নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কিছু বলার নাই। আমার সম্পর্কে জানতে চাইলে আমার ফেসবুক প্রোফাইল দেখতে পারেন।\nলিংক: http://facebook.com/A.RAKIB07

আরিয়ান রাকিব

পড়তে ভালোবাসি সে যাই হোক না কেন,গল্প কবিতা কিংবা প্রবন্ধ। লিখতে চাই, মাঝে মাঝে ভালো কিছু লিখেও ফেলি কিন্ত অনেক সময় ভিতর থেকে কিছু আসেনা । তবু চেষ্টা করে যাই নিরন্তর।

আরিয়ান রাকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

আগন্তুক (অনুগল্প)

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:০৪

যাকে বিয়ে করেছিলাম,সে বাসর ঘরে আমার কাছে একজন আগুন্তক ছিলো। শিহান আমাকে ভালোবাসার নামে টানা ভোগ করে এরপর হাওয়া হয়ে যাওয়া আর তারপর আমার সুইসাইড এটেম্পট করা এবং চেয়ারটা ছুঁড়ে ফেলার আগেই বাবা এসে ধরে ফেলা আর তড়িঘড়ি করে এই আগুন্তককে ধরে বিয়ে দিয়ে ফেলা। এই বিয়েতে আমার মত ছিলো না,কারণ আমার সব ভালোবাসা ছিলো শিহানের জন্য। আমি বিয়ের আগের দিন পর্যন্ত অপেক্ষায় ছিলাম,শিহান ফিরে আসবে,সবার সামনে আমাকে বিয়ে করবে।
শিহান আসেনি। আসেনি বলেই এখন আমি এক আগুন্তকের ফুলে ফুলে সাজানো খাটের উপর সেজেগুঁজে বসে আছি। আমি আগুন্তকটার বউ।
আমার মাথায় নানান কথা ঘুরতে লাগলো। বিয়ের আগে আমার স্বামীকে আমার অতীত জীবনের কথা কিছুই বলা হয়নি। বাবাকে বলেছিলাম,বাবা বলেছিলো অমন অতীত সবার থাকে,এসব বলার কিছুই নেই। আমি অবাক হয়েছিলাম। সবার প্রেমিক তাদের প্রেমিকাকে ভালোবাসার কথা বলে ভোগ করে? সবার প্রেমিক ভন্ড?
আমি কি বলবো? স্বামীর সামনে কি কুমারী সাজবো? সে যদি বুঝে যায়? আমি কি তাকে বলবো যে আমি এখনো শিহানের স্পর্শ ভুলতে পারিনি,দয়া করে আমাকে একটু সময় দিন। আমি ফ্রি হলে নিজেই আসবো,আই প্রমিজ। এসব শুনে সে যদি রাগ করে?
আমি ডায়েরি খুললাম। নতুন ডায়েরি। আগেরটা বাবা পুড়িয়ে ফেলেছেন বিয়ের দুদিন আগে,ওখানে শিহানের সাথে কাটানো সব সময়ের কথা লেখা ছিলো কি না! বাবা নতুন এই ডায়েরি দিয়ে বলেছিলেন," এটাতে স্বামী সংসারের কথা লিখবি,নতুন জীবনের কথা লিখবি। "
আমি ডায়েরির প্রথম পাতায় প্রথম বাক্যটা লিখলাম...." আমি কিছুক্ষণ আগে এক আগুন্তককে বিয়ে করেছি। "
এটুকু লিখেই ডায়েরি লুকিয়ে ফেললাম। ঠিক তখনই দরজা খোলার শব্দ হলো। সাথে সাথেই আমার বুকের ভেতর কে যেন হাতুড়ি পেটাতে শুরু করলো,এসি রুমের ভেতর আমি দরদর করে ঘামতে লাগলাম। আমি তার পায়ের আওয়াজ শুনে বুঝলাম,সে আমার কাছে আসছে। আমি অপেক্ষায় থাকলাম,এখনই বোধহয় সে আমার গায়ে হাত দেবে,কাবিননামার অধিকার চেয়ে বসবে। আমি দাঁতে দাঁত চেপে অনাগত যন্ত্রণা সহ্য করার শক্তি চাইলাম সৃষ্টিকর্তার কাছে।
- " সুপ্রিয়া!"
সে গম্ভীর কিন্তু আশ্চর্য শান্ত কণ্ঠে আমাকে ডাকলো। আমি ধীরে ধীরে মাথা তুললাম। সে আমার থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে।
-" সুপ্রিয়া,আমি পাশের ঘরে ঘুমাবো। "
আমি অবাক হলাম। মা বলেছিলেন,যদি স্বামী আমার সাথে ঘুমুতে না চায়,তাহলে আমি স্ত্রী হিসেবে ব্যর্থ। মায়ের কথা কানে বাজতে লাগলো। আমি কিছু না বলে চুপ করে থাকলাম।
