![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রশ্নঃ বেদে কতজন ঈশ্বরের উল্লেখ আছে? আমরা শুনেছি বেদে অনেক ঈশ্বরের উল্লেখ আছে।
উত্তরঃ আপনি অবশ্যই ভুল উৎস থেকে শুনে থাকবেন। বেদে সুস্পষ্ট ভাবেই বলা আছে ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয়। এবং বেদে এমন কোন মন্ত্র নেই যা বহু ঈশ্বরবাদকে সমর্থন করে। নিম্নে কিছু উপমা দেয়া হলঃ
বেদে ঈশ্বর= বাইবেলের ঈশ্বর- ট্রিনিটির ধারণা -যীশুর কাছে আত্মসমর্পন করার আবশ্যকতা।
বেদের ঈশ্বর= ইসলামের কুরানের আল্লাহ - মুহাম্মদকে শেষ নবী হিসেবে স্বীকার করার আবশ্যকতা
অন্য ভাবেও বলা যায়, যদি কেউ শাহাদার প্রথম অংশটুকু বলে ("লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন মাবুদ নাই) এবং দ্বিতীয় অংশটুকু (মাহাম্মুদুর রাসুল্লাহ অর্থাৎ মুহাম্মদ হচ্ছেন তারা দূত ) অস্বীকার করে তাহলে সেটা বেদের ঈশ্বরবাদের কাছাকাছি হবে। ইসলামে আল্লাহ ব্যতীত অন্যকিছুকে উপাসনা করা হচ্ছে শিরক অর্থাৎ গুরুতর গুনাহ। তাই কেউ যদি এতটুকু মেনে নেয় এবং মুহাম্মদ অথবা জিবরাইলকে আল্লাহ প্রেরিত পুরুষ ও দূত হিসেবে আবশ্যিক ভাবে মেনে নিতে অস্বীকৃত জানাই তাহলে বেদ অনুসারে তারা শিরককে এড়িয়ে যেতে পারবে।
বেদ অবতারবাদ কে স্বীকৃত করে নি ।
প্রশ্নঃ তাহলে বেদে উল্লেখিত এই বিভিন্ন ধরনের দেব দেবতা কে? আর ৩৩ কোটি দেবতাগন কি?
উত্তরঃ প্রথমেই বলে নিতে হচ্ছে দেবতা হচ্ছে সত্ত্বা যা আমাদের জন্য উপকারী। কিন্তু বেদে কোথাও এটা উল্লেখ নেই যে আমাদেরকে এই সকল সত্তাকে পূজা করতে হবে। অবশ্যই ঈশ্বরও একজন দেবতা অথবা একাধিক দেবতা এবং সেজন্যই বলা হয় মহাদেবতা। তাই শুধু মাত্র তাকেই উপাসনা করতে হবে।
বেদে ৩৩ মিলিয়ন দেবতার উল্লেখ করেনি কিন্তু ৩৩ ধরনের দেবতার উল্লেখ রিয়েছে। সংস্কৃততে দেবতা অর্থ হচ্ছে ধরন বা প্রকার।বিষয়টি শতপথ ব্রাক্ষনে খুবই পরিষ্কার ভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এই ৩৩ ধরনের দেবতাদের মধ্যে রয়েছে
৮ বসু (পৃথিবী, জল, আগুন, বাতাস, আকাশও, চন্দ্র, সূর্য ও গ্রহ/নক্ষত্রাদি ) যা বিশ্ব ব্রক্ষান্ডের (Universe) অংশীভূত যেখানে আমরা বাস করি।
১০টি দেহের জীবনী শক্তি (প্রান, অপান, বায়ু,উদানা, সামানা, নাগা, কুর্মা, কুকালা এবং দেবাদত্ত)
১টি আত্মা যাকে বলা হয় রুদ্র
১২ টি আদিত্য(বছরের মাস সমুহ)
১ তড়িৎ চুম্বকয়ি শক্তি (Electromagnetic force )
১ যজনা (মানুষ কর্তক স্বার্থহীন পূন্যকর্ম)
এই সকল ৩৩ দেবতার প্রভু হচ্ছে মহাদেবতা অথবা ঈশ্বর যাকে শতপথ ব্রাক্ষনের ১৪ কান্ড অনুযায়ী শুধু মাত্র তাকেই উপাসনা করতে হবে অন্য কাউকে নয়। এই ৩৩ দেবতার ধারণাটি হচ্ছে বিশাল গবেষণার বিষয় এবং বিষয়টিকে যথাযত ভাবে বোঝার জন্য গভীর অধ্যায়ন প্রয়োজন। তা যাই হোক, বিভিন্ন বৈদ্যিক গ্রন্থের আলোকে এই কথাটি সুস্পষ্ট হয়েছে যে এই সকল সত্ত্বগুলো যাদের আমরা দেবতা বলি তারা কেহই ঈশ্বর নয় এবং উপাসনার যোগ্যও নয়।
