নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মাইক্রোক্রেডিট নিয়ে সমালোচনা নতুন নয়। কিন্তু সমালোচনা বেশীরভাগই ভাবাবেগ ও পক্ষ নিভর নির্ভর । অনেক বিশেষজ্ঞই অনেকভাবে অনেক মাত্রায় এর সমালোচনা করেছেন। তবে বেশীরভাগ আলোচনাতেই মাইক্রোক্রেডিট, গ্রামীন ব্যাংক এবং ড. ইউনুস এর সীমানা ও দায় অনির্ধারিত বা অস্পষ্ট। সাধারণ্যে এর সবচেয়ে বড় দোষ উচ্চ সুদের হার। কিন্তু মাইক্রোক্রেডিট নিয়ে কোন সমালোচনাতেই বলা হয়না এটা নিষিদ্ধ করা হোক। আসলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সমালোচনার নামে যা হয়েছে তা হচ্ছে গীবত; কারন সমালোচনা হলে এই খাতের দূর্বলতা কাটিয়ে দিনে দিনে তার উন্নতি হত। কিন্তু প্রায় চার দশক ধরে এর আগমন হলেও এর কাঠামোগত, পদ্ধতিগত বা ব্যবহারিক উৎকর্ষ সাধিত হয়নি, সেবা প্রদানের ব্যয় কমানোর কোন উদ্যোগ দেখা যায়না বরঞ্চ দিনে দিনে তা টাকা তৈরীর সহজ ও সস্তা কিন্তু ভীষন লাভজনক যন্ত্র হিসাবে বিকষিত হয়েছে। বাঙ্গালীমধা একে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়! হাটে-মাঠে-ঘাটে-সারাতল্লাটে চালু হয়েছে নানা নামে ঢঙ্গে এনজিও নামক ব্যাঙ এর ছাতার নীচে মাইক্রোক্রেডিট সেবা!!
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এই খাত এখন সবচেয়ে বেশী অনিয়ণিত্রত মহীরূহ। হাজার হাজার মানুষের কোটি কোটি টাকা সংশ্লিষ্ট এই খাতে । বাংলাদেশে এই মহূীর্তে ঠিক কতগুলি মাইক্রোক্রেডিট দাতা প্রতিষ্ঠান আছে এর হিসাব সয়ং বিধাতা ছাড়া আর কারো পক্ষে জানা সম্ভব নয়। সুতরাং সেবা গ্রহীতাদের প্রকৃত সংখ্যা জানতে চাওয়াই অপরাধ! তারপর আবার আছে Overlapping। তবে এটা ধরে নেওয়া যায় নিদেন পক্ষে কোটি দুয়েক মাইক্রোক্রেডিট গ্রহীতা বাংলাদেশে আছে। তবে এই খাতে কত টাকা বিনিয়োগ করা আছে, বিনিয়োগকৃত টাকার কত অংশ উদ্যোক্তাদের (এনজিও মালিকদের ?!!) আর কত অংশ ঐ “Poorest of the poor” দের সঞ্চিত তাও অস্পষ্ট। এই প্রেক্ষিতে সহীহ্ তথ্যের তালাস করা কয়লার খনিতে কালো বেড়াল খোজার মতোই! এই সেক্টরে যদি কোন কারনে বর্তমান স্বনিয়ন্ত্রিত ও প্রচলিত (বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই আসলে অনিয়ন্ত্রিত) ব্যবস্থা ভেংগে পড়ে তাহলে আমাদের সমাজ ও অর্থনীতিতে যে সুনামী বয়ে যাবে তা নিয়ন্ত্রন বা মোকাবেলার সামর্থ সরকারের নাই। কারন আমাদের মধ্যবিত্ত সমাজের অসংখ্য মানুষের বহু কষ্টের সঞ্চিত লক্ষ কোটি টাকা জড়িয়ে গেছে “মাসে লাখের উপর” লাভের লোভের ও ফাঁদে পরে। এছাড়াও রয়েছে বাধ্যতামুলক সষ্ণয় নামে ঋণগ্রহিতাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের বিশাল পাহাড়। কোন ঝামেলা হলে পালাবে মালিক, তার লাভ সে আগেই তুলে নিয়েছে। আখেরে লোকসান সেই আমজনতার। আর দেশবাসীর জন্য এটা হবে মহাসুনামী। কারণ দিনের শেষে সবকিছুর মূল্য পরিশোধ করতে হয় এই দেশের আপামর জনতার। তবে সব বিশৃংখলাতেই সূবিধাভোগী সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম হবেনা।
