নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পেশায় চিকিৎসক। এখন কাজ করছি সিলেটে। টুকটাক লিখতে ভাল লাগে বলে লিখি।

আত্মমগ্ন আিম

আমি অতি সাধারন একজন মানুষ। প্রকৃতিগতভাবে একটু নিঃসঙ্গ ধরনের। এমন কি অনেকের মাঝেও একা। পেশায় একজন চিকিৎসক। মানুষের উপকার হয় এমন যেকোন কাজে আমি আছি। আপনারা ডাকলে ইনশাল্লাহ পাশে থাকব।

আত্মমগ্ন আিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

“পারিবারিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রকল্প”

০৭ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ২:১৭


নামটা শুনে কেমন একটা অফিসিয়াল কিছু বলে মনে হয়। কিন্তু এটা যতটা না অফিসিয়াল, তার চেয়ে বেশী ক্যাজুয়াল!

আমরা সবাই চাই সুস্থ্য থাকতে, রোগমুক্ত সুন্দর জীবন কাটাতে। কিন্তু এজন্য কতটুকু প্রস্তুতি আছে আমাদের?

কেউ রোগ হলে টাকা খরচের ভয়ে ডাক্তারের কাছে যান না, ফার্মেসী থেকে ঔষধ খেয়ে ভাল হবার চেষ্টা করেন, কেউ কেউ গেলেও ডাক্তারের চিকিৎসায় আস্থা রাখতে পারেন না, কেউ চিকিৎসা নিলেও পুরো চিকিৎসা নেন না বা অবহেলা করেন।

অনেকে রোগ থেকে সুস্থ হবার পর, পুনরায় সেই রোগ যাতে না হয়, সেই ব্যবস্থা নেন না।
ফলস্রুতিতে সুস্বাস্থ্য আর পাওয়া হয় না।

অথচ, সুস্বাস্থ্য অর্জন করাটা খুব কঠিন কিছু ছিল না!
আসুন দেখি, একটা পারিবারিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রকল্প তৈরী করি।

১. প্রথমে একটা এ ফোর সাইজের সাদা কাগজ নিন।
আপনার পরিবারের সবার নাম সিরিয়ালি লিখুন।
মনে করি, আশরাফ সাহেবের পরিবারে ৬ জন সদস্য/সদস্যা রয়েছেন।
তার বাবা-মা, তিনি ও তার স্ত্রী এবং ২ সন্তান।

২. এবার প্রত্যেকের জন্য একটা করে সাদা কাগজ নিন। উপরে তাদের নাম ও জন্মতারিখ লিখুন।

♦এবার প্রথম পৃষ্ঠায় লিখুন:

♠জনাব মো আশরাফ আলী,জন্মতারিখ : ২০/০২/১৯৮০
পেশা: ব্যাংকার।
উচ্চতা : ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি, ওজন : ৯৪ কেজি
বি এম আই :
আদর্শ বি এম আই : আদর্শ ওজন :

♠বর্তমানে কি কি রোগে ভুগছেন : (মনে করুন) ডায়াবেটিস।
♠কি কি বদ অভ্যাস রয়েছে : (পান-সুপারী/জর্দা/সিগারেট ইত্যাদি) মনে করুন উনি ধুমপায়ী, দৈনিক ২০ শলাকা করে সিগারেট লাগে তার।
♠টিকাদানের ইতিহাস :
♠খাদ্যাভ্যাস :
বর্তমান আদর্শ
(কত কিলোক্যালরী) (কত কিলোক্যালরী)

বর্তমানে কোন বেলায় কি খাচ্ছেন, সেটা লিপিবদ্ধ করুন।
চিকিৎসক/ডায়েটিশিয়ানের সহযোগিতায় আপনার জন্য আদর্শ ডায়েট চার্টটি তৈরী করে নিন আপনার পরিবারের খাদ্যাভ্যাসের উপর ভিত্তি করে।

♠দৈনিক ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রমের পরিমান:
বর্তমান :
আদর্শ :

♠কি কি ঔষধ খাচ্ছেন, ডোজসহ :

♠কোন বিশেষ ল্যাব পরীক্ষা-নীরিক্ষার রিপোর্ট :