ঈশ্বরে বহু গুণাবলীর অধিকারী। শুধু মাত্র মূর্খ মানুষেরাই মনে করে ঈশ্বরের ভিন্ন ভিন্ন গুন এক একটি ঈশ্বর।
এই সন্দেহ গুলো দূর করার জন্য বেদে কয়েকটি মন্ত্র আছে যেখানে পরিষ্কার ভাবে উল্লেখ করেছে যে ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয় এবং তার কোন সহকারী, দূত, নবী, অবতার অথবা অধিনস্ত কোন কর্মচারী নেই যার মাধ্যমে আমরা ঈশ্বরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করবো।
উদাহরন স্বরূপঃ
যর্যুরবেদ ৪০.১: এই সমস্ত বিশ্ব শুধু মাত্র একজন ঈশ্বর দ্বারা সৃষ্টি ও পরিচালিত হচ্ছে।কখনই অন্যায় করো না অথবা অন্যায় ভাবে সম্পদ অর্জনের ইচ্ছা করো না।
ঋগবেদ ১০.৪৮.১: ঈশ্বর সর্বত্রই বিদ্যমান এবং বিশ্ব ব্রক্ষান্ডকে পরিচালিত করেন। পৃথিবীতে একমাত্র তিনিই জয় ও শ্বাশত কারন প্রদান কারী। প্রতিটি আত্মা অবশ্যই তাঁকেই সন্ধান করবে যেমন করে একটি শিশু তারা বাবাকে খোঁজে। শুধুমাত্র তিনি আমাদেরকে খাদ্য ও স্বর্গীয় সুখ প্রদান করেন।
ঋগবেদ ১০.৪৮.৫: ঈশ্বর সমস্ত পৃথিবীকে আলোকিত করেন। তিনি অপরাজেয় এবং মৃত্যুহীনও। তিনি এই জগত সৃষ্টিকারী। সকল আত্মার উচিত পরম সুখ সন্ধান করা জ্ঞান অন্বেষণ ও কর্মের মধ্য দিয়ে। তারা কখনই ঈশ্বরের বন্ধুত্ব থেকে নিজেকে পরিহার করবে না।
ঋগবেদ ১০.৪৯.১: ঈশ্বরই সত্যের সন্ধানীদের সত্যজ্ঞান দিয়ে থাকেন। তিনিই শুধু জ্ঞানের প্রর্বতক এবং ধার্মিক ব্যাক্তিদের পরম সুখ লাভের জন্য পবিত্র কর্ম করতে উৎসাহী করেন। তিনিই একমাত্র জগতের সৃষ্টিকারী এবং এর পরিচালক। ঙটাই ঈশ্বর ব্যাতীত অন্য কারো উপাসনা করো না।
যর্যুরবেদ ১৩.৪: সমগ্র বিশ্বে শুধু একজনই হর্তাকর্তা রয়েছেন। শুধুমাত্র তিনিই পৃথিবী, আকাশ, এবং অন্যন্যা দৈব সত্ত্বাকে ধারণ করেন। তিনি নিজেই পরম সুখী! তিনিই শুধু মাত্র তিনিই আমাদের দ্বারা উপাসিত হবেন।
অর্থববেদ ১৩.৪.১৬-২১: তিনি না দুই, না তিন, না চার, না পাঁচ, না ছয়, এমনকি না সাত, না আট, না নয়, না দশ। তিনি একজন এবং শুধুই একজন। তিনি ছাড়া অন্য কেউ ঈশ্বর নন। সকল দেবতাগণ তার মাঝেই থাকেন এবং তার দ্বারাই পরিচালিত হন। তাই তিনি ছাড়া অন্য কেউ উপাস্য নাই।
অর্থববেদ ১০.৭.৩৮: শুধু মাত্র ঈশ্বরই হলেন শ্রেষ্ট এবং একমাত্র উপাস্য। তিনিই সকল জ্ঞানের ও কার্যাবলীর উৎস।
যর্যুরবেদ ৩২.১১: বিশ্ব ব্রক্ষান্ডের সকল স্থানেই তিনি বর্তমান। কোন স্থানই তাকে আড়াল করতে পারে না। তিনি নিজেই নিজের কাজ করেন এবং তাঁর কাজ করার জন্য তাঁর কোন সহায়কের সাহায্যের প্রয়োজন হয় না। যে আত্মা অনুধাবন করতে পারে যে শুধুমাত্র ঈশ্বরই তাকে জয় করতে পারে এবং উপভোগ করতে পারে শর্তহীন অসীম আনন্দ অথবা মকশা।
বেদে এই রকম আরও অসংখ্য মন্ত্র রয়েছে যেখানে এক মাত্র ঈশ্বরকেই ব্যাখ্যা করেছে এবং উপদেশ দিয়েছে অন্য কোন দৈব সত্ত্বাকে ( অবতার, রাসূল, ফেরেশতা, দূত, দেবদেবী) না ডেকে একেবারে সরাসরি শুধু তাকেই ডাকো এবং তারই বন্দনা ও উপাসনা করো।
প্রশ্নঃ তার মানে কি সকল মন্দির ও রাম, কৃষ্ণ, দূর্গা, লক্ষি এদের পূজা করা ভুল?
