![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
(I am sympathetic and sensitive to the conventional systems)আমি প্রথাগত ব্যবস্থার প্রতি সহানুভূতিশীল ও সংবেদনশীল
দুই হাজার কোটি বছর আগেঃ
কয়েকদিন ধরে এই জায়গাটা কেমন যেন গন্ধ গন্ধ লাগছে। এমন মনে হচ্ছে কেন? এই পাহাড় আর আধো জঙ্গলভরা পরিবেশে সে বড় হয়েছে। কখনো তো মনে হয়নি যে আশেপাশে কোন পরিবর্তন হচ্ছে বা হবে। আজ কি তার শরীর খারাপ করেছে?
উত্তর জানা নেই, জানার কোনো ইচ্ছাও নেই। কারণ এই মূহুর্তে সে গভীর চিন্তায় মগ্ন। তাদের গোষ্ঠীর মধ্যে শুরু হয়েছে অদ্ভুত এক যুদ্ধ। সেই যুদ্ধ ছোট-খাটো না। বিশাল রকমের যুদ্ধ। মনে হচ্ছে পৃথিবী থেকে তাদের চলে যেতে হবে। কিন্তু তারা যাবে কোথায়? এতো সুন্দর মায়াময় সবুজ পরিবেশ ছেড়ে কি কোনো প্রাণীর চলে যেতে মনে চায়? তবুও কখনো কখনো বাস্তবতাকে স্বীকার না করে পারা যায় না। আকাশ-বাতাস ছিমছাম নীরবতা পালন করছে। খুবই গম্ভীর প্রকৃতির নীরবতা। যা দেখে বোঝা যায় যে কিছু একটা ঘটার সময় হয়ে এসেছে। তার বুক ফেটে কষ্ট বেরিয়ে আসছে। মানুষ কষ্ট পেলে কান্না করে হাল্কা হয়ে যায়, কিন্তু প্রকৃতিতে তাদের জন্য এমন কোনো ব্যবস্থা নেই। কষ্ট পেলে তাদের দম আটকে মরে যেতে ইচ্ছে করে। কারণ বুকের ভিতর তখন এক গাদা হাহাকার প্রচন্ড বেগে আছড়ে পড়ে। সেই বেগ রোখার ক্ষমতা অনেকের আছে, কিন্তু তার নেই। সে ইচ্ছে করলেই এখন মরে যেতে পারে। তবে এখন মরতে ইচ্ছে করছে না। ইচ্ছে করছে ঘটনার শেষ দেখে যেতে। মানুষের মত তারও সব বিষয়ে প্রচুর আগ্রহ আর আশ্বাস আছে। এই গুণটি সে পেয়েছে তার সহধর্মীর কাছ হতে। ভাবতে ভাবতে তার দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে আবেগে। আচমকা কাছাকাছি কোথাও হতে বুক ফাটানো জন্তুর কর্কশ তীব্র আর্তনাদ শোনা যায়।
সে একটা মাটির ঢিবির আড়ালে লেজ নামিয়ে চিত হয়ে শুয়ে আছে। তাকে এখন নিশ্চয়ই হণ্য হয়ে খুঁজছে জন্তুগুলো। যেকোনো মূহুর্তে পেয়ে যেতে পারে। তার আগেই শেষ কাজটা সমাধা করতে হবে। ভাবতে ভাবতে পাহাড়ের মতন দেখতে ঢিবির খানিকটা উপর দিয়ে দিগন্তে উঁকি দেয় সে। যত দূর চোখ যায় একে একে লম্বা-নিচু গাছের সারি। অনেক দূরে একটা ছোট খালের মত নদী দেখা যাচ্ছে। তারপর আবার বিশাল বনের সারি। তারপর সমুদ্র। কতগুলো অদ্ভুত সুন্দর পাখি আকাশে ডানা মেলে উড়ে বেড়াচ্ছে। এই পাখিগুলোর মাংস খেতে খুব সুস্বাদু- তার জন্য না, তার সহধর্মীর জন্য। সে মাংস খায় না। এখন অবশ্য এতসব চিন্তা করার সময় নেই। তবুও স্মৃতি খানিকটা নাড়া দিয়ে যাচ্ছে তাকে। পাখিগুলো কেমন একটা নির্দিষ্ট গতিতে নির্দিষ্ট ছন্দে সমান পরিধি নিয়ে আকাশে উড়ছে। এক, দুই, তিন, পাখিগুলো উড়ছে আকাশে। স্বাধীনভাবে ডানা মেলে। পরমূহুর্তে আবার তীক্ষ্ণ আর্তনাদ শোনা যায় একটা জন্তুর। তারপর আবার নীরবতা।
কয়েক মাস আগেঃ খোয়াক্ খোয়াক্ শব্দ করে একটা বড় খোলা ময়দানে খেলছে কয়েকটা ডাইনোসর। পাশেই তাদের বাবা-মা উজ্জল রোদের আলোয় রোদ পোহাচ্ছে। সামনে ছোট একটা খালের মত নদী। তারপর বিশাল অংশ জুড়ে সারি সারি উঁচু-নিচু গাছ, তারপর বিশাল সমুদ্র।
পিছনদিকে আবার বেশ কয়েকটা পাহাড়ের মত উঁচু মাটির ঢিবি রয়েছে। সেখানের মাটির সুরঙ্গে ডাইনোসরদের বাচ্চাগুলো প্রায়ই খেলাচ্ছলে ঢুকে পড়ে। তখন তাদের বাবা-মা চিৎকার করে ডেকে নিয়ে আসে।
-এই নাসরিন, অপি, মান্না জলদি বেরিয়ে আয়। কত্ত বড় সাহস তোদের! তুই ডিপজলের গর্তে ঢুকেছিস! এক্ষুণি ও তোকে কামড়ে দিবে। বেরিয়ে আয় বলছি।
বাচ্চাগুলো মায়ের বকুনী শুনেই হোক, কিংবা ডিপজলের ভয়েই হোক- হাসতে হাসতে বেরিয়ে আসে। ডিপজল হলো এই জঙ্গলের সবচেয়ে বিষাক্ত প্রাণী। ময়াল সাপ। এই সাপ সাইজেই যে শুধু বড় তা না, বিশাল দুটো বিষদাঁতও আছে এর। সেগুলো দিয়ে কামড়ে ধরলে তৃণভোজি ডাইনোসররা সাথে সাথে মরে যায়। আর যারা মাংসভোজী ডাইনোসর, তাদের মরতে সময় লাগে। ততক্ষণে অবশ্য মাংসভোজী ডাইনোসররাও ময়াল সাপের মাথা চিবিয়ে খেয়ে ফেলে। এই জন্য সেই ময়াল সাপ, মানে ডিপজল সাপ পারতপক্ষে ডাইনোসরদের ঘাটাঘাটি করে না।
জঙ্গলে ডাইনোসরদের দুটি গোত্র আছে। একটি হল তৃণভোজী, অন্যটি হলো মাংসভোজী গোত্র। তৃণভোজীরা শান্ত-শিষ্ট ও কাটাবিহীণ লেজের অধিকারী। মাংসভোজীরা এমনিতে চুপচাপ, কিন্তু রেগে গেলে ভীষণ গরম মার্কা হয়ে যায়। তখন তাদের কাটাযুক্ত লেজ খালি অস্থির ভঙ্গিতে নড়ে, আর পলকে পলকে সেই লেজ পুরো এলাকার বনের মাটি কাঁপিয়ে তোলে। তাদের মুখ হতে ফক্কশ ফক্কশ শব্দে আগুনের কুন্ডলী বের হয়।
