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন বুখারী বা মুসলিম শরীফের সব হাদীসে একিন করেন না। কেবল কোরআনের সাথে মিল থাকলেই তারা সেটা মেনে নেন। আল-গাদী নামে তাদের নিজস্ব হাদীস সংকলন আছে। আবার কতিপয় কট্টর সুন্নীরা কোরআনের চেয়েও হাদীসে বেশী আমল করেন। আমাদের দেশে তো কোরআনের মত বুখারী মুসলিমের হাদীস খতম দেওয়ার রেওয়াজও রয়েছে।

সে যাক, আমরা এখানে খুব স্বল্প পরিসরে এ নিয়ে আলোচনা করব। দুপক্ষের বক্তব্যই তুলে ধরব। তাহলে নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারবো এবং নাস্তিকদের প্রশ্নের জবাব দিতে পারবো।

বিয়ের সময়ে মা আয়েশার বয়স সংক্রান্তে নবী করিমের বা কোন সাহাবীর দেয়া কোন তথ্য পাওয়া যায় না। এই হাদীসটি হাদীস-বর্ণনাকারীদের শেষ ব্যক্তি হিশাম বিন উরওয়ার। তিনি তার পিতার কাছ থেকে শুনেছিলেন। হিশাম তার জীবনের ৭১ বছর মদীনায় কাটালেও মদীনার কেউ এ হাদীসটি শোনেননি। হিশামের শেষ জীবন কাটে ইরাকে। এ কারনে এ হাদীসের বর্ণনাকারী বাকি সবাই ইরাকের। ইয়াকুব ইবনে শায়বাহ বলেছেন, “হিশামের সকল হাদীস বিশ্বাসযোগ্য, শুধুমাত্র ইরাকিরা যেগুলো বর্ননা করেছে সেগুলো ছাড়া।” মালিক বিন আনাস, যিনি হিশামের ছাত্র ছিলেন, তিনি হিশামের ইরাকিদের মাধ্যমে বর্নীত হাদীসগুলোকে সন্দেহ করে ওগুলোকে বাতিল করেন। (সুত্র–তেহজিবুল তেহজিব, লেখক-ইবনে হাজার আল আশকানি। বইটি হাদীস বর্ননাকারীদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে লিখিত।) এমন বিবরন পাওয়া যায় যে, হিশাম বিন উর্‌ওয়া শেষ বয়সে স্মৃতিশক্তির দুর্বলতায় ভুগেছিলেন, যেকারনে তার শেষ বয়সের অর্থাৎ ইরাকে বসবাসকালীন বর্নীত হাদীসগুলোতে বিশ্বাস করা যায় না। (সুত্র-আল যাহবি লিখিত “মিজানুল-আইতিদাল”। বইটি হাদীস বর্ননাকারীদের জীবনী নিয়ে লিখিত।)

ফলে উক্ত হাদিসটিও ভুল প্রমাণিত হয়। ইমাম বুখারীর আরেকটি হাদীসই কিন্তু প্রমাণ করে দেয় যে, আয়েশার বিয়ের বয়স সংক্রান্ত হাদীসটি ভুল। কেননা ঐ হাদীসে আয়েশা সুরা ৫৪ নাজিল হওয়ার সময় কিশোরী ‘যারিয়াহ’ (শিশু ‘সিবিয়াহ’ নয়) হিসাবে দাবী করেছেন। ৫৪তম উক্ত অধ্যায় নাযিল হয় হিজরীপূর্ব ৯ সালে মক্কায় ৬১২ খৃষ্টাব্দের দিকে। সে হিসাবে হযরত আয়েশার বয়স তখন কমপক্ষে ৫ বছর (কেননা তার মনে আছে) হলেও ৬২৩-৬২৪ খৃষ্টাব্দ সালে তাঁর বয়স কোনভাবেই ১৫/১৬ বছরের নিচে নয়। দাম্পত্য জীবন শুরু হয় আরো ২ বছর পর। (Sahih Bukhari, kitabu'l-tafsir, Arabic, Bab Qaulihi Bal al-sa`atu Maw`iduhum wa'l-sa`atu adha' wa amarr)

Volume 6, Book 60, Number 399:

Narrated Yusuf bin Mahik:

I was in the house of ‘Aisha, the mother of the Believers. She said, “This revelation: “Nay, but the Hour is their appointed time (for their full recompense); and the Hour will be more previous and most bitter.” (54.46) was revealed to Muhammad at Mecca while I was a playfull little girl.”

দুটি হাদীসই তো সহি হাদীস। তাহলে? সার্বিক বিচারে হিশাম বিন উরওয়ার বর্ণিত হাদীসটি ভুল বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। অনেক হাদীসের বর্ননায় পাওয়া যায় আয়েশা ওহুদের যুদ্ধে নবীর সফরসঙ্গী ছিলেন। ওহুদের যুদ্ধে ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে ১৫ বছরের নিচে কাউকে যুদ্ধে নেয়া হয়নি। ওহুদের যুদ্ধ ২য় হিজরীর নিকটবর্তী কোন এক সময় সংঘটিত হয়। এর অর্থ দাড়ায় আয়েশার বয়স বিয়ের সময় ১৫ বছরের বেশি ছিল।

তবে বয়স যে ৬ বা ৯ ছিল না সে সম্পর্কে অনেক স্কলারই একমত। তাবারি তার ইসলামের ইতিহাস বইতে উল্লেখ করেছেন যে, আবু বকরের ৪ সন্তানের সকলেই ইসলামপূর্ব ৬১০ সালের আগেই জন্মগ্রহন করেন। আয়েশার বিয়ে হয় ৬২৪ সাল বা ২য় হিজরীতে। এর মানে দাড়ায় বিয়ের সময় আয়েশার বয়স ন্যুনতম ১৪ বছর ছিল। (Tarikhu’l-umam wa’l-mamlu’k, Al-Tabari, Vol 4, Pg 50, Arabic, Dara’l-fikr, Beirut, 1979).

