![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঈশ্বর যে কেবল ভক্তের হৃদয়ের শুদ্ধ ভক্তির মাঝে অবস্থান করেন তা আপনারা আজকের প্রবাদ বাক্যটির উৎপত্তির গল্পটির মাধ্যমে জানতে পারবেন। তাঁকে যে খল,কপটতা,অশ্রদ্ধা যুক্ত মন দ্বারা লাভ করা যায় না , এই সাধন সংকেতই আমরা পেয়ে থাকি এই প্রবাদ বাক্যটির মাধ্যমে ! “অশ্রদ্ধার রাজভোগের চেয়ে বিদুরের খুদও ভাল” । আজকের প্রবাদ বাক্যটি হল ‘বিদুরের খুদ’ । বিদুর কথাটির আক্ষরিক অর্থ হল দূরবর্তী স্থান । কিন্তু এখানে বিদুর অর্থে ধৃতরাষ্ট্রের ছোট ভাইকে বোঝান হয়েছে।
বিদুর মহাভারতের একটি বিশিষ্ট চরিত্র। তিনি ছিলেন কুরুবংশীয় ধৃতরাষ্ট্র ও পাণ্ডুর ভাই ।কথিত আছে যমরাজ এক মুনির শাপে বিদুর নামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন পরম ধার্মিক এবং পণ্ডিত।
১২ বছর অজ্ঞাত বাসের পরে পাণ্ডবরা অর্থাৎ পাণ্ডুর পুত্ররা যখন তাঁদের রাজ্য হস্তিনাপুরে ফিরে আসেন তখন ধৃতরাষ্ট্র পুত্র দুর্যোধন তাঁদের রাজ্য ফিরিয়ে দিতে রাজী হল না । পাণ্ডব অগ্রজ ধার্মিক যুধিস্টির আসন্ন যুদ্ধের পরিণাম ভেবে দুঃখ পেলেন । তিনি বললেন , তাঁর নিজের আত্মীয় পরিজনদের যুদ্ধে বধ করে রাজ্য জয়ের চেয়ে আবার বনবাসে যেতেও তিনি প্রস্তুত। পাণ্ডব সুহৃদ শ্রীকৃষ্ণ তখন এই ভয়ঙ্কর জ্ঞাতি যুদ্ধ থেকে বুঝিয়ে দুর্যোধন কে বিরত করবার জন্য হস্তিনায় যাবেন বলে ঠিক করলেন ।
কৃষ্ণের আগমন সংবাদ বিদুর হস্তিনার রাজা তাঁর ভাই ধৃতরাষ্ট্রকে দিলে তিনিও খুশী হলেন । তিনিও চান না জ্ঞাতিদের মধ্যে এই যুদ্ধ হোক!
পণ্ডিত বিদুর ধৃতরাষ্ট্রকে বললেন , সকল পক্ষের মঙ্গলের জন্য শ্রীকৃষ্ণ আসছেন তোমার সভায় । জান তো , ভগবান ভক্তের অধীন – তাই ভক্তি ভরে তাঁকে অভ্যর্থনা কর , কপটতা করো না ।শ্রদ্ধার সঙ্গে যৎসামান্য প্রচেষ্টায় তাঁকে তুষ্ট করা সম্ভব কিন্তু অশ্রদ্ধার মনি মাণিক্য খচিত দেবালয়ে তিনি কখন আসন গ্রহন করেন না । ভীষ্ম , দ্রোণ , কৃপ প্রভৃতি বিদ্দজনেরাও একমত হলেন বিদুরের কথায় কিন্তু বাধ সাধল দুর্যোধন ( এই দুর্যোধন এবং তাঁর মন্ত্রনাদাতা মামা শকুনির চক্রান্তে মূলত পাণ্ডবদের ১২ বছর বনবাস এবং ১বছর অজ্ঞাত বাস কাটাতে হয় ) সে বলল কিসে এত শ্রদ্ধার পাত্র হয় এই কৃষ্ণ ! সে শিশুপাল রাজাকে অন্যায় ভাবে বধ করেছে । অনেক কপট আচরণ করেছে আমি তাঁকে মানি না । ভীষ্ম(পিতামহ) , দ্রোণ (অস্ত্র গুরু ) দুর্যোধন কে অনেক করে বোঝালেন যে শ্রীকৃষ্ণ যদি কৌরবদের সঙ্গে থাকেন তাহলে তাঁদের জয় নিশ্চিত , তাই তাঁকে শ্রদ্ধা ভক্তি প্রদর্শন করে বশ কর। পাণ্ডবরা তাঁকে ভক্তি করে বলে তিনি তাঁদের সহায় ।
খল দুর্যোধন তাই শুনে বিপুল আয়োজন করল শ্রীকৃষ্ণ কে বশ করার জন্য , তাঁকে বহু রত্নখচিত মন্দির প্রমান প্রাসাদে সিঙ্ঘাসনে বসিয়ে নানা উপায় অবলম্বন করে খুশী করতে চেষ্টা করল , কিন্তু একটা বিষয়ের খুব অভাব ছিল সেটা হল হৃদয়ের শুদ্ধ ভক্তির , আর তাঁর জায়গায় ছিল ছলনা , হিংসা ,কপটতা ! কিন্তু অন্তর্যামী কৃষ্ণ বুজতে পারলেন যে এই সবই তাঁকে বশ করার উপায় মাত্র এর মধ্যে ভক্তির লেশমাত্র নেই । তারপর তিনি দুর্যোধনের ইন্দ্রপুরী ত্যাগ করে শেষমেশ বিদুরের কুটিরে আসলেন ( এই প্রসঙ্গে বলে রাখা ভাল যে ধর্মপ্রাণ এবং মহাত্মা বিদুর রাজা হলেও তিনি অতি সাধারণ ভিক্ষুক এর মতো সাত্বিক জীবনযাপন করতেন ) সেই সময় বিদুর ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে এলেন ঘরে , শ্রীকৃষ্ণ কে দেখা মাত্র তিনি ভক্তি ভরে তাঁর বন্দনা করতে লাগলেন । তাঁর ঘরে যে কিছুই নেই কি দিয়ে তিনি শ্রীকৃষ্ণ কে আপ্যায়ন করবেন ?
শ্রীকৃষ্ণ তাঁর আন্তরিক ভক্তিতে তুষ্ট হয়ে বললেন , তোমার গুনগানে তো আমার পেট ভরবে না ! আমাকে কিছু খেতে দাও – আমার যে খুব খিদে পেয়েছে । আমি স্নান করে জলও খাই নি, তোমার ঘরে যা আছে আমাকে দাও , আমি তাই দিয়ে জলপান করব । বিদুর ঘরে গিয়ে দেখলেন যে ভাড়ার ফাঁকা কেবল চালের খুদ একটু পড়ে আছে পাত্রে । উপায় না দেখে তিনি তাই নিয়ে এলেন এবং শ্রীকৃষ্ণের হাতে দিলেন । তিনিও তাই তৃপ্তি করে গ্রহন করলেন । এই ঘটনা থেকেই লোকমুখে কালক্রমে ‘বিদুরের খুদ’ প্রবাদটির প্রচলন ঘটে ।
০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:২৮
সিস্টেম অ্যাডমিন বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: চমৎকার।
৩| ২১ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:৫২
রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: প্রবাদের আড়ালের রূপকথাটাকে জানানোর জন্যে ধন্যবাদ ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৮
এম. এ. হায়দার বলেছেন: ভাল উদ্যোগ... চলুক।