মাংসভোজী একটা ডাইনোসর আছে এই জঙ্গলে। অন্যান্যদের চেয়ে বেশ শান্ত আর মায়া কাড়া অবয়ব পেয়েছে সেটি। তার নাম জেমস বন্ড। সে প্রায়ই তৃণভোজী বাচ্চাদের সাথে খেলা করে। এটি নিয়ে অবশ্য দু’পক্ষেরই মন কষাকষি।
সন্ধ্যা হয়েছে প্রায়, একটু পর সূর্যটা সামনের গাছ-গাছালিতে ঢাকা রহস্যময় জঙ্গল আর সমুদ্রের মাঝে হারিয়ে যাবে। সমস্ত প্রাণীদের মধ্যে ঘরে ফেরার একটা হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে গেছে। রাতের পোঁকাগুলো একটু পর কর্কশ শব্দ করে জানিয়ে দিবে আগাম রাতের উপস্থিতি। এখন অবশ্য প্রান্তর জুড়ে অদ্ভুত রকম নিস্তদ্ধতা বয়ে যাচ্ছে। গাছের ডালের সাথে পাতার মৃদু খসখস শব্দও বেশ জোড়ালো বলে মনে হচ্ছে। ডাইনোসরগুলো ইতিমধ্যে ঘরে ফিরে গেছে। জঙ্গলটা তাই বেশ ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।
হঠাৎ অদূর হতেই থপথপ শব্দ শোনা গেলো। মনে হচ্ছে বড় আকৃতির কোন প্রাণী এই ভর সন্ধ্যায় শিকার ধরতে বের হয়েছে। গাছের ডালে ডালে সেই শব্দ বাড়ি খেয়ে শিস বাজালে যেমন শব্দ হয়, তেমন মৃদু কিন্তু তীক্ষ্ণ শব্দ হচ্ছে।
মাংসভোজী ডাইনোসর জেমস বন্ড এসে দাঁড়িয়েছে জঙ্গলের মাঝামাঝি এই খোলা প্রান্তরটায়। পিছনের দুই পায়ে ভর দিয়ে সামনের দুই পা এমনভাবে উপরে তুলে দিয়েছে যাতে মনে হচ্ছে বিশাল আকৃতির একজন মানুষ নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে আছে জঙ্গলের মাঝে। জেমস বন্ডের মাথাটা অন্যান্য ডাইনোসরদের মত চৌকোনা বা লম্বামত হয়নি, বরং কেমন একটা সৌন্দর্য্যতায় ভরা মুখায়ব পেয়েছে। খানিকক্ষণ অপেক্ষা করে সে মৃদু শব্দে তিনবার খোয়াক্ খোয়াক্ করে ডেকে উঠল। কয়েক মূহুর্ত পর আরেকটা ডাইনোসরের মূর্তি দেখা গেলো প্রান্তরের শেষ অংশে। সেটা একটা তৃণভোজী ডাইনোসর।
তৃণভোজীদের চেনার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে তারা হাঁটলে থপথপ শব্দটা মাটির সাথে মিশে যাবে। কিন্তু মাংসভোজীদের হাঁটার শব্দ বাতাসের মত ছড়িয়ে পড়ে। তাছাড়া তৃণভোজীরা সাইজে মাংসভোজীদের চেয়ে খাটো। তারা মুখ হতে আগুণ বের করতে পারে না।
এই মূহুর্তে জেমস বন্ডের সামনে যে তৃণভোজী ডাইনোসরটা দাঁড়িয়ে আছে তার নাম পূর্ণিমা। দুইজনের বয়সই সবে সাতানব্বইয়ে এসে দাঁড়িয়েছে। এই বয়সে ডাইনোসররা প্রেমে পড়ে। তবে ডাইনোসরবিদদের মতে তাদের প্রেমে পড়ার উপযুক্ত সময় হচ্ছে দেড়শ বছর বয়স।
জেমস বন্ড জানু পেতে বসার চেষ্টা করল। যতটা সম্ভব সে তার হৃদয়ের গভীরতা পূর্ণিমার সামনে মেলে ধরার চেষ্টা করছে। এই মেয়েটির জন্য সে নিজ গোত্রের কারো সাথে খেলা-ধূলা করে না, শিকারে অংশগ্রহণ করে না। এমনকি সে মনে মনে ভেবে রেখেছে যে পূর্ণিমা যদি তার সাথে সম্পর্ক গড়তে রাজী হয়, তবে সে মাংস-ফাংস খাওয়া বন্ধ করে জঙ্গলের পাতা খাওয়া শুরু করবে। কিন্তু পূর্ণিমার আচরণে কিছু বোঝা যাচ্ছে না। সে কি রাজী হবে মাংসভোজী ডাইনোসরের সাথে প্রেম করতে? জেমস বন্ড পূর্ণিমার জন্য চোখ খোলা রেখে সব করতে পারবে। মেয়েটা বড্ড সুন্দর গড়নের হয়েছে। একবার তাকালে চোখ ফেরানো যায় না। ভাগ্যিস তার মনের কথা পূর্ণিমার বাবা-মা কেউ বুঝতে পারে নি। তাহলে আর রক্ষা ছিল না। পিটিয়ে তার ছাল-বাকল দিয়ে ভোজন করে তারা হয়তো তৃণভোজী থেকে মাংসভোজীতে রূপান্তরিত হত।
জেমস বন্ড পূর্ণিমার মাথার দিকে তাকালো। গোলগাল অদ্ভুত মায়াবী এক ডাইনোসরের মুখ দেখা যাচ্ছে। চাঁদের আলোয় ডাইনোসরটির চোখ জোড়া হতে দূর অচীন দেশের স্বপ্ন ভেসে আসছে। জেমস বন্ডের মনে হলো এই চোখ জোড়ার দিকে সে সারাজীবন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে পারবে। তেল চকচকে মসৃণ চামড়ার গাঢ় উজ্জল বর্ণ তার মনকেই শুধু দখল করেনি, তার চোখকেও ধাঁধিয়ে দিয়েছে। আচমকা তার মনে হলো পূর্ণিমা অবশ্যই তার জীবন সঙ্গি হবার জন্য রাজী হবে। তা নাহলে সে এখানেই মেয়েটির সামনে নিজের জীবন দিয়ে দিবে নিজের আগুন দিয়েই। পূর্ণিমা ঘড়ঘড় শব্দ করে জেমস বন্ডের দৃষ্টি আকর্ষণ করল।
-আমাকে রাতের বেলা কেন ডেকেছো?
-সেটি কি তোমায় খুলে বলতে হবে? তোমার মনকে একবার জিজ্ঞ্যেস করে দেখো তো, আমার চোখের ভাষা কি বলে?