♠কোন বড় ধরনের অসুস্থতা বা অপারেশন (শিশুদের ক্ষেত্রে শিশুকালের রোগ, মহিলাদের ক্ষেত্রে গর্ভ সংক্রান্ত বিষয়াবলী আসবে) :

♠কোন চিকিৎসককে নিয়মিত দেখাচ্ছেন কি না, দেখালে নাম, বিষয়, ঠিকানা, সর্বশেষ কবে দেখিয়েছেন, পরবর্তীতে কবে যেতে হবে :

♦দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় লিখুন,

♠পারিবারিক রোগের ইতিহাস :
নিচে উল্লিখিত সবার যা যা রোগ সম্পর্কে, যতটুকু জানেন, লিপিবদ্ধ করুন।

♣বাবার দিকে,
দাদা :
দাদী :
বাবা :
চাচা :
ফুপি :
চাচাত/ফুপাত ভাই-বোন:

♣মায়ের দিকে,
নানা :
নানী :
মা :
খালা :
মামা :
মামাত/খালাত ভাই-বোন :

♣আপনার,
ভাই :
বোন :
স্ত্রী :
সন্তান :

♠কি কি ব্যাপারে আরো সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে?:

♠কি কি নতুন রোগ হবার সম্ভাবনা রয়েছে এবং কিভাবে এসব থেকে বেচে থাকা যাবে? :

নিজস্ব সব তথ্য আপনি নিজে পূরণ করতে পারলে ভাল, না পারলে কোন একজন চিকিৎসকের সহায়তা নিন। কিছু কিছু অংশ অবশ্যই চিকিৎসক পুরণ করবেন।

এভাবে পরিবারের সবার তথ্য লিপিবদ্ধ করুন।

৩. এবার ভিন্ন একটি কাগজ নিন।
এক পৃষ্ঠায় আপনার পরিবারের মাসিক আয় ও ব্যয়ের হিসেব লিখুন।
অপর পৃষ্ঠায়, স্বাস্থ্য খাতে আপনার জমা ও খরচের হিসেব লিখুন।

এবার প্রসংগ পাল্টাই।

আপনার বাসার নিকটস্থ এলাকায় একজন চিকিৎসক বাছাই করুন, যার কাছে চিকিৎসা করিয়ে আপনি সন্তষ্ট। তাকে মনে মনে আপনার পারিবারিক চিকিৎসক নিয়োগ দিন। তার উপর আস্থা রাখুন।

আপনার পরিবারের সব তথ্য নিয়ে তার শরণাপন্ন হোন।
তার ম্যাধ্যমে পরিবারের সবার জন্য এই তথ্যগুলো পূরণ করে একটি ফাইল তৈরী করুন।

এবার আপনি জানতে পারবেন কি কি খাতে আপনার কত ব্যয় করলে আপনি ও আপনার পরিবার সুস্থ থাকতে পারবেন।

এতকিছু করার পেছনের উদ্দেশ্য অনেকটা এরকম,

> আপনি সুষম খাবার এর পেছনে ব্যয় করুন, এটা আপনার বিনিয়োগ।

> প্রতিদিন শারিরীক পরিশ্রম করুন সবাই কিছু সময়, এটাও বিনিয়োগ।

> এই ফাইলে আপনার পরিবারের কার কি সম্ভাব্য ইমার্জেন্সী হতে পারে বা রোগের চিকিৎসা করতে হতে পারে, তার একটা সুন্দর আইডিয়া পেয়ে যাবেন। এতে ইমার্জেন্সীতে আপনি কোথায় কিভাবে সেবা নেবেন, সেটাও নির্ধারন করে রাখতে পারবেন। সেই সাথে রুটিন চিকিৎসায়ও আপনার সুবিধা হবে।