ঐতিহাসিক ইবনে হিশামের বর্ননামতে আয়েশা উমর ইবনে আল-খাত্তাবের বেশ কিছু আগে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। এর অর্থ দাড়ায় আয়েশা ৬১০ সালের কাছাকাছি সময়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন । এখন যদি ধরা যায় তিনি বুঝে শুনে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছেন , তাহলে তখন তার বয়স ছিল ৭-৮ বছর। এই হিসাবে আয়েশার বয়স বিয়ের সময় ২০ বছরের উপরে হয়। (Al-Sirah al-Nabawiyyah, Ibn Hisham, vol 1, Pg 227 – 234 and 295, Arabic, Maktabah al-Riyadh al-hadithah, Al-Riyadh).

ঐতিহাসিকগন মহিলা সাহাবি ‘আসমা’র বয়স সম্পর্কে একমত। আসমা, আয়েশার বড় বোন ও বয়সে আয়েশার থেকে ১০ বছরের বড়। তাকরিবুল তেহজিব ও আল-বিদায়াহ ওয়াল নিহায়াহ বই দুটিতে বর্নীত হয়েছে যে, আসমা ৭৩ হিজরী সালে ১০০ বছর বয়সে মারা যান। এর অর্থ দাড়ায়, হিজরতের সময় আসমার বয়স ছিল ২৭ বছর। আয়েশা যেহেতু আসমার চেয়ে ১০ বছরের ছোট, তাহলে হিজরতের সময় আয়েশার বয়স ছিল ১৭ বছর। আয়েশার বিয়ে হয় ২য় হিজরীতে । এই হিসাবে আয়েশার বয়স বিয়ের সময় হয় ১৯ বছর।

(For Asma being 10 years older than Ayesha, see A`la’ma’l-nubala’, Al-Zahabi, Vol 2, Pg 289, Arabic, Mu’assasatu’l-risalah, Beirut, 1992. Ibn Kathir confirms this fact, [Asma] was elder to her sister [Ayesha] by ten years” (Al-Bidayah wa’l-nihayah, Ibn Kathir, Vol 8, Pg 371, Arabic, Dar al-fikr al-`arabi, Al-jizah, 1933). For Asma being 100 years old, see Al-Bidayah wa’l-nihayah, Ibn Kathir, Vol 8, Pg 372, Arabic, Dar al-fikr al-`arabi, Al-jizah, 1933). Ibn Hajar al-Asqalani also has the same information: “She [Asma (ra)] lived a hundred years and died in 73 or 74 AH.” Taqribu’l-tehzib, Ibn Hajar Al-Asqalani, Pg 654, Arabic, Bab fi’l-nisa’, al-harfu’l-alif, Lucknow).

দেখা যাচ্ছে, আয়েশার বয়স নিয়ে নানা বিভ্রান্তি রয়েছে। মুসলমানদের কাছে কোরআনের পরই হাদীসের স্থান। সব হাদীস সহি নয়। কিছু দুর্বল এবং ভুল হাদীসও গ্রন্থিত হয়েছে। কোরআনের সাথে যাচাই বাছাই করেই তাতে আমল করতে হয়।

তবে সুন্নী সম্প্রদায়ের লোকজন আয়েশার বয়স সংক্রান্ত হাদীসটি কেবলমাত্র ইমাম বুখারীর মত সৎ ব্যক্তিত্ব সংগ্রহ করে হাদীসটি বর্ণনা করায় এর উপরই আমল করেন। নানা যুক্তি দিয়ে তাকে ডিফেন্ড করেন। শিয়ারা এটাকে মোটেই পাত্তা দেন না, যদিও তারাও মুসলিম। শিয়া সুন্নির বাইরে যারা নিজেদের কেবল মুসলিম হিসাবেই পরিচয় দেন, তারাও ইমাম বুখারীকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার চোখে দেখেন এবং তার হাদীসে আমল করেন। তবে কোন হাদীস কোরআনের সাথে সামঞ্জস্যহীন হলে সেটা প্রত্যাখ্যান করেন। তবে একই ইমাম বুখারীর আরেকটি হাদীস দ্বারাই এ হাদীসটি প্রত্যাখাত হয়, যা ইতিমধ্যেই উল্লেখ করা হয়েছে।

আরেক প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ইবনে হাইসাম থেকে জানা যায় হযরত আয়েশা (রাঃ) হযরত উমর ইবন আল খাত্তাব (রাঃ) এর বেশ আগে ইসলাম গ্রহন করেন। (উমর ইবন আল খাত্তাব (রাঃ) ৬১৬ খৃষ্টাব্দে ইসলাম গ্রহন করেন। আবার হযরত আবু বকর (রাঃ) ইসলাম গ্রহন করেন ৬১০ খৃষ্টাব্দে। সুতরাং হযরত আয়েশা (রাঃ) ও ৬১০ এর কাছাকাছি সময়েই ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। তার অর্থ আবারো দাঁড়ায় যে তিনি ৬১০ খৃষ্টাব্দের আগেই জন্মগ্রহন করেছিলেন এবং কোন ধর্ম গ্রহন করবার নূন্যতম বয়স (৬/৭ হলেও) তাঁর ছিল। তাহলে ৬২৩-৬২৪ সালে তার বয়স প্রায় ১৮-২০ হয়।