-আমি অতশত কাব্যিক কথা বুঝি না। তুমি জানো, আব্বু যদি টের পায় এই গভীর রাতে আমি জঙ্গলের নিরিবিলীতে একজন পর-ডাইনোসরের সঙ্গে কথা বলছি, তাও আবার একজন মাংসভোজীর সাথে! তাহলে আমাকে মেরে হয়তো হাতির মতো পিচ্চি সাইজ করে ফেলবে।
-কেন বৃথা হেয়ালী করছ? তুমি ভালো করে জানো আমি নিজের গোত্রের সমস্ত বন্ধু আর মেয়েদের বাদ দিয়ে প্রতিদিন তোমাকে দেখতে আসি, তোমার গোত্রের ছেলেদের সাথে বন্ধুত্ব করতে আসি। আমি কি কোনদিনও তোমার আব্বু কিংবা মুরুব্বী কোনো ডাইনোসরের সাথে বেয়াদবী করেছি? তুমি ভালো করে জানো আমার মনের কথা, একটু ভেবে দেখো, প্রেম-ভালোবাসা ডাইনোসররা কেন করে। নিশ্চয়ই মানুষের মত নেঙটো হয়ে কুকাম করার জন্য নয়। কারণ আমরাতো এমনিতেই সারাক্ষণ নেঙটো হয়ে থাকি।
জেমস বন্ডের কথা শুনে পূর্ণিমা হাসতে হাসতে মাথা নিচু করে ফেলল। জেমস বন্ড অবাক হয়ে তাকালো। একজন ডাইনোসর এতো সুন্দর ভঙ্গিতে হাসতে পারে তার ধারণার বাইরে ছিল। সে তার কন্ঠের সমস্ত আবেগ একত্রে আনার চেষ্টা করল। সে জানে পূর্ণিমা নামের ডাইনোসরটিকে তার জীবনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। সে ব্যাকুল কন্ঠে আবার কথা বলে উঠে।
-আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। বিশ্বাস কর পূর্ণিমা, আমি কোনদিন তোমাকে কষ্ট দিব না। আমি জানি এই দাবী অন্যায়, কারণ এক গোত্রের সাথে অন্য গোত্রের কখনো মিল হয় না। কিন্তু তুমি কি জানো যে তোমাকে পাওয়ার জন্য আমি সব করতে রাজী আছি? তুমি আমার হৃদয়ের গভীরে প্রবেশ করে ফেলেছো। এখন আর ফিরে আসা সম্ভব নয়। এগুলো আমার একদম মনের কথা। তুমি কি ভাবছ জানি না, তবে আমি শুধু তোমার জন্যই নিজেকে এগিয়ে নিতে চাই।
পূর্ণিমা জেমস বন্ডের কথা শুনে চুপ হয়ে গেলো। মূলত সে আগে হতেই পুরো ব্যাপারটা আঁচ করতে পেরেছিল। কিন্তু এখানে তার আগ্রহ থাকলেও কিছু করার নেই। সে জানে এটি কোনদিনই সম্ভব নয়। কারণ উভয় পক্ষেরই বংশগত অনেক বাঁধা-নিষেধ আছে। তাছাড়া তৃণভোজী আর মাংসভোজীদের মধ্যে মিল জঙ্গলের কেউ মেনে নেয়ার জন্য প্রস্তুত নয়। ব্যাপারটা সে জেমস বন্ডকে বোঝাতে চাইলো।
-দেখো জেমস, আবেগ থাকা ভালো- কিন্তু যেখানে কোনো নিশ্চয়তা নেই সেখানে বৃথা আবেগ দেখিয়ে কোনো লাভ হবে না। তুমি ভালো করে জানো যে আমাদের সম্পর্ক কোনদিনও বিয়ে পর্যন্ত গড়াবে না। তোমার বাবা-মা সবসময় তোমার ভালো চাইবেন। দেখো, উনি বোধহয় তোমার জন্য তোমার গোত্রের সবচেয়ে সুন্দর মেয়েটিকে বেছে রেখেছেন। তুমি মনে হয় আমার কথাতে কষ্ট পেতে পারো, কিন্তু এটাই বাস্তবতা। সমাজের বিধি-নিষেধের কাছে আমাদের হাত-পা বাঁধা। তোমাকে আমি এমনিতে পছন্দ করি, কারণ তুমি তোমার গোত্রের অন্যান্য মাংসভোজী ডাইনোসরদের মত উগ্র নও। এবং সত্যি বলতে কি, তোমার চেহারাও যথেষ্ট সুন্দর। কিন্তু আমার মনে হয় আমি তোমার জন্য না। তাছাড়া আমার বয়স একশ হলেই বাবা আমাকে বিয়ে দিয়ে দিবেন। বিয়ের পাত্র এখন থেকে ঠিক করা আছে। আমাদের গোত্রের কুদ্দুস আঙ্কেলের ছেলে ফেরদৌসের সঙ্গে। আমি বন্ধু হিসেবে তোমাকে অনুরোধ করব, তুমি দয়া করে আমাকে এ ধরণের অসম্ভব কিছু করতে বোলো না। আমি সত্যিই তোমার ভালো চাই।
একটানা কথাগুলো বলে চুপ হয়ে গেলো পূর্ণিমা। তার এখন ঘরে ফিরে যাওয়া উচিত। কিন্তু কেন যেন সে নড়তে পারছে না। তার কথাগুলো কি খুব লেগেছে জেমসের মনে? ছেলেটার মুখ কেমন যেন অসহায়ের মত ধারণ করেছে। তার খুব ইচ্ছে করছে জেমসকে কিছুক্ষণ শান্তনা দিতে। কিন্তু সে নিরুপায়। জেমস বন্ড গভীর চোখে পূর্ণিমার চোখের দিকে তাকালো। আঁধো আলো আর আঁধো ছায়াতে তাদের দু’জনকে একটি বাগানের দুটি লতা গাছ বলে ভ্রুম হচ্ছে।
-পূর্ণিমা, তুমি কি কখনো কারো চোখে স্বপ্ন তৈরি হতে দেখেছো? স্বপ্ন তৈরি হওয়ার সময় মনের মানুষ যদি পাশে না থাকে, তাহলে কিন্তু সেই স্বপ্ন দুঃস্বপ্ন হয়ে মানুষকে ক্ষয় হওয়া পাথরের মত ক্ষত-বিক্ষত করে ফেলে। আমি তোমাকে নিয়ে সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি। আমি মনে করি আমার ভালোবাসার জন্য পৃথিবীতে যত বাঁধাই আসুক, সব আমি দমন করতে পারব। আর সমাজের বিধি-নিষেধ মেনে ভালোবাসা তৈরি হয় না, ভালোবাসা তৈরি হয় দুইজনের মনের ইচ্ছায়। তুমি কি মনে করো না যে আমার মনে সেই পরিমাণ ইচ্ছা আছে?
-আসলে ব্যাপারটা তুমি বুঝতে পারছ না জেমস।
ঘাড় নাড়িয়ে বলে উঠে পূর্ণিমা। জেমস ব্যাকুল হয়ে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করে। তার মনটা বোধহয় এখুনি ভেঙ্গে যাবে। সে কি করতে পারে এখন?
-পূর্ণিমা, বিশ্বাস থেকে ভালোবাসা তৈরি হয়। একবার আমাকে বিশ্বাস করে দেখো না, আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি তুমি ঠকবে না। সারাজীবন তোমাকে আমি আগলে রাখব। একবার আমার চোখের দিকে তাকাও, আমার হৃদয়ের ভাষা তোমাকে বলতে পারছি না। দেখো না আমার চোখের দিকে। তোমার লেজে হাত দিয়ে বলো তো, তুমি কি মনে মনে একটুও চাও না আমায়?
