![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি অতি সাধারন একজন মানুষ। প্রকৃতিগতভাবে একটু নিঃসঙ্গ ধরনের। এমন কি অনেকের মাঝেও একা। পেশায় একজন চিকিৎসক। মানুষের উপকার হয় এমন যেকোন কাজে আমি আছি। আপনারা ডাকলে ইনশাল্লাহ পাশে থাকব।
ফুপু মারা গেলেন গতকাল।
৫ মাস আগে মাঝে মাঝে মাথাব্যথা ও বমিভাব উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া। সন্দেহ থেকে ব্রেইনের এম আর আই করানো, ব্রেইনে সেকেন্ডারীস ধরা পড়ল। আমরা ঢাকা নিয়ে এলাম, এপোলো-ইউনাইটেডে অনেক স্যারদের দেখালাম, পেট সি টি করালাম, বোনে ইনভলভমেন্ট পাওয়া গেল খানিকটা। প্রাইমারী খুজে পাওয়া গেলনা। তিনিও কেমো দিতে রাজি হলেন না। মাসখানেক ধরে লিভার বড় হয়ে যাচ্ছিল-হেপাটিক মেটাস্টাসিস হয়ে গেছে।দুই পায়ে পানি, খাওয়া দাওয়া বন্ধ।
কোনভাবে প্যালিয়েটিভ ম্যানেজম্যান্টের চেষ্টা। কিন্তু, এখনো এদেশে প্যালিয়েটিভ কেয়ার পূর্ণতা পায়নি।
আমরা কিছুই করতে পারলাম না!
ঠিক তিন বছর আগের কথা।
জ্যাঠা মারা গেলেন এপোলোর আই সি ইউ তে থাকা অবস্থায়।
স্টেজ ফোর স্টমাক ক্যান্সার। অপারেশন করার জো নেই। ধরা পড়েছিল আরো ২ বছর আগে। লক্ষণ শুধুমাত্র একটু আধটু খাবারে অরুচি আর সামান্য দুর্বলতা। উনাকে কেমোথেরাপি দেয়া হয়েছিল প্যালিয়েটিভ ট্রিটমেন্টের অংশ হিসেবে।
শেষ পর্যন্ত কিছুই করতে পারলাম না আমরা।
এরকম সহস্র ঘটনা আছে বাংলাদেশে। নীরবে ক্যান্সার নামক ঘাতকের হাতে ঝরে যাচ্ছে অনেক মূল্যবান প্রান। ঝরে যাবার আগে কোন কোন পরিবার সহায় সম্বলহীন হচ্ছে।
কে এর দায় নেবে??
দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা জনবান্ধব নয় কখনোই। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা হল পলিটিশিয়ান আর আমলাবান্ধব।
অভিযোগ আছে, এই সিস্টেম আমলার বিদেশ যাওয়া আর যন্ত্রপাতি কেনার নামে পকেট ভরার ব্যবস্থা করা আর গালভরা বুলিতে নামেমাত্র ঔষধ বিতরন করে ভোট পলিটিশিয়ানের ঝুলিতে জমা করার জন্য পারফেক্ট।
আমরা চিকিৎসকরা হলাম এই সিস্টেমের কামলা। আর জনগণ সিস্টেমের বাই প্রোডাক্ট হিসেবে পায় যৎসামান্য কিছু সেবা।
অনেক ক্ষোভের সাথে কথাগুলো বললাম।
কারন,
নন কমিউনিকেবল ডিজিজগুলো, যেমন-ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, ক্যান্সার ইত্যাদি দিন দিন বাড়ছে। দিন দিন এই রোগগুলোর চিকিৎসা খরচ বাড়ছে। জনগন চিকিৎসা নিলেও ঔষধ কিনে খেতে পারেনা।
স্বাস্থ্যখাতে আমাদের বরাদ্দ কত? জিডিপির ১% মাত্র! মোট বাজেটের ৭% মাত্র। তাও গড় হিসেবে।
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন গাইডলাইন অনুযায়ী জনপ্রতি বাৎসরিক স্বাস্থ্যখাতে জাতীয় ব্যয় হবার কথা ৩৪ মার্কিন ডলার।
বাংলাদেশ বরাদ্দ দিচ্ছে মাত্র ৫ মার্কিন ডলার!!
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে স্ট্যান্ডার্ড স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় মাথাপিছু বাৎসরিক ব্যয় ন্যূনতম ২৪ মার্কিন ডলার।
ভাবছেন ক্যান্সারের সাথে স্বাস্থ্যখাতের ব্যয়ের কি সম্পর্ক?