(Al-Sirah al-Nabawiyyah, Ibn Hisham, vol 1, Pg 227 – 234 and 295, Arabic, Maktabah al-Riyadh al-hadithah, Al-Riyadh)

হাম্বলি মাযহাবের ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল তাঁর মুসনাদ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন বিবি খাদিযাহ (রাঃ)-র মৃত্যুর পরে (৬২০ খৃষ্টাব্দ) হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জন্য খাউলাহ নামের একজন ২টা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসেন। যার মধ্যে হযরত আয়েশার (রাঃ)কথা উল্লেখ করবার সময় একজন পূর্ণবয়স্ক যুবতী হিসেবেই উল্লেখ করেন কোন ছোট্ট শিশু হিসেবে নয়।

(Musnad, Ahmad ibn Hanbal, Vol 6, Pg 210, Arabic, Dar Ihya al-turath al-`arabi, Beirut).

আবার ইবনে হাযর আল আসকালানির মতে হযরত ফাতেমা (রাঃ) আয়েশা (রাঃ) থেকে ৫ বছর বড় ছিলেন। আর ফাতেমা জন্মের সময় রাসুল (সাঃ) এর বয়স ছিল ৩৫ বছর। সে হিসেবে আয়েশার জন্মের সময় মুহাম্মদ (সাঃ) এর বয়স ৪০ হবার কথা। আর তাঁদের বিয়ের সময় আয়েশা (রাঃ) ৬/৯ নয় বরং ১৪-১৫ বছর বয়স হবার কথা।

(Al-isabah fi tamyizi'l-sahabah, Ibn Hajar al-Asqalani, Vol 4, Pg 377, Arabic, Maktabatu'l-Riyadh al-haditha, al-Riyadh,1978)

বিখ্যাত স্কলার আদিল সালাহি এ ব্যপারে কি বলছেন পড়ুন:

"এ প্রশ্নটি ইসলাম এবং রাসুল (সা.)-এর ব্যক্তি চরিত্রের প্রতি আক্রমণ বৃদ্ধির সংগে সংগে বার বার উঠে আসছে। কিন্তু ইসলাম অথবা রাসুল (সা.)-এর চরিত্র এবং ব্যবহারে এমন কিছু নাই যার জন্য আমাদের ক্ষমা চাওয়ার বা বিব্রত বোধ করার প্রয়োজন আছে। তারপরও রাসুল (সা.)-এর সাথে আয়েশা (রা.)-এর বিয়ে এবং সে সময় তার বয়স প্রসংঙ্গে কিছু আলোচনা করা যেতে পারে যাতে প্রমাণ হয় এব্যপারে আদৌ অভিযোগ করার মত কিছুই নাই। এ ব্যপারে যে বর্ণনাটি সবচেয়ে বেশী উদ্ধৃত হয় তা হচ্ছে, রাসুল (সা.) যখন বিয়ের প্রস্তাব দেন তখন আয়েশা (রা.)-এর বয়স ছিল ছয় এবং তিনি যখন তাকে বিয়ে করেন তখন তার বয়স ছিল নয়। মানুষ এটাকে প্রতিষ্ঠিত সত্য বলে গ্রহন করে থাকে। কিন্তু যখন আমরা এসব বর্ণনা এবং তার সাথে সংশ্লিষ্ট সমস্ত বিষয়গুলো পরীক্ষা নিরীক্ষা করি, তখন আমরা দেখতে পাই, এসব বর্ণনা এমনকি প্রাথমিক নিরীক্ষাতেও উত্তীর্ণ হতে পারেনা।

সর্বপ্রথম আমাদের যে বিষয়টি বুঝতে হবে তা হচ্ছে, রাসুল (সা.)-এর সময় আরব সমাজের অধিকাংশই ছিল নিরক্ষর এবং খুব কম লোকই লিখতে বা পড়তে পারত। বড় বড় ঘটনাগুলোর সন তারিখ হিসেব রাখার জন্য যেখানে কোন নির্দিষ্ট ক্যালেন্ডার ব্যবহার করা হত না, সেখানে মানুষের জন্ম মৃত্যুর তারিখ হিসেব রাখার কথাতো বাদই দেয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আমরা পড়ি - রাসূল (সা.) জন্মগ্রহন করেছেন ‘হাতির বছরে’। হাতির বছর বলতে বোঝায় সেই বছর যেবার আবিসিনিয়ার সেনাপতি ইয়েমেন থেকে মক্কা এসেছিল এক বিরাট সেনাবাহিনী নিয়ে কাবা ঘর ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে। একটি বড় হাতি সৈন্য বাহিনীর সামনে মার্চ করে আসছিল - আর তাই ঘটনাটি এবং বছরটি হাতির নামে পরিচিত হয়।

