![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি অতি সাধারন একজন মানুষ। প্রকৃতিগতভাবে একটু নিঃসঙ্গ ধরনের। এমন কি অনেকের মাঝেও একা। পেশায় একজন চিকিৎসক। মানুষের উপকার হয় এমন যেকোন কাজে আমি আছি। আপনারা ডাকলে ইনশাল্লাহ পাশে থাকব।
আমাদের দেশে ল্যাবরেটরি ইনভেস্টিগেশন নিয়ে কিছু সন্দেহবাতিকগ্রস্ততা রয়েছে কমবেশী সবার মধ্যেই।
রোগী এবং তাদের স্বজনরা প্রথমেই আঙ্গুল তোলেন চিকিৎসকদের দিকে। তাদের অভিযোগ, কমিশনের লোভে চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করিয়ে থাকেন, পছন্দমত করতে দেন।
অভিযোগ অসত্য বলার কোন সুযোগ নেই।
অনেক চিকিৎসক আসলেই এসব কাজে যুক্ত। কিন্তু মোট চিকিৎসকের সংখ্যার তুলনায় এদের পরিমান কম। কম হোক আর বেশীই হোক, কাজটা আনইথিক্যাল।
এখন, একটু নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি আসুন।
চিকিৎসাবিজ্ঞানে একজন মানুষ রোগাক্রান্ত হলে, তার রোগ নির্ণয়ের কিছু ধাপ রয়েছে।
প্রথমত,
রোগীর রোগের ইতিহাস বা হিস্ট্রি।
রোগের উপসর্গ জানার পর চিকিৎসক প্রাথমিকভাবে ধারনা করেন এই রোগীর কি কি রোগ হতে পারে।
দ্বিতীয়ত,
প্রথম ধাপে প্রাপ্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে শারীরিকভাবে রোগীকে পরীক্ষা করে দেখা। এই ধাপ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে চিকিৎসক তার রোগীর একটা ডায়াগনসিসে আসেন, যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় প্রভিশনাল ডায়াগনসিস। এবং একই সাথে, তার প্রভিশনাল ডায়াগনোসিসের কাছাকাছি সম্ভাব্য কিছু ডায়াগনসিসে আসেন, যাদের বলা হয় ডিফারেন্সিয়াল ডায়াগনসিস।
এটা হল তৃতীয় ধাপ।
এর পরের ধাপ মানে চতুর্থ ধাপ হল, ডায়াগনোসিস কনফার্ম করা ও ডিফারেন্সিয়াল ডায়াগনোসিস এক্সক্লুড করা। এখানেই আমরা ইনভেস্টিগেশন এর সহায়তা নেই।
আসুন দেখি কি ইনভেস্টিগেশন চিকিৎসক কি পারপাসে দিয়ে থাকেন-
১. কিছু করান ডায়াগনোসিস কনফার্ম করতে। কারন, কনফার্ম না হয়ে ঔষধ দিলে আপনি নিজেও খেতে চাইবেন না নিশ্চই।
২. কিছু করান ডিফারেন্সিয়াল ডায়াগনসিস এক্সক্লুড করতে। কারন প্রাথমিক ডায়াগনসিস একেবারে সবসময় একুরেট নাও হতে পারে। কখনো বা অন্য কোন রোগের কাছাকাছি মনেও হতে পারে, কারন একই উপসর্গ নিয়ে অনেক রোগ দেখা দিতে পারে। প্রতিটি রোগের জন্যই কিছু আলাদা আলাদা ইউনিক ল্যাব টেস্ট আছে, যেটা দিয়ে আমরা রোগগুলোকে নিশ্চিতভাবে আলাদা করতে পারি।
৩. কিছু করান, তিনি যে ঔষধ আপনার রোগের চিকিৎসায় দেবেন, তা আপনার শরীরে কতটা মানাবে তা জানতে। মনে করুন, আপনার কিডনি আগে থেকেই একটু ম্যালফাংশন্ড থাকতে পারে, যেটা আপনার দৃশ্যত কোন সমস্যার সৃস্টি করছে না ( বলা হয়ে থাকে, কেন যেন ২ কিডনীর ৫ ভাগের ১ ভাগও যদি ইনট্যাক্ট থাকে, আপনার শরীরে তা লক্ষনীয় কোন রোগের আলামত দেখাবে না! এজন্য বেশিরভাগ কিডনী রোগীরই রোগ ধরা পড়ে একদম শেষ পর্যায়ে!) এখন, তিনি আপনাকে, একটা ভাল ব্যথার ঔষধ দিয়ে দিলেন কিডনী ফাংশন না জেনেই, এতে আপনার কিডনী ড্যামেজ হলে আপনি তো তখন এসে তার টুটি চেপে ধরবেন। কিন্তু তিনি যদি আগেই ক্রিয়েটিনিন করাই, বলবেন কমিশনের লোভে করাচ্ছেন! বেচারাদের এখন উভয়সঙ্কট রে ভাই!!