পূর্ণিমার প্রচন্ড ভয় লাগছে। আকাশ ভরা তারা দেখা যাচ্ছে। তারাদের মাঝখানে চাঁদটা কি সুন্দর প্রান্তরের মাঝখানটা আলোময় করে তুলেছে! সেই দৃশ্য দেখলে দেহে কিরকম এক শিহরণ লাগে। যেন অদৃশ্য কোনো তরঙ্গ বয়ে যাচ্ছে দেহের ভিতরের শিরা দিয়ে। জঙ্গলের কালো কালো অন্ধকার ভাব দূর হয়ে চাঁদের আলোর প্রলেপ পড়ছে গাছের ছায়ার ভিতরে। দূরের গাছগুলিকে মনে হচ্ছে ছায়াময় একদল প্রহরী। হঠাৎ করে পূর্ণিমার মনে হলো তাদেরকে নীরবে পাহাড়া দেয়ার জন্য গাছগুলো দূরে সটান দাঁড়িয়ে রয়েছে।
তার এতো অদ্ভুত সুন্দর একটা অনুভূতি হচ্ছে কেন? এরকম অনুভূতি তো সে তার জীবনে এতটা বছর কখনো পায়নি। মনে হচ্ছে নতুন কিছু ফুল আর পাখি অদ্ভুত আশ্চর্য এক বাগানে মহানন্দে খেলা করছে। পূর্ণিমার আচমকা ঝরঝর করে কাঁদতে ইচ্ছে হলো। তার বুকের মাঝখানটায় কিসের যেন এক শূণ্যতা। সে ধীরে ধীরে মাথা উঁচিয়ে তাকালো জেমসের চোখে। সেখানে প্রচন্ড আবেগের এক স্বপ্ন দেখতে পেলো সে। তার মনে হলো এই চোখের দৃষ্টির জোড়ে পৃথিবী সমস্ত সামাজিকতার নামে রচিত শৃঙ্খলা ভেঙ্গে বেরিয়ে আসবে। একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেলো পূর্ণিমা। সে জেমসের ঘাড়ে নিজের মাথা এলিয়ে দিয়ে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে উঠল। এই কান্না কষ্টের না, কেমন যেন বিষাদ মাখা আনন্দের। চোখের জলের প্রতি ফোটায় ফোটায় আনন্দ উপচে পড়ছে।
জেমস এই ব্যপারটার জন্য প্রস্তুত ছিল না। তার ধারণা ছিল মেয়েটি হয়তো কঠোরভাবেই তাকে নিবৃত করবে। পূর্ণিমা এখন কাঁদছে জেমসের ঘাড়ে-বুকে নিজের দেহ মিশিয়ে। জেমসের মনে কিসের যেন তীক্ষ্ণ একটা সুখের ছোঁয়া বয়ে গেলো। পূর্ণিমার চোখের পানিকে সে সামনের পা দুটি দিয়ে যথেষ্ট কসরত করে মুছে দিলো।
চাঁদটা এই মূহুর্তে নিরব আকাশের সমস্ত সীমানায় স্বপ্নময় আবেগের জ্যোৎস্নার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। জঙ্গলের মাঝের পুরো প্রান্তর সেই আলোর দেখা পেয়ে আজ জেগে উঠেছে। চারিদিকে অদ্ভুত নিস্তদ্ধতাপূর্ণ নিবিড় এক উৎসব শুরু হয়ে গেছে। কেমন যেন জীবন্ত জীবন্ত প্রকৃতি নেমে এসেছে সমস্ত প্রান্তর জুড়ে। জেমসের মনে হলো তাদের দু’জনের জন্যই বোধহয় আজ প্রকৃতি এতো আয়োজন করেছে।
দূরে আকাশের এক কোণে একটা তারা মিটিমিটি করছে। জেমসের মনে হয় সেটি তাদের সাথে একত্রে বন্ধুত্ব করতে এসেছে।
তিনমাস পরঃ শেষ বিকেল। জেমস আর পূর্ণিমা বসে আছে জঙ্গলের মাঝামাঝি সেই খালটার কিনারে। সূর্যটা ডুবু ডুবু করছে, যেকোনো মূহুর্তে ডুবে যাবে। খালের পানি এখন ভরা জোয়ারের টানে বেড়ে চলছে। আজ যদি পূর্ণিমা হয়, তবে ভরা কাটাল হবার সম্ভাবনা আছে।
জেমস এক দৃষ্টিতে পূর্ণিমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। পূর্ণিমার চোখে দুষ্ট দুষ্ট ভাব। সে সূর্যের বিপরীত দিকে মুখ করে বসে আছে। মাঝে মাঝেই লেজের ঝাপটা দিয়ে পানিতে ঢেউ তুলছে সে। জেমস নিজের কাটাযুক্ত লেজটি গুটিয়ে রেখেছে তার পিঠের নিচে। তার মন কিছুটা খারাপ। কিছুক্ষণ আগে পূর্ণিমা তাকে বলেছে যে সে নাকি জেমসের সাথে শুধু প্রেম করবে। বিয়ে করবে না। পূর্ণিমা হঠাৎ ফিক করে হেসে ফেললো। তৃণভোজী ডাইনোসররা হাসলে মুখের অগ্রভাগের চামড়া প্রসারিত হয়ে খুব সুন্দরমত আকৃতি হয়, আর পূর্ণিমারতো কথাই নেই। জেমস মুগ্ধ বিস্ময়ে তাকিয়ে রইল তার প্রিয়তমার দিকে।
-তুমি বৃথা চিন্তা করছ কেন? যখন বিয়ের সময় আসবে তখন দেখা যাবে আমরা কি করব।
মানুষের মত ডাইনোসররা ভ্রু কুঁচকানোর বদলে নাক কুঁচকায়। জেমস নাক কুঁচকিয়ে প্রশ্ন করল।
-তখন কি দেখা যাবে?
-আমার প্রভা নামে এক বান্ধবী আছে, সে প্রেম করেছে শাকিব খানের সঙ্গে, আর বিয়ে করেছে সালমান খানকে।
-এই কথা আমাকে শোনাচ্ছ কেন?
কৃত্রিম রাগাম্বিতভাবে প্রশ্ন করল জেমস বন্ড। জেমসের রাগ দেখে মজা পাচ্ছে পূর্ণিমা। ছেলেটা অনেকটা বাচ্চা বাচ্চা মার্কা স্বভাব পেয়েছে। অন্যান্য মাংসভোজী ডাইনোসরদের মত রাক্ষস মার্কা বা হিংস্র স্বভাব পায়নি। ছেলেমানুষি দেখতেও বেশ ভালো লাগছে পূর্ণিমার।
-এই কথা তোমাকে শোনাচ্ছি, কারণ আমি ঠিক করেছি আমিও আমার বান্ধবীর মত প্রেম করব একজনের সাথে, শেষে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করব অন্যজনের সাথে। কেমন হবে বলো তো?
পূর্ণিমার মুখে মুচকী হাসি। জেমস গম্ভীর হয়ে গেলো। তার মনটা কেন জানি খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এই মেয়েটার সামনে সে স্বাভাবিক হতে পারে না। ডাইনোসরটা কি তাকে প্রেমের জাদু করেছে? এত ভালোবাসতে ইচ্ছে করে কেন তার? সে কি পূর্ণিমার মত স্বাভাবিকভাবে টিটকারী করে কথা বলতে পারে না? পূর্ণিমা জেমসের অবস্থা দেখে ক্রমাগত হেসে চলছে। জেমসকে রাগিয়ে দিতে যেয়ে যে মন খারাপ করিয়ে ফেলেছে তা বুঝতে পারেনি সে। আচমকা এমন কান্ড করে বসল জেমস যে তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না পূর্ণিমা। ভ্যাক ভ্যাক করে কেঁদে-কেটে কেমন যেন মিইয়ে গেলো জেমস। পূর্ণিমা হকচকিয়ে গিয়ে বলল,
-কি ব্যাপার, তুমি কাঁদছ কেন?