রাসূল (সা.)-এর সময় আরবে মানুষের বয়স সংক্রান্ত বর্ণনাগুলো বিভ্রান্তিকর এবং অনির্দিষ্ট ছিল। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সাধারণ ধারণা হচ্ছে, খাদিজা (রা.)-এর সাথে রাসূল (সা.)-এর বিয়ের সময় রাসুল (সা.)-এর বয়স ছিল ২৫ অন্যদিকে খাদিজা (রা.)-এর বয়স ছিল ৪০। ইবনে হিশাম রচিত সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সিরাত গ্রন্থে এরকম উল্লেখ থাকলেও সে সময় রাসুল (সা.)-এর বয়স সম্পর্কে আরো দু’টি ভিন্ন বর্ণনা পাওয়া যায়। একটি বর্ণনায় বলা হয়েছে খাদিজা (রা.)-এর সাথে বিয়ের সময় রাসূল (সা.)-এর বয়স ছিল ৩০, অন্যটিতে বলা হয়েছে ২৯। সে সময় খাদিজা (রা.) বয়স কত ছিল সে সম্পর্কেও বর্ণনার বিভিন্নতা আছে - কোথাও বলা হয়েছে সে সময় তার বয়স ছিল ৩৫ কোথাও বলা হয়েছে ২৫। রাসূল (সা.)-এর সাহাবীদের মধ্যে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্যদের একজন ছিলেন রাসূল (সা.)-এর চাচাতো ভাই ইবনে আব্বাস (রা.)। তার থেকে একটি বর্ণনা পাওয়া যায়, যেখানে তিনি বলেছেন, বিয়ের সময় রাসূল (সা.) ও তার স্ত্রী উভয়ের বয়সই ছিল ২৮ বছর। খাদিজা (রা.)-এর গর্ভে রাসূল (সা.)-এর ছয়টি সন্তান জন্মগ্রহন করেছে। এদিক থেকে বিচার করলে বিয়ের সময় তার বয়স চল্লিশ ছিল এমন ধারণা করার উপায় নেই, অথচ এটাই হচ্ছে সবচেয়ে প্রচলিত বর্ণনা। প্রকৃতপক্ষে তার বয়স এর চেয়ে অনেক কম হবার কথা। তার বয়স ২৮ অথবা ২৫ ছিল এমন বর্ণনাই অনেক বেশী যুক্তিসঙ্গত মনে করা যেতে পারে।

খাদিজা (রা.)-এর জীবদ্দশায় রাসূল (সা.) আর কাউকে বিয়ে করেননি এবং তিনি খাদিজার (রা.) সাথে ২৫ বছর কাটিয়েছেন। তার ইন্তেকালের পর যখন তিনি খুবই চাপের মুখে ছিলেন, তখন একজন মহিলা সাহাবী তাকে পরামর্শ দিয়ে বল্লেন, তার বিয়ে করা উচিৎ যাতে তিনি দিনের দীর্ঘ প্রচারকাজ শেষে বাড়িতে একজন সঙ্গিনী পান এবং স্বস্তি লাভ করতে পারেন। সেই মহিলা তাকে দু’জনের কথা বল্লেন, একজন কুমারী আয়েশা অন্যজন বিধবা সাওদা। রাসূল (সা.) তাকে দুজনের কাছেই প্রস্তাব নিয়ে যেতে বল্লেন।

রাসূল (সা.)-কে নতুন বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়ার উদ্দেশ্য ছিল তার জন্য একজন সঙ্গীনি এবং স্বস্তির ব্যবস্থা করা। কিন্তু যারা বলতে চান যে আয়েশা (রা.)-এর বয়স সে সময় ছয় ছিল তারা এটা বিশ্বাস করতে বলেন যে ঐ মহিলা সাহাবীটি রাসূল (সা.)-কে মাত্র ছয় বছরের একটি বালিকার সাথে বিয়ের তথা সঙ্গ লাভের প্রস্তাব করেছিলেন। আর বয়স সংক্রান্ত ঐসব বর্ণনা যদি গ্রহন করা হয় তাহলে সন্দেহ জাগা স্বাভাবিক যে, ঐ মহিলা সাহাবীটি কি তাহলে রাসূল (সা.)-কে সঙ্গ দেয়ার কথা বলছিলেন নাকি সঙ্গ দেয়া কথা বলছিলেন তার মেয়েকে, যার বয়স তখন ছয় বছরের চেয়ে বেশী ছিল ?