৪. কিছু পরীক্ষা করান রোগের প্রগনোসিস বা উন্নতি-অবনতি বোঝার সুবিধার্থে। না হলে তারা কিভাবে বুঝবেন, চিকিৎসার বা ঔষধের রেস্পন্স কেমন।
বলতে পারেন, রোগীকে জিজ্ঞেস করলেই তো হয়। সব রোগ ভিজিবল উন্নতি-অবনতি দেখায় না। কিছু কিছু ব্যপার খুব সাবজেক্টিভ, রোগী টু রোগী ভ্যারি করে।
৫. অপারেশনের আগে তারা রুটিন কিছু পরীক্ষা করান রোগীর অপারেটিভ ও এনেস্থেটিক ফিটনেস জানার জন্য। আনফিট রোগী অপারেশন করতে গিয়ে কোন সমস্যা হলে, এই ইনভেস্টিগেশন বিরোধী লোকগুলোই বলবে, আপনি টেস্ট করাইলেন না কেন!!
৬. কিছু কিছু রোগের ক্ষেত্রে, যেমন হার্ট ডিজিজ, ডায়াবেটিস, বাত(রিউম্যাটিক আর্থ্রাইটিস), হেপাটাইটিস বি, সি, এইডস, কিছু ক্যান্সার ইত্যাদির ক্ষেত্রে রুটিনলি কিছু পরীক্ষা করা হয়। উদ্দেশ্য, নীরবে এই রোগগুলি শরীরে কোন মারাত্মক অবস্থার সৃষ্টি করছে কিনা তা জানা। এতে আগে রোগ ধরা গেলে চিকিৎসা দেয়া সহজ হয়, রোগীর উপকারও বেশী।
এখন কথা হল, চিকিৎসকবৃন্দ রোগীকে খুলে বলেন না ঠিকমত যে কি তার রোগ, কোন পরীক্ষা কিসের জন্য আর কোন ঔষধ কেন দেয়া হল, কোনটার কি সাইড এফেক্ট। সমস্যা হলে কি করতে হবে।
এজন্যেই এত এত ভুল বুঝাবুঝি।
ইনভেস্টিগেশনের পার্সেন্টেজ নেন মোট সংখ্যার তুলনায় খুবই কম চিকিৎসক। এদের জন্যই এত বদনাম আমাদের।
তাহলে এখানে আপনার আমার করনীয় কি??