-তোমার তো আমাকে কোনো দরকার নেই। যাও না, যাকে বিয়ে করবে তার কাছেই যাও। আমার কাছে কি মরতে এসেছো নাকি?
বলে ঝরঝর করে কয়েক ফোঁটা চোখের পানি ঝরিয়ে ফেলল জেমস। মেয়ে জাতীগুলো কি এভাবেই শুধু পুরুষদের কাঁদাতে চায়? পূর্ণিমার মনটা জেমসের জন্য আবেগে গলে এলো। ছেলেটা তাকে বিক্ষুদ্ধ ঝঞ্ঝার মত ভালোবাসে। এ কারণে সামান্য কথাতেই আপসেট হয়ে পড়েছে। সে গভীর আবেগে জেমসকে জড়িয়ে ধরে। তারপর নিজেও ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলে,
-আমি অত্যন্ত দুঃখিত প্রিয়, দয়া করে তুমি কিছু মনে কোরো না। আমি শুধু তোমার জন্যই। বোকা কোথাকার! তুমি কি দুষ্টুমীও ধরতে পারো না? আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি জেমস। বিশ্বাস কর, অনেক ভালোবাসি। আমি জানি তুমি খুব ভালো, আচ্ছা তুমিই বলো, তুমি যদি ভালো না হতে তবে কি আমি তোমার সাথে সম্পর্ক গড়তাম? তুমি মিছে কেন কষ্ট পেলে বলো তো প্রিয়া? এখন তো আমারও ভালো লাগছে না।
বলে পূর্ণিমা ফোঁপাতে ফোঁপাতে জেমসের চোখের পানি মুছে দিতে লাগল। জেমস ততক্ষণে স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। তার নিজের কাছে কেন জানি লজ্জা লাগছে। কান্না না করলে কি হতো? পূর্ণিমার এখন মন খারাপ হয়ে গেছে। সে কি গাধা! প্রিয় ডাইনোসরের দুষ্টুমীও ধরতে পারে না! এর চেয়ে লজ্জার কথা আর কি আছে? দু’জন হঠাৎ চুপ হয়ে যায়। মাঝে মাঝে দু’জন প্রেমিক-প্রেমিকা একেবারে চুপ হয়ে থাকে। তার কারণ তখন তাদের কথা বলার দরকার হয় না। তখন কথা বলে চারপাশের প্রকৃতি। গাছপালা শিরশির শব্দে কথা বলে, খালের পানি ছল ছল শব্দে মৃদু ঢেউ তুলে, সূর্যটাও যেন লজ্জা পেয়ে পৃথিবী ছেড়ে আড়াল হয়ে যায়। দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে রেখে টের পায় না কখন সন্ধ্যা হয়েছে।
পরদিন বিকেল বেলা পূর্ণিমা খালের পাড় হতে পানি খেয়ে বাসায় ফিরছিল। জঙ্গলের ভিতর ঢুকার জন্য প্রান্তরের পাশ দিয়ে বড় একটা স্বচ্ছ জায়গা ছিল। সেখানের পুরোটা পথ জুড়েই তাদের গোত্রের একটা তৃণভোজী ডাইনোসর মিশা সওদাগর দাঁড়িয়ে ছিল। পূর্ণিমা প্রথমে ভেবেছিল মিশা বুঝি কোন কাজে এসেছে। কিন্তু যখন পূর্ণিমা মিশাকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিচ্ছিল তখন পূর্ণিমার সামনে এসে তার যাওয়ার পথ বন্ধ করে দাঁড়াল মিশা সওদাগর। পূর্ণিমার মেজাজ গরম হয়ে গেলো ব্যাপার দেখে।
-ব্যাপার কি মিশা ভাই? আপনি এভাবে আমার যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে রেখেছেন কেন?
-হেহঃ হেহঃ, রাস্তা বন্ধ করলাম কই, আমি তো শুধু তোমার সাথে কিছু কথা বলার জন্য দাঁড়িয়ে আছি। আর আমাকে ভাই বলে ডাকছ কেন? নাম ধরে ডাকলে কি অসুবিধা?
-আপনি ভালো করে জানেন যে আমি এমন কোন বেয়াদব মেয়ে না যে যাকে তাকে নাম ধরে ডাকব।
পূর্ণিমার কথা শুনে খোয়াক্ খোয়াক্ করে ডেকেই প্রচন্ড বেগে লেজ নেড়ে হাসতে লাগল মিশা সওদাগর। যেন এই ধরণের কথাই সে আশা করছিল। শয়তানী ভঙ্গিতে মাথা বাঁকিয়ে সে বলতে লাগল।
-আমি জানি, তুমি খুবই ভালো প্রকৃতির মেয়ে, সেজন্যই তো তোমাকে আমার এতো ভালো লাগে। এখন কিছু কথা বলব, মনোযোগ দিয়ে শুনবে। জেমস বন্ড তোমার কি হয়?
-আমি তাকে ভালোবাসি।
স্পষ্ট সুরে জবাব দিল পূর্ণিমা। জবাব শুনে সবজান্তার মত উপরে নিচে মাথা ঝাঁকালো মিশা সওদাগর।
-এগুলো মোটেই ঠিক না, তুমি কি তোমার জাত বিসর্জন দেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছো?
-শুনুন মিশা ভাই, আমার মনে হয় আপনি পুরো ব্যাপারটাই ভালো করে জানেন। তাই আপনাকে বলে রাখছি, তৃণভোজী আর মাংসভোজী ডাইনোসররা হয়তো আলাদাভাবে বাস করছে, কিন্তু তাদের দেহের গঠন আর গোত্রের শৃঙ্খলা একই রকম। কাজেই কারো প্রেম দেখে হিংসা পেয়ে মিছেমিছি জাতিগত বিভক্তি তৈরি করার চেষ্টা করবেন না।
মিশা সওদাগর আবারও একটা লেজ নাড়িয়ে অদ্ভুত শীতল হাসি দিল।
-আচ্ছা, তোমার কি মনে হয় যে আমরা জাতিগত প্রভেদ মিছেমিছি তৈরি করেছি? এর পিছনে অনেক কারণ আছে। তোমার ভালোর জন্য বলছি, তুমি মাংসভোজীদের পথ হতে সরে যাও। আমি তোমাকে ছোট বেলা হতে পছন্দ করি, আর তুমি কিনা কোথাকার এক মাংসভোজী ডাইনোসরকে পছন্দ করে বসে আছো। যা হবার হয়েছে, তুমি ওকে ভুলে যাও। তুমি আমাকে বিয়ে করবে।
-হুহ! আপনার মাথা খারাপ হতে পারে, আমার মাথা এখনো ঠিক আছে। আপনার মত নিচু প্রকৃতির ভন্ড প্রতারক ডাইনোসরকে আমি কেন, কোন পাগলীও বিয়ে করবে কিনা সন্দেহ আছে।
বেশ ক্ষোভের সাথে জবাব দিল পূর্ণিমা। এই প্রথম মিশা সওদাগরের মুখে অপমানের ছায়া দেখা গেল।
-বেশ, তুমি যদি মাংসভোজী ওই ভূতটাকে বিয়ে কর, তাহলে করতে পারো। কিন্তু প্রথম রাতেই সে তোমাকে নিষ্ঠুরভাবে খুন করবে তা আমি তৃণভোজী হয়ে কি করে সহ্য করব বলো তো?