বর্ণনাগুলো শুধু যৌক্তিকতার আলোকে বিচার না করে একে কিছু দালিলীক ভিত্তি প্রমাণ স্বাপেক্ষে বিবেচনা করা উচিৎ। এজন্য আমরা ইবনে ইসহাক রচিত সিরাত গ্রন্থ দেখব। আর ইবনে ইসহাক রচিত সিরাত গ্রন্থ হচেছ সমস্ত সিরাত গ্রন্থগুলোর ভিত্তি এবং সবচেয়ে নির্ভুল। সেখানে সেসব মুসলিমদের একটি তালিকা আছে, যারা ইসলামী দাওয়াতের শুরুর বছরগুলোতে ইসলাম গ্রহন করেছিলেন। সেই তালিকাটিতে প্রায় পঞ্চাশ জন মুসলিমের নাম আছে। যার মধ্যে আবু বকরের দুই কন্যা আসমা এবং আয়েশার নামও অন্তর্ভুক্ত আছে। সেখানে এটাও যোগ করা আছে যে তিনি সে সময় ছোট ছিলেন। এই তালিকায় আয়েশার নাম এসেছে বিশ নম্বরে। কিন্তু আমরা এই ক্রমের উপর তেমন গুরুত্ব আরোপ করবনা। আমরা যে বিষয়টির উপর গুরুত্ব দেব তা হচ্ছে, এই তালিকার সমস্ত মুসলিমই ইসলাম গ্রহন করেছিলেন নবুয়্যতের পঞ্চম বছরের আগে। কেননা ঐ বছরই আবিসিনিয়ায় মুসলমানদের প্রথম হিজরত সংঘঠিত হয় এবং ঐ তালিকায় এমন অনেকের নাম ছিল যারা এই হিজরতে অংশগ্রহন করেছিলেন। তাই বলা যায় পঞ্চম বছরে বা তার পূর্বে আয়েশা (রা.) ছোট ছিলেন, কিন্তু নিশ্চয় ততটা বড় ছিলেন যাতে তার নাম একটি নতুন দাওয়াতে বিশ্বাস স্থাপনকারীদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। তার বয়স কত ধরে নিতে পারি আমরা ? নিশ্চয় মনে করা ঠিক হবে না যে তার বয়স ২ অথবা ৪ অথবা ৫ ছিল আর তারপরও তাকে কীর্তিমানদের নামের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। তাই যদি হত তাহলে তালিকার পঞ্চাশজনের অন্যান্য সকলেরই যত বাচ্চা কাচ্চা ছিল সকলেরই নাম সেখানে অন্তর্ভুক্ত করা হত। আসলে তিনি নিশ্চয় এতটা বড় ছিলেন যাতে তাকে ধর্ম পরিবর্তন করা বা নতুন ধর্ম গ্রহন করা- এই মাত্রার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারেন বলে উল্লেখ করা যায়। এই হিসেবে লোকে যদি তাকে অনেক ছোট বলার প্রতি গুরুত্বারোপ করতে চায়, তাহলেও তার বয়স ১০ অথবা ৮ এর কম হবার কথা না।

এখন আমাদের দেখতে হবে এর কত বছর পর তার বিয়ে হয়েছিল। আমরা জানি তার বিয়ে হয়েছিল রাসূল (সা.) এবং সাহবীদের মদিনায় স্থায়ী হবার পর, অর্থাৎ, নবুয়্যতের ১৩ কিংবা ১৪ তম বছরে। সাধারণ অংক কষলে দেখা যাবে যখন রাসূল (সা.)-এর সম্ভাব্য স্ত্রী হিসেবে তার নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল তখন তার বয়স ১৪-এর কম হতে পারেনা বা অন্যভাবে বলা যায় রাসূল (সা.)-এর সাথে বিয়ের সময় তার বয়স ১৭-এর কম হতে পারেনা। এমনকি প্রবল সম্ভাবনা আছে যে তার বয়স আসলে আরও বেশী ছিল, সম্ভবত ১৯।

এখন কেউ প্রশ্ন তুলতে পারে রাসূল (সা.) ৫৩ অথবা ৫৪ বছর বয়সে ১৭ বা ১৯ বছরের এক তরুণীকে বিয়ে করলেন কেন? এটা বুঝতে হলে আমাদের একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে আমরা সামাজিক রীতি নীতিকে অপর একটি ভিন্ন সমাজের জন্য প্রযোজ্য করতে পারিনা- এমনকি যদি দু’টি সমাজ একই সময়েরও হয়। তাই আমেরিকার সামাজিক রীতি নীতি আফ্রিকা, মালয়েশিয়া বা জাপানে প্রযোজ্য নয়। আবার এদের কোন দেশেরটিই অন্য আর একটি দেশের জন্য প্রযোজ্য নয়। সেসময়ের আরবের লোকেরা একজন লোক ও তার স্ত্রীর মধ্যে বয়সের পার্থক্যের তেমন কোন গুরুত্ব আছে বলে মনে করত না। এখানে উমর ইবনে খাত্তাব (রা.) ও তার মেয়ে হাফসার কথা তুলে ধরা যেতে পারে। যখন তার মেয়ের তালাক হয়ে গেল তখন উমর (রা.) আবু বকর (রা.)-কে তার মেয়ের সাথে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন, যেখানে উমর (রা.) নিজেই আবু বকরের (রা.) চেয়ে ১০ বছরের ছোট ছিল। যদি বিয়েটি হত তাহলে স্বামী স্ত্রীর বয়সের পার্থক্য ত্রিশের কম হতনা। তারপরও উমর ভাবছিলেন এটি একটি চমৎকার এবং প্রীতিকর জুটি হতে পারে। যখন আবু বকর এ প্রস্তাবের জবাব দিতে দেরী করছিলেন তখন তিনি উসমানকে (রা.) প্রস্তাব দেন, যে উমরের (রা.) চেয়ে মাত্র কয়েক বছরের ছোট ছিল। কিন্তু উসমানের (রা.) বিয়ে না করার একটি কারণ ছিল, ফলে শেষে রাসূল (সা.)-এর সাথে উমরের কন্যা হাফসার বিয়ে হল। রাসূল (সা.) আবু বকরের সমবয়সী বা তার কিছূটা বড় ছিলেন। আসল কথা হল তখন বয়সের পার্থক্যকে গণনায় ধরা হত না।"

(বিশিষ্ট স্কলার আদিল সালাহি এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে উপরোক্ত বক্তব্য আরব নিউজে প্রকাশিত হয় ৭ মার্চ ২০০৩ তারিখে।) মুসলিম বিশ্বের একজন বড় স্কলার হিসাবে তার উপরোক্ত বক্তব্য বিশেষভাবে বিবেচনার দাবী রাখে। তিনি হাদীসকে অস্বীকার করেননি। বরং সংগ্রাহকেরা দুয়েকটি ভুল হাদীস সংগ্রহ করেছেন মর্মে অভিমত দিয়েছেন।