উত্তরঃ ধরুন একজন ধার্মিক বা যিনি একটি প্রত্যন্ত গ্রামে বাস করেন। একদিন তার ছেলেকে সাপে কেটেছে। সে তার ছেলের জীবন বাঁচানোর জন্য এক ঝাড় ফুঁকওয়ালার কাছে ছুটে গেল। এখন আপনি কি তাকে ভুল বলবেন নাকি সঠিক বলবেন?
আজকাল ঈশ্বরের উপাসনা তা হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান যাই হোক না কেন সবাই আসলে একই অবস্থায় আছে। তাদের উদ্দেশ্য, ভক্তি, শ্রদ্ধা কিন্তু একেবারে খাঁটি। কিন্তু অজ্ঞতার দরুন তারা ঈশ্বরের উপাসনার ভুল পথকে গ্রহন করেছে। একটা বিষয় নিশ্চিত যে সকল হিন্দুরা যারা বেদ সম্পর্কে সামান্য কিছুটা জ্ঞান রাখে তারা মানতে বাধ্য যে বেদই হচ্ছে সর্ব শ্রেষ্ট। তাই ইতিহাসের কালজয়ী এ সকল মহৎ পুণ্যবানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সঠিক পন্থা হচ্ছে তাদের সকল গুন গুলো আত্মস্ত করা এবং তাদের ন্যায় মহৎ কর্ম করা। উদাহরণ স্বরূপ, রাবণকে আমরা দেখতে পাই একজন স্বেচ্ছাচারী, পাপাচারী, ধ্বংসকারী, অন্যায়কারী এক রাজা হিসেবে। যদি আমরা এক হয়ে বর্তমানের সকল রাবণের বিরুদ্ধে লড়াই করে সেটাই হবে শ্রী রাম চন্দ্রের যথার্থ মহিমা প্রকাশ ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন। ঠিক একই ভাবে শ্রী কৃষ্ণা, দূর্গা, হনুমান ইত্যাদি।
আমরা এই ভাবে ঐ সকল পুণ্যবান আত্মাদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে পারি এবং আমরা সকল সম্প্রদায়ের ভক্তদের প্রতি আন্তরিক ভাবে প্রণাম জানিয়ে তাদের নিকট প্রার্থণা করবো যেন সকল ভক্তরা সে ভাবেই ঈশ্বর উপাসনা করবেন যেভাবে শ্রী রাম চন্দ্র ও শ্রী কৃষ্ণ করেছিলেন তাদের জীবদ্দশায় ।
চলবে .........।
২| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৪
আর চক্রবর্ত্তী বলেছেন: দারুণ লাগলো ভাই।বেদ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ-এ কথা যেন আমরা ভুলতেই বসেছি।ভাল লিখলেন।ধন্যবাদ।চালিয়ে যাওয়ার জন্য শুভকামনা রইল...
৩| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৭
সিস্টেম অ্যাডমিন বলেছেন: ধন্যবাদ
লেখাটির সমস্ত ক্রেডিট " অগ্নিবীর " এর।
৪| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৫
স্বাধীকার বলেছেন:
লিখতে থাকুন।
শুভ কামনা।
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০২
কষ্টবিলাসী বলেছেন: আমার দুটো প্রশ্ন, শুধু জানার জন্য। ধর্মীয় উস্কানি দেয়া আমার কাজ নয়, কারও ধর্মকে ছোট করাও আমার উদ্দেশ্য নয়।
১। রাম-রাবনের ঘটনা কি শ্রেফ কেচ্ছা কাহিনী নাকি বাস্তব ইতিহাস আছে?
২। বেদ বা হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থগুলো কি ঈশ্বর পাঠিয়েছেন নাকি মানুষ রচনা করেছেন?
আর আপনি একটি ভুল করেছেন। আপনি বলেছেন, "আজকাল ঈশ্বরের উপাসনা তা হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান যাই হোক না কেন সবাই আসলে একই অবস্থায় আছে।"
সবাই একই অবস্থায় নেই। আপনি শুধুমাত্র আপনার ধর্মের কথা বলুন।
ধন্যবাদ আপনাকে।