-কি বললেন আপনি? সে আমাকে খুন করবে কেন?
ঘাড়টা সামান্য বায়ে কাঁত করে মিশা বোঝাতে লাগল ব্যাপারটা।
-একটা পারসোনাল প্রশ্ন করি, তোমরা কি এখন পর্যন্ত কিস (চুমু) করেছো?
-জ্বি না, আমাদের বিয়ের পূর্বে এমন কিছু করার চিন্তা-ভাবনা নেই।
-বেশ, তোমরা কখনো একজন আরেকজনকে চুমু দিতে পারবে না। কারণ জেমস হলো মাংসভোজী ডাইনোসর। ওর মুখ সব সময় আগুনের মত গরম থাকবে। চুমু দিতে গেলে তোমার ঠোট-মুখ পুড়ে যাবে।
পূর্ণিমা চোখ রগড়িয়ে তাকালো ফরিদির দিকে।
-আমাদের কিস করার কোনো প্রয়োজন নেই।
বলে গটগট করে হেঁটে চলে যেতে নিচ্ছিল পূর্ণিমা। মিশা তার নিচের দু’পা বাড়িয়ে দিলো পূর্ণিমার গতিরোধ করার জন্য। বাঁধা পেয়ে পূর্ণিমা হুমড়ি খেয়ে পড়ল একটা বিশাল বট গাছের গোড়ায়। পরমূহুর্তে মিশা জোর করে পূর্ণিমার গায়ে ঝাপিয়ে পড়ল। তারপর আচমকা নিজের উত্তেজিত অঙ্গটা খাড়া করিয়ে সরাৎ করে ভরে দিতে চাইলো পূর্ণিমার গোপন অঙ্গে। আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে চিৎকার করে উঠল পূর্ণিমা। মিশা ততক্ষণে দ্বিতীয়বার চেষ্টা করছে নিজের কুমতলব চরিতার্থ করার। এর মধ্যে হঠাৎ করে কোথা হতে যেন জেমস বন্ড এসে হাজির হল। সে এসেই প্রথমে তার কাটাওয়ালা লেজ দিয়ে তুমুল জোরে আঘাত করল মিশা সওদাগরের বুক বরাবর।
গোঁ গোঁ করে নিজের বুক চেপে ধরে শুয়ে পড়ল মিশা। জেমস কোনো সুযোগ দিল না, শুয়ে পড়া অবস্থায় নিজের বিশাল দুটি পা দিয়ে একযোগে আঘাত করল মিশার মেরুদন্ডে। বাবা গো বলে মিশা ফুটবলের মত গড়িয়ে গেলো।
নায়কের পার্ট নিয়ে দু’পা ছড়িয়ে পূর্ণিমার সামনে দাঁড়ালো জেমস বন্ড।
এতো কিছুর মধ্যে দু’জনের খেয়ালই রইল না কখন তাদের প্রেমের গোপন খবর তাদের বাবা-মায়েরা জেনে গেছে। হঠাৎ জেমসের মাথায় কিসের যেন তীব্র আঘাত পড়ে। সে পাশ ফিরে তাকানোর আগেই তার চোয়াল প্রচন্ড ব্যাথায় ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হয়। ওদিকে পূর্ণিমাও চিৎকার শুরু করে দিয়েছে। চটাশ করে চাটি পড়ল পূর্ণিমার চোয়ালে। তারপর বেদমভাবে জেমসকে পিটাতে লাগল পূর্ণিমার বাবা নাসিরুদ্দিন শাহ। জেমসের হুশ জ্ঞান আগেই হারিয়ে গেছে। এরপর যা মার সে খেল তার পুরোটাই তার অচেতন অবস্থায়। মাথার তীব্র আঘাতেই তার জ্ঞান হারিয়েছে।
পরদিন সকাল বেলা।
বিচার বসেছে জঙ্গলের খোলা প্রান্তরটায়, যেখানে জেমস আর পূর্ণিমা তাদের মনের ভিতর জমানো গোপন কথা বলার জন্য মিলিত হত। সেই একই জায়গা, একই গাছপালা, একই খাল- কিন্তু পরিস্থিতি ভিন্ন। জেমসকে ধরে রাখা হয়েছে পূর্ণিমার বাবার পাশে। সে পাশে তৃণভোজী ডাইনোসরদের সারি। বিপরীত দিকে মাংসভোজী ডাইনোসরদের বিশাল সারি। দু’পক্ষেই চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। ভাব দেখে মনে হচ্ছে যেকোনো মূহুর্তে মাংসভোজী ডাইনোসরদের মুখ হতে ফক্কশ ফক্কশ শব্দের সাথে আগুন বেরিয়ে আসবে। তাছাড়া তাদের কাটাযুক্ত লেজগুলোও যেন যুদ্ধের অশনি সংকেতের অপেক্ষায় আছে।
পূর্ণিমার বাবা কথা বলে উঠল জেমস বন্ডের বাবার দিকে চেয়ে।
-আপনার ছেলে জেমস কি অপরাধ করেছে দেখতেই পাচ্ছেন মিস্টার ডি ক্যাপ্রিও! আশা করি তার একটা ব্যবস্থাও আপনি এখুনি করে ফেলতে আমাদেরকে সাহায্য করবেন।
খানিকটা ব্যাঙ্গ করেই বলল পূর্ণিমার বাবা নাসিরুদ্দিন শাহ। ডি ক্যাপ্রিও মৃদু ঘড়ঘড় করে উঠল।
-শুনুন মিস্টার নাসির মোল্লাহ! এক হাতে তালি বাজে না, এই বিখ্যাত প্রাচীন কথাটি আশা করি আপনাকে নতুন করে শিখিয়ে দিতে হবে না। আপনি ভালো করেই জানেন যে আপনার মেয়ে এই কাজে উস্কানী দিয়েছে বলেই আজ এ অনাকাঙ্খিত সম্পর্কটি ঘটেছে। আমার ছেলের ব্যাপারে আমি সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিচ্ছি, কিন্তু আপনার মেয়ের জন্য আপনি কি ব্যবস্থা নিবেন শুনলে বড় উপকৃত হতাম।
নাসিরুদ্দিন শাহ খোয়াক্ খোয়াক্ শব্দ করে ডেকে উঠল। তার মাথা আজকে যথেষ্ট উত্তেজিত অবস্থায় আছে। সে এ ঘটনার এফোঁড়-ওফোঁড় করে ছাড়বে।
-খামোশ মিস্টার ক্যাপ্রি! আমার মেয়ে কি আপনাদের এলাকায় গিয়ে আপনার বাদাইম্যা ছেলের সাথে প্রেম করেছে? নাকি আপনাদের এলাকায় গিয়ে আপনার গুণধর সুযোগ্য সুপুত্রের সঙ্গ পীরিতের আলাপ করার বায়না ধরেছে? আপনার ছেলে লুচ্চা কমিটির সভাপতি হওয়ায় সে এসেছে আমাদের এলাকাতে, তাও আবার প্রেম করতে আমার মেয়ের সাথে! তার মাথার ঘিলুর প্রশংসা করতে হয়।
ডি ক্যাপ্রিও আরো কিছু বলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, সে সময় তার ছেলে জেমস বন্ড চেঁচিয়ে উঠল।
-বাবা, তোমরা বৃথা ঝগড়া করছ কেন? আমরা একে অপরকে পছন্দ করি। এই দোষ আমাদের, কেন তোমরা নিজেরাই ঝগড়া শুরু করে দিয়েছো? মেনে নাও না এই সম্পর্ক।
অনুরোধ করে জেমস। সাথে সাথে দুই পক্ষে তীব্র চাপা গুঞ্জন শোনা যায়। ডি ক্যাপ্রিও
নিজের ছেলেকে বলে উঠে,
-এই ব্যাটা ছাগলের বাচ্চা জেমস! তুই এত সুন্দরী সব মায়াবী মাংসাসী ডাইনোসর থাকতে কিনা গিয়েছিস তৃণভোজী নরম কাটাওয়ালাদের কাছে। তোর মাথায় ঠাডা পড়ুক। তোর আক্কেল কি হবে নারে? তুই বেক্কলের মত এসব কি বলছিস?