> পারিবারিক চিকিৎসক বিষয়টির প্রচলন আমাদের দেশে সেরকমভাবে নেই। কিন্তু এরকম একজনের পরামর্শ বিপদে-আপদে খুব প্রয়োজন হয়। আপনার আস্থা আছে, এমন একজন চিকিৎসকের সাথে সুসম্পর্ক তৈরী করুন, তার পরামর্শ বা সেবা নিন। চিকিৎসক বাছাইয়ের সময় ডিগ্রী/অভিজ্ঞতার পাশাপাশি আপনাকে সময় দেবার মানসিকতাকে প্রাধান্য দিন। আর পারিবারিক চিকিৎসক হিসেবে বাছাইয়ের জন্য একজন এম বি বি এস ডাক্তারই যথেষ্ট। বেশী ব্যস্ত বড় নামধারি চিকিৎসকের সময় দেবার প্রবনতা ও সুযোগ কম।
যাকেই নির্ধারন করুন, তার পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনে সিনিয়র কাউকে দেখান বা হাসপাতালে চিকিৎসা নিন।

> জরুরী মুহুর্তের জন্য কিছু সঞ্চয় করুন। আমরা ঘুরতে যাবার জন্য যেমন টাকা জমাই, তেমনিভাবে জরুরী চিকিৎসার জন্য টাকা জমানোর অভ্যাস করতে হবে, ডি পি এস খুলতে হবে ; হেলথ ইন্স্যুরেন্স করতে হবে।

> নিয়মিতভাবে বছরে কমপক্ষে ২ বার আপনার স্বাস্থ্য চেক আপ করুন, চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

> বাসায় একটি ফার্স্ট এইড বক্স রাখুন এবং সবাইকে সেটা ব্যবহারের ট্রেনিং দিয়ে রাখুন।

> জরুরী যোগাযোগের নাম্বারগুলো পারিবারিক স্বাস্থ্য ফাইলের উপরে লিখে রাখুন।

> বছর শেষে পুরো বছরের সব তথ্য পর্যালোচনা ও তথ্য ফর্মগুলো হালনাগাদ করুন। পরবর্তী বছরের জন্য প্ল্যানিং করে রাখুন।

অনেকেই হয়ত ভাবছেন, এতবার ডাক্তারের কাছে যেতে বলে বলে আপনাদের সব পয়সা পকেটস্থ করার পায়তারা করছি!

না ভাই, সেরকম কিছু না।
একটা কথা সব সময় মনে রাখবেন, “সময়ের এক ফোড়, অসময়ের দশ ফোড়।”

বছরে ন্যূনতম দুই বারের চেক আপে যদি আপনার কোন ঘাতক ব্যাধি আগে আগেই ধরা যায়, সেই রোগের চিকিৎসা নিয়ে আপনি অল্পতেই ফাড়া কাটাতে পারবেন। না হলে রোগ হয়ত এমন এক অবস্থায় গিয়ে ধরা পড়ে, যখন অনেক খরচ করেও তেমন কিছু করা যায় না।

চিকিৎসককে ভয় পাবেন না, তার প্রতি আস্থাহীন আচরন করবেন না, বরং তার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করুন, তার উপর আপনার আস্থা আছে দেখলে তিনিও আন্তরিক হতে বাধ্য।

তাই আজই আপনার “পারিবারিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রকল্পটি” তৈরী করে ফেলুন, সুস্থ্য থাকুন আপনি, সুস্থ্য রাখুন পরিবারকে; সুস্থ্য জাতি গঠনে আপনার বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখুন।

মনে রাখবেন, “আমার স্বাস্থ্য, আমার হাতে!”

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ৯:০৬

চাঁদের অরণ্য বলেছেন: খুব ভাল পরামর্শ। ভালো লাগল।

২| ০৭ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ৯:৫৯

বিজন রয় বলেছেন: আমার ভাল লাগল আপনার পোস্ট।
++++।

আমি প্রাকৃতিক উপায়ে চেস্টা করি।

৩| ০৮ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:৫৫

আত্মমগ্ন আিম বলেছেন: ভাল লাগল জেনে অনেক খুশি হলাম।
চিকিৎসক হিসেবে আরো খুশি হব যদি আমার আইডিয়াটা আপনার ও আপনার পরিবারের কারো কাজে লাগে।
সম্ভব হলে এই আইডিয়াটা কাজে লাগাবার চেষ্টা করবেন এবং ফিডব্যাক দেবেন বলে আশা করি।

ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.