এটা বলাই বাহুল্য যে, ইসলামে শিশু বা নাবালিকা বিবাহ নিষিদ্ধ। সুরা নিসার ৬নং আয়াত, ২১নং আয়াত ছাড়াও সুরা আর রোম এর ২১নং আয়াত সমূহ এর প্রমাণ। আর নবী করিম কোরআন-বিরুদ্ধ কোন কাজ করবেন, এটা ভাবাই যায় না। শারীরিক ও মানসিক দিক দিয়ে পূর্ণ সক্ষম হলে ইসলামের দৃষ্টিতে তাকে সাবালিকা বলা যায়। যার উপর নামাজ রোজা ও পর্দা ফরজ হয়ে যায়। আমরা চোখ বুজেই ধরে নিতে পারি, হযরত আয়েশার বিয়ে সাবালিকা অবস্থায়ই হয়েছিল। তবে বিয়ের সময় তার বয়স কম ছিল- এটা স্বীকৃত। তত কম নয়, যতটা বলা হচ্ছে। তিনি পুতুল নিয়ে বান্ধবীদের সাথে খেলেছেন মর্মে জানা যায়। ১৫/১৬ বছরের মেয়েরাও পুতুল নিয়ে খেলেন। এমনকি তার চাইতে বেশী বয়সের মেয়েরাও পুতুল নিয়ে বান্ধবীদের সাথে খেলেন। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। আবু বকরের আদরের কন্যা ১৫/১৬ বৎসর বয়সেও পুতুল নিয়ে খেলতেই পারেন। তা দিয়ে তার বয়স বিবাহ অযোগ্য ছিল এমনটা বলা যায় না।

হাদীস বর্ণনাকারীদের মধ্যে হযরত আয়েশা অন্যতম। তার ছিল প্রখর স্মৃতিশক্তি। তিনি নিজে কখনোই বলেননি যে, মহানবীর সাথে বিয়েতে বয়স কম হওয়ার দরুন তার কোন দাম্পত্য সংকট হয়েছিল। বরং তার বর্ণিত হাদীসে আমরা ঠিক বিপরীতটাই দেখতে পাই। তারা উভয়ে উভয়কে দারুন পছন্দ করতেন এবং সুখী দম্পতি ছিলেন। হযরত আয়েশা ২২১০ টি হাদীস বর্ণনা করেছেন। দাম্পত্য ও মেয়েলী বিষয়ে উম্মতের জন্যে দিকনির্দেশনা দেয়ার জন্যে এই বয়সের স্ত্রীর প্রয়োজন ছিল, যিনি মহানবীর মৃত্যুর পরও দীর্ঘ সময় ধরে মানুষকে হেদায়েত করেছেন। নবীর বানী প্রচার করে ইসলামের ইতিহাসে এক অনন্য অবদান রেখে গেছেন।

মহানবীর প্রতিটি বিয়ের একটা উদ্দেশ্য ছিল এবং তার মধ্যে কল্যাণ নিহিত ছিল। তিনি পেডোফাইল বা শিশুকামি ছিলেন না, যেটা নাস্তিকেরা তার বিরুদ্ধে বলে বেড়াচ্ছেন। তিনি প্রথম যৌবনেই তার চাইতে বেশী বয়সের মহিলা বিবি খাদিজাকে বিবাহ করেছিলেন। অল্প বয়েসী হলেও প্রখর বুদ্ধি ও স্মৃতিশক্তি সম্পন্না আয়েশা শারীরিক ও মানসিকভাবে সক্ষম ছিলেন বলেই মহানবী তাকে বিয়ে করেছিলেন। মহানবীর সাথে বিয়ের আগেই আয়েশার আরেকজনের সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছিল। আবু বকর ও আয়েশা ইসলাম গ্রহন করায় ঐ বিয়ে ভেঙ্গে যায়। শিশু হলে তো বিয়ে ঠিক হতো না। মক্কার কাফেররা মহানবীর বিরুদ্ধে সবধরনের অভিযোগ করলেও পিডোফিলিয়ার অভিযোগ কোনদিন করেনি। কোরআনের নিদের্শ অনুযায়ী ৬/৭ বছরের শিশু-কিশোরের সম্মতি/অনুমতি/ অনুমোদন দেয়ার, আইনি চুক্তি/ অঙ্গীকার করার ক্ষমতা সামর্থ্য ও নিজের সম্পদের রক্ষনাবেক্ষন করার মত ক্ষমতা সামর্থ্য থাকে না। এরূপ ক্ষমতা থাকলেই সে বিয়ের বয়সে পৌঁছে। আল-কোরআনে সেরকম নির্দেশনাই আছে।

তবে পৃথিবীতে সব মানুষ একই রকম শারীরিক গঠন ও বুদ্ধি নিয়ে জন্মায় না। ব্যতিক্রমী অনেকেই আছেন। যেমন "Kim Ung-Yong" এতই প্রতিভাধর ছিলেন যে, তিনি মাত্র তিন বছর বয়সে Hanyang ইউনিভার্সিটির পদার্থবিদ্যা বিভাগের একজন সম্মানিত অতিথি ছাত্রের খাতায় নাম লিখিয়েছেন। যা সাধারনের চিন্তাও বাহিরে। শুধু তাই নয়, সাত বছর বয়সে নাসায় রিসার্চ করার জন্য আমেরিকার পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানিয়ে তার জন্মভূমি কোরিয়া থেকে তাকে সসম্মানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