-বাবা, কেন মিছেমিছি জাতিগত প্রভেদ তৈরি করছ? আমরা এখানে নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তোমরা জোর করে কি আমাদের রোধ করতে পারবে? ভেবে দেখো, আজ যদি আমাদের জায়গায় তোমরা হতে, তাহলে তো তোমরা নিজেদের প্রেমকে সার্থক করার জন্যই উঠে পড়ে লাগতে। এখন আমাদের বাঁধা দিচ্ছো কেন?
এই পর্যায়ে ধমকে উঠল পূর্ণিমার বাবা নাসিরুদ্দিন শাহ।
-চুপ কর বেটা ছাগলের বাচ্চা গরুর সন্তান! তোর বাপ যেটি বলেছে সেটি বোঝার মত গোবর এখনো তোর মাথায় হয়নি, আর হবেও না। তুই মর নিজের গর্তের ভিতর!
পূর্ণিমা ঠিক তখনই চেঁচিয়ে উঠল,
-বাবা, তুমি এসব কি বলছ? আমরা একজন আরেকজনকে ভালোবাসি। আর ভালোবাসার মধ্যে তুমি যেসব কথা বলছ তার কোন যৌক্তিকতা নেই। কারণ আমরা উভয়ে একই প্রজাতী, সবাই ডাইনোসর। তাহলে কেনো সব বিভেদ ভুলে ঘাড়ে ঘাড় মিলিয়ে দাঁড়াচ্ছ না? এতে কি ভালো কিছু হচ্ছে?
পূর্ণিমার বাবা মেয়েকে ভেঙচে উঠল সুর করে করে।
-ওরে আমার জ্ঞানী মেয়েরে! জ্ঞান কয় লিটার হয়েছে? চোঙ দিয়ে মেপে দেখতে হবে নাকি? লাজ-লজ্জার মাথা যখন খেয়েছিস, তখন একটা কথা বলি। বিয়ের পর ওই ছাগলের বাচ্চা গরুর সন্তানটাকে চুমু দিবি কিভাবে? পাছা দিয়ে?
-কেন বাবা? এর মধ্যে চুমুর প্রশ্ন আসছে কেন?
-ওরে আমার জ্ঞানী মেয়েরে! ওই ব্যাটা হলো মাংসভোজী, ওরা ফক্কশ ফক্কশ শব্দ করলে মুখ হতে আগুন বের হয়, তুই সেই মুখে চুমা দিয়ে সাত-আট দিনের মধ্যেই নিজের চেহারা বিশ্বসুন্দরীর মত কয়লা করে ফেলতে চাস নাকি?
-কয়লা হলে চুমু দিব না।
গম্ভীর মুখে দৃঢ়তার সাথে জবাব দিল পূর্ণিমা। তবে তাতে পূর্ণিমার বাবা মোটেও দমল না, তবে একটু অপ্রস্তুত হলো। সে মিশা সওদাগরের কানে কানে কিছু একটা বললো। মিশা সওদাগর জোর গলাতেই বলল,
-Ok Boss, আমি এখুনি পূর্ণিমাকে এমনভাবে সার্ভিস করে দিচ্ছি, যেন জেমস বণ্ডের পারফিউমের গন্ধও পূর্ণিমার নাকে গুয়ের দলার মতো লাগে।
মিশা সওদাগর এগিয়ে গিয়ে পূর্ণিমার গা ঘেঁষে দাঁড়ালো। বললো,
-তুমি নাহয় ওকে জোর করেই তোমার জীবনে পেলে, কিন্তু একজন সঙ্গী পাওয়ার সার্থকতা কোথায় যদি সন্তান না হয়, হিঃ হিঃ। তোমরা তো কোনোদিনই সন্তান নিতে পারবে না।
-কেনো? সন্তান নিতে পারবো না কেনো?
পূর্ণিমার দৃঢ় কিন্তু অজ্ঞ জবাব শুনে খ্যাক খ্যাক করে আবার হেসে উঠলো মিশা সওদাগর, বললো,
-ওরে আমার শখ রে! ওই বদমাশ মাংসভোজী ডাইনোসরের লিঙ্গে লেজের মত কাটা আছে, সেটা কি তুমি জানো না? না জানলে জেনে নাও, ও যখন লিঙ্গ দিয়ে তোমার সাথে মিলিত হবে। তখন তোমার যৌনাঙ্গ ঝড়ের মুখে পড়া গাছের পাতার মত ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে। তুমি তো নিজের মরণ নিজেই ডেকে আনতে চাইছো, এই জন্যই তোমার আব্বার মতো আমিও তোমাকে বলছি, গাধীরাম কোথাকার!