দেশে বর্তমানে নন কমিউনিকেবল ডিজিজের বার্ডেন বা ভার কত কোন আইডিয়া আছে? দিন দিন ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, দীর্ঘস্থায়ী কিডনী রোগ, ক্যান্সারের রোগী বেড়েই চলেছে। এসব রোগের চিকিৎসা ব্যয় বেশী, কোন কোন ক্ষেত্রে আজীবন। আক্রান্ত রোগীদের কর্মক্ষমতা হ্রাস করছে। ফলস্রুতিতে একদিকে কমছে জাতীয় উৎপাদন, বাড়ছে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বোঝা।
এর বিপরীতে আমাদের প্রস্তুতি কি?
জাতীয়ভাবে সুনির্দিষ্ট কোন পলিসি কি আছে আমাদের?
সবাই শুধু রোগ হলে চিকিৎসার জন্য দৌড়ান। এর আগে কৈ থাকেন? রোগ সম্পর্কে জানলে, সচেতন হলে, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নীরিক্ষা করালে রোগ যেমন প্রতিরোধ করা সম্ভব, তেমনি হয়ে গেলেও কম থাকতেই চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব। এতে রোগি ও তার পরিবারের কষ্ট যেমন কমে, আর্থিক ক্ষতিও কমে।
জনগণ তখনই সচেতন হবে, প্রয়োজনীয় প্রতিরোধমূলক সেবা নিবে, যখন দেশব্যাপী এই সব নন কমিউনিকেবল রোগের জনসচেতনতামূলক কর্মসূচী নিয়মিত হবে, স্ক্রীনিং করার পরীক্ষা-নীরিক্ষা সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী হবে।
আর এর জন্য সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। একমাত্র সরকারই পারবে দেশব্যাপী দীর্ঘমেয়াদী “নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ স্ক্রীনিং এন্ড প্রিভেনশন প্রোগ্রাম” পরিচালনা করতে।
হুমায়ূন আহমেদ স্যারের মৃত্যুর পর অনেকেই অনেক বড় বড় বুলি দিলেন। অনেকে ক্যান্সার হাসপাতাল করে ফেলতেছেন। ক্যান্সার হলে চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল করার চেয়ে ক্যান্সার সহজে ও দ্রুত ডায়াগনোসিস করার জন্য একটি আধুনিক সেন্টার তৈরী করাটা কি বেশী জরুরী নয়??
যে কোন রোগের ঔষধ প্রধানত দুই ধরনের। এক, রোগের উপসর্গ নিরাময় করে, দুই, রোগের কারন নির্মূল করে। উপসর্গ নির্মূল করে, কারন নির্মূল না করলে রোগ কখনোই পুরোপুরি সারবে না।
তাই, নন-কমিউনিকেবল এই রোগগুলোর পেছনের কারনগুলো যেমন- খাদ্যে ভেজাল, কায়িক পরিশ্রমের অভাব, সামাজিক অস্থিরতা ইত্যাদির সমাধান না করলে, এই রোগগুলো কোনদিনই ভাল হবে না।
জাতি হিসেবে আমরাও ভালভাবে এগুতে পারব না।
তাই আসুন, সচেতন হই।
রোগ সম্পর্কে জানি।
প্রয়োজনে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হই।
নিয়মিতভাবে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নীরীক্ষা করি।
ভেজালমুক্ত খাবার উৎপাদন করি ও গ্রহণ করি।
সবাই মিলেমিশে সুন্দর সামাজিক পরিবেশ তৈরী করি।
২| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:১২
আত্মমগ্ন আিম বলেছেন: মাঘের নীল আকাশ, ধন্যবাদ আপনার কমেন্টের জন্য। হাতের পাচ আঙ্গুল সমান হয়না। তাই দুঃখজনক হলেও সত্য, সব চিকিৎসক রোগীবান্ধব হয় না। চিকিৎসক হতে হলে পড়াশোনা আর মেধার চেয়েও বেশী প্রয়োজন সেবাধর্মী মানসিকতা,সহমর্মিতা। আমাদের পরিবারগুলোতেই যেখানে সেবার মানসিকতা ও সহমর্মিতার অভাব, সেখানে শুধু একটি এম সি কিউ পরীক্ষায় চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়ার সুযোগপ্রাপ্ত মানুষ কতটা মানবিক হবে, সেটাই প্রশ্ন। মেডিকেল স্টুডেন্টরা নিজেরা নিজেরা যখন মারামারি করে বিভিন্ন ইস্যুতে,বিশেষ করে রাজনৈতিক কারনে, সেগুলো খুব নির্মম হয়ে ওঠে কখনো কখনো। তাই, সব চিকিৎসক কখনোই রোগীবান্ধব হবে না, যতক্ষণ না যে কেউ চাইলেই মেডিকেলে পড়তে পারবে এমন সিস্টেম পরিবর্তন না হবে।
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:১৯
মাঘের নীল আকাশ বলেছেন: দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা জনবান্ধব নয় কখনোই। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা হল পলিটিশিয়ান আর আমলাবান্ধব।...সহমত!
সাথে সাথে চিকিৎসকরাও একটু রোগীবান্ধব হলে ভাল হয়!