-" তুমি জিজ্ঞেস করবে না কেন অন্যরুমে ঘুমুবো? ওকে,তবু বলি। তুমি আমার স্ত্রী। কোন রক্ষিতা বা পতিতা নও। "
আমি তার কথার অর্থ বুঝতে পারলাম না। বাবা বলেছিলেন স্বামীর কোন কথা না বুঝলে চুপ করে থাকতে। আমিও চুপ করে রইলাম।
- " যদি আমরা দুজন দুজনকে ঠিকমত না জেনেই একসাথে শুই,তাহলে তোমার আর একজন পতিতা আর আমার সাথে তার খদ্দেরের পার্থক্য কোথায়? আমরা একসাথে একদিন এক বিছানায় থাকবো,যখন আমরা দুজনেই সেটা চাইবো,আর সেদিনই আমার বাসর রাত হবে। I definitely won't be having sex with a stranger. "
সে বাতি নিভালো আর পাশের রুমে চলে গেলো। আমি এর কিছুক্ষণ পর জামা চেঞ্জ করলাম আর শুয়ে পড়লাম। আমি টের পেলাম,অনেকদিন পর কারো সুন্দর আচরণে আমার চোখ ভিজে উঠছে। সেই একজন আমার স্বামী।
পরদিন সকালে আমি ঘুম থেকে উঠলাম। নাস্তা বানানোর জন্য রান্নাঘরে যেতেই দেখলাম সে ডিম পোঁচ করতে ব্যস্ত।
আমাকে দেখে এক গাল হেসে সে বললো," শুভ সকাল। "
আমি ধীরে ধীরে জিজ্ঞেস করলাম, " আপনি রান্না করছেন কেন?
সে হেসে বললো, " সুপ্রিয়া,আমি রান্না করতে পছন্দ করি,ওকে? তুমি যদি পছন্দ করো তুমিও করবে। সমস্যা তো নেই। এমন তো না যে সব সময় তোমাকে আমার জন্য খাবার বানাতে হবে। খাবার বানানোর জন্য তো তোমাকে বিয়ে করিনি। "
এভাবে আমার বিবাহিত জীবন শুরু হলো। একটু একটু করে তার সাথে আমার জীবন কাটতে লাগলো। আমি অতীত জীবনের কথা তখনো খুলে না বললেও অন্যান্য টুকিটাকি কথা বলতে লাগলাম।
একবার সব বন্ধু বান্ধবীরা মিলে বান্দরবান যাওয়ার প্ল্যান করলো। চারদিনের ট্যুর,ট্র্যাকিং করে বগালেক,কেউক্রাডং ঝাদিপাই যাওয়া হবে। আমি ঘুরতে খুব পছন্দ করতাম। বগালেক যাওয়ার ইচ্ছা আমার অনেকদিনের ছিলো। আমি আমার স্বামীকে বললাম, " সব বন্ধুরা বান্দরবান যাচ্ছে চারদিনের জন্য। আমি কি যেতে পারি? আপনি যদি চান তাহলে যাই। অথবা ট্যুরের মাঝখানে যখন ইচ্ছা আপনি কল দিলেই আমি চলে আসবো। "
আমার মা একবার বাবার কাছে তার এক বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার অনুমতি চেয়েছিলেন। তখন বাবা যেরকম বিরক্ত হয়ে মানা করেছিলেন,আমার স্বামীও একইরকম বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো।
-" সুপ্রিয়া!! কতবার বলবো,তুমি আমার বউ। এভাবে কেন অনুমতি খুঁজছো? যেন তুমি একজন কয়েদি? তোমার যেতে ইচ্ছা হচ্ছে,যাবে। এভাবে অনুমতি খুঁজবে না আর। আই ট্রাস্ট ইউ। "
এটা বলেই সে কটমট করে হেঁটে চলে গেলো। আমি বুঝলাম,আমার কাছুমাছু হয়ে অনুমতি খোঁজার ব্যাপারটা তাকে বড্ড রাগিয়েছে।
আমি বারান্দায় গিয়ে তার পেছনে দাঁড়ালাম। সে দূরের আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলো। আমি তার পাশে দাঁড়ালাম আর নিচের দিকে তাকিয়ে বললাম, " আমি শিখছি,প্লিজ আমাকে একটু সময় দিন। "
সে আমার কথা শুনে হেসে ফেললো। আর বললো, " হাসার জন্য সরি। আর সরি,একটু আগে রাগ দেখানোর জন্যও। আচ্ছা আমি মাথায় রাখবো এটা,যদি তুমি আমাকে প্রমিজ করো যে তুমি এটা আর কখনো ভাববে না তুমি আর তোমার ঘরে নেই। তুমি এটাকে তোমার নিজের ঘর ভাববে। ওকে সুপ্রিয়া? "