কথা শুনে পূর্ণিমা কেমন যেন দুঃখী চেহারা করে ছলছল চোখে তাকিয়ে রইলো মিশা সওদাগরের দিকে। এ সময় জেমস অভূতপূর্ব এক জবাব দিল।
-গোপন সম্পর্কের কথা যখন তুললেন, তখন একটা কথা বলছি। আমাদের গোপন সম্পর্কটা জরুরী বিষয় নয়, জরুরী বিষয় হলো আমরা একজন আরেকজনকে ভালোবাসি। সারাজীবন ভালোবেসে যাব। তার জন্য যে আমাদের গোপন সম্পর্ক গড়তেই হবে এমন কোন কথা নেই। হ্যাঁ, আর সমস্ত জন্তুদের মতো সন্তান আমাদের জীবনের চরম প্রত্যাশার ব্যাপার বটে, কিন্তু............ পূর্ণিমার যদি মানসিক জোর থাকে, তবে আমরা উভয়েই ব্যাপারটা মেনে নেবো। আপনারা শুধু শুধু আমাদের দু’জনের পবিত্র সম্পর্ক ধ্বংস করতে যাবেন না।
ডায়ালগ শুনে পূর্ণিমার বাবা নাসিরুদ্দিন শাহ হাতের একটি গাছ নিয়ে সজোরে ছুড়ে মারল জেমস বন্ডের গায়ে। তীব্র বেগে গাছটি এসে আঘাত করল জেমসের কাঁধের মাঝ বরাবর। তৎক্ষণাৎ চামড়া ছিলে রক্তের ধারা বয়ে যেতে শুরু করল জেমসের দেহ হতে। ব্যাপার দেখে খানিকক্ষণ হতভম্ব হয়ে রইল মাংসভোজী ডাইনোসরদের দল। এরপর জেমসের বাবা ডি ক্যাপ্রিও তার মুখ হতে ফক্কশ শব্দ তুলে আগুনের দলা বের করলেন পূর্ণিমার মাথা লক্ষ্য করে। একটা মূহুর্ত লাগল জেমসের ব্যাপারটা বুঝে উঠার জন্য। সে প্রচন্ড গতিতে পূর্ণিমাকে ধরে লাফিয়ে পড়ল শক্ত মাটিতে। আগুনের তীব্র আঁচ লেগে ঝলসে যাওয়ার উপক্রম হলো জেমসের মাথা।
সাথে সাথে মারমার কাটকাট শুরু হয়ে গেলো উভয়পক্ষের ডাইনোসরদের মাঝে। জেমস যতক্ষণ চেতনা ছিল ততক্ষণ পর্যন্ত চেষ্টা করল ডাইনোসরদের এই অহেতুক যুদ্ধ থামাতে। কিন্তু সে পূর্ণিমাকেও সামলে রাখতে পারছে না। এরি মধ্যে পূর্ণিমার দেহে আঘাত লেগে চামড়া ফেড়ে গিয়ে ভরভরিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসছে। কোথা হতে আঘাত এসেছে দেখতেই পায়নি জেমস।
তীব্র আর্তনাদ আর করুণ কন্ঠের হাহাকার উঠছে ডাইনোসরদের মাঝে। একজন আরেকজনকে যেভাবে পারছে মারছে। জ্ঞান হারানোর আগ পর্যন্ত জেমস দেখতে পেলো ডাইনোসরগুলো একের পর এক লুটিয়ে পড়ছে মাটিতে। চারদিকে চিৎকার চেঁচামেচি আর মৃত্যুর ঘন্টা ধ্বনি বেজে চলছে বুক ফাটানো স্বরে। দীর্ঘক্ষণ ধরে চলল ডাইনোসরদের দু’পক্ষের খুনোখুনি। তারপর এক সময় নীরব হয়ে এলো চারপাশ। প্রান্তর জুড়ে অদ্ভুত নিস্তদ্ধতা আর নির্জনতার গাঢ় ছায়া পড়ল। গাছের পাতা কিংবা বনের অন্যান্য জন্তু-জানোয়ারের কন্ঠও যেন তীব্র ভয়ে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ল।
দুই দিন পরঃ জ্ঞান ফিরে এসেছে পূর্ণিমার। খানিকটা দ্বিধা আর ম্যাজম্যাজ ভাব নিয়ে উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করল সে। প্রচন্ড জ্বালা করছে তার সারা দেহ জুড়ে। মনে হচ্ছে কোনো লোহার বল্লম দিয়ে তার শরীর খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে কেটে ফেলা হচ্ছে। ধীরে ধীরে তার নাকে ভ্যাপসা পঁচামতন গন্ধটা এলো। চোখ মেলে তাকালো সে প্রান্তর জুড়ে। সেখানে সারি সারি ডাইনোসরদের মৃত দেহ পড়ে রয়েছে দেখে শিউড়ে উঠল সে। কি ভয়ানক দৃশ্য! একেকটার দেহ যেন ধারালো অস্ত্র দিয়ে বিনা দ্বিধায় খুবলে টুকরো টুকরো করা হয়েছে। কয়েকটা ডাইনোসরের আবার মাথা বলতে কিছু অবশিষ্ট নেই। জায়গায় জায়গায় শুকনো মগজের দলা, বুকের খাঁচা আর পেটের নাড়ি-ভূড়ি পঁচে গিয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। গন্ধে পূর্ণিমা নাকে হাতচাপা দিয়েই দুঃস্বপ্ন হতে বাঁচার জন্য দু’চোখ বন্ধ করে ফেলল।
তারপর আবার চোখ খুলে তাকালো সে। তার গায়ের অনেক জায়গায় ক্ষতের চিহ্নু স্পষ্ট। সে ধীরে ধীরে হেঁটে নিজেদের পুরানো উপত্যকার কাছে ফিরে এলো। সেখানে কেউ নেই। মনে হচ্ছে মাত্র দু’রাতের ব্যবধানে সমস্ত ডাইনোসর প্রজাতি বিলীন হয়ে গেছে। এসবের জন্য দায়ী তাদের উত্তাল প্রেম। সে কিভাবে নিজেকে ক্ষমা করবে? তাছাড়া তাদের প্রজাতী এত বোকা কেনো? সামান্য আক্কেলটাও কি তারা পায়নি?
প্রান্তরের একদম খোলা অংশে এসে দাঁড়ালো পূর্ণিমা। তার পেট হঠাৎ করে মোচড় দিয়ে উঠল। ঠিক প্রসব বেদনার মত ব্যাথা টের পেলো সে। প্রচন্ড কষ্টে তার মেরুদন্ড বাঁকা হয়ে এলো। সে মাটিতে নুয়ে এলো। ঠিক তখনই তার পেট হতে দুটি ডিম বেরোল। একটি লাল রঙের, অন্যটি সবুজ রঙের। ঠিক যেন এক জোড়া মাংসভোজী আর তৃণভোজী ডাইনোসর খেলা করছে ডিমের ভিতর। দিব্য দৃষ্টিতে দেখতে পেলো পূর্ণিমা। ধীরে ধীরে তার দু’চোখ অবসন্ন হয়ে এলো। প্রান্তরের মায়াময় মাটিতে নিস্তেজ হয়ে পড়ে রইল পূর্ণিমা। ধ্বংস হয়ে গেলো ডাইনোসরের শেষ বংশধরও, একটি প্রেমের কারণে।
বর্তমানেঃ নর্থ ডাকোটা বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকা-এর কয়েকজন প্রত্নতাত্নিক আফ্রিকার জঙ্গলের কাছের একটা সাগরের পাশে এসেছেন। সাগরের অন্যপাশে আবার একটা খাল চলে গেছে জঙ্গলের ভিতর দিয়ে। প্রত্নতাত্নিকরা একটা খোলা উপত্যকার কাছে এসে দাঁড়িয়েছেন। তাদের হাতে নানারকম আধুনিক যন্ত্রপাতি আর চোখে কিসব অদ্ভুত কিসিমের কাঁচের গ্লাস। হঠাৎ একজন জোরে চেঁচিয়ে উঠলেন। তিনি একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডীন এবং টিচার বব কেইন। হাতে তার হ্যান্ড গ্লাভস পড়া, সেখানে শোভা পাচ্ছে এক জোড়া শকুনের ডিমের মত অদ্ভুত রঙের ডিম। একটি লাল, অন্যটি সবুজ। মজার বিষয় হচ্ছে ডিমগুলো এখন পর্যন্ত ফেঁটে বা ভেঙে যায়নি। সম্পূর্ণ অক্ষতই আছে। আর মনে হচ্ছে সেখানে একজোড়া ডাইনোসর যেন জ্বলজ্বল চোখে তাকিয়ে আছে বাইরের পৃথিবীতে বেরিয়ে আসার জন্য।
আরাফাত নিলয়
©somewhere in net ltd.