রোগী এবং রোগীর স্বজন হিসেবে,
প্রথম কাজ হল ধৈর্যশীল হওয়া। সবসময় পরমকরুনাময়ের কাছে সুস্থতার প্রার্থনা করা এবং এই প্রার্থনা করা যে, তিনি যেন সেই চিকিৎসকের কাছে সহজেই আমাদের পৌছে দেন, যার উছিলায় তিনি আমাদের সুস্থ করবেন।
এরপর, যার কাছে চিকিৎসার জন্য যাব, তার উপর আস্থা রাখা। তার পরামর্শমত ঔষধ ও পথ্য গ্রহণ করা।
চিকিৎসকের কাছ থেকে নিজের রোগ সম্পর্কে জেনে নেবেন অবশ্যই। তিনি নিজ থেকে না বললে জিজ্ঞেস করবেন।
কোন পরীক্ষা কিভাবে, কোথা থেকে করবেন, কি প্রিপারেশন নিয়ে করতে হবে, কোন পরীক্ষার কি উদ্দেশ্য, কতটা জরুরী অবশ্যই জিজ্ঞেস করে জেনে নেবেন।
যে ঔষধ তিনি দেবেন, সেগুলো কোনটা কেন, তা জেনে নিবেন, কি কি সাইড ইফেক্ট হতে পারে, কখন বন্ধ করতে হতে পারে ইত্যাদি জেনে নেবেন।
জেনে নেবেন কি কি উপসর্গ দেখা দিলে আপনাকে পুনরায় চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হবে, কখন ইমার্জেন্সী চিকিৎসা নিতে হবে, কোথায় নিতে হবে জেনে নেবেন।
সবচেয়ে বড় কথা, মন খুলে আপনার রোগসংক্রান্ত সব কথা বলুন, লজ্জার ভয়ে কিছু লুকোবেন না। প্রয়োজনে খানিকটা সময় নিন, একটু আন্তরিক হোন, চিকিৎসকের উপর আস্থা রাখুন।
চিকিৎসক হিসেবে,
প্রথম কাজ হল ধৈর্যশীল হওয়া। সবসময় পরমকরুনাময়ের কাছে নিজের সুস্থতার প্রার্থনা করা এবং এই প্রার্থনা করা যে, তিনি যেন আমাদের সেই জ্ঞান ও দক্ষতা দান করেন, যাতে আমাদের রোগীদের আমরা ভাল সেবা দিতে পারি। এবং তিনি যেন আমাদের রোগীদের সুস্থ করেন।
এরপর কাজ হল, রোগীর উপর আস্থা রাখা যে তারা পরামর্শমত ঔষধ ও পথ্য গ্রহণ করবেন। এবং তাদের এবিষয়ে কাউন্সিলিং করা।
রোগীর রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবেন অবশ্যই। কি হয়েছে, কেন হয়েছে, কি চিকিৎসা, চিকিৎসা নিলে কি লাভ, না নিলে কি অসুবিধা, চিকিৎসার কি অপশন আছে, সাইড ইফেক্ট কি, কিভাবে প্রিভেনশন করবে ইত্যাদি সম্পর্কে অবহিত করবেন। রোগী নিজ থেকে না জিজ্ঞেস করলেও বলবেন।
কোন পরীক্ষা কিভাবে, কোথা থেকে করতে হবে, কি প্রিপারেশন নিয়ে করতে হবে, কোন পরীক্ষার কি উদ্দেশ্য, কতটা জরুরী অবশ্যই বিস্তারিত বলবেন। কেন কোন পরীক্ষা পূর্বে করা থাকলেও আপনি আবার করাতে চাচ্ছেন, তাও বলে দেবেন।
যে ঔষধ দেবেন, সেগুলো কোনটা কেন, তা বলবেন, কি কি সাইড ইফেক্ট হতে পারে, কখন বন্ধ করতে হতে পারে ইত্যাদি বলবেন।
এটাও বলে দেবেন যে, কি কি উপসর্গ দেখা দিলে পুনরায় চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হবে, কখন ইমার্জেন্সী চিকিৎসা নিতে হবে, কোথায় নিতে হবে ইত্যাদি।
সবচেয়ে বড় কথা, মন দিয়ে রোগীর কথা শুনুন, তাকে খানিকটা সময় দিন, একটু আন্তরিক হোন, রোগীর অর্ধেক রোগ এমনিতেই ভাল হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
পরম করুনাময় আমাদের সবাইকে সৎ ও সুস্থ রাখুন।
২| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:৫২
চুরি যাওয়া আগুন... বলেছেন: ল্যাবরেটরি ইনভেস্টিগেশন যে কত জরুরি তা বোধহয় সবাই বোঝে। কিন্তু বাস্তব হল আপনি যেটা বলেছেন তার পুরো উল্টো। মোট চিকিৎসকের সংখ্যার বেশির ভাগই এই রোগে আক্রান্ত।
১. ২৫% চিকিৎসক সৎ এবং এরা বিনা দরকারে ল্যাবরেটরি ইনভেস্টিগেশন প্রেসক্রাইব করেন না।
২. ২৫% চিকিৎসক সম্পুর্ন অসৎ। এরা দরকার থাক না থাক ল্যাবরেটরি ইনভেস্টিগেশন প্রেসক্রাইব করবেনই করবেন।
৩. ৫০% চিকিৎসক উপরোক্ত ডাক্তার দের মাঝামাঝি। এরা না দরকার থাকলে প্রেসক্রাইব করে না তবে করলে সাথে সাথে কয়েকটা অপ্রয়োজনীয় টেস্ট দিয়ে দেন।
*I'm sorry if I offended you. This is my personal experience as I belong to a family involved in medical business since 1960.