যে কোন ক্রেডিট কেবলমাত্র তখনই দরকারী ও উপকারী যখন তা উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়, না হলে তা হবে আত্নবিনাসী, ব্যক্তি ও সমষ্টি উভয়ের জন্যই। বাংলাদেশের মাইক্রোক্রেডিট খাতের কিছু ইতিবাচক দিক থাকলেও সচেতন অবহেলার কারণে এই আত্নঘাতি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সচেতনভাবে প্রায় সকল ক্রেডটদাতারাই ক্রেডিটের কাযকর ব্যবহারের দিকটি উপেক্ষা করে কেবলমাত্র কিস্তি আদায়ের দিকে মনযোগী, অথচ প্রায় সকল সংস্থারই কাগজে-কলমে ক্রেডিটের কাযকর ব্যবহার ক্রেডিট প্রদানের অন্যতম প্রধান শত । বাংলাদেশের মাইক্রোক্রেডিট খাতে কাগজে কলমে যে পরিমান নিয়োগ আছে বাস্তবে তার বিপরীতে সম্পদ অনেক কম সৃষ্টি হয়েছে। বরঙ মাইক্রোক্রেডিট সামাজিক ও মানব সম্পদের উপড় ফাইনান্স ক্যাপিটালের আধিপত্য নিরঙ্কুশ করণে সহায়কের ভূমিকা পালন করেছে। গৃহীত ঋণের অধিকাংশই অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যায় হয়ে এই খাতকে অন্ত:স্বার শূন্য করে ফেলেছে। তাই ব্যবস্থা ভেংগে পড়তে বাধ্য, দু’ দিন আগে বা পরে, কেবল সময়ের ব্যাপার।
এই পরিস্থিতিতে আমার কিছু সরল পর্যবেক্ষণ:
মাইক্রোক্রেডিট হিসাবে গৃহীত অর্থের বেশীরভাগই উৎপাদনের বদলে ভোগে ব্যয় হয়েছে।
অসংখ্য ঋণ গ্রহীতা পরিবারের বেশীরভাগ প্রাপ্ত বয়স্ক সদস্যদের নামেই নানা প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়া আছে।
বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই নতুন ঋণ গ্রহণের কারণ পুরাতন ঋণের কিস্তি পরিশোধ। ফলে প্রায় সবাই বিস্তারমান ঋণের জালে আবদ্ধ।
এক পর্যায়ে কিস্তি পরিশোধের জন্য ধার-দেনা বাড়ির মূল্যবান দ্রব্য সামগ্রী বিক্রি/বন্ধক এবং অতিরিক্ত পরিশ্রম করে অতিরিক্ত আয়ের জন্য সবার গলদ ঘর্ম যার ফলাফল কিঞ্চিত অতিরিক্ত দেশজ উৎপাদন ( আহারে সাধের জিডিপি বৃদ্ধি!), পরিনত হয়েছে বন্ডেড লেবারে।
এরপর যখন আর কোন উপায় থাকে না তখন পুরুষরা কিস্তিওয়ালাদের ( নব্য কাবুলিওয়লা নাকি ?!) হাত থেকে বাচার জন্য শহরে পলায়ন জীবন ধারণের জন্য ‘অন্য’ কাজের খোঁজে । ফলে শহরে ভাসমান লোক জনের সংখ্যা দ্রুতলয়ে ক্রমবর্ধমান।
যে হারে ঋণ বেড়েছে সেই হারে সম্পদ বাড়েনি, বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই ঋণ গ্রহণের ফলে সাময়িক ভোগ বাড়লেও নীট সম্পদ হ্রাস পেয়েছে,কিন্তু জীবন যাত্রার ব্যয় অভ্যাস বৃদ্ধি পেয়েছে।
আর বেশির ভাগ ঋণ গ্রহীতা হত দরিদ্র নারী হওয়ায় সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সামাজিক বিপর্যয় অত্যাসন্ন তা হল গ্রামে/ মফশ্বল শহরে এখন মৌসুমি/ভাসমান পতিতার সংখ্যা ক্রম বর্ধমান যার অন্যতম কারণ এই “কিস্তি”।
এই “Poorest of the poor” দের ভিতর যে নিরব হাহাকার চলছে তা বেশীরভাগ মানুষই শুনতে পায়না কিংবা সচেতনভাবে শুনেনা, বিশেষ করে যাদের শোনা দরকার। কারণ এদের আবার অনেকেরই রুটি-রুজি নির্ভর করে এই “Poorest of the poor” দের নিয়ে “Poverty trade” করে। অথচ “কিস্তি” এর আতঙ্কে অনেকের পারিবারিক কাঠমো ভেংগে পড়ার উপক্রম, বেড়ে যাচ্ছে পারিবারিক অস্থিরতা। আর পরিবারের অস্থিরতা সমাজে সংক্রামিত হয় গাণিতিক হারে কিন্তু সমাজের অস্থিরতা রাষ্ট্রে সংক্রামিত হয় জ্যামিতিক হারে। সম্প্রতি আমেরিকার হাউজিং বুদবুদ এবং এর ধারাবাহিকতায় বিশ্ব জুড়ে তুলকালাম কান্ড হয়ে গেল যার রেশ এখনো কাটেনি। আমেরিকার মধ্যবিত্ত সমাজকে ঋণের জাল থেকে বেড় করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য বিলিয়ন ডলারের “Bail Out” প্রকল্প চলছে। ফাইনান্স ক্যাপিটালের যুগে ডলারের কল্যাণে আমেরিকার কাছে “Money absolutely doesn’t matter”. কিন্তু আমাদের দেশের হতভাগা এই লক্ষ জনগোষ্ঠীর “Bail Out program” নিয়ে কে এগিয়ে আসবে!?
পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী আমার আশঙ্কা বাংলাদেশের মাইক্রোক্রেডিট খাতের শৃঙ্খলা অচিরেই একেবারেই ভেংগে পরবে। যদিও মাইক্রোফাইনান্স সেবা দাতারা (নাকি ব্যবসায়ীরা) অনেকেই দিন ধরেই নানা সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে তাদের লোকসান ঠেকানোর জন্য বা নিজের আখের গোছানো বা মুনাফা নিশ্চিত করার জন্য। ফলে ক্ষতি যা হবার তা ঐ “Poorest of the poor” দেরই একাংশের হবে। কারণ বর্তমানে বেশীরভাগ মাইক্রোফাইনান্স প্রতিষ্ঠানের আমানত (স্বেচ্ছা ও বাধ্যতামুলক) এবং ঋণ এর অনুপাত প্রায় সমান বা অনেক ক্ষেত্রেই আমানত বেশী।
অতীত অভীজ্ঞতায় দেখা যায় যে, আমাদের দেশে কোন সমস্যা মহামারী’র আকার না ধারণ করা পর্যন্ত কর্তাদের টনক নড়ে না। কিন্তু মাইক্রোক্রেডিট খাতের এই আসন্ন বিপর্যয় ঠেকাতে যত দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া যায় ততই মঙ্গল। কারণ এই মাইক্রোক্রেডিট গ্রহীতা গোষ্ঠী আমাদের জন-পিরামিডের একেবারে নিচে অবস্থিত। এই শ্রেনী ভেংগে পড়লে উপরের কোন শ্রেনীই এর বৈরী প্রভাবের বাইরে থাকতে পারবে না। এই রূঢ় পরিস্থিতি এড়াতে হলে এখনই ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কিছু সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।
ঋণের ট্র্যাপে আটকে পড়া এই হাজারো মানুষের Bail Out Program এর জন্য বাজেটের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী খাতে অন্তত অত্যধিক ঋণগ্রস্ত যারা নিয়ন্ত্রন বহির্ভূত কারণে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ফেরারী জীবন যাপন করছে তাদের Bail Out” এর জন্য নিদেন পক্ষে কিছু সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ দরকার। “Poorest of the poor” দের নিয়ে আর “Poverty trade” নয়্, এবার দরকার “Bail Out Program for the Poorest of the poor”. এজন্য জাতীয় ঐক্যমত সৃষ্টির জন্য একটি গণ প্লাটফরম দরকার যেখানে এ বিষয়ে যাবতীয় নীতি, পরিকল্পনা ো কর্মসূচী নির্ধারিত হবে। নইলে এখন যেমন ঋণের দায়ে আত্মহত্যার ঘটনা বিরল নয় তেমনি নিরন্ন মানুষদের দ্রোহের আগুনে সবকিছু ছাড়খার হয়ে যাবার উদাহরণ বিরল নয়, যার উত্তাপে ঝলসে যেতে পারে গোটা দেশ-জাতি।
প্রচলিত মাইক্রোক্রেডিট ব্যবস্থার ইতিবাচক দিকসমূহ
Loan repayment habit
Peer feelings and social integration
Participation and cooperation
Neighborhood and problem sharing
Risk taking ability
Increased productivity of human capital
Entrepreneurial quality
Experience of expending money
Consumerism
সম্প্রতি এই সমালোচনায় নতুন মাত্রা এসছে সরকারের প্রধানমন্ত্রী-অর্থমণ্ত্রীসহ একাধিক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী প্রকাশ্য সমালোচনায়। কিছু ভূইফোর মিডিয়া এবঙ বাজারে অচল বুদ্ধিজীবির কল্যাণে সরকার ো মাইক্রোক্রেডিট এখন মূখোমূখী চাপা সাঙঘর্ষিক অবস্থায়। তাই স্বাভাবিকভাবেই সরকার এখন শত কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করে হাজারো নিয়ম কানুনুনের পরীক্ষা চালাবে এই খাতকে বসে আনার জন্য (ফলে পরজীবি বুদ্ধিজীবি বা তথাকথিত সুশীল সমাজের তাবেদারদের কিছুটা হলেো রুটি-রুজির ব্যবস্থা হবে!)। বাংলাদেশ ব্যাঙক ো বসে থাকবেনা নিয়ম জারির প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে। এমআরসি’র মতো আরো অনেক কিছুই সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু এই অবস্থানটি কোন পক্ষের জন্যই মংগলজনক নয়। কারণ নিয়ম প্রচলনের চেয়ে এর কার্যকারীতা নিশ্চিতকরণ বেশী গুরুত্বপূর্ন।
©somewhere in net ltd.
১| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:২৬
সরলপাঠ বলেছেন: বাস্তব সম্মত লিখা - ধন্যবাদ