এই বলে সে এক সেকেন্ডের জন্য আমার কাঁধে হাত দিয়ে মুচকি হেসে চলে গেলো। বিয়ের পর ওটাই ছিলো আমাকে তার করা প্রথম স্পর্শ। এটা স্পেশাল ছিলো,আমার শরীরের সমগ্র কোষে এক মুহূর্তের জন্য সাড়া পড়ে গিয়েছিলো। তার চেয়েও স্পেশাল লাগতো তার ভরাট গলায় আমার নাম," সুপ্রিয়া!!"
আমি আমার বন্ধু বান্ধবদের বাসায় দাওয়াত দিতাম মাঝে মাঝে। আমার স্বামীও এসে আড্ডায় জয়েন হতো। তাদের অনেকে আমার চেয়ে আমার স্বামীর ভালো বন্ধু হয়ে গেলো।
একদিন রাতের কথা। আমি আর সে টিভি দেখছিলাম। হঠাৎ সে আমাকে জিজ্ঞেস করলো, " গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করে কি করবে? চাকরি?"
আমি ধীরে ধীরে বললাম," আমি লেখিকা হতে চাই।"
এটা শোনার পর তার এক্সপ্রেশন ছিলো অমূল্য। আমি বিয়ের পর তাকে এতটা খুশি দেখিনি যতটা আমি লেখক হতে চাই শুনে সে হয়েছিলো।
-" আমিও লেখক হতে চেয়েছিলাম। তবে কাজের ব্যস্ততায় লেখা হয়নি কিছুই। Will you do that for both of us?", সে আনন্দ আর উজ্জ্বল মুখে আমাকে জিজ্ঞেস করলো। আমি ধীরে ধীরে মাথা নাড়লাম....হ্যাঁ,আমি পারবো।
সেই রাতে আমি বিয়ের রাতের চেয়েও বেশি কাঁদলাম। আমি বালিশে মুখ গুঁজে ছিলাম,যাতে কান্নার শব্দ বাইরে না যায়। কিছুক্ষণ পর আমি দরজার কাছে তার ছায়া দেখতে পেলাম। আমি তার কাছে দৌড়ে গেলাম এবং তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেলাম। এরপর তাকে আমার বিছানায় টেনে আনলাম।
-" তুমি কি সিউর যে এসব তুমি স্বাভাবিক মাথায় করছো?",সে জিজ্ঞেস করলো।
-" তুমি কি সিউর যে তোমার কোন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে না?",আমি মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করলাম।
সে জোরে হেসে উঠে বললো, " একটু পরেই জেনে যাবা যেতে হবে কিনা। "
আমি হঠাৎ তাকে থামিয়ে বললাম, " এই শুনো,একটা কথা। আমি কিন্তু কুমারী না। আমাকে একজন ধোঁকা দিয়েছিলো। "
সে হাফ ছেড়ে বললো," ভাগ্যিস এটা বললে। আমি ভেবেছিলাম তুমি আমাকে বলবে যে তোমার এইচআইভি পজেটিভ। "
অনেকদিন পর আমি উচ্চস্বরে হেসে উঠলাম আর তার শার্ট ধরে তাকে কাছে টেনে আনলাম। এভাবে বিয়ের সাড়ে তিনমাস পর আমরা একে অন্যের কাছে আসলাম।
.
পরদিন খুব ভোরে আমার ঘুম ভেঙে গেলো। সে দুই হাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে পরম শান্তিতে ঘুমাচ্ছিলো। আমি তার খোঁচা খোঁচা দাড়িওয়ালা গালে সাবধানে চুমু খেলাম। পাশে হাত দিয়ে ড্রয়ার থেকে আমার ডায়েরি বের করে নিলাম। সেখানে প্রথম পাতায় লেখা ছিলো, " আমি কিছুক্ষণ আগে একজন আগুন্তককে বিয়ে করেছি।"
আমি তার নীচে লিখলাম, " আর সেই আগুন্তককে আমি এখন ভালোবাসি।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:৪১

রিভার্স বলেছেন: চমৎকার লেখা। সাবলীলতার মাঝখানে কাব্যময় ছন্দ আমাদের মত বুভুক্ষু পাঠকদের তৃপ্ত করতে যথেষ্ট। পরের লেখার জন্য শুভকামনা।

২| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:৪২

রিভার্স বলেছেন: চমৎকার লেখা। সাবলীলতার মাঝখানে কাব্যময় ছন্দ আমাদের মত বুভুক্ষু পাঠকদের তৃপ্ত করতে যথেষ্ট। পরের লেখার জন্য শুভকামনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.