৩| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:১০
মঞ্জু রানী সরকার বলেছেন: ডাক্তারদের তো টাকা ইনকাম করতে হবে
৪| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩৮
আত্মমগ্ন আিম বলেছেন: ধন্যবাদ কাল্পনিক_ভালোবাসা।
৫| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:০৫
আত্মমগ্ন আিম বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে, চুরি যাওয়া আগুন।
আপনার অবজার্ভেশন ভালই।
অপ্রয়োজনীয় ইনভেস্টিগেশন ও ঔষধের ব্যবহার কমাতে চিকিৎসক এবং রোগী এই দুই পক্ষ এগিয়ে এলেই চলবে না।
আরো একটা দিক ভেবে দেখতে হবে। যে ডায়াগনস্টিক কম্পলেক্সে চিকিৎসক চেম্বার করেন, তারা তার কাছ থেকে বেনিফিট চায়। তাদের লাভ না হলে, তারাও চিকিৎসকদের উচ্ছেদের পায়তারা করেন। এই সমস্যার কোন সমাধান কি দিতে পারবেন?
যে ৫০% এর কথা আপনি বলেছেন, এরা এই গ্রুপের লোক। তাদের হাত বাধা কর্পোরেট স্বাস্থ্য ব্যবসায়ীদের কাছে।
তাই এদের নিয়ন্ত্রন না করলে কোন লাভ হবেনা।
যে ২৫% একেবারে অসৎ, তাদের কথা বলাই বাহুল্য!
যে ২৫% সৎ, তাদের আবার রোগীর পরিমান হাতে গোনা যায়। কারন, ইনভেস্টিগেশন না দিলে চেম্বার হতে উৎখাত হতে হয়, ভাল জায়গায় চেম্বার পাওয়া যায় না! একেবারে হাইলি কোয়ালিফাইড ও এফিসিয়েন্ট চিকিৎসক না হলে এভাবে চেম্বার টিকিয়ে রাখা কঠিন।
৬| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:০৭
আত্মমগ্ন আিম বলেছেন: মঞ্জু রানী সরকার, টাকা ইনকাম করতে হবে, ঠিক। তবে চিকিৎসা পেশা এমন একটি পেশা, যেখানে চাইলে এবং পরিশ্রম করলে এক জেনারেশনেই সৎ পথেই অনেক টাকা ইনকাম করা যায়।
৭| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১২:৫৭
মহান অতন্দ্র বলেছেন: সহমত।
৮| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৯:২১
ইমরান আশফাক বলেছেন: সহমত।
৯| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৪
ডাঃ মারজান বলেছেন: খুবই ভালো একটা পোস্ট। নিজে সৎ থাকলে সফলতা আসবেই। এই পোস্ট অনেকের ভুল ধারণা ভাঙবে। সবাই একরকম না। কিছু মানুষ এখনও মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:৩৫
কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: খুবই চমৎকার পোস্ট!