এগুলো ব্যতিক্রমী ঘটনা। পৃথিবীতে এরকম ব্যতিক্রমী ঘটনা বহু আছে। অতীতেও ছিল। ৬/৯ বৎসরের কিশোরী ১৮/২০ বছরের যুবতীর মত সামর্থ্য অর্জন করে থাকলে সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু এরকম ব্যতিক্রমের কোন ঘটনার কথা কোন হাদীসে বা সিরাত গ্রন্থে পাওয়া যায়নি।

বুখারীর বর্ণিত হাদীসটি যারা অকাট্য সত্য হিসাবে মেনে নেন, তাদের যুক্তি হলো, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে অল্প বয়স্কা কিশোরী বিয়ে করা কোন অন্যায় নয়। বিয়ে করা না করা, অল্প কি বেশী বয়স্কা বিয়ে করা বা বিয়ে না করা- এগুলো নবী হওয়ার কোন শর্ত নয়। নবী সে যুগে খেজুর পাতার বিছানায় ঘুমাতেন, মাটির পাত্রে খেতেন, তাই বলে এ যুগের মানুষকেও খেজুর পাতায় ঘুমাতে হবে, মাটির পাত্রে খেতে হবে তা নয়। সে সময় আরবের মানুষের আয়ুষ্কাল কম ছিল। ৯/১০ বছরের কিশোরী বিয়ে করা স্বাভাবিক ছিল বলেই প্রতীয়মান। আয়েশা, তার মা বাবা এবং সমাজের কেউই এর বিরোধিতা করেননি। এটা অনৈতিক হলে নিশ্চয়ই প্রতিবাদ হতো। কাজেই এর জন্যে বর্তমানের নাস্তিকেরা পেরেশান হলেও কিছু যায় আসে না।

পাঠক, এ ঐতিহাসিক ঘটনা সম্পর্কে আমরা কি কোন সিদ্ধান্তে আসতে পেরেছি? একটা সিদ্ধান্তে তো আসতে পেরেছিই, তাহলো, মহানবী কোনভাবেই কোরআনের পরিপন্থী কোন কাজ করেননি। কেননা তিনি সর্বযুগের আদর্শ ব্যক্তিত্ব, কোরআনের বাস্তব প্রতিফলন। বুখারীর হাদীস বলেই তা কোরআনকে অতিক্রম করতে পারে না। আমাদের মুল সোর্স কোরআন। এরপরই বুখারী-মুসলিমের হাদীস। আল্লাহপাক আমাদেরকে সত্যটা বুঝার ক্ষমতা দান করুন। আমিন।

(সংশ্লিষ্ট গ্রন্থ, পত্র-পত্রিকা ও অন-লাইনে প্রকাশিত বিভিন্ন লেখার সহায়তায় রচিত)

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +৯/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ রাত ১০:১২

ভয়ংকর বিশু বলেছেন: আরব মানুষ আগাগোড়াই বিকৃত, এদের দিয়ে সবই সম্ভব।

২| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ রাত ১০:২৬

এন জে শাওন বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ রাত ১০:২৬

এন জে শাওন বলেছেন: ধন্যবাদ

৪| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ রাত ১০:৫৭

হানিফঢাকা বলেছেন: These hadith books contradicts themselves and also contradicts with Quran. Even then you can not reject it because of your blind belief. These hadiths are never authorized by Allah or by the prophet.
By reading these hadith, I have impression that these so called Imam severely insulted the prophet and did mockery to Quran.

Regarding the age of Ayesha, If you believe that the prophet never disobeyed Quaranic command, then please refer to the Quran what Allah says about marriageable age for women. Then you will find answer (as you lastly mentioned).

৫| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:১৮

সাফি আব্দুল্লাহ বলেছেন: এত কিছু বললেন। আনেক তথ্য দিলেন। কিন্তু আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত দিতে পারলেন না যে বিয়ের সমায় হযরত আয়েশার বয়স কত ছিল। অপনি অনেক কিছু জানার পরও সুনিদৃষ্ট্র নন। তাহলে বিধর্মীরাতো বিভ্রান্তি ছড়াবে।

৬| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:৫৯

হারুনর রশিদ কায়সার বলেছেন:
শ্রদ্ধেয়
এই পোষ্টটি অনেক ভালো লেগেছে । অনেক ধন্যবাদ । আশা করি এই রকম পোস্ট আপনার কাছ থেকে আরো পাবো । জনপ্রিয় নিউজ সাইট http://www.onn24.com এ আমি চিফ রিপোর্টার হিসেবে দায়িত্বরত । আমাকে আপনার লিখাগুলো নিয়মিত পাঠাবেন । আমি তা প্রকাশনার ব্যাবস্থা করবো । আমার ইমেইলঃ- [email protected]

১৫ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:৪৬

আনোয়ার আলী বলেছেন: সাথে থাকার জন্যে অনেক ধন্যবাদ। লেখা অবশ্যই পাঠাব। ভাল থাকবেন।

৭| ০৫ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ২:০০

বালক বন্ধু বলেছেন: আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
প্রিয় আনোয়ার আলী ভাই!
চমৎকার কাজ করেছেন। বেশ তথ্যবহুল একটি পোষ্ট তৈরী করেছেন। সবটুকু পড়তে পারিনি। প্রিয়তে নিয়ে রাখলাম। সময় করে বাকিটুকু শেষ করবো ইনশাল্লাহ।
এই ধরেনর পোষ্ট ভবিষ্যতেও চালিয়ে যাবেন বলে আশা রাখছি!

৮| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:১৫

Jahirul Sarker বলেছেন: এবার দেখি নাস্তিকরা কী বলে!!!!!

৯| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৫

হাসান নাঈম বলেছেন: যারা এই বিয়ে নিয়ে খুব বেশী পেরেশান তাদের কে প্রশ্ন করা যেতে পারে - ১৪শ বছর আগে নয় মাত্র গত শতাব্দিতে রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন ম্রিনালীনি দেবীকে বিয়ে করেন তখন তার বয়স কত ছিল?

আসলে যারা বিরোধীতা করবে তারা যুক্তি তর্কতো নয়ই এমনকি নিজের চোখে দেখেও মানতে পারে না। স্বরণ করুন ফেরাউন যখন মুসা(আ।) কে ধাওয়া করে নীল নদের পারে পৌছেছিলেন তখন নিজ চোখেই দেখছিলেন নবীর মুজিজায় নীল নদের মাঝে বারটি রাস্তা হয়ে গেছে। তখনও তার হুশ হয় নাই -সেই রাস্তা ধরেই সে নবীকে হত্যার জন্য এগিয়ে গিয়েছিল। সুতরাং যে বিতর্ক করবে তাকে বুঝান সম্ভব না।

তারপরও তথ্যবহুল পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।

১০| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৩:৫৪

মোহাম্মদ মুন্না BD বলেছেন: আলোচনাটা লম্বা করলেন কিন্তু আয়েশার বর্ণিত হাদিস এড়িয়ে গেলেন, যেখানে আয়েশা বিয়ের সময় নিজের বয়স বয়ান করেছেন। নিচে রেফারেন্স দেয়া হলো:

Sahih Bukhari

Narrated Aisha: The Prophet engaged me when I was a girl of six (years). We went to Medina and stayed at the home of Bani-al-Harith bin Khazraj. Then I got ill and my hair fell down. Later on my hair grew (again) and my mother, Um Ruman, came to me while I was playing in a swing with some of my girl friends. She called me, and I went to her, not knowing what she wanted to do to me. She caught me by the hand and made me stand at the door of the house. I was breathless then, and when my breathing became Allright, she took some water and rubbed my face and head with it. Then she took me into the house. There in the house I saw some Ansari women who said, "Best wishes and Allah's Blessing and a good luck." Then she entrusted me to them and they prepared me (for the marriage). Unexpectedly Allah's Apostle came to me in the forenoon and my mother handed me over to him, and at that time I was a girl of nine years of age. Volume 5, Book 58, Number 234

Narrated 'Aisha: I used to play with the dolls in the presence of the Prophet, and my girl friends also used to play with me. When Allah's Apostle used to enter (my dwelling place) they used to hide themselves, but the Prophet would call them to join and play with me. (The playing with the dolls and similar images is forbidden, but it was allowed for 'Aisha at that time, as she was a little girl, not yet reached the age of puberty.) (Fateh-al-Bari page 143, Vol.13) Volume 8, Book 73, Number 151

Sahih Muslim

Chapter 10: IT IS PERMISSIBLE FOR THE FATHER TO GIVE THE HAND OF HIS DAUGHTER IN MARRIAGE EVEN WHEN SHE IS NOT FULLY GROWN UP.

'A'isha (Allah be pleased with her) reported: Allah's Messenger (may peace be upon him) married me when I was six years old, and I was admitted to his house at the age of nine. She further said: We went to Medina and I had an attack of fever for a month, and my hair had come down to the earlobes. Umm Ruman (my mother) came to me and I was at that time on a swing along with my playmates. She called me loudly and I went to her and I did not know what she had wanted of me. She took hold of my hand and took me to the door, and I was saying: Ha, ha (as if I was gasping), until the agitation of my heart was over. She took me to a house, where had gathered the women of the Ansar. They all blessed me and wished me good luck and said: May you have share in good. She (my mother) entrusted me to them. They washed my head and embellished me and nothing frightened me. Allah's Messenger (, may peace be upon him) came there in the morning, and I was entrusted to him. Book 8, Number 3309.

'A'isha (Allah be pleased with her) reported: Allah's Apostle (may peace be upon him) married me when I was six years old, and I was admitted to his house when I was nine years old. Book 8, Number 3310

'A'isha (Allah be pleased with her) reported that Allah's Apostle (may peace be upon him) married her when she was seven years old, and he was taken to his house as a bride when she was nine, and her dolls were with her; and when he (the Holy Prophet) died she was eighteen years old. Book 8, Number 3311।

১১| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:৪২

বাকরখানি বলেছেন: নাস্তিক গাধার বাচ্চাগুলার কথা আর কি কমু, যেই হাস্যকর যুক্তি দেখাইসেন, ধার্মিক মুসলমানরাও আফনের উপ্রে বিরক্ত হৈব। অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী এই জন্যই বলা হয়।

১২| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১২:১৮

মোহাম্মদ মুন্না BD বলেছেন: সহি হাদিস থেকে প্রমাণ দিলাম। জানি মানবেন না, পাল্টা যুক্তি ও দিতে পারবেন না। কারণ, মাইনকার চিপায় পড়ে গেছেন। মুহাম্মদের চরিত্র বাঁচাতে হলে আপনাদের মা আয়েশাকে মিথ্যাবাদী জোচ্চোর বানাতে হবে। এই অবস্থায় গালাগালি আর চাপাতির ব্যবহার ই আপনাদের